আইইউটি বাংলাদেশের (খুব সম্ভবত পৃথিবীরও) একমাত্র মেয়েহীন ইউনিভার্সিটি। এটা পুরনো কথা। আমি এবং সচলায়তনে আইইউটি'র যারা আছে তাদের মাধ্যমে এই তথ্য বহুবার প্রচারিত হয়েছে।
সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হল- আইইউটি ক্যাম্পাসে মেয়ে অথবা মেয়েজাতীয় কোন বস্তু প্রবেশ করতে পারে না। সব নিয়মের কিছু ফাঁক-ফোকড় থাকে। এই ফাঁক-ফোকড় দিয়ে যদি কোন মেয়ে আইইউটি'তে ঢুকে পড়ে- তখন এক নাটকীয় দৃশ্য দেখা যায়। হল থেকে স্টুডেন্ট'রা, একাডেমিক বিল্ডিং থেকে স্যার'রা, ক্যাফেটেরিয়া থেকে বাবুর্চি মামারা এবং প্রশাসনিক বিল্ডিং থেকে রেজিস্টার- ভিসি চোখ তিন হাত সামনে বের করে দিয়ে মেয়েটাকে দেখতে থাকে। বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার দর্শকও মনে হয় প্রতিযোগিনী সুন্দরীর দিকে এত কৌতুহল নিয়ে তাকায় না।
আজ (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঘুম থেকে উঠলাম একটু অন্যভাবে। আজ আইইউটি'তে মেয়ে আসবে। কারণ- ''এথলেটিকস ফাইনাল ডে''। সাধারণতঃ ছুটির দিনে ঘুম থেকে বারোটার আগে উঠি না। আজ উঠলাম আটটায়। শেভ করতে হবে- গোসল করতে হবে। রুমের বাইরে গিয়ে দেখি- রায়হান বেশ একটা ভাব নিয়ে করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে। পরিপাটি করে কাপড়-চোপড় পরা। আমি সবগুলো দাঁত বের করে দিয়ে বললাম।
- আসা শুরু করছে না কি?
- অবশ্যই। পুরা আইইউটি ভইরা গ্যাসে।
আমার দাঁতগুলো আরো প্রসারিত হল। যাদের গার্লফ্রেন্ড নামক বিশেষ এক প্রকার আত্নীয় আছে তারা নিশ্চয় এতক্ষণে মেইন গেটের কাছে চলে গেছে। আর কিছুক্ষণ পর পর ফোন করছে।
- এই, আর কতক্ষণ লাগবে? তুমি এখন কোথায়।
অতি উৎসাহীরা গত রাতেই ঢাকায় গিয়েছে। সকালে ''গার্লফ্রেন্ড''কে সাথে করে নিয়ে আসবে। আর আমার মত যারা আছে- তুহিন, রায়হান, জিহাদ- আমাদের তেমন একটা কাজ নেই। শুধু ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করা আর -ইস! যদি একটা গার্লফ্রেন্ড থাকত- এই বলে আফসোস করা।
এগারোটার দিকে পুরো আইইউটি মেয়ে-ময় হয়ে গেল। সংখ্যা দেখে মনে হল আইইউটি'র স্টুডেন্টের চেয়ে মেয়ে বেশি। কেউ কেউ মনে হয় একাধিক গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে! ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হল। কারো তেমন একটা আগ্রহ দেখা গেল না। কে যেন দৌড়াতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়েছে।
আমরা কয়েকজন করিডোরে দাঁড়িয়ে আছি। একটু পরে দেখলাম আশেপাশের কয়েকটা রুম থেকে চিকন চিকন কন্ঠ ভেসে আসছে। আমি তুহিনকে বললাম।
- দোস্ত, আমাদের কপালটাই খারাপ।
- হ। শালা।
পাশ থেকে রাব্বানী বলে উঠল।
- শালার মাইয়া মানুষ। কী দেখে যে পছন্দ করে? নইলে আমার মত ছেলে বেকার ঘুরে।
আমি বিরাট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। বাংলাদেশের কোন মেয়ে আর আমার কপালে জুটল না। দেখি আম্রিকা গেলে কিছু করতে পারি কি না।
প্রেমিকেরা তাদের গার্লফ্রেন্ডদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ক্যাম্পাস দেখাচ্ছে। কেউ কেউ বলছে।
- ও মা। তোমাদের ইউনিভার্সিটি টা এত্ত সুন্দর।
- ওয়াও। কী সুইট!
আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনতে লাগলাম। মনে হচ্ছিল কত যুগ যুগ ধরে সামনা-সামনি কোন মেয়ে কন্ঠ শুনি না। রায়হান দেখলাম বেশ ভাবের সাথে সিগারেটের ধোঁয়া দিয়ে রিঙ বানাচ্ছে। আমি মনে মনে বললাম, ''হায়রে গাধা, কপালে না থাকলে রিঙ ছাইড়া কোন লাভ হইব না।'' মুখে কিছ বললাম না। বেচারা এত সখ করে রিঙ বানাচ্ছে। বানাক্ না।
লাঞ্চ করতে যাব- এমন সময় দেখি পাশের রুমের পরের রুমের সাজ্জাদ বাথরুম থেকে বের হল। টাওয়েল পরা। বেশ একটা ড্যামকেয়ার ভঙ্গিতে হাঁটছে। রুমের সামনে এসেই সাজ্জাদের মুখ শুকিয়ে গেল। রুমের ভিতর থেকে লক করা। আর কথোপকথন ভেসে আসছে।
- এটা তুমি নিজে বানাইছ?
- হুম। অনেক কষ্ট হইছে।
- তাই?
আমরা দেখলাম রাগে সাজ্জাদের মুখ লাল হয়ে গেছে। সাজ্জাদের মাথা গরম। রায়হান এগিয়ে গেল।
- দোস্ত। আমাদের রুমে চলে আয়।
- ক্যান? শালা, রুমে বইসা বইসা প্রেম করবে। আর আমি রুমের সামনে টাউয়েল পরে দাঁড়ায় থাকব?
ঠিক তখনই সাজ্জাদের রুমের দরজা খুলে গেল। সাজ্জাদের রুমমেট জাবির। পেছনে একটা মেয়ে। জাবির সাজ্জাদের পোষাক আশাকের অবস্থা খেয়ালই করল না।
- সাজ্জাদ। তানিয়া'র জন্য ক্যাফেটেরিয়া থেকে একটু খাবার দাবার নিয়ে আয় না, প্লীজ।
সাজ্জাদ গাধাটা বলল।
- আচ্ছা। কি আনব?
- ভালো দেখে কিছু নিয়ে আসিস।
বলেই জাবির দরজা আটকায় দিল।
আমরা সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম।
[[ আরো একবছর অপেক্ষা করতে হবে- পরবর্তী ''বালিকা দিবস''এর জন্য। সুতরাং পরবর্তী শুক্রবার থেকে আবার বারোটায় ঘুম থেকে উঠব। ঠেলেও রায়হানকে ওঠানো
যাবে না। তুহিন আবার শেভ করা বন্ধ করে দিবে। রাস্তাঘাটে সবাই তুহিনকে হুজুর ভেবে সালাম দিবে। আর সাজ্জাদ কথায় কথায় রেগে যাবে।
ও...আরেকটা কথা। শেষ প্যারাটা বানায় বানায় লিখছি]]
মন্তব্য
মজা লাগল।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
হায়রে দুনিয়া!
কেউ কষ্ট করে আর কেউ তাদের দুঃখের কাহিনী শুনে
মজা পায়
---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।
আইউটিতে কোএড চালু করার জন্য আন্দোলন হয় নাই কোন?
হাঁটুপানির জলদস্যু
সামান্য একটা ''ক্লাস টেস্ট'' পিছানো যায় না।
আবার ''কোএড'' আন্দোলন!
---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।
আহারে!!
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
এই তো...
মনের দুঃখুটা বুঝলেন
---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।
হিডেন ক্যামেরার কথা লেখলি না কেন?
ও ঐটা...
লজ্জা লাগতেছিল লিখতে
---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।
চোখ বন্ধ করে লিখে ফেলেন। লজ্জার কিছু নাই।
আমরা নাহয় অন্যদিকে তাকিয়ে পড়ব।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
হে হে হে হে...
---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।
ভাই রে, অনেক দুঃখের কথা মনে করায়া দিলা । খালি দেশী বন্ধুগুলা না, বিদেশী ধলা আর কাওলা গুলিও আম্রিকা, আফ্রিকান জাস্তি লাস্যময়ী নিয়া আইস্যা ডেট মারতো আমাগো হাবাইত্তা গুলার নরম বুকের উপর - স্পোর্টস ডে গুলাতে । বাকি দিন গুলা কাটতো, এইটা নিয়া রিসার্চ কইরা, বোর্ড বাজারে কেন এতো গুলা গার্মেন্টস ! দু একটা গার্লস ইস্কুল-কলেজ থাকলে কি ক্ষতি হইতো ?
ভাইয়া কোন ব্যাচ?????
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
আহা...আহা...আহারে....
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ইসস......।শেষে কিনা মেয়ের অভাবে পরতে হলো।আহারে...।
-নিরিবিলি
ভাই লেখেন ভালো। কিন্তু এক আইউটি দিয়া আর কতদিন? নতুন কিছুও লেখেন!!
একমত।
পুরানা লেখা- পড়লাম।
খালি ছেলেদের ভার্সিটি করার পেছনের ইতিহাসটা কী? যদি জানেন, একটু লিইখেন।
(আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারিতে ছবিসহ পোস্ট চাই)
ছবি কেন শুধু? পারলে ভিডিও দিয়ে দিব।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
ইহা, ইসলামিক য়্যুনিভার্সিটি...
গরবী বাংলাদেশে সৌদি মহাশয় দের শিক্ষা'র পাশাপাশি অবদমন চর্চার গুরুত্বপূর্ণ পীঠস্থান।
আহারে বেচারা...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
আহারে...
নতুন মন্তব্য করুন