একটি বংশ লতিকার খসড়া : হিরি কিরি রিরি

কুলদা রায় এর ছবি
লিখেছেন কুলদা রায় [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ০৩/১১/২০১০ - ৯:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার ঠাকুরদারা তিন ভাই। তাদের সাত বউ। সারাক্ষণ বাড়িটা করত মউ মউ। বাড়িটিকে দেখিয়ে দেখিয়ে লোকজন বলত--অই দ্যাখ সাত বৌয়ের বাড়ি। সেখানে রান্না হত হাড়ি হাড়ি।

আমার ঠাকুরদার বাবার নাম সৃষ্টিধর রায়। তার বাবার নাম আমি জানি না। পাঁচ পুরুষের বেশি বংশলতা নেই। এ নিয়ে কেউ কখনো আমাদের পরিবারে কারো মাথাব্যথা নেই।

বাড়িতে একটি পুরনো ছবি ছিল। ছবিতে তিন পুরুষকে দেখা যেত। আর পরে দু পুরুষ-- আমি আর আমার মেয়েরা। ছবিটিতে বাড়ির সিঁড়িতে বসে আছেন সৃষ্টিধর রায়। চোখে গোল চশমা। সামনে মৃত বৌ। সদ্যমৃত বউকে সামনে রেখে গলার কণ্ঠা জাগিয়ে মুখ উঁচু করে চেয়ে আছেন সৃষ্টিধর রায়। হয়তো জীবনে এটাই তাঁর প্রথম এবং শেষ ছবি।

ছবিটিতে বুড়ো সৃষ্টিধর রায়কে ঘিরে কিছু লোকজনকে দেখা যায়। কেউ বসে আছেন। কেউবা দাঁড়িয়ে। দুপাশে দুজন লোক আবার বাঁশের লম্বা লাঠি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। মাথায় পাগড়ী। খালি গা। মুখে দাড়ি চুল নেই। নিতান্তই ভাবলেশহীন। বাঁশের লাঠি ধরা দেখে বোঝা যায়—এরা নিরীহ। লাঠিপেটার স্বভাব নেই। লাঠিটা ছবির একটা ভাব মাত্র।

চাতালে পা রেখে বসে আছেন আমার ঠাকুরদা। পাশে ঘোমটার আঁড়ালে আমার বাবার মা জননী—আমার নিজের ঠাকুরমা। তাঁর গা ঘেষে একটি বালক দাঁড়িয়ে আছে।রোগা পটকা। পরণে হাফ প্যান্ট আর ঢলঢলা শার্ট। কায়দা করে বাঁদিকে সিথি কাটা।এই বালকটি আমার বাবা। এখন আমার মেয়েরা বালকটিকে দেখলে নির্ঘাৎ বলত—অ বাবা, তুমি আবার ব্লাক হোয়াইট যুগে গেছিলা কবে?

মাঝখানে সৃষ্টিধর রায়ের নিচে বড়ো দাদু তাঁর ছোট স্ত্রীর সঙ্গে বসে আছেন তাঁর বাবার ভঙ্গিতে। মেজ দাদুর ছবি নেই। তিনি বোধ হয় বিজি ছিলেন—কোনো কাজের তদারকিতে। বারান্দায় খিলানের পাশে কজন বউ মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে মেজদাদুর মেজ বউ আছেন একটু আড়ালে। আর হাতে শাখা পরে আমার ঠাকুরমার পাশে বসেছিলেন মেজদাদুর ছোট বউ। তাঁর বসার ভঙ্গিটিই বলে দেয় ইনি কাননবলার ছবি দেখতে গিয়ে কোলকাতা থেকে আর ফেরেন নি। শোনা যায় তিনি একটি গান গাইতেন—
আমার যেমন বেণী তেমনি রবে
চুল ভিজাব না।

এই গানটির একটি হিজ মাস্টার্স ভয়েজ প্রকাশিত লং প্লে আমাদের বাড়িতে ছিল। বাক্স বন্দি। আমি আমার বাল্যে বাক্সটি সাহস করে একবার লুকিয়ে খুলে দেখছিলাম। চালিয়েওছিলাম। সারা বাড়ি ভেদ করে বেজে উঠেছিল, কোন এক কাননবালা বেণী দুলিয়ে গানটি গেয়ে উঠেছেন। আর মচ মচ করে উঠেছে সিঁড়ি ঘর। কে যেন চেঁচিয়ে উঠেছে তারস্বরে, অল। অল। মানে বন্ধ কর। গান বন্ধ কর। তারপর চিরতরে চুপ হয়ে গেছে গানটি।

সবার সামনে মাটিতে শুয়ে আছেন আমার ঠাকুরদার মা। তাঁর শেষ যাত্রার আগে তোলা ছবিটি। সারা গায়ে ফুল ছড়ানো। আর গলায় গাঁদা ফুলের মালা। কপালে চন্দন।

ছবিটি একটি কাঠের ফ্রেমে বাঁধানো ছিল। মাঝে মাঝে কাঁচ মুছে দিতাম। আমার বড়ো দাদুর বউ—আমাদের বড়দ্দিকে যখন বাড়ি থেকে থালা বাটি সমেত বের করে দেওয়া হয়েছিল—তখন তিনিই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন—ঐ ছবিটি। নিঃসন্তান বড়দ্দি কোথায় হারিয়ে গেছেন! হয়তো পশ্চিমবঙ্গের কারো বাড়িতে। বুড়ো বয়সেও দুধ জ্বাল দিয়ে নিজের আহার জোগাড় করেছেন। তাঁর কী মনে পড়েছে---এক সময় প্রতিবছর ফাগুন মাসের সংক্রান্তিতে তিনি গোফাগুন করতেন। তাঁর শেষকালে কী হয়েছিল? কেউ কখনো বলে নি। আমাদের পরিবারের সেই ছবিটি কোথায়? আর আমার ঠাকুরদার মৃত মায়ের নামটি কি ছিল? কোন বাড়ির মেয়ে ছিলেন তিনি? বড়দ্দির চলে যাওয়া সঙ্গে সঙ্গে আমার আগের তিন পুরুষ এখন সবার কাছে নাই।

সৃষ্টিধর রায় কৃষক ছিলেন। তিনি রাতে ভাত খেতেন না। উপবাস করতেন। একটা লাঠি হাতে করে খুট খুট শব্দ করে হেঁটে বেড়াতেন। আর একমাত্র নাতিটিকে সাড়ে তিন শতক জমি দিয়েছিলেন। এই নাতিটি আমার বাবা। পরে আমার এক আত্মীয় কেস করে বলেছেন--অই দানপত্রটি ভুয়া।

সৃষ্টিধর রায়ের তিন ছেলে। মেয়ে ছিল কিনা জানি না। বড়ো ছেলে বিরাজ মোহন রায়। জমিদারী নাম—কিন্তু হাইলা কৃষক। মেজ ছেলে সতীশ চন্দ্র রায়—ছিলেন ওভারশীয়র। লেখাপড়া শিখেছিলেন। কন্টাক্টরি আর ইটের ভাটা খুলে অর্থশালী হয়েছিলেন। তাঁর ভাটার ইটের নাম ছিল—এস রায়। আমাদের ছোট শহরের রাস্তা খুড়লে নীচে আরেকটি পুরনো রাস্তা পাওয়া যাবে। সে রাস্তাগুলোর ইটের গায়ে লেখা আছে এস রায়। এই এস রায়ের মানে কী? সৃষ্টিধর রায়? সতীশ রায়? অথবা শঙ্কর রায়?

আমাদের শহরের কোর্ট কাঁচারীও সতীশ রায়ের তত্বাবধানে করা। এই কোর্ট বিল্ডিং যখন ভেঙে সংস্কার করা হয়েছিল---তখন তার একটি ইট কুড়িয়ে এনেছিলাম। আর পুরনো রাস্তা ও আমাদের বিল্ডিং বাড়িটার ভাঙা ছাদের কোন থেকে ইট কুড়িয়ে দেখেছি—এস রায় লেখা। এই তিনটি ইট বহুদিন সংগ্রহে রেখেছিলাম। ওটাই আমার একমাত্র বংশগত স্মারক ছিল। আমার বাবা এই ইট দেখে হাসত। সে হাসি ছিল আনন্দের এবং দুঃখের।

সৃষ্টিধর রায়ের ছোট ছেলে বিধুভূষণ রায়— ওরফে গান বাজনা। ওরফে হৈ চৈ। তিনি বলতেন, গঙ্গানদী সেচলে তলদেশে হাজার হাজার মদের খালি বোতল পাওয়া যাবে। সেগুলো উনি ছুড়ে ছুড়ে মেরেছিলেন। তিনি পূর্ব বাংলায় প্রথম পেশাদারী যাত্রার দল গড়েছিলেন। নাম রায় কোম্পানী। পরে শঙ্কর অপেরা। এই যাত্রার দল তাঁকে কিঞ্চিৎ নাম দিয়েছিল—আর কেড়ে নিয়েছিল তাঁর থলে বাটি। আমার বাল্যে সৃষ্টিধর রায়ের ছোট ছেলে একটি পুরনো হারমোনিয়াম টিপে টিপে একটি পেয়ারা তলায় পাড়ার ছেলেমেদের নিয়ে গাইতেন—চোখ মুছিলে জল মোছে না/ বল সখি বল এ কোন জ্বালা।

আমার ঠাকুরদা মদ খেতেন। আমার বাবা কখনো মদ খায় নি। আমার দাদা অথবা আমি কখনো খাই নি। কারণ মদ খেতে হলে থলেবাটি থাকা লাগে।

আমাদের এই বাড়িটা শহরে রায়বাড়ি নামে পরিচিত ছিল। বিদু রায়ের বাড়ি বললেও চিনত। একবার এই বিদু রায়ের যাত্রা পালায় কৃষ্ণ চরিত্রে যিনি অভিনয় করছিলেন—তিনি ভালুক জ্বরে অচেতন হয়ে পড়েন গ্রীনরুমে। তখন শ্রীমান কৃষ্ণ ঠাকুর নিজে এসে বাকী অভিনয়টুকু করে গিয়েছিলেন। কৃষ্ণ ঠাকুরের পা যেখানে যেখানে পড়েছিল—সেখানে সেখানে পদ্ম ছাপ রয়ে গিয়েছিল। লোকে এরকম বিশ্বাস করত। সেজন্যই এই বাড়িটাকে লোকে বিদু রায়ের বাড়ি বলতে পছন্দ করত। পরে এই বাড়িটিতে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়েছিল--সতীশ রায়ের বাড়ি।

চুন-সুরকি দিয়ে গাঁথা এই লাল দোতলা বাড়িটা আমাদের শহরের পুরনো তিনটি বাড়ির একটি। সামনে হলুদ রঙের কালী মন্দির। ইটগুলো কাদামাটি দিয়ে গাঁথা। বাঁদিকে ছোট একটি গুদামঘর—সেটাও হলুদ রঙের। এই মন্দির এবং গুদাম ঘরের মাঝখানে বেশ বড়ো একটি উঠোন। আমাদের পারিবারিক মাঠ। দালানবাড়িটার পূবপাশে ঘাট বাঁধানো পুকুর। পিছনে আরেকটি উঠোন। তারপর রান্নাঘর—কলঘর—পাইখানা--পাকা, উঠোনের পাশে। আর কাঁচাটা দূরে। খেজুরতলার পাশে। এখানে কয়েকটি ভুত বাস করত। মাঝে মাঝে রাত্তিরে চেচিয়ে উঠত--হিক্কি হিক্কি হিক্কি। তারও পিছনে একটি সবজিবাগান—আমরা বলতাম ক্ষেতখোলা। এরপরে ফলবাগান পেরিয়ে মঠখোলা।

মঠখোলায় একসারিতে চারটি পাকা সমাধি মঠ। প্রথমটি জোড়া মঠ—সৃষ্টিধর রায় আর তার গিন্নীর। উপরে দুটো শেফালী ফুলের গাছ। ফুল ফুটলে মঠ সাদা হয়ে যায়। তারপর মেজ দাদুর এক মেয়ের মঠ।এই পিসির বিয়ে হয়েছিল নিলক্ষ্যা গ্রামে। পরীর মত দেখতে। বিয়ে হওয়ার পরে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মঠের উপর মরিচ জবার গাছ। এই জবাফুলের বৃতিখুলে মধু খেতাম। সেখানে একটি নীল রঙের সাপ থাকত। মাঝে মাঝে সড়সড় শব্দ হত। বোঝা যেত—সাপটি খোলস বদলাচ্ছে।

শেষ মঠটি মেজ ঠাকুরদা সতীশচন্দ্রের। তাঁর মঠে কয়েকটি বেলী ফুলের গাছ। এর পরে বড় দাদু। একটু নীচু। ঘাসে ভরা। মঠ করা হয় নি। মঠ কে করবে? তার বিধবা ছোট বৌ—একা। ততদিনে তিনি বুঝেছেন—এ সংসারে আর কোনো মঠ করার মত উপায় নেই। সব কিছু উল্পে পাল্টে গেছে। এখন বড় দাদুর শ্মশানজায়গাটিতে বেজী আর গুইসাপ । পাশে স্বর্ণলতার ঝোপ।

এই মঠগুলোর পিছনেই ছিল কই পুকুর। তারপর গদ্দার মায়ের পুকুর। অনেক বড়। পাড়ার লোকজন স্নান করত। পায়ের নীচে রয়না মাছ পড়ত—ডুব দিয়ে তোলা যেত।

এই বাড়িটিতে আমি জন্মেছিলাম। যখন আমি হাঁটি হাটি পা পা—যারে পাবি তারে ছা, তখন জেনেছিলাম বাড়িটি আমাদের নয়। সেস কারণে এই বাড়িটি থেকে একদিন নেমে যেতে হয়েছিল।

আমার সাইক্রিয়াট্রিস্ট মেরী মাতোস আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, রায় বলত, তোমার সবচেয়ে পুরনো স্মৃতি কোনটি?
আমি স্মৃতির গোড়ায় যেতে যেতে দেখতে পাই—আমাদের ঘাট পুকুরের পাড়ে একটি বরই গাছের নীচে দাঁড়িয়ে আছি। তলায় বরই পড়ে আছে। একটি কি বরই দুটি তুলেছি। একজন সাদা কাপড় পরা মহিলা চেঁচিয়ে বলছেন, অল অল। মানে—যা, যা। তিনি আমার হাত থেকে বরইগুলো নিয়ে গিয়েছিলেন।

এই বাড়িটি আমাদের নয়। সুতরাং বরইগুলোও আমাদের নয়। যিনি অল অল বলে আমাকে তাড়িয়েছিলেন সেই হাঁটি হাঁটি পা পা বয়সে, তাঁকে বলতাম নোয়াদ্দি। ছিলেন বাল্য বিধবা। তাঁর ছোট বোনের সঙ্গে এই বাড়িটিতে এসেছিলেন। তাঁর কাজ ছিল তাঁর ছোট বোন-- আমাদের মাইজ্জাদ্দির বিষয় সম্পত্তি দেখা। তিনি আমাকে ভালবাসতেন। শেষ বয়সে চোখে দেখতেন না। কিন্তু বহুদিন পরেও আমার পায়ের শব্দ চিনতে পারতেন। বলতেন, অ খোকন—কবে আইলি রে। বরই খাবি?

আমার তিন ঠাকুরদার সাত বৌ। বড় জনের দুই বউ। প্রথমজন মারা গেলে দ্বিতীয় বিয়ে করেন—মোলাকান্দি গ্রামে। এই গ্রামটি উলপুরের পরে—যেতে বিল পেরতে হয়।এই বিলে একবার কোলকাতার বাবুদের নৌকা ডুবি হয়েছিল দুর্গা পূজায়। এই ঠাকুরমাকে বলতাম বড়দ্দি। তিনি ছিলেন কালো। সবাই তাকে বলত—কালো দিদি। বড় দাদু আর এই বড়দ্দির মাঝখানে আমি ঘুমাতাম। আমার বড়দ্দির মত এত ভাল গল্প কথক কখনো দেখিনি।

মেজ দাদু সতীশ রায়ের ছিল তিন বউ। বড় বউ মারা গেলে তেঘরিয়া গ্রামে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর রাজমিস্ত্রী কৃপাসিন্ধু বিশ্বাসের বোন। খুব সুন্দরী। এবং দেবদ্বিজে কোন ভক্তি ছিল না তাঁর। বলতেন—দেবদ্বিজে আমার কী করবে? ফল্লা করবে? তাঁর বিশ্বাস ছিল এ যুগে দেবদ্বিজের চেয়ে উকিল কিছু করলেও করতে পারে। তিনি লেখাপড়া জানতেন না। কিন্তু বিষয় সম্পত্তির জ্ঞান ছিল তার ভাই কৃপাসিন্ধু বিশ্বাসের মতই তীক্ষ্ণ।

সতীশ রায় মেজ বউ জীবিত থাকতে আরেকটি বিয়ে করেছিলেন। ইচ্ছে —ছেলে হোক। এই ছোট বউটি এই বাড়িতে থাকেননি। চলে গিয়েছিলেন। ভালবাসার একজন লোক পেয়ে তার সঙ্গে পাড়ি দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গে। গোলগাল মুখটি তার। অই ছবিতে বসেছিলেন। হাতে সাদা শাখা।

বড় ঠাকুরদা বিরাজমোহন রায়ের বড় পক্ষে একটি মেয়ে—নাম সিন্ধু। তাঁকে দেখিনি। ভারতের দণ্ডকারণ্যে স্বামীসহ চলে গিয়েছিলেন। তাঁর এক ছেলে বাবলুদা এসেছিল একবার। দাগ দাগ পাজামা পরা। কে তার নামে পুলিশের কাছে ভারতের চর বলে নালিশ ঠুকেছিল। বাবলুদা রাতের অন্ধকারে পালিয়ে চলে গিয়েছিল। ছোট বউ-- আমাদের বড়দ্দি নিঃসন্তান। এ কারণে রায়বাড়ি থেকে তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

মেজ ঠাকুরদার বড়পক্ষে দুটি মেয়ে। একজন অকালমৃতা। পরের মেয়েটি আমাদের টকি পিসি। আর মেজ বউয়ের মেয়ে চুনু পিসি। খুব ভাল গান গাইতে পরেন। একদা নাচতেও পারতেন। টকি পিসির বিয়ে হয়েছিল ফুলবাড়ি। জামাই শিক্ষিত। চুনুর পিসির বিয়ে হয়েছিল দক্ষিণবঙ্গে। ধনবান পরিবারে—অনেক জমি ছিল বলে তিনি জমিদার। তিনি মানবেন্দ মুখোপাধ্যায়ের গান গাইতেন--আমি এত যে তোমায় ভালবেসেছি।

আমার ঠাকুরদা বিদু রায়ের দু বউ। বড় পক্ষ চাষীর মেয়ে। হীরা বাড়ির সাত ভাইয়ের এক বোন। কালো। তাঁর মেয়েঁআমার ক্ষেপি পিসি। বিয়ে হয়েছিল বেদগাঁয়ে। জামাই পাটের ব্যবসায়ী। প্রদীপের আগুনে পুড়ে গিয়েছিল তাঁর ঘরবাড়ি এবং দু ছেলেমেয়ে মারা গিয়েছিল। এই পিসে মশাই পরে মোল্লাকান্দতে আরেকটি বিয়ে করেছিলেন। আর আমার ক্ষেপি পিসি পাগল পাগল। তার মেয়ে তৃপ্তি আমার বয়েসী। এখন পশ্চিমবঙ্গে—নিঃস্ব। ছিন্নমূল। স্বামী রাজমিস্ত্রী। ছেলেদের লেখাপড়া হয় নি। কদিন আগে মেজ ছেলেটি পা পিছলে পড়ে গেছে তিনতলার সিঁড়ি থেকে। মাথার উপরে ছিল এক সারি ইট। ইটগুলো পড়েছে বুকের উপরে। শেষ। এই পিসাতো বোনটি থাকে চাঁদপাড়ার রাস্তার পাশে ঝুপড়িতে। আর এখানো তাদের কাছে আমার ক্ষেপি পিসি অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। অকাল মৃত্যুর শোক তাঁর পিছু ছাড়ে না। বলে, হে অগ্নি দেব, তুমি আমারে নিয়ে খ্যামা দাও।

ক্ষেপি পিসির পরেই আমার বাবা।
ছোট দাদুর ছোট পক্ষের মেয়েটির নাম পঁচি পিসি। বিয়ে হয়েছিল এক নৌকামিস্ত্রি হরিদাশ মজুমদারের সঙ্গে। পিসি ছিলেন তাঁর দ্বিতীয় পক্ষ। বাড়ি কোন্দরগাতি। এই পিসি নিঃসন্তান। শেষবেলায় কোন এক গ্রামের আশ্রমে তাঁর ঠাঁই হয়েছিল। লোকজন তাঁকে মা বলে ডাকত। এখন সেখানে একটি শেফালী ফুলের গাছের নিচে আমার ছোট ঘুমিয়ে আছে।

সৃষ্টিধর রায়ের তিন ছেলে। এই তিন ভাইয়ের সাত বউ। কিন্তু পরিবারে একটি ছেলে সন্তান—আমার বাবা। নিজের মা ছিল না। তাই জেঠিমাদের আঁচলে দাঁড়াতে হত। আমার বাবার সব সময় ভয় করত। একটি রবীন্দ্র সঙ্গীত করত—দিসনে সময় কাটিয়ে বৃথা—ওরে নতুন যুগের ভোরে। আমার বাবার মত আমারও সব সময় ভয় ভয় করে।

আমার ঠাকুরদা বেঁচে থাকতেই বাবা একটি প্রেসে মেশিনম্যানের কাজ নিয়েছিল। প্রমোশন হয়েছিল কম্পোজিটরে। তারপর মুদি দোকানের কর্মচারী। মা এলে হাঁট থেকে এক বস্তা চাল কিনে রাস্তার পাশে ফেলে বিক্রি করেছে। ধীরে ধীরে দিয়েছে একটি ছোট মুদি দোকান। লোকে বলত—শঙ্কর ব্যাপারীর দোকান। আমি তাঁর দ্বিতীয় ছেলে। আমরা চার ভাই। পাঁচ বোন। মা কিন্তু একজন—আমাদের কোনো সৎমা নেই। অনেকগুলো মা থাকলে হলে থলে বাটি থাকা দরকার। আমার বাবার সঙ্গে মুদি দোকানে কাজ করতে করতে বড় হয়েছি। মাথায় করে কড়া রোদে মাথায় করে ধানের আটি জমি থেকে বয়ে আনতে হয়েছে। বলেছি--ও বাবা, এই জমি কি আমাগো।
বাবা বলেছে--তা কী করে হয়। এই জমির ধান ভাল ফলেছে। আমি ধানের কথা অন্য কিছুর চেয়ে অনেক জানি।

এই বাড়ি থেকে যখন আমাদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল, তখন রান্না ঘরের পাশের বেলতলা খুঁড়ে একটি বাক্স পাওয়া গিয়েছিল। তার মধ্যে ছিল এক সেট রাজার পোষাক। যাত্রাপালার রাজা। আর একটি তলোয়ার। দাদা রাজার পোষাকটি পরে হাতে তলোয়ার নিয়েছিল সখ করে। মা বলেছিল—আমাদের রাজা হতে নেই রে বাবা।
--তাইলে এই তলোয়ারটি?
--ওটা সত্যিকারের নয়রে বোকা। ওটা টিনের তলোয়ার।
আমার মা এইসব সত্যিকথা জানত। আমরাও তাঁর কাছ থেকে জেনেছিলাম। আমার মেয়েদের তাই জানিয়ে রেখেছি। আমার মা মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করে--সত্যি সত্যি ওদের এইসব কথা জানিয়েছিস তো? ভুল করিসনি খোকা। আমি মায়ের কথা মনে রেখেছি।

আমার বাড়ি পৃথিবীর সবচেয়ে গরীব দেশে। গরীব এলাকায়। সেখানেও সবচেয়ে গরীব লোকদের মধ্যে আমার জন্ম। এদের বলে নমশুদ্র। নমশুদ্রদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। এদের মধ্যে আমাদের কোনো এক পুরুষ কায়দা করে কিছু বিষয় সম্পত্তি বানিয়েছিল। আর বাকীরা কেউ হাইলা চাষী,ক্ষেতমজুর,আলুপটলের দোকানী,ঘরামী, মুদি, মুটে,প্রেসের কম্পোজিটর,রাজমিস্ত্রি, ইট বওয়া লেবার এবং কেউ কেউ রিকশাচালক। এরা তেন্নাথ ঠাকুরের পুজা দেয়। আর ভোস ভোস করে ঘুমায়। আমি ঘুমাতে ভালবাসি। কিন্তু ঘুমাতে দেরী হয়ে যায়। তাই পথে পথে ঘুরি। আর মায়ের কথাটিকে মনে রাখি।

সাত চল্লিশে দেশ বিভাগ হলে নমশুদ্ররা জেনেছিল ভারত তাঁদের দেশ নয়। একাত্তরে তাঁরা রক্ত দিয়ে বুঝেছে—পাকিস্তান তাদের দেশ নয়। বায়াত্তুরে তাঁরা শুনেছিল—বেল পাকলে কাকের কী। পঁচাত্তরে তাঁরা টের পেয়েছে—বাংলাদেশে তাঁরা বলির পাঠা। এখন তাঁরা দেশহীন, চিহ্ণহীন, পরিচয়হীন। তাঁদের জন্ম ব্রহ্মার পায়েও নয়—পায়ের নখের আগায়। আমি সে নখের আগার ধুলো।

আমি যখন কথা বলি আমার গলা থেকে গালিবর্ষিত হলে টের পাই—এ-ই আমার মাতৃভাষা। যখন কেউ আমাকে গালি দেয়—তখন বুঝতে পারি--এ-ই আমার ললাট লিখন। আর সব কিছু হিরি কিরি রিরি।


মন্তব্য

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

খুব খুব খুব ভালো একটি লেখা!

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

কুলদা রায় এর ছবি

ধন্যবাদ।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

কাজী মামুন এর ছবি

ভালো লাগলো বললে সম্পূর্ণটা বলা হবে না!
কেমন লাগলো আসলে! কেমন জানি!! আপনার তো আসলেই গল্প লেখার প্রয়োজন নেই, নিতান্তই সাধারণ ঘটনাবলী যে এমন অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে, তাঁর গল্প লেখার প্রয়োজন কি!

=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"

=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"

guest_writer এর ছবি

নমশুদ্রের অবস্থা ইহুদির মতন!
- তনুশ্রী রায়

হিমু এর ছবি

আপনার আত্মজৈবনিক লেখাগুলো এত অপূর্ব হয়, যে বলারও কিছু থাকে না, আর না বললেও অস্বস্তি লাগে। এই লেখাটির ভেতরে একসাথে আনন্দ আর কষ্ট এত মাখামাখি হয়ে আছে! আপনার এই লেখাগুলো থেকে শিখি কিছু না কিছু।

চলুক।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

কুলদা রায় এর ছবি

ধন্যবাদ হিমু।
এই বাড়িটা নিয়ে একটি গল্প লিখেছি গতমাসে। বেশ বড় হয়ে গেছে। ৩০ পৃষ্ঠার মত। এত বড় লেখাটি কিভাবে পোস্ট দেব বুঝতে পারছি না। গল্প প্রকাশিত হলে আমার কিছু আত্মীয় বিয়োগ হবে বলে আশঙ্কা করছি।
গতকালও এক আত্মীয়া লেখিকা মেইল করেছেন--আমার কারণে প্রথম আলোতে তিনি মুখ দেখতে পারছেন না।
আমি তো কারো আত্মীয় নই। কেন তারা মুখ দেখাতে পারছেন না?
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

সাইফ তাহসিন এর ছবি

আত্মীয়কে বলেন মহিলা হলে বোরখা পড়তে ;)। আর ৩০ পাতার গল্প যদি ওয়ার্ডে লিখে থাকেন, দিনে ৫পাতা করে পোস্ট করেন। প্রথম পাতা থেকে বিদায় নিতেই পরের পর্ব দিবেন। আত্মীয় বিয়োগের জন্যে কারণ লাগে না, লেখা দিয়ে দেন, এতে দেখবেন বন্ধন শক্ত হবে হাসি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

হাসিব এর ছবি

ভাগ ভাগ করে পোস্ট করে ফেলেন।
________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি

কুলদা রায় এর ছবি

ইহুদিদের থলে বাটি আছে নমশুদ্রদের নেই। নমশুদ্রদের একজন নেতা ছিলেন--যোগেন মণ্ডল। তিনি জিন্নাহর মন্ত্রী সভায় ছিলেন। পরে ভয়ে পশ্চিম বঙ্গে একা একা পালিয়ে যান। কিন্তু তার নমশুদ্ররা বাংলাদেশেই পড়ে থাকেন। কিছুদিন গ্রামের হাটেঁ হাটে একটা পারমিট কার্ডের জন্য ঘুরে বেড়াতেন যোগেন মণ্ডল। দেবেশ রায়ের একটি ঢাউস উপন্যাসের নাম যোগেণ মণ্ডল।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

কৌস্তুভ এর ছবি

মন খারাপ ...

guest_writer এর ছবি

"অনেকগুলো মা থাকলে হলে থলে বাটি থাকা দরকার" / "যাত্রার দল তাঁকে কিঞ্চিৎ নাম দিয়েছিল—আর কেড়ে নিয়েছিল তাঁর থলে বাটি।" / "কারণ মদ খেতে হলে থলেবাটি থাকা লাগে" - স্থলে অর্থনৈতিক, কিন্তু "ইহুদিদের থলে বাটি আছে নমশুদ্রদের নেই" স্থলে রাজনৈতিক মনে হয়। থলেবাটির পুনোরুক্তি যেহেতু ঘটে গেচে, এর স্পষ্ট ব্যাখ্যা আবশ্যক মনে হয়। -তনুশ্রী রায়।

কাজী মামুন এর ছবি

'থলে বাটি' বলতে অর্থ-বিত্তকেই তো বুঝি!

""ইহুদিদের থলে বাটি আছে নমশুদ্রদের নেই" স্থলে রাজনৈতিক মনে হয়।"

ইহুদিদের অর্থনৈতিক অবস্থান নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কেন রাজনৈতিক মনে হয় বলবেন কি? যদি রাজনৈতিক হয়ও, 'থলে বাটি'কে ক্ষমতার ভিন্নার্থে কি নেয়া যায়? ক্ষমতার অপর নামই অর্থ।

=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"

=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"

কুলদা রায় এর ছবি

শব্দের ভিতরে উকি দিয়ে অর্থ বুঝে নিতে হবে। আমি কলিম খানের অনুসারী। শব্দ বহুরৈখিক।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই লেখার বর্ণনা আর ভাষার ব্যাপারে বলার কিছু নেই, আসলে বলার উপায় নেই। পরিচয় পর্বে মার্কেজের মতো বংশলতিকার একটা চিত্র জুড়ে দিতে পারেন, তাতে পাঠকের সুবিধা হবে। লেখাটা এখানে শেষ না করে উপন্যাসের কথা ভাবুন। নমশুদ্রদের জীবনালেখ্য উপন্যাসের রূপ পেতে হবে তো - অন্ততঃ 'ভাটিপুত্রের উপাখ্যান' বা 'বাঙালনামা'র মতো করে অমন আয়তনের কিছু।

কে বলেছে বর্ণপ্রথা বিলুপ্ত হয়েছে? অর্থনৈতিক শ্রেণীবিভাজনের চেয়ে বড় বর্ণপ্রথা আর কী আছে? সে হিসাবে নমশুদ্রদের নমশুদ্র করে রাখতে না পারলে অন্যরা বড় হবে কীভাবে?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মূলত পাঠক এর ছবি

পড়তে পড়তে আমারও এই জাতীয় কথা মনে আসছিলো, শুধু গল্পে সীমাবদ্ধ থাকে কেন। ঐ ত্রিশ পাতার গল্প আর এই গল্প, এবং আর যা আছে অনেক অনেক কথা যা এখনো লেখেন নি, সব নিয়ে একটা বড়ো কিছু লিখে ফেলুন না।

প্রশংসা করলাম না আর, অসাধারণ-টারন বলে লাভ কী যখন সবই কম পড়বে। আপনি মাঝে মাঝে লিখুন, কম হয় কমই লিখুন, কিন্তু এই রকম বোমা ফেলুন।

কুলদা রায় এর ছবি

আপনার পরামর্শটি নিলাম। ধন্যবাদ।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

রেজওয়ান এর ছবি

কে বলেছে বর্ণপ্রথা বিলুপ্ত হয়েছে? অর্থনৈতিক শ্রেণীবিভাজনের চেয়ে বড় বর্ণপ্রথা আর কী আছে?
কি সত্য কথাগুলো। আমাদের মধ্যে জমিদারি ভাবগুলো যায় নি। বাপের বয়সের একজন রিক্সাওয়ালাকে তুই করে বলি, কাজের লোকদের পাশে বসাই না, তারাও তো নমশুদ্র।

কুলদার লেখার আমি মুগ্ধ পাঠক শুধু।

 আর একজন রায় এর ছবি

কুলদা দাদা
আমি আমার ঠাকুরদার কাছ থেকে সুনছি নমসুদ্ররা আসলে ব্রাম্মন , তাদের নামের আগে এখনো নম লাগানো আছে . রাজার বল্লাল সেন এর মায়ের শেষ কৃত্ত অনুষ্ঠান করতে রাজি না হার কারণে তাদেরকে তাদের আদি ভূমি থেকে উত্খাত করা হয় .এইকারণে সবচেয়ে দুর্গম এলাকায় তারা বাস করে . এক কালে তাদের কাজ ছিল পূজা পার্বন এবং পড়াশুনা . জানিনা এটা সত্য না গল্প .

বাংলাদেশ দেশের নম সুদ্রদের বাস্তব ইতিহাস নিয়ে যদি একটা লেখা দিতেন তাহলে অনেক কিছু জানতে পারতাম. যেহেতু আপনি পরাসুনা করে তথ্য নির্ভর লেখা লেখেন. বিশেষ করে যোগেন মন্ডল কে নিয়ে . কে এই লোক ? কি তার ভুমিকা ? সে কি ফরহাদ মাজহার নাকি কমরেড রতন সেন ?

(গুগলে এ লেখা বানান এর অবস্থা খারাপ )

কুলদা রায় এর ছবি

নমশুদ্ররা ব্রাহ্মণ নয়। ব্রহ্মার মস্তক থেকে ব্রাহ্মণ, বক্ষ থেকে ক্ষত্রিয়, উদর থেকে বৈশ্য আর পদ থেকে শুদ্রদের জন্ম। শুদ্রদের বেদপাঠে অধিকার ছিল না। তারা ছিল শ্রমিক এবং দাসশ্রেণীর।
যোগেন মণ্ডলের বাড়ি ছিল বরিশালের এক গ্রামে। তিনি লেখাপড়া শেখেন এবং আইনজীবী হন। বরিশাল থেকে এক ব্রাহ্মণ প্রার্থীকে হারিয়ে এমএলএ হন। পরে জিন্না সাহেবের সঙ্গে পূর্বপাকিস্তানে নমশুদ্রদের নিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। বিনিময়ে জিন্না তাকে মন্ত্রী করেন। কিন্তু তার কোনো ভুমিকার রাখার সুযোগ ছিল না। তিনি বুঝতে পারেন--পাকিস্তান একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হয়ে গেছে। তারপর তিনি পালিয়ে পশ্চিবঙ্গে চলে যান।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

অতিথি লেখক এর ছবি

এত চমৎকার করে লেখেন কিভাবে??অসাধারণ একটি লেখা । খুব খুব খুব ভাল লাগলো।

নৈষাদ এর ছবি

পড়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

পড়লাম। ভুলে যাওয়া ভান করতেসি আপাতত ...


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অতিথি লেখক এর ছবি

এক কথায় অসাধারণ।

অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম

সাইফ তাহসিন এর ছবি

খুব ছুয়ে গেল লেখাটা, আপনার ৩০ পাতা গল্পের পথ চেয়ে রইলাম।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

কুলদা রায় এর ছবি

গল্পটির নাম--ও টগর, ও কুক্কুট।
টাইপ করতে হবে। ধন্যবাদ।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

অতিথি লেখক এর ছবি

শেষটায় এসে তো মনটা খারাপ করে দিলেন বস।

---আশফাক আহমেদ

তাসনীম এর ছবি

খুব ভালো লাগলো।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অদ্রোহ এর ছবি

স্তব্ধ হয়ে গেলাম, লেখনীর গুণে তো বটেই, একথাও ভেবে যে এত খুঁটিনাটি মনে রাখেন কী করে?

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

স্বাধীন এর ছবি

লেখাটি মন ছুঁয়ে গেলো।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

সুপার্ব।

-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

উজানগাঁ এর ছবি

কিছু-কিছু লেখা আমাদের স্তব্ধ করে দেয়। শেকড়শুদ্ধ টেনে রাস্তায় এনে দাঁড় করায় কিংবা নিজেকে নিজের মুখোমুখি দাঁড়াতে শেখার সাহস যোগায়।

কিছু-কিছু লেখা অনেকদিন ভেতরে থেকে যায়, ঘোরাঘুরি করে, খায়-দায়, ঘুমায় কখনো-কখনো কাঁদায়। এই লেখাটা সেরকম।

অসম্ভব ভালো লাগলো দাদা।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

নীড়পাতায় দেখার পরে যখন পড়লাম তখন থেকেই ট্যাবটা বন্ধ করা হয়নি আর! পড়ি, ভুলে যাবার চেষ্টা করি, খানিক চুপ চাপ বসে থাকি, আবার এসে পড়ে যাই! আজব ব্যাপার! এভাবে লেখেন ক্যাম্নে?

-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

কুলদা রায় এর ছবি

এই লেখাটা যখন লিখি--সেদিন বারবার আমার ঐ ছবিটার কথাই মনে পড়ছিল। মাঝে মাঝে ছবিটাকে স্বপ্নে দেখি।
একটা জিনিস খেয়াল করেছেন--আমাদের বাড়িটিতে সৃষ্টিধর রায়ের বউ ছাড়া আর কোনো বউয়ের সমাধি মঠ নেই। বিরাজমোহনের বড় বউ, সতীশ রায়ের বড় বউ এবং বিধু রায়ের বড় বউকে পোড়ানো হয়েছিল শহরেরর শ্মশান ক্ষেত্রে। সেটা এখন নেই। ওখানে একটি হাসপাতাল হয়েছে। যখন ছিল--কেউ আমাদেরকে চেনায় নি। ওখানে কোনো মঠ করা হয় নি। ওই শ্মশানক্ষেত্রটি নাকি যতীন্দ্রনাথ বাকচি সরকারের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। আমার ঠাকুরদা এ নিয়ে মৃদু ক্ষোভ করতেন। লোকটাকে দেখলেই ফিস ফিস করে বলতেন--অই দেখ, শ্মশানবেঁচা যায়। শ্মশানক্ষেত্রটিতে আমি ছোটবেলায় গেছি। ওখানে মঠ খুব একটা ছিল না। হাসপাতাল করার সময় নিশ্চয়ই সবগুলো মঠটঠ ভেঙে ফেলা হয়েছে। অনেকের স্মৃতিগুলি শেষ করে দেয়া হয়েছে। তবে কেউ বিদ্রোহ করেছেন--এটা শুনি নি।
আমার ছোট ঠাকুরমা--বিধু রায়ের ছোট বউ ছিলেন মস্তিষ্ক বিকৃত। তার মৃত্যুর পরে নদীর পাড়ে নতুন শ্মশান ক্ষেত্রে পোড়ানো হয়েছিল। তবে ওখানে কেউ আলো জ্বালতে যায় নি। ওখানে কোনো মঠ গড়া হয় নি। বিধু রায়কে ওখানে পোড়ানো হয়েছিল। তারও কোনো মঠ নেই। এখন বুঝতে পারি--তখন আমার বাবার পয়সা ছিল না মঠ গড়ার মত।
আমার বাবা ১০ বছর মারা গেছেন। বছর পাঁচেক আগে তার একটি মঠ গড়া হয়েছে। মঠের গায়ে আমার ভাইবোন এবং আমাদের ভ্রাতৃবধূদের নাম লেখা আছে মঠটিতে। কিন্তু আমার মায়ের নামটি নেই।
এই লেখাটি কোনো লেখা মনে করে লিখিনি। আপনাদের কেন এত ভাল লাগল--বুঝতে পারছি না।
মনে হচ্ছে--পরে আরও একটি লেখা যেতে পারে।
সবাইকে ধন্যবাদ।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

লেখাটা আমাদের কেন এতো ভালো লেগেছে জানেন? আমাদের সবারই হয়তো এরকম একটা ছবি থাকে, সেটা নিয়ে আমরা আমাদের ভাবনাগুলা সহজে কারও সামনে প্রকাশ করতে পারিনা। মাঝে মাঝে লুকিয়ে ছবিগুলো দেখি, ব্যাস, সেই পর্যন্তই! এরকম লেখা লেখার সাহস যেদিন হবে সেদিন হয়তোবা আপনার এই ব্লগ পড়ে আর অবশ হয়ে বসে থাকতে হবে না!

পরের পর্ব লেখবেন প্লিজ! দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

দুর্দান্ত এর ছবি

শ্রদ্ধা!

ওডিন এর ছবি
বইখাতা এর ছবি

এই লেখাটা খুবই ভাল লেগেছে। আপনার ৩০ পাতার গল্প পর্বে পর্বে ভাগ করে পোস্ট করে ফেলুন। সেটাও আন্দাজ করি এমন অসাধারণই হবে।

তুলিরেখা এর ছবি

কিছু কিছু লেখা পড়লে সব শব্দ থেমে যায়, চুপ করে বসে থাকতে ইচ্ছে করে নিজের মনের নির্জন বনে, এটা তেমন একটা লেখা। আপনার "ও টগর ও কুক্কুট" পড়তে সাধ হয়, ভাগে ভাগে যদি দেন।
শুভেচ্ছা রইলো।

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সবজান্তা এর ছবি

শেষের অনুচ্ছেদগুলি পড়ে চুপচাপ বসে থাকলাম।

পুরো লেখা বরাবরের মতোই অনবদ্য।


অলমিতি বিস্তারেণ

... [অতিথি] এর ছবি

আমার ধারণা সনাতন ধর্মে জাতিভেদ এসেছে মনুসংহিতা থেকে। প্রকৃতি থেকে উদ্ভূত এই ধর্মটির "হিন্দু" নামটিও এসেছে আর্যরা এই ভূখণ্ডে আসার পর। যা হোক, মনুসংহিতার সার-সংক্ষেপ হলো:

১. ব্রাহ্মণ: ভগবান আর দেবতাদের সাথে হটলাইন আছে এদের। সকলেই এদেরকে মানে। ব্রাহ্মণ ছাড়া কোনো ধর্মীয় বা সামাজিক অনুষ্ঠান হয় না। কিন্তু সর্বোচ্চ সম্মান থাকলেও বেচারাদের নেই টাকা আর রাজনৈতিক ক্ষমতা।

২. ক্ষত্রিয়: রাজ্য আর সাম্রাজ্যের অধিপতি দিগ্বিজয়ী বীর এরা। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এরা। যাকে-তাকে যখন-তখন শূলে চড়াতে আর গর্দান নিতে পারে। কিন্তু এদের কাছে দেবতাদের নির্দেশ বা আশীর্বাদ/অভিশাপ আসে ব্রাহ্মণদের মাধ্যমে আর এদের ট্যাঁক তথা রাজকোষ সতেজ থাকে বৈশ্যদের কল্যাণে।

৩. বৈশ্য: না আছে ভগবানের সাথে হটলাইন, না আছে এদের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি। কিন্তু এদের আছে সম্পদ। তা দিয়ে রাজাও বানানো যায়, পুরুতও বানানো যায়। বণিকদের বিপক্ষে গিয়ে কোনো রাজা টিকতে পারেনি। যুদ্ধ চালাবার জন্য বা মন্দির নির্মাণের জন্য এদের কাছে আসতে হয় সকলকেই।

৪. নমশূদ্র: এদের কথা লেখকের চেয়ে ভালো করে লেখা আমার পক্ষে অসম্ভব। শেষ কয়েকটি লাইন দ্রষ্টব্য।

tapan bagchi এর ছবি

কুলদাদাদা, লেখাটি ভালো। কিন্ত আপনার মন্তব্য থেকে কিছু ভুল তথ্য পাচ্ছি।
১. লিখেছেন, দেবেশ রায়ের উপন্যাসের নাম ‘যোগেন মণ্ডল’। হবে ‘বরিশালের যোগেন মণ্ডল’।
২. লিখেছেন ‘ বরিশাল থেকে এক ব্রাহ্মণ প্রার্থীকে হারিয়ে এমএলএ হন।’ ঠিক নয়। তিনি হারিয়েছেন কংগ্রেসপ্রার্থী সরলকুমার দত্তকে। জন্মসূত্রে তিনি অশ্বিনীকুমার দত্তের ভাইয়ের ছেলে। জাতে কায়স্থ।

এবার আমার একটা জিজ্ঞাস্য:
আপনি লিখেছেন, ‘নমশুদ্ররা ব্রাহ্মণ নয়। ব্রহ্মার মস্তক থেকে ব্রাহ্মণ, বক্ষ থেকে ক্ষত্রিয়, উদর থেকে বৈশ্য আর পদ থেকে শুদ্রদের জন্ম।' তাহলে নমঃশূদ্রদের জন্ম কোথা থেকে? শূদ্র আর নমঃশূদ্র কি সমার্থক? জানতে পারলে উপকৃত হতাম।

কুলদা রায় এর ছবি

ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় আর বৈশ্য শুদ্রদের কাছে একই পদের।
বায়ুপুরানে টোকা পয়সা কামানোর কায়দা দেখে বৈশ্যদের বলা হয়েছে তারা যম। বৈশ্যানেব তু তানাহু: কীনাশান্ বৃত্তসাধকান্ । ব্রাহ্মণরাও তাই--পুরো মাল কড়ি কামানোর ধান্ধা ছাড়া আর কিছু নাই।
--ব্রাহ্মণনো'স্য মুখমাসীদ্ বাহু রাজন্য কৃত:। উরুতদস্য যদ্ বৈশ্য: পদ্ভ্রাং শুদ্রোজায়ত।। (যজুর্বেদ)
দেখা যাচ্ছে শুদ্ররাই শুধু পরমপুরুষ ব্রহ্মার পা থেকে জন্মাচ্ছে। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় বা বৈশ্যরা কিন্তু ব্রহ্মার শরীর থেকে জন্মে নাই। তারা 'কৃত' হচ্ছে। যেমন ব্রাহ্মণ ব্রহ্মার মুখ হচ্ছে। আর ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যকে তাঁর বাহু এবং উরু করা হল। পার্থক্যটা বোঝা আপনার জন্য কষ্টকর নয়।

নমশুদ্র শুদ্রদেরও অধম। পায়ের নখ আর কী। যারা এই মধ্যে ব্রাহ্মণ খুঁজতে যান খুঁজতে পারেন। অসুবিধা নাই। পুরাকালে ব্রাহ্মণরা শুদ্রদের ছায়া মাড়াত না বটে--তবে তারা শুদ্রদের যুবতী কন্যা এবং বধুঁদের আইনগতভাবে হাসিয়া আলিঙ্গন দিতে শয্যায় নিত। সেক্ষেত্রে কারো কারো বাপ ব্রাহ্মণ থাকিলেও থাকিতে পারে। ইহাতে বিস্ময়ের কিছুই নাই। এই জন্য নমশুদ্রদের ব্রাহ্মণত্ব খোঁজার কারণে দ্বারিক বারুরী আর যোগেন মণ্ডল মশাইকে শেষ পর্যণ্ত নমশুদ্রদের পাকিস্তানে ফেলিয়া চাচা আপন প্রাণ বাঁচা গান গাহিতে গাহিতে পশ্চিম বঙ্গের টেম্পু ব্যবসা খুলিতে হইয়াছে।
.
নমশুদ্রকে নমশুদ্র হিসাবেই দাঁড়াতে হবে। এই তত্বগুলো আমার শশ্ম্রুমশাই মহেন্দ্রনাথ বিশ্বাস আমার বিবাহবাসরে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে গিয়েছিলেন। লোকজন সরল কৌতুক পেয়েছিল।

আপনাদের লগে আমার পার্থক্যটা বোঝন যায়? আমি আমার আদ পুরুষ খুজি জেলেদের মধ্যে। আর আপনার খোঁজেন বাওনদেন মধ্যে।মহাভারতে আরও কৌতুককর খবর আছে। সেখানে বলা হচ্ছে--রাজা যুধিষ্ঠির ক্ষত্রিয় না। তিনি শুদ্র ছিলেন। নমশুদ্র ছিল দণ্ডক বনে। তারা পশুর মাংস লোকালয়ে সরবরাহ করত। তারাই দুর্জোধনের সরোবরে লুকিয়ে থাকার খবর পাণ্ডবদের জানিয়ে দিয়েছিল।
ঘুম আসছে। পরে লাগলে বাকীটুকু কমুআনে।

রেফারেন্স : কলিযুক্ত
লেখক : নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী
প্রকাশক : গাঙচিল। কলকাতা।
প্রকাশকাল ২০০৭ বইমেলা। ............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

tapan bagchi এর ছবি

কুলদা-দাদা,
আপনি আবারও একটা ভুল তথ্য দিলেন। যোগেন মণ্ডল দেশত্যাগ করেছিলেন। দ্বারিকানাথ বারুরী কখনো দেশত্যাগ করেন নাই। তিনি মাদারীপুর শহরেই দেহত্যাগ করেছেন।
আপনার আলোচনায় অনেক বিষয় এলেও, শূদ্র আর নমঃশূদ্র এই ‘জাতি’র ব্যাখা বুঝতে পারি নাই। জাতিবিভাগে আছে, ব্রা‏হ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র।’ কিন্তু‘ নমঃশূদ্র কারা? একেবারেই জানার জন্যই এই প্রশ্ন করেছি। নমঃশূদ্র যদি শূদেরও অধম হয়, তাহলে শূদ্র কারা? এই ধরুন, জেলের উত্তরাধিকার হিসেবে আপনি নিজেকে নমঃশূদ্র বলছেন, তাহলে শূদ্র কারা? জানােল প্রীত হই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।