তপন রায়চৌধুরীকে নিয়ে খুব বিপদে পড়ে গেছি। ভদ্রলোক বুড়ো মানুষ। ছাব্বিশ সালে জন্ম। এখনো বেশ রসে-বসে আছেন। পৃথিবীর তাবত বড়সড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসাইটে প্রফেসর। শ্বেতাঙ্গদেশে দিন কাটিয়েছেন। এখন শেষ বয়সে এসে পুরো ভীমরতিতে হাবুডুবু খাচ্ছেন। ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।
আপনার যারা বরিশালকে চেনেন তারা জানেন অধুনা ঝালকাঠি জেলাটির নদীর নাম সুগন্ধা। সড়কপথে একটু এগুলেই বাঁদিকে একটি পথ ঢুকে গেছে। পথের মোড়ে লেখা--ইহা কীর্তিপাশা। আর যারা স্বরূপকাঠির সন্ধ্যা নদী দিয়ে ঢুকতে চান, তারা জলাবাড়ির পাশেই ভীমরুলি খাল দিয়ে চলে যাবেন। ইহার কীর্তি অতুলন।
এই কীর্তিপাশার জমিদার সন্তান তপন রায়চৌধুরী খুব অল্প বয়সেই সেখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি লিখেছেন, কীর্তিপাশার জমিদারবাড়ি কবে তৈরি আমাদের জানা নেই। মাত্র কয়েক আঙুল উঁচু অথচ বেশ চওড়া ইঁটের গাথুনি দেখে মনে হত, আঠার শতকের মাঝামাঝি বা শেষাশেষি এই বাড়ির পত্তন। সেকেলে আর পাঁচটা বাড়ির মত এটাও একদিনে তৈরি না। পূর্বপুরুষরা খেয়ালখুশিমত বাড়িয়েছেন, অদলবদল করেছেন। সেখানে শখের থিয়েটারের পার্মানেন্ট স্টেজ আছে। পুজার সময় প্রফুল্ল নাটক হচ্ছে। সেরেস্তার অতি ভালমানুষ কর্মচারী অক্ষয়বাবু করছেন দারোগার পার্ট। তার পার্ট এক লাইনের। জেলে বন্দি অবস্থায় নায়ক সুরেশ কুমার কাঁদছেন। ক্রন্দনরত সুরেশকে লাথি মেরে বলতে হবে--'শালা কাঁদছিস কেন, পাথর ভাঙ'। রিহার্সেলের সময় এমন বাক্য তার মুখে এল না। শুধুই বলতেন, 'স্টেজে কমু হ্যানে'। স্টেজে বলার সেই দুর্দিন শেষ অবধি এল। সীন উঠল। সুরেশধারী মহাকায় সেজবাবু (জমিদার) পাথর ভাঙছেন। গ্লিসারিনের সাহায্যে তার অনভ্যস্ত চোখে জল আনার ব্যবস্থাও হয়েছে। কিন্তু দারোগা নীরব। প্রম্পটার উদ্বিগ্ন, " ও অক্ষয়, পার্ট কও, হাক করিয়া খাড়াইয়া আছ কিয়ার লাইগগা?" অনেক ইতস্ততর পর খাকি প্যান্টধারী জেল-দারোগা অক্ষয় তার অবিস্মরণীয় পার্ট বললেন, "অ সুরেশবাবু, কান্দেন ক্যান? পাথর ভাঙেন।'' হোক এটা প্লে--কিন্তু তার মনিব জমিদার সেজবাবুকে কি শালা বলা যায়?
অবস্থাপন্ন তাদের রায়তরা খুব মুশকিলে পড়ে যেত। ফসল ভাল হলে তাঁদের সেই সৌভাগ্য নিয়ে কি করবেন ভেবে চিন্তায় পড়তেন : "কয়েন দেহি বড়মেয়া, আর এড্ডা নিকা করি না চাচার লগে আরেগডা মোকদ্দমা বাধাই?" চিন্তারই বিষয়। প্রবল পুরুষদের কিসে সুখ, তা নির্ণয় করা কঠিন।
এই বরিশালবাসীর প্রচণ্ড পৌরূষ আকাশচুম্বী। তাদের ভাষার প্রেরণা উদার মানবপ্রেম, সমস্ত বসুধাকে কুটুম্বজ্ঞান। বরিশালে সবাই সবাইর 'হালা' এবং মনু সন্তানেরা অধিকাংশই হারামজাদা। মনের আবেগ বেশী প্রবল হলে শেষ কথাটি 'শাআরামজাদা' উচ্চারিত হত। একবার এক বুড়ো লোকের বিরুদ্ধে নালিশ এল তিনি নাকি নির্বিশেষে সবাইকে হারামজাদা ডাকছেন। লেখকের ঠাকুর্দা বৃদ্ধকে ডাকলেন, " বুড়া, তুমি নাকি হগলরে হারামজাদা কও?" বৃদ্ধ সাত হাত জিব কেটে গভীর পরিতাপের সঙ্গে বললেন, " কয়েন কি? এমন কথা কারওরে আমি হাত (সাত) জন্মেও কই নাই। কে নালিশ করছে, হ্যারে বোলায়েন। এই হানেই (এই খানেই) ফয়সলা হইয়া জাউক।" প্রধান ফরিয়াদিকে তলব করা হল। তাকে দেখামাত্র বৃদ্ধ তেড়ে গেল, "কিরে হারামজাদা! তরে বলে আমি হরামজাদা কই।" ঠাকুর্দা বললেন, " অব বুড়া, এই ত কইলা।" উদার হাসিতে মুখ উদ্ভাসিক করে বৃদ্ধ বলল, "হুজুর, ওয়া তো লবজো।" অর্থাৎ মুখের কথামাত্র।
অন্যতম বরিশাল্যা শেরে বাংলা ফজলুল হক একাধিকবার দল বা জোট বদল করেছেন। এটা তার স্বজাতিরা পছন্দ করেন নাই। তারা সিদ্ধান্ত নিল--হকসাহেব স্টিমার তেকে ঘাটে পা দিলেই সবাই বলে উঠবে--শেইম, শেইম। সবাই রেডি। ভাড়া করে কিছু লোহজনও আনা হয়েছে। দশাসই হকসাহেব নামছেন। লোকজনও প্রস্তুত। কিন্তু ব্যাপারটা একটু গোলমাল হয়ে গেল। ঐ বাঘের মত মানুষটিকে সামনে দেখে নিশানবাহীরা পালাবার পথ পায় না। ছাত্রনেতারা উস্কাচ্ছেন," চুপ করিয়া ক্যান? ক', চ্যাঁচাইয়া চ্যাঁচাইয়া ক'।" অতি সংকোচে মুখ হাতে ঢেকে বিক্ষোভকারীরা শ্রারাধিকার মত নরম সুরে বলল, " শ্যাম! শ্যাম!" হকসাহেব মুচকি হেসে এগুলেন। পরবর্তী স্পট আমাদের বাড়ি। সেখানে ওর বাল্যবন্ধু ইন্দুবূষণ গুপ্ত বসে আছেন সদলে : "আইজ আউক! ফজলুরে আইজ ধোয়ামু"--অর্থাৎ সস্নেহে গালিগালাজের তোড়ে শের-ই-বাংলাকে উনি ধৌত করে ছাড়বেন। হক সাহেব ধীরে সুস্থে পাপোষে পা মুছে বৈঠকখানার ঘরে ঢুকলেন। ঢোকামাত্র ইন্দুবাবুর আক্রমণ "ফজলু, তর লাইগগা ভদ্দরসমাজে আর মুখ দ্যাহান যায় না।" হক সাহেব গভীর সহানুভূতির দৃষ্টিতে বাল্যবন্ধৃকে দেখলেন একটুক্ষণ। তারপর বললেন, " হেইলে ত তর বড় মুশকিল! ভদ্দরসমাজে মুখ দ্যাহাইতে পারিস না? তয় হোগাটা দেহাইস।" তপনবাবু বলেছেন--এটা ঋষিবাক্য।
এই ঋষিবাক্যে তপন রায়চৌধুরী লিখেছেন "রোমন্থন অথবা ভীমরতিপ্রাপ্তর পরচরিতচর্চা"। তিনি লিখেছেন, ক্ষেতে বর্ষা নেমেছে, হাঁটু অবধি জল, বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে দুই চাষী ধানের চারার রক্ষণাবেক্ষণ করছে। প্রথমের প্রশ্ন, " ক দেহি, মহারাণি ভিক্টোরিয়া এহন কি করতে আছে?" দ্বিতীয় জনের উত্তর, " হে কি আমাগো মত? পানি নাবতেই পান্থাভাত খাইয়া কাঁথামুড়ি দিয়া উব্বুত (শুয়ে পড়েছে)।
এইসব ঋষিবাক্যের পটভূমি তিরিশ আর চল্লিশ দশকে পূর্ববঙ্গের একটি অঞ্চল--বরিশাল জেলা--আর কলকাতার ছাত্রজীবনের পটভূমি। বিষয়বস্তু মামুলী অর্থে স্মৃতিচারণ বা সমাজচিত্র নয়, আত্মচরিত তো নয়ই। রচনাটির কেন্দ্রে রয়েছে এক বিচিত্র কৌতুকবোধ--গালগল্প, ঘটনা, ছড়া, গান, চরিত্রচিত্র জাতীয় নানা বিষয়ের পরিবেশনের মধ্য দিয়ে যার অনবদদ্য প্রকাশ। এর মধ্যে আনসেন্সরড ভঙ্গিতে বিরল বাকশৈলিতে লিখেছেন দুর্ভিক্ষ, দেশভাগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা--এবং এক বাঙাল জনপদের বীরগাথা যা গভীর মানবিকবোধে জারিত।
তিনি লিখেছেন, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে সাজুকাকা মারা গেছে শুনলাম। শুরুতে তিনি ছিলেন কমিউনিস্ট। পরে ঘোর মুসলিম লীগার। শেষ অবধি পাকিস্তান সরকারের পক্ষেই ছিলেন। আবেগপ্রবণ মানুষটি তার আদর্শ পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন মনে করেননি। ১৯৭৪-এ বরিশাল গেলাম, একটা উদ্দেশ্য সাজুকাকার মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা জানা। কারণ ঢাকায় কেউ কিছু বলতে পারলেন না। গিয়ে দেখলাম চরামদ্দির জমিদার ভবন এখন সরকারী দফতর। একটু নীচু গলায় সাজহান চৌধুরীর খবর কেউ জানে কি না জিজ্ঞেস করায় সবাই ত্রস্ত হয়ে কথা বদলাল। একটি লোক এগিয়ে এসে বলল, "বাইরে চলেন।" তার কাছে শুনলাম একদল পাকিস্তানী ফৌজ বরিশাল থেকে স্টিমারে সমুদ্রের দিকে এগুচ্ছিল। সেই জাহাজে অল্প কয়েকজন বেসামরিক যাত্রী ছিলেন--তাঁদের মধ্যে এই ভদ্রলোক আর সাজুকাকা দুইজন। জঙ্গী প্লেন থেকে বোমা পড়ে জাহাজটি ডুবে যায়। সাজুকাকা আহত হন। ওঁরা দু'জন সাঁতার কেটে পাড়ের দিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু রক্তক্ষয়ে অবসন্ন সাজাহান চৌধুরী বরিশালের নদীতে ডুবে গেলেন।
তপনবাবু লিখৈছেন--যে মানুষটির মৃত্যুকাহিনী শুনলাম সব হিসাবেই ত' তিনি শত্রু। মানুষের রাজনৈতিক জীবনে যা কিছু মঙ্গলময় মনে করি তার বিরুদ্ধে লড়াই করে সাজুকাকা আক্ষরিক অর্থে প্রাণ দিলেন। তবু এই শত্রুবিনাশের বিবরণ শুনে তীব্র যন্ত্রনা বোধ হল কেন?
এইখানে এসে থমকে যেতে হয়। আর ন্যায়-অন্যায় বোধটা আর পথ পায় না। কোনটা রাজনৈতিক আর কোন দার্শনিক মীমাংসার বিষয়--কে বলবে? কেবল দীর্ঘশ্বাস বাড়ে। কীর্তিপাশার কবি ছোমেদের বয়ানে ভীমরতিরপ্রাপ্ত তপন রায়চৌধুরী শুধু তুলে ধরেছেন--
মোরা য্যাতো দুঃক পাইলাম
মোগো বয়সের কালে।
হে দুঃখ না থাকে য্যানো
সোনাগো কপালে।
................................................................................................................................................................................
রোমন্থন অথবা ভীমরতিপ্রাপ্তর পরচরিতচর্চা
তপন রায়চৌধুরী
আনন্দ পাবলিশার্স প্রা: লিমিটেড।
মন্তব্য
এই বইটা বেশ পুরানো৷ দারুণ লেগেছিল তখন৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
আমরা সামাজিকতাকে মাঝে মাঝেই আদর্শিক অবস্থানের উপরে তুলে ফেলি । এটা একটা বড় সমস্যা ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
খুব প্রিয় একটা বই নিয়ে লেখা, ভালো লাগলো!
যদিও এটার চাইতে অনেক বড় একটা বই, তাও 'বাঙ্গালনামা' নিয়ে এরকম কিছু একটা পড়তে পারলেও হতো।
হা হা হা! ওখানে কেউ ধেড়ে বয়সে জন্মগ্রহণ করেছিলো নাকি?
ধরে ফেলেছে গো। সত্যিকারের চোখ এসে গেছে।
এই বাক্যটি সমীর সেনগুপ্তর। তপন রায়চৌধুরীর এই বইটিতে সমীর বাবু একটি দীর্ঘবরিশাল্যা চিঠি লিখেছেন--চিঠিটি গ্রন্থভুক্ত আছে। ওখানে সমীরবাবু এই সরস বাক্যটি লিখেছেন।
অসাধারণ রসসাহিত্য দুজনে লিখেছেন পাল্লা দিয়ে। আর উপাদেয় সব বরিশাল্যা গালিগালাজের সম্ভার। শ্লীল অশ্লীলের কোন বালাই নেই। মনুদের বীরভাষা।
সমীরবাবু একটু ছোট তপনবাবুরে চেয়ে। তপন বাবু বড়। সমীরবাবু লিখেছেন--মহাশয় অল্প বয়সে জন্মেছেন। আর আমি একটি একটু অধিক বয়সে। হা হা হা।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
মিহির সেনগুপ্ত৷ 'বিষাদবৃক্ষ'এর লেখক৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
দারুণ একটা বই। দুইবার পড়েছি। তবু এখন আপনার লেখা পড়ে মনে হইতেছে আবার পড়ি।
এই বইটার প্রতি বাক্যে বাক্যে মজা। যারা না পড়ছে তারা ব্যাপক মিস করছে। বুড়ার রসবোধ অসাধারণ। আর টিকাগুলো বইটাকে আরো আকর্ষণীয় করেছে।
আমি কয়েকবারই ভাবছিলাম এই বইটা নিয়ে একটা রিভিউ লিখবো। কিন্তু করা হয়নি আলসেমিতে।
আপনি লিখে খুব ভালো করছেন। দারুণ হয়েছে লেখাটা। ব্যাপক ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
উনার 'বাঙালনামা' পড়ছি। একটা রিভিয়্যু লেখার চেষ্টাও করছি।
----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
আপনার পোস্টগুলো ভাল লাগলেও অধিকাংশ সময় মন্তব্য করা হয়ে ওঠে না। এই সুযোগে ভাল লাগাটা জানিয়ে গেলাম।
তপন রায়চৌধুরীর অন্য লেখা কিছু পড়লেও এই বইটা পড়া হয়ে ওঠে নি। তবে আমাগো দ্যাশ নিয়ে কথা যখন, ভাল তো লাগবেই
একটা কৌতুক বলি, বরিশাইল্যাদের পঁচিয়ে অবশ্য।
এক লোক আরেক লোকের সাথে খাজুড়ে আলাপ জুড়ে দিয়েছে। জিজ্ঞেস করছে, ভাই আপনার বাড়ি কই?
সেই লোক এক গাল হেসে শুরু করেছে, মোগো দ্যাশ ... ?
প্রশ্নকর্তা বলছে, থাক, বুচ্ছি, বলা লাগবে না।
বাঙালনামা পড়েছি। অনবদ্য। এই বইটাও পড়ার খুব আগ্রহ আছে। আশা করবো শ্রদ্ধেয় তপন রায়চৌধুরী বাংলাদেশের কোনো প্রকাশককে এই বইটির বাংলাদেশ সংস্করণ ছাপতে দিয়ে বাংলাদেশের পাঠকের কাছে বইটির বৈধ কপি পৌঁছানোর সুযোগ করে দেবেন। বাংলাদেশে এ বইটির চোরাচালান করা সংস্করণ আসে, যা বহন করে আনতে গিয়ে বাহক বিএসএফের গুলি খাওয়ার ঝুঁকির মুখোমুখি হন। রায়চৌধুরীমশায় এই গোলাগুলির হাত থেকে আমাদের রক্ষা করুন।
বরিশাল বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর জায়গা। বরিশাল যে ঘুরে দেখেনি, সে বাংলাদেশের সৌন্দর্যের মহিমা বুঝবে না। বরিশালের মানুষ একটু কম ঘাড়ত্যাড়া হলে তারা গোটা বাংলাদেশের চিত্তজয় করতে পারতো। তবে যত বদই হোক না কেন, বরিশাইল্যাদের সাহসের তারিফ করি।
কুলদা,
অনেক ভালো লাগা জানাই।
তবে তপন রায়চৌধুরীর এই বইটা এখন পড়িনি।
ভালো থাকুন।
__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!
__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!
খুব প্রিয় একটা বইয়ের রিভিউ পড়তে এসে একটু হতাশ হলাম। কুলদা রায়ের লেখা সচরাচর আমাকে হতাশ করে না। কিন্তু এই বইটা থেকে আশার পরিমাণটা বেশি ছিল বলে হয়তো এই হতাশা।
একটা বইয়ের আলোচনা কী রকম হওয়া উচিত? সেখানে কি ঐ বই থেকে উদ্ধৃতির পর উদ্ধৃতি দিয়ে পাঠককে বইটা সম্পর্কে ধারণা দেয়া হবে? নাকি বইতে মূল লেখক যা বলেছেন সেটা আলোচক নিজের চশমায় দেখে বিশ্লেষণ করবেন? এখানে একটা ব্যাপার আছে যে বই আলোচনার পাঠকের তো মূল বইটা পড়া থাকতে পারে অথবা না পারে। যদি পাঠকের বইটি পড়া থাকে তাহলে আলোচক তাঁর দৃষ্টিতে বইটির গুরুত্বপূর্ণ যে দিকগুলো তুলে ধরেছেন সেটাতেই পাঠকের আগ্রহ থাকবে। আর পাঠকের যদি বইটা পড়া না থাকে তাহলে তিনি আলোচনায় খুঁজবেন কেন বইটা পড়া দরকার। সেটাও আলোচক তাঁর দৃষ্টিতে বইটির গুরুত্বপূর্ণ যে দিকগুলো তুলে ধরেছেন সেখানে মেলার কথা।
বইয়ের আলোচনা যদি ক্রিকেট খেলার হাইলাইটের মত উদ্ধৃতি ভারাক্রান্ত হয় তাতে বইটি না পড়া পাঠক বইটি পড়তে উৎসাহ বোধ করবেন কম। আর বইটি পড়া পাঠক সেখানে কিছু খুঁজে পাবেন না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনার সঙ্গে একমত ষষ্ঠ পাণ্ডব। ক্রিকেটের হাইলাইটস ক্রিকেট বোদ্ধাদের ভাল লাগার কথা নয়। সেক্ষেত্রে এই লেখাটি খুবই দুর্বল।
এই পরিচিতিটি লিখতে গিয়ে দুটো সমস্যায় পড়েছি।
এক. এই বইটি এত ভাল যে এর প্রতিটি অংশই উপভোগ্য। একজন পণ্ডিত যখন রসিক হন--তার প্রকাশ যে কত চিত্তাকর্ষক--তপন বাবুর বইটি তার প্রমাণ। আমার ধারণা সৈয়দ মুজতবা আলীর পরে তপনবাবুই ঐ ঘরাণার একমাত্র উত্তরসূরী। কথাব্স্তুর ভার আছে--ভারত্ব নেই। কাউকে জোর করে হাসায় না। জ্ঞান এবং প্রাণ দুই-ই সরল হাসিতে হেসে ওঠে প্রতিটি বাক্যে--শব্দে। মাধুর্যপুরাণ বলা যেতে পারে।
যেমন নিমাই ভট্টাচার্য টয়লেট পেপারের বাংলা করেছিলেন--হাগজ। নিমাই কবে কোথায় বলেছিলেন--কেউ মরে রাখে নি। কিন্তু তপনবাবু যখন বললেন--তখন তার অস্থি-মজ্জা-প্রাণে ঢুকে গেল। অথবা রান্নাবান্না নিয়ে তার লেখাটিতে ক্যাটারিং প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আরেকটি শব্দ তৈরি করে নিচ্ছেন--টাইগারিং। অতুলনীয়। এটা তপনবাবুর কলমেই সম্ভব। এবং বরিশাইল্যা ভাটিকুমারদেরই পেটেন্ট।
সুতরাং কোনটা রেখে কোনটা বলি--একটা ধন্ধে পড়ে যেতে হল।
দুই. ব্লগে লেখা একটু বড় হয়ে গেলেই পাঠকদের অবহেলা পেতে হয়। সেজন্য ছোট করে লেখার ভাবটা এসে পড়ে। কী করব।
তবে এই লেখাটাকে বই আলোচনা না বলে বই পরিচিতি বললে ঠিক হত।
আমি একটি বড় গল্প লিখে বসে আছি। কিন্তু ব্লগে কিভাবে দেব--ভাবতে পারছি না। এত বড় গল্প কারো চোখে পড়বে না।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
ভাইঙ্গা দ্যান। ইন্টারভেলের আগে। ইন্টারভেলের পরে।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
নতুন মন্তব্য করুন