মায়ের পেট থেকে নামবার পর, একদিন যখন হামাগুড়ি দিয়ে বারান্দায় যেয়ে, আকাশে কালো মেঘ দেখে মনে হলো বুঝি ভাল্লুক, আরো কিছুদিন পর যখন নিজের হাতের ছায়া দিয়ে দেয়ালে একটা হরিণ নিয়ে খেলতে শিখেছি, যখন ছাদের পাঁচিলটা ডাকতো- আয় ছুটে আয় খালি পায়, যখন নিজের কানদুটি কোন শব্দ গ্রহণ করে তার অর্থ মনে প্রবেশ করতে শেখালো, তখন থেকে লোকটার গান শুনি, নিজের সাথে বড্ড বেশি মিলে যায় তাই, ফিরে ফিরে এসে শুনতে হয়!
কত মন আনচান করা দুপুর বেলা, তোমাদের বাড়ীর সামনে রাস্তা দিয়ে একটা খোলনাওলা চলে যেতো তাঁর খেলনা দোতরা বাজিয়ে, তারপর মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভাঙলো তোমার, খাটটাকে মনে হলো যেন মাঠ, জানালার বাইরে পাহাড়, পাহাড়ের গন্ধ তোমার নাকে চোখে, ওখান থেকে তোমার বন্ধুরা ডাকে, বলে- তোমার মন খারাপ এ রাতে? আকাশ জোড়া অগুনতি নক্ষত্র, সবাই বুঝি দোতরা বাজিয়ে গান ধরে তোমার মন খারাপ হলে?
তখন একদিন হয়তো আমিও তোমার বাড়ির সামনে, তোমার জানলা দিয়ে যে একটুখানি আকাশ দেখা যায়, একটুখানি বর্ষা। বলেছিলাম,
- এনে দিই?
-কী?
-এই একটুখানি আকাশ!
-আর একটুখানি বর্ষা?
-সেটাও।
-গোলাপ?
-গোলাপ কেনার সামর্থ্য যে নেই, তার বদলে একটা গান নেবে?
তাঁর গান শুনেই কিনা গীটার বাজাতে ইচ্ছে হলো। তাল কেটে গ্যাছে কতো, কেটেছে আঙুল, কতরাত জেগে জেগে কাটলো, চেষ্টা করেছি বহুবার তবুও তোমাকে নিয়ে একটা গান লেখা হলো না আমার। বললাম,
-বেহালা শুনবে?
-বাজাতে জানো তুমি?
-না, জেরেমির বেহালা।
-আমার যদি কান্না পায়? যদি তোমারও?
-বৃষ্টির নীচে গিয়ে দাঁড়াবো।
-তা'তে লাভ?
-বৃষ্টির ছাঁটে যাবে না দেখা।
-কী? দুজনের চোখের জল?
ইশকুলের বাস ঠিক এসে যেতো তখন। ইশকুলের বাসের জানলা বড্ড ঝাপসা হয়ে যেতো তোমার, বাইরে দাঁড়িয়ে আমারও, সেই ঝাপসা জানলার কাচে ঠোঁট চেপে যত ছবি আঁকাআঁকি। চ্যাপ্টা ঠোঁটে কত ভালোবাসা!
কী অদ্ভূত ভাবে মিলে গ্যালো আমাদের সাথে অঞ্জনের গান! তাই ফিরে ফিরে শুনতে হয়। হয়তো তুমিও এখনো শোন।
এখনো বর্ষায় গোলপাহাড়ের মোড়ে হাঁটুজল, এখনো রাস্তার ধারে রাত নামলেই আলতাফ ফকিরের বাঁশি বেজে ওঠে, এখনো আমার জানলা দিয়ে পাশের বাড়ির কান্না শোনা যায়।
এখনো আকাশের রঙ কালো হয়ে আসে, এখনো বৃষ্টি নামে, শুধু একই কথা বলবার জন্য, আরো কিছুক্ষণ একই পথে চলবার জন্য, ছেঁড়া ছাতা নিয়ে তোমার জন্য আর আমি দাঁড়িয়ে থাকি না।
এখনো আকাশ বড় নীল হয়, শুধু তুমি আমায় আর পিছু ডাকো না!
মন্তব্য
স্মৃতিচারণ ভালো লাগলো
...........................
Every Picture Tells a Story
এখনো আকাশ বড় নীল হয়, শুধু তুমি আমায় আর পিছু ডাকো না!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ভালো লাগলো ।
বিশ্বাস করুন, আমার আর বৃষ্টি ভালো লাগে না, আর ভালো লাগে না।
এমনকি, বৃষ্টিতে নেমে চোখের জল লুকাতেও না। আমার আপন আঁধারে স্বেচ্ছাবন্দী হয়েই থাকি গৃহকোণে...
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
সুন্দর। অঞ্জন আমারও বেশ প্রিয়।![চলুক চলুক](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/yes.gif)
![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
গান অ্যাসিমিলেট ক'রে ক'রে এই চারণটা সত্যিই বেশ ভালো কায়দায় ভালো জায়গায় দাঁড়িয়েছে।
ডাকেন। ডাকতে থাকেন। আসতেও পারে এখনও।
লাভ আজ কাল দ্যাখেন নাই?
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
বাহ...বেশ ভাল লাগলো আপনার লেখার কায়দাটা...
আহা, অঞ্জন !!!
_________________________________________
সেরিওজা
আপ্নে কৈয়াসিলেন এদ্দিন?
সচল হইলে আপনার এই লেখায় আইসা পাঁচ তাঁরা দিয়া যামু।
____________________
অভূতপূর্ব
________________________________
মা তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো...
কিরে চিটাগাং বৃষ্টিতে ভেসে গেছে দেখে এই স্মৃতিচারণ?![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
বৃষ্টি এখন আমার দুইচোক্ষের বিষ!
দেখবি যে, এক বৃষ্টির সকালে তোর সুন্দরী এক ছাত্রী ভিজছে, রিকসা পাচ্ছেনা, তুই নতুন চকচকে ছাতি নিয়ে তার পাশে গিয়ে দারাবি, আর বাকিসব আপনাআপনিই হয়ে যাবে।
অনেকদিন পরে লিখলা ভাই। মুগ্ধ হয়ে পড়লাম।
দারুণ লাগলো লেখাটা, পরিবাবু![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
লিখাটা ভিষন ভিষন ভিষন ভালো লাগলো| আমি সেই ছোট্টবেলা থেকে অঞ্জন দত্তের গান শুনি| কখনওই মনে হয় না অনেক শুনে শুনে ফেলেছি ঠিক যেমন হয় টা হয় রবীন্দ্র সংগীত শোনার সময়| এমনি করে আরো লিখুন...
অঞ্জনকে ভালা পাই। তোমার লেখাও তার কাছাকাছি...![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
''চৈত্রী''
''চৈত্রী''
অঞ্জনের গানে ডাক অসুবিধা নাই।
কিন্তু তোমাকে কিভাবে ডাকলে লেখা দেবে ভাই?
অনেক দিন পর কিন্তু এলে.....
ছুঁয়ে গেলো।![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।
লেখা ভালো লেগেছে। আর অঞ্জন, সেতো কত কত দিন কাটিয়ে দিয়েছে। তার প্রত্যেকটা গন যেন এক এককটা ছোট গল্প। ভীষনভাবে মিলে যায় আমাদের জীবনের সাথে।
______________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ
অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম। মাস্টারি করতে করতে তো ভুলেই গেছেন। লেইখেন মাঝে মধ্যে...
লেখাটা খুব ভালো লাগলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আহ, অঞ্জন!!!
লেখাটা ভাল লাগল খুব...
আরে, এই লেখা মিস করে গিয়েছিলাম!!
ক্যাম্পাসে পয়লা দিন দেখেই তো মাস্টারদা কে চিনে ফেলেছি![দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/4.gif)
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নতুন মন্তব্য করুন