প্রথম পর্ব.
...........................
পাতার হাটে পাতা নাই—ছাতা আছে। এই ছাতা মাথায় দিলে বৈকুণ্ঠে যাওয়া যায়।
--বৈকুণ্ঠ কি রে?
--জানি না, গান্ধিবাবু জানে।
ঝম ঝম করে বৃষ্টি নেমেছে। সোতা খাল দিয়ে এম এল পাতার হাট নদীর ঘাটে এসে থেমেছে। থৈ থৈ নদী। প্রাণ উড়ে যাওয়ার দশা। মুহাম্মদ শালুক চানের এদিকে কোনো খেয়াল নেই। পাড় ভেঙে পড়ছে। একটু বেচাইন হলেই পা পিছলে আলুর দম। সলিল সমাধি।
--সলিল সমাধি কি রে?
--গান্ধিবাবু জানে।
সমাধি মানে কবর। রাজ্জাক অভিনয় করেছিল। সঙ্গে করবী। কপালের উপর রাজ্জাকের পাক দেওয়া চুল। সমাধির উপর হুমড়ি খেয়ে গান গাইছে—মা গো মা, আমারে করলি তুই দেওয়ানা…।
মাগো মা—কি রে?
--গান্ধিবাবু জানে।
--তুই কি জানিস?
--মাগো মা মানে রোজী সামাদ। চউক্ষে পানি।
রোজী সামাদের পিছন থেকে তাড়া দিলেন, সইরা খাড়া।
রোজী সামাদের মাথায় ছাতা। পিছনে ভিজে জুবুথুবু হয়ে শাবানা বেগম পা ফেলছে। পায়ের পাতা থেকে আলতা গলে পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে। শালুক চান মাথায় উপর থেকে লম্বা বড়সড়ো কচুর পাতাটা নদীতে ফেলে দিল। পাকে পড়ে ঘুরতে লেগেছে। শালুক চানের মাথার উপরে বৃষ্টি। আর পাড় ভেঙে পাতাটির উপর পড়ল—ঝঁপ।
লঞ্চের সিঁড়িতে পা রাখতে গিয়ে শাবানা বেগম হালকা করে বলল, অ নানী, সাবধানে উইডো। পা পিছলাইও না।
--আমার পিছলানোর দিন শ্যাষ। তুই পিছলাইস না।
কেবিনের এক কোণে শালুক চান আরাম করে বসেছে। হাত পা ছড়িয়ে। চোখ বুজে আছে। লঞ্চ ছাড়ার কথা সকাল ৯টায়। ৩০ মিনিট কেটে গেছে। স্টার্ট নেওয়ার নাম গন্ধ নেই। নানী চেঁচিয়ে উঠল, অরে অ ফজলু, চালাইস না ক্যা।
--জালাল সাব আইবেন। খবর পাডাইছেন।
--কোন জালাল?
--গান্ধিবাবু জানে।
ঘণ্টা খানেক পরে জালাল সাব এল। মোটর সাইকেলে চড়ে। মাথায় কিস্তি টুপি। ঘাড়ে গর্দানে টাইট ফিট। পেছনে একজন ফেউ একটি ছাতি মাথার উপরে ধরে আছে। বৃষ্টি তুমি যাবা কোথায়?
এসময় নানীর পান খেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু চুন নেই। পুটলি হাতড়ে হাতড়ে মুখ বেঁকে গেল। ভেতর থেকে বেরুল—এক গাদা পান, প্লাস্টিকের ছোট্ট শিশিভরা খয়েরগোলা, গুয়ামুড়ি, ফ্যারফ্যারে সাদা তামাকপাতা। আর কটা হর্তুকি। শাবানা বেগম জানতে চাইল, কী অইছে অ নানী?
--মোর ফল্লা অইছে।দফনা অইছে।
গজ গজ করতে করতে পুটলিটা জোরে জোরে ঝেড়ে দেখতে লাগল। পুটলির ধাক্কায় খয়ের শিশিরটা ছুটে গেল—জানালার দিকে। একটুকু কাঁচ ভাঙা। সেই ছিদ্র পথে শিশিটা থপ করে আচড়ে পড়ল। শিশির মুখটা খুলে গেল। ছড়িয়ে পড়ল খয়ের গোলা।
নানী বুড়ি চক্ষু গরম করে বলল, বইসা রইছিস যে।
--তাইলে কী করমু।
--চুন লইয়া আয়।
--চুন পামু কই।
--গান্ধিবাবু জানে।
শালুক চানের ঝিমটি এসেছিল। ঝুম ঝুম শব্দে চোখ খুলে গেল। শব্দটি খুব মৃদু লয়ের। আলতা ধুয়ে গেছে। কোন ফাঁকে পায়ে পরা হয়ে গেছে নূপুর। উঠবে কি উঠবে না দোনামোনা করতে করতে দেখল—শাবানা বেগম নীচতলায় নেমে যাচ্ছে। শালুক চানের শ্বাস ঘন হতে হতে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলেছে।
ইঞ্জিনঘরের পাশে ছোট মিরধা আমড়া ছুলে রাখছে। মুখটা অহেতু গম্ভীর কালা। আজ রাতে মেজাজ ছুপা রুস্তম। বিবিটা তেরেকছাই করে দিয়েছে। বিবিদের মন বোঝা ভার। কাতল মাছের মত পিছলে পিছলে যায়। কাহাতক সহ্য হয়। কিড়মিড় করে বলে উঠেছে, সইরা যা মইরম বিবি।
মইরম বিবি সরে যাচ্ছে না। ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। গায়ে পায়ে লেপটে আছে ঝাকানাকা শাড়ি। চোক্ষে সুরমা টানা। ছোট মিরধা জানা, পিপড়ার পাখা হয় মরিবার তরে। মেজাজ গরম বলে আমড়ার খোসা পুরু হয়ে যাচ্ছে। চাকুটা ডেবে যাচ্ছে। মাথা ঝাকিয়ে ছোট মিরধা গর্জে উঠল, সইরা যা মইরম বিবি। কানে কি সোনা দিয়া রাখছস। কী কই—কানে পরবেশ অয় না?
দৌঁড়ে এসেছে হাচা মোল্লা। হাতে কেরোসিনের ডিব্বা। ইঞ্জিনে ভরতে লেগেছিল। হাতে পায়ে মাখামাখি। ছোট মিরধার কানে কানে বলল, অ উস্তাদ-- ইনি মইরম বিবি না।
ছোট মৃধার রাগ আরও চড়ে গেছে। এক সঙ্গে দুটো আমড়া তুলে নিয়েছে। ঘপাঘপ ছুলতে লেগেছে। বলছে, মইরম রে, খামোখা কাউতলী কেডা পোছে। সইরা যা। মেজাজডা খাডাস বানাইস না।
হাচা মোল্লা সরে এসেছে। আস্তে করে শাবানা বেগমের হাত ধরে সামনে থেকে টেনে সরিয়ে নিল। হাতখানা নরম। পয়লা শরম। ছ্যাঁক করে উঠছে। বেশ গরম। আরও জোরে চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল, উস্তাদে খেইপা গেছে। দেখতে আছ না?
শাবানা বেগমের চক্ষু ছল ছল। তিরবির করে হাত কাঁপছে। হাচা মোল্লা বেঞ্চিতে বসিয়ে দিয়েছে। নদীর ভেতর থেকে হাওয়া আসছে। আসছে ঢেউয়ের ঝাপটা। চুলে জলোচ্ছ্বাস লাগে। এখানে হালকা অন্ধকার। ফাটাফট ইঞ্জিনের শব্দ। আর কোরোসিনের শব্দ। শাবানার হাতে এক প্যাকেট খালেকের চানাচুর গুজে দিয়ে বলল, আইজ রাইতে উস্তাদের রাড়িবাড়ি যাওন ছাড়া উপায় নাই। তারপর ঠাণ্ডা।
এ সময় উপরে বেশ একটা শোর গোল উঠল। কে একজন ভারী গলায় হাঁকছে, কেডারে, কোন হালায়? কার কাম?
মন্তব্য
দুইটা কথা মনেপড়লো
আগে বাড়ির আশেপাশে গন্ধগোকুলের আনাগোনা ছিলো, একরকম পোলাওয়ের চালের মতন গন্ধ ছড়ায় গা থেকে।
সমাধি ছবিটা দেখেছিলাম, "মাগো মা" গানটা সে সময়ের হিট। ছবিটা সম্ভবত তুরস্কের কোন ছবির নকল বলে পরে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।
...........................
Every Picture Tells a Story
১. একে বোধহয় সিভেট বলে। খালি নামই শুনলাম, কোনদিন চোখে দেখলামনা। তবে পত্র-পত্রিকায় কুদরতী দাওয়াইয়ের বিজ্ঞাপণে গন্ধগোকুলের তেলের বেশ কদর দেখা যায়।
২. সমাধি নিষিদ্ধ হয়েছে বলে জানতামনা। আগে মাইকে এই "মাগো মা" গানটা শুনতে পেতাম। বেশ জনপ্রিয় ছিল। "কে তুমি" নামের একটা সিনেমাও নিষিদ্ধ হয়েছিল। সেই সিনেমার "বলে দাও মাটির পৃথিবী কোথা শান্তি আমার জীবনে" গানটা হিট হয়েছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে সিনেমা নিষিদ্ধ হলেও তার গানগুলো কিন্তু বাংলাদেশ বেতারে হরহামেশাই বাজানো হত। সুরুয়া হালাল, মাংস হারাম।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হু, এইটা সিভেট।
আর গান মৌলিক হলে সেটা নিষিদ্ধ করা হয়না। এমনও হয়েছে, ছবি হালাল কিন্তু গান নিষিদ্ধ।
...........................
Every Picture Tells a Story
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
খাসা!
বাহ! ভালো লেগেছে লেখাটা খুব।![চলুক চলুক](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/yes.gif)
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
গন্ধগোকুলের আকার সাধারণত ৫৩ সেন্টিমিটার, আর লেজের দৈর্ঘ্য হয় ৪৮
সেন্টিমিটার। ধূসর রঙের এই প্রাণীটির অন্ধকারে অন্য প্রাণীর গায়ের গন্ধ
শুঁকে চিনতে পারার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। প্রায় পোলাও চালের মতো তীব্র গন্ধ
ছড়িয়ে থাকে প্রাণীটি। একসময় এর শরীরের গন্ধ উৎপাদনকারী গ্রন্থি থেকে
নিঃসৃত রস সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহূত হতো। বর্তমানে এ...র স্থান নিয়েছে কৃত্রিম
বিকল্প।
গন্ধগোকুল খট্টাশ বা খাটাশ নামে পরিচিতি। বরিশালানুবাদ--খাডাশ।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
চলুক ...
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
বেশ।
_________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!
__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!
নতুন মন্তব্য করুন