সাত চল্লিশে দেশভাগের কারণে অনেক হিন্দু দেশত্যাগ করে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। ভারত থেকে অনেক মুসলমান পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানে চলে এসেছিলেন। যারা দেশত্যাগ করেননি, তারা এই দেশবিভাজনের রাজনীতিটাই মানেননি। তারা জানেন যে, দেশটি তাদের জন্মভূমি। এই দেশের আলো হাওয়ার মাটির সঙ্গে তাদের যোগ। যে দেশভাগ হচ্ছে--যে দেশত্যাগ করতে হচ্ছে তার সঙ্গে মনুষ্যত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। মনুষ্যত্ব হচ্ছে--মানুষে মানুষে মিলন। মানুষে মানুষে সম্প্রীতি। এই দেশভাগ তখনকার মানুষের জন্য ছিল একটি সমষ্টিগত বিষাদময়তার শুরু। যার শুরু আছে-- শেষ নেই।
এই সম্প্রীতির আকাঙ্ক্ষাতেই অনেক হিন্দু পাকিস্তানে থেকে গেছেন। অনেক মুসলমান ভারতে থেকে গেছেন। তারা ভেবেছেন, সম্প্রীতির উদার হাওয়া নির্মল করে সকলের মলিন মর্ম মুছায়ে দেবে। দুস্বঃপ্নই শেষ কথা নয়। অতীন বন্দ্যাপধ্যায়ের নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে, সমীর সেনগুপ্তর বিষাদ বৃক্ষ বা সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, হাসান আজিজুল হকের সেই রক্তক্ষরণকারী উপন্যাস বা গল্পের প্রতিটি অক্ষরে সেই মর্মন্তুদ হাহাকার রচিত আছে।
কিন্তু পাকিস্তানে রাজনৈতিক কারণে সৃষ্ট সা্ম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা, বৈষম্য, নির্যাতন, নিপীড়ন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, শত্রুসম্পত্তির ছোবলে সম্পত্তি হারানো, একাত্তরে লক্ষ লক্ষ বাঙালি হত্যার শুরুতেই হিন্দু নির্মূল, দেশত্যাগে বাধ্য করার মত ঘটনাগুলোও হিন্দুদেরও নিজদেশে বসতের আকাঙ্ক্ষাকে দমিত করতে পারেনি। দেশ স্বাধীনের পরে কোনো কোনো আওয়ামী লীগারের মুখ থেকে তাদের শুনতে হয়েছে--বেল পাকিলে কাকের কি? তারপর থেকে মানুষ নয়--নাগরিকও নয়--- হিন্দুদের কাক হয়েই থাকতে হয়েছে।
আর পঁচাত্তরের পনেরই আগষ্টের পর থেকেই রাষ্ট্রের সেই পাকিস্তান-যাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে আবার হিন্দুরা দমন পীড়ন, দেশত্যাগ, খুন জখমের শিকার হয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনই দুঃস্বপ্নের মত হিন্দুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সুবিধাবাদি ধান্ধাবাদি সাম্প্রদায়িক দলগুলো। বিএনপি জামাত কর্তৃক পরিচালিত নির্বাচনোত্তর হিন্দুদের উপর সন্ত্রাস একাত্তরেরই পূনরাবৃত্তি করেছে। ভোটের খেলায় হিন্দুরা হচ্ছে বলির পাঠা। সেটা বিএনপির কাছেও, জামাতের কাছেও, জাতীয় পার্টির কাছেও--আওয়ামী লীগের কাছেও। আজ বাংলাদেশে হিন্দুরা প্রাচীনবংশের নিঃশ্ব সন্তান।
ভারতেও একই চিত্র মুসলমানদের ভাগ্যে। এই-ই ইতিহাস। এই-ই পাতিহাস। এ্ই-ই পরিহাস। সারা বিশ্বেই সংখ্যালঘুদের কপালের লিখন। এরা কলে পড়া ইঁদুর। এদের দেশপ্রেম, ত্যাগ তিতিক্ষা আজও প্রশ্নবিদ্ধ।
অথচ বাংলাদেশের সকল সাধারণ মানুষ-- তিনি হিন্দু কি মুসলমান, খ্রীস্টান কি বৌদ্ধ কেউই কোনো অর্থে সাম্প্রদায়িক নয়--সুস্থ-সুন্দর ও শুভর পক্ষের শক্তি। সম্প্রীতির ঐতিহ্য নিয়ে সবাই বসবাস করছে। তা না হলে এই দেশে সংখ্যালঘুরা রাষ্ট্রীয়-অরাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়াশীল ও সাম্প্রদায়িক অশুভ গোষ্ঠী কর্তৃক পরিচালিত এই ভয়াবহ সন্ত্রাসকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশকে নিজের দেশ মনে প্রাণে ভেবে নিয়ে মাটি কামড়ে থাকতে সাহস পেত না। সম্মিলিতভাবে অশুভ শক্তিকে মোকাবেলা করেই সবাই বেঁচে-বর্তে আছে। বাংলাদেশে এই প্রতিক্রয়াশীল-সাম্প্রদায়িক অপশক্তিরা কিন্তু সংখ্যায় বেশি নয়। কিন্তু তারা অর্থ, অস্ত্র আর ক্ষমতা, মিডিয়াসন্ত্রাসের মাধ্যমে তাদের অশুভ শক্তি বাড়ানোর অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। এটাই আশঙ্কার দিক। তবে সকল শুভশক্তি এই অশুভ শক্তিকে অতীতে রুখেছে। ভবিষ্যতেও রুখবে। এটাই সত্যিকারের ইতিহাস। এ্টাই বাস্তবতা। এটাই আশা-ভরসার দিক।
আজ এক বাংলাদেশী যুক্তিবাদি বিবর্তনবাদি কোনো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ প্রমাণ ছাড়াই বাংলাদেশী সকল হিন্দুর গণচরিত্র নির্ধারণ করে ফেসবুকে নিচের স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসদাতা বহুগ্রন্থের লেখক। কিছু লোকজন নিয়ে দেশে একটা কট্টরবাদি যুক্তিবাদি গ্রুপ দাঁড় করার চেষ্টাও করছেন। একটি মুক্তমন ধরনের বাংলা ব্লগও পরিচালনা করছেন। সাধু প্রচেষ্টা। কিন্তু এই যুক্তিবাদ যখন কেবলমাত্র তাত্ত্বিকতার কেঠোপনায় মত্ত হয়ে যায় তখন যুক্তিবাদও মৌলবাদিতায় রূপান্তরিত হয়ে পড়ে। এই কারণে এই স্ট্যাটাসদাতার মত জনপ্রিয়ধারার গা ভাসানোয় প্রত্যাশী লোকের এই রকম দায়িত্বজ্ঞানহীন স্ট্যাটাস অনেক তরুণকে বিভ্রান্ত করতে পারে। আর পারে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদিকে অশুভ শক্তিকে উৎসাহিত করতে। এলেবেলে কেউ স্ট্যাটাস দিলে মাথাব্যাথা ছিল না।
তিনি লিখেছেন--
--------------------------------------------------------------------------------
আহমদ ছফা 'বাঙালি মুসলমানের মন' নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, আমি চিন্তিত 'বাংলাদেশী হিন্দুদের মন' নিয়ে-
১) ইহারা সর্বদা বিএনপি এবং জামাতের সমালোচনা করিবে, কিন্তু হাছিনা/ ছাত্র্রলীগের সোনার ছেলেদের নিয়া কুত্রাপি মুখ খুলিবেনা।
২) সব দোষের গোঁড়া হিসেবে ইসলাম আর মুস্লিমদের দেখিতে পাইবে, কিন্তু নিজ ধর্ম নিয়া মুখে কুলুপ আঁটিয়া থাকিবে।
৩) রবীন্দ্রনাথের বিষ্ঠা পাইলেও উহা চাটিয়া খাইবে, কোনরূপ খারাপ গন্ধ নাকে আসিবে না।
৪) উপরের তিনটির ব্যতিক্রম কাউকে পাইলে তিনি হইবেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী রাজাকার ছাগু।
দুটো প্রশ্ন জেগেছে এই স্ট্যাটাস পড়ে--
-----------------------------------------
১. যে অভিযোগ তুলে পাকিস্তানী হানাদার এবং রাজাকার বাহিনী হিন্দুদের নিধন, নিপীড়ন ধর্ষণ, দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল সেটাই কি সত্য ছিল?
২. একাত্তরে গোলাম আযম বা ইয়াহিয়া বা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীরা যে সাম্প্রদায়িক বিষকথা বলে থাকে বা বলে চলেছে--তাদের সঙ্গে এই যুক্তিবাদি বিবর্তনবাদির কথার অমিল কোথায়?
মন্তব্য
এই ধরণের যুক্তিবাদী বিবর্তনবাদী অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
এরকম সরলীকরণ অবশ্যই প্রশ্ন তুলে।
কিন্তু আপনার পোস্টের আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। ফেইসবুকে কেউ একজন স্ট্যাটাস দিয়েছে সেইটা আলোচনা করছেন, আবার তার নাম উহ্য রেখে, কোন পূর্ব প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই। কতজন ফেইসবুকে কত রকমের স্ট্যাটাস দেয়, সেগুলো প্রেক্ষাপট ছাড়া হঠাৎ উল্লেখ করলে পাঠকের বুঝতে অসুবিধা হয়।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ফাহিম, দেখুন তিনিতো সাধারণ ফেসবুক সদস্য নন। তার পরিচয় দিয়েছি--তিনি যুক্তিবাদি, বিবর্তনবাদি। তিনি একটি ব্লগের এডমিনও বটে। বহু গ্রন্থের প্রণেতা। যুক্তিবাদি-বিবর্তনবাদি তরুণ প্রজন্মকে একটি গ্রুপে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। এই স্ট্যাটাসটা এলেবেলে কেউ দিলে কোনো মাথা ব্যাথা ছিল না। এই মন্তব্য থেকে তরুণ প্রজন্ম বিভ্রান্ত হতে পারে। আর সাম্প্রদায়িক-প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তি উৎসাহিত হতে পারে। এটাকে রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করতে পারে।
অথচ আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে--
অথচ বাংলাদেশের সকল সাধারণ মানুষ-- তিনি হিন্দু কি মুসলমান, খ্রীস্টান কি বৌদ্ধ কেউই কোনো অর্থে সাম্প্রদায়িক নয়--সুস্থ-সুন্দর ও শুভর পক্ষের শক্তি। সম্প্রীতির ঐতিহ্য নিয়ে সবাই বসবাস করছে। তা না হলে এই দেশে সংখ্যালঘুরা রাষ্ট্রীয়-অরাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়াশীল ও সাম্প্রদায়িক অশুভ গোষ্ঠী কর্তৃক এই ভয়াবহ সন্ত্রাসকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশকে নিজের দেশ মনে প্রাণে ভেবে নিয়ে মাটি কামড়ে থাকতে সাহস পেত না। সম্মিলিতভাবে অশুভ শক্তিকে মোকাবেলা করেই সবাই বেঁচে-বর্তে আছে। বাংলাদেশে এই প্রতিক্রয়াশীল-সাম্প্রদায়িক অপশক্তিরা কিন্তু সংখ্যায় বেশি নয়। কিন্তু তারা অর্থ, অস্ত্র আর ক্ষমতা, মিডিয়াসন্ত্রাসের মাধ্যমে তাদের অশুভ শক্তি বাড়ানোর অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। এটাই আশঙ্কার দিক। তবে সকল শুভশক্তি এই অশুভ শক্তিকে অতীতে রুখেছে। ভবিষ্যতেও রুখবে। এটাই সত্যিকারের ইতিহাস। এ্টাই বাস্তবতা।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
আপনি কিসের ভিত্তিতে অনুমান করে নিয়েছেন ইঙ্গিত দিলেই পাঠক বুঝে যাবেন অভিজিৎ রায়ের কথা? আমি নিজেই তো বুঝি নাই। আপনি নাম না নিয়ে কেন ইঙ্গিতে কথা বললেন তা স্পষ্ট নয়। নীচের মন্তব্যগুলো লক্ষ্য করুন, আপনি অভিজিৎ রায়ের অনুমতি নিয়েছেন কিনা তা পোস্টে উল্লেখ করেন নাই - যা কিনা আপনার পোস্টকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করতে চান, অতি উত্তম, কিন্তু তার আগে প্রাথমিক বিষয়গুলো পরিষ্কার করুন।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আপনার এই যুক্তিবাদী বিবর্তনবাদী কি বরবাদ ধ্বজহার, ইয়াসিফ বদরুল, বা জড়ুল দবিরের গোত্রের কেউ নাকি ? বা তাদের অনুসারী ? শৃগাল যতই সিংহের বেশ পরে ভেক ধরুক, মুখ খোলা মাত্রই মাত্রই চিনতে আর বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় না কে শিয়াল ! কেননা - সব শিয়ালের এক রা - হুক্কা হুয়া হুক্কা হুয়া !
যাইহোক, ওনার ৪টা অভিযোগের ৪টাই মিথ্যা এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার সাথে আরো বলা যায় যে, প্রথম ২টা যদি সত্য হতও - তাহলেও বোধহয় সেটা দোষনীয় কিছু হত না বিদ্যমান বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। একটা প্রায় জিম্মীতে পরিনত হওয়া নিরুপায় মাইনরিটি কম্যুনিটিকে অনেক সময় কিছু কিছু বিষয়ে মুখ বুঁজে থাকতে বাধ্য হতে হয় - একদম বাস্তব অস্তিত্ত্বের স্বার্থেই। এটাকে একধরনের আনঅফিসিয়াল 'জিজিয়া কর'-ও বলা যেতে পারে হয়তো। পৃথিবীর অনেকদেশের সংখ্যালঘুরাই এই ধরনের জিজিয়া কর দিতে বাধ্য হন বেঁচে থাকার প্রয়োজনে। সমালোচনাকারীরা যদি দেশজুড়ে এমন গ্যারান্টিড ও প্রমানযোগ্য স্থায়ী পরিবেশ ও পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেন যে, যে কোন বিষয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে 'মুখ খুললে' ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে পড়তে হবে না -- তখনই শুধু এমন প্রশ্ন লেজিটিমেট হবে এবং একটা উত্তর অন্তত মেরিট করতে পারবে। তার আগে না। ১ম প্রশ্নের ব্যাপারে বলাই বাহুল্য - এ দোষে পৃথিবীর সব ধর্মানুসারীরাই সমান ভাবে দুষ্ট। বিশেষ করে যদি তারা একই ভূখন্ডে বসবাসকারী বা প্রতিবেশী কম্যুনিটি হয়, তাহলে তো আরও। সমালোচনাকারী খুব সহজেই এই বাক্যে ব্যবহৃত ধর্মনামটা বদলে 'হিন্দুধর্ম' ও 'হিন্দুদের' লিখতে পারতেন। তাতে বিন্দুমাত্র ভুল তো হতোই না, বরং বোধহয় একটু বেশিই সঠিক হতো। ৩য় সমালোচনাটা উত্তরের অযোগ্য। এটা প্রশ্ন বা সমালোচনাও না, স্রেফ কুৎসিত গালাগালি। এটুকু শুধু বলা যেতে পারে যে, এই বক্তব্য শুনে কে বা কারা যে আসলে বিষ্ঠাখেকো ছাগু সেটা আর বুঝতে বাকি থাকে না।
****************************************
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
এই স্ট্যাটাসের বিপরীতে দেয়া আপনার স্ট্যাটাসটা তুলে দিলেই পারতেন। সেটার জন্য অভিজিৎ রায়ের চার নম্বর কমেন্ট অক্ষরে ফলে!
পোস্ট ভালো লাগেনি। কারণ, ছফা যেমন বাঙ্গালি মুসলমানের মন লিখে সব মুসলমানকে আলাদাভাবে পারসোনিফাই করতে পারেন নি- বেশিরভাগকে করেছেন, আর অভিজিৎ রায় তো বেশিরভাগের ব্যাপারে বলেছেন বলে আমার ধারণা- কিন্তু তিনি হিন্দু পরিবারেই জন্ম নিয়েছেন।
অভিজিৎ রায়ের মত আমিও হিন্দু পরিবারে জন্ম নিয়েছি। আমার বাবাও তাই। মাও হিন্দুপরিবাবর থেকেই এসেছেন। আমার ঠাকুরদাও তাই। তার ঠাকুরদাও হিন্দু। সুতরাং তারাতো কেউ অভিজিৎ রায়ের মত বালখিল্য মন্তব্য করেছেন বলে মনে হয় না।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
আলাপের সুবিধার্তে বলে নেয়া ভালো, আলোচ্য ফেসবুক স্ট্যাটাসটা মুক্তমনার অভিজিৎ রায়ের মস্তিষ্কপ্রসুত।
সরলীকরণের অভিযোগের পাশাপাশি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এজাতিয় মানষিক সংকটের গড় মান নিয়ে আলোচনার সুযুগ রয়েছে।
অভিজিৎদাকে খানিকটা চিনি বলে স্ট্যাটাস আবার পড়ে হেসে ফেললাম। স্রেফ ঠাট্টা ধরণের ব্যাঙ্গ করেছেন বলে মনে হয়।
সেক্ষেত্রে অবশ্য এটা ঠাট্টা-তামাশা বা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ জাতীয় কিছু হবে বলেই মনে হয়।
****************************************
ইদানিং ইসলামের সমালোচনায় হিন্দুদের অংশগ্রহণ করার বাড়াবাড়ি আগ্রহ কিন্তু নিজের ধর্মের সমালোচনা হলে নিরুৎসাহ দেখে উনি এই স্ট্যাটাস দিয়েছিএলেন যা অনেকটাই ব্যাঙ্গাত্মক। লেখক বোধ হয় আলোচ্য শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ব্যঙ্গটি বুঝতে পারেননি।
আমি অবাক হলাম- সচলায়তনে এমন পোস্ট আসে!!
পড়াশোনার জন্যে ভারতে ছিলাম দীর্ঘদিন।সেখানে আমার পরিচয় ছিলো আমি বাংলাদেশী।অথচ নিজ দেশে আমার পরিচয় আমি হিন্দু।
এতো কষ্ট সয়ে। দেশের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে থেকেও এ দেশে পড়ে আছি কেন?ভালোবাসি বলেই তো!
তবু আমাদের এতো দুর্নাম।
বিমান ধর
অভিজিৎদা তো সচলেও আছেন, আশা করি তিনিই ব্যাখ্যা করবেন...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমি চাইনা উনি ব্যাখ্যা করুন নজরুল ভাই।
এই পোস্টটি উনি ওনার ফেসবুকে দিয়েছিলেন। সেখানেই যথেষ্ট তর্ক হয়েছে/হচ্ছে। উনি সেখানেই তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। লেখক ওনার সেই ব্যক্তিগত পরিমণ্ডলের কথা পাবলিকলি প্রকাশ করে যথেষ্ট নিন্দনীয় কাজ করেছেন। ওনার এই কাজের জন্য অভিজিৎ'দা কে কেন উনি কী বলেছেন বা না বলেছেন সেটার ব্যাখ্যা দিয়ে বেড়াতে হবে! তাঁর তো একাউন্ট আছেই। এই বিষয়টা তিনি পাবলিকলি আলোচনা করতে চাইলে তো নিজেই তা করতে পারতেন।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
সহমত।
লেখক যদি অভিজিৎ'দার অনুমতি সাপেক্ষে উনার স্ট্যাটাস এইখানে প্রকাশ করে থাকেন তাহলে আলোচনা চলতে পারে, পোষ্ট লেখাও ঠিকাছে। কিন্তু কারো অনুমতি ছাড়া কেউ কারো ব্যক্তিগত আলাপ/আলোচনা পাবলিক ফোরামে দেওয়াটা নিন্দনীয় কাজ। আশা করবো পোষ্ট লেখক বিষয়টা পরিষ্কার করবেন উনি অভিজিৎ'দার অনুমতি নিয়েছিলেন কিনা উনার স্ট্যাটাস প্রকাশের আগে। যদি উনি মূল স্ট্যাটাসধারীর অনুমতি নিয়ে না থাকেন, তবে আশা করবো মডুগণ লেখককে কপিরাইট বিষয়ে সতর্ক করবেন এবং লেখাটি সরিয়ে নিবেন। আমার জানামতে সচলে কপিরাইট বহির্ভুত বিষয় সংরক্ষণ করা হয় না।
বন্ধু তালিকায় থাকলেই যে কারো ব্যক্তিগত ছবি/ বা কমেন্ট বা স্ট্যাটাসের সত্বাধিকার পেয়ে যায় না, কেউ কেউ এই সহজ বিষয়টা বুঝতে পারে না। এমন ব্যক্তি পাওয়া মাত্রই বুন্ধু তালিকা হতে গদাম দেই। আমি এই সব ব্যাপারে অনড়।
দেখা যাক, অভিজিৎ রায় এখানে কি বলেন....
অভিজিৎ রায় এখানে কিছু না বললে কী হবে? উনি এখানে আলোচনাটা শুরু করেন নি, এখানে এসে ব্যাখ্যা দিতেও তিনি বাধ্য নন।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
ভারতে শিখ সম্প্রদায়ের কথা সবাই জানেন। ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পরে তাদের ওপরে কি ভয়াবহ অত্যাচার চলেছিলো সেটাও নিশ্চয়ই জানেন। খালিস্তান আন্দোলনের ভয়াবহ ব্যর্থতা, দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পরেও আজ তারা ভারতবর্ষের সবচেয়ে অগ্রসর অংশগুলোর একটি(গড়পড়তায় পারসীদের পরেই- ব্যবসায় ও বাণিজ্যে)। এবং এখনো তাদের পথ মসৃণ হয়নি, উগ্র হিন্দুদের কোপে এখনো তারা প্রায়ই পড়ে। তবুও কেন এই উন্নতি?
কেন? কীভাবে?
আহমদ ছফার তফসীলী সম্প্রদায়(ভারতীয় সংবিধানের ভাষায় শিডিউল কাস্ট, অচ্ছুৎ শ্রেণী) নিয়ে লেখা একটি প্রবন্ধে খুব ভালোভাবেই এর পেছনের কারণটি তুলে ধরেছিলেন। বাংলাদেশের বর্ণশ্রেষ্ঠ সনাতন ধর্মীদের বেশিরভাগই ৪৭ এর পরে সব ঝেড়ে ফেলে চলে গেছেন এই দেশ ছেড়ে(শুধু গোয়াল ভরা গরু আর গোলা ভরা ধানের এক ইউটোপিয়ান স্মৃতি মাথায় রেখেছেন এখনো।) বাকি যেসব অন্ত্যজ শ্রেণিকে ফেলে রেখে গেছেন(আমাকে আবার বর্ণবাদের দোষ দেবেন না প্লিজ, কায়েত, ভঙ্গজ, সাহা রা এমন আহামরী উঁচুবর্ণের কিছু নয়, দাশ, জলদাশ, ডোম, চণ্ডাল, চাঁড়াল তো অনেক দূরের বাত!) তারা প্রায় ফি বছরই অসহ্য রকম অত্যাচারের মুখে পড়েও এই দেশ ছেড়ে যান নি কি নিছক দেশপ্রেমের মায়ায়? নাকি যাওয়ার জায়গা নেই বলে? নাকি গেলেও একই অবস্থা হবে বলে? আচ্ছা কেউ কি আমাকে একটা উদাহরণ দিতে পারবেন যে বাংলাদেশে দাঙ্গার প্রতিবাদে(৪৭, ৬৪, ৯১, ৯২, ২০০১) কোলকাতায় আপামর জনগণের দ্বারা কোন মিছিল কখনো হয়েছিলো কী না?(খাস বাঙাল জ্যোতিবাবু থাকা সত্ত্বেও?) যেখানে ফিদেল ক্যাস্ট্রো হাঁচি দিলেও পুঁজিবাদী ষড়যন্ত্রে মিছিলের বন্যা বয়ে যায়? না, আমার জানামতে একটাও হয় নি। কারণ আক্ষরিক অর্থেই বাংলাদেশ- বাংলাদেশের জনগণ-হিন্দু-মুসলিম নিয়ে সেখানকার কেউ মাথা ঘামায় না। ওয়েল, বিজেপির দালালগুলো বাদে; আমাদের জামাত যে কারণে কাশ্মীর নিয়ে নাকি কান্না কাঁদে ঠিক একই কারণে, ধর্মীয় স্বার্থোদ্ধার। কিন্তু মন থেকে? বা বাঙালীত্বের টান থেকে কোনো মিছিল?
১৯৭১ থেকে ১৯৭৭, এই কবছরের মধ্যেই হার্ড লাইনে চলে গিয়েছিলো চাকমারা সংখ্যানুপাতে এক্কেবারেই মামুলী হওয়া সত্ত্বেও!(ওয়েল ইন্দিরাজির সাহায্যকে ধরেও বলছি) আর এই অর্ধ শতাধিক বছর পরেও বাংলাদেশের সনাতন সম্প্রদায় নিজেদের রক্ষার জন্য তেমন কিছুই করতে পারেনি?? না পারলে কারণটা কি? শিখরা কেন/কীভাবে পেরেছে? পার্থক্যটা কোথায়? শিক্ষা-দীক্ষায় কি তারা অনেক পিছিয়ে আছে অন্য ধর্মালম্বীদের চেয়ে বাংলাদেশে? চাকরী-বাকরী ব্যবসা বাণিজ্যে কি একেবারেই নিচের স্তরে আছে? এ দেশের সকল মুসলিমই কি জামাতি চরিত্রের? চান্স পেলেই দাঙ্গা বাঁধিয়ে দেয়? সবসময় গালিগালাজের উপরে রাখে? নাকি সনাতনরা সবাইই গান্ধিবাদী? ঠিক কি কারণে এখনো হিন্দুদের সেই তুমুল আস্থাহীনতায় থাকতে হবে/হচ্ছে এই দেশে? যদি এই প্যারার কথাগুলো অতিরঞ্জিতই হয় তো সংখ্যালঘু নামের এই মানসিক হীনমন্যতার সেফ কার্ড কেন বয়ে বেড়াচ্ছেন লেখক?
কেউই কাউকে জমিন বানিয়ে দেবে না, আদায় করে নিতে হয়, যেমন নিয়েছে শিখরা; আর লেখক যদি নিজেকে একজন সংখ্যানুপাতিক বিশেষত্বহীন বাংলাদেশিই মনে করেন তো আমিও আরেকজন বাংলাদেশি হিসাবে তার ধর্ম, তার আইডল, তার রাজনৈতিক দল নিয়ে আস্থা-অনুরাগ নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারি। শতকরা ৮০ ভাগেই একই মনোভাব পেলে স্টেরিটাইপিংও করতে পারি(যদিও তা সাধারনীকরণে দুষ্ট তবে কবীরা গুণাহ না মনে হয়)। তো এতে আমি সাম্প্রদায়িক কীভাবে হলাম?
নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে গেলে আগে নিজেদের দুর্বলতা, ত্রুটিগুলো সম্পর্কে নিঃসংশয় হওয়া ভালো। বালিতে মুখ না গুঁজে অভিজিৎ রায়ের এই প্রশ্নগুলো নিয়ে একটু ভাবুন, আখেরে বাংলাদেশের সনাতন সম্প্রদায় তথা বাংলাদেশেরই উন্নত হবে। পীরপুজা, দলপূজা আর ধর্মপূজা করে করেই তো সনাতনদের যাবতীয় আস্ফালন একদা রান্নাঘরের পিঁয়াজ ঠেকানোতে আর অবলা নারী পোড়ানোতে ঠেকেছিলো। এভাবে এই সংখ্যালঘুর সেফ কার্ড বারে বারে দেখালে ভবিষ্যতেও ওই একইরকমের নতজানু, মেরুদণ্ডহীন এক খণ্ডিত বাংলাদেশি সম্প্রদায়ে পরিণত হবে সনাতনরা। অন্তঃতপক্ষে বাংলাদেশের স্বার্থে হলেও এইরকম সর্বনাশ হতে দেবেন না।(বাস্টার্ড জিন্নাহ মুসলিমদের এই আস্থাহীনতার সেফ কার্ডকেই পুঁজি করে দ্বিজাতিতত্ত্ব বাস্তবায়ন করেছিলো, মনে রাখবেন)।
এই পোস্টের তীব্র নিন্দা জানালাম।
ফেসবুক একটি ব্যক্তিগত পরিমণ্ডল। কেউ কোনো ব্যক্তির সেই পরিমণ্ডলের কথা/মন্তব্য এরকম পাবলিক ফোরামে প্রকাশ করতে পারেন না। আমার ফেসবুকে আমি রাজা-উজির মারতে পারি, ইঁদুর-বেড়াল মারতে পারি, ধর্ম-অধর্ম নিয়ে কথা বলতে পারি। সেটি আমার স্বাধীনতা, আমার ইচ্ছে। কেউ আমার ব্যক্তিগত পরিমণ্ডলে থাকার সুযোগ নিয়ে আমার কথা সবাইকে বলে বেড়াতে পারেনা!
[এই পোস্টটি এড়িয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু "অন্য কোথাও" একজন বন্ধুর মন্তব্য দেখে এসে নিন্দা জনিয়ে গেলাম।]
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
সহমত!
পোষ্ট লেখক মূল স্ট্যাটাসধারীর অনুমতি সাপেক্ষে এই লেখাটি লিখেছেন কিনা সেটা জানার পরেই কেবল লেখা নিয়ে আলোচনা চলতে পারে। তার আগে নয়। আশা করবো পোষ্ট লেখক এই বিষয়টি পরিষ্কার করবেন।
পোষ্ট নিয়ে অনেক কথা বলা হয়ে গেছে, আমার কাছে ভালো লাগেনি মোটেই। এর পাশাপাশি যে বিষয়টা তাৎপর্য্যপূর্ণ মনে হয়েছে সেটা হচ্ছে “জামাত” কে প্রচলিত রাজনৈতিক দল হিসেবে এখানে আনা হয়েছে। এটা প্রথম আমাকে জানায় সাইফ জুয়েল, সেখানে রণদীপম বসুও ছিলেন। আমরা যা বলেছি তা হচ্ছে, জামাত কি করে, কোথায় যাবে, মায় রাষ্ট্রের ক্ষমতাও যদি নিয়ে নেয় তারপরও জামাতকে আমরা মানতে পারিনা। আমি তীব্র আপত্তি জানাচ্ছি!
সহমত। অভিজিৎদা ফেসবুকে তার স্ট্যাটাসের বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কুলদা রায় সেই ব্যাখ্যাও পড়েছেন এবং বিশদ মন্তব্যও করছেন। যথারীতি প্রতিমন্তব্যও এসেছে। জনাব কুলদা রায়ের সেটা পছন্দ না হলে তিনিও প্রতিমন্তব্য করতে পারতেন বা নিজের খোমাখাতায় শেয়ার করতে পারতেন। ব্যাপারটা ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ থাকার কথা। সেটা না করে পাবলিক ফোরামে অভিজৎদাকে টেনে আনা আমার কাছে মোটেও ভাল লাগলো না।
পোষ্টে ১তারা
love the life you live. live the life you love.
এই পোষ্টে তীব্র নিন্দা এবং আপত্তি জানালাম।
পোষ্টের লেখকের এহেন কর্মকান্ড মানসিক অসততার পরিচায়ক।
আশা করব লেখক এই প্রসঙ্গে তার বক্তব্য দেবেন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটির কাছে ক্ষমা চাইবেন।
মডুদেরও দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
ফেসবুকে স্ট্যাটাস বিষয়ক ডাবল স্ট্যাণ্ডার্ড মেইন্টেইন করলে এইসব ছাইপাশ তো আসবেই, নাকি এইটা ছাগুদের বলে ব্যক্তিগত স্ট্যাটাস পাবলিশ করা হালাল? আর এইটা মুক্তমনা অভিজিৎ রায়ের বলে ব্যক্তিস্বাধীনতা লংঘন?
রাজাকার ইস্যুতে
মানবতা মুছে ফেল টয়লেট টিস্যুতে।
(আকতার আহমেদ)
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
হুমম, লেট আস এগ্রি টু ডিসেগ্রি দেন।
নিটোলের মন্তব্য থেকে জানা গেল--ইদানিং ইসলামের সমালোচনায় হিন্দুদের অংশগ্রহণ করার বাড়াবাড়ি আগ্রহ বেড়েছে। কিন্তু হিন্দুরা নিজেদের ধর্ম নিয়ে সমালোচনা করে না। সুতরাং অভিজিৎ রায়ের এই ব্যাপারটি ভাল লাগেনি। তিনি ব্যাঙ্গ করে স্ট্যাটাসটা লিখেছেন। গুড ব্যাখ্যা।
কয়েকটি পত্রিকায় দেখেছি--সম্প্রতি ঢাকায় এক শিক্ষক মদনমোহন দাস হযরত মুহাম্মদ সম্পর্কে আপত্তিকর অভিযোগ করে কথা বলেছেন বলে কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ তুলেছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে প্রথমে বদলি করা হয়েছিল-- এখন তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আরেকটি ঘটনা পড়েছি--সম্ভবত গোপালগঞ্জের কোনো এক শিক্ষক তাঁর শ্রেণী কক্ষে ইসলাম নিয়ে কিছু সমালোচনা করেছিলেন। সে কারণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। তাকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। মাঝে মাঝে এইরকম খবর প্রকাশিত হয় পত্রিকায়। এবং সেগুলো নিয়ে আমাদের সময় পত্রিকায় পাঠকগণ তীব্র হিন্দু বিরোধী মন্তব্য করে। আর সংগ্রাম, নয়া দিগন্ত বা ইনকিলাব অথবা আমাদের দেশ পত্রিকায় প্রবন্ধাদি প্রকাশ হয়ে থাকে। কিন্তু লক্ষ করুন--একই সময়ে দেশের কোনো কোনো এলাকায় মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজনও তাদের ধর্মের বিভিন্ন সমালোচনা করে থাকেন। তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ ওঠে। কিন্তু সেকারণে গোটা মুসলমান সম্প্রদায়কেই অভিযুক্ত করা হয় না। সেখানে ব্যক্তি হিসাবে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। তাহলে মোহনদাসকে ব্যক্তি হিসাবে গণ্য করা হল না কেন? কেন তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগকে সমগ্র হিন্দুদেরই মনোভাব ধরে নিয়ে অভিজিৎ রায় তাদের বিরুদ্ধে কোনোরকম ব্যাখ্যা বিশ্লষণ ছাড়াই স্ট্যাটাস দিয়ে নেমে পড়লেন? দেখুন অভিজিৎসহ দুএকজন পরিমলের উল্লেখ করেছেন। পরিমল নামের এই লোকটি বর্বরতার চূড়ান্ত সীমা ছাড়িয়েছে। এর বিচার অবশ্যই দাবী করা উচিৎ এবং বিচার হওয়াও দরকার। কিন্তু পরিমলের দায় সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায় নেবে কেন? এ ধরনের বর্বর ঘটনাতো মুসলমানসহ অন্যান্যরাও সম্প্রদায়ের লোকজনও করছে--সেগুলো পত্রিকায় আসছে। এটাকে ব্যক্তির সমস্যা হিসাবে দেখাটাই সুস্থতা--নয় কি? আরেকটা প্রশ্ন, এই ইসলাম ধর্মের সমালোচনা বা ছাত্রী নির্যাতন কি ব্যক্তির কর্ম, না হিন্দু সম্প্রদায়ের কর্ম? হিন্দু সম্প্রদায়ের সমষ্টিগত সিদ্ধান্ত অনুসারেই দুএকজন হিন্দু এইসব ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটাচ্ছে?
দুই নম্বর বিষয় হল--নিজ ধর্ম বা অন্যের ধর্মের সমালোচনা করা যাবে না কেন? সেটা যদি একজন মুসলমান করতে পারেন, একজন খ্রীস্টান বা হিন্দু করতে পারবে না কেন? এক্ষেত্রে হিন্দুর ধর্মের সমালোচনা হিন্দুকেই করতে হবে--মুসলমান করতে পারবে না, মুসলমান ধর্মের সমালোচনা হিন্দু করতে পারবে না, এটাতো আধুনিকতা নয়। তাহলে অভিজিতের এত গাত্রদাহ কেন? (যদিও এ বিষয়ে এটা নিটোলের মন্তব্য, অভিজিতের নয়)।
হিন্দুদের সমালোচনা হিন্দুরা করেন। এই বিষয়ে প্রচুর বইপত্র আছে। লেখালেখি আছে। হিন্দু পুরানের চরিত্রগুলো নিয়ে কুটকাটব্য-ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ আছে। সেগুলো হিন্দুরা করেছেন। রামায়ন মহাভারতের বিষয়ে অনেকের ভক্তিবাদিতা আছে, আবার অনেকেই তাদের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহপোষণ করেন। দেখুন, কালকূটের শাম্ব উপান্যাসটি--সেখানে ভূগোল, ইতিহাস, পুরাণ ঘেটেই বলা আছে--এইসব স্বর্গ নরক বানানো কথা। এগুলো এ মর্তেই আছে। এবং হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন কুসংস্কার নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। সতীদাহ রদ হয়েছে। ধর্মের আইনের চেয়ে সম্পত্তি দখলের ভাবনা থেকেই মূলত এই সতীদাহ প্রথাটা উদ্ভব হয়েছিল। সেটাতো কিছু বিত্তশালী পরিবারেই ঘটত। তাদের সংখ্যাও কম। সমগ্র হিন্দু সমাজের নয়। প্রথমনাথ বিশীর কেরি সাহেবের মুন্সী উপান্যাসে রেশমী চরিত্রটা দেখুন। প্রমাণ মিলবে।
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র পড়ে দেখুন। তিনি সেকালে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অমিল হলে বিবাহ বিচ্ছেদের কথা বলেছেন। শুধু তাই নয়--স্বামীর কাছ থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া স্ত্রীর জন্য শুধু 'খোরপোশ' ব্যাপারটার নাম ছিল ভর্মণ্য অর্থাৎ একেবারে চুক্তি অনুযায়ী ভরণ-পোষণের দায়বদ্ধতা। অথচ ধর্মশাস্ত্রকারেরা বিবাহের যাবজ্জীবন দিয়েই হিন্দুদের দাম্পত্য জীবনকে পরম বন্ধনের সম্ভাবনায় গ্রহিত করে গেছেন। অনেকেই বলেছেন--ডিভোর্স বলে হিন্দুদের মধ্যে কিছু নাই।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
আপনি অনেক কথাই বলেছেন কিন্তু অধিকাংশ পাঠক যে বিষয়টিতে আপত্তি জানিয়েছেন সে বিষয়ে কিছু বলছেন না দেখে একটু অবাক হচ্ছি। আশা করি আপনি বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন না।
লেখায় আপত্তি জানালাম।
এরকম অযাচিত ব্যাক্তি আক্রমন করে লেখার বিরুদ্ধে মডারেটরদের ব্যাবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
পোস্ট টি যতটা খারাপ লেগেছে,তার চাইতে বেশি খারাপ লেগেছে পোস্ট লেখকের উদ্দেশ্য / আচরণ।
দায়িত্বশীল পোস্ট হয় নি। উপরের কারো আপত্তির উত্তর দেন নি। আপত্তিকর বিষয়ে প্রতিবাদ জানালাম।
_____________________
Give Her Freedom!
এই পোস্ট অনেকের গাত্রদাহের কারন হবে তা সহজেই অনুমেয়।
অনুমতি ছাড়া কারো ব্যক্তিগত আলাপ/আলোচনা পাবলিক ফোরামে দেওয়াটা ঠিক নয়।
দায়িত্বশীল পোস্ট হয়নি।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
এই লেখাটি দু:খজনক।
অভিজিৎ রায়ের লেখা পড়ছি বহুবছর ধরে, তাঁকে চিনি-জানি। এই লেখায় তাঁকে যেভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে লেখকের উদ্দেশ্য সৎ কি না তা নিয়ে সন্দেহ জাগে। কারো ব্যক্তিগত মন্তব্য এভাবে পাবলিক ব্লগে নিয়ে এসে আলোচনা করা অনুচিত। আর অভিজিৎ'দার অনুমতি ছাড়া, তার ব্যক্তিগত মন্তব্য নিয়ে, এই সমালোচনাটি যদি লেখা হয়ে থাকে তাহলে সেটি ঘোরতর অন্যায়।
প্রগতির পক্ষে যারা আছেন তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি। এভাবে অযাচিত ব্যক্তি-আক্রমণ থেকে বিরত থাকুন।
ভালো লাগে নাই। আপত্তি।
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
পোস্ট সম্বন্ধে প্রকৃত আলোচনার চেয়ে অবান্তর আক্রমন হচ্ছে বেশি .
এই পোস্টটি এতজনের গাত্রদাহের উদ্রেক করছে দেখে অবাক লাগছে !
হয়তো আমারই অজ্ঞতা ,বাংলাদেশের লোকেদের সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা থাকলে হয়তো লাগতো না .
অদ্ভুত !
অয়ন
পোস্ট লেখক একজনের Personal status কে সম্ভবত তাঁর অনুমতি ছাড়াই (অনেকে বলার পর এখন ও উনার অবস্থান পরিষ্কার করেন নি) Public forum এ প্রকাশ করেছেন। এতজনের 'গাত্রদাহ' এখানে ই। এটাকে আপনার 'অবান্তর' লাগছে কেন? বাংলাদেশের লোকদের সম্বন্ধে আপনার কি ধারণা সেটা আমার জানা না থাকলে ও আপনার 'Moral Ethics' সম্বন্ধে যে ধারণা কম সেইটা আপনার এই কমেন্ট দেখে বুঝতে পারছি। আর আপনার মত লোকজন যদি কোন দেশে বেশি থেকে থাকে তবে সেই দেশ শুধু অদ্ভুত ই না, অসভ্য ও বটে।
যেকোনো সাম্প্রদায়িকতাই নিঃসন্দেহে খারাপ ।
নতুন মন্তব্য করুন