কুলদা রায়
এমএমআর জালাল
নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীর গত ২৫ বৈশাখ এনটিভিতে অভিযোগ করে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। নূরুল কবীর বাংলাদেশের অকুতোভয় সাংবাদিক কাম সম্পাদক। সুতরাং তিনি যখন কোনো তথ্য বলেন—দায় দায়িত্ব নিয়েই বলেন। খোঁজ খবর নিয়েই বলেন। রামাশ্যামাযদুমধুদের মত যা মুখে এলো তা বলবেন একজন সম্পাদক এটা মানতে কষ্ট হয়। কিন্তু তিনি এই তথ্যটি কোথায় পেয়েছেন—সে বিষয়ে মুখ খোলেননি। কিন্তু তথ্যটি রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে। রবীন্দ্রনাথ কোনো এলেবেলে লোক নন। তাঁর ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী চলছে। তিনি উনসত্তর বছর আগে মারা গেছেন। তাঁর আত্মপক্ষ সমর্থন করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু তাঁর জীবনের সকল তথ্যই সংরক্ষিত আছে। খুঁজলে পাওয়া যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন--এ অভিযোগটি প্রায়ই করেন গোলাম এবনে সামাদ ধরনের জামাতপন্থী কলমজীবীরা। সংগ্রাম, ইনকিলাব, নয়া দিগন্ত, দৈনিক দেশ পত্রিকায় মাঝে মাঝে এ ধরনের রবীন্দ্রবিরোধিতা দেখা যায়। রবীন্দ্রবিরোধিতার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের উদগাতা ফরহাদ মজহার রবীন্দ্রনাথকে সাম্প্রদায়িকভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তার 'রক্তের দাগ মুছে রবীন্দ্রপাঠ' বইটিতে। সেখানে রবীন্দ্রনাথকে কোনোভাবেই মজহার ছাড় দেন নি। তাঁর ভাবশিষ্য সাদ কামালীও রবীন্দ্রবিদ্বেষবিশেষজ্ঞ হিসাবে নানাবিধ রচনা করেছেন। অবাক কাণ্ড হল এই দুই রচনাকারের কোথাও এই তথ্যটি নাই। রবীন্দ্রনাথ যে সব শাক সবজি কলাটা মূলোটা খেতেন, দৈ-খৈ কোথা থেকে খেতেন, কাদের ক্ষেতেখামারে সেসব উৎপাদিত হত—ফরহাদ মজহার এবং সাদ কামালী নানাপ্রকার খাটাখাটুনি করে তাও বের করে ফেলেছেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন—এই ধরনের রগরগে অতি বিখ্যাত রবীন্দ্রছিদ্রটি তাদের রচনাতে উল্লেখ করেননি। কেন করেননি সেটা একটা কোটি টাকার প্রশ্ন বটে। তাদের কর্ণকুহরে কি এই অভিযোগটি ঢোকেনি? তাঁদের গবেষণালিপ্ত চোখ তিনি দেখতে পায়নি?
কিন্তু মেজর জেনারেল (অঃ) আব্দুল মতিন কিন্তু এটা দেখতে পেয়েছেন। তিনি একটি বই লিখেছেন। বইটির নাম, 'আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতা এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা’।. প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের প্রখাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আহমদ পাবলিশিং হাউস। প্রতিষ্ঠানটি এলেবেলে বই বের করে না। আর আব্দুল মতিন অতি বিখ্যাত লোক। তিনি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল। মুক্তিযুদ্ধের অংশ নিয়েছিলেন। বীরপ্রতীক। পিএসসি। তার চেয়েছেও বড় কথা—তিনি বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অতি ক্ষমতাধর উপদেষ্টা ছিলেন। তার আঙুলি হেলনে বাঘে-গরুতে একঘাটে পানি খেত। সেই আব্দুল মতিন উক্ত বইটিতে লিখেছেন, ”১৯১২ সালের ২৮শে মার্চ কলিকাতা গড়ের মাঠে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে এক বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়।” এই বাক্যটিতে পাঁচটি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে—১. সময়টা—১৯১২ সালের ২৮শে মার্চ। ২. স্থান—কলিকাতার গড়ের মাঠ। ৩. সেখানে একটি সভা হয়েছিল। ৪. সে সভার উদ্দেশ্য ছিল—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করা। ৫. সভায় সভাপতিত্ব করেন—আর কেউ নন, শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বলে রাখি-- তখনো রবীন্দ্রনাথ নোবেল পাননি। পেয়েছিলেন এক বছর পরে--১৯১৩ সালে।
এখানেও একটি বিস্ময় আছে। সেটা হল দি নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরের মত আব্দুল মতিন তার কোনো তথ্যউৎস দেননি। এ বিষয়ে একজন কলামিস্ট এ জেড এম আব্দুল আলীর বরাতে জানা যায়—‘শোনা যায়, এই তথ্যটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কোন বইতে আছে।‘ তিনি এ বিষয়ে আরও একটা প্রশ্ন করেন-- যে রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন সেই রবীন্দ্রনাথকেই এই বিশ্ববিদ্যলয় প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছর পরে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনেই কিভাবে বিপুলভাবে সংবর্ধনা দিয়েছিল?
এই প্রশ্নের উত্তর এ মুহুর্তে আমরা খুঁজব না। আমরা অন্যত্র সে উত্তর খুঁজেছি। এখন খুঁজব—১৯১২ সালের ২৮ শে মার্চ তারিখটিকে। খুঁজে দেখব--ঐদিন রবীন্দ্রনাথ কোথায় ছিলেন? কী করেছিলেন?
১৯১২ সালের ২৮ শে মার্চ রবীন্দ্রনাথ একটি চিঠি লিখেছেন জগদানন্দ রায়কে। জগদানন্দ রায় বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক, রবীন্দ্রনাথের পুত্রকন্যাদের গৃহশিক্ষক ও শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্যাশ্রমের শিক্ষক। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। চৈত্র ১৫, ১৩১৮ বঙ্গাব্দ। রবীন্দ্রনাথ চিঠিটি লিখেছেন শিলাইদহ থেকে। রবীন্দ্রনাথ লিখছেন—‘কয়দিন এখানে এসে সুস্থ বোধ করছিলুম। মনে করেছিলুম সেদিন যে ধাক্কাটা খেয়েছিলুম সেটা কিছুই নয়। সুস্থ হযে উঠলেই অসুখটাকে মিথ্যা বলে মনে হয়। আবার আজ দেখি সকাল বেলায় মাথাটা রীতিমত টলমল করচে। কাল বুধবার ছিল বলে, কাল সন্ধ্যাবেলায় মেয়েদের নিয়ে একটু আলোচনা করছিলুম—এইটুকুতেই আমার মাথা যখন কাবু হয়ে পড়ল তখন বুঝতে পারচি নিতান্ত উড়িয়ে দিলে চলবে না।' (বি, ভা. প, মাঘ-চৈত্র ১৩৭৬। ২৫৩, পত্র৫)।
প্রশান্তকুমার পাল রবিজীবনী গ্রন্থের ষষ্ঠ খণ্ডে জানাচ্ছেন, এদিনই তিনি একটি কবিতা লেখেন। কবিতার নাম—‘ স্থির নয়নে তাকিয়ে আছি’।
স্থির নয়নে তাকিয়ে আছি
মনের মধ্যে অনেক দূরে।
ঘোরাফেরা যায় যে ঘুরে।
গভীরধারা জলের ধারে,
আঁধার-করা বনের পারে,
সন্ধ্যামেঘে সোনার চূড়া
উঠেছে ওই বিজন পুরে
মনের মাঝে অনেক দূরে।
দিনের শেষে মলিন আলোয়
কোন্ নিরালা নীড়ের টানে
বিদেশবাসী হাঁসের সারি
উড়েছে সেই পারের পানে।
ঘাটের পাশে ধীর বাতাসে
উদাস ধ্বনি উধাও আসে,
বনের ঘাসে ঘুম-পাড়ানে
তান তুলেছে কোন্ নূপুরে
মনের মাঝে অনেক দূরে।
নিচল জলে নীল নিকষে
সন্ধ্যাতারার পড়ল রেখা,
পারাপারের সময় গেল
খেয়াতরীর নাইকো দেখা।
পশ্চিমের ওই সৌধছাদে
স্বপ্ন লাগে ভগ্ন চাঁদে,
একলা কে যে বাজায় বাঁশি
বেদনভরা বেহাগ সুরে
মনের মাঝে অনেক দূরে।
সারাটি দিন কাজে
হয় নি কিছুই দেখাশুনা,
কেবল মাথার বোঝা ব’হে
হাটের মাঝে আনাগোনা।
এখন আমায় কে দেয় আনি
কাজ-ছাড়ানো পত্রখানি;
সন্ধ্যাদীপের আলোয় ব’সে
ওগো আমার নয়ন ঝুরে
মনের মাঝে অনেক দূরে।
এই কবিতাটি গীতিমাল্য কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ৪ সংখ্যক কবিতা। এর পর বাকী ১৫ দিনে শিলাইদহে থেকে রবীন্দ্রনাথ আরও ১৭টি কবিতা বা গান লেখেন। এর মধ্যে একটি গান—আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ। ১৪ চৈত্র, ১৩১৮ বঙ্গাব্দ। রচনার স্থান শিলাইদহ। ২৬শে চৈত্র ১৩১৮(এপ্রিল ৮, ১৯১২) বঙ্গাব্দেও তিনি শিলাইদহে। সেখান থেকে লিখেছেন—এবার আমায় ভাসিয়ে দিতে হবে আমার। এপ্রিল ১২, ১৯১২ তারিখে লিখছেন—এবার তোরা আমার যাবার বেলাতে। শিলাইদহে রচিত। তথ্য বলছে-- সে সময়ে রবীন্দ্রনাথ কলকাতায় নয়—শিলাইদহে ছিলেন।
তাহলে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে কেন গেলেন? কখন গেলেন? তার একটু হদিস নেওয়া যেতে পারে।
১৯ মার্চ ১৯১২ (৬ চৈত্র, ১৩১৮ বঙ্গাব্দ) ভোরে কলকাতা থেকে সিটি অব প্যারিস জাহাসে রবীন্দ্রনাথের ইংলণ্ড যাত্রার জন্য কেবিন ভাড়া করা হয়েছিল। সঙ্গী মেয়ো হাসপাতালের ডাঃ দ্বিজেন্দ্রনাথ মৈত্র। কবিকে বিদায় জানানোর জন্য বহু ব্যক্তি সেদিন জাহাজঘাটায় উপস্থিত। কবির জিনিসপত্রও জাহাজে উঠে গেছে আগের দিন।–কিন্তু ‘খবর এলো যে, কবি অসুস্থ; আসতে পারবেন না। ঐ গরমে উপর্যুপরি নিমন্ত্রণ-অভ্যর্থনাদির আদর-অত্যাচারে রওনা হ’বার দিন ভোরে প্রস্তুত হতে গিয়ে, মাথা ঘুরে পড়ে যান। ডাক্তাররা বললেন, তাঁর এ-যাত্রা কোনোমতেই সমীচীন হতে পারে না। রইলেন তিনি; আর ক্যাবিনে একা রাজত্ব করে, তাঁর বাক্স-পেটরা নিয়ে চল্লুম আমি একলা।‘ এটা লিখেছেন ডাঃ মিত্র।
রবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর পিতৃস্মৃতি গ্রন্থে লিখছেন—জাহাজ ছাড়বার আগের দিন রাত্রে স্যর আশুতোষ চৌধুরীর বাড়িতে বাবার নিমন্ত্রণ। কেবল খাওয়া দাওয়া নয়, সেই সঙ্গে ‘বাল্মিকীপ্রতিভা’ অভিনয়ের ব্যবস্থা হয়েছিল। দিনেন্দ্রনাথ বাল্মীকির ভূমিকায় অভিনয় করেন। অসুস্থ শরীরে বাবাকে অনেক রাত অবধি জাগতে হল। আমরা ঘরে ফিরলাম রাত করে। বাকি রাতটুকু বাবা না ঘুমিয়ে চিঠির পর চিঠি লিখে কাটিয়ে দিলেন। ভোরবেলা উঠে বাবার শরীরের অবস্থা দেখে আমরা ভয় পেয়ে গেলাম, ক্লান্তিতে অবসাদে যেন ধুঁকছেন। তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকতে হল।...জাহাজ আমাদের জিনিসপত্র সমেত যথাসময়ে পাড়ি দিল, কিন্তু আমাদের সে যাত্রা আর যাওয়া হল না।‘
আকস্মিকভাবে যাত্রা পণ্ড হয়ে যাওয়ায় খুব বেদনা পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি ২১ মার্চ ১৯১২ (৮ চৈত্র ১৩১৮ বঙ্গাব্দ) তারিখে ডাঃ দ্বিজেন্দ্রনাথ মৈত্রকে লেখেন—‘আমার কপাল মন্দ—কপালের ভিতরে যে পদার্থ আছে, তারও গলদ আছে—নইলে ঠিক জাহাজে ওঠবার সুহুর্তেই মাথা ঘুরে পড়লুম কেন? অনেক দিনের সঞ্চিত পাপের দণ্ড সেইদিনই প্রত্যুষে আমার একেবারে মাথার উপরে এসে পড়ল। রোগের প্রথম ধাক্কাটা তো একরকম কেটে গেছে। এখন ডাক্তারের উৎপাতে প্রাণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। লেখাপড়া নড়াচড়া প্রভৃতি সজীব প্রাণীমাত্রেরই অধিকার আছে, আমার পক্ষে তা একেবারে নিষিদ্ধ।...’
২৪ মার্চ ১৯১২ (১১ চৈত্র ১৩১৮ বঙ্গাব্দ) বিশ্রামের উদ্দশ্যে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে রওনা হন। ঠাকুরবাড়ির ক্যাশবহিতে লেখা আছে, শ্রীযুক্ত রবীন্দ্র বাবু মহাশয় ও শ্রীযুক্ত রথীন্দ্র বাবু মহাশয় ও শ্রীমতি বধুমাতাঠাকুরাণী সিলাইদহ গমনের ব্যায় ৩৭৯ নং ভাউচার ১১ চৈত্র ১৫।।৩।. পরদিন সোমবার ১২ চৈত্র ২৫ মার্চ ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ মৌচাক পত্রিকার সম্পাদক সুধীরচন্দ্র সরকারের ভগ্নী কাদম্বিনী দত্তকে (১২৮৫—১৩৫০ বঙ্গাব্দ) এক চিঠিতে লেখেন—এখনো মাথার পরিশ্রম নিষেধ। শিলাইদহে নির্জ্জনে পালাইয়া আসিয়াছি।
কোথায় কলকাতার গড়ের মাঠ?--আর কোথায় শিলাইদহ!! তাহলে ২৮ মার্চ ১৯১২ খ্রীস্টাব্দ তারিখে রবীন্দ্রনাথ কি করে শিলাইদহ থেকে অসুস্থ শরীরে কলকাতার গড়ের মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সভায় উপস্থিত ছিলেন? প্লেনে করে? এটা কি অব মেজর জেনারেল আব্দুল মতিন খোয়াবে দেখেছিলেন? আর সেই খোয়াবের অংশীদার ছিলেন দি নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর?
ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন জানাচ্ছেন-- রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট বার্ষিক অধিবেশনের (২৮-২৯ জুন, ২০১১) আলোচনায় আসে। অধ্যাপক ফকরুল আলমের কথার অংশ থেকে লিখছি..."রবীন্দ্রনাথ একসময় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বিরোধী ছিলেন ....কিন্তু....চারপাঁচ বছর পর তার পুরানো পজিশন পরিবর্তন করে ফেলেছিলেন। ....অবশ্যই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গ্রহণ করেছেন বলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মাননায় এসেছিলেন।....যারা ইতিহাসকে এক জায়গায় রেখে দেয় তারা ইতিহাসকে বিকৃত করে, তারা সত্যকে বিকৃত করে।...." (কার্যবিবরণী, পৃ:১৭৮)।
এই ইতিহাসবিকৃতি বাংলাদেশে রবীন্দ্রবিরোধিতারই একটি নমুণা। নিছক মিথ্যা তথ্য। গোয়েবলসের সূত্রে তথ্যটি তৈরি হয়েছিল গোপনে--করেছিলেন একজন পাকিপন্থী লেখক। প্রকাশক ইসলামী ফাউন্ডেশন। আর তা বইতে লিখেছেন মেজর জেনারেল আব্দুর মতিন। এবং এ বছর রবীন্দ্রনাথের আর্তদশতবার্ষকীর লগ্নে টেলিভিশনের পর্দায় জনগণের উদ্দেশ্য প্রকাশ করছেন--দি নিউ এজ পত্রিকার স্বনামধন্য সম্পাদক নূরুল কবীর। একজন সম্পাদক যখন কোনো তথ্য বলেন--তাকে মিথ্য ধরাটা কঠিন। তারা মহৎ সত্যের ধারক। এইভাবে একটি অসাধু মিথ্যা মহৎ সত্য হয়ে ওঠে। সে সত্য দুঃস্বপ্নের চেয়েও ভয়ঙ্কর।
সূত্র .
---------
এ জেড এম আব্দুল আলিম :
বাঙালি মুসলমান : চণ্ডী প্রসাদ সরকার।
ঢাকায় রবীন্দ্রনাথ :
দি মুসলিম বি. বি হোম (পল) কনফিডেনসিয়াল ফাইল নং ২৯০ অব ১৯১২, সিরিয়াল নং ১৪।
অন্য আলোয় দেখা : চতুর্থ পর্ব
[url= http://www.facebook.com/note.php?note_id=10150273070090338]অন্য আলোয় দেখা--৩ : শান্তি নিকেতনের শান্তিরহস্য[/url] :
ফেসবুকে প্রথম পর্ব- -
রবিজীবনী--প্রশান্তকুমার পাল, ষষ্ঠ খণ্ড, প্রকাশক-- আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।
রবীন্দ্রনাথের আত্মীয়স্বজন--সমীর সেনগুপ্ত।
পিতৃস্মৃতি--রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
মন্তব্য
দশ চক্রে রবি বুড়ো ভূত হলেন দেখছি!
যাই হোক, আপনার লেখাটা ভালো লেগেছে। এই বিষয়ে আপনার আরো কয়েকটি লেখা নেট ঘেঁটে পড়েছি। সবগুলোকে একসাথ করা দরকার। অনলাইনে এই যুক্তিখন্ডন জারি থাকুক। তবে সেই সাথে প্রিন্ট মিডিয়াতেও লেখাটা ছাপা হওয়া জরুরী মনে করছি।
আরেকটা কথা, রবীন্দ্রনাথ না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট. উপাধি গ্রহণ করেছিলেন? সেই সাথে যতদূর জানি ১৯২৬ সালে একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। যদি বিরোধিতা করে থাকেন তবে ক্যাম্নে কী???
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
এরা সব মিথ্যার ক্ষেত্রে একই প্যাটার্ন ফলো করে। যথার্থ।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
কবীর সাহেবের সাথে বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা, এবং দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি - আমাদের দেশে পত্রিকার সম্পাদকদেরকে ‘বুদ্ধিজীবী’ এবং ‘জাতির বিবেক’ জাতীয় কিছু ভাবা আমাদের আহাম্মকির লক্ষণ ছাড়া কিছু না। এসব মানুষ অবলীলায় মালিকপক্ষ বা পছন্দের রাজনৈতিক দল বা নিজের স্বার্থে খবরের পরিবেশন পাল্টে দিতে পারেন - ফ্রন্ট পেইজ নিউজের ঠাঁই হয় শেষ পাতায়, বা হয়তো পরের দিনের কাগজে।
কবীর সাহেব রবীন্দ্রবিশারদ এমনটা কখনো শুনিনি।
মিথ্যুকদের মুখে ঝামা ঘষে দেয়া টাইপ লেখা। এই লেখাটা অবশ্যই প্রিন্ট মিডিয়ায় আসা উচিত।
রবির ঢাবি বিরোধিতার বিরোধিতার বিরোধিতা ভালৈছে
এসব অসত্য কথন হালে পানি পাবে না!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
শাবাশ
ধন্যবাদ পড়ার জন্য। কবির সাহেব রবীন্দ্রবিশারদ নয়। নয় বলেই এইসব কথাবার্তা অপপ্রচার ধুম করে বেলে ফেলা যায়। ট্যাকসো লাগে না। আর আমাদের দেশে কারো তো বিশারদ হওয়ার দরকার নেই। কপচানিটা জানলেই হল। আর হাওয়া বুঝে পাল তোলার কায়দা জানা দরকার। সেটা কবীর সাহেবরা জানেন। মুশকিল হল--এর ফাঁক দিয়ে মিথ্যেটা সত্যি হয়ে দাঁড়ায়। দেখবেন আগামীতে এই কবীর সাহেব হয়তো প্রেস ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান নিয়োগ পাবেন। আসিফ নজরুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এমন মিথ্যাচার সহ্য করা যায় না। আমাদের অতি পরিচিত জামাতপন্থী ছাগুরা এখন রবীন্দ্রনাথকে ছেড়ে নজরুলকে নিয়ে মাঠে নেমেছে। তাদের মতে নজরুল পরে যে হিন্দু মহিলাকে বিয়ে করেছেন তিনি নাকি ধুতরা বা এইরকমই কোন বিষাক্ত ফুলের রস খাইয়ে নজরুলকে অসুস্থ করে ফেলেন! ঐ বিষ পানের ফলেই নাকি নজরুল দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন।
ছাগুদের এইসব কথা শুনে হাসব নাকি কাঁদব? লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা পাই না।
দীপাবলি।
এই বিষয় নিয়ে লেখেন। আমাদের দেশে নজরুলের অবস্থা তো আরও করুণ। তমুদ্দুন পন্থীরা পাকিস্তান আমলে নজরুলকে ছেচতে বাকি রাখে নাই। গোলাম মোস্তফাতো রবীন্দ্রনাথে ইসলামের সঙ্গে কিছু মিলমিশ খুঁজে পেয়েছিলেন। কিন্তু নজরুল--কাফির।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
নূরুল কবীর যতই দিন যাচ্ছে, খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন। প্রথমে উদারপন্থী এবং প্রগতিশীল মনে হলেও আসলে উনি ফরহাদ মজহার আর শফিক রেহমানের মতোই উগ্র ডানপন্থী।
১৯১২, ২৮ এপ্রিল গরেরে মাঠে কি হয় ছিল তা কলকাতার পত্রিকা গবেসনা করে পাওয়া জেতে পারে।
এই তথাকথিত প্রগতীশীল ছাগু গুলা মওদূদী রে গুরু আর গোয়েবলস রে প্রচার গুরু হিসেবে দেখে সেই পুরান স্টাইলে অপপ্রচার চালাইতাছে... মাঝখানে যে ৬০,৭০ বছর গ্যাছা গা...দুনিয়া যে আগাইছে... সেই হুশ আর নাই...তা থাকার কথাও না...কারণ ঐ মালগুলিরে গুরু মানলে তো টাইম মেশিন আইন্যা দিয়াও লাভ নাই এই মাদারি ছাগু গুলারে ...তাতে কইর্যাও ওরা পিছাইতে চাইব...আগাইবো না...আপনার পোস্টের জন্য
তবে কিছু তারিখ নিয়ে লেখায় গোলমাল হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। ঠিক করে দিলে ভাল হতো।
"......১৯১২ সালের ২৮শে মার্চ কলিকাতা গড়ের মাঠে ....." আমরা দেখব ২৮শে মার্চ রবি (একটেল না কিন্তু ) কোথায় ছিলেন। ২৪শে মার্চ কবি শিলাইদহে রওনা হন। পরদিন "১৫ই মার্চ ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ মৌচাক পত্রিকার .............।" এরপর "তাহলে ১৮ই মার্চ ১৯১২ খ্রিস্টাব্দ তারিখে রবীন্দ্রনাথ কি করে ......... "
প্রিয় কালো কাক, আপনাকে ধন্যবাদ। আমার টাইপোর কারণে ২ শব্দটির বদলে ১ হয়ে গিয়েছিল। আপনার তীক্ষ্ণ পাখির চোখে সে ভ্রান্তি ধরা পড়েছে। সেজন্য এখন সম্পাদনা করে দিলাম। আপনাকে ধন্যবাদ।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
যদিও বুঝা যাচ্ছিল টাইপো কিন্তু কদিন পর দেখা যাবে এটা কে কোথায় রেফারেন্স দিবে "রবিপ্রেমীরা কিভাবে অসত্য বলে"।
রবীন্দ্রনাথ ভালো কবি / লেখক হলেও লোকটা ভালো না। ও জমিদার পুত্র ছিলো বলে কাজ কাম নাই, তাই গান, কবিতা, এই সব লিখত। সে ইন্ডিয়ার লোক, সো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পতিষ্ঠার বিরোধিতা তো করতেই পারে, এইটাই স্বাভাবিক। আর হিন্দু মানুষ তো ভালো কিছু চাই না, তাই সে চাই নাই যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পতিষ্ঠা হোক। আই হেট হিম। আপনারা কী বলেন?
জানিনা কোনটি সত্য, কোনটি মিথ্যা। আমাদের মত সাধারণ মানুষেরা কোথায় সত্য মিথ্যা খুজিব।
জ্ঞানী ভাইয়েরা আপনারা দয়া করে ইতিহাস কে নিজের মত করে ব্যবহার করবেন না।
নতুন মন্তব্য করুন