আমার বাবা যেদিন মারা গেল সেদিনই আগুনের বিভূতি টের পেলাম। আমাদের চোখের সামনে বাবা একটু একটু আগুনে ভস্মিভূত হচ্ছে। আর আমাদের চোখ থেকে জল ঝরছে। তবু ধরে আছি অগ্নি শলাকা। ঘুরে ঘুরে বাবার মুখে ছুঁইয়ে দিচ্ছি। বলছি-- হে অগ্নি, আমার বাবাকে গ্রহণ কর। একটা জীবনের পাপ নাও। পূণ্য নাও। ভাল নাও। মন্দ নাও। পঞ্চভূতে মিলিয়ে দাও আমার বাবাকে। এই অগ্নিস্নানের মধ্য দিয়ে আমরাও পূনর্জাত হই।
এই তো আগুনের মহিমা। বাবা পুড়ছে--কিন্তু দেখতে পাচ্ছি বাবার পা দুটো সবশেষ পর্যন্ত সজীব রয়ে গেছে। অই পায়ে আমরা পড়েছি।
এই আগুন নিয়ে আমার পিসি, বাবার গল্প আছে। সবগুলোই করুণ---করুণতম। এ গল্পগুলো যখন শুনেছি পিসি নয়, আমরাই আগুনেই পুড়েছি। এখনও পুড়ছি।
আগুনে পোড়ার কি শেষ আছে?
একটি গল্প :
................................................................................................
যে কথা আগুনের- যে কথা স্নেহজলের
কুলদা রায়
আমার বড়ো পিসি আগুন দেখলেই হাত জোড় করে বসে পড়তেন। বিড়বিড় করে কি সব বলতেন। চোখে মুখে ফুটে উঠত মিনতি। তারপর স্নেহসুধা।
শহরের প্রান্তেই পিসির বাড়ি। বেশ বড়ো। একটি টিনের ঘর। পাশে ছোট মন্দির। সারাদিন সারারাত মন্দিরে প্রদীপ জ্বলতো। পিসি ঘুমোতেন এই দুটো প্রদীপের খুব কাছে। বুকের কাছে। বাইরে দীর্ঘ কড়াই গাছ। হাওয়ায় পাতা ঝরে পড়লে পিসি ব্যস্ত হয়ে উঠতেন- প্রদীপ যেন নিভে না যায়। প্রদীপের শিখার মধ্যেই তার প্রাণ। প্রাণপণে এই প্রাণদুটোকে তিনি বাঁচাতে চাইতেন। হাওয়ার সঙ্গে তাঁর চলতো যুদ্ধ।
আমি যখন প্রথম স্কুলে গেলাম, আমার ঠাকুরদা একটি প্রতিমা কিনে আনলেন। বোনরা কুড়িয়ে আনল গাঁদা ফুল। মালা গেঁথে দেবীর গলায় পরিয়ে দিল। বাবা আনলেন একহাড়ি মহারাজপুরের দই। মা ভাজল খই। বড়দি চন্দন ঘষে আমাদের কপালে ফোঁটা দিল। স্নান সেরে ভোর ভোর পরেছি শাদা জামা। আজ সব কিছুই শাদা। শ্বেতবর্ণ।
পুরোহিত বসেছেন পূজায়। ঢাকী বাজাচ্ছেন ঢাক। আমরা বসেছি ঘা ঘেষাঘেষি করে। দিদি বলছে, পূজা হোক- তারপর খাবি। রান্না ঘরে লুচির গন্ধ। মা লালপেড়ে শাড়ি পরা। লুচি বেলে গরম তেলে ছাড়ছে। ঠাকুরদা তুলসীতলায় বসে আছেন। একটি বেড়াল তাঁর পায়ের কাছে চুপ করে শুয়ে আছে। ভুলু কুকুরটি লেজ তুলে উঠোনের চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
বড়ো পিসি এসে গেলেন। হাতে দুখানা বই।, দুটো খাগের কলম আর দুটো সুলেখা কালির দোয়াত। হাতে ঝুলছে একটি ইলিশ মাছ। পুরোহিত মন্ত্র পড়া থামিয়ে বলে উঠলেন, এটো হয়ে যাবে পূজা খোলা। ওকে ঠেকাও। ওকে ঠেকাও।
পিসি কিন্তু পুজাখোলায় ঢুকে পড়েছেন। দোয়াত, কলম আর বইদুটো ঠাকুরের সামনে সাজিয়ে রেখেছেন। আর কলাপাতায় রেখেছেন মাছটি। আঁচল থেকে প্রদীপ দুটো বের করে জ্বালিয়ে দিলেন। বসলেন হাত জোড় করে।
বিড়বিড় করে প্রদীপের আলোর দিকে বলতে শুরু করেছেন। আমি এই প্রথম বুঝতে পারলাম পিসি বলছেন- হে অগ্নিদেব, তুমি আমার বিশু-নিশুকে নিয়েছো। ওরা তোমার আশ্রয়ে আছে। তোমার কাছে মিনতি করছি- তুমি ওদের দেখে রেখো। ওদের মানুষ করে তুলো। হে অগ্নি, তুমি সহজ, সরল, স্নিগ্ধ।
তারপর মাতৃস্নেহে পিসি বললেন, সরস্বতী স্তুতি-
যা দেবী সর্বভূতেষু বিদ্যারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
তারপর বললেন-
তুমি মানসের মাঝখানে আসি
দাঁড়াও মধুর মুরতি বিকাশি,
কুন্দবরণ-সুন্দর-হাসি
বীণা হাতে বীণাপাণি।
ভাসিয়া চলিবে রবি শশী তারা
সারি সারি যত মানবের ধারা
অনাদিকালে পান্থ যাহারা
তব সঙ্গীতস্রোতে।
প্রতি মন্ত্র দুইবার করে। স্পষ্ট উচ্চারণে। ফুল দিয়ে প্রণাম করলেন দুইবার। যেন পিসি দুটো শিশুর হয়ে জ্ঞানের দেবীকে অর্ঘ দিচ্ছেন। মেগে নিচ্ছেন প্রজ্ঞা এবং বিনয়।
মা ইলিশটি রান্না করল সর্ষেবাটা দিয়ে। আমাদের পাতে একটি খণ্ড এলো। আর পিসি আমাদের পাতের পাশে প্রদীপ দুটো জ্বালিয়ে দুইখণ্ড মাছ, ভাত, দই রেখে কাদের যেন খাওয়াতে লাগলেন। আমার ঠাকুরদা আড়ালে চলে গেলেন।
২.
ঠাকুরদাকে যেদিন শ্মশানে নেওয়া হল বড়ো পিসি অনেকটা পরে এলেন। হাত জোড় করে বললেন, বাবা, অগ্নিদেব তোমাকে গ্রহণ করছে। ওঁর কাছে আমার বিশু-নিশু আছে। তুমি ওদেরকে গান শেখাবে। যেন তোমার মত গাইতে পারে-
আগুনের পরশ-মণি ছোঁয়াও প্রাণে
এ জীবন পূণ্য করো দহন-দানে।
৩.
আমার মোটর সাইকেল উঠোনে থামল। চেয়ে দেখি, বাবা শুয়ে আছেন খোলা বারান্দায়। মা কোথায় জানিনা। দাদা বাবার পা ছুঁয়ে বসে আছে। আমার বোনেরা বাবাকে সাজিয়ে দিচ্ছে- চন্দনে, ফুলে, পাতায়, চোখের জলে।
সেদিন শ্মশানে আমাদের সবার আগেই বড়ো পিসি পৌঁছে গিয়েছিলেন। প্রদীপ দুটি জ্বালিয়ে মন্দিরে পূজা দিয়েছেন- শ্মশানকালীর। প্রণাম করছেন উত্তরে, দক্ষিণে, পূর্বে- পশ্চিমে। ঘুরে ঘুরে ধুপকাঠি জ্বালিয়ে দিচ্ছেন প্রতিটি সমাধি-মঠের সামনে। তারপর আমরা ভাই বোনেরা সবাই মিলে আগুন তুলে দিচ্ছি বাবার মুখে- ঘুরে ঘুরে প্রণাম করছি আর আগুন তুলে দিচ্ছি বাবার মুখে- দুরে ডেকে উঠছে রাত্রির শেয়াল। বড়ো পিসি হাত জোড় করে মিনতি করছেন আগুনকে। বলছেন- আগুনের আশ্রয়ে চলে যাওয়া বাবার দিকে- তার একমাতো ভাইয়ের দিকে- বলছেন, ভাই, আমার বিশু-নিশুকে কাজকর্ম শিখিয়ে দিস।
৪.
আমার ছোটো পিসি আমার বাবাকে খুব ভালবাসতেন। পিসির তো ঘরবাড়ি ছিল না। ছিল আশ্রম। আশ্রমের গাছপালা, তার নীচে চরে বেড়ানো ছাগল ছানাটি- দুধেল গাইটি তার সন্তান সন্তুতি। একটি পাখির জন্যও তার মাতৃস্নেহ ছিল অপার।
ছ'মাসের মধ্যেই ছোটো পিসি বাবার কাছে চলে গেলেন। একমাত্র ভাইকে একা ফেলে এখানে থাকবেন কিভাবে? ছোটো পিসি মাটির আশ্রয়ে চলে গেলেন। তার সন্তানদল তাদের ছায়ায়ই তাদের মাকে রেখে দিল। গাছ দিল ছায়া, ছাগল ছানাটি চোখের জল-আর গরুটির হাম্বা হাম্বা কান্নার শব্দ। পাখি দিল সমুখে শান্তি পারাবার। বড়ো পিসি প্রদীপ দুটি ছোটো পিসির শিয়রের কাছে রাখলেন। বললেন, বোন, তুই আমার বিশু-নিশুর ঘাম মুছে দিস।
৫.
আমাদের আরেকটি বোন যখন অসুস্থ হয়ে পড়ল, মৃত্যু তার শিয়রে বাঁশি বাজাতে শুরু করছে এই সময় আমার বড়ো পিসি আমার ফেরার পথে দাঁড়িয়েছিলেন। আমার হাত ছুঁয়ে দিলেন মাত্র একবার। প্রদীপখানি হাতে ধরা। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাননি। চলে গেলেন দেশ ছেড়ে। সাথে নিলেন- তাঁর মন্দিরে গোপনে লুকিয়ে রাখা সেই পাট গুদামের পোড়া কাঠ কয়লা- যার সাথে মিশে আছে তার বিশু-নিশু, দোতলায় ঘুমিয়ে আছে কোমল শিশুদ্বয়- নিচে পাটের স্তুপে লেগেছে আগুন। আগুনের শিখা উঠছে দাউদাউ করে। শিশু দুটি আগুনের মধ্যে দৌড়ুচ্ছে। চিৎকার করে বলছে- মা, মা। হাওয়া প্রবল হচ্ছে। আগুন স্পর্শ্ব করছে আকাশ। আকাশ থেকে খসে পড়ছে অন্য কিছু নয়- বিশু-বিষুর হাড়; আর সেই প্রদীপ দুটো।
আর কাউকে তিনি বিশু-নিশুর কাছে এত তাড়াতাড়ি পাঠাতে রাজী নন।
মন্তব্য
থ হয়ে কী-প্যাডে আঙ্গুল রেখে ভেবে পাচ্ছি না,কি লিখবো। কষ্ট লাগলো বুক চাপা। আমাদের অযত্নে,অলক্ষ্যে,অবহেলায় আর যেনো প্রাণ আগুনে না পোড়ে। লেখাটা খুব ভালো।
ভালো লেগেছে...
কূলদা ভালো লেগেছে তোমার লেখাটি। আমার জন্ম হিন্দুর ঘরে হয়নি, তাই বলে সংসারে পিসিদের মমতা-সোহাগের অনুভবে কমতি হয়নি। শশ্মানে আগুণের নিষ্ঠুর থাবার মাঝেও যে মানুষের অনুভূতিগুলো কতো সতেজ..। আর সর্বশেষ- পিসির দেশত্যাগ কেন? দেশত্যাগ কি ঠেকানো গেল না?
zic2010@yahoo.com
ভালো লেগেছে...
কূলদা ভালো লেগেছে তোমার লেখাটি। আমার জন্ম হিন্দুর ঘরে হয়নি, তাই বলে সংসারে পিসিদের মমতা-সোহাগের অনুভবে কমতি হয়নি। শশ্মানে আগুণের নিষ্ঠুর থাবার মাঝেও যে মানুষের অনুভূতিগুলো কতো সতেজ..। আর সর্বশেষ- পিসির দেশত্যাগ কেন? দেশত্যাগ কি ঠেকানো গেল না?
zic2010@yahoo.com
লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে কোন মন্তব্য না করি ...
শুধু বলি, আপনার বর্ণনা অ-সা-ধা-র-ণ !
ঠিক যেন কোন সিনেমা দেখিয়ে ফেললেন- দৃশ্যের পর দৃশ্য !
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
অদ্ভূত আপনার লেখনী।
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
কুলদা দাদা, আপনার এইরকম লেখার জন্যই হাপিত্যেশ করে বসে থাকি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ভয়াবহ
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
দাদা, কী গল্প শোনালেন...যেন চোখের সামনেই দুঃখটা দেখতে পেলাম...
++++++++++++++
ভাষা হোক উন্মুক্ত
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
চুপ করে বসে রইলাম একবার পড়ে। তারপরে আবার আবার আবার। লেখার মাঝে মাঝেই থেমে থেমে শুনছি যেন "ব্যথা মোর উঠবে জ্বলে উর্দ্ধপানে/ যেখানে পড়বে সেথা করবে আলো"। শুনছি যেন " তমসো মা জ্যোতির্গময়/ মৃত্যোর্মা অমৃতম গময়/ আবীরাবীর্ম এধি।"
ভালো থাকবেন লেখক, ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তব্দাহত!!
-শুকনো পাতা
আপনার লেখাগুলো ভয়াবহ! দুর্দান্ত!! জায়গায় বসে থাকা নিজেকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
আমার বাবা মারা গিয়েছিল ২০০০ সালে। ছোট পিসি ছয় মাস পরে। বড় পিসি এখন কাউকে চিনতে পারে না বলে শুনেছি। বাবার শ্মশানদৃশ্যটি এবং ছোট পিসির বাড়িটি মনে রেখে এই কবিতা দুটি লিখেছিলাম বহুদিন আগে। এই বাড়িটিতে একাত্তরে ভয়াবহ ঘটনার চরিত্র হয়েছিলাম। একদিন পোস্ট দেব।
আজ একটি গল্প লিখেছি। ডঃ মুহম্মদ ইউনুসের মাইক্রো ক্রেডিটের অন্তর্নিহিত অপার সুষমা নিয়ে।
ধন্যবাদ সবাইকে।
চিতা দৃশ্য
বল স্বস্তি, অগ্নি তৃষ্ণা প্রবল চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে
স্বস্তি স্বস্তি মুখে নেমে আসে প্রণমিত হাত-- বরফ শীতল
অশ্বত্থগাছের নিচে যারা বসে ইতস্তত:
কথা ফেলে তদ্গত নব বনচর
চোখ থেকে চন্দ্র ঝরে
অচিরাৎ ক্রোধ পড়ে যায়
তুমি জানো
ন্যূব্জ কুশের কাছে রয়েছে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ নখ গৃধিনী সকল
করাল মূর্তি কিছু, আজ ভয়হীন
নদীতীরে ফোটে ঐ ‘মট মট’ চন্দনবন
অন্ধকারে পোড়ে দ্যাখো ঘন কালো চুল
ঘ্রাণে ভেসে যায় ঘৃত ও কুসুম
দীর্ঘ ছায়ার কাছে ভেঙে পড়ে স্নেহজল
অনাথ ধীবর আমি জাল পেতে বসে আছি
আশা পরমাদ
লাবণ্য মাছ আহা তপ্তজ্ঞানে বায়ুযানে
পাড়ি দেয় বুকের মর্মর
এই দেহ ছাই হলে জেগে থাকে নমিত দুপা
..........................
স্নেহজল
(পিতৃপ্রতিম নাইবউদ্দিন আহমদকে)
রৌদ্র এলে পিসিদের গ্রাম ফুটে ওঠে
নিভৃত চালে ছন, আহা দ্যাখো, উঁকি মারে রাত্রিমেঘ
বলেছি তোমাকে-- ঘাট ঘুরে যেতে যেতে
শঙ্কাবোধে আমি যেন সহসা হঠাৎ আচমন করি জলে
এসেছি সুবোধ গ্রামে ছত্রখান ছায়া কার
হেসে ওঠে যুথচারী পাতার ভ্রমর
বাদামী কুকুর এসে ঘেউ তোলে তারস্বরে
পুনরায় লেজ নেড়ে ফিরে যায় কুণ্ডলিত নাড়াস্তুপে
নিকানো দাওয়া-- সারি বেঁধে পিঁপড়ে চলেছে ঘরে
অদূরে হেঁসেল থেকে পিসি বলে ওঠে--
চান করে আয় বাবা, এই ফাঁকে দুটো চাল
ফুটে হবে ভাত
রোদ ঘুরে গেলে স্নান সেরে ফিরি পিসিদের গ্রামে
দূর থেকে ছুটে আসে ছাগশিশু, আহা দ্যাখো--
জ্ঞাতসারে লাউশাক খায়
জামবাটি থেকে দুধ চোষে এক শিকারি বিড়াল
হাম্বা হাম্বা বলে ডাক দিলে লুপ্তবোধে পিসি তার
হাড়ি থেকে সবটুকু ভাত কলার পাতায় ঢালে
বলে, বাছা, চেটেপুটে খেয়ে নাও
মাতৃজ্ঞানে কুসুমে কোমলে
সজনে গাছের পাশে পতপত ওড়ে কাপড়ের পাড়
ছোট পিসি, টুপ করে ঝড়ে পড়ে মর্মরিত নীল
...........................
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
অনেক অনেক ভালো লাগলো।
অঙ্গার হয়ে শুদ্ধ হওয়া, নাকি শুদ্ধ ভাবে বেঁচে থাকতে চাওয়া ... কোনটা ঠিক জানিনা। ভাললাগার সবটুকু যেন ছুয়ে গেল আপনার লেখাটি পড়ে... আর কি কিছু বলার দরকার আছে?
--শফকত মোর্শেদ
আপনার এই লেখাটা আমার পড়া আপনার প্রথম লেখা।
আপনাকে হয়ত বলে বোঝাতে পারব না ঠিক এই মুহূর্ত্তে আপনি আমাকে কী পরিমান বিবশ করে দিয়েছেন। আমি এও জানিনা কেন আমার দু'চোখের পাতা ভিজে এসেছে।
শুধু এইটে জানি, ঈশ্বর আপনাকে এক বিরল ঐশ্বর্য দিয়ে পাঠিয়েছেন। আমাদের চির চেনা চির পুরাতন অক্ষরগুলোর বুকে আপনি প্রাণ ফুঁকে দিতে পারেন।
আপনাকে প্রণাম!
দুর্দান্ত!
কষ্টগুলো খুব করে বিঁধলো কোথাও।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
চলে যাওয়ার কষ্ট শুধু সে-ই পায়, যে শুধু হারাতেই জানে, ফিরে পেতে জানে না।
কেন মানুষের অনুভূতিগুলো সূক্ষ্ম হয়, আমার বড্ড জানতে ইচ্ছে করে, বড় বেশি মাত্রায়।
কেনইবা আবেগ থাকে?
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
ছুঁয়ে গেল একদম!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আপনার গল্পগুলো বরাবর্ই মর্মান্তিক। কমেন্ট করার ভাষা নাই।
এই গল্পটি বইতেও পড়েছিলাম কি?
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
শুধু একটি কথাই বলতে পারি। দূর্দান্ত।
কেন কিছু মানুষের কাছে কাব্যলক্ষ্মী আর গদ্যসুন্দরী দুইই ধরা দেয়?
কেন কারো কাছে কেবল কাব্যলক্ষ্মী অথবা গদ্যসুন্দরী ধরা দেয়?
কেন বাকিদের কাছে কেউই ধরা দেয়না?
কেন বুকভরা কবিতা নিয়ে এক লাইন কবিতাও লিখতে পারিনা?
এ অন্যায়, ঘোর অন্যায়!!!
**************************
আপনার ভাষা, আপনার লেখার স্টাইল এগুলো নিয়ে মনে হয় কোন কথা হয়না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অসাধারন।
হুম
অ-সা-ধা-র-ণ
-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
অদ্ভুত বিষণ্নতায় ভরা এক অন্যরকম লেখা। অসাধারন বর্ণনা। ভাল লাগল।
শুভকামনায়
তার্কিক।
ছুঁয়ে গেলো আমাকে।
আচ্ছা নাইবউদ্দিন আহমদ মানে ফটোগ্রাফার নাইবউদ্দিন আহমদের কথা লিখেছেন?
...........................
Every Picture Tells a Story
হ্যা। ফটোগ্রাফার নাইবউদ্দিন আহমেদ। আমার চাচা। আমাকে আটটি বছর কাছে কাছে রেখেছেন। একবার ব্রহ্মপুত্র ভেসে গেল বৃষ্টিতে। আর আমাকে নিয়ে বের হলেন 'শ্রাবণ-বৃষ্টিতে শেয়াল'এর ছবি তুলতে। পরেছি সবুজ শার্ট। সবুজ প্যান্ট। আর সাদা বৃষ্টি। সাদা ব্রহ্মপুত্র। এর মধ্যে বেরিয়ে পড়েছে হলুদ শেয়াল।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
দূর্দান্ত লিখছেন খোকন না।
:::::: :::::::: ::::::::::::::: ::::::::::::::: ::::::::: ::::::::: :::::: ::::::: ::::::::::::
ভবিষ্যতে কি হবে তা ভেবে বর্তমানকে উপেক্ষা করবো কেনো?
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
ঘটনা নিয়ে কিছু বলার নেই। আসলে অনুভূতি বুঝিয়ে বলার মতো ভাষা নেই আমার। খুব...খুব ছুঁয়ে গেল লেখাটা।
কী অসাধারণ! অবাক হয়ে বসে থাকলাম অনেকক্ষণ! কখন কীভাবে জানি একফোঁটা পানি এসে ঠাঁই নিয়েছিলো চোখের কোণায়, সেও অবাক হয়ে বসেই থাকলো, ঝরে না পরে...
-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
একেই বলে লেখার মত লেখা...হৃদয় ছুঁয়ে গেল!
জীবনের চরম সত্য -নির্দয়, নিষ্ঠুর। আগুনের দাহনলীলায় পুড়ে যাওয়া মানুষের জীবন, অসহায়ত্ব -অবোধ বিশ্বাস -সব মিলিয়ে অদ্ভুৎ বিষাদ-মাখা একটা লেখা। কষ্ট পেয়ে আনন্দ পেলাম।
অ-সা-ধা-র-ণ
এবং জাস্ট অ-সা-ধা-র-ণ!!!!!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
দুর্দান্ত লিখেছেন!
চুপ করিয়ে দিল লেখাটা৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
বাবার কথা মনে পড়ে গেল। বাবাকে প্রায়ই স্বপ্নে দেখি।
আগুনে পোড়ানো আসলেই খুব কষ্টে।
লেখা ভালো হয়েছে। ভালো থাকবেন।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল
শুধু গল্পই হোক বা সত্যি - আপনার বড়পিসি'র জীবন-দর্শন মুগ্ধ করে দিলো! লেখা নিয়ে অন্যেরা যা ইতোমধ্যেই বলে দিয়েছেন তার বাইরে আর কিছু বলার নেই। '৭১ এর ঘটনা নিয়ে লিখবেন বলেছেন, অপেক্ষা করছি .........
নতুন মন্তব্য করুন