এক ঘর পরেই ড্রয়িং রুম। ড্রয়িং রুমে কালো রঙের একটা টিভি আছে। উপল ইচ্ছে করলেই সোফার ওপর আধশোয়া হয়ে টিভি দেখতে পারে। হাতে রিমোট নিয়ে ইচ্ছেমত চ্যানেল বদলাতে পারে। দাদু কিচ্ছু বলবে না। কে জানে টিভিতে হয়ত খুব সুন্দর কোন কার্টুন হচ্ছে কিংবা ইএসপিএনে বিগ শো'এর রেসলিং হচ্ছে।
কিন্তু উপল টিভি দেখবে না। একটু আগে দাদু উপলের রুমে এসেছিলেন। চুলে হাত বুলোতে বুলোতে বলেছেন...
- কী দাদাভাই। মুখ অমন করে বসে আছ কেন?
দাদু খুব আদর করে চুলে বিলি কেটে দেন।
উপল ঠোঁট উলটে বলল...
- এমনি!
- চল দাদা-নাতি মিলে টিভি দেখি।
উপলের রাগ হল খুব। সে চেঁচিয়ে বলল...
- তুমি ভালো করেই জান... আমি টিভি দেখব না।
হ্যাঁ। উপল টিভি দেখবে না। আব্বু আম্মু বাসায় নেই- তবুও সে টিভি দেখবে না। উডি উড পেকার কিংবা পপাই দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবে না।
আম্মু বাসা থেকে বের হওয়ার আগে উপলকে বলেছিলেন...
- উপু সোনা। টিভি একদম দেখবি না। ঠিক আছে? হোমওয়ার্ক কর্। টিভি দেখার সময় হলে আমি অথবা তোর আব্বু ফোন করব।
উপলের খুব রাগ হয়েছিল। তোমরা মজা করে বিয়ে খাবা... বাইরে ঘুরোঘুরি করবা... আর আমি বাসায় বসে বসে হোমওয়ার্ক করব। অত সোজা না! কিন্তু উপল আম্মুকে এসব কথা বলে নি। বললে দেখা যাবে আম্মু টিভি আলমারীতে তুলে রেখে গেছেন। উপল তাই বলল...
- আচ্ছা। আমার জন্য আইসক্রীম আনবা।
আম্মু উপলের গাল টিপে দিয়ে বললেন...
- আনব। আমার লক্ষীসোনার জন্য মজার একটা আইসক্রীম আনব। শুধু ঠিকমত হোমওয়ার্ক করে ফ্যাল।
আব্বু হাসতে হাসতে বলেছিলেন...
- আমাদের উপু সোনা খুব ভালো। একবার বললেই হয়।
আব্বু আম্মু বের হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উপল ড্রয়িং রুমের সোফায় এসে বসে গেল। কার্টুন নেটওয়ার্কে পপাই হচ্ছিল। প্রথমে দাদু বকা দেওয়ার একটু চেষ্টা করেছিলেন... দাদু পড়তে বস... তোমার আম্মু জানতে পারলে বকা দেবে...
উপল চোখ বড় বড় করে বলল...
- খবরদার। তুমি আব্বু আম্মুকে কিচ্ছু বলবে না।
একটু পরে দেখা গেল উপল আর দাদু মিলে রেসলিং দেখছে আর বিগ শো নাকি রক বেশি শক্তিশালী সেটা নিয়ে ঝগড়া করছে।
একটু পর ফোন বেজে উঠল। দাদু ফোনে কথা বলতে গেলেন। আব্বু আম্মু ফোন করলে কী বলতে হবে সেটা উপল দাদুকে শিখিয়ে দিল। ফোন ধরেই দাদুর মুখ কেমন যেন হয়ে গেল। উপলের কাছে এসে দাদু হাঁপাতে লাগলেন। উপলের খুব ভয় লাগল...
- কী হয়েছে দাদু? অমন করছ কেন?
- দাদাভাই। আমাদের হাসপাতালে যেতে হবে। তোমার আব্বু আম্মু এক্সিডেণ্ট করেছেন।
তিন মাস আগের রাতটার কথা উপলের এখনো মনে আছে। সাদা কাপড়ে ঢেকে ওর আব্বু আম্মুকে অন্ধকার একটা ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দাদু পাগলের মত কাঁদছিলেন...
- আমাকে না নিয়ে আমার ছেলেটাকে নিয়ে নিলে কেন... আল্লাহ!
তার হাতে এক মুঠো মাটি দিয়ে বলেছিলেন...
- এটা এখানে ফেল... দাদাভাই। মা বাবা'র কবরে ছেলেদের প্রথমে মাটি দিতে হয়।
সেই অন্ধকার ঘরটাতে কালো মাটি ফেলতে ফেলতে উপলের অনেক কান্না পেয়েছিল। দাদুর বুকে মাথা রেখে সে সারা রাত কেঁদেছিল।
গত তিন মাস উপল টিভি দেখেনি।
উপলের কেন যেন মনে হয়... আব্বু আম্মুর কথা না শুনে টিভি দেখেছিল বলেই...তারা আর বাসায় ফিরে আসে নি।
মন্তব্য
আহা রে!
কী লিখবো বুঝতে পারছি না। মন খারাপ করে দিলেন।
সৈয়দ আখতারুজ্জামান
মন খারাপ করা গল্প।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ভাই আপনার সমস্যা কি এত কষ্টের গল্প লিখেন কেন?
হাসতে ভুলে গেলেন নাকি?
-নিরিবিলি
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।
ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।
কীভাবে যেন 'মা' উপন্যাসটির (ম্যাক্সিম গোর্কির নয়) কথা মনে পড়ে গেল...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব দেবো। কিন্তু কী পাবো তার বদলে?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
- বিষণ্ণ বালকের অনুপস্থিতি যাতে সচলরা টের না পায় সেইজন্য এই ব্যটা পরিবর্তনশীল ( আসলে গুরু) প্রোক্সি দিয়ে যাচ্ছেন।
প্যাদানী দিলেই ঠিক হয়ে যাবে, এইটা কোনো ব্যাপার না।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
গোধূদা ঠিক বলছেন, এই রোগের একমাত্র ওষুধ হলো প্যাদানি। দিলেই সব মুস্কিল আসান!
হুম। বিষন্ন বালক অতি শীঘ্রই একজনকে দলে পেতে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।
কি মাঝি? ডরাইলা?
কি বলব! ভাগ্য ভালো এটি একটি গল্প।
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
বাহ্ !
ভালো হইছে! মানে গল্প ভালো হইছে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
ইসসস
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
সুন্দর লিখেছেন!
কষ্ট হচ্ছে বাচ্চাটার জন্য।
পড়ার জন্য আর মন্তব্যের জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
আপনাদের কাছে আমার ঋণ বেড়েই চলেছে।
(ধন্যবাদের আরবি কেউ জানেন। )
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
- শোকরানে জাজিরা
(আল-জাজিরা না)
এক দ্বীপ সমান ধন্যবাদ
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নিজের চোখের সামনে এমনটি ঘটলে যতটা কষ্ট লাগতো এটা পড়েও ততটা কষ্ট পেয়েছি। ছোটদের গল্প শুরু করার জন্য সাধুবাদ।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
এই পুলাটার লেখা মিস করি।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নতুন মন্তব্য করুন