এখন যা লিখব তা শুনে অনেকের মেজাজ গরম হয়ে যেতে পারে- অনেকে আমাদের প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে থুতু দিতেও দ্বিধা করবেন না। আমি এখন লজ্জার সাত্থে সেসব কথা লিখব। একটু আগে আমি আমার দেশে বসে যা শুনেছি। এ সব লেখার পর আমি ক্ষমাও আশা করি না। আমি শুধু মাথা নীচু করে এসব কথা লিখব। এই পোস্টের জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন প্লীজ।
১। আমি যখন ঐ রুমে গেলাম। ঠিক পাঁচ মিনিট আগেও আমি জানতাম না- বাংলায় এসব কথা আমাকে শুনতে হবে। আমাদের ভার্সিটিতে অনেক পাকিস্তানি আছে। আমাদের ব্যাচে আছে। তাদের সাথে কথাবার্তায় হঠাৎ করে ১৯৭১- এর কথা উঠলে ওরা লজ্জা পেয়ে যায়। অন্তত গলার স্বর উঁচু করে এসব কথা বলে না। যা আমি বাংলাতে শুনলাম। হ্যাঁ। আমি বাংলাতে এসব কথা শুনেছি। আমার সেই বন্ধু আমাকে বলল...
- মুক্তিযুদ্ধে জামাতের ভূমিকা নিয়ে তোদের কাছে নিরপেক্ষ টাইপ কোন বই আছে?
আমি ইতিহাস জানি না। আমি আমার বাবাকে দেখেছি। জামাত কিংবা এই জাতীয় নাম শুনলে আমার বাবার মুখ কেমন ঘৃণায় জ্বলে উঠে। আমি আমার বাবার মাঝে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দেখেছি। জামাতের নিরপেক্ষতা কী? আমি জানি না। আমি শুধু ছোটবেলা থেকে এই ধারণা নিয়ে বেড়ে উঠেছি- জামাত কিংবা শিবির শব্দ শুনলেই আমার মুক্ত বাতাসে যেতে হয়। কারণ আমার আশপাশ গন্ধ হয়ে যায়। আমার বন্ধুর দিকে আমি তাকাই। ওর মুখে হালকা দাঁড়ি উঠেছে। আমি বললাম...
- তোর কথা আমি বুঝি নাই।
আমাদের বয়েসী পোলাপাইনের আড্ডায় সাধারণোত দেশের কথা আসে না। আমার বঞ্চুর দিকে তাকিয়ে আমি কিছুই বলতে পারলাম না। কয়েকদিন পর আমার বন্ধুদের কাছে (কয়েকজন মাত্র) বই দেখি। নীলক্ষেত থেকে কিনে আনা চটি বই। আসাদ বিন হাফিজের ''মুক্তিযুদ্ধ যুদ্ধাপরাধী রাস্টদ্রোহী'। আরো কী কী যেন নাম। ওদের মুখে বুলি ফোটে।
- দিল্লী এগ্রিমেন্টের কারণে ভারতীয়রা পাকিস্তানিদের সাথে যুদ্ধবন্দী বিনিময় করছিল। এই কারণে ১৯৫ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে পাকিস্তানে পাঠানো হয়।
এই যুক্তির পর ওরা ওদের জিহবা আরো লম্বা করা শুরু করছে। আমার বন্ধু যে বাংলায় কথা কয়- সে বলতেছে পাকিস্তানিরা ক্ষমা পাইতে পারলে যুদ্ধাপরাধীরা( বাংলাদেশি হারামীরা/ রাজাকাররা) কেন পর ক্ষমা পাবে না।
এসব কথা শোনার পর আমার সত্যি সত্যি চোখ দিয়ে পানি এসে যায়। আমি কান্না দমায় রাখতে পারি না। আমি ন্যাকামি করতেসি না। তুহিন আমার রুমমেট- ও একটা লেখা লিখল। আমি - রায়হানের মুখে মুহাম্মদের মুখে গালি শুনলাম। রুবাইয়েত- যে রুবাইয়েতরে আমরা ফাজলামি কইরা 'ইয়ো' ডাকি। ওর মুখটা লাল হয়ে গেল। বেচারা এসব কথা শোনার পর কী করবে বুঝতে পারতেছিল না।
আমি এসব কথার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারতেছি না। আমি আসলেই সাজায় গুছায়ে এসব কথা লিখতে পারতেছি না।
২/ ওরা ইসলাম প্রচার করছে। কোন কথা শুরু হইলেই কোন না কোনভাবে ধর্মে নিয়ে যায়। অনেক কিছুই নিয়ে যায় ইসলামের দিকে। এতদিন সব শুনে আসছি। মেজাজ খারাপও করি নাই। মাঝে মধ্যে মজা পাইছি। মাঝে মধ্যে বিরক্ত হইছি। কিন্তু আজকে যখন শুনলাম বাংলাদেশ হয়ে ইসলাম ধ্বংস হইছে- পাকিস্তান থাকলে ইসলাম অনেক আগায় যাইত... এসব শোনার পর আমি কী বলব? আমি আমার ঘৃণা ঐসব হারামজাদাদের দিকে মারব যারা এসব কথা বলছে। আমি আস্তে আস্তে আরো জানতে পারি- মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসলাম পন্থী সব রাজনৈতিক দলই পাকিস্তান চেয়েছিল। ইসলাম পন্থী সব মানুষ চায় নি। কিন্তু ইসলাম পন্থী সব দলগুলা চেয়েছিল। এসব কথা অস্বীকার করে আমার বয়েসী একজন মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জামাতের ভূমিকা কী ছিল এসব খুঁজতেছে! এসব কেন হইতেছে? আমার এ জিনিসটা জানতে ইচ্ছে করে। এসব কী আমাদের প্রজন্মের দোষ ? কেন হচ্ছে? আমি ঠিকমত বলতে পারতেছি না। আমরা সুন্দর করে আমাদের প্রশ্ন তুলে ধরতে পারছি না। কেউ সাহায্য করেন। প্লীজ। মাত্র ছত্রিশ বছর পরে একজন মানুষ বাংলায় এসব কথা বলতেছে- এই প্রজন্মের একজন হয়ে আমার কী কিছুই করার নাই!!!!! আমি কী এই দেশের কেউ না।
৩/ বাঙালি নাকি আবেগের জাতি। আবেগের বশবর্তী হয়ে এতদিন পর হুজুগ উঠছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। সবাই নাকি এসব চায় না। অল্প কিছু রাজনৈতিক মানুষ এই আবেগকে পুঁজি করে একটা হুজুগ তুলে দিছে। এর কবলে পড়ছে জামাতে ইসলামী নাকি বালছাল কতগুলা। অনেকদিন আগে একটা গল্প পড়ছিলাম। হুমায়ুন আহমেদের লেখা। জলিল সাহেবের পিটিশন। এটা গল্প না। বুয়েটের আমাদের ব্যাচের হুসেন নেটে যত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখা আছে সবগুলার লিংক এক ওয়েব পেইজে নিয়ে আসার একটা প্রস্তাব দিছে। দোস্ত! তোরে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমরা যে মুক্তিযুদ্ধ ভুলে যায় নাই- সবারে দয়া করে জানা। সবাইরে সামনে আগায় আসতে বল। আমাদের বয়েসী কেউ উলটাপালটা কথা কইতেছে। আমাদেরকেই এটা ঠ্যাকানো লাগবে।
এসব হারামজাদারা কী শুরু করছে। আর মুখ বন্ধ করে বড়দের দিকে তাকায় থাকলে চলবে না। আমাদের মধ্যে যারা আছে তারা যদি এসব শুরু করে আমাদেরই তো কিছু একটা করা লাগবে। চল্। এসব ............... গুলারে কিছু একটা করি। এমন করে চুপ করে আমরা আর বইসা থাকুম ক্যান?
আমি বলতে পারতেসি না...
............
আমার প্রিয় কবি সুনীল একটা কবিতায় ''আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি- তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখব বলে'' এটা কেন বলছিল জানি না। কুকুরের মত একটা প্রাণী পশু হয়ে জন্মাইছে বলে এটা হল। আর আমাদেরকে আমাদের ভাষাকে যারা ধ্বংস করছে তাদের কী করব? তাদের কী বলে গালি দিব? পৃথিবীর সবচে ঘৃণার গালি কোনটা? আমার বুকের ভেতরে সবচে আঘাত করে কোনটা জানিস। যখন শুনি আমাদের ভাষায় মহান যে সব মানুষ এসেছিল তাদেরকে হারামজাদারা খুন করে দিছে। আমাদের বাংলাকে ......... বাচ্চারা ভেঙে দিয়ে গেছে। আবার ঐ সব হারামজাদাদের পক্ষে কথা বলার জন্য নতুন হারামজাদারা গজাইছে--- দোস্ত খুব কান্না আসতেছে। তোরা যারা দেশের জন্য কাঁদস--- দেশকে ভালোবাসছ---- তাদের কসম খেয়ে বলতেছি... আমার কাঁদতে ইচ্ছা করতেসে। আমার চিৎকার করে প্রৃথিবীর সবচেয়ে বিশ্রী গালিটা দিতে ইচ্ছে করতেছে। আমি কিছুই বলতে পারব না?
(যখন সচলে দেশ নিয়ে কথা হয়- মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা হয়- মুগ্ধ হয়ে - অনেক অনেক শ্রদ্ধা নিয়ে পড়ি শুধু। কিছুই বলার থাকে না। কিন্তু আমরা শুধু শুনে যাওয়ার যাওয়ার জন্ম এই দেশে জন্মাই নাই। কিছু অন্তত বলতে ইচ্ছে করে। চিৎকার করে বাংলাকে বাংলাদেশকে ভালোবাসার কথা জানাতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আমাদের বয়সটা এই জন্যই? শুধুই মজার কথা বলব। প্রেম করব। কিন্তু দেশের জন্য সবাই যখন কথা বলবে চুপ করে থাকব। দেশের জন্য কথা বলব না।? আজকে এমন সব কথা শুনছি এই সব পোলাপাইনের কাছ থেকে- কী বলব বুঝতে পারতেছি না। খুব খুব একটা গালি দিতে ইচ্ছে করতেছি। কিন্তু আমি সবার সামনে গালি দিতেও লজ্জা পাইতেছি কেন? ঐ সব হারামীরে গালি না দিলে আর কারে গালি দিব? ................................................................................................... আমি জানি না। এটা কী পোস্ট দিলাম। আসলেই জানি না। অনেক কিছু টাইপ করে ফালায়ে দিছি... ওসব লেখা এখানে তুলে দিতে ইচ্ছে করতেছে।শহীদুল্লাহ কায়সার... গোবিন্দ্রচন্দ্র দেব... মুনীর চোধুরী... আর পি সাহা...আপনাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার মুখ আমাদের নেই। জহির রায়হান...আলতাফ মাহমুদ আপনাদের কাছে ক্ষমা কীভাবে চাইব?
আমরা কী করব? আমাদের কেউ বলে দাও শুধু)
মন্তব্য
আপনার এই হাহাকারটা যেরকম আমার মধ্যে ছড়ালো ওভাবে ছড়িয়ে দিন আপনার চারিদিকে, আসুন সবাই মিলে আবার শক্ত হই, বাংলাদেশী হয়ে উঠি ! আসুন বুঝতে শিখি 'বাংলাদেশী' কথাটার মানে ..
গালিটা আমিও খুজছি
------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
লেখাটা কেন দিলাম জানি না? তবে কিছুই বুঝতেছি না।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
এসব নষ্টবীজদের এখন গালি দিতেও ঘৃণাবোধ করি।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
ঠিক বলছেন। না পেরে এই লেখাটা দিয়ে দিছিলাম। এসব কথা নতুন করে বলতে হয় না।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
বিচিতে লাত্থি মাইরা দেখা যাইতে পারে
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
জানি না। কিছুই জানি না। লাথি মারতে পারলে আসলেই শান্তি লাগত।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
পরিবর্তনশীল - মন খারাপ হলো আপনার লেখাটা পড়ে, কিন্তু অবাক হতে পারলাম না! আর, পারলাম না দেখে মনটা আরো খারাপ হলো। এটা তো অপরিকল্পিত বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা না? জামাত-শিবির বহুবছর ধরে এভাবে আস্তে আস্তে মানুষের মাথা গুলিয়ে দিচ্ছে, আস্তে আস্তে নিজেদের ঘাঁটি শক্ত করছে - কি রাজনীতিতে, কি সাধারণ সমাজে।
আমাদের দেশে আলাদা ইসলামিক চ্যানেলের কি দরকার? আমি যখন ঢা বি তে পড়তাম, তখন তো ইসলামিক স্টাডিজ ছাড়া হাতে গোণা হিজাব বা বোরখা পরা ছাত্রী/শিক্ষিকা দেখা যেত, আর এখন? রাস্তা ঘাটে কতজন দেখতে পান 'সৌদী বুরকা' পরা? ফতোয়া তো শুরুই হয়েছে নব্বই দশকের শুরুর দিকে।
মনে করছেন, মানুষ আগের চাইতে বেশী ধর্মপ্রাণ হয়ে এসব করছে? মোটেই না। ঠিক যেমন করে বাংলাদেশ আর্মিতে অর্ধেকের বেশী (যদ্দূর শুনেছি) জামাতপন্থী বা জামাত-সহানুভূতিশীল জড়ো করা হয়েছে, এটাও তাই। অনেকদিন ধরেই আস্তে আস্তে জামাত তাদের সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে, মিডল ইষ্টের টাকা নেয়া সরকারকে চাপের মধ্যে রেখে, দরকার মত ভারতের ভয় দেখিয়ে, একটা অস্থিতিশীল দেশে একমাত্র 'আল্লাহ্'র কাছে সবকিছুর সমাধান আছে বলে হিপনোটিক প্রচারণা চালিয়ে ধীরে ধীরে একটা অজগরের মত এগোচ্ছে। এরপর পরবর্তী প্রজন্মকে যদি 'পছন্দমত ইতিহাস' গেলানো যায় - আর কিছুই কিন্তু করার বাকি থাকে না! দশ/পনেরো বছর পর সব্বাই এক দল, একমত হয়ে যাবে - জামাতীদল।
গালি দিন, মন খারাপ করুন, কিন্তু দয়া করে চুপ করে থাকবেন না। ওই সব ফালতু চটি বইয়ের রেফারেন্সের বিপক্ষে ঠান্ডা মাথায় '৭১ এর যে সব বই আর ফটো এলবাম বের হয়েছে দেখাতে থাকুন। এ ছাড়া আর কিইবা করার আছে আমি সত্যিই জানি না।
একইসাথে গা জ্বলে যাচ্ছে আর মন খারাপ হচ্ছে। খুব ভালো কোন সাজেশনও তাই দিতে পারলাম না!
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ স্নিগ্ধা আপু। আর কী বলব বুঝতে পারতেছি না।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
ভাইজান অত ভেঙে পড়ার কিছু নেই
এখানে কয়েকটা বিষয় একটু পরিষ্কার করে রাখা দরকার নিজের মগজের ভেতর
০১
১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ এবং ৭১ এর ১৭ ডিসেম্বরের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস
১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বলতে বোঝাতো যুদ্ধ করা কিংবা যুদ্ধে সহযোগিতা করা কিংবা যুদ্ধকে সমর্থন করা এবং বিপক্ষ বলতে বোঝাতো এই জিনিসগুলোর বিরুদ্ধকারীদের
ওই কাজগুলো অনেক বেশি নির্ধারিত ছিল বলে সহজেই চেনা যেত কারা পক্ষ আর কারা বিপক্ষ
কিন্তু ৭১ এর ১৭ ডিসেম্বর থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বলতে কিন্তু বোঝায় নিজের নিজের অবস্থান থেকে বাংলাদেশের জন্য কিছু করা এবং তার মধ্যে আমার হিসেবে সবচে বড়ো কাজটা হচ্ছে নিজেকে প্রয়োজনীয় করে তোলা কিংবা নিজেকে কাজ দিয়ে প্রমাণ করা
আর সবচে ছোট কাজ হচ্ছে মূর্খদের সাথে তর্ক করে এনার্জি নষ্ট করা
বাংলাদেশকে কেউ গালি দিলে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হয় না
ক্ষতি হয় যখন বাংলাদেশের একটা মানুষকে কেউ গোঁড়া বানিয়ে ফেলে তখন
আর বাংলাদেশকে প্রশংসা করে কিংবা বাংলাদেশকে মুখে মুখে তর্ক করে গ্লোরিফাই করলে বাংলাদেশের কোনো লাভও হয় না
লাভ হয় যখন একটা মানুষকে গোঁড়ামি মুক্ত করা যায় তখন
বাংলাদেশের জন্য এখন সবচে বেশি দরকার গোঁড়ামিমুক্ত ইয়াং জেনারেশন
ওই জায়গায় আমাদের প্রত্যেকের শ্রম দেয়া দরকার অযথা তর্ক বাদ দিয়ে
০২
গ্রামে একটা কথা আছে
মারল তো কী হলো কানে তো ধরেনি
রাজাকাররা এখন বাংলাদেশে নিজেদের জন্য সম্মানজনক একটা অবস্থা খুঁজতে গিয়ে এরকম বিভিন্ন যুক্তি খুঁজে বেড়াচ্ছে
ওগুলোকে পাত্তা দেবার কোনো কারণ আছে বলে আমার মনে হয় না
আর যারা জামাত করে তারা অন্য কোনো দলে যেতে পারে না বলেই জামাত করে
যদি যেতে পারতো তাহলে তারা কবে বেশভূসা পাল্টে চলে যেতো অন্য দলে এবং ভুলে যেত ৭১এর পরাজয়
কারণ তারা এটা পরিষ্কার করেই জানে যে ৭১ তাদেরকে কানকাটা করে সবার কাছে চিহ্নিত করে দিয়েছে
হাটে মাঠে ঘাটে তাদেরকে সেই অভিযোগগুলো নিয়েই সেই দেশেই থাকতে হচ্ছে যে দেশ তারা চায়নি (পাকিস্তানেও যেতে পারছে না কারণ পাকিস্তানিরাতো তাদরেকে পাকিস্তানি হিসেবে নেবে না)
এই কারণেই তারা বিভিন্ন যুক্তি কুযুক্তি তুলে এনে নিজেদেরকে মরীয়া হয়ে সম্মানজনক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে
এবং এর মধ্যে তাদের সবচে বড়ো অস্ত্র ইসলাম কিংবা ধর্ম
কারণ তারা জানে ধর্ম জিনিসটা ছেড়ে দিলে তাদের দাঁড়াবার আর কোনো জায়গা থাকে না
ওটার উপর ভর করেই তাদেরকে বাংলাদেশে লাত্থিগুতা খেয়ে থাকতে হবে
০৩
ইয়াংদের মধ্যে রাজনীতি মুক্তিযুদ্ধ রাজাকার এসব নিয়ে ঝাপসা চিন্তার মূল কারণ হলো ছাত্র রাজনীতি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া
মিলিটারি শাসন আর আমেরিকার লাগাতার প্রচারণায় আমাদের বেশিরভাগ স্টুডেন্টই এখন রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে
অনেকে আবার বড়ো গলায় বলে যে তারা রাজনীতি ঘৃণা করে
রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্নতায় হয়তো স্টুডেন্টদের রেজাল্ট এখন ভালো হচ্ছে (?) কিন্তু পাশাপাশি স্টুডেন্টদের মধ্যে গোঁড়া এবং ভীতুর সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে আশংকাজনকভাবে
আর এর ফাকেই ঢুকে যাচ্ছে ধর্মের নাম করে নব্যরাজাকারবাদ
কারণ অনেকের পক্ষেই এখন আর এসব বিষয় বিশ্লেষণ করাও সম্ভব হচ্ছে না অজ্ঞতার কারণে
০৪
বিজ্ঞান পড়লে কিংবা বিজ্ঞান চর্চা করলেই কিন্তু মানুষ আধুনিক হতে পারে না
বিজ্ঞানসম্মতভাবে যৌক্তিক হওয়ার নামই কিন্তু আধুনিকতা
আমরা কয়জন নিজেদের চিন্তায় বিশ্বাসে কাজে বিজ্ঞানসম্মতভাবে যৌক্তিক?
আর যতক্ষণ পর্যন্ত না বিজ্ঞানসম্মতভাবে যৌক্তিক হওয়া গেছে ততক্ষণ পর্যন্ত দেশ কিংবা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যতই চিল্লাচিল্লি করি না কেন
সব অর্থহীন
০৫
রাজনীতি করি বা না করি
রাজনীতি সম্পর্কে আপডেট থাকা আমাদের ভালো রেজাল্ট করা থেকেও জরুরি এখন
সহমত
------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
আপনার প্রত্যেকটা কথার সাথে আমি একমত। তাই তেমন কিছু একটা বলা হয় না। কিন্তু কালকে এর রাগ লাগছিল এর চেয়ে জঘণ্যভাবে লিখছিলাম। পরে তবুও দিছি। কালকে আসলেই মেজাজ বেশি খারাপ হয়ে গেছিল। অনেক ধন্যবাদ লীলেন ভাই। অনেক ধন্যবাদ।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
আমরা একটা অন্ধকার থেকে আরেকটা গভীর অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছি। যখন...
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
আমার মনে হয়, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে, জামাত-শিবিরের হাত থেকে রেহাই পাওয়া কোন মতেই সম্ভব নয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলেই জামাত-শিবির শেষ হয়ে যাবে না। কারণ তাদের মধ্যে অনেকেই আছে যাদের বিরুদ্ধে কোন সুস্পষ্ট যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ নেই। সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠিত হলে, নিজ নিজ গঠনতন্ত্রের কারণেই কোন ধর্মীয় রাজনৈতিক দল রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবে না।
মোট কথা, যতদিন মানুষ মনে করবে ধর্মে রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বোত্তম পন্থা বলে দেয়া আছে, ততদিন জামাত ও অন্যান্য ধর্মীয় রাজনৈতিক দল থাকবেই। তাই গোড়াতে আঘাত না হেনে উপায় নেই। এ আঘাতকে অবশ্যই বুদ্ধিবৃত্তিক হতে হবে। কারণ আঘাতের কারণে কোনরকম সহিংসতার সৃষ্টি হলে শিবির-জামাতীদের মধ্যে "শহীদী তামান্না" জেগে উঠবে। এ ভাই বড় ডেঞ্জারাস জিনিস। যার মধ্যে একবার "শহীদী তামান্না" জাগছে তার উপর যুক্তি ক্যান, কোন সদালাপও খাটে না।
তাই, আমাদের প্রথম কাজ হতে পারে "সেক্যুলারিজম" (রাষ্ট্রের কোন ধর্ম নেই) সম্পর্কে নিজেদের ধারণা পরিষ্কার করা এবং সব ছাত্রদের মাঝে তা ছড়িয়ে দেয়া।
দ্বিতীয় কাজ হতে পারে, বিশুদ্ধ ছাত্ররাজনীতির প্রতি সবাইকে আগ্রহী করে তোলা। বিশুদ্ধ ছাত্ররাজনীতি বলতে আমি, দেশে কি হচ্ছে না হচ্ছে তা জানা এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করাকে বুঝাচ্ছি।
তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আইইউটি-তে বোধহয় কোনটাই সম্ভব না। কারণ, আমরা ক'জন এক ইসলামী ভার্সিটিতে পড়ি। এখানে অমুসলিম ছাত্ররা পড়তে পারে না। যদ্দুর জানি ওআইসি মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন, সে হিসেবে মুসলিম দেশের (যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান) অধিবাসী যে কারও এতে পড়ার অধিকার থাকা উচিত। বাংলাদেশের কোন হিন্দু বা ইন্দোনেশিয়ার কোন খ্রিস্টানেরও এতে পড়ার অধিকার থাকা উচিত। এখানে তা নেই।
আমরা ক'জন এক ইসলামী পরিবেশে পড়াশোনা করি। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এমন পরিবেশের প্রভাব কতটা খারাপ হতে পারে তা আমাদের কিছুটা হলেও বুঝতে পারা উচিত।
নিঃসন্দেহে, ধর্ম একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কিন্তু বর্তমানে, আমরা ধর্মকে সর্বোচ্চ একঘরে করতে পারি, এর বেশি বোধহয় সম্ভব হবে না।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
এটাই মানতে বাধ্য হচ্ছি।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
মাথা গরম করে আসলে লাভ নেই। সমস্যার মূলে তাকান এবং সমাধানের জন্য ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন।
আমার মতে, সমস্যার মূল আমাদের সচেতনতার অভাব। এটা অনেক কারণে হতে পারে। শিক্ষা, ঐতিহ্য, দারিদ্র্য - কারণ যা-ই হোক, আমাদের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মাঝে প্রকৃত সচেতনতার অভাব খুব প্রকট। এ ব্যাপারে অন্যের দিকে তাকানোর আগে নিজেকে উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়। ১০ বছর আগের আমি আর আজকের আমির মধ্যে চিন্তার পার্থক্য অনেক। ইউনিতে ভালো রেজাল্ট করে একটা ভালো জব পেয়ে পায়ের ওপর পা তুলে বাঁচার বাইরে পৃথিবীর কোনোকিছু নিয়েই টেনশন করতাম না। বোর্ডস্ট্যান্ডধারী বুয়েটের ছাত্র হওয়ায় অন্য ইউনির পোলাপান দূরে থাক, নিজেকে এমনকি নিজের ক্লাসের অপেক্ষাকৃত খারাপ রেজাল্টের ছাত্রদের চেয়েও উন্নত প্রজাতির মনে হতো। আমি লাকি, ওই অপরিপক্কতা থেকে বেরোতে পেরে। কিন্তু অনেক এমনকি বিদেশ ফেরত পিএইচডি ডিগ্রীধারী আছে, যারা সেই অবাস্তব লুপেই ঘুরপাক খায়। এই প্যারার কথার সাথে আপনার টপিকের রিলেশন একটু পরেই ক্লিয়ার হবে।
বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের প্রতি ব্যক্তিগতভাবে আমার অনেক শ্রদ্ধা। তারা সমস্যাগুলো ফেস করে; কিন্তু আমার মত সো কলড শিক্ষিতদেরকে বিশ্বাস করার একটা প্রবণতা তাদের মধ্যে কাজ করে। এই বিশ্বাসের খেসারতের ওপরেই চলছে বাংলাদেশ। অবশ্য আমাকে বিশ্বাস করবেই না কেন? কারো সাতে পাঁচে নাই, কাউরে গালি দেই না, গন্ডগোল করি না, বই হাতে স্কুলে যাই, ভদ্র ছেলের খেতাব পাই, ভালো রেজাল্ট করি, দেশের রত্ন হই, আশেপাশের সাধারণ মানুষের বুক ভরে যায় গর্বে। কিন্তু বাড়তি মনোযোগ পেয়ে আমি যে ভিতরে ভিতরে অহঙ্কারী হয়ে যাই, মানুষগুলোকে বোকা ভাবতে শুরু করি, বোকাদের প্রতি অশ্রদ্ধা নিয়ে বেড়ে উঠি, সে খবর কেউ রাখে না। পরিণামে তাদেরকে ঠকানোটাকে অধিকার হিসেবে নিজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করি। এই ঠকানোর কাজটা বাংলাদেশের প্রতিটা শাসকই করেছে।
বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে দেশের মানুষ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলো। জনাব শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশের মানুষের সেই বিশ্বাস, সেই সম্মানের মর্যাদাটুকু দিতে পারলেন না। শিক্ষিত, কুলীন, স্বজনদের প্রতি বাড়তি মনোযোগ সবকিছু মিলিয়ে তিনি একদলীয় শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করলেন। যে লোকটি দেশের মানুষের নিরঙ্কুশ সমর্থন পেয়ে ক্ষমতায় এলেন মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তার মৃত্যুতে মিষ্টি খাওয়ার দলে শুধু স্বাধীনতা বিরোধিরাই ছিলো, এমন নয়।
(আমার ইতিহাসজ্ঞান খুব কম। মন্তব্যে কোথাও ভুল থাকলে কেউ দেখিয়ে দিবেন। )
শেখ মুজিব অপরিণামদর্শী ছিলেন, তা এরশাদের মত কালপ্রিটকে সেনাবাহিনীতে পুনর্বহাল করা থেকে বুঝা যায়। তার খেসারত তাকে দিতে হয়েছে জীবন দিয়ে এবং বাংলাদেশের মানুষ এখনও দিয়ে যাচ্ছে।
তার মৃত্যুর পরের বাংলাদেশের শাসনের ইতিহাস পুরোটাই সেনাবাহিনীর। মেজর জিয়া ক্ষমতা বেদখল করে রাজনীতির মধ্যে ভালোভাবেই পলিটিক্স ঢোকালেন। এণ্টি-আওয়ামী লীগ, এন্টি-বাংলাদেশ এবং ধর্মীয় অপব্যবহারের চুড়ান্ত নিদর্শনস্বরূপ ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রতিষ্ঠা দিলেন, পাকিস্তানী নাগরিক গোলাম আযম স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে রাজনীতি শুরু করলো। ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা নিয়ে যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো, সেই চেতনার পুরোপুরি হোগা মেরে জিয়াও চামেচিকনে শহীদ হয়ে গেলেন।
এরপরে এরশাদের স্বৈরশাসনে শুধু নতুন বাংলাদেশ গড়ার গান। নতুন বাংলাদেশ আমরা পেলাম, তবে একাত্তরে যে বাংলাদেশের স্বপ্নে লাখ ত্রিশেক লোক জীবন দিয়েছিলো, সেই বাংলাদেশ না। এই বাংলাদেশে রওশন এরশাদ ফার্স্ট লেডি, সামরিক কুচকাওয়াজে ঢাকার রাজপথ ব্যস্তসমস্ত আর আমরা সাধারণ মানুষ হলাম 'ব্লাডি সিভিলিয়ান'।
৯১এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ খুব কনফিডেন্ট ছিলো। এজন্যই নির্বাচনের আগেই যেন তারা ক্ষমতায় এরকম হম্বিতম্বি শুরু হয়েছিলো। আমার স্পষ্ট মনে আছে, নির্বাচনের ২/৩দিন আগে এক নির্বাচনী জনসভায় এক আওয়ামী লীগের প্রার্থী বজ্রকন্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন, নির্বাচনের পরদিনই তিনি বিপক্ষদলের এক নেতার চোখে শীষা ঢালবেন। তার বিধি বাম। তিনি নির্বাচিত হলেন। কিন্তু নৌকার ভরাডুবি হলো।
জিয়ার বিধবাপত্নীর পক্ষে জনগণের কাতারে আসা সম্ভব ছিলো না। নির্ভেজাল সুবিধাবাদী সুশীলের দল বিএনপি। ৫ বছরের দুঃশাসনে জনগণের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাওয়া চলতে লাগলো, অস্ত্রের মুখে চট্টগ্রাম বেতারে গিয়ে ঘোষণার কাগজ খানা পড়া জিয়া হয়ে গেলেন স্বাধীনতার ঘোষক। পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আসলো, নতুন নতুন গল্প যোগ হলো, ইতিহাসের চ্যাপ্টারগুলো নতুনভাবে লেখা হলো। ৯৬ গিয়ে খালেদা দেখলেন, হায় হায় তার কতো স্বপ্ন ছিলো, কত টার্গেট ছিলো, কিছুই পূরণ হয় নি। তিনি ফেব্রুআরিতে একা একা নির্বাচন করলেন, গদির মায়া বড় মায়া। তার দুর্ভাগ্য, পাবলিক তাকে লাথি মারলো। আওয়ামী লীগের ব্যানারে নয়, জাতীয় পার্টির ব্যানারে নয়, সাধারণ জনতাই তার খায়েশ থেকে তাকে টেনে নামালো।
পালা পরিবর্তনে বঙ্গবন্ধু কন্যা ক্ষমতায় এলেন। পাঠ্যপুস্তকে আরেক দফা পরিবর্তন এলো। দশটাকার প্লাস্টিকের নোটে বঙ্গবন্ধু এলেন। মন্ত্রী-এমপি-নেতা-পাতিনেতা-উপনেতা-গ্রামের চেয়ারম্যান-মেম্বারের চেম্বারে বঙ্গবন্ধু শোভা পেলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের জোয়ারে ভেসে গেলো বিটিভি, রেডিও বাংলাদেশ। জনগণ শুধু অবাক হয়ে ভাবলো, বঙ্গবন্ধু এত স্বপ্ন দেখায়ই যদি ব্যস্ত ছিলেন, তাহলে দেশ স্বাধীনের জন্য রেসকোর্সে যাওয়ার সময় পেলেন কই?
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়ন শুরু হলো। মোড়ে মোড়ে বঙ্গবন্ধু কলেজ, হাইওয়েতে বঙ্গবন্ধু ব্রীজ, মফস্বলে বঙ্গবন্ধু কালভার্ট, জিয়ার কেটে যাওয়া খালের ওপর বঙ্গবন্ধু সাঁকো গড়ে উঠতে লাগলো। হাসিনার দুর্ভাগ্য, বঙ্গবন্ধু এত বেশি স্বপ্ন দেখে গিয়েছিলেন যে, পাঁচ বছর তার জন্য অনেক অল্প সময়। তিনি শেষ করতে পারলেন না।
নিমকহারাম জনগণ তাকে ৫ বছরের বেশি সময় দিলো না। খালেদা আবার এলেন। তার পুত্রদ্বয় এতোদিনে বেশ ডাঁগরটি হয়ে উঠেছেন, বাপে রাজনীতির মধ্যে যে পলিটিক্স ঢুকিয়েছিলেন, তার সমস্ত ট্রিক্স তাদের নখদর্পণে। আগেরবারের মত ভুল আর তারা করলেন না। শুরু থেকে দেশকে ধর্ষণ করা শুরু করলেন। স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে কোলাকুলি করতে করতে দেশকে, দেশের মানুষকে আঁখের ছোঁবড়ার মত শুষে ফেললেন।
টালবাহানার সুযোগে তিন মাসের কথা বলে অনির্দিষ্টকালের জন্য তত্ত্ব সরকার এলেন। তারা এসেই ভাঙচুর শুরু করলেন। এ ভাঙচুরের বেগ এরশাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার চাইতেও বেশি। ফুটপাতে আর ফেরিওয়ালা নেই, তারা পকেট কাটে, ছিনতাই করে, ভাসমান পতিতারা আরো ভাসমান হয়ে গেলো, গ্রামের দরিদ্র মানুষেরা আবিষ্কার করলো যে জমি তাদের বাপদাদারা গত ৬০ বছর ধরে দখল করে রেখেছিলো, তা আসলে খাস জমি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যামওাসে এসে চড় মারে সেনারা। কিছু বলা যাবে না - জরুরী অবস্থা। আনোয়ার হোসেনেরা উষ্কানীর দায়ে জেলে ঢোকে, কিছু বলা যাবে না। জরুরী অবস্থা। তবে রাজনৈতিক নেতারাও জেলে ঢোকে, পাবলিক খুশী, সন্ত্রাসী ক্রসফায়ারে মরে, পাবলিক খুশী। সমস্যা অন্য যায়গায়। চালের দাম বাড়ে, ব্যবসায় ধবস নামে। পাবলিক একটু একটু ব্যাজার হয়। পাবলিককে আলুর স্যুপ খেতে বলা হয়। পাবলিক আরো ব্যাজার হয়। ভোটার আইডি কার্ড হয়ে গেছে। সামরিক বাহিনী নতুন মোড়কে গণতন্ত্রের উপহার দেবে। পাবলিক অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে আবার হাসি না, আবার তারেক, আবার ফালু, আবার রাজাকার, আবার বিশ্ববেহায়া।
তবে এর মাঝেও বিস্ফোরণ ঘটে। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধী ছিলো না শুনে পাবলিকের অস্তিত্বে টান লাগে। এসময়টা সামাল দেই আমি, আমরা। শিক্ষিত সুশীলেরা। মিডিয়ার ধামাধরারা। হায়দার হুসেইনেরা গান বাঁধে সেনাবাহিনী আর তত্ত্ব সরকারের সাফল্যগাঁথা নিয়া। আমি, আমরা , সেই তথাকথিত শিক্ষিত ভদ্রছেলেরা 'শান্তি'র জন্য কাজ করি। পাবলিক বেকুব, তারা ভাঙচুর করে, হরতাল করে। কিচ্ছু বুঝে না।
ধর্মের ব্যাপারটা আসে বেসিক্যালি ধর্ম সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞানের অভাব থেকে। ভালো মানুষ হতে ধর্ম লাগে না। তবে নিজের সম্পর্কে উচ্চ ধারণার আমি মানুষ নিয়ে চিন্তা করবো কেন? সমস্যা হলো, এরকম অহমিকাপূর্ণ অ্যাটিচুড নিয়ে ধর্ম সম্পর্কে আগ্রহী হলে ধর্মের বিকৃতির দিকগুলোই বেশি প্রিয় হয়। কারণ, বিকৃতির বিষয়গুলো বানানোই হয়েছে অন্যদের ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্য। ইসলামের সকল মানুষ সমান - এই সোজা কথাটা মানলে তো আমার প্রবলেম। সুতরাং হাদিস খোঁজো, ফতোয়া খোঁজো, স্কলারের বাণী খোঁজো, যাতে ধর্মকে ব্যবহার করে অন্যের ওপর কর্তৃত্ব করা যায়। পাবলিকের ওপর কর্তৃত্ব করতে সার্টিফিকেট যেমন একটি অস্ত্র, ধর্মও একই ঘরানার একটি অস্ত্র। ধর্মের মূলকথা যে আত্মশুদ্ধি তা অনেক আগেই হাওয়া।
এখনকার ইউনি পড়ুয়া পোলাপান উপরে বর্ণিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে। দেশের শাসকবর্গ নিজেরাই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে সরে এসেছে। সুতরাং তারা আমাদেরকেও সেই আদর্শ থেকে সরাবে, এটা স্বাভাবিক। এর পরে শিক্ষকদের একটা বড় অংশেরই সময় নেই, সুযোগ নেই বা তারাও নষ্টস্রোতে ভেসে চলা শ্যাওলা। বাকি থাকে পরিবার। আপনার ঘটনাস্থল ইসলামীক ইউনি হলে, ওখানে বাংলাদেশের নিম্ন মধ্যবিত্তের স্থান নেই। উচ্চ মধ্যবিত্তের একটা বিরাট অংশই সামরিক শাসনে, স্বৈরশাসনে আর গণতান্ত্রের নামে দুঃশাসনে সুবিধাভোগী গোষ্ঠী। এরা ছেলেমেয়েকে স্বাধীনতার চেতনা একাত্তরের কথা বলতে যাবে কোন দুঃখে? সুতরাং আপনি যে ঘটনার কথাগুলো বললেন, তাতে আমিও আশ্চর্য হই না।
সমাধান? সাধারণ মানুষের ওপর আমি আস্থাশীল। সমস্যা নেতৃত্বের অভাব। আপনি-আমি মিলে এই মানুষগুলোকে সত্যের ওপর আস্থাশীল হতে উৎসাহী করতে পারি। বুদ্ধিবৃত্তিক লেভেলের অনাচার রোধে কাজ করতে পারি। ব্লগের একটি পোস্ট, একটি মন্তব্যও এর অংশবিশেষ। মানুষের আত্মবিশ্বাসটা ফিরিয়ে আনতে কাজ করেন। দেখবেন, সোনালী সূর্যটা উঠবেই। এটা নিছক আশাবাদ নয়, এটা দৃঢ় বিশ্বাস এবং সুপ্ত বাস্তবতা।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আপনার লেখার মধ্যে যে ধারাবাহিকতার কথা ফুটে উঠেছে সেই ধারাবাহিকতায় আ. লীগ যদি এবার ক্ষমতায় আসে তাহলে তারা তো লুকিয়ে নয় প্রকাশে দেশ ধর্ষণ করবে বলে মনে হয়। দেখা যাক আমরা কোথায় যাই। কোন পর্যায়ে গেলে স্থায়ী ভাবে এদের (কলুষিত রাজনীতিবিদদের) ডিচ করতে পারি।
নির্বাচন সুষ্ঠু হলে সম্ভবত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। অবশ্য গত দেড় বছরের সময় ক্ষেপণে লাভ হয়েছে বিএনপি-জামাতের। ভোটের পার্থক্যটা কমে আসা স্বাভাবিক। সুতরাং আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও একটা দুর্বল সরকার হবে। দুর্ণীতির ভাগাভাগি সিস্টেম হতে পারে। আর্মি নাক না গলালে শক্তিশালী কোনো নতুন দল গঠিত হতে পারে। - জ্যোতিষী বলাই
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এসব কিছুই জানি না। জানার চেষ্টাও বোধহয় করি না। অনেক ধন্যবাদ।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
'Better to burn than to fade out'
কিন্তু ঐ বেটার টা হয়না আদতে ।
একটু একটু করে ধ্বসে যেতে যেতে পুরো ধ্বংসাবশেষে পরিনত হবে আমাদের অর্জন ও বোধগুলো । এটা নিয়তি নয়,পরিনতি । আমাদের খামখেয়ালীপনা,লোভ, ও হীনমন্যতার পরিনতি ।
আমি এখন দিনগুনি ধ্বংসাবশেষের । একটু একটু করে ধ্বসে পড়া দেখতে আর সহ্য হয়না । সবকিছু শেষ হয়ে যাক, তাহলে ছাইভস্ম থেকে আবার স্ফিংক্স জেগে উঠবে একদিন ।
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
কিন্তু সবকিছু শেষ হতে দেওয়া কী ঠিক হবে?
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
যারা এত পাকিস্তান পাকিস্তান করে তাদের কে সোজা বলেদিবা যে পাকিস্তানে চলে যাক, দেশে কেউ তাদের আটকায়ে রাখেনাই, আর বলবা "বাংলাদেশের মাটিতে দাড়ায়ে পাকিস্তানের কথা বললে পা ভেংগে হাতে ধরায়ে দিব"। বাংলাদেশে ইসলাম ঠিকই আছে। আর ইসলামের নামে পাকিস্তানের কু-কির্তির কথা মনে করায়ে দিবা। বাংগালিরা সবাই মানুষ ওদের মত পশু না।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
পাকিস্তানে পাঠায় দিতে পারলে ভালো হইত।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
ভাই ভেঙ্গে পড়ার কিছু নাই। একটা কথাই শুধু বারবার সবারে বলে যাবা এই সব পাকিস্তানীদের সাথে ইসলাম নাই; আর চেষ্টা করবা সবাইকে এদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে রাখতে। তোমার সার্কেলের সবাইকে; সবার সার্কেলের সবাইকে।
এদের brain washing power খুব বেশি। তাই আগে থেকে যতজনকে পারো এদের সম্পর্কে বিবমিষাকর তথ্যগুলো দিয়ে রাখবা।
আমরা সবাই যদি শুধু এই কাজগুলো করে যাই; তাহলে এই প্রজন্মের একজন হয়ে বলতে পারি। আর যাই হোক এই (গালিটা আমিও খুঁজছি) দের খপ্পরে আমরা কেউ পড়ব না।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
আসলে- হতাশ হওয়া চলবেনা।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
তোমার লেখা পইড়া অসম্ভব মন খারাপ হইলো আর নিজের কথা ভাবলাম আমি নিজে কি করতেসি এই বিষয়ে! তারপরও বলব, মন খারাপ করো না। আসলে মিথ্যা কথা বা ঘটনাগুলা খুব তাড়াতাড়ি মানুষের ভেতরে গাইথা যায় আর গলাবাজিও বেশি হয় ওইসবের পক্ষেই। জানি ওদের কথায় কখনো নিজের বিশ্বাস তুমি বিসর্জন দিবা না, খালি এইটুকু বলি যদি একজন দুইজন হারা...'রেও পথে আনতে পারো সেইটাও আমাদের জন্য অনেক কিছু।
আসলে আমার মেজাজও এতোই খারাপ হইতেসে যে কি বলব জানি না!
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
এরকম মেজাজ খারাপ সাধারণোত হয় না। কিন্তু যখন হয় তখন মাথা ঠিক থাকে না।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
মাথাটা গরম হতে হতে বিস্ফোরন ঘটুক। সবার।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
.হ এটাই হোক
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
কিছু কমু না এ বিষয়ে...কিছু যদি করতে পারি তাইলে কমু নইলে কওয়া কওয়ির কোন মানে নাই।
-------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।
দৃশা
কওয়ার কোন মানে হয় না। কিছু একটা করা লাগবে।
--------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
এদের বাংলাদেশের ইসলাম নিয়া এতো চিন্তা...চিন্তা করার জন্য মাথা রাখার দরকার কি মাথায় একটা বাশ দিয়া বারি মারবা সব চিন্তার আবসান ঘটবে।
বাঁশ দিয়ে বারি মারতে পারলে শান্তি পাইতাম
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
মুখটা তেতো হয়ে গেল।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
এটাই।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
আমার আছে শুধু অক্ষম আক্রোশ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও। - হুমায়ুন আজাদ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
আর কী বলব?
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
নতুন মন্তব্য করুন