তাকে বাতিলের অধিকার হয়েছে তোমার?

পলাশ দত্ত এর ছবি
লিখেছেন পলাশ দত্ত (তারিখ: বিষ্যুদ, ২১/১০/২০১০ - ১০:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লোকটা শেষ দিকে যা লিখেছেন তা পড়া যায় না। তিনি প্রতিদিনকার ঘটনা নিয়ে কবিতা লিখতেন। শেষ বয়সে। ওইগুলি কিছু পড়া যায় না। কার সঙ্গে দেখা হলো, কী করলেন গতকাল সন্ধ্যায় তাই নিয়ে কবিতা। এইভাবে হয় নাকি!

শামসুর রাহমান সম্পর্কে এইসব শোনা যায়। এই শতকের শুরুতে লিখতে শুরু করা এক তরুণ কবি হিসেবে এইসব আমারও কানে আসে। কারা বলে এইসব? বলে তরুণ কবিতচর্চাকারীরাই। এবং দুঃখজনক হলেও সত্যি এই যে বয়স যখন আঠারোর ঘরে তখন একদিন পরিকল্পনাও করে ফেলি আর এক বন্ধুর সাথে। ভাবি কবিকে গিয়ে বলি আপনি এইসব লেখা বন্ধ করুন!

তাহলে ওই যে শামসুরের লেখা পড়া যায় না- এই কথার কি কোনো ভিত্তি আছে? তিনি কি আসলেই শেষ বয়সে এসে বাতিল হয়ে যাওয়া এক কবি?!

পড়ি তার ‘অনর্থক’ একটা কবিতা ‘সুদূরের অনন্য প্রবাসী’। হাতের কাছে আপাতত ‘ভাঙাচোরা চাঁদ মুখ কালো করে ধুঁকছে’ বইটা পেয়ে সেখান থেকে কবিতাটির কিছু অংশ :
শহীদ, বলো তো বন্ধু সেই সব দুপুর, গোধূলিবেলা আর
সন্ধ্যারাত, মধ্যরাত মার্কিন মুলুকে
ঢেউ হয়ে স্মৃতিতটে আছড়ে পড়ে কি
কখনও সখনও? বলো, পাতাল ট্রেনের কামরায়
তন্দ্রাচ্ছন্ন মুহূর্তে চকিতে জেগে ওঠো নাকি বিউটি বোর্ডিং
আর লক্ষ্মীবাজারের ঘ্রাণে?

এই কবিতা শামসুরের বন্ধ্, আমাদের প্রবাসী কবি শহীদ কাদরিকে নিয়ে লেখা। নিয়ে লেখা, না মনে করে লেখা? এ সিদ্ধান্ত জানতে কবিতার শেষ পর্যন্ত পড়তে হয় আমাদের।

এই কবিতাটি কি কবির বিরুদ্ধে ওঠা ওই অভিযোগের জবাব দেয়? কিংবা অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণ করে?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা নিয়েও এমন কথা তার শেষ বয়সে কিংবা তারও পরে আমাদের বেঁচে থাকার সময়ে চালু হয়ে যায় যে তার কবিতা পড়া যায় না। এ নিয়ে বুদ্ধদেব বসুর একটা কথা আছে। তার কথা হলো রবীন্দ্রনাথ কবিতায় এমন শব্দ ব্যবহার করেন না যেগুলো পরস্পরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তার কবিতার শব্দগুলি পরস্পরের সঙ্গে বিষম সম্পর্কে প্রবল উজ্জ্বল হয়ে ওঠে না। তাই তার কবিতার শব্দগুলি আলাদাভাবে নিজস্ব পার্সোনালিটি নিয়ে কবিতাকে অতিক্রম করে আলাদা হয়ে পাঠকের চোখের সামনে ধরা পড়ে না। বুদ্ধদেবের মনে হয়, রবীন্দ্রনাথের কবিতার শব্দগুলি ঢেউয়ের মতো ভেসে ভেসে আসে পাঠকের মনে। আর এক সামগ্রিক অর্থছাপ রেখে যায়।

শামসুরের কবিতাও ওইরকমের সমস্যায় আকুল। আজকালকার, মানে তরুণ কবিরা যেরকম কবিতা পড়তে-লিখতে পছন্দ করে, কবিতার মতো তার কবিতার শব্দে-শব্দে সংঘর্ষে-সংযোগে কোনো অভিঘাত সৃষ্টির প্রচেষ্টা (স্বতস্ফূর্ত কি আরোপিত) নেই। তাই আজকালকার তরুণরা তার কবিতা তেমন পড়ে না। পড়বে না তারা। সেইসব তরুণেরা যারা কবিতা লেখে, কিংবা লেখার চেষ্টা করে। কারণ তারা একধরনের কলাকৌশল জানে কবিতা লেখার। একধরনের কলাকৌশলে তারা অভ্যস্ত। ওই কৌশল পার হয়ে প্রবীণ মহৎ কোনো কবির কবিতার কাছে পৌঁছুবার দক্ষতা-যোগ্যতা সবার নেই।

২.
‘নাগরিক কবি’। তিনি নাগরিক মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণা ইত্যাদি ইত্যাদি তার কবিতায় খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। এও শোনা যায়। শামসুর বিষয়ক আলোচনায়। ইতিবাচক অর্থেই এই শব্দবন্ধ বলা হয় কবিটি সম্পর্কে।

কিন্তু ‘নাগরিক কবি’ জিনিসটা কী? কবিতা পড়ে কারা? কবিতা লেখে কারা? এই বিশ-একুশ শতকে থেকেও কবিকে ওই শব্দবন্ধে বন্দি করে পার পেয়ে যাবে তার আলোচকরা?! নাগরিক বলতে যদি শুধু শহুরে মানুষকে বোঝানো হয়ে থাকে তাহলে আমাদের জানাতে হবে কবিতা শহুরে মানুষের বাইরে কতোজন পড়ে? আমাদের জানাতে হবে শহুরে মানুষের বাইরে কতোজন ওই কবিতা নামের জিনিসটা লেখে। আর তার চর্চা করে।

আজকে যে-মানুষটি গ্রামে বসে আছে সে কি এই তথাকথিত নাগরিক জীবনের বাইরে থাকে? তার জীবনেও কি আঘাত হানেনি ডেভেলপারের বহুতল ভবনজীবন? তারও জীবনের রক্তে রক্তে মেশার প্রবল প্রচেষ্টায় ঘরে-ঘরে ঢুকে কি পড়েনি স্যাটেলাইট ফ্যাশন-স্টাইল-জীবন? মোবাইল ফোন? তাকেও কি চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে রাখছে না আমাদের এককেন্দ্রিক আধুনিক জীবন?

তবু আমরা আলোচনায়-আলোচনায় বলে যাবো শামসুুর রাহমান ‘নাগরিক কবি’।!

৩.
তার কি কোনো সীমাবদ্ধতা ছিলো না? ছিলো। অন্য আর সব আধুনিক কবির মতোই কবিতার কথনে তিনি আটকে ছিলেন আমি আর তুমিতে। যেমন ওইখানে আটকে আছে এমনকি আমার সমবয়সী কবিতা লিখিয়েরাও।
ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা, এবার আমি
গোলাপ নেবো।
গুলবাগিচা বিরান ব’লে হরহামেশা
ফিরে যাবো,
তা’ হবে না দিচ্ছি ব’লে।
ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা, এবার আমি
গোলাপ নেবো।

এই কবিতাটি আমরা, ভবিষ্যতের কবিত লিখিয়েরা এইভাবে পড়তে পারতাম, পড়তে পারি:

ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা, এবার সে
গোলাপ নেবে।
গুলবাগিচা বিরান ব’লে হরহামেশা
ফিরে যাবে,
তা’ হবে না দিচ্ছে ব’লে।
ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা, এবার সে
গোলাপ নেবো।

যা তিনি পারেননি (অন্য আর সবার মতোই) তার জন্য তাকে বেদনা দেই না আমি। যা পেরেছেন তার জন্য ভালোবাসায় নত হয়ে থাকি।

আর প্রতিদিনকার ঘটনাকে কবিতায় তুলে আনা? এবং তারও পর কবিতাকে কবিতা করে রাখতে পারা? তা যেদিন পারবো সেদিন নাহয় আমরা আবিষ্কারে বসবো শামসুরের ওইরকম কবিতাগুলির কোনটা সফল, কোনটা ব্যর্থ। তার আগ পর্যন্ত আমাদের কোনো অধিকার নেই শামসুর রাহমানের কবিতাকে বাতিল বলবার।
===0===


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

শামসুর রাহমান সম্পর্কে এইসব শোনা যায়। এই শতকের শুরুতে লিখতে শুরু করা এক তরুণ কবি হিসেবে এইসব আমারও কানে আসে। কারা বলে এইসব? বলে তরুণ কবিতচর্চাকারীরাই।

প্রশ্ন হচ্ছে তারা নিজেরা কি নিজের বুঝ মতো বলতেন নাকি অন্য কোনও জ্যোষ্ঠ কবির প্রভাববলয়ে অবস্থান করে রাহমানকে হেয় করতে চাইতেন নিজের গুরুকে শ্রেষ্ঠত্বের শিখরে তোলার ব্যার্থ প্রয়াসের অংশ হিসেবে। রাহমানের গোটা লেখাটা তো দুরের কথা, একটা বর্ণকেও খারিজ করতে হলে তার থেকে অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন কাউকে সে দায়িত্ব নিতে হয়, যিনি রাহমানের কাব্যমানের বিশ্লেষনের যোগ্য। বাংলায় কি তেমন কেউ ছিলেন?

নাগরিক কবির তো স্কোপ অনেক বেশি। নগর জীবন পল্লী জীবন থেকে অনেক বেশি জটিল এবং বিচিত্র। তাই নাগরিক কবির তকমা আমি তো মনে করি তাকে আলাদা উচ্চতায় তুলে ধরে।

রাতঃস্মরণীয়

পলাশ দত্ত এর ছবি

আমি অন্তত যাদের দেখেছি শামসুর রাহমানের শেষ দিকের কবিতাকে বাতিলের খাতায় ফেলার চেষ্টা করতে তারা কোনো কবির প্রভাব বলয়ে থেকে তা করার চেষ্টা করেননি, এটা ঠিক। আসলে কবিতা বিষয়ে শঙ্খ, শক্তি, উৎপল, জয়, রণজিৎ, মৃদুল হয়ে যে-ধারণা তরুণ কবিরা এখন পছন্দ ও পোষণ করেন সেই ধারণাই তাদের এমন ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে বলে মনে হয়।

কবিকে 'কবি' শব্দটির আগে আর কোনো বিশেষণ দিয়ে চিহ্নিত করলে তাকে আসলে একটা সীমায় আটকে তার সীমাবদ্ধতাই প্রকাশ করা হয় প্রকারান্তরে। এই কারণে 'নাগরিক কবি' শব্দবন্ধ নিয়ে আপত্তি।

পড়া ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

হাসান মোরশেদ এর ছবি

রাহমানকে বাতিলের চেষ্টার পেছনে একটা সুস্পষ্ট রাজনীতি আছে, যেমন রাজনীতি আছে আল-মাহমুদকে গার্বেজ থেকে টেনে তোলার।
আশংকার বিষয় হলো, বাংলাদেশের তরুন কবিদের বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাবিমুখতা। এটি আসলেই রাজনৈতিক বাস্তবতাবিমুখতা নাকি এর ছদ্মাবরনে কোন একটি রাজনীতিকে সুযোগ দেয়া?

দত্তকবিকে কৃতজ্ঞতা শীতঘুম শেষে এই গুরুত্বপূর্ণ লেখার জন্য।
সেই সাথে নিজের একটা পুরনো লেখার লিংক রেখে যাইঃ
শামসুর রাহমান 'গুরুত্বপূর্ন' কেনো?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

একমত
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পলাশ দত্ত এর ছবি

রাহমনাকে বাতিলচেষ্টার রাজনীতি যেমন মানি তেমনই দ্বিমত আল মাহমুদকে গার্বেজায়ন প্রসঙ্গে। আর রাজনীতি? সৃজনশীল মানুষ তার স্বাভাবিক ভাবনাপ্রক্রিয়া বা স্পর্শকাতরতার ভেতর দিয়ে রাজনৈতক একটা অবস্থানে যাওয়ার কথা স্বাভাবিকভাবেই। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি কবিতা বিষয়ে ধারণায় ঘাপলার কারণেই তরুণদের অনেকে রাহমান থেকে দূরে থাকতে ভালোবাসে।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

মাহবুব রানা এর ছবি

আর একটু নিয়মিত হওয়া যায় না কবি?

অতিথি লেখক এর ছবি

শামসুর রাহমানের প্রতি আমার ব্যক্তিগত পক্ষপাত আছে, কারণ খুবই লঘু ধাচের; তিনি পুরান ঢাকার মানুষ, আমারও জন্ম বেড়েওঠা সব পুরান ঢাকায়। তার মর্মমূল যেমন ঢাকায় প্রোথিত, আমারও তাই।আমাদের এই বহুকালের শহরটির এঁদো বস্তি, জৈষ্ঠে পোড়া-শ্রাবণে ভেজা ঠেলা গাড়ি,জনসভা,মিছিল,পার্ক, ল্যাম্পপোস্ট,ফুটপাতে সে প্রবল ভালবাসায় উপস্থিত। সেও মূখ্য নয়, তিনি ছিলেন একটি বিশাল বটবৃক্ষ, যিনি আমার জীবদ্দশায় বিরজমান ছিলেন তাঁর নিভৃত অথচ অনস্বিকার্য অস্তিত্ব নিয়ে । শামসুর রাহমান বেঁচে আছেন এই ঢেড়, আর কী চাই? স্বাত্তিক কবি আর নেই, এ অনুভূতি প্রথম তামসিক আমাকেও কাঁদিয়েছিল, অস্বিকার করব না।
হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন তাঁর প্রথম চারটি ছাড়া অন্য কোন কাব্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, তাতে কী? তিনি শামসুর রাহমান। আশির দশকের পর তিনি ভয়াবহ ভাবে পূনরাবৃত্তি প্রবণ, তাতে কী? তিনি শামসুর রাহমান। তার কাব্যাদর্শ মতেই তার সূচনা আনন্দে হলেও সমাপ্তি প্রজ্ঞায় হয় নি, তাতে কী? আধুনিকতাবাদের প্রচীন বংশের শেষতম এ নিঃস্ব সন্তানটির এ দায় কী আমাদের সমাজের রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতেরও দায় নয়?
[মাহবুব রশিদ, যে জানে না তার মন্তব্য আর কত দিন নিরীক্ষিত হয়ে প্রকাশিত হবে]

সবুজ-মডু এর ছবি

মাহবুব রশিদ, সচলায়তনে আপনার মন্তব্য অনিরীক্ষিত অবস্থায় প্রকাশিত হবে না। আপনার প্রতিটি মন্তব্য নিরীক্ষার ভেতর দিয়ে যাবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

এটি নিদারুণ ভাবে অফটপিক, সবুজ মডুর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে।আমি মূল লেখকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থি।
ভাতৃপ্রতীম সবুজ মডুর কাছে মাহবুব সবিনয়ে জানতে চাইছে ঠিক কতদিন তাকে নিরীক্ষাধীন রাখা হবে। মাহবুব আসলে খুব বেশি লেখেনা, কমেন্টও করে না, তাই কমেন্ট সংখ্যার উপর নির্ভর করে যদি এটি নির্ধারিত হয় তবে নিশ্চিত ভাবেই এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকৃয়ার পর্যবাসিত হবে, তারও ধৈর্‍্যচ্যুতি ঘটবে। মাহবুব আসলে একটি স্পেসিফিক ফ্রেমওয়ার্কে চাইছে।
দয়া করে এখানে জবাব না দিয়ে এ জবাব দিন, মাহবুব কৃতার্থ থাকবে।আমরা এ চমৎকার লেখাটি নষ্ট না করি।

লাল-মডু এর ছবি

এটি নিশ্চিতভাবেই একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। প্রচুর ধৈর্য্য কাম্য।

স্পর্শ এর ছবি

চলুক


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

শামসুর রাহমানকে বাতিল ঘোষনা দিতে পারে একমাত্র আরেকজন শামসুর রাহমান! কবিতা লেখার দু'টো কৌশল জেনে এতটাস স্প্ররধা দেখানো নব্যকবিদের মনে হয় আজকালকার ফ্যাশন!

--- থাবা বাবা!

রণদীপম বসু এর ছবি

শামসুর রাহমানকে বাতিল করার আগে আসেন একটা কবিতা পড়ি-

একটি কবিতার জন্য / শামসুর রাহমান

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতিথি লেখক এর ছবি

তবে আরেকটা কথাও পাশাপাশি বলব, শামসুর রাহমানের অন্বিষ্ট পথ কি আমাদের পথ হতে পারে? আমার মনেহয় কেউ কেউ লেখকের লেখার স্পিরিট না বুঝে অনর্থকই নতুন কবিদের (মনেহয় উত্তরাধুনিক কবিদের) অভিযুক্ত করছেন।তাকে অস্বিকার করার কথা আসছে না। চর্‍্যার কানহ পা থেকে আজ পর্‍্যন্ত যত কবি আমাদের ভাষাকে পরিশ্রুত করেছেন তাসে কাউকেই অস্বিকার করার কথা আসছে না। কিন্তু আমরা যেমন আজ রবীন্দ্র সংগীতের ভাষায় বা ভাবে বা আবহে লিখি না , লিখতে পারি না লিখবনা, তেমনি শামসুর রাহমান ও এ-শতকে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছেন নতুন পথের যাত্রীদের কাছ থেকে।আমি আবারো বলছি তিনি আমাদের পিতা-আশ্রয়, এবং আধুনিকতাবাদের শেষ সন্তান। যেখানে তার শেষ সেখান থেকেই আমাদের শুরু, তিনি যেন সিন্দাবাদের ভুতের মত আমাদের ঘারে না চেপে থাকেন, তাকে আবর্তণই যেন আমাদের শেষ না হয়। নব্য কবিরা স্পর্ধিত হবেন আশা রাখি কিন্তু যেন বিবেকহীন না হোন।
মাহবুব

পলাশ দত্ত এর ছবি

শামসুর রাহমান কেনো আমাদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক (হতে পারেন না) তা নিয়ে একটা লেখা লেখার ইচ্ছা আছে। শেষ করতে পারলে ওটার প্রেক্ষিতে একটা আলোচনা করা যাবে।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

কিছুটা অফটপিক এবং একান্তই ব্যক্তিগত ভাবনা থেকে এই মন্তব্য। আক্রমণাত্মক শোনালে দুঃখিত।

আমি বিশ্বাস করিনা যে কখনোই আমি শামসুর রাহমানের মতো কবি হতে পারব। তার মানে কি এই যে, শামসুর রাহমানের কবিতা আমার কেমন লাগে অথবা কী মনে হয় সেটা আমি বলতে পারব না!

মানে বলতে চাইছি যে, রান্না কিভাবে করে সেটা আমি না-ই জানতে পারি কিন্তু কোন খাবারটা কেমন লাগল সেটা আমি অবশ্যই বলতে চাই।

কোন কবি, লেখক, গায়ক, রাজনীতিবিদ, ধর্মপ্রচারক অথবা অন্য যে কেউ যা করছেন অথবা যা বলছেন সেটা কিভাবে গ্রহন করবো সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যপার নয় কি?

আমি আসলে বলতে চাইছি, শামসুর রাহমান'কে বাতিল করার অধিকার আমার নেই, কারোরই নেই। কখনো হবে সেরকমটাও মনে করিনা। কিন্তু তাঁকে আমি গ্রহণ করবো কিনা সেটা আমার ইচ্ছে, সেখানে কোন অধিকার বা যোগ্যতার প্রশ্ন নেই।
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

মন্তব্যে একমত


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

পলাশ দত্ত এর ছবি

পাঠক হিসেবে বর্জনে অধিকার-যোগত্যার প্রশ্ন নেই। কবিতালিখিয়ে হিসেবে বর্জনে অধিকার-যোগত্যার প্রশ্ন আছে। কারণ কবিতালিখিয়ের রান্নার বিষয়টা জানা থাকার কথা।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

অতিথি লেখক এর ছবি

একজন কবি ক্রমশঃ কবি হয়ে ওঠেন ধারাবাহিক চর্চার মাধ্যমে। একজন পর্বতারোহীর মতো তার এই এগিয়ে যাওয়া। খুবই কষ্টের এই যাত্রা। তবে তিনি নিশ্চিত ভাবেই ওপরে উঠতে থাকেন। কেউ কেউ যে পা হড়কে নিচে পড়েন না তা নয়। পড়েন। কেই দুর্ঘটনাবশতঃ, কেউ স্বেচ্ছকৃত ভাবে। সাধারণ ভাবে আর বাকীরা ক্রমাগত ওঠেন। এই ওঠা এক সময় তার অনুসারীদের কাছে দৃশ্যমান নাও হতে পারে। কারণ পর্বতারোহীকে দেখতে হলে পর্যবেক্ষণকারীকেও কাছাকাছি থাকতে হবে। সমতল ভূমিতে বসে দূরের পাহাড়ের অনেক কিছুই দুর্বোধ্য আর অস্পষ্ট ঠেকতে বাধ্য। তেমনি সমসাময়িক কালের নন্দিত কবি শামসুর রাহমানকে কেউ কেউ বাতিল করতে চাইতে পারে। তবে তাদের জন্য সত্যি করুণা বোধ করি। একজন কবিকে তার সামগ্রিকতা দিয়ে বিচার করতে হবে। আর শেষ জীবনে কবিরা আরো বেশি পরিণত ও ঋৃদ্ধ হন। তাই দু কলম কবিতা লিখে আর বোহেমিয়ান জীবন যাপনের রঙ্গ করে যারা এই সব বলেন তাদের নিশ্চয়ই অন্য উদ্দেশ্য আছে। ধন্যবাদ পলাশ আপনাকে এই সত্য উপলব্ধিটা সবার সাথে ভাগ করার জন্য।
জহিরুল ইসলাম নাদিম

রানা মেহের এর ছবি

শামসুর রাহমানের শেষের দিকে কবিতাগুলো আমার নিজেরও ভালো লাগতোনা।
তবে যে তরুণ কবির দল তাকে বাতিল করতে চান তাদের সমাদর করতে রীতিমতো কষ্ট হবে আমার। আশা করি তারা একদিন মর্ত্যে নামবেন।

লেখা অনেক ভালো লাগলো পলাশ দা।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

পলাশ দত্ত এর ছবি

ওই যে বললাম রাহমানের শেষ দিকের কবিতা নিয়ে একটা লেখা লিখবো। তখন।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বাজে রকমের মেজাজ খারাপের সময় একটা মন ভালো করা লেখা
ধন্যবাদ পলাশ

পলাশ দত্ত এর ছবি

থ্যাঙ্কস লীলেন ভাই।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

লেখা ভাল্লাগছে। সেই সঙ্গে একই বিষয়ে আরো লেখা পড়বার আকঙ্খাও বেড়ে গেছে। শহীদ কাদরী কে নিয়ে একই রকম একটা সমালোচনা পড়তে চাই।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

পলাশ দত্ত এর ছবি

আর কেউ যদি দ্রুত লিখে না ফেলে তাহলে আমার লেখাটা আগে আসতে পারে, কাদরীকে নিয়ে।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

লাল-মডু এর ছবি

প্রিয় পলাশ দত্ত,

আপনার এই লেখাটি আজ দৈনিক সমকালের সাহিত্য সাময়িকী কালের খেয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। সচলায়তনের নীতিমালার দ্বিতীয় ধারাটি এক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয়েছে।

আপনার লেখাটি প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে আপনার নিজের ব্লগে প্রকাশ করা হলো। ভবিষ্যতে নীতিমালা অনুসরণ করে সচলায়তনে লেখার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।