জীবনে প্রথম পরীক্ষা দিয়েছিলাম- পাঁচ বছর বয়সে। শ্রেণীর নাম ভারী মজার। কোন সংখ্যা দিয়ে পরিচয় পাওয়া শ্রেণী না। প্লে-গ্রুপ। স্কুলের নাম ছিল শিশুকানন কিণ্ডার গার্টেন। আমার এখনো মনে আছে- জীবনের প্রথম পরীক্ষা ছোট্ট আমার মাঝে অন্যরকম আগ্রহের সৃষ্টি করেছিল। পরীক্ষা নিয়ে সেটাই আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ আগ্রহ। আমার এখন শুধু একটা জিনিসই মনে হয়- পরীক্ষা না থাকলে এই গোল পৃথিবীটা অনেক বেশি আকর্ষণীয় হত।
বুয়েটে মিড-টার্ম মানে হলো ছুটি। যে জিনিসটা আসলে পৃথিবীটা অনেক সুখকর হয়ে যায়- সেই ছুটি। আর নারী বিবর্জিত আইইউটিতে মিড-টার্ম মানে হল- পরীক্ষা। যে জিনিসটা আসলে পৃথিবীটাকে বাঁশবাগান মনে হয়- সেই পরীক্ষা। জ্বী হ্যাঁ সুধীগণ- আগামী পরশু অর্থাৎ রবিবার থেকে আমাদের মিড-টার্ম পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। টানা এক-সপ্তাহ পরীক্ষা চলবে। প্রত্যেকটা বিষয়ের স্যাররা পরীক্ষা হলে বাঁশ নিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করবেন। এবং আমাদেরকে পরীক্ষার হলে গিয়ে বিমর্ষ বদনে সেই বাঁশগুলো ভক্ষণ করতে হবে।
প্রত্যেকবার পরীক্ষার সময় আমার মনটা অতিরিক্ত রোমাণ্টিক হয়ে যায়। এবং সবচেয়ে কাকতালীয় বিষয় হলো- প্রত্যেকটা পরীক্ষার সময় আমার মনের সাথে সাথে শালা'র প্রকৃতিও রোমাণ্টিক হতে শুরু করে। পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগেও যে আকাশে মেঘের বিন্দুমাত্র চিহ্ন থাকে না- সে আকাশ পরীক্ষার ঠিক আগের রাতে রাশি রাশি বৃষ্টির ফোঁটা নিক্ষেপ করে। এর কোন মানে হয়?
মেট্রিকে কম্পিউটার পরীক্ষার আগের রাতে সূতো বিবর্জিত হয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম এবং গায়ে একশ এক জ্বর নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। বুঝেন অবস্থা?
প্রত্যেকবার প্রথম দিন পরীক্ষা দিয়ে এসে মনটা খুব খারাপ থাকে। মনে মনে আক্ষেপ করি ''যা-শালা! এইডা কী পরীক্ষা দিলাম!''
দ্বিতীয়দিন পরীক্ষা দিয়ে এসে মনে হয় ''আজকে পরীক্ষাটা এত্ত খারাপ দিলাম... গতকালেরটা তো অনেক ভালো দিছি।''
পরীক্ষার সবচে বড় ফাজলামি হল- মনে একটা চাপ সৃষ্টি করা। পড়া হয় না । শুধু আসন্ন পরীক্ষার কথা চিন্তা করে মনে একটা টেনশন শুরু হয়। ইস! পরীক্ষা বলে কোন বস্তু যদি পৃথিবীতে না থাকত! তাহলে কেমন হতো চিন্তা করা যায়?
এইবার পরীক্ষার সময়টা আমার জন্য আরো অনেক কষ্টকর হবে। কারণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি- পরীক্ষার সাতদিন সচলায়তনের মুখ দর্শন করবনা। দেখা যাক পারি কিনা? যখন প্রেম করতাম দুইদিন প্রেমিকার মুখ দর্শন না পেলেই কেমন কেমন লাগত- আর সাতদিন সচলায়তনের মুখ না দেখে থাকতে পারব কীনা আল্লাহ জানে!
সবশেষে একটা ঘটনা বলে সাতদিনের জন্য সচলায়তনের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি।
আমার চাচা ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময় একদিন দৌড়ে দৌড়ে আমার দাদার কাছে আসলেন।
- আব্বা। আমি সেকেণ্ড হয়েছি।
আমার দাদা-দাদী তো মহা খুশি। ছেলেকে বুকে নিলেন। ছেলের গর্বে গর্বিত হলেন। পুরো গ্রামে মিষ্টি বিতরণ করলেন।
একদিন বাজার থেকে আসার সময় চাচা'র ক্লাস টীচারের সাথে আমার দাদার দেখা হল। কুশল বিনিময়ের পড়ে টীচার আমার দাদাকে বললেন।
- আজিজের লেখাপড়ার অবস্থা তেমন একটা ভালো না।
আমার দাদা স্বাভাবিকভাবেই ভীষণ অবাক হলেন।
- কেন? ওতো এবার সেকেণ্ড হয়েছে।
ক্লাস টীচার গলা পরিস্কার করে বললেন।
- ক্লাসে ছাত্র সংখ্যাই তো দুই।
মন্তব্য
দোস্ত,আমার অবস্থাও সেম সেম।
পড়তে আর ভাল্লাগতেসিলনা।যদিও পড়া স্টার্ট করসি মাত্র এক ঘন্টা আগে।তাই সচলায়তন ভ্রমণে বের হইসি
=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
বুকের মধ্যে আস্ত একটা নদী নিয়ে ঘুরি
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
সবার জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে এই শালা গত সেম এ ৫ এ ৪.৯৬ পাইছে...
=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
LoVe is like heaven,but it hurts like HeLL
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
পরীক্ষা আর ইন্টারভিউ পৃথিবী থেকে বাতিল করে দেয়া উচিত....
বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার আগের সপ্তাহে মাসুদ রানা সিরিজের 'কালকূট' পড়ে যে সুখ পেয়েছিলাম, স্বর্গের হুরবেস্টনীতেও সেটা পাবো কিনা সন্দেহ!
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
হুম— কথা পুরোপুরি সত্য। পরীক্ষার হলে সুন্দরী মেয়েদের পাশে সিট পড়লেতো কথাই নাই — বাঁশের ব্যাস আরও মোটা হয়ে যায়।
কি মাঝি? ডরাইলা?
কলেজে দুইবছর স্বর্গীয় আনন্দে পরীক্ষা দিছি কারণ পিছনে বসতো ....... । তবে সচলের কসম "বাশের ব্যাস আরও মোটা হয়" এই কথার মানে বুঝি নাই।
ভাইরে...
দুঃখের বিষয়ডা হইতেসে আইইউটিতে তো মাইয়া পড়ে না।
আফ্রিকানদের পাশে বইসা পরীক্ষা দেওয়া লাগে।
সুতরাং বুঝতেই পারতেসেন...
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
কিন্তু তোমার জন্যে তো এইডা সুখের বিষয়
নিশ্চিন্তে বিজ্ঞানের গবেষণা কাজ চালাইতে পারবা।বাগড়া দিবার কেউ নাই
=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
LoVe is like heaven but it hurts like HeLL
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
সুখ কি এতো সোজা রে ভাই। সুখের বড় অভাব।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
আপনার ইচ্ছা অবশ্যই পরন হবে,আপনি যেদিন দেশের প্রধান মন্রী নির্বাচিত হবেন।
-নিরিবিলি
দুনিয়াটাই পরীক্ষাক্ষেত্র/ পুরস্কার সব ঐ পাড়ে ।
এখনও রাতে দূস্বপ্নে ঘুম ভেঙ্গে যায়। স্বপ্নে দেখি- পরিক্ষা কাল, অথচ আমি কয়েকটা কোর্সের সিলেবাসও ঠিকমত জানিনা। প্রায়ই দেখি এই স্বপ্ন, যদিও জীবনে খুব কম পরিক্ষাই খারাপ দিয়েছি।
নতুন মন্তব্য করুন