আমরা লিখি ।। প্রথম ও শেষ পর্ব

পলাশ দত্ত এর ছবি
লিখেছেন পলাশ দত্ত (তারিখ: রবি, ০৫/১০/২০০৮ - ১২:১৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এটা আসলে নিজের কাছে নিজে ধরা দেয়ার মতো একটি লেখা।
নেত্রকোণা সাহিত্য সমাজ একটা পুরস্কার দেয় খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার নামে। চলতি বছর পুরস্কারটি পেয়েছেন কবি আবু হাসান শাহরিয়ার। পুরস্কার দেয়া উপলক্ষে ফাল্গুনের প্রথম দু’দিন (ইংরেজি ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩-১৪ তারিখ) বসন্তকালীন সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করা হয় নেত্রকোণায়। চলতি বছর সাহিত্য উৎসবটিতে কবিতা বিষয়ে কিছু কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেই কথাগুলোই এই লেখা।

=====================================

বাংলা কবিতা এখন মরা। বাংলা কবিতা পুরনো হয়ে গেছে।
কবিতার প্রাণ তার ভাষা। এই ভাষাই আজ মরা।
ভাষা তো সবসময়ই একেকটি মৃত্যুর ভেতর দিয়ে একেকটি জন্মের দিকে এগোয়। একলা ভাষার বাঁচা-মরা এইভাবে স্বয়ংক্রিয়তার ওপর ছেড়ে দেয়া যায়। কিন্তু কবিতার ভাষা?
কবিতার ভাষাকে আওয়াজ দিয়ে বাঁচাতে হয়। কবিতার ভাষা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মরতে-মরতে বাঁচার দিকে এগোয় না। কবি/কবিরা ঘোষণা দিয়ে ভাষাকে মরণের হাত থেকে উদ্ধার করেন। বাংলাদেশেও ভাষার এখন দুর্দিন চলছে।
কার ভাষা? কবির ভাষা।
সেই কবি কেনো লেখেন? লিখতে গিয়ে কবিতাকে কী চেহারায় দ্যাখেন তিনি?

২.

কেনো লেখেন? প্রশ্নটি মানুষের লেখালেখির সমান বয়সী। কবিতার সমনা বয়সী। লেখার সময় ক’জন জানেন যে তিনি কেনো লিখছেন?

৩.

লেখার সপক্ষে নানা লোকের নানা যুক্তি। কবি অমিয় চক্রবর্তী বলেছিলেন, “কেন লিখেছি?Ñ এর সম্পূর্ণ উত্তর তাই কোনো লেখকই দিতে পারেন বলে জানি না।” এইখানে তার ‘সম্পূর্ণ’ শব্দটা একটু লক্ষ্যণীয়। তার এই শব্দটির মানে হতে পারে এই যে কেনো লিখির কিছুটা কারণ অন্তত লেখকরা জানাতে পারেন। কিন্তু ঘটনা কি আসলে তাই ঘটে? আমরা তো দেখেছি যে কেনো লিখির উত্তর দিতে গিয়ে লেখকরা সাধারণত তারা কিভাবে লিখে ফেলেন সেই কথাই ব’লে থাকেন।

৪.

কেনো লিখবো? এর উত্তর আজ খুব জরুরি। অমিয় চক্রবর্তী বলেছেন বটে “সাহিত্যসৃষ্টির মধ্যেও প্রাণের অপরিমেয় রহস্য নিহিত আছে”; তবু এইটুকু সংকেতে আজ আমি মুক্তি পাচ্ছি না। ‘লেখা’ বিষয়টি যদি আমাদের জন্য সহজাত স্বভাবের বা প্রবণতার অংশ হয় তাহলেও জানতে হবে আমি কেনো লিখি, আমি কেনো লিখবো। লিখে যে সামান্য-অসামান্য স্বাভাবিক তৃপ্তিটুকু পাওয়া যায় সেই তৃপ্তিটুকু পাওয়ার জন্যই লিখি? তাহলে লেখায় যে কিছু বলতে চাই সেটা কেনো? আর কাকেই-বা বলতে চাই? তার মানে কি এই যে আমরা লেখালেখি দিয়ে কিছু একটা করতে চাই? লেখালেখি দিয়ে কিছু হয় নাকি? কিছু করা যায় নাকি লেখালেখি দিয়ে? যদি-বা ধরেও নিই যে কিছু করা যায়Ñ মানুষকে আনন্দ দেয়া যায়, মানুষকে ভাবানো যায়, মানুষকে সচকিত করা যায়, মানুষকে মননে আর একটু এগিয়ে দেয়া যায়, মানুষকে স্বস্তি দেয়া যায়Ñ তাতেও-বা কী? শুধু এই কারণেও কি লেখালেখি চালিয়ে নেয়া যায়?

৫.

এ-কথা আমি বিশ্বাস করি যে কবিতা মানুষের সুখ-দুঃখ-আনন্দ-কষ্টে বেঁচে থাকার সহযোগ হতে পারে। মানুষের এই মহান উপকারটুকু করার জন্যই কি লিখবো? এই লেখালেখি আমাদের কী দেবে? মরার পরও মানুষ আমাদের কবিতা পড়েব, পড়ে সহযোগ পাবে; ফলত এই নশ্বর পৃথিবীতে আমরা কিঞ্চিৎ অমর হয়ে উঠবোÑ এই দুষ্টলোভে লিখবো? তা যদি না-ও হয়, এই জীবতকালে মানুষ কবিতা পড়ে কবি বলবে, খ্যাতি পাবো, কপাল ভালো হলে জীবিকার খানিকটা বা পুরোটাই অর্জন কার যাবে লিখেÑ এই সম্ভাবনার হাতছানি মনে জেনে লিখবো?

আমাদের যে প্রতিদিনের বেঁচে থাকা সেইখানে লেখালেখির জায়গা কোথায়? আমাদের প্রতিদিনের বেঁচে থাকায় কিভাবে সাহায্য করে লেখালেখি? এখানে হয়তো আপনি বলবেন একক ব্যক্তির কল্যাণ করা লেখালেখির মহৎ উদ্দেশ্যের মধ্যে পড়ে না। হয়তো প্রশ্ন করবেন পৃথিবীল কোন্ জিনিসটিই-বা কোনো একক ব্যক্তির কল্যাণ করার কথা ভাবে? একক কল্যাণের উদ্দেশ্যে এই পৃথিবীতে কিছুই তো করা হয় না। এই কথাগুলি ঠিক।

পৃথিবীতে মানুষ একাএকা নিজের মতো বাঁচে। তাকে ওইভাবে একাএকাই নিজের মতো করে বাঁচতে হয়। এই বেঁচে থাকার পথে সে আরো কিছু সঙ্গীকে জুটিয়ে নেয়। জুটিয়ে নিয়ে তারা পারস্পরিক সহযোগিতায় বাঁচতে থাকে জীবনে। কিন্তু ওই যে সামান্য ক’জন মানুষকে সে জুটিয়ে নিলো তারা তো তার উপকারে এলো, তারা তো তাকে সাহায্য করলো জীবনে বেঁচে থাকতে। কবিতাও কি তেমনই সাহায্য করে জীবনে বেঁচে থাকতে?

৬.

কবিতা আমাদের কিভাবে সাহায্য করে? সরল করে বললে কারো কারো কবিতা আমাদের অভূতপূর্ব একটা জগতের সন্ধান দেয়। সেই অভূতপূর্ব জগত প্রত্যক্ষ করার আনন্দে-স্বাদের আমরা সেই কবিতাটিতে আনন্দের সন্ধান পাই, সেই কবিকে আমরা ভালোবেসে ফেলি। এখানে মূল বিষয়টি হচ্ছে অভূতপূর্ব জগত। যে-জগত অভূতপূর্ব সেই জগতটি আমরা দেখি। অর্থাৎ এই যাপিত জীবন থেকে একরকমের পালিয়ে যাই আমরা ওই অভূতপূর্ব জগতে। বিষয়টা হচ্ছে সংক্ষুব্ধ জগত থেকে পলায়নের মাধ্যমে এক স্বস্তির সন্ধান আমাদের দেয় কবিতা; অন্তত দেয়ার চেষ্টা করে। তাহলে মানুষকে এই পালানোর স্বস্তি দেয়ার জন্যই কি লিখবো? না-হয় বুঝলাম মানুষকে পালানোর সুযোগ করে দেয়ার জন্য কবিতা লিখবো। কিন্তু আমাদের কী দেবে কবিতা? কবিতার কি দায় নেই আমাদের কিছু দেয়ার?

৭.

আমার জীবনে ভালোবাসার কোনো-কোনো মানুষকে হারানোর, ভালোবাসার কোনো-কোনো মানুষকে হত্যার বেদনা মিশে আছে। তাদের হত্যার, তাদের হারানোর বেদনা আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়। সেই বেদনা আমার ব্যক্তিগত। সেই হত্যাকাহিনি আমি কাউকে বলতে পারি না। সেই হত্যাকাহিনি কবিতার পঙক্তি হয়ে বেরিয়ে আসতে চায়। আমার ব্যক্তিগত সেই হত্যাযজ্ঞ কেনো হবে কবিতা? কী করে হবে? কেনো আমি আরো মানুষকে পড়তে দেবো সেই রক্তমাখা কান্না? কেনোই-বা মানুষ পড়বে তা?

ওইগুলি আসলে পাঠকের কবিতা নয়! কারণ পাঠকের জন্য যা লেখা হয় তা একধরনের শিল্প! ওইসব লেখায় শিল্পসৃষ্টির অজ্ঞাত এক গূঢ় আস্বাদ লুকিয়ে থাকে! তাহলে আমি কেনো লিখবো?

৮.

এখানে লেখার কারণ সম্পর্কে দুই কবির দুটি বক্তব্য উল্লেখ করতে চাই।
একজনের নাম জীবনানন্দ দাশ। তার কথা হচ্ছে সৎ কবিতা খোলাখুলিভাবে নয় কিন্তু নিজের স্বচ্ছন্দ সমগ্রতার উৎকর্ষে শোষিত মানবজীবনের কবিতা, সেই জীবনের বিপ্লবের ও তৎপরবর্তী শ্রেষ্ঠতর সময়ের কবিতা।

আরেকজন হচ্ছেন অমিয় চক্রবর্তী। তিনি দ্যাখেন কবিতায় তিনি যে-উপমা ব্যবহার করেন শেষ পর্যন্ত তার মানে গেছে বদলে, যে-উদ্দেশ্য নিয়ে লিখছেন তারও গভীরে তার সমস্ত জীবনের উদ্দেশ্য, বা তার কালের উদ্দেশ্য, দেশ বা জাতির উদ্দেশ্য ধরা পড়ে গেছে।

এই দুজনের কথাকে মিলিয়ে নিলে লেখার উদ্দেশ্য সম্পর্কে খানিকটা স্পষ্ট হওয়া যায়। একজন বলছেন সৎ কবিতা শোষিত মানবজীবনের কবিতা; আরেকজন বলছেন তিনি যে-উপমা ব্যবহার করেন শেষ পর্যন্ত তার মানে বদলে যেতে দ্যাখেন দেশ-জাতির উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ কবি একটি ব্যক্তিগত আক্ষেপ থেকেই কবিতা লেখেন, তবে সেই কবিতা শেষ পর্যন্ত সার্বজনীন। অর্থাৎ কবির ব্যক্তিগত আক্ষেপ থেকে লেখা কবতিাকে শেষ পর্যন্ত সার্বজনীন হতে হয়।

৯.

এই সার্বজনীনতার যাত্রায় কল্পনার ভূমিকা কতোটুকু? কবিতা লেখার ক্ষেত্রে কল্পনা জিনিসটার মূল্য কেমন? জীবনানন্দই একদা বলেছিলেন বটে যে কল্পনাপ্রতিভাই হলো কবিতা। কল্পনা মানে কি বানানো? বানিয়ে-বানিয়ে কিছু কথা বলা? তাই কি কবিতা?

বানিয়ে-বানিয়ে কথা বলা মানে মিথ্যে কথা বলা। বানিয়ে-বানিয়ে কথা বলা মানে কল্পনার কথা বলা। বানিয়ে-বানিয়ে কথা বলা মানে অবাস্তব কথা বলা। কবিতা কি কল্পনা করে লেখার জিনিস? নিজের কল্পজগতকে নিজের কল্পবাস্তবতাকে ঠেলে পাঠকের সামনে হাজির করে দেয়াটাও কি কবিতা নাকি?
এখানে এই ‘নিজের’ শব্দটার দিকে একটু বিশেষভাবে নজর দেয়া উচিত। আমার ‘নিজের’ কল্পবাস্তবতা আর মানুষের কল্পবাস্তবতা তো এক জিনিস নয়। পৃথিবীর মানুষের প্রায় সবার একটি কল্পবাস্তবতার জগৎ থাকে। উল্টো দিকে কবিরও নিজস্ব একটি কল্পবাস্তবতার জগৎ থাকে; সেই জগতে কবি ব্যথা পান, সেই জগতে কবি আনন্দিত হন, সেই জগতে কবি নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হন। কবি মানুষটা কবি বলেই তার সেই সমস্ত কথা আগ্রহোদ্দীপক ঢঙে লিখে ফেলতে পারেন।

১০.

আর এইখানেই ঘটে বিপদ, যা ঘটবার। সেই সমস্ত ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ারাশিকেই কবিতা বলে ভ্রম করতে থাকেন কবিতার-মতো-বাক্য রচনায় সিদ্ধহস্ত-স্বল্প সিদ্ধহস্ত কবিরা। তারা মনে করেন এই জগতটাকে দেখবার অন্য একটা চোখ তারা পেয়েছেন; জগতের ঘটনাবলির অন্য আর এক প্রচ্ছন্ন মানে তাদের কাছে ধরা দিচ্ছে। এই মনে হওয়ার দৌলতে তারা তাদের ওই দ্যাখার ঘটনাটিকে মনে করেন কবিতার প্রক্রিয়া। মনে করেন তাদের ওই প্রতিক্রিয়াই কবিতা।
ঘটনার মূল সূত্র তো আসলে অন্য জায়গায়। তাদের ওই দ্যাখার ক্ষমতা ঠিক থাকলেও ঠিক নেই তাদের দ্যাখা। তারা জানেন না কী দেখতে হয়। তারা জানেন না কিভাবে দেখতে হয়। দেখতে হয় মানুষের কল্পবাস্তবতাকে। দেখতে হয় মানুষের কল্পপ্রবণতার চোখ দিয়ে। নিজের কল্পবাস্তবতাকে দ্যাখার দরকার নেই। দরকার নেই নিজের চোখ দিয়ে দ্যাখার। মানুষের কল্পবাস্তবতাকে মানুষের চোখ দিয়ে দেখতে পারলে যে-প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় বা যে-প্রচ্ছন্ন বাস্তবতার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় তাকে কবিতার-মতো-বাক্যে প্রকাশ করতে পারলে তা-ই কবিতা।

১১.

নিজের সুখ-দুঃখ নিজের আনন্দ-বেদনাকে কবিতার-মতো-বাক্যের প্রলেপ দিয়ে সার্বজনীন করে তুললেই তা কবিতা হয় না। নিজের চোখের বদলে মানুষের চোখ দিয়ে দেখতে না-পারার ব্যর্থ ফাঁকিটুকু ঠিকই ধরা পড়ে মনোজ্ঞ পাঠকের কাছে। নিজের কল্পজগতের অস্তিত্ব-অভিজ্ঞতা ফেনিয়ে ফেনিয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে লিখে রাখা ওইসব কবিতার-মতো-বাক্য পাঠকের সামনে জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে কবির ছুড়ে দেয়া একটা মিথ্যার ডালি ছাড়া আর কিছু নয়। এই মিথ্যুকেরা কবিতায় নিজের বানানো নিজের সৃষ্ট কল্পনার কথা বলে যায় আজন্ম। তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় মানুষের কল্পনার, মানুষের ভালোবাসার, মানুষের অস্তিত্বের অসীম কল্পজগৎ।

১২.

কোন্ মানুষের কল্পনা? সেই মানুষ যারা কবিতা লেখালেখিতে জড়িত নন। শুধু যে লেখেন না তা-ই নয়, মানুষগুলো হয়তো কবিতা পড়েনও না।
মানুষ কি কবির মনের অনুভব জানার জন্য কবিতা পড়েন? আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতই হয়তো এই যে, না; কবির মনের অনুভব জানার জন্য মানুষ কবিতা পড়ে না। কিন্তু, এই উদ্দেশ্যে কবিতা পড়া হলেও কবির মনোভাবটুকু কি কোনোদিন জানা সম্ভব হয়ে উঠে মানুষের পক্ষে? এর উত্তরও ‘না’। যতোদিন না কবি স্বয়ং বলে দিচ্ছেন তার কবিতার উৎসমুহূর্তটুকু। আবার উৎসমুহূর্ত বলে দিলেও পাঠক কিন্তু কবিতা পড়ে ওই উৎসমুহূর্তের অনুভববিন্দুতে কিংবা ঘটনাপ্রবাহে গিয়ে পৌঁছতে পারেন না। তিনি নিজেরই কোনো এক মুহূর্তের ঘটনাবিন্দুতে দাঁড়িয়ে কবিতাটির মর্মানুভবটুকুকে সেখানে চলে বেড়াতে দেখেন।

মানুষ তার জীবনে এগোতে এগোতে ক্রমশ নানা মূল্যে জীবনেক বুঝে উঠতে থাকে। ভরপুর হয়ে উঠতে থাকে জীবনের নানা অভিজ্ঞতায়। সেই অভিজ্ঞতাই তার সব, তার সম্বল। জীবনের সেইসব অভিজ্ঞতাই মানুষকে দিয়ে কবিতা ভালো লাগিয়ে নেয়, খারাপ লাগিয়ে নেয়। অভিজ্ঞতার অভাবেও কবিতা মানুষের কাছ থেকে দূরে থেকে যায় কখনো-কখনো।

শুধু কি এদের কাছ থেকেই দূরে থেকে যায় কবিতা? না, তাদের কাছ থেকেও দূরে থেকে যায় যারা কবিতার চর্চা করেন। যারা কবিতাকে একটি চর্চাযোগ্য মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। যারা কবিতাকে কায়দার সমন্বয় বলে ভাবেন।

১৩.

কোনো এক অজ্ঞাত কারণে অনেকানেক কবিতা-চর্চাকারীর ধারণা হয়েছে যে কবিতা বস্তুটাকে বুঝে নিতে হয়। তারা একটা ধারণা ছড়িয়েছেন যে কবিতা বস্তুটা মাথা খাটিয়ে বুঝবার মতো একটা কিছু; কবিতার মানে থাকে; কবিতায় কিছু এটা বোঝানো হয়।

অনেকানেক কবিতা-চর্চাকারীই কখনোই মানুষকে বলেন না যে, কবিতা নামের বস্তুটি মানুষকে জীবনে বেঁচে থাকতে সাহায্য করবে; তা তোমাদের সংকটে-আনন্দে-বিপদে সঙ্গ দিয়ে শক্তি দেবে, সাহস যোগাবে, একাকিত্ব ঘোচাবে।

১৪.

আসলে আমরা একটা কানাগলির শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছি; যেখানে আজ কবির নিজের কল্পজগতের প্রকাশটিকেই মেনে নেয়া এবং ধরে নেয়া হচ্ছে কবিতা বলে। যেখানে বানিয়ে-বানিয়ে নিজের কথা বলাই কবিতার শেষ কথা। যেখানে কবিতা মানেই আত্মপ্রেমের মহোৎসব।

১৫.

সেই আত্মপ্রেম যে-আত্মপ্রেম থেকে নিতাই জানতে চেয়েছিলো “হায়, জীবন এতো ছোটো কেনে, এই ভুবনে”।

নিতাইয়ের এই আক্ষেপমাখা প্রশ্নের পেছন-পেছন একটি চিন্তা চলে আসে আমাদের মনে। মনে হয় মানুষের আয়ুর যে-ধারণা তার শেষবিন্দুই কি নিতাইয়ের জীবনের ওই ছোটোত্ব? উল্টোদিকে নিতাইয়ের আক্ষেপের বহর দেখে তো এও মনে হয় যে ভুবন বস্তুটা বেশ বড়ো একটা কিছু! আসলে তার এই ভুবন হলো আমাদেরই এই জগৎ; যে-জগত আমাদের চোখে সার্বক্ষণিক দৃশ্যমান, যে-জগতের ধারণার সঙ্গে মহাবিশ্ব নামক একটা বস্তুও খানিকটা মিশে গেছে।
কিন্তু নিতাই যে মানুষের আয়ুষ্কালকে জীবনের শেষবিন্দু ভেবে নেয় সেখানে আমাদের সামান্য আপত্তি জানানোর আছে। আমরা বলবো যে জীবন কেবলই একজন-মানুষের-আয়ুর-শেষবিন্দুতে বাঁধা পড়ে থাকে না।

১৬.

নিতাই নিজের আয়ুকেই ‘জীবন’ মনে করে। ‘জীবন’কে ওইরকম নিতাইয়ের মতো করে না ভাবলে আমরা দেখতে পাই যে তা ক্রমবিস্তারমান এবং ক্রমঘটমান একটি প্রণালী ছাড়া কিছুই নয়। আমাদের ‘জীবনে’র ধারণা তখন আর আমাদের প্রত্যেকের একার জীবনযাপনের, একার ‘জীবনে’ সিদ্ধিলাভের, শীর্ষে ওঠার ‘জীবন’টুকুই হয়ে থাকে না। তখন আমরা আমাদের সমগ্র চারপাশ মিলে যে-প্রবহমান তৈরি-হয়ে-ওঠা এবং প্রবহমান সমগ্র মিলে যে-‘জীবন’ তার অস্তিত্ব অনুভব করে উঠি। সেই ‘জীবনে’র ধারণায় থেকে আমাদের মনে হয় যে ‘জীবনে’র যে চলতে থাকা, গড়ে ওঠা এবং ভেঙে যাওয়া এবং আবার চলতে থাকাÑ তারই অস্তিত্বের উদ্ভাসন মানুষের ‘জীবনে’র সমস্ত ঘটনাবলি। যুগে-যুগে ‘জীবন’ এইভাবেই চলেছে। শুধু ভাঙা আর গড়া।

১৭.

‘জীবন’ নামের যে-অস্তিত্বটির কথা আমরা ভাবছি তার অনেক গুণের একটি হলো অনির্ণেয়তা। কিংবা বলতে পারি অনিশ্চয়তা। এই জীবন আমাদের কখনোই জানার সুযোগ দেয় না আমাদের সামনে কী আছে। আমরা কখনোই বুছে উঠতে পারিনি সামনে ঠিক কী ঘটতে চলেছে। জীবন তার অনির্ণেয়তার দাপটে আমাদের সবসময়ই অন্ধকারে রেখে গেছে, আমাদের সীমিত অর্থের যে-জীবনÑ প্রত্যেকের নিজের জীবনের আয়ুকেই শেষ মনে করার যে-প্রবণতাÑ সেই জীবন সম্পর্কেও।

আমাদের সীমিত অর্থের জীবনে আমরা মুর্হুমুহু নানা অনুভবক্রিয়ার সম্মুখীন হই। সেইসব ক্রিয়া আমাদের কোন্ মানসিক অবস্থায় ঠেলে পাঠিয়ে দেবে কিংবা পৌঁছে দেবে সাদরে তা আমাদের প্রত্যেকের নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা ছাড়া জানা হয়ে ওঠে না কখনোই। তাহলে প্রতি মুহূর্তের এই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ধাক্কা আমরা সামলাবো কিভাবে?

১৮.

ঠিক এইখানে একটা কথা বলবার আছে। আমরা বলবো যে আমাদের মাঝেই কোনো কোনো মানুষের সেই ক্ষমতা থাকে যারা একক জীবনের ধাক্কায় জন্ম নেয়া ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে মানুষের মুখের কথায় লিখে রেখে যেতে পারেন। তাদের আমরা বলি কবি।

সেইসব লিখে রেখে যাওয়া কথা আমাদের বৃহৎ জীবনের কাছ থেকে আঘাত পাওয়ার মুহূর্তগুলোতে আমাদের একা করে ছেড়ে না-দিয়ে সঙ্গে থেকে আগলে রাখে। রাখতে চায়।

১৯.

বৃহৎ জীবনের ভেতরে যে-মানুষগুলো বেঁচে থাকে তাদের ভাষা বারেবারে পাল্টায়।

ভাষা কেনো পাল্টায়? এর বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা নিশ্চিতভাবেই আছে ভাষাবিজ্ঞানীদের কাছে। কিন্তু ওই ব্যাখ্যাই কি আসল ব্যাখ্যা? ওই ব্যাখ্যা তো ভাষা পাল্টে যাওয়ার পর দাঁড় করানো হয়। ভাষা পাল্টে যাওয়ার পর নানা কায়দা-কানুন করে জানানো হয় যে এইভাবে ভাষা পাল্টেছে। পাল্টো আজ এই হয়েছে।

ভাষার ওপর যদি আসলেই মানুষের হাত থাকতো তাহলে আজকের মানুষ ওই হিসেব করে বলে দিতে পারতো আজ থেকে দেড়শো বছর পরের ভাষা কী হবে।

২০.

আমিও আজ বলতে পারবো না আগামী দেড়শ বছর বাংলা ভাষার চেহারা কী হবে।

কিন্তু বাংলা কবিতার ভাষা?

আমার সামনে ৮০ বছর আগের ভাষাটা আছে। কবে একদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষার হাত থেকে কবিতাকে বাঁচাতে নতুন ধরনের এক কবিতাভাষার জন্ম দিয়েছিলেন একদল কবি; কবে একদিন রবীন্দ্রনাথকে ভেঙেছেনে নতুন এক কবিতাভাষা বানালেন একদল কবি; কবে একদিন বাংলা কবিতাকে মুখের ভাষার একটু কাছে নিলেন একদল কবি; সেইসব প্রায় ৮০ বছর আগের কথা।
৮০ বছর পরও আমরা কবিতা লিখছি। কোন্ ভাষায়? নিদেনপক্ষে ৮০ বছরের পুরনো এক ভাষায়।

ওই ভাষাটা অবশ্য কালের ধর্মে ইতিমধ্যে কিছুটা বদলেছে। ওই সামান্য বদলে বেঁচে থাকা আসলে মরারই অন্য এক রূপ।

২১.

বাংলা কবিতা এখন মরা। মরা কবিতায় প্রাণ দিতে কী করতে হবে? ভাষাটাকে প্রাণ দিতে হবে। ভাষার শরীর থেকে ৮০ বছরের জ্বরা ঝেড়ে ফেলতে হবে।

২২.

১০০ বছর আগের বাংলা কবিতার ভাষাটা তো আমার চোখের সাৎেমনে আছে। ওই ভাষার কবিতার আর আজকে লেখা কবিতার ভাষা তো একই সময়ে দ্যাখার সুযোগ আছে আমার। কী দেখি? দেখি ওই ভাষার প্রাণটাই এখনো ধরে আছে আজকের ভাষা। কোন্ ভাষা ধরে আছে ওই ১০০ কিংবা ৮০ বছর আগের ভাষার প্রাণ?

কোন্ ভাষা আবার! আমাদের লেখার ভাষা। বিশেষ করে কবিতার ভাষা। এর কারণও হয়তো আছে। কারণ কবিতা একটা মান ভাষায় লেখা হয়। যে-ভাষা সমাজের মোটামুটি শিক্ষিত অংশ বলে।

এখন আমি কি বলবো যে নানান আঞ্চলিক ভাষায় কবিতা লেখা শুরু হোকÑ ভাষা বদলের আকাক্সায়? না। আজকের মরা বাংলা কবিতার প্রাণ লুকিয়ে আছে আজকের মানুষে প্রচল ক্রিয়াপদের ভেতর।

সেইখানে আমাদের যেতে হবে॥


মন্তব্য

প্রফাইল এর ছবি

কেন লিখি? লিখতে পারি এটা দেখানোর জন্য। মানে, আমি ফেলনা নই, আমার গুরুত্ব রয়েছে এবং গুরু হয়ে উঠবার (কিঞ্চিত) বাসনা ...

সাধু-সন্ন্যাসী নই। লোক-সংশ্রব চাই ...

আমি সংস্কারক, পরিবর্তনকারী। জাগো বাহে ...

মগজ গজগজ করে, হাত নিসপিস করে, কি করব? ...

মুজিব মেহদী এর ছবি

আমি মানি যে, লেখকের ব্যর্থতা তাঁর ভাষায়ই, অর্থাৎব্যবহৃত ভাষায় ব্যর্থতাই লেখককে ব্যর্থ করে। কিন্তু সব লেখক তো আর ব্যর্থ নন। তাহলে ‌'এই ভাষাই আজ মরা' কথাটা কীভাবে নেব?

বাংলা কবিতা এখন মরা। বাংলা কবিতা পুরনো হয়ে গেছে।

এসব কথার মধ্যে স্টান্ট যত আছে, কার্যকরতা তত নেই। চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রথম সাহিত্যকর্ম হিসেবে স্বীকৃত। নবম শতকে লিখিত এসব পদ সময় বিবেচনায় পুরানো হয়ে গেছে সত্যি। কিন্তু আসলে কি পুরানো হয়েছে বা মরে গেছে?
বৈষ্ণব পদাবলি মরে গেছে? রবীন্দ্রনাথের গান মরে গেছে? জীবনানন্দের কবিতা মরে গেছে? কিংবা মরেছে কি জসিম-উদ-দীনের লেখালেখি? নাম করুন যদি বিনয় মজুমদারের, উৎপল কুমার বসুর, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের, আল মাহমুদের, আবুল হাসানের, রণজিৎ দাশের, জয় গোস্বামীর ; তো আমি বলব এঁদের লেখালেখি এখনো সজীব, সতেজ। তো কেন মানব ওই উদ্ধৃত পঙক্তিকে?

ভাষা বদলে যাবে, অনেক শব্দ লুপ্ত হবে, নতুন অনেক শব্দ যুক্ত হবে এটাই নিয়ম। সব ভাষায়ই এরকম হয়। নতুন যাঁরা লিখবেন, নতুন সময়ের ভাষায় লিখবেন। যিনি সেটা করবেন না, তিনি মাত্র মরে যাবেন, তাঁর লেখালেখি মাত্র মরে যাবে। সবাই মরবেন না, মরেন না।

মানুষ কত পুরানো হলো পলাশ? মানুষ কি মরেছে? এই মানুষই তো ভাষা ব্যবহার করে নাকি?

লেখার অন্য অংশ 'কেন লেখালেখি?' প্রসঙ্গে পরে আবার কথা হবে।
................................................................
তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার পকেটে আমি আছি যতটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই আমার করুণ ছায়া

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

পলাশ দত্ত এর ছবি

মানুষ কত পুরানো হলো পলাশ? মানুষ কি মরেছে? এই মানুষই তো ভাষা ব্যবহার করে নাকি?

এইখানেই আসলে আমার কথা বলা। মানুষ যে ভাষা ব্যবহার করে সেই ভাষা কই আমাদের কবিতায়?

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

মুজিব মেহদী এর ছবি

তত্ত্বীয়ভাবে আপনার প্রশ্নটা ঠিক, কিন্তু ব্যবহারিকভাবে প্রমাণহীন? কেবলই বলা হয় যে, মানুষের মুখের ভাষায় কবিতা লেখা দরকার, কিন্তু ট্র্যাজেডি হলো যাঁরা বলেন তাঁরাও লিখেন না। বাংলাসাহিত্যে হুবহু মানুষের মুখের ভাষায় রচিত কয়টা উল্লেখযোগ্য কবিতা বইয়ের নাম করা যাবে ভেবে দেখুন তো ?
আসলে কোনোকালেই সিংহভাগ কবিতা মানুষের মুখের ভাষায় রচিত হয় নি, দুয়েকটা বিচ্ছিন্ন ব্যতিক্রম ছাড়া।
..............................................................
তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার পকেটে আমি আছি যতটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই আমার করুণ ছায়া

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

পলাশ দত্ত এর ছবি

হুবুহু না মুজিব ভাই। মুখের ভাষার অনেকটা কাছাকাছি কি যাওয়া যায়? অথবা যাওয়ার কোনো চেষ্টা কি করা যায়??

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

ভাঙ্গা মানুষ [অতিথি] এর ছবি

মুজিব মেহদী লিখেছেন:

আসলে কোনোকালেই সিংহভাগ কবিতা মানুষের মুখের ভাষায় রচিত হয় নি, দুয়েকটা বিচ্ছিন্ন ব্যতিক্রম ছাড়া।

কথাটা হয়তো সঠিক... আমি কবিতা খুব ভয় পাই, পঞ্চ ইন্দ্রিয়র সবক'টিতেই আটকে থাকে, মাথায় আর পৌঁছতে পারেনা। হয়তো এটাই তার কারন...

সুপ্তি এর ছবি

পলাশ দত্তর সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। মুজিব মেহদীর সঙ্গে সহমত। তবে উপভোগ্য তর্কটির জন্য পলাশ দত্তকেই আগে ধন্যবাদ দিতে হয়। কারণ, মূল লেখাটি তার।
*******************************
'ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত'
-সুভাষ মুখোপাধ্যায়

*******************************
'ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত'
-সুভাষ মুখোপাধ্যায়

মুজিব মেহদী এর ছবি

সম্ভবত আপনার তিনপর্বের পরিকল্পনা ছিল। প্রথমাংশ পড়ার পর আমি মন্তব্য করেছি। পরে হঠাৎ দেখি পুরোটাই পোস্টিয়েছেন। এখন লেখাটার পুরো ছিরিছাদ সম্পর্কে আন্দাজ করা সহজ হচ্ছে।

সর্বোপরি বলতে হবে যে, এটি একটি ভালো টেক্সট। চিন্তাউদ্রেককারী। কিন্তু পরের অংশের আপনার সব কথার সঙ্গেও পুরোটা একমত হওয়া যাচ্ছে না। সেটা অবশ্য আপনার প্রত্যাশিতও না।

৮০ বছর আগের ভাষার প্রভাব আমাদের কবিতায় আছে বৈকি। যাঁর যত বড়ো ক্ষমতা তাঁর প্রভাব তত বেশি। রাতারাতি ঝেড়ে ফেলা যাবে না এটা। ক্রমশ বদলাচ্ছেও, বদলাবেও। যদিও আপনি বলবেন ওটা মরারই অন্য এক রূপ। কিন্তু কখনোই মুখের ভাষার অনুরূপ হবে না কবিতা, ধারণা করি।

কেন লিখি অংশে আপনি কি জীবনানন্দ ও অমিয় চক্রবর্তীর কাছে এসে খানিক দাঁড়ালেন? সেটা তো আরো বিপজ্জনক হতে পারে। লেখার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বদলালে তবেই না ভাষা বদলাবে! লেখালেখির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই যদি অনুরূপ হয়, ভাষার তার কাছাকাছি ঘুরপাক খাবারই তো কথা। উদ্দেশ্যটাই আমূল বদলাতে হবে, বদলে যেতে হবে, তা নইলে কবিতার বদল ত্বরান্বিত হবে না সম্ভবত।

আরেকটা কথা, আমার মতে কবিতা মিথ্যারই প্রতিবেদন। এই মিথ্যা মিথ্যাও নয়, সত্যও নয়, পরমসত্য ; রবীন্দ্রনাথ যাকে বলতেন 'আরো সত্য'।
................................................................
তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার পকেটে আমি আছি যতটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই আমার করুণ ছায়া

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

পলাশ দত্ত এর ছবি

কিন্তু পরের অংশের আপনার সব কথার সঙ্গেও পুরোটা একমত হওয়া যাচ্ছে না। সেটা অবশ্য আপনার প্রত্যাশিতও না।

থ্যাংকস।

এখন মুজিব ভাই,

উদ্দেশ্যটাই আমূল বদলাতে হবে, বদলে যেতে হবে, তা নইলে কবিতার বদল ত্বরান্বিত হবে না সম্ভবত।

এই জায়গাটা একটু ব্যাখ্যা করবেন? তাহলে আমার উপকার হয়।।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

মুজিব মেহদী এর ছবি

বলতে চাচ্ছি যে, লেখালেখিটা আমরা যে তাড়না থেকে করি, যে উদ্দেশ্যে করি, সেটার নব-সংজ্ঞায়ন দরকার । সেটা কী হবে, তা আমিও জানি না।

কেন লিখি জাতীয় কিছু লেখা নানা সময়ে আমিও লিখেছি। ওসবে কিছু কিছু ভাবতে চেয়েছি। কখনো এসব পোস্ট করব হয়ত।
................................................................
তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার পকেটে আমি আছি যতটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই আমার করুণ ছায়া

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

গৌতম এর ছবি

অফটপিক: কবিতা বুঝি না, কিন্তু না বুঝেও জীবনানন্দ পড়ে যেটুকু আরাম পাই, আজকের সাহিত্য সাময়িকীর কবিতাগুলোতে তার ছিটেফোটা আরামও পাই না। সম্ভবত কবিতার বিষয়ে রক্ষণশীল পাঠক হয়ে যাচ্ছি।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

পলাশ দত্ত এর ছবি

কারো কারো কবিতা আমাদের অভূতপূর্ব একটা জগতের সন্ধান দেয়। সেই অভূতপূর্ব জগত প্রত্যক্ষ করার আনন্দে-স্বাদের আমরা সেই কবিতাটিতে আনন্দের সন্ধান পাই, সেই কবিকে আমরা ভালোবেসে ফেলি। এখানে মূল বিষয়টি হচ্ছে অভূতপূর্ব জগত। যে-জগত অভূতপূর্ব সেই জগতটি আমরা দেখি। অর্থাৎ এই যাপিত জীবন থেকে একরকমের পালিয়ে যাই আমরা ওই অভূতপূর্ব জগতে। বিষয়টা হচ্ছে সংক্ষুব্ধ জগত থেকে পলায়নের মাধ্যমে এক স্বস্তির সন্ধান আমাদের দেয় কবিতা; অন্তত দেয়ার চেষ্টা করে।

তাহলে মানুষকে এই পালানোর স্বস্তি দেয়ার জন্যই কি লিখবো?

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

গৌতম এর ছবি

না, পাঠকের চাহিদানুযায়ী লেখকের লেখা আগায় না; পাঠকই খুঁজে নিবে তার চাহিদা কোন লেখক মিটাতে পারবেন। সেজন্য লেখক যেভাবে যা লিখতে চান, সেটা করাই শ্রেয়।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

পুতুল এর ছবি

ফ্রান্স কাফকা বলেছেন; লেখাটা শেষ হলে যেন একটা লাঠিলজেন্স চোষার তৃপ্তি পাই। এটুক বলে আবার প্রশ্ন করেছেন; কিন্তু কেন?
যার উত্তর এ প্রবন্ধে খোঁজার চেষ্টা চলছে।
এ প্রসংগে কবিগুরুর চিত্র সমালোচনা নিয়ে একটা কথা মনে পড়ছে;
তিনি নাকী চিত্রে যারা মানে খুঁজে বেড়ান তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, হয়তো এর কোন মানে সত্যিই নেই, খুঁজে পাবে কী করে, তবে মানে খোঁজার পন্ডশ্রমের চেয়ে ছবিটা ভাল লাগল কিনা সেটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
যার ভাল লাগল সে জিতলো।
কবিতার ক্ষেত্রে কী তা চলে? নাকী পাঠকের একটা মানে দাড় করাতে হয়?
কবি কেন কবিতা লিখেন সে প্রশ্নটি কবিতার সমান পুরোনো। কিন্তু কবিকে কেমন করে দেখতে হয় সে বিষয়ে শ্রদ্ধেয় "ওয়াহিদুল হক" সারের একটা কথা মনে পড়ছে; তিনি বলতেন "কবি কে পাখি হতে হয়, পাখি হয়ে গাছের ডালে বসে আবার মানুষ কবিকে দেখতে পারতে হয়"।
কথাটা ঠিক কী বলা হল! আমি এখনো বুঝিনি।

ভাষা জীবনের মত একটা গতিশীল স্রোত। কথাটা মানা যায়। মানুষের মুখের ভাষায় কবিতা লেখার জন্য, অনেক কবি সংস্কৃত ভাষার বলয় ভেঙ্গে বেরিয়ে এসেছেন। তার পর একদল কবি আবার সাধু ভাষার বলয় ভেঙ্গে চলিত বা কথ্য ভাষায় লিখেছেন।

মানে মানুষের নিত্যদিনের বেঁচে থাকার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তাদের জীবনের বা বেঁচে থাকার উপকরনের মত, তাদের মুখের ভাষাটিও। বস্তির টোকাই প্লে-স্টেশন কেনার বায়না ধরেছে; কথাটা পাঠক মানবে?
তেমনি ভিখেরিনী বলছে; মুক্ত হস্তে দান করুন। কথাটা মানাবে?

সে জন্যই কোন কথা কোন ভাষায় লিখতে হবে সেটা কবিকে জানতে হবে।

কবিরা খুব সার্বজনীন করে লিখতে চান বলে আঞ্চলিক ভাষায় তেমন উল্লেখযোগ্য কোন লেখা পাওয়া যায় না। আরো একটা কারণ আমার মনে হয়; আঞ্চলিক ভাষা কবিরা ভাল জানেনও না। বা জানতে চান না। তবে একটা কবিতা যাতে সবাই বুঝতে পারে সে জন্য সে সময়ের সবাই বোঝে এমন ভাষা ব্যাবহার করাই ভাল।

বিষয়টা আলোচনায় আনার জন্য পলাশ দত্তকে ধন্যবাদ।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

পলাশ দত্ত এর ছবি

সে জন্যই কোন কথা কোন ভাষায় লিখতে হবে সেটা কবিকে জানতে হবে।
- এটা খুবই খুবই ভালো কথা বলেছেন।

"কবি কে পাখি হতে হয়, পাখি হয়ে গাছের ডালে বসে আবার মানুষ কবিকে দেখতে পারতে হয়"।
- এর মানে কি তৃতীয় পক্ষ হয়ে কবিকে ঠিকঠিক ঘটনার ভেতরে রেখে দ্যাখার কথাই কি বললেন ওয়াহিদুল হক?

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ পলাশ, এই রকম কিছুই একটা মনে হয় ওয়াহিদুল হক বোঝাতে চেয়েছেন। অভিক্ষতা থেকে লিখতে গেলে, ঘটে যাওয়া ঘটনার সাথে নিজের সম্পৃকততাকে তৃতীয় পক্ষের দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পারা।
কেন লিখি বা লিখব সে প্রশংগে একটা কথা বলতে ভুলে গেছি;
মুজিব মেহেদীর বক্তব্যে আপনার মতামতে সেটা প্রকাশ পেল।
আপনি বলছেন লেখার ভেতর একটা সত্যকে খোঁজার চেষ্টা করাই, লেখার কারন হতে পারে।
আমার ও তাই মনে হয়। একটা সত্যকে আবিষ্কারের জন্যই বা তুলে ধরার জন্য লেখা যায়।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমার এক ভিন্ন কৌতুহল জাগছে ।
মুখবন্ধ থেকে ধারনা করা যায় এই লেখাটা আপনি পাঠ করেছিলেন পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে । আরো ধারনা করা যায়- কবি আবুল হাসান শাহরিয়ার ও উপস্থিত ছিলেন সেখানে(যেহেতু তাকে ঘিরেই আয়োজন) ।

আপনি ঘোষনা দিলেন- বাংলা কবিতা এখন মরা। বাংলা কবিতা পুরনো হয়ে গেছে।
এ সময়ের বাংলা কবিতার পাঠক নন্দিত কবি আবুল হাসান শাহরিয়ার, যিনি কবিতার স্বীকৃতি স্বরূপই ঐ অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত হচ্ছিলেন - তাঁর কি কোন প্রতিক্রিয়া ছিলোনা আপনার এই নেতি'তে?

ক্ষমা করবেন আমার এই কৌতুহল যদি বাড়াবাড়ি হয় ।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নজমুল আলবাব এর ছবি

এই প্রশ্নটা আমিও করলাম। প্রবল আগ্রহবোধ করছি আমি। পলাশ কি সেই আগ্রহ মেটাবেন?

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

পলাশ দত্ত এর ছবি

@ হাসান মোরশেদ ও নজমুল আলবাব
সেদিনের অনুষ্ঠানে শাহরিয়ার ভাই আমাকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানান নাই।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

সুপ্তি এর ছবি

বিতর্কটি ভালোই, কিন্তু কবি হওয়ার জন্য খুব জরুরি বলে মনে হয় না। কবিতার পাঠক হওয়ার জন্য তো নয়ই। প্রথম পাঠে ভালো লাগলেও পলাশ দত্তর কবিতা কেন অন্য আরও অনেকের মতো লেগেছিল, তার উত্তর পেয়ে গেছি। কবিতাটি আর ফিরে পড়ার ইচ্ছে জাগেনি।
*******************************
'ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত'
-সুভাষ মুখোপাধ্যায়

*******************************
'ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত'
-সুভাষ মুখোপাধ্যায়

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

কবিতা চর্চার বিষয় বলে মনে করি। শব্দ আর অলঙ্কার দিয়ে ছুঁয়ে যাওয়া অন্য একটি হৃদয়কে। যদিও কবির ব্যক্তিগত অনুভূতি কবিতা হয়- তা যখন বেশিরভাগ পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যেতে সক্ষম হবে, পাঠককে ভাবতে বাধ্য করবে, শব্দ দ্যোতনায়পাঠক মুগ্ধ হবে- তখনই কেবল একটি কবিতা প্রকৃত কবিতা হয়ে উঠতে পারে।

কবিতার ভাষাকে প্রাণোচ্ছল করবেন কবিই। কিন্তু কবিই যদি ব্যর্থ হন ভাষার মৃত্যু তখনই ঘটে। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ভাষার নয়। কবির।

আলোচনা মন্তব্য সব মিলিয়েই ভালো লাগলো। ধন্যবাদ পলাশ দত্ত।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সারাদিন ছিলাম দৌড়ে... এখন একটু বসছি নেটে... এখন দেখি এইটা...
মজা পাইলাম।

এই ঝামেলার কারনেই তো লেখি না, খালি আপনাদেরটা পড়ি।

কালকা আবার আসতেছি। আজকে বিদায় নেই।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রেজওয়ান এর ছবি

এই ঝামেলার কারনেই তো লেখি না, খালি আপনাদেরটা পড়ি।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

পলাশের নেতীবাচক ভঙ্গীটা পছন্দ হলো না। মুজিব মেহেদী একটা জায়গায় প্রশ্ন তুলেছেন। হাসান মোরশেদ আর নজমুল আলবাবও প্রশ্ন তুলেছেন। আমার আপত্তি নীচের কথাটায়:

পলাশ দত্ত লিখেছেন:
কোনো এক অজ্ঞাত কারণে অনেকানেক কবিতা-চর্চাকারীর ধারণা হয়েছে যে কবিতা বস্তুটাকে বুঝে নিতে হয়। তারা একটা ধারণা ছড়িয়েছেন যে কবিতা বস্তুটা মাথা খাটিয়ে বুঝবার মতো একটা কিছু; কবিতার মানে থাকে; কবিতায় কিছু এটা বোঝানো হয়।

কবিতায় মানে থাকতে নেই? কবিতায় বোঝার মত কিছু নেই? কবিতায় বোঝার মত কিছু থাকতে নেই?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

জিফরান খালেদ এর ছবি

মুর্শেদ ভাই,

আমার পুরা লিখাটা পাঠে মনে হইসে যে এইটা পলাশ ভাইয়ের কবি হিশাবে এখনকার একটা পোয়েটিকস। এবং, সেই পোয়েটিকস হাজির করার ক্ষেত্রে সার্বভৌমতা কবি রাখেন।

সেই হিশাবে আমি মুজিব ভাইয়ের লগে একমত যে, এইটা একটা গুরুত্ববাহী টেক্সট। কিন্তু একই সাথে আমি মুজিব ভাইরে এইটা একটু ভাবতে বলি যে, এই লিখাটা কি কবির যে নিজস্ব একটা সাবজেক্টিভ এসথেটিক্স আসে, সেইটার প্রকাশ হইতে পারে? শুরুর লাইনে যে চমক দেয়া, সেইটাও আমি পলাশের কাব্যচিন্তার পাটাতন ধইরা নিতে আগ্রহী, স্টান্টের বদলে।

যাউজ্ঞা...

আমি মুজিব ভাইয়ের নিজস্ব চিন্তাভাবনসশুদ্ধা লিখার/ লিখাগুলার অপেক্ষায় থাকলাম। আর, হ, মুজিব ভাইসাব, 'বিড়াল' কবিতাখানি ভয়ঙ্কর ভাল লাগসে। ভয়ঙ্কর।

পলাশ দত্ত এর ছবি

আমার পুরা লিখাটা পাঠে মনে হইসে যে এইটা পলাশ ভাইয়ের কবি হিশাবে এখনকার একটা পোয়েটিকস।
-ঠিক

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

পলাশ দত্ত এর ছবি

কবিতায় মানে থাকতে নেই? কবিতায় বোঝার মত কিছু নেই? কবিতায় বোঝার মত কিছু থাকতে নেই?

কবিতায় অবশ্যই মানে থাকতে পারে, অবশ্যই মানে থাকবে। কবিতায় বোঝার মতো কিছু অবশ্যই থাকতে পারে, থাকবে। কিন্তু সেই মানে-বোঝা সবই আসবে ভালো লাগার হাত ধরে। ভালো লাগলে আপনা-আপনিই পাঠক বুঝে নেবেন কবিতার মানে।

প্রেমিকাকে তো ভালো লাগে আমার। কেনো ভালো লাগে তা কি জানি? কেনো ভালো লাগে তা কি জানি না? কেনো ভালো লাগে তা কি বুঝি? কেনো ভালো লাগে তা কি বুঝি না? জানি এবং বুঝিও- তবে সেই জানা-বোঝার আগেই তাকে (প্রেমিকাকে) ভালো লাগে। আর ভালো লাগলেই বুঝি- মনেমনে গোপনে- কেনো তাকে ভালো লাগলো

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।