আরিফকে কখনো দেখি নি। দেখার কি দরকার আছে?
২৩ বছরের এই তরুণ কার্টুন এঁকে জেল খেটেছে বছর খানেক। মামলাগুলো দিব্যি আছে মাথার উপরে। মাঝে মাঝে দেশের আনাচে কানাচে তাঁকে ছুটে যেতে হয়। কোর্টে দাঁড়িয়ে হাজিরা দিতে হয়। শুনতে হয় বিরোধী পক্ষের উকিলের সব নির্মম অভিযোগ। আর জীবন বিপন্ন করা হুমকী। এসব শুনে গা হিম হয়ে আসে।
সিরাজগঞ্জের ছেলে। যখন মাত্র বার বছর বয়স তখন তার বাবা তাদের ছেড়ে চলে যান। ওর মা এরপর এই সংসারের হাল ধরেছেন।এ সময় আরিফ ছবি আঁকার চেষ্টা করেছে। মুদির দোকানে কাজ করেছে। সুদূর মফস্বল থেকে কার্টুন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কৃত হয়েছে। এরকম পুরস্কারপ্রাপ্তির ঘটনা অনেক আছে। আরিফের বিষয়টি একটি ভিন্ন।
দৈনিক প্রথম আলো আরিফের বেশ কিছু কার্টুন ছেপেছে। তারা আরিফকে ডেকে প্রদায়কের চাকরীও দিয়েছে প্রথম আলোর ফান পত্রিকা আলপিনে। শর্ত দিয়েছে—আলপিন ছাড়া আরিফ আর কোথাও কার্টুন প্রকাশ করতে পারবে না।
সেবার রোজার মধ্যে একটি কাটুন আঁকল আরিফ। এক বৃদ্ধ লোক এক বাচ্চাকে তার নাম জিজ্ঞেস করছে। ছেলেটি নাম বলার পর লোকটি তাকে বকলো নামের আগে কেনো মোহাম্মদ (দঃ) লাগায়নি সে। এরপর তাকে তার কোলের বিড়ালটির কথা জিজ্ঞেস করলে ছেলেটি এবার বিড়ালের আগে মোহাম্মদ বসিয়ে উত্তর দিলো।
এ বিষয়টি নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর অংশ সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের কিশোর কণ্ঠ পত্রিকায় কোনো এক শিবির কার্টুন এবং চুটকি ছেপেছিল। কেউ হৈ চৈ করে নি।
আরিফের কার্টুনটি প্রথম আলোর সম্পাদক প্রকাশ করলেন। প্রকাশের পরপরই দেশের মৌলবাদি গ্রুপ আরিফের বিরুদ্ধে ধর্মকে অবমাননা করার অভিযোগ আনল। দেশে মিটিং মিছিল হল তার বিরুদ্ধে। যশোরে এক ইমাম আরিফের বিরুদ্ধে কেস ঠুকে দিল। আর দৈনিক প্রথম আলো মাফ চেয়ে পরদিন সম্পাদকীয় প্রকাশ করল। আলপিনে আরিফকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। ম্যাগসাসে পুরস্কারপ্রাপ্ত সম্পদক মতিউর রহমান ইত্তেফাকের মালিক ব্যারিস্টার মইনুল ইসলামের সঙ্গে গিয়ে ধর্মীয় নেতাদের কাছে মাফ চেয়ে নিজের আর তাঁর সহযোগী মাহফুজ আনামের নাম কাটিয়ে দিয়ে এলেন। আর কায়দা করে আরিফকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিলেন। তাকে প্রথম আলো থেকে তাড়িয়ে দেয়া হল। ছেলেটি তাদের বিপদে ফেলেছে। এবার ছেলেটিকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া ছাড়া কিছু করার নেই। আপনি বাঁচলে বাপের নাম।
তাকে নির্যাতন করেছে পুলিশ, সিআইডি। আরিফ জানাচ্ছেন--জেলে নেয়ার পর আমাকে আমদানী ওয়ার্ডে রাখা হলো। মুখে মুখে খবর রটে গিয়েছিলো যে আমি এসেছি। ওখানে কয়েদিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে ডাকার একটা ব্যবস্থা আছে। এমনি এক মিথ্যে ঘোষনা দিয়ে আমাকে চেনানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর একদল লোক আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। লাথি-চড়-কিল-ঘুষি চলতেই থাকে। এরপর একজন বাঁশ দিয়ে পেটালো আমাকে। ঘণ্টাখানেক পর তারা আবার এলো। একজন পায়খানা থেকে কাঠি দিয়ে গু তুলে আমার মুখে ঘষে দিলো। আমি তখন রোজা। কষ্ট সহ্য করে মুখ ধুয়ে এলাম।
বছর খানেক জেল খেটেছেন। তারপর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কোর্টে হাজিরা দিতে দিতে জান শেষ। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে তাকে সর্বশান্ত হতে হয়েছে। তাঁর অসহায়া মা বনপোড়া হরিনীর মতো ছুটতে ছুটতে এখন অসুস্থ। এক জনমে আর কত সহ্য করা যায়। তার দুটো কিডনিই অচল।
সপ্তাহে ২বার ডায়ালাইসিস চলছে। ১৬ লাখ টাকার প্রয়োজন কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য। আরিফ নিজের কিডনিটি দেবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু তাদের টাকা নেই।
প্রথম আলোর কারণে আরিফের এই দশা। তারা অর্থ উত্তোলনের কোনো উদ্যোগ নেয় নি এবং নেবে বলে মনে হয় না। সরকার প্রচারণা ছাড়া পয়সা ছাড়তে রাজী নয়। কিন্তু আরিফকে তারা অর্থ দেবে কেন? আরিফ কি তাদের দলের লোক? আর আরিফকে অর্থ দিলে তো মৌলবাদিরা হৈ চৈ করতে পারে। সরকার হৈ চৈ করার ইস্যু তৈরি করে দিতে পারে না। সুতরাং আরিফের জন্য সরকারী দরোজা বন্ধ। তার চেয়ে আমাদের নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা আর কাজীর গরু খাতায় আছে গোয়ালে নেই কবি মুহাম্মদ সামাদসহ শতাধিক গুণধরকে নিয়ে আমেরিকাভ্রমণে টাকার শ্রাদ্ধ করা অনেক উপাদেয়। বিএনপি? হা হা হা। ছবি আঁকা কবিরা গুনাহ।
সুশীল সমাজ কী করছেন? বিএনপির সুশলিরা মহাদূর্নীতিবাজ তারেক রহমানের ইমেজ মেরামত করতে বিজি। আর আওয়ামী সুশীলরা আরও বিজি কি করিলে কি হয় নামে বই লিখতে। এই সব সুশীলদের মুখ ঢাকতে গেলে পাছা বেরিয়ে পড়ে। সুতরাং আরিফ, আপনার অবস্থা কেরাসিন। কেন বাবা, খামোখা কার্টুন আঁকার দরকার কী ছিল ভাই আপনার?
যিনি আপনাকে চাকরী দিয়েছিলেন—সেই সুমন্ত আসলাম আপনার ফোনও রিসিভ করেন নি। তিনি ইত্তেফাকে বড় চাকরী পেয়েছেন। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান নয়তলা বাড়ি হাঁকিয়েছেন। আনিসুল ভাই মুসা ইব্রাহিমের জন্য কোটি টাকা কালেকশনের দায়িত্বে। মুসার জন্য মিছিমিছি এভারেস্ট কিনতে এই টাকা ব্যয় হয়েছে।
তাহলে আরিফ, আপনার জন্য? লবঢঙ্কা।
আপনার জন্য কানাডা থেকে শিল্পী সুজন চৌধুরী জানিয়েছেন—আমার টাকা নাই। কিন্তু আমি কেরিকেচার আঁকতে চাই। সেই কেরিচার থেকে উপার্জিত টাকা আরিফকে পাঠাতে হবে। মন্ট্রিয়েল থেকে শিল্পী রাকিব হাসানের স্টুডিও উঠোন চিত্রশালার পক্ষ থেকে টাকা তোলার চেষ্টা নেওয়া হয়েছে। এমএমআর জালাল ভাই ডালাস থেকে জানিয়েছেন—তিনি বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ৯ অক্টোবর তারা বসবেন একটি রেস্তোরায়। কবি তুষার গায়েন টাকা পাঠিয়ে মেইল করেছেন—টাকা পাঠিয়েছি। মাহমুদুল হাসান রুবেল নামে একজন ব্লগার ছুটোছুটি করছেন ঢাকায়—সিলেটে। সিলেটের জামিলা হাসান বলছেন—তিনি একটি লেখা লিখবেন। তাঁর ধারণা লেখাটি পড়ে কেউ না কেউ অর্থ সাহায্য দিতে এগিয়ে আসবেন। কোলকাতা থেকে কবি জয়তী ব্যানার্জী লিখেছেন—গেল বছর তার নিজের মা কিডনি রোগে মারা গেছেন। তিনি আরিফের মায়ের পাশে থাকবেন। আমার বন্ধু ডোবার ব্যাঙ বলেছেন—তিনি সঙ্গে আছেন। কাজী মামুন কোরিয়া থেকে নেটে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। ৯ তারিখ মৌসুমী কাদেরের একটি অনুষ্ঠান ভুবনগ্রামে যাব টরেন্টোতে। তারপরই তিনি বন্ধুদের সঙ্গে বসবেন। হাসান মোর্শেদ জানিয়েছেন—তিনি আছেন। এ রকম সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। সাড়া যে খুব বড় তা নয়। তবু পাওয়া যাচ্ছে। যাবে। আরও অনেককে বলতে হবে। ব্লগে লিখতে হবে। ফোন করতে হবে। মেইল করতে হবে। পত্রিকায় লিখতে হবে। বলতে হবে—ভাই আরিফের মাকে সুস্থ করার জন্য সাড়া দিন।
দরকার ব্লগগুলোর একটি পদক্ষেপ নেওয়া। মুক্তমনা নিয়েছে। সচলায়তন, আমার ব্লগ, সামু ব্লগসহ অন্য কোনো ব্লগে সে রকম কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। আরিফের অসুস্থ মাকে সুস্থ করার দায় তো একা আরিফের নয়—আমাদেরও। কারণ আমরাই তাকে অসুস্থ করেছি। আমাদের নষ্ট রাজনীতি, ব্যক্তিস্বার্থ আর প্রতিক্রিয়াশীলতার দীর্ঘ ছায়া আরিফকে মাত্র তেইশ বছরের জীবনে মায়ের জন্য দিশেহারা করে দিয়েছে।
চুপ করে থাকার সময় নেই। সাড়া দিন।
ফেসবুকে আরও বিস্তারিত পড়তে লিংকে ক্লিক করুন--
http://www.facebook.com/notes/kulada-roy/satya-januna-teisa-bacharera-yubaka-kartunista-ariphera-jibanera-sei-pherari-sam/10150287457655338
কার্টুনিস্ট আরিফের মায়ের জন্য অর্থ পাঠানোর জন্য পেপলের লিংক-
মন্তব্য
আরিফের পেপল লিংক
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
পে পাল লিঙ্কটা ঠিক করে দেয়ার চেষ্টা করছি- এটা দেখুন কাজ করছে
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
কাজী মামুন,
আমিও তাসনীম ভাইয়ের মতন একই এরর পাচ্ছি
এই পোস্টের পাশে হক সাহেবের সাক্ষাৎকার শুনে হাসি লাগল। ব্লগে লেখার দায়িত্ব শুধু একজনের তাই ব্লগকে পাত্তা দেবার কিছু নাই। পত্রিকায় প্রকাশিত কনটেন্টের দায় নেন সম্পাদক। অ্যাঁ! তাহলে আরিফের দায় কে নিবে?
ব্যক্তিগত কারনে একটু সংকটে থাকলেও আরিফকে সাহায্য করার ইচ্ছে রইল।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আবার লিখলেন বলে ধন্যবাদ দাদা। কর্তৃপক্ষ নজর দিবেন আশা করি। আরিফ কে সাহায্য'র জন্য এই পেপাল লিঙ্কটি ব্যবহার করতে পারেন
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
এই উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ। পেপ্যাল লিংকটা Fatal Failure দেখাচ্ছে। এটা ঠিক করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
সবাইকে অনুরোধ এই ব্লগটা ছড়িয়ে দিন চারিদিকে।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আপনাদের পেপাল লিনক টি কাজ কোরছেনা ।
নিচের লিনকটি দেখুন
https://www.paypal.com/cgi-bin/webscr?cmd=_s-xclick&hosted_button_id=GV8BSGH3GDHG4
আজিজুল হক
nwshd@yahoo.com
কুলদা,
আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করবো।
পাশে থাকবো আপনাদের যে কোনো ব্যাপারে।
ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন।
__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!
__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!
i support him and i will try my best to help him. Above all i like free minded people and i inspired him from the innermost core of my heart.
চীন, জাপান, এবং কোরিয়াতে যারা আছেন তারা অল্প খরচে সাহায্য পাঠাতে পারেন আমার একাউন্টে। আমি এখানে জমা করে একসাথে আরিফের একাউন্টে পাঠিয়ে দেব।
আমার একাউন্ট এর তথ্যঃ
Account Name: Kazi Abdullah
Account Number: 080 13 286 203
Bank: Daegu Bank, Korea
আমার একাউন্টে ১০০,০০০ কোরিয়ান ওন জমা হয়েছে। সিউল থেকে জাকির পাঠিয়েছেন। ধন্যবাদ জাকির কে এবং আরো যারা বিভিন্ন ভাবে এ কাজে এগিয়ে এসেছেন সবাইকে।
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
নতুন মন্তব্য করুন