এখানে ওখানে শকুন ওড়াউড়ি করে। গ্যালো বছর এখানে টেলিফোনের লাইন এসেছিলো, আর এসেছিলো ডিশের ক্যাবল। শকুনেরা উড়ে এসে বসে, টেলিফোনের তারে, ডিশের ক্যাবলে, আর বাড়ির ছাদে, ছাদের ওপর পানির টাংকীতে, মুদির দোকানের চালে।
আজ এখানে তো কেউ মরেনি, কী জানি বাপু, শকুনেরা কেন এলো! বুড়োরা বলেন, নিশ্চয়ই কোন লাশ পড়েছে, অলিতে গলিতে খুঁজলে হয়তো লাশ খুঁজে পাওয়া যাবে, লাশ না দেখলে কী শকুনেরা এ মুখো হয়? ওদের বড্ড খাই খাই স্বভাব!
জোয়ানদের উদ্দেশ্যে পুরানোরা আদেশ ছুঁড়ে দ্যান- তোমরা বাবা খুঁজে দ্যাখো, এখানে ওখানে, এ গলি ও গলি, লাশ খেতে দিয়ে আপদ বিদেয় করো। আমাদের বাবা শকুন দেখলে বড্ড ভয় হয়। এ বড় অমঙ্গলে পাখি।
এদিকে দু একজন বেঁকে বসে। বেশ তো চলছিলো, সোলেমানের দোকানের বেঞ্চিতে বসে চা খাওয়া, আড্ডা। বলে- কী দরকার বাপু! শকুন এসেছে, আবার চলে যাবে। বেচারারা এসে এখানে ওখানে বসে আছে নিজেদের মতন করে। কী লাভ শুধু শুধু ঝামেলা বাড়িয়ে?
জোয়ানেরা দলবেঁধে যায়, মড়া খুঁজতে। এ গলি ও গলি, এখানে ওখানে, ময়দানে, রাস্তায়, শিশুদের খেলার মাঠে- খুঁজে পেতে দেখে। বলে- বাচ্চারা, তোরা কী এদিকে কোন লাশ দেখেছিস? সেই কখন থেকে শকুনেরা বড্ড জ্বালাতন করছে।
বাচ্চারা খেলায় মন দিয়ে রেখে মাথা নাড়ে। না তো, আমরা কোন লাশ দেখিনি।
জোয়ানেরা খেপে যায়- শকুনের জ্বালায় সবাই চিন্তায় অস্থির, আর তোমরা আছো খেলাধূলা নিয়ে। যা যা, বাড়ি যা। দ্যাখ্, বাড়ির আশেপাশে কোন মৃতদেহ পড়ে আছে কী না!
কোথাও কোন মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায় না। এখানে ওখানে, এ গলি ও গলি, বাড়ির উঠোনে। কোথাও কোন লাশ পড়ে নেই।
মেয়েরা পুকুরে নাইছিলো, কেউ কেউ কলসী কাঁখে পানি নিতে এসেছে, কেউ বা এসেছে শুধুই পুকুর পাড়ে বসে ঢিল ছুঁড়তে। জোয়ানেরা তাদের কাছেও যায়, তাদের বাড়ি যেতে বলে, বরং পুকুরে তল্লাশী করা যাক, মড়া টড়া পুকুরের কোখাও পড়ে আছে কীনা!
সন্ধ্যে হয়, শকুনের আনাগোনা বাড়ে। রাত হয়, শকুনের আনাগোনা বাড়ে। ভোরবেলা দেখা যায়, শকুনে শকুনে আকাশ ছেয়ে গ্যাছে।
সকলে চিন্তিত হয়। বুড়োরা দলবেঁধে সৃষ্টিকর্তার কাছে মঙ্গল কামনা করে- দূর করে দাও যত অশান্তি প্রভূ। জোয়ানেরা এখানে ওখানে, এ গলি ও গলি লাশ খুঁজে বেড়ায়। মেয়েরা বাড়ির দুয়ারে বসে থাকে মঙ্গলের আশায়।
তবুও শকুন বেড়ে চলে।
সোলেমানের দোকানে চা পিপাসী, আড্ডা পিপাসী যারা বেঁকে বসেছিল, তারা আরো বাঁকে।
এখানে শকুন বেড়ে চলে।
মন্তব্য
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বুঝি নাই। এট্টু ভাইঙ্গা কন না বস।
একটু খেদ রয়ে গেল। হয়তো আমি ঠিক জায়গাটা ধরতে পারিনি, যেখানে মেসেজটা দেয়া আছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনার প্রায় লেখাই আলাদা মনোযোগ দাবী করে। সচলে অনেকগুলো দুর্দান্ত গল্প পড়েছি আপনার। কিন্তু কেন জানি এই গল্পটার সাথে কমিউনিকেট করতে পারলাম না।
কিছুই বুঝতে পারলাম না
গল্পটার মাজেজা কি পরিবর্তনশীল?
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
হ; ইদানিং আমার নিজেরও মনে হয় আমি মৃত মানুষ।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
ইয়ে মানে... বুঝলামনা!
--------------------------------
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
আমরা লাশ খুঁজি আর শকুনেরা দেখে জীবন্ত লাশ।
খুব ভাল লাগলো।
নৈশী ।
আমার কিন্তু দারুণ লাগলো গল্পটা! অসাধারণ !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আমি আসলে গল্পটা বুঝেছি এই দাবি করছি না। ভাই পরিবর্তনশীল, কি বঝাতে চেয়েছিলেন ?? জীবন্মৃত আমাদের কথা ??
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
আমিও যে বুঝসি, সেই দাবি করব না। তবে নিজের আন্দাজটা বলি। এমন কি হইতে পারে যে, আমাদের চারপাশে স্বাধীনতাবিরোধী বা মৌলবাদীরা ধীরে ধীরে বাড়তেসে, আমাদের মাঝে থেকেই মাথাচাড়া দিচ্ছে তারা, আমরা সেইটা দেখি, উদ্বিগ্ন হই, তাদের নিয়ে আমাদের অনেক মাথাব্যথা, তাদের বিচারের কথা বলি, তাদের শাস্তি দিতে চাই, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না, ধীরে ধীরে তারা আরো শক্তিশালী হয়, আমাদের চারপাশে আমাদের মাঝেই তারা বেড়ে ওঠে... এমন কিছু কি? মানে, তাদেরকেই কি শকুনের সাথে তুলনা করা হইসে?
যাই হোক, আমার আন্দাজ ভুল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে গল্পটা পড়ে অনেক ভাল্লাগল। কেমন কবিতা কবিতা ভাব আছে একটা
রনি ভাই,
আরেকটা ব্যর্থ গল্প পড়ার জন্য আর কমেণ্ট করার জন্য সবাইরে থ্যাংকু।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
আমার কাছে গল্পটা এখনো একটা অশুভ সংকেত হয়ে চলছে, চারদিকে শকুনেরা বাড়ছে আর আমরা লাশ খুঁজছি এইরকম। এরকম ভাবলে গল্পটা দারুণ, যদিও আরো ব্যপ্তির আশা করেছিলাম। যদি তা না হয় তবে আমি বুঝিনি। আর যদি জীবন্মৃত লাশদের কথাই বুঝানো হয় তবে তার ছাপ অস্পষ্ট, অন্ততঃ আমার কাছে। যদি তাই হয় তবে গল্পে সেই ভাবের প্রতিফলনের দরকার ছিল।
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
কমেন্ট পড়ে বুঝতে পারলাম কাহিনীর কিছুটা...
সদস্যনামঃ সূর্যবন্দী মেঘ...
মেইলঃ
গল্প ভালই লাগলো, তবে আমিও মন্তব্যকারীদের দলে...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
এরকম গল্পকার আমাদের মধ্যে কমই আছে। যদিও গল্পকার কী বলতে চেয়েছেন সেটা হয়তো কখনো জানা যায়না (তিনি নিজে না বললে) তবুও লাশ কি কখনো লাশ খুঁজে পায়? আর ভ্রান্তির মধ্যে থেকে ভ্রান্তি খোঁজার চেষ্টা করা?
গল্পের থিম বাদ দিয়ে গল্পের লেখনীটাই আমি বেশী উপভোগ করলাম। কেন যেন জানিনা, গল্প নয়, কবিতা মনে হল।
অফটপিক: শকুনকে যদিও অমঙ্গলের প্রতীক হিসেবেই ধরা হয়, এরা আদতে খুবই নিরীহ এবং অত্যন্ত দরকারি একটা পাখি।
হ, আমাদের ভেতর থেকে শুভবোধ মরে গেছে। তাই শকুনেরা দলবেঁধে ঘুরছে আমাদের চারপাশে!
..................................................................
ঐ যে হাঁটছি মুদ্রা দোষে নাকটা ঘষে
আড্ডা মানেই সেকেণ্ড হাফে খেলছি সোলো
গুজবো না শার্ট আমার পাড়া স্মার্ট পেরিয়ে
সে রোদ্দুরের স্মরণ সভাও লিখতে হল
আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে গল্পটি। মনেও হয়না, এরচেয়ে ষ্পষ্ট করে বলার কিছু আছে। ছোটগল্পের স্বার্থকতা তো সেখানেই, যেখানের পাঠকও গল্পটি আপন ভাবনার নির্যাসে সামনে দেখতে পারেন। সবকিছু পরিষ্কার করে দিলে সে সুযোগটি রইল কোথায়?
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আমি এরকম গল্প লেখার চেষ্টা করেছি পারি নাই। আমাকে দিয়ে হবে না বুঝে গেছি, এত চমৎকারভাবে এত দারুণভাবে রূপকটাকে ব্যবহার করলেন, মাথা ঘুরে গেলো। অধম ব্লগারের জীবন থেইকা ৫ বছর আয়ু দিয়ে দিলাম আপনাকে! অনবদ্য, গল্পটা আমার মাথায় এখন খালি ঘুরবে!
কিন্তু কেনু?! লেকিন কিঁউ?!
শকুন সমানে বাড়লেও, পড়তে ভালৈছে।
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
চমৎকার। এরকম থিমকেন্দ্রিক গল্পই বেশি ভাল লাগে। এখানে যে আসলে কোন মেসেজ দেয়া হচ্ছে তাও না। কেবল এক বা একাধিক থিমকে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে যার কিছু হয়ত লেখক জানে, কিছু হয়ত পাঠকেরা নিজের মত করে ভেবে নেবে।
---
রাফি-র মন্তব্যের মত করে ভাবতে আসলেই খুব ভাল লেগেছে। মৃত্যুপুরীর লাশেরাই লাশ খুঁজে বেড়াচ্ছে। এখানে মৃত্যুপুরী বলতে যেকোন কিছুই বোঝানো সম্ভব। লাশ খোঁজার একটা উদ্দেশ্যও দেখা যাচ্ছে, শকুন তাড়ানো।
---
"অস্তিত্বের সংকট" থিমটা লাগসই। কারণ মৃত্যু মানে এখানে "অস্তিত্ব নেই" বোঝানো যেতে পারে। নিজের ভৌত দেহ এবং ব্যাখ্যাতীত সত্ত্বার মধ্যে হারিকেন দিয়ে অস্তিত্ব খোঁজার অভ্যাস প্রায় সবারই আছে।
মানুষ মানে হয়ত এই জোয়ানেরা যারা জীবনের সবগুলো স্টেজের সহায়তায় সবখানেই অস্তিত্ব খুঁজে বেড়াচ্ছে। শকুন হয়ত তার এই অস্তিত্ব খোঁজার প্রেরণা। বৃদ্ধরা হয়ত অস্তিত্ব খোঁজার পেছনে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রেশার।
সোলেমানের দোকানের পিপাসীরা হয়ত ইন্দ্রিয়ের প্রেশার যে অস্তিত্ব চিন্তা থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়ার চেষ্টা করে।
অস্তিত্ব খোঁজার প্রেরণা বেড়েই চলে, বেড়েই চলে, সোলেমানের দোকান নিয়েই। আমরা অস্তিত্ব খুঁজে পাই না, আবার অনস্তিত্বও বুঝি না। অস্তিত্ব আর অনস্তিত্বের দোলায়ই মানুষ কত কিছু করলো, কত কিছু।
তবুও শকুন বেড়ে চলে।
তারপরও মাঝেমাঝে সবকিছু বেঁকে বসতে চায়। সব ছাপিয়ে
এখানে শকুন বেড়ে চলে।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
ধন্যবাদ খেকুদা, সূর্যবন্দী মেঘ, যূথচারী, পিপিদা, পান্থদা, তীরুদা, খাপছাড়া, সাইফুল ভাই, শিক্ষানবিস সবাইকে।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
নতুন মন্তব্য করুন