সারি সারি কুয়াশা- রেলিং খাদের ধারে। ছোট্ট ছেলের দল লাল সোয়েটার গায়। ইশকুল ব্যাগ নিয়ে ইশকুলে যাবে না। ইশকুল ছিল বাড়ি থেকে কিছুটা কাছে। তাই হাঁটলেই হতো। ইশকুলের পাশে "ট্যাংকীর পাহাড়"। আমরা ছেলেরা টিফিন পিরিয়ডে ঠিক ঠিক সেই ছোট্ট পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে যেতাম। ক্লাসের রুমু ঝুমু রানু কিংবা মিনু মাঝে মধ্যে বায়না ধরতো- তারাও পাহাড়ে উঠবে। পাহাড়ের ওপর থেকে নাকি অত বড় বড় দালানগুলোকে এতটুকুন লাগে। তারাও সেটা দেখবে। আমরা হাত বাড়িয়ে দিতাম। রুমু সেই হাত ধরে গুটি গুটি করে উঠে যেত। আমি হাত বাড়িয়ে দিতাম। ঝুমু শেষ মুহুর্তে হাত ধরতে গিয়েও লজ্জায় লাল হয়ে যেত। একসময় বলত- সে পাহাড়ে যাবে না। রানু হি হি করে হেসে উঠত। ঝুমুটা এত ভীতু! রানু হাসবে নাই বা কেন?
রানু হাসত। রুমু হাসত! আমরা হাসতাম। বোধহয় হাসতো ঐ বুড়ো ট্যাংকীর পাহাড়টাও। যাকে নিয়ে এত হাসাহাসি সেই ঝুমুর হাতটাও কেঁপে উঠত হাসির ঠ্যালায়। এত শক্তভাবে হাতটা আঁকড়ে ধরতাম! নিজের হাত বলে ভুল হতো মাঝেমাঝে। তারপর কখন পাহাড়ের এক কোণায় গিয়ে আমরা দাঁড়াতাম। দেখতাম "এতটুকুন" হয়ে যাওয়া দালান, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে আরো একটা পাহাড়, আরো একটা ছেলেবেলার স্তম্ভ!
" কীরে? তোরা কী সারাদিন হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে থাকবি? হে হে। তমাল দ্যাখ দ্যাখ,একটা নির্লজ্জ এখনো ঝুমুর হাত ধরে আছে!"
প্রায়ই হতো এমন! পাহাড়ে উঠবে বলে ঝুমুর হাত ধরা, ছোট্ট পাহাড়টার চূড়োয় দাঁড়িয়ে আমরা হাত ছাড়াছাড়ি করতে কখন ভুলে যাই! হয়ত, প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবার পর হাত ছেড়ে দিতে হয়, এই সত্যিটা আমরা তখনো জানতাম না। অথবা আমাদের ভালো লাগতো। আমি এবং ঝুমু। দুজনেরই ভালো লাগত এভাবে হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে থাকা। পাহাড়ের গায়ে দাঁড়িয়ে অন্য পাহাড় দেখা!
একদিন অংক ক্লাসে রীতিমতো জানাজানি হয়ে যায় অনেক কিছু। অয়ন কিংবা তমাল বাংলা এবং অংক ক্লাসের মাঝামাঝি সময়ে ব্ল্যাক বোর্ডে একটা ছবি এঁকে দেয়। সাদা চকে আঁকা সে ছবি। পাশাপাশি দুইটা মানুষের আকৃতি। দুজন দুজনের হাত ধরা। একটা মানুষের পিঠে লেখা আমার একটা নাম। অন্য মানুষটার পিঠে লেখা ঝুমু। ঝুমু নামটার উপর দিয়ে আবার সাদা চকে আঁকা চুল বেয়ে বেয়ে নামছে।
এক চিলতে হাসির ঢেউ বয়ে যায় ক্লাসরুমে। হা হা হে হে আর হি হি হাসির মাঝে আমি চট করে একবার তাকিয়ে নিই ঝুমুর দিকে। লজ্জায় ঝুমুর লালচে মুখটা আরো বেশি লাল দেখায়। এবং যখন দেখি ঝুমুও আমার দিকে চেয়ে,
এই নিরর্থক দেখাদেখি অঞ্জনের গান হয়ে মাঝে মধ্যে এখনো আমার কাছে এসে দাঁড়ায়, অসময়!
কাঞ্চনজঙ্ঘা হয়ে আসে ট্যাংকীর পাহাড়।
|
মন্তব্য
লেখা ভাল লাগছে
অফটপিকঃ ভাই তুই এত এত মেয়ের সন্ধান পাস কই?
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
"রাশেদ" নামের ওর এক বন্ধুর কাছ থেকে
ঐ মিঞা রাশেদের মত ভাল ছেলের পিছনে লাগছেন কেন? আর হইলেও সে হইতে পারে আপনার ভায়রা ভাই
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
আমি তো কোন রাশেদকে চিনি না
- এক ছেলে হৈয়া আরেক ছেলের পিছে লাগা ঠিক না।
দুইটা নিউক্লিয়ার শক্তি সম্পন্ন দেশ একটা আরেকটাকে পিছন দিকে এ্যাটাক করলে দুইজনেরই ক্ষতি।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
হে হে হে, লেখার মর্মার্থ আমি বুঝে গেছি
ধৈর্য ধরো হে বৎস, ধৈর্য ধরো
লেখা যেমন সুন্দর, গানটাও।
আর কত ধৈর্য্য
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
খুল!!! (yoo স্টাইলে কুল)
রাশেদের মতো আমিও প্রশ্ন রাখিয়া গেলুম ...
=============================
ভালো লাগলো লেখা
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
রাশেদ রায়হান আর দেবুদাকে অন্তরের গভীর থেকে একরাশ ধন্যবাদ।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
আপনার লেখাটা পড়ে অঞ্জন দত্তের একটা গানের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে; (আপনিও লেখায় বলেছেন) খুব সম্ভবত 'আমার শৈশবের দার্জিলিংটা'...
ভালো লেখা, গানটার মত আমায় নষ্টালজিক করে দিলো।
হুঁ, লেখার শেষে গানটা আছে।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
এটা কি মেয়ে টু দি পাওয়ার ইনফিনিটির ১ম পর্ব যেটা আগে আসে নি?
চমৎকার।
সেই ছেলেমানুষী ইনফিনিটির কথা কেউ কী কখনো ভুলবেনা?
--------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
ঝুমুর বাড়ি নিশ্চয় সিলেট না!
- ঝুমু'র বাড়ি সিলেটে। পিতার বদলির চাকরীর সুবাদে সে কিছুটা কাল চট্টলায় থাকে। আর সেই সময়তেই পরিচয় হয় রুমু, রানু অয়ন, তমাল প্রমুখের সাথে। বছর ঘুরতেই পিতার আবার বদলির হুকুম পড়ে। এবার ডেস্টিনেশন কুষ্টিয়া। শেষ দিন যখন ওরা সবাই ট্যাংকীর পাহাড়ে যায়, কেউ কোনো কথা বলেনি। পুরো বিকেলটা সবাই চুপ করে ছিলো। তাদের সাথেই চুপটি করে সূর্য্যটাও হঠাৎ টুক করে ডুবে গেলো। সবাই একে একে নেমে এসেছিলো ট্যাংকীর পাহাড় থেকে।
তারপর কেটে গেছে অনেক দিন। গল্পের লেখক আর কোনো দিন ট্যাংকীর পাহাড়ে যায় নি, কারো হাত ধরে পাহাড়ের উপর থেকে এতোটুকুন হয়ে যাওয়া দালান দেখেনি, কোনো পাহাড়ও দেখেনি আর বুড়ো ট্যাংকীর চূড়া থেকে।
গল্পটা এখানেই শেষ না। ....
কিন্তু গল্পটা আর চলবে না।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভালোই তো চলতে ছিল ধূগোদা। মাঝ পথে থামলেন ক্যানো?
গোধূলি দা মুহিবের লগে ছিলেন নাকি??
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
আসলেই তো এরকম,
থামলেন কেন গুরু? অসাধারণ হচ্ছিল।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
উরি!
---------------------------------------------------------------------------
If your father is a poor man, it's not your fault ; but If your father-in-Law is a poor man, it's definitely your fault.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
মুগ্ধিত এবং বিস্মিত
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
কি বলবো, অসধারণ। নস্টালজিয়া নামের একটা বাজে জিনিস বুকে বয়ে বেড়াতে হবে এখন সারাদিন।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
রেন্টু ভাই, কীর্তি ভাই আর স্পর্শ ভাইজান সবাইরে থ্যাংকু।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
--
ট্যাঙ্কির পাহাড়টা কোথায় অবস্থিত ? সিলেট, নাকি চট্টগ্রাম অঞ্চলে ?
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
চট্টগ্রাম।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
আমি তো আবেগে ইমোশনাল হয়া গেলাম
---------------------------------
তাও তো ভারী লেজ উঁচিয়ে পুটুশ পাটুশ চাও!
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
আহারে পাপি লাভ খুব কিউট!
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
খুব সাবলীল আপনার বর্ণনাভঙ্গী, ভালো লাগলো খুব!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
স্বপ্নার কাছে ছ্যাঁকা প্রাপ্ত, মুমুআপু, তীরুদাকে থ্যাংকু।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
টাংকির পাহাড়টা তো চট্টগ্রামে, এখনো আছে নাকি?
চমৎকার স্মৃতিকাতরতাময় লেখা।
এখনো আছে। আমাদের উত্তরাধিকারিরা সে পাহাড়ের চূড়োয়।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
হায়। দিল মে চাক্কু, কত বেদনা মনে করাইয়া দিলা! ( স্নিফলস! )
-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
বেদনা মানে? খাড়ান, তিথি আপুকে কই।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
জুস হইসে লেখাটা। গান টাও সুন্দর।
আহারে পাহাড়ী কইন্যা, কী সৌন্দর্য কী সৌন্দর্য !!!
-----------------------------------------
ভালবাসা তুমি - প্রেয়সীর ঠোঁটে প্রগাঢ় চুম্বন;
ভয়হীন তবু, দেখলে দেখুক না লোকজন।
-----------------------------------------
এই গল্প ভরা রাতে, কিছু স্বপ্ন মাখা নীল নীল হাতে
বেপরোয়া কিছু উচ্ছাস নিয়ে, তোমার অপেক্ষায় ...
...কাঞ্চনজঙ্ঘা হয়ে আসে ট্যাংকীর পাহাড়।"
এইরকম অসাধারণ লেখা ক্যামনে লেখেন রে ভাই...
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
যথারীতি পরিবর্তনশীলীয়।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
হাসিব জামান ভাই, শিমুল আপা আর সন্ন্যাসীদাকে ধইন্যবাদ। ঃ)
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
আমার খুব ভোরে ওঠার অভ্যাস।
বিছানার ঠিক পাশের জানলার পাল্লাটা ঠেলে সরাতেই অনেক দূরের কুয়াশামাখা একটা পাহাড়ের এট্টুশখানি চোখে পড়ে....
হুই মিয়াভাই, থাকেন কই? লেখালেখি ছেড়ে দিলেন নাকি??
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নতুন মন্তব্য করুন