জোড়া সাঁকোর ঠাকুর বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা নীলমণি ঠাকুর ছিলেন ব্যবসায়ী। তার পুত্র রামলোচন ঠাকুর বিরাহিমপুর পরগনা (যার সদর কাছারি ছিল শিলাইদহে) জমিদারী কিনেছিলেন। তিনি ছিলেন প্রখর বিষয়বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি। জমিদারী কিনে পীরালী ঠাকুরদের মধ্যে তিনি কিছুটা আভিজাত্য অর্জন করেছিলেন।
রামলোচন ঠাকুর মৃত্যুর আগে তার দত্তকপুত্র দ্বারকানাথ ঠাকুরকে ১৮০৭ সালে এ সম্পত্তির উত্তরাধিকারী করে যান। তখন তাঁর বয়স মাত্র তের বছর। তার বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এ সম্পত্তি রামলোচন ঠাকুরের স্ত্রী অলকা দেবী ও দ্বারকানাথের জেষ্ঠ্য ভ্রাতা রাধানাথ দেখাশুনা করতেন। সে সময় শিলাইদহ এলাকাটির সুনাম ছিল না। প্রজারা ‘দুর্বৃত্ত বলিয়া প্রসিদ্ধ’ ছিল। এ জন্য জমিদারী পরিচালনার আইন-কানুন সুপ্রীম কোর্টের ব্যারিস্টার ফার্গুসনের কাছে ভাল করে জেনে নেন।
আইন বিশেষজ্ঞ হওয়ার কারণে ১৮১৮ সালে তিনি চব্বিশ পরগনার কালেক্টরের শেরেস্তাদার নিযুক্ত হন। ১৮২৮ সালে শুল্ক ও আফিং বোর্ডের দেওয়ান হন।
১৮৩০ সালে কালীগ্রাম পরগনা কিছিলেন। এ ছাড়া উড়িষ্যার পাণ্ডুয়া ও বালিয়া তালুক তাঁর ছিল।
সাজাদপুরের জমিদারিটি কিনেছিলেন দ্বারকানাথ ঠাকুর, রানী ভবানীর নাটোরের জমিদারীর নীলাম থেকে। দাম পড়েছিল ১৩ টাকা ১৩ আনা। এর আসল মালিক ছিলেন গিরীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তার অবর্তমানে গগনেন্দ্র সমরেন্দ্র অবনীন্দ্র। কিন্তু গিরীন্দ্রনাথের অকালমৃত্যুর পরে দেবেন্দ্রনাথ, এবং তারও পরে গগন্দ্রেনাথরা নাবালক ছিলেন বলে রবীন্দ্রনাথ এই জমিদারী দেখাশুনা করেছেন ১৯০৩ সাল পর্যন্ত।
দ্বারকানাথের পুত্র দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ধর্মাচরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় ব্যবসাপাতি ও জমিদারী পরিচালনায় অমনোযোগী ছিলেন। তখন আয়ের উৎস দাঁড়িয়েছিল শুধুমাত্র প্রজাপ্রদত্ত খাজনা ও অন্যান্য আদায়। বাড়ির পুরুষরা প্রায় কেউই জমিদারী পরিচালনায় অংশ নেন না, কালে ভদ্রে মহালে যান। সেখান থেকে অর্থ আসে। তাঁরা ছিলেন জমিতে অনুপস্থিত জমিদার। পরিবারের সদস্যদের অনেকে সে সব অঞ্চল চোখে পর্যন্ত দেখেন নি। তাঁরা বিলাসী জীবন আর নানাপ্রকার সাংস্কৃতিক কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকতে ভালবাসতেন। তবে দেবেন্দ্রনাথ মাঝে মাঝে জমিদারী দেখতে গেছেন।
১৮৪৬ সালে দ্বারকানাথের মৃত্যুর পরে তাঁদের হাউসের দেনা এক কোটি টাকা, পাওনা সত্তর লক্ষ টাকা। ৩০ লক্ষ টাকার খবর নাই। ঠাকুর পরিবার গরীব হয়ে গিয়েছিল। সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী লিখেছেন—যাঁহার পিতার ডিনার তিনশত টাকার কমে হইত না, তিনি চারি আনা মূল্যের ডিনার খাইয়া তৃপ্ত হইতেন। সেসময় ১৮৫৫ সালে ঋণের দায়ে দেবেন্দ্রনাথ কারারুদ্ধ হওয়ার পথে। তিনি সংকল্প করলেন দেনা তিনি শোধ করবেন। দেউলিয়া ঘোষিত হবেন না। ছয়মাসের মধ্যেই অবস্থা সামলে ওঠেন। তাঁদের কোনো ব্যবসা বানিজ্য রইল না। শুধু জমিদারীটি টিকে ছিল। তিনি গরীব হওয়ার কারণে বিষয় সম্পত্তিতে মনোযোগী হলেন। শিলাইদহে গিয়ে নিজেই জমিদারী পরিচালনা করা শুরু করলেন। সম্পত্তি এজমালি হওয়ায় সবগুলোই তাঁকে দেখা শুনা করতে হত।
সমীর সেনগুপ্ত লিখছেন—দেবেন্দনাথের চরিত্রের মধ্যে দার্শনিকতা ও বৈষয়িকতার অদ্ভুত পরস্পরবিরোধী সহাবস্থান ছিল। সব কিছু থেকে দূরে থেকেও তিনি তাঁর জমিদারী, আদি ব্রাহ্মসমাজ ও পরিবারকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন।
১৯০৫ সালে দেবেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে জোড়া সাঁকোর ঠাকুর বাড়ির সমস্ত জমিদারী সম্পত্তির মোট খাজনা আসত ৩৬৮,৫০৯ টাকা এবং রাজস্ব ও আদায় খরচ বাদে তা থেকে মোট আয় ছিল ২৩৪,৩১০ টাকা।
১৮৬১ সালের দিকে দেবেন্দ্রনাথ জমিদারির প্রত্যক্ষ কার্যভার ক্রমে ছেড়ে দিলেন, প্রথমে পঞ্চমপুত্র জ্যোতিরিন্দ্রনাথের উপর। তারপর জ্যেষ্ঠ জামাতা সারদাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়ের উপর। রবীন্দ্রনাথ যেদিন বিয়ে করেন সেদিন সারদাপ্রসাদ আকস্মিকভাবে মারা যান। এরপর জমিদারির দায়িত্ব পড়ে রবীন্দ্রনাথের উপর।
এডওয়ার্ড সাহেব নামে জমিদারির এক ম্যানেজার ছিলেন। তিনি শিলাইদহ ছেড়ে যাওয়ার সময় আমলাবাবুদের করমর্দন করে বিদায় অভিবাদন জানিয়ে বলেছিলেন, পোয়েট টেগোরের জমিদারিটা মোটেও তাঁর কবিতার মত নয়। এ বড় বিষম ঠাঁই, এখানে কবিকে খুব ভুগতে হবে।
তিনি প্রথমে এসেই তার কাছারি থেকে হিন্দুদের জন্য আলাদা হুকো—মুসলমানদের আলাদা হুকো এটা বাতিল করে দেন। সবাইকে এক সঙ্গে বসালেন তার কাছারিতে। কখনো তিনি একা, কখনো তিনি সপরিবারে শিলাইদহে, সাহাজাদপুরে থেকেছেন, বোটে করে ঘুরেছেন—পদ্মায়, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। কুষ্টিয়ার গড়ুই নদীটি তখন শুকিয়ে গিয়েছিল। লোকজনের চলাচলের জন্য কুষ্টিয়া থেকে শিলাইদহ পর্যন্ত ৬ মাইল রাস্তা নির্মাণ করেছিলেন। প্রজাদের সঙ্গে মিশতেন সহজ মানুষের মত। বাউল ফকিরদের ডেকে গান শুনতেন। আলোচনা করতেন। লালন ফকিরের গান তিনিই সংগ্রহ করেছিলেন। কাঙাল হরিনাথের বন্ধু গগণ হরকরার কাছ থেকে আমি কোথায় পাব তারে/ আমার মনের মানুষ যে রে –গানটি শুনে লিখলেন আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি গানটি।
তখন ছিল সাহাবাবুদের সুদের ব্যবসা। তার জমিদারীর দরিদ্র প্রজাদের অধিকাংশই ছিল জোলা বা তাঁতী সম্প্রদায়ভুক্ত। তিনি সাহাদের হাত থেকে শেখদের বাজানোর জন্য পতিসরে কৃষি ব্যাংকের পত্তন করেছেন। মহাজনদের কাছ থেকে মাসে ১০ টাকা হার সুদে ঋণ নিত চাষীরা—আর রবীন্দ্রনাথের প্রতিষ্ঠিত কৃষি ব্যাংক থেকে তারা ঋণ নিত বার্ষিক ১২ টাকা সুদে। (আজ ডঃ ইউনুসেরগ্রামীন ব্যাংক কৃষকদের কাছ থেকে বার্ষিক ৩৭ শতাংশ সুদে ঋণ প্রদান করে।) রবীন্দ্রজীবনীকার প্রশান্তকুমার পাল লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথ আত্মীয়-বন্ধুদের এখানে টাকা জমা রাখতে প্ররোচিত করতেন, নিজেও নোবেল প্রাইজের বৃহদংশ নিয়োগ করেছিলেন এই ব্যাংকে। কৃষি ব্যাংকের অর্থ প্রজাকল্যাণ ব্যতীত অন্য কাজে ব্যবহার হোক রবীন্দ্রনাথ আদৌ ইচ্ছা করেন নি।
১৯০৫ সালে খ্রীস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন ও বিলিতি জিনিস বর্জন আন্দোলনের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ প্রতিযোগী দেশীয় শিল্প গড়ে তোলার চিন্তাও করেছিলেন। তারই একটি প্রকাশ হল কুষ্টিয়ায় তাঁতের কারখানা স্থাপন। কুষ্টিয়ায় তাতেঁর কারখানা স্থাপন করেন। দুটি ‘কুষ্টিয়া উইভিং স্কুল’ স্থাপন করে গ্রামের লোকজনদের তাঁতকৌশল শেখানো হত। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—নিম্নমানের সুতো সরবরাহ করা থেকে আরম্ভ করে বহু রকম অসাধুতার সঙ্গে যুদ্ধ করে কয়েক বছরের মধ্যেই উদ্যোগটির অপমৃত্যু ঘটে। ছেলে রথীন্দ্রনাথকে মার্কিন দেশ থেকে কৃষিবিদ্যায় শিক্ষিত করে এনে ১৯০৯ সালে রবীন্দ্রনাথ পুত্রকে সদর শেরেস্তার জমিদারী কাজ বুঝিয়ে দিলেন। বাবার সঙ্গে ছেলে বোটে তখন ঘুরেছেন। রথীন্দ্রনাথ লিখেছেন—মাঝে মাঝে যখন তিনি ( রবীন্দ্রনাথ) নিজে কিছু বলতেন, তাঁর বিষয় হত দেশের প্রজাসাধারণের সামাজিক ও আর্থিক দুরাবস্থা এবং তার প্রতিকার কল্পে তাঁর অভিজ্ঞতালদ্ধ জ্ঞান।…
শিলাই দহে আমার নতন জীবন শুরু হল--আমি যেন ইংলন্ডের-আমেরিকার পল্লী অঞ্চলের একজন সম্পন্ন কৃষাণ। অনেকখানি জায়গা জুড়ে ক্ষেত তৈরি হল, আমেরিকা থেকে আমদান হয়ে এল ভুট্টার বীজ ও গৃহপালিত পশুর জাব খাবার মত নানাবিধ ঘাসের বীজ, নৈনিতালের আলু। এ দেশের উপযগী করে নানারকম লাঙল, ফলা ও কৃষির অন্যান্য যন্ত্রপাতি তৈরি করা হল—এমন কি, মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করার জন্য ছোটোখাটো একটি গবেষণাগার পত্তন হল। পতিসরে ট্রাক্টরও আনা হয়েছেল। বাংলাদেশে ট্রাক্টর এর আগে কেউ আনে নি। রেশম চাষের ব্যবস্থাও করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
রবীন্দ্রনাথ ১৯১১ সালে ১৮ ডিসেম্বর একটি উইল করে প্রায় সমস্ত স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির নির্ব্যূঢ় স্বত্ব দান করেন রথীন্দ্রনাথকে। তিনি উইলের সঙ্গে একটি চিঠিতে পুত্রকে লেখেন—
‘’জমিদারী সম্পত্তির আয় নিজের ভোগে না লাগাইয়া প্রজাদের হিতার্থে যাহাতে নিযুক্ত করেন রথীকে সে সম্বন্ধে বারবার উপদেশ দিয়াছি। তদনুসারে এইরূপ মঙ্গল অনুষ্ঠানে তিনি যদি তাহার পৈত্রিক সম্পত্তি প্রসন্নচিত্তে উৎসর্গ করিতে পারেন তবে আমার বহুকালের একান্ত ইচ্ছা পূর্ণ হয়।…’’।
যে-সমাজে রবীন্দ্রনাথ জন্ম নিয়েছিলেন, ধনী জমিদারদের সেই উনিশ-শতকী সমাজের প্রথাই ছিল জমিদারীতে না যাওয়া, কলকাতার প্রাসাদে শুয়ে বসে, টাকার দরকার হলে (অথবা না হলেও) দরিদ্র প্রজাদের শোষণ করে টাকা সংগ্রহ করা, অলস, উদ্দেশ্যহীন, শিশ্নোপরায়ন জীবন যাপন করে যাওয়া –তাদের নিজেদের পরিবারেই এমন দৃষ্টান্তের অভাব নেই। অথচ রবীন্দ্রনাথ কেমনভাবে জমিদারি চালাতেন তাঁর বর্ণনা আছে আই.সি.এস ও’মালি সাহেবের লেখা গেজেটিয়ারে, যেখানে তিনি ঠাকুর জমিদারির পরিচালনব্যবস্থার সপ্রশংস বর্ণনা দিয়ে তারপর বলেছেন, বেশির ভাগ বাঙালি জমিদার যদি ‘কবি রবীন্দ্রনাথের’ মতো করে জমিদারি চালাতেন, তাহলে বাংলাদেশের চেহারা আমূল বদলে যেতে পারত। কোনো দরকার ছিল না তার সমস্ত সঞ্চিত অর্থ, পত্নীর গহনা, শখ করে তৈরি করা পুরীর বাড়ি, নিজের লাইব্রেরী, এমন কি উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পিতামহের সোনার ঘড়ি, নিজের বইয়ের সত্ব—সব বিক্রি করে গ্রামের মানুষদের জন্য কিছু তার অর্ধেক জীবন অতিবাহিত করা।
জমিদার রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ :
…………………………………………………………………………….
রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগটি এনেছিলেন প্রয়াত প্রফেসর আহমদ শরীফ। তিনি বলেছিলেন—তিনি প্রজাপীড়ক জমিদার ছিলেন। ফরহাদ মজহার মশকরা করে বলেছিলেন—
আমাদের রবিবাবু মস্তবড় কবি, সাহেবেরা
নোবেল প্রাইজ দিয়ে হক তার সাহিত্য কীর্তির
করেছে কদর। ইংরেজের ঘেঁটু হয়ে তার বাপ-দাদা
মালপানি কামিয়েছে, বনেছে স্বঘোষে জমিদার (দৈনিক ইনকিলাব,৬ আগস্ট, ২০০০।
তার তালেবান শিষ্য সাদ কামালী তাদের তালেবানী পত্রিকা অগ্রবীজের প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যায় (ডিসম্বর, ২০০৭) ”রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পে ও গদ্যে মুসলমানের কথা ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’’ প্রবন্ধে আহমদ শরীফের উল্লিখিত প্রবন্ধের অন্তর্ভূক্ত একটি ব্যক্তিগত চিঠি পুরোটা তুলে দিয়েছেন। আহমদ শরীফ লেখক আবুল আহসান চৌধুরীকে একটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ যে প্রজাপীড়ক ছিলেন সে বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে বলেছিলেন। কুষ্টিয়ায় অবস্থান জনাব চৌধুরী সে চিঠির উত্তরে প্রথমেই জানাচ্ছেন—ঠাকুর জমিদারদের প্রজাপীড়নের সংবাদ কাঙাল হরিনাথের গ্রাম বার্তা প্রকাশিকা’র কোন বর্ষে কোন সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল তা আমাদের সঠিক জানা নেই। আমাদের কাছে ‘গ্রামবার্তার যে ফাইল আছে, তাতে এই সংবাদ নেই। কাঙাল হরিনাথ কুমারখালি বাংলা পাঠশালার প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি ১৮৬৩ সালে গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত পত্রিকাটি মাসিক, পাক্ষিক, সাপ্তাহিক ইত্যাদির চেহারায় অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়ে লুপ্ত হয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথের প্রজাপীড়ণের কোন সংবাদ এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নি। কিন্তু ধারণার উপর ভিত্তি করে গুরুকে খুশী করে লেখা চিঠির উত্তর থেকে সাদ কামালী এই যুগে এটা তার প্রবন্ধে ব্যবহার করে বলেছেন—রবীন্দ্রনাথ প্রজাপীড়ক ছিলেন। পরবর্তীতে আবুল আহসান চৌধুরী রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে একাধিক প্রবন্ধ-বই লিখেছেন। তিনি কোথাও দাবী করেন নি যে রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে আনীত প্রজাপীড়নের অভিযোগটি সঠিক।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক গোলাম এবনে সামাদ দৈনিক সংগ্রামে মাঝে মাঝে এ ধরনের কলাম লিখে থাকেন। তিনিও প্রজাপীড়ক জমিদার হিসাবে রবীন্দ্রনাথকে চিহ্ণিত করে থাকেন। এবনে সামাদ একাত্তরে পাক বাহিনীর দোসর ছিলেন। একাত্তরের পরে এই অপরাধে তাঁকে চাকরীচ্যুত করা হয়। জিয়াউর রহমান তাঁকে চাকরী ফিরিয়ে দেয়। সুতরাং এই প্রজাপীড়কের অপপ্রচারকরা কী মাল সেটা জানানোর জন্যই এই সব ছোট খাট তথ্য বলা হল।
মন্তব্য
একটা তথ্য যোগ করি। ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথই প্রথম ব্যাংকিং শুরু করেননি। এর আগে দ্বারকানাথ ঠাকুরসহ আরো ৫জন একাজ করেছেন। দ্বারকানাথ একসময় ব্যাংকিং জগতে খুব প্রভাবশালী ছিলেন। তবে সেই ব্যবসা টেকেনি। ব্যাংকটি দেউলিয়া হয়ে পড়ে। দেউলিয়া হয়ে গেলেও যাদের মূলধন খোয়া যায়নি তাদের মধ্যে ঠাকুর পরিবারের সবাই ছিলো।
ফরহাদ মযহার এন্ড কোং ঠাকুর পরিবারের ইংরেজদের সাথে ব্যবসা বাণিজ্যে গোস্বা এটা বোঝা যায়। মযহার এন্ড কোং জামাতিদের সাথে টাকাপানি লেনদেনে আগ্রহে খামতি দেন না। জানতে ইচ্ছে করে ইংরেজের বদলে উড়ে এসে জুড়ে বসা স্বঘোষিত নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে ব্যবসা বাণিজ্যে তারা কী পার্থক্য নেন। আমার কেন যেন মনে হয় এই গোস্বা পুরোটাই সাম্প্রদায়িক।
________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর জমিদার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।।।
জানলাম আনেক দূর।।।
এবনে সামাদ, ফরহাদ মজহার দৈনিক নয়া দিগন্তের কলম লিখিয়েরা যে কয়েকটা অভিযোগ রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে সর্বদাই করে সেগুলা হচ্ছে
১) রবীন্দ্রনাথ একজন প্রচণ্ড অত্যাচারী প্রজাপীড়ক জমিদার ছিলেন
২) রবীন্দ্রনাথ পূর্ব বঙ্গের লোকদের বিশেষ করে মুসলমানদের মেছুয়া বলে উপহাস করেছেন
৩) তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করে মুসলমানদের অশিক্ষিত করে রাখতে চেয়েছন
উপরে উল্লেখিত কারণগুলির কারণে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত লেখার যোগ্য না আপনার লেখায় এই কয়েকটার অভিযোগের দাঁত ভাঙা জবাব দিয়েছেন, পরবর্তী পর্বে বাকি মিথ্ গুলার নিয়েও আশা করি লিখবেন, নতুন প্রজন্মের অনেকেই এদের প্রচারণা মাধ্যমে প্রভাবিত হয় সঠিক তথ্য না জানার কারণে।
( অনুসন্ধিৎসু)
লেখার চেষ্টা আছে। সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ। আশা করি ৩০টি পর্ব চলবে।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
ফরহাদ মযহারের কোবতে বিষয়ে শিষ্য সলিমুল্লাহ খানের বক্তব্য পড়ুন -
ফরহাদের কবিতা দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং এই মতে আমি পৌঁছেছি আজ থেকে ২৩ বছর আগে এবং ফরহাদ আমাকে হতাশ করেন নি।
________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আমাদের রবিবাবু মস্তবড় কবি, সাহেবেরা
নোবেল প্রাইজ দিয়ে হক তার সাহিত্য কীর্তির
করেছে কদর। ইংরেজের ঘেঁটু হয়ে তার বাপ-দাদা
মালপানি কামিয়েছে, বনেছে স্বঘোষে জমিদার (দৈনিক ইনকিলাব,৬ আগস্ট, ২০০০।
এইটা কবিতা? ( কোবতে?) হাসবো না কাঁদবো?
লাইক দিয়ে শুরু করি। দাদা- লেখায় তথ্যগুলো অধিকাংশই এসেছে বৈষয়িক। আমি যেমন জানি এই জমিদারী নিয়ে ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ সুখী ছিলেন কিছুতেই। তাঁর মেয়ের বিয়েতে যৌতুক দিতে পারেন নি। এরপর এ কারণে শশুর বাড়িতে মেয়ের লাঞ্চনা...মেয়ের মৃত্যু..."আজ জোছনারাতে সবাই গেছে বনে" গান লেখা...রবীন্দরনাথ এর লেখার ইতিহাসের সাথে সাথেও পাওয়া যায় তাঁর জমিদারীর দুর্দশা'র কথা। আমার স্মৃতিশক্তি দুর্বল আর বই পত্তর সব দেশে। আমি অসহায়...যারা সহায় আছেন তাঁরা আলোচনা দিয়ে এই লেখাটাকে আরো পূর্ণ করে তুলবেন এই প্রত্যাশা রইলো।
কাজী মামুন
কত অজানারে! লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ!
রোমেল চৌধুরী
১) ১৯০৫ সালে খ্রীস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন ও বিলিতি জিনিস বর্জন আন্দোলনের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ প্রতিযোগী দেশীয় শিল্প গড়ে তোলার চিন্তাও করেছিলেন। তারই একটি প্রকাশ হল কুষ্টিয়ায় তাঁতের কারখানা স্থাপন।
২) রামলোচন ঠাকুর উইলে শর্ত দেন যে, দ্বারকানাথ বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সম্পত্তির রক্ষণাবক্ষেণ করবেন রামলোচনের স্ত্রী অলকাদেবী এবং দ্বারকানাথের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রাধানাথ। মূল পোস্টে অনবধানবশত অলকাদেবীকে দ্বারকানাথের স্ত্রী লেখা হয়েছিল--এটা প্রিন্টিং মিস্টেক। অলকা দেবী রামলোচনের স্ত্রী। তিনি বিষয়বুদ্ধি সম্পন্না ছিলেন।
৩) গ্রামবার্তা পত্রিকা ১৯৬৩--১৯৬৫ সাল পযর্ন্ত গ্রামবার্তা প্রকাশিত হয়েছিল। সুতরাং সে সময়ে ঐ পত্রিকায় তৎকালীন জমিদার দেবেন্দ্রনাথের প্রজাপীড়নের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার সুযোগ থাকে। রবীন্দ্রনাথের নয়। সুতরাং কিন্তু দেবেন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তার পুত্র রবীন্দ্রনাথের উপর চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কাঙাল হরিনাথের কোন বিসম্বাদ জানা যায় না। তবে হরিনাথ জমিদারদের উপর সন্তুষ্ট ছিলেন না। কিন্তু কাঙাল হরিনাথের সখা গগণহরকরাকে তিনি হরিনাথের মাধ্যমেই ডেকে আনিয়েছিলেন কাছারিবাড়িতে। তার গান শুনেছিলেন। ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের উপর হরিনাথের উপর কোন ক্ষোভ ছিল বলে জানা যায় না।
ঠাকুর-জমিদারদের প্রজা-পীড়নের বিষয়ে আবুল আহসান চৌধুরী রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহ জীবনের নিপুণ ভাষ্যকার শ্রী শচীন্দ্রনাথ অধিকারীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি এ অভিযোগকে সমর্থন করেন নি বলে জনাব চৌধুরীর পত্রে উল্লেখ করা আছে।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
ভাল একটা সিরিজ হচ্ছে।
অনন্ত
রবীন্দ্রনাথ প্রজাপীড়ক জমিদার ছিলেন এটা বিশ্বাস করা কঠিন। অনেক কিছু জানলাম। লেখককে অনেক ধন্যবাদ।
সত্যান্বেষী
পড়ছি
চলুক
ফাডাফাডি একটা সিরিজ, চলুক চলুক
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
পড়তেসি। সিরিজ চলতে থাকুক।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আপনার এই তথ্যবহুল লেখা পড়ছি। বিন্দুগুলোকে জোড়া দিলে ছবিটা এরকম দেখাতে পারে, বিশ্বকবি তার আমলে গুডবয় জমিদারী হয়ে প্রজা মঙ্গল কাজ করে গেছে শুধুমাত্র যাতে আমি আর আপনি আজকের জমানায় ছাগু-বরাহ-ফরহাদ ও তার গুষ্টিকে ভুল প্রমান করতে পারি। রবীন্দ্রনাথকে কেন যেন এধরনের ভাঙাকুলো বানাতে মনে সায় দেয়না। ছাগলে পাতা খায়, খাক। রবীন্দ্রনাথের তাতে কি আসে যায়? তারপরেও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথকে মহামানব ভাবতে চাইনা। মহামানবেরা অনেকেই ভন্ড। রবীন্দ্রনাথকে আমার ভন্ড মনে হয় না। ছাগলগুলো গলা ফাটিয়ে চেঁচালেও না।
--
আপনি কিন্তু ফরহাদ মাজহারকে নিয়ে আমাদের কৌতূহল উস্কে দিয়েই চলেছেন। লোকটা ভাল না, তাকে আমাদের সবার বিস্তারিত ধারনা নিয়েই চিনে রাখা উচিত। যেহেতু আপনার কয়েকটি লেখাতে ফরহাদের প্রসঙ্গ ফিরে ফিরে আসছে, তাই বলছি। ঝোপঝাড় না পিটিয়ে ফরহাদকে নিয়ে সরাসরি একটা লেখা দিন না কেন। আমরা এই ছাগলটির সম্বন্ধে কিছু অজানা তথ্য পেয়ে উপকৃত হই।
রচনাটি তথ্যসমৃদ্ধ ও সুখপাঠ্য। রবীন্দ্রনাথের সমস্ত মুডের সমস্ত ঘরানার লেখা পড়ে কোনওভাবেই কেউ রবীন্দ্রনাথকে 'প্রজাপীড়ক' বলতে পারবে না। বদনাম করার জন্যও যোগ্যতার দরকার হয়। এদের তাও নেই। এসব নিয়ে মাথা না ঘামানোই ভালো।
ত্রৈলোক্যনাথের(ডমরু-চরিতের লেখক) আত্মজীবনীতে দেবেন্দ্রনাথের আমলে জমিদারী এলাকায় প্রজাপীড়ন নিয়ে উল্লেখ আছে যা তার বরাতে অনেকেই উল্লেখ করেছেন। অবশ্য এই আত্মজীবনী বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে সংগত কারণেই। প্রথম আলোর সাহিত্য পাতায় এ নিয়ে বিস্তারিত আর্টিকেল ছিলো একটি।
আর তার কিছুটা উল্লেখ এই পোস্টেও হয়তো পাওয়া যেতে পারে, যেমন-
তা জমিদারবাবুদের কাছে যারা 'দুর্বৃত্ত' তারা আবার আমাদের কাছে মাথাগরম বিদ্রোহী ভাইবেরাদর 'বাঙাল' কীনা! তা তাদের 'সুশীল' কীভাবে বানানো হলো?
হুম্ম এভাবে-
হা হা। জমিদারী পরিচালনায় 'পরামর্শক' ফার্গুসন সাহেব! আমি তো জানতাম ইহা বংশপরস্পরায় নায়েবদের উপরেই থাকে। আর ট্যাক্স আদায়ের জন্য নায়েবরা লাঠিয়ালদের সাহায্যে যমুনা আর পদ্মার চরে যে কি মিষ্টি ব্যবহার করতেন তাও আমরা জানি। অবশ্য জমিদারবাবুরা এতে দুষ্ট হন না; তারা তো আর নিজেরা হাত ময়লা করছেন না!
পুববাংলার ইতিহাস শুধু ঐ কোলকাতার বাবুসমাজের চোখে না দেখে শাহজাদপুর-শিলাইদহের মানুষদের চোখে দেখলে কেমন হয়? এখনো অনেক বয়োবৃদ্ধ বেঁচে আছেন, উত্তরাধিকারসূত্রে জমিদারী আমলের সেসব সুখ(!)স্মৃতি তারা নিশ্চয়ই মনের মণিকোঠায় ধরে রেখেছেন!
পুববাংলার জনপদে কোলকাতার জমিদার বাবুরা(তা, তারমধ্যে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও থাকুন না কেন) ন্যায়, শান্তি আর সুখের রামরাজত্ব কিংবা উমরের শাসন বইয়ে দিয়েছিলেন শুনলে ঢাকাইয়া কুট্টির ঘোড়া ভী হাসবো। বাঙাল বড্ড গোঁয়ার আর চিরবিদ্রোহী জাত। তাদের পোষ মানিয়ে খাজনা আদায় করানোটা এত কুসুমকোমল জাতীয় কিছু ছিলোনা। জমিদারী আমলের ইতিহাস বড্ড রক্তাক্ত আর অমানবিক ইতিহাস যার দায় এমনকি জমিদারবাবুরাও এড়াতে পারেন না। অবশ্য তা জানতে-বুঝতে চাইলে আপনাকে একটু কষ্ট করে গণমানুষের কথা শুনতে হবে। এসব আবার ঐতিহাসিকরা জানাতে 'নজ্জা' পান তো, তাই।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন মহান লেখক। মহাপুরুষ নন। তাকে ধোয়া তুলসীপাতা বানানোর যেমন দরকার নাই ঠিক তেমনি নৃশংস জমিদার বানানোরও প্রয়োজন নাই। আর সেজন্য ইতিহাস চেপে যাওয়ারও দরকার নাই।
ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন