১.
গীটার প্রথম হাতে নিয়েছিলাম এসএসসির ছুটিতে। প্রথম প্রথম যখন অশোক পালের বই সামনে রেখে কিছু একটা বাজানোর চেষ্টা করতাম আর ভাই বোনের ভেংচি খেতাম খুব রাগ হত। এমনিতে আমার ধৈর্য্য বলে কিছু নেই। কোন কিছু পাঁচমিনিটে না হলে হাল ছেড়ে দিই। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যপার হচ্ছে... গীটারের ক্ষেত্রে আমার ধৈর্য্যের এক চুল ঘাটতি হলো না।
এবং তিন মাস পরে একদিন যখন কর্ড বাজিয়ে আমার প্রতিচ্ছবি গানটা গেয়ে ফেললাম... আনন্দে আমার চোখে পানি এসে গেল। যে ছোটবোন গীটার সম্পর্কিত আমার আসন্ন ব্যর্থতার কথা চিন্তা করে সবচে বেশি আনন্দ পেত সে ছোটবোন পরপর এগারোবার আমার গীটারের সাথে গান শুনল। ওদিকে কোন এক অজানা কারণে আমার চোখ থেকে পানি ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তার ওপর অনেক দূরে কিন্তু অনেক কাছের আকাশ থেকে তারার মনে হয় আমাদের ছোট্ট বাসাটার ছোট্ট বারান্দায় - আমার একটা গানের কনসার্ট দেখছিল...
একদিন স্টেজে গীটার নিয়ে উঠলাম। প্রথম দিন স্টেজে গান করার মুহুর্তগুলো এখনো মনে আছে। সেদিন তিনটা গান করেছিলাম... নগর বাউল... রিমঝিম ঝিম... শ্লোক। কী উত্তেজনা! গীটারের ছয়টি তারে চোখ দুটো গেঁথে রাখা - যদি ভুল হয়ে যায়। ক্যাডেট কলেজে প্রায় বিভিন্ন ফাংশানে গান করতে হত। এরই মধ্যে আমাদের ব্যান্ডের একটা নামও হয়ে গেল। বৃত্তাধীন।
বৃত্তাধীনের প্রথম এলবামে কী কী গান থাকবে? নাম কী হবে? প্রচ্ছদ কে আঁকবে? কত ছেলেমানুষী! ক্যাডেট কলেজের প্যারেণ্ড গ্রাউণ্ডে রাত আড়াইটায় চিৎকার করে গান গাওয়া... চাঁদকে লুট করে এডজুটেণ্টের কাছে পানিশমেণ্ট... রংপুরে ইণ্টার ক্যাডেট কলেজে মিউজিক মীটে রাত দিন রিহার্সাল করে অংশগ্রহন করা... সব আজ মনে আছে।
সস্তা একটা গীটার বাজাতে গিয়ে বাম হাতের দুই নাম্বার আঙ্গুলে ঠিক মাঝখনা যে দাগটা পড়েছিল... সেটাও এখনো আছে।
ক্লাস ইলেভেনে সিলেটের ক্যাম্প ফায়ার। গোল হয়ে সবাই বসে। একটার পর একটা গান করছি... এখন অনেক রাত কিংবা যদি ইচ্ছে করে।
কলেজে গ্রীন রুমের চাবি নিয়ে... fear of the dark নিজের হাতে বাজানোর প্রথম ছেলেমানুষী উত্তেজনা এখনো মনে লুকিয়ে আছে।
শুধু সেই ব্যাণ্ডে আমি আর নেই। এখন স্টেজে উঠে গান করতে আর কেন জানি ভালো লাগে না। iron maiden... metallica... dream theater ... green day কিংবা মাইক নফলার আমাকে টানতে পারে না... আমার গীটারে এখন আর পেট্রিওচ্চি কিংবা স্টিভ ভাই ভর করতে চায় না। বরং রাতের বেলা করিডোরে বসে একা একা এইটা তোমার গান... কিংবা আমার ভীনদেশী তারা ঐ একা চাঁদটাকে শুনিয়ে যেতে বেশি ভালো লাগে আমার।
এসব গান স্টেজে কেইবা আর শুনতে চাইবে... কেইবা তাকে ছুঁতে পারবে?
তার চেয়ে বরং ঐ বোকা চাঁদটাই শুনুক না...
২.
হাসতে আমার সবসময় ভালো লাগে। আরো ভালো লাগে বুকের ভেতরে অনেক কষ্ট নিয়েও সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলতে। কিন্তু ইদানীং সেটা আর হয়ে উঠছে না।
মা ঢাকায় এসেছেন। মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটাছুটি করছি। হসপিটালে অসুস্থ মাকে নিয়ে সময় কাটানোর পর পৃথিবীর কোন ছেলেই বোধহয় হাসতে পারে না।
তবুও আমি চেষ্টা করছি। একটা উদাহরণ হতে পারে এটা...
গত নভেম্বরে ইন্ডিয়া গিয়েছিলাম। সবাই জিজ্ঞেস করে- কী কী মজা করলি?
আমি হাসি। যার অর্থ হলো- হ্যাঁ অনেক মজা করছি।
কাউকে আমি বলতে পারি না- ইন্ডিয়ায় ঐ দশদিন আমি মাকে নিয়ে appollo gleneagles hosopital এ বসে ছিলাম আর কিছুক্ষন পর পর চোখের পাতা হাতের তালু দিয়ে ঢেকে দিচ্ছিলাম।
না।
মাকেও আমি চোখের জল দেখাতে চাই না।
মন্তব্য
মা সুস্থ হয়ে উঠুন, এটাই প্রার্থনা ।
পরেরটায় কষ্ট পাচ্ছি!
-জুলিযান সিদ্দিকী
মা শব্দটা আমার কাছে অন্য রকম একটা শব্দ মনে হয় যার আগে আমার তোমার বলতে ইচ্ছে করেনা! মা তো মা-ই
মা এখন কেমন আছেন ?
মা ভালো থাকুন ।
আপনার তাও মার সেবা করার সুযোগ আছে, আমার তাও নেই।
মা অবশ্যই ভালো হয়ে উঠবেন।
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
শুরুটা পড়তে পড়তে ভাবিনি শেষটা এমন হবে...
মা'র জন্য শুভকামনা...
---------------------------
থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
আসলেই গীটার শেখার ক্ষেত্রেই মনে হয় তুই একটু ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছিস। ভালোই হয়েছে তোর বোনের মতো প্রতিচ্ছবি গান শুনে আমিও তোর পাগলা ভক্ত হয়ে গেছি। সেই মুগ্ধতা বেড়েছিল অঞ্জনের চ্যাপ্টা গোলাপ শুনে। তারপর আরও কত কি...
তোর সাথে আমার পরিচয়ের দিনটার কথা এখনও মনে আছে। রংপুর ক্যাডেটে আইসিসিএলএম এর সময়। রাতে একাডেমী ব্লগে প্র্যাক্টিস করছে সবাই। আমি ফোজদারহাটের রুমে যেয়ে দেখলাম ঠোঁট কালো দাঁত ফাক করা গাঞ্জাখোর টাইপ চেহারার এক পোলা আর্টসেলের ভুলজন্ম বাজাচ্ছে। সেই থেকেই শুরু।
তোর পেট্রোচি না কি বালছাল আছে ওইগুলা হওয়ার দরকার নাই। তুই ঘুম পাড়ানী গান গা। আমি আছি। আরও অনেকেই আছে।
আন্টির সুস্থতা কামনা করছি...
---------------------------------
তুই কই? আজকে আসবিনা। দোস্ত আয়া পড়। মহিব গেলেগা পুরা ব্লকে আমি একা
---------------------------
থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
তুই কই? আজকে আসবিনা? দোস্ত আয়া পড়। মহিব গেলেগা পুরা ব্লকে আমি একা
---------------------------
থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
আপনার প্রায় লেখাগুলোতেই মায়ের প্রতি টানটা খুব স্পষ্টভাবেই টের পাওয়া যায়। ভাল লাগে।
আপনার মা খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন, ভাল থাকুন।
সেইসাথে ভাল থাকবেন আপনিও।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
মা কেমন আছেন?
চিন্তা করো না।
ভাল হয়ে যাবেন। প্রার্থনা করি।
বোঝা যায় আপনি মাতৃকাচিহ্ন মুখে নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। সেই মাতৃকাদেবীর স্বাস্থ্য কামনায়।
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
মা থাকতে বুঝিনি মা কী ছিল?
---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
মা খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন, এই কামনা করছি। মা'র কাছে থাকার আনন্দটুকু উপভোগ কর। সেটাই এখন সবচেয়ে বড় পাওয়া।
আপনার মা'র জন্য শুভকামনা .........
মায়ের জন্যে অনেক অনেক শুভকামনা।
তুমিও ভাল থেকো।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
মায়ের সুস্থতা কামনা করছি।
গিটারের প্রসঙ্গ পড়তে পড়তে ভাবছিলাম মন্তব্য কি কি হতে পারে... আজ কেন যেন মন্তব্য ভূত ভর করেছে আমায়... অনেক অনেক কথা মনে পড়ে যাচ্ছিলো...
শেষটায় এসে দেখলাম সব ভুলে গেছি। আমি কেন জানি এজাতিয় পরিস্থিতিতে কিছু বলতে পারি না... সহমর্মিতা বা শুভকামনাও করতে পারি না... এসব জায়গা থেকে দূরে পালাই...
আমার কিছুই বলার নাই... শুধু তাঁর সুস্থতাই কামনা করি।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
শুভকামনা ।
আপনার মা সুস্থ হয়ে উঠুন।
আবার হাসতে শুরু করুন। বুকের ভেতরে কষ্ট নিয়ে নয়।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
গীটার শেখায় যে ধৈর্য দেখিয়েছিলেন, সেটাকে কাজে লাগান। মা সুস্থ হয়ে উঠলে প্রাণভরে একবার হাসবেন তাঁর সামনে।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
নতুন মন্তব্য করুন