অন্য আলোয় দেখা– পর্ব পাঁচ :: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং রবীন্দ্রনাথ

কুলদা রায় এর ছবি
লিখেছেন কুলদা রায় [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ২২/১০/২০১০ - ১১:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

autoবঙ্গভঙ্গ রদ হলে পূর্ববাংলার মুসলমানরা ইংরেজ সরকার চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলে মনে করেছিলেন। তবে স্যার সলিমুল্লাহ এবং বিশিষ্ট অভিজাত নেতারা এই পরিবর্তনকে the mandate of the Emperor হিসাবে গণ্য করেছিলেন। ১৯১২ সালে জানুয়ারিতে একটি মুসলিম ডেপুটেশন তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের সঙ্গে দেখা করেন। ঐ ডেপুটেশন দেওয়ার ফলে পূর্ব বাঙলার মুসলমানদের স্বার্থ বিশেষভাবে লক্ষ রাখার জন্য প্রতিবছর ঢাকায় প্রাদেশিক গভর্নরের ক্যাম্প বসার আশ্বাস পাওয়া যায়। পূর্ব বাংলার মুসলমানদের শিক্ষাব্যবস্থায় অধোগতি যাতে না হয়, তার জন্য ঢাকায় আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনেরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্ব বাংলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত উদীয়মান মুসলমানদের মধ্যে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করে। চব্বিশ পরগণার জেলা মহামেডান এসোসিয়েশন ১৯১২-র ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যায় স্থাপনের বিরোধিতা করে। বলা হয় এর ফলে সমগ্র প্রদেশের মুসলমানদের শিক্ষাগত স্বার্থে পক্ষপাতদুষ্ট প্রভাব পড়বে এবং তাদের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি করবে। (সূত্র : দি মুসলিম পত্রিকা)।

মৌলানা আকরাম খান আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ করলে সাধারণ মুসলমানদের শিক্ষা সংক্রান্ত বিশেষ সুযোগ-সবিধা দানের ক্ষেত্রে অর্থের ব্যবস্থা করবেন না। মুসলমানদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা অপেক্ষা প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর তিনি গুরুত্ত্ব আরোপ করেন। আবদুর রসুল আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় মুসলমানদের পক্ষে ‘বিলাসিতা’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। তার মতে কয়েকজন ভাগ্যবানের জন্য অর্থ ব্যয় না করে বেশিরভাগ মানুষের জন্য তা ব্যয় করা উচিৎ। দি মুসলমানের মতে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যারয় হবে একটি অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান, ফলে বাংলার মুসলমানের বিশেষ কিছু লাভ হবে না। বরং গরীব অথবা যোগ্য মুসলমান ছাত্রদের বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা এবং দু-একটি প্রথম শ্রেণীর কলেজ স্থাপন ইত্যাদি করলে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তার সম্ভব হবে।

কিন্তু ইস্টার্ন বেঙ্গল এন্ড আসাম মুসলিম লিগ সর্বসম্মতিক্রমে ঐ প্রস্তাবকে স্বাগত জানায়। তাঁরা আশা করেন ঐ কেন্দ্রীয় প্রস্তাব কার্যকরী হলে পূর্ববাংলায় শিক্ষাবিস্তারে নতুন বেগের সঞ্চার হবে। ঐ বছরেই সলিমুল্লাহ সরকারের নিকট বাংলার পূর্বাংশের মুসলমানদের জন্য পৃথক তহবিল সৃষ্টির একটি নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কিন্তু দি মুসলিম পত্রিকায় ঐ দাবী সমর্থিত হয় নি। বলা হয়েছিল ঐ দাবী ‘শিক্ষাগত বিভাগ’ সৃষ্টি করে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার মধ্যে বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি করবে। ঐ প্রস্তাবের পরিবর্তে সমগ্র বাংলা প্রেসিডেন্সিতে মুসলিম শিক্ষা বিস্তারে উদ্রোগ গ্রহণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য এক ‘স্পেশাল মহামেডান এডুকেশন অফিসার’ নিয়োগের দাবী করা হয়।

এ সময়েই বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মুসলমান ছাত্ররা তাঁদের শিক্ষা সংক্রান্ত নানা সমস্যা সমাধানের দাবীতে আন্দোলনের পথে অগ্রসর হয়েছিলেন। ১৯১৪ সালের এক পরিসংখ্যানে জানা যায় প্রতি ১০,০০০ মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে মাত্র একজন স্কুলস্তর অতিক্রম করে কলেজস্তরে উন্নীত হত। দি মুসলিম পত্রিকায় মুসলমান ছাত্রদের শিক্ষাবিস্তারের সাহায্যার্থে তাদের আনুপাতিক সরকারি অনুদান দারী করা হলে মুসলমান ছাত্র আন্দোলন এক নতুন মাত্রা লাভ করে।

১৯১৩ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। ঐ প্রতিবেদনে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাদানের ব্যবস্থা কথা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত শিক্ষার পরিকল্পনাও পেশ করা হয়েছিল। তাছাড়া উচ্চবিত্ত মুসলমানদের জন্য ঢাকায় একটি কলেজ স্থাপনের প্রস্তাবও করা হয়। দি মুসলিম পত্রিকায় উচ্চবিত্তদের জন্য কলেজ স্থাপনের প্রস্তাবটির বিরোধিতা করা হয়। উচ্চবিত্ত শ্রেণীর লোকেরা তাদের সন্তানদের শিক্ষাদানের কোনোই অসুবিধা ভোগ করেন না বলেও যুক্তি দেখানো হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯১৭ সালে বরিশালে অনুষ্ঠিত বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি মহামেডান এডুকেশন কনফারেন্সে ঢাকা উইনিভার্সিটি সংক্রান্ত মতবেদের অবসান হলেও ১৯২১ সালের ১ লা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়।

১৯১২ সনের মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যারিস্টার রবার্ট নাথানের নেতৃত্বে নাথান কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির ২৫ টি সাবকমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ভারত সরকার প্রস্তাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রুপরেখা স্থির করে। ভারত সচিব ১৯১৩ সালে নাথান কমিটির রিপোর্ট অনুমোদন দেন। কিন্তু, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পথে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে ইমপেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সরকারের কাছে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পেশের আহ্ববান জানান। ১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর লর্ড চেমস্jফোর্ড কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাসমূহ তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। সেই কমিশনের উপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে পরামর্শ দেবার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এই কমিশনের প্রধান ছিলেন মাইকেল স্যাডলার।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন (স্যাডলার কমিশন) ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। কিন্তু, এ কমিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারি বা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় করার নাথান কমিটির প্রস্তাব সমর্থন করেনি। কিন্তু, ঢাকা কলেজের আইন বিভাগের সহঅধ্যক্ষ ড. নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত পূর্ণ স্বায়ত্বশাসনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল শক্তিরূপে অভিহিত করেন। একই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানও অর্থনীতির অধ্যাপক টি সি উইলিয়ামস অর্থনৈতিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ন স্বাধীনতা দাবি করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ঢাকা শহরের কলেজ গুলোর পরিবর্তে বিভিন্ন আবাসিক হলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিটরুপে গন্য করার সুপারিশ করে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল হাউসের পাঁচ মাইল ব্যাসার্ধ এলাকাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অওতাভুক্ত এলাকায় গন্য করার কথাও বলা হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয প্রতিষ্টার ব্যাপারে তেরটি সুপারিশ করেছিল, এবং কিছু রদবদলসহ তা ১৯২০সালের ভারতীয় আইন সভায় গৃহীত হয়। ভারতের তদানীন্তন গভর্ণর জেনারেল ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ তাতে সম্মতি প্রদান করেন।স্যাডলার কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক রেজিস্টার পি. জে. হার্টগ। তিনি ১৯২০ সালের ১ ডিসেম্বরঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক ভাবের কার্যক্রম শুরু করে।

ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ তার ঢাকা সফর শেষে কলকাতা প্রত্যাবর্তন করলে ১৯১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ড. রাশবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল তার সাথে সাক্ষৎ এবং ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতামূলক একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বিরোধী ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী। ভারতের গভর্ণর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কি মূল্যে অর্থাৎ কিসের বিনিময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধীতা থেকে বিরত থাকবেন? শেষ পর্যন্ত স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চারটি নতুন অধ্যাপক পদ সৃষ্টির বিনিময়ে তার বিরোধীতার অবসান করেছিলেন। ড. রমেশ চন্দ্র মজুমদার তার আত্মস্মৃতিতে লিখেছিলেন ১৯১৯ সালের নতুন আইন অনুসারে বাংলার শিক্ষামন্ত্রী প্রভাসচন্দ্র মিত্র শিক্ষকদের বেতন কমানোর নির্দেশ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয প্রতিষ্ঠার সময় রিজর্ভ ফান্ডে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা ছিল। বাংলা সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদত্ত সরকারী ভবন বাবদ সেগুলো কেটে নেয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রতিবছর মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। ফলে শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দিতেহয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় পূর্ব বঙ্গের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও শিক্ষাবিদ নানাপ্রকার প্রতিকুলতা অতিক্রম করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য ঢাকার নবাব নবাব স্যার সলিমুল্লাহ। কিন্তু, হঠাৎ করে ১৯১৫ সালে নবাব সলিমুল্লাহের মৃত্যু ঘটলে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী শক্ত হাতে এই উদ্দ্যেগের হাল ধরেন। অন্যান্যদের মধ্যে আবুল কাশেম ফজলুল হক উল্লেখযোগ্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু মুসলিম ছাত্রদের জন্য স্থাপিত প্রথম হল “সলিমুল্লাহ মুসলিম হল”। এ হলের প্রথম প্রোভস্ট নিযুক্ত হন ইতিহাস বিভাগের রিডার স্যার এ এফ রাহমান। ১৯২৯ সালের ২২ আগস্ট বাংলার গভর্ণর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর স্যার স্ট্যানলিজ্যাকসন ঢাকার প্রয়াত নবাব বাহাদুর স্যার সলিমুল্লাহ্ এর নামানুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের’ এর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনকরেন। ১৯৩১-৩২ শিক্ষাবর্ষে এর ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়।

জগন্নাথ হলের নামকরণ হয় ঢাকার বলিয়াদির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর দানে তার পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে। জগন্নাথরায় চৌধুরীর নামেই ঢাকার জগন্নাথ কলেজের নামকরণ করা হয়েছিল। জগন্নাথ হলের প্রথম প্রভোস্ট ছিলের আইন বিভাগের প্রথম অধ্যাপক নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত। অধ্যাপক নরেশচন্দ্র সেনগুপ্তের উৎসাহে জগন্নাথ হলের প্রথম বার্ষিক সাহিত্যপত্র ‘বাসনতিকা’ ১৯২৩ সালের প্রথমে প্রকাশিত হয়। নরেশচন্দ্র সেনগুপ্তের পর প্রভোস্ট হন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার।

২০০০ সনে আহমদ পাবলিশিং হাউস থেকে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতা এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা’ নামে একটি বইয়ে মেজর জেনারেল (অব.) এম এ মতিন, বীরপ্রতীক, পিএসসি (তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা) একটি তথ্য জানান যে, ”১৯১২ সালের ২৮শে মার্চ কলিকাতা গড়ের মাঠে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে এক বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়।” তিনি অভিযোগ করেন যে, রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। এ জেড এম আব্দুল আলী দৈনিক সমকালে লেখেন--শোনা যায়, এই তথ্যটি (লেখক আব্দুল মতিন কর্তৃক উত্থাপিত রবীন্দ্রনাথের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করা) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কোন বইতে আছে। তিনি অনুসন্ধান করে জানান – রবীন্দ্রনাথ ঐ মিটিংএ উপস্থিত থেকে এবং মিটিংএ সভাপতিত্ব করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছেন বলে একজন লেখক উল্লেখ করেন। লেখকটি এই তথ্যটি কোথায় পেয়েছিলেন তার কোনো সূত্র ব্ইটিতে উল্লেখ করেন নাই। আব্দুল আলী জানান, বইটি ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত হয়। এবং রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে এই বানানো গপ্পটি ব্যবহার করা হয়। ঐ তারিখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোলকাতায়ই উপস্থিত ছিলেন না এবং তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতা করেন নাই।

রবীন্দ্রনাথ যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারই বিরোধিতা করবেন—রবীন্দ্রনাথকেই এই বিশ্ববিদ্যলয় প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছর পরে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনেই তিনি বিপুলভাবে সংবর্ধিত হন কিভাবে?

১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা আসেন এবং কার্জন হলে ১০ ফেব্রুয়ারি দি মিনিং অফ আর্ট এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি দি বিগ এ্যান্ড দি কমপ্লেক্স বিষয়ে বক্তৃতা প্রদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম তিনটি হল থেকে রবীন্দ্রনাথকে সংবর্ধণা জানানোর আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে রবীন্দ্রনাথ কেবন মুসলিম হলের সংবর্ধণা সভায় যোগদান করতে পেরেছিলেন।

বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ কর্জন হলে রবীন্দ্রনাথকে সংবর্ধনা দেয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জি. এইচ. ল্যাংলি। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার সংবর্ধনা পত্র পাঠ করেন।
মুসলিম হল ছাত্র ইউনিয়ন কবিকে সংবর্ধনা জানায়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আবুল হুসেনের লেখা মানপত্র পাঠ করেন ছাত্র সংসদের তৎকালীন সহসভাপতি সুলতান উদ্দিন আহমদ।

মুসলিম হলে সংবর্ধনা সম্পর্কে আবুল ফজলের স্মৃতিচারণ-
‘কবি যখন ঢুকলেন......... হল ঘরের প্রবেশ পথ থেকেই কবির উপর শুরু হয়েছে পুষ্পবৃষ্টি।’
সংবর্ধনার জবাবে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন-
‘প্রাচীনকালে আমাদের দেশে রাজারা দিগি¦জয় করে ফিরলে তাঁদের উপর পুষ্পবৃষ্টি অর্পণ করা হতো, আমি কি আমার দেশের জন্য তেমন কিছু জয় করে এনেছি যার জন্য আজ আমাকেও পুষ্প বর্ষণ করে সংবর্ধনা জানানো হচ্ছে।’
সন্ধ্যায় কার্জন হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভাষণ দেন। ভাষণের বিষয় ছিল ‘আর্টের অর্থ’।
১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি (২৭ ও ২৮ মাঘ) অসুস্থতার কারণে রবীন্দ্রনাথ কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন নি।
১৩ ফেব্রুয়ারি (১ ফাগুন) রবীন্দ্রনাথ কার্জন হলে বক্তৃতার করেন। বক্তৃতার বিষয় ছিল- ‘দ্য রুল অফ দ্য জায়ান্ট’।
আগে উল্লেখ করা হয়েছে, অসুস্থতার কারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জগন্নাথ হলে ছাত্রদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যেতে পারেন নি। ১৫ ফেব্র“য়ারি (৩ ফাল্গুন) বিদায়ী দিনে জগন্নাথ হলের ছাত্রদের অনুরোধে হল বার্ষিকী ‘বাসন্তিকা’র জন্য একটি গান লিখে দেন। গানটি ছিল-
auto

১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৬ (৩ ফাল্গুন, ১৩৩২) ছিল কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঢাকা সফরের শেষ দিন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

দুর্ভাগ্যবশত আমারও এমন একটা ধারণা ছিল যে রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। সত্য উন্মোচনের জন্য ধন্যবাদ

---আশফাক আহমেদ

সিরাত এর ছবি

এই লেখাটা একটু বেশি কড়া ইতিহাস ঘরানার হয়ে গেছে মনে হল। হাসি যদিও তারপরও আগ্রহজনকই লাগলো।

কুলদা রায় এর ছবি

সূত্র :
এ জেড এম আব্দুল আলিম : http://www.mukto-mona.com/Articles/abdul_ali/muktijoddhar_porichoy.htm

বাঙালি মুসলমান ১৮৬৩--১৯৪৭ : চণ্ডী প্রসাদ সরকার।

ঢাকায় রবীন্দ্রনাথ : http://www.sachalayatan.com/abu_reza/34093

সচলায়তন : http://www.sachalayatan.com/porimanob/35837

দি মুসলিম

বি. বি হোম (পল) কনফিডেনসিয়াল ফাইল নং ২৯০ অব ১৯১২, সিরিয়াল নং ১৪।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

সাইফ তাহসিন এর ছবি

শেষে কি দিলেন? খালি তো পিক্সেল দেখি, ভালু রেজোলুশনের ফটুক দেন

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

হাসিব এর ছবি

সাইফ, এখানে দেখেন
auto

________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি

সাইফ তাহসিন এর ছবি

হাসিব ভাই, অনেক অনেক ধন্যবাদ, রবি বুড়োর হাতের লেখা আগে দেখি নাই, ঐ সময় কি কালির দোয়াতে নিব চুবিয়ে লিখতেন নাকি ফাউন্টেন পেন চলে এসেছিল কেউ বলতে পারবেন। হাসিব ভাই, আবারো ধন্যবাদ
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

কুলদা রায় এর ছবি

হা হা হা। ভাল প্রশ্ন করেছেন। সে সময়ে তো ফাউন্টেনেরই যুগ। লোকজন ফাক পেলেই বুড়ো কলম চুরি করত। এটা নিয়ে তিনি বেজায় রসিকতা করতেন যে, চোরদের ধারণা রবি ঠাকুরের কলম ব্যবহার করলেই মাগনা নোবেল পাওয়া যাবে।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

তৌফিক হাসান [অতিথি] এর ছবি

আমিও এমনটা শুনেছিলাম যে রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। আপনার লেখা পড়ে সেই সন্দেহ থেকে মুক্তি পেলাম। ইতিহাস নির্ভর এই লেখার জন্য লেখককে অনেক ধন্যবাদ।
খোমাখাতায় শেয়ার করলাম।

জালাল এর ছবি

"রবীন্দ্রনাথ যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারই বিরোধিতা করবেন—রবীন্দ্রনাথকেই এই বিশ্ববিদ্যলয় প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছর পরে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনেই তিনি বিপুলভাবে সংবর্ধিত হন কিভাবে?"

রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন নি, এটাই তার প্রমান?
এটা যারা রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছে বলে তাদের চেয়েও দুর্বল যুক্তি হয়ে গেল না? এ লেখাটা ইতিহাস হয়েছে বটে - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ও রবীন্দ্রনাথের ঢাকা সফরের, কিন্তু আপনি যা নিয়ে লিখতে চেয়েছেন তা হয়নি। বরং শুরুতে কোন কোন মুসলিম সংগঠন এর বিরোধিতা করেছিল এর বিষদ বর্ণনা দিয়ে আপনি নেগেট করতে চেয়েছেন শেষে বিস্তারিত কলকাতাবাসিদের বিরোধিতার কথা। সেই কলকাতাবাসিদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন না এর আরো কোনো জোড়ালো প্রমান কি আছে রেফারেন্স সহ?

কুলদা রায় এর ছবি

রবীন্দ্রনাথ যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারই বিরোধিতা করবেন—রবীন্দ্রনাথকেই এই বিশ্ববিদ্যলয় প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছর পরে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনেই তিনি বিপুলভাবে সংবর্ধিত হন কিভাবে?

এটা এ জেড এম আব্দুল আলীমের মন্তব্য। আমার নয়। লিংকটি উপরে দেওয়া হয়েছে।
দেখুন : এ জেড এম আব্দুল আলিম : [url=এ জেড এম আব্দুল আলিম : http://www.mukto-mona.com/Articles/abdul_ali/muktijoddhar_porichoy.htm]http://www.mukto-mona.com/Articles/abdul_ali/muktijoddhar_porichoy.htm[/url]
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বিরোধিতা রবীন্দ্রনাথ করেন নাই। এটা আমাদের দেশের জামাতী এবং মজহারপন্থীদের বানানো গপ্প। কিভাবে গপ্পটি বানানো হয়ে তা আব্দুল আলীম ব্যাখ্যা করেছেন। মজার কাণ্ড হলো এ ধরনের একটি অপপ্রচার বা গপ্প রবীন্দ্রবিদ্বেষীরা ব্যবহার করেন কোনো সূত্র ছাড়াই।
যে বিষয়টি আদৌ সত্য নয় তাকে প্রমাণ করার কি কোনো দরকার আছে?
এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য কারো জানা থাকলে উপস্থাপন করতে পারেন।

প্রথমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কেনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয় প্রতিষ্ঠা করার বিরোধিতা করেছিলেন--তার একটি ইতিহাস হাজির করা হয়েছে। সেখানে মুসলমানও ছিলেন এবং হিন্দুও ছিলেন। তাদের নামধামও দেওয়া হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ সেখানে নাই। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে এই বিরোধিতার সঙ্গে যুক্ত করারটা ছিল এক ধরনের সাম্প্রদায়িকতা।

লক্ষ করুন--পূর্ব বঙ্গের মুসলমান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা করেছিলেন এ কারণে যে, তখন শিক্ষায় তারা খুবই পিছিয়ে ছিলেন। তাদের দরকার ছিল--প্রাথমিক এ মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক লেভেলে শিক্ষার হার বাড়ানো। তারা ভয় পেয়েছিলেন যদি বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার জন্য যে বরাদ্দ ছিল তা কমে যাবে। ফলে শিক্ষার হার কমে যাবে।

আর পশ্চিম বঙ্গের মুসলমানগণ বিরোধিতা করেছিলেন একারণে যে, বিশ্ববিদ্যালয়টি ঢাকায় হলে তাদের জন্য কোনো লাভ নাই।

লেখাটিতে কিছু তথ্য হাজির করা হয়েছে। হয়তো এ বিষয়গুলো নিয়ে আগামীতে আরও তথ্যবহুলভাবে লিখবেন কোনো কোনো গবেষক। তার আগে অপপ্রচারের স্বরূপকে একটা উন্মোচন করার চেষ্টা আর কি।
ধন্যবাদ।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

এ জেড এম আব্দুল আলীর লজিকটি দূর্বল ও ভ্রান্ত কিন্তু আলী সাহেবের মতামত ইগ্নোর করেই তো আমরা ইস্যুটি আলাপ করতে পারি , তাই না ?

কিন্তু মুসকিল হল-

রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বিরোধিতা করেন

এই তথ্য নিয়ে ছাগুরা নিয়মিত ব্লগ প্রসব করলেও ( এই মাত্র এটাকে ধরলাম ), রেফারেন্স দেয় না । আবার অন্য অনেক ছাগু (যেমন ধীবর) মুক্তমনায় প্রকাশিত ড. তাজ হাশমীর রেফারেন্স/তথ্যপ্রমান বিহীন এই লেখাটিকেই সূত্র হিসেবে ব্যবহার করে ! অভিযোগটি সত্য নাকি মিথ্যা অপপ্রচার সেই সিদ্ধান্তে আসার জন্য তথ্যটির সপক্ষে জোরালো প্রমান জরুরি ।

অন্যদিকে,

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বিরোধিতা রবীন্দ্রনাথ করেন নাই।
এই দাবীর পক্ষেও তথ্যপ্রমান ও যৌক্তিক আলোচনার অনুপস্থিতি দেখছি ।

সত্য জানার প্রতিক্ষায় আমি গ্যালারিতেই বসলাম ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

কুলদা রায় এর ছবি

তাজ হাশমীর লেখাটা পড়ে চোখ আটকে গেল। তিনি বলছেন যে রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত টাকাটা দিয়ে বোলপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার আগ্রহ পোষণ করেছিলেন।

Those Tagore apologists who defend his opposition to the Dhaka University proposal as a device to “save Calcutta University” (what a rubbish of an argument!) totally ignore the fact that Tagore in his Nobel Acceptance Lecture in 1913 (or 1914?) announced that he was going to establish a university at Bolpur (Shanti Niketan University) with the award money.

এ প্রসঙ্গে তথ্য বলে যে, রবীন্দ্রনাথ ১৯০৫ সালে পাতিসরে একটি কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেন বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে টাকা ধার করে। চাষীরা প্রয়োজন হলে চিরকাল স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে টাকা ধার করেছে, তার সুদ ছিল মাসে শতকরা ১০ টাকা, বা তারও বেশি। এই কৃষিব্যাংক সুদ নিত বছরে শতকরা ১২ টাকা। (লক্ষ করুন ডঃ ইউনুসের গ্রামীন ব্যাংক নেয় বছরে শতকরা ৩৭ টাকা)। ফলে পতিসর ও কালীগ্রামে স্থানীয় মহাজনদের টাকা ধার দেওয়ার ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেল।
রথীন্দ্রনাথ লিখেছেন-- কালীগ্রাম পরগণার মধ্যে বাইরের মহাজনরা তাদের কারবার গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল। এমনকি কয়েকজন কৃষি ব্যাংকে ডিপজিট রাখতে আরম্ভ করেছিল। ব্যাংক খোলার পরে বহু গরীব প্রজা প্রথম সুযোগ পায় ঋণমুক্ত হবার।
'সাহাদের হাত থেকে শেখদের বাঁচাতে' এই ছিল রবীন্দ্রনাথের পদ্ধতি। পরে যখন নোবেল পুরস্কার পেলেন, সেই ১০৮,০০০ টাকা তিনি দিলেন শান্তিনিকেতন ব্রহ্মবিদ্যালয়কে, বিদ্যালয় সে টাকা জমা রাখল কৃষি ব্যাংকে। ব্যাংক বিদ্যালয়কে শতকরা বার্ষিক ৭ টাকা হারে সুদ দিতে লাগল, চাষীদের কাছ থেকে আদায় করতে লাগল ১২ টাকা হারে। ব্যাংকের কোনো লাভই ছিল না। ১৯১৬ সালে রাজশাহী জেলা গেজেটিয়ারে আই.সি.এস ও'ম্যালে সাহেব মন্তব্য লিখেছিলেন (বঙ্গানুবাদ) :
...(ঠাকুর জমিদারিতে) একটি কৃষি ব্যাংক আছে, সেখান থেকে রায়তদের শতকরা বার্ষিক ১২ টাকা হারে ঋণ দেওয়া হয়। ব্যাংকে যাঁরা টাকা রেখেছেন তাঁরা মূলত কবির কলকাতার বন্ধুবাণ্ধবরা--তাঁরা সুদ পান শতকরা ৭ টাকা হারে। এই ব্যাংক প্রায় ৯০,০০০ টাকা ঋণ দিয়েছে।...

কিন্তু কৃষি ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়ে গেল-- যখন Rural Indebtedness- এর আইন প্রবর্তিত হল। প্রজাদের যে টাকা ধার দেওয়া হয়েছিল তা ফেরত পাবার আর কোনো উপায় রইল না। নোবেল পুরস্কারের পুরো টাকাটা এভাবে নষ্ট হয়ে যায়।
নোবেল পুরস্কারের টাকাটা নষ্ট হয়েছে সে সময়ে যখন রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মবিদ্যালয় গড়েছেন--বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেন নি। সুতরাং ডঃ তাজ হাশমী তথ্যে বিকৃতি ঘটিয়ে থাকেন লক্ষ করা গেল।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

সাইদ এর ছবি

আমি জালাল-এর মন্তব্যের সাথে সহমত জানাচ্ছি।

জালাল এর ছবি

রবীন্দ্রনাথ কোথাও এ নিয়ে লিখেননি। এভাবে শিক্ষাবিস্তারের বিরোধিতা তিনি করবেন না বলেই আমার ধারনা। কিন্তু বঙ্গভঙ্গ নিয়ে সঙ্গত কারনেই, দেশপ্রেমের কারনেই তিনি বিরোধিতা করেছেন, লিখেছেন। ব্যাপার হল এই বঙ্গভঙ্গকে পূর্ববাংলার অনেক মুসলমান ঢাকা কেন্দ্রিক উন্নয়নের অর্থাত পশ্চাতপদ মুসলমান গোষ্ঠীর উন্নয়নের স্বপ্ন হিসেবে দেখেছিল। এ নিয়ে বিস্তর তর্ক করা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বঙ্গভঙ্গের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িত। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়, এবং এর সাথে সাথেই ১৯১২ সালে পূর্ববাংলার মানুষদের কথা ভেবে ঢাকাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা ওঠে - যেহেতু প্রশাসনিক ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়ন পূর্ববাংলায় আর সম্ভব নয়। আপনার লেখা থেকেই জানা যায় মুসলমান সংগঠন ও নেতারাও অনেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতা করেছিল - কিন্তু তাদের যুক্তি সবসময়েই ছিল পূর্ববাংলার মানুষের শিক্ষাবিস্তারে কোনটা ফলপ্রসু হবে তা নির্ধারন। আপনার লেখাতেই তা স্পষ্ট জানা যায় - এই টাকা কি প্রাইমারি, সেকন্ডারি নাকি কলেজ লেভেলে ব্যবহারে বেশি উপকারি? বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মত কি জণগোষ্ঠি এখানে আছে, ইত্যাদি আরগুমেন্টে? এর সাথে সাথে এটা কিন্তু ইতিহাসের অংশ যে কলকাতার বুদ্ধিজীবিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল শুধুমাত্র ঈর্ষা করে, কলকাতাকেন্দ্রিক সবকিছু হাতছাড়া হয়ে যাবে এ কারনে। এ বাংলার পশ্চাতপদ মানুষ যার বড় একটা অংশ মুসলমান এদের উন্নয়নের কথা উচ্চশিক্ষার কথা তারা কখনোই ভাবেননি, পাত্তা দেননি, আমলে আনেননি, চাননি। প্রশ্ন হল, রবীন্দ্রনাথ কি এই কলকাতাকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবিদের সাথে একাত্ব হয়েছিলেন ঢাবি প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে এ নিয়ে কোনো সভায় যোগ দিয়ে? এটা কি অপপ্রচার?

******
একটা লেখায় (লিংক দেয়া হল) রবীন্দ্রনাথের একটা দিক নিয়ে পড়লাম যেটা বাংলা কোনো লেখায় পড়িনি। আপনি (কুলদা) এ নিয়ে কোনো পোষ্টে আলোকপাত করবেন যদি বিষয়টি জানা থাকে ও সত্য হয়। রবীন্দ্রনাথ (ঠাকুর পরিবারের) দের সব সম্পত্তি মুলত নিলমণি, দ্বারকানাথ, দেবেন ঠাকুররা করে গেছেন - আয়তনে বাংলাদেশের আটভাগের একভাগ অংশ (দুবাংলায় তাদের জমিদারি নিয়ে) তাদের জমিদারিতে ছিল তাদের 'ভাল সময়ে', যেটা মুলত অকল্পনিয় আমার কাছে, বা এ যুগের অনেকের কাছেই। কথা হল রবীন্দ্রনাথ দেবেন ঠাকুরের প্রয়ানের পরে তার ভাইবোনদের সাথে বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমায় লিপ্ত ছিল সারাজীবন - এটা কি সত্য, এটাকি একটি গবেষনার বিষয় হতে পারে?

http://www.parabaas.com/rabindranath/articles/pSomjit1.html

" Foreign Shine and Assumed Gestures: The Ersatz Tagore of the West" - Somjit Dutt

"The fact of the matter, unfortunately, is that Tagore's temperament was essentially unsuited to an active public or political life; he was fundamentally a loner whose creative energies found their ideal expression in solitude. Though he was aggressively litigious - he had been engaged in furious lawsuits over property with several of his siblings (inclusive of his once-beloved Jyotirindranath) and even when on his deathbed in 1941, was involved in a legal battle with his only surviving sibling Barnakumari (who was at that time about 90) - he was not emotionally equipped to withstand the wear and tear of public censure and ridicule to which every politician and active public person is inevitably subject; poets seldom are."

Pagla dashu এর ছবি

”১৯১২ সালের ২৮শে মার্চ কলিকাতা গড়ের মাঠে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে এক বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়"

মার্চ এর শেষ এ রবীন্দ্রনাথ কোলকাতায় নয় খুব সম্ভবত শিলাইদহতে ছিলেন।

'1912 সাল এর মার্চ মাসে বিলেত যাত্রার প্রাক্কালে কবি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং স্বাস্থ্যোদ্ধার এর জন্য শিলাইদহ যাত্রা করেন' এরকম একটা বাক্য কোনো কালে পরেছিলাম কবির জীবনী পড়তে গিয়ে। রবীন্দ্রসাহিত্যের ব্যাপারে পুরো আনাড়ি আমি আবছা স্মৃতির উপর ভরসা করে গোগোল মামার কাছে ধর্না দিয়ে নীচের তথ্যগুলো পেলাম-

ভাগ্নী ইন্দিরার কাছে লেখা কবির চিঠি (১১৭ পৃষ্ঠা) আর ১২০ পৃষ্ঠার ফুটনোট।

http://books.google.com/books?id=v08xxlHuWtUC&printsec=frontcover&dq=Selected+letters+of+Rabindranath+Tagore++By+Rabindranath+Tagore,+Krishna+Dutta,+Andrew+Robinson&hl=en&ei=ByLDTPmYCYaecL32kNgL&sa=X&oi=book_result&ct=result&resnum=1&ved=0CCgQ6AEwAA#v=onepage&q&f=false

আরো দুটো প্রাসংগিক লিঙ্ক-

http://books.google.com/books?id=0g3H7eY5K6MC&pg=PA68&dq=tagore+1912+shelidah&hl=en&ei=ASPDTJjHJcuHcaPQ5MwN&sa=X&oi=book_result&ct=result&resnum=4&sqi=2&ved=0CDkQ6AEwAw#v=onepage&q=tagore%201912%20shelidah&f=false

http://books.google.com/books?id=rpdjAAAAMAAJ&q=tagore+shelidah+visit+1912&dq=tagore+shelidah+visit+1912&hl=en&ei=PiDDTM6HKNDJcY3W6cwN&sa=X&oi=book_result&ct=result&resnum=2&ved=0CDEQ6AEwAQ

এগুলোতে যা দেখা যাচ্ছে- ১৯শে মার্চ যাত্রার প্রাক্কালে কবি অসুস্থ হয়ে পড়েন, এবং স্বাস্থোদ্ধার এর জন্য শিলাইদহ তে যাত্রা করেন। এই সময়ে আশেপাশের আরো বেশ কিছু যায়গাতেও তিনি যান। কিছু অনুবাদকর্মও এই সময় তিনি করেন। ১৯ শে মার্চ ১৯১২ ছিল বাংলা ৬ই চৈত্র ১৩১৮। আর ইন্দিরা কে লেখা চিঠি থেকে দেখা যাচ্ছে উনি চৈত্র মাসটা শিলাইদহতেই ছিলেন (সম্ভববত মে মাস পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন)।

প্রমান করার দায়টা অভিযোগকারীর হলেও এক্ষেত্রে প্রোপাগান্ডাটাকে খুব সহজেই মিথ্যা প্রমান করা যাবে বলেই আমার ধারণা। ঠিক কবে থেকে কবে পর্যন্ত উনি সেখানে ছিলেন সেটা যেকোনো রবীন্দ্র গবেষক মনে হয় একটু উদ্যোগ নিলেই কনফার্ম করতে পারবেন।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

অজস্র ধন্যবাদ ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

কুলদা রায় এর ছবি

ধন্যবাদ। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যোগ করেছেন।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

লাল-মডু এর ছবি

প্রিয় কুলদা রায়, আপনি এ লেখাটি সচলায়তনে প্রকাশের ৭২ ঘন্টার মধ্যে অপর একটি কমিউনিটি ব্লগে প্রকাশ করেছেন, যা সচলায়তনের নীতিমালার দ্বিতীয় ধারাটির পরিপন্থী।

আপনার এ পোস্টটি প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে আপনার নিজের ব্লগে প্রকাশিত হলো। ভবিষ্যতে সচলায়তনের নীতিমালা অনুসরণ করে লেখার অনুরোধ রইলো।