কুলদা রায়
এমএমআর জালাল
সপ্তম পর্ব
বাংলায় বামুন----------------------------------------------------------------------------
কুলদা রায়
এমএমআর জালাল
সপ্তম পর্ব
বাংলায় বামুন----------------------------------------------------------------------------
আর্যরা ভারতে আসার অনেক পরে বাংলায় তাদের সংস্কৃতির স্পর্শ পায় অনেক পরে। রামায়ণ-মহাভারতের যুগে এই দেশকে আর্যরা খুব ভালো চোখে দেখেনি। বাংলা ছিল নিম্নবর্গের মানুষের জায়গা। দস্যুদের এলাকা। খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দীর বেশিরভাগ সময়েও এদেশে ব্রাহ্মণ্য আচার-অনুষ্ঠান অপেক্ষা বৌদ্ধ প্রভাবই অধিকতর পরিলক্ষিত হয়। সেই কারণেই তৎকালীন মহারজ আদিশুর কান্যকুব্জ বা কনৌজ থেকে পাঁচজন ব্রাহ্মণকে আনিয়েছিলেন। তারা বেদবিহিত পূজাঅর্চনা প্রচলন করেন। আধুনিক বাঙ্গালী ব্রাহ্মণদের আদিপুরুষ এই পঞ্চ ব্রাহ্মণ। তারা জাতপাতের বিভেদের প্রাচীর তুলে সমাজের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। নিম্নবর্গের মানুষ শুধু রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নয়—ধর্মব্যবস্থায়ও নতুন নতুন নিপীড়নের শিকার হয়ে পড়ে।
বাংলায় ইসলাম
পাশাপাশি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ভারতে মুসলমানদের আক্রমণ ঘটে। তখন বাংলায় সমাজব্যবস্থায় একটা পরিবর্তন ঘটে। কোথাও মুসলমান সম্প্রদায়ের সংস্পর্শে কোথাওবা বা শাসক সম্প্রদায়ের ধর্মান্তকরণে প্রদত্ত সুযোগসুবিধার ফলে বা রাজানুগ্রহ পাওয়ার আকাঙ্খায় বা জাতে উঠার আকাঙ্খায়ও অনেক উচ্চবর্গের হিন্দু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। পাশাপাশি নিম্নবর্গের হিন্দুরা ইসলামের উদার নীতির কারণে আকৃষ্ট হয়। সে সময়ে দরবেশ-ফকিররাও ক্ষেতের আলে আলে নাচতে নাচতে—গাইতে গাইতে দিগন্তে পিঠ রেখে দেখা দিয়ে আসছেন। ঈশ্বরের কথা—আল্লার কথা তাঁদের গান হয়ে সন্ধ্যার শঙ্খ ঘণ্টার ধ্বনির সঙ্গে দীর্ঘকাল ধরে বাংলার আকাশে বাতাসে জনপদে মিশে গেছে। সাধারণ মানুষজন অনেকেই উদার ইসলাম গ্রহণ করেছে।
জাতের বামুন থেকে অজাতের পিরালী বামুন------
ঘটনাটা পঞ্চদশ শতাব্দীর। তখন যশোর জেলার চেঙ্গুটিয়া পরগণায় এক ঘর জমিদার ছিল। তার পদবী ছিল গুড়। তবে খাতা পত্রে এই গুড়দের রায়চৌধুরী বলা হত। সেখানকার জমিদার দক্ষিণানাথ গুড় বা রায়চৌধুরীর চার ছেলে—কামদেব, জয়দেব, রতিদেব ও শুকদেব। সে সময়ে স্থানীয় এক মোগল শাসক ছিলেন মামুদ তাহির বা পীর আলি। এই পীর আলীর কৌশলে বা প্রলোভনে পড়ে বা আকৃষ্ট হয়ে কামদেব এবং জয়দেব ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তবে আরও একটি মত পাওয়া যায়-- পীর আলী এই দুইভাইকে কৌশলে গোমাংস ভক্ষণ করান। এই ঘটনা জনসম্মুখে প্রকাশ করে দেন পীর আলী। তখন তাদের মুসলমান হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। তাদের ছোটো দুই ভাই রতিদেব ও শুকদেব মুসলমান হয়নি। কিন্তু তাদের ভাই মুসলমান হয়েছে শুধু এই কারণে হিন্দুসমাজ তাদেরকে সমাজচ্যুত করে। তাদের সঙ্গে সর্বপ্রকার সামাজিক সম্পর্ক বন্ধ হয়ে যায়। তাদের সঙ্গে কেউ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ছেলেমেয়ে বিয়ে দেওয়াও এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়ে। এদের নাম হয় পিরালী বামুন বা পিরালী থাক। জাতে ছোটো। অছ্যুৎ।
অথচ মহাভারতে উল্লেখ আছে প্রাচীন সমাজে ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়াদি সকলেরই প্রচুর মাংসাহার করতেন। ভদ্রসমাজেও সুরাপান চলত। গোমাংসভোজন ও গোমেধ যজ্ঞের বহু উল্লেখ বেদে পাওয়া যায়। রাজশেখর বসু মহাভারতের ভূমিকায় আরও জানাচ্ছেন, সেকালে অস্পৃশ্যতা কম ছিল—দাসদাসীরাও অন্ন পরিবেশ করত। কিন্তু কালক্রমে ব্রাহ্মণতন্ত্র কঠিনভাবে সমাজে কায়েম হয়ে পড়লে হিন্দু সমাজের এই উদারনীতি অনেকাংশেই পরিত্যাক্ত হয়।
এই সমাজচ্যূতির ফলে স্বশ্রেণীর ব্রাহ্মণদের সঙ্গে বিয়েশাদী বন্ধ হয়ে গেলে তারা ভিন্ন কৌশল করেন। তারা ছেলেমেয়েদের বিয়ের জন্য কৌশল ও প্রলোভনের জাল বিস্তার করেন। সাধারণত তারা টার্গেট করতেন গরীব ব্রাহ্মণদের। তাদেরকে টাকা পয়সা, জমিজিরেত ও ঘরজামাই করে মেয়ে গছাতেন। আর ছেলে বিয়ে দিলে মেয়ের বাপের বাড়ির লোড়ির লোকজনকে আর্থিকভাবে দাড় করানোর দায়িত্ব নিতেন।
ঘরজামাই থেকে জমিদারি -------
এ সময়কালেই বর্ধমান জেলার কুশগ্রামে একঘর ব্রাহ্মণ পরিবার ছিল। তারা কুশগ্রামের নামঅনুসারে কুশারী পদবী ব্যবহার করতেন। তারা ছিলেন শ্রেষ্ঠ শ্রোত্রিয় শ্রেণীর ব্রাহ্মণ। সে গ্রামের জগন্নাথ কুশারী পিঠাভোগ নামের এক স্থানের জমিদার ছিলেন। তাঁর জীবৎকাল ছিল ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম দিকে। তখন মোগল শাসন ছিল।
বর্ধমানের পিঠাভোগের জগন্নাথ কুশারীকেও এইরকম কোনো একটি কৌশলে পিলারী বামুন শুকদেব গুড় কায়দা করে তার মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিলেন। ফলে জগন্নাথ কুশারীকে তার ভাইবেরাদার-আত্মীয়স্বজন পরিত্যাগ করে। সম্ভবত ছিন্নমূল হয়ে জগন্নাথ কুশারী যশোহরে শ্বশুরবাড়ি চলে আসেন। এবং ঘরজামাই হয়ে গেলেন। নরেন্দ্রপুরের উত্তরপশ্চিমকোণে উত্তরপাড়া গ্রামের সঙ্গে সংলগ্ন বারোপাড়া গ্রামে ঘর বাঁধেন। তিনিও পিরালী থাকের অন্তর্ভুক্ত অছ্যুৎ হয়ে গেলেন। শ্বশুর শুকদেব গুড় তাঁকে উত্তরপাড়া গ্রামটি দান করেন। এই গ্রামের আয় থেকেই তাঁর সংসার চলে। তাঁর চার ছেলে—প্রিয়ঙ্কর, পুরুষোত্তম, জগন্নাথ কুশারীই রবীন্দ্রনাথদের ঠাকুরবংশের আদিপুরুষ।
আজব শহর কোলকেত্তা আগমন----------------------------------------------------------------------------
রবীন্দ্রনাথের উর্দ্ধতম নবম পুরুষ। তার জীবৎকাল ছিল সপ্তদশ শতাদ্বীর দ্বিতীয়ার্ধে। সে সময়ে জোব চার্নক কোলকাতা শহর পত্তন করছিল। তার ছেলে মহেশ বা মহেশ্বর যশোরের উত্তরপাড়া থেকে ভাগ্যান্বেষণে কোলকাতা আসেন। আরেকটি মত আছে মহেশ নয় তার ছেলে পঞ্চানন কুশারী জ্ঞাতী কলহে ভিটা ত্যাগ করে কোলকাতায় চলে যান। সময়টা প্রায় সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ।
জোব চার্নক জোব চার্নকের কোলকাতা----------------------------------------------------------------------------
জোব চার্নকের জন্ম ১৬৩০ সালে ইংলন্ডের ল্যাঙ্ক শায়ারে। ১৬৫৬ সালে এক ব্রিটিশ বানিজ্যিক সংস্থায় কাজ নিয়ে ভারতে আসনে। এর বছর খানেক পরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কাশিমবাজার কুঠিতে বার্ষিক কুড়ি পাউন্ড বেতনে এক কর্মি হিসাবে যোগ দেন। ১৬৮৬ সালে প্রতিভাবলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বাংলার এজেন্ট নিযুক্ত হন। সে সময়ে সুবেদার শায়েস্তা খাঁর সঙ্গে ইংরেজদের বিবাদ বাড়ছিল। ঐ বছরের অক্টোবরে জোব চার্নক হুগলির মুগল সুবেদারের আড়তে গোলাগুলি চালিয়ে আগুণ লাগিয়ে দিলেন। ভারতের ইতিহাসে সেই প্রথম মুগলদের বিরুদ্ধে ইংরেজদের অস্ত্র ধারণ।
জোব চার্নক মুগলদের ভয়ে তল্পতল্লা গুটিয়ে হুগলি ছেড়ে বালেশ্বরের দিকে যাত্রা করলেন। সে সময়ে হঠাৎ করে হুগলীর পূর্ব পাড়ে নির্জন এক গ্রাম তার চোখে পড়ল। ঘাঁটি গাড়লেন সেখানেই। গ্রামটির নাম সুতানটি। এই সুতানটি গ্রামে এর আগে আর কোনো ইংরেজের পা পড়েনি। সেখানে ছোটো একটা দুটো খড়ের চালা ঘর তৈরি করে বসবাসের উদ্যোগ নেন। কিন্তু মুগলদের বিরুদ্ধে আবার বিবাদে জড়িয়ে পড়ে সুতানটি ছেড়ে চলে যান।
ইংরেজদের সঙ্গে এই বিরোধের জেরে মুগলদের রাজকোষে অর্থ আসা বন্ধ হয়ে গেল। এবং শায়েস্তা খাঁর ব্যক্তিগতভাবেও কিছু ঘুষ পেতেন। সেটাও বন্ধ হয়ে গেল । ফলে শায়েস্তা খাঁ ইংরেজদের আবার সুতানটিতে ডেকে আনলেন। কিন্তু আবার গন্ডগোল হওয়ায় তিনি চট্টগ্রামে চলে যান। সেখানে সুবিধা করতে না পেরে মাদ্রাজে পলে যেতে হয়।
সে সমযে মুগল সম্রাট ছিলেন আওরঙ্গজেব। তিনি ইব্রাহিম খাঁকে পাঠালেন বাংলার সুবেদার করে। সম্রাটের আদেশে তিনি ইংরেজদের আবার আমন্ত্রণ জানালেন বাংলায় ব্যবসা করার জন্য। ১৬৯০ সালের ২৩ এপ্রিল আওরঙ্গজেব এক আদেশনামায় বার্ষিক তিন হাজার টাকা শুল্কের বিনিময়ে ইংরেজদের বাংলায় বাণিজ্য করবার অনুমতি দিলেন। ১৬৯০ সালের ২৪ জুলাই এক বৃষ্টিমুখর দিনে জলকাদা মাড়িয়ে জোব চার্নক এসে নামলেন সুতানটির ঘাটে।
সুতানটি সুতানটি থেকে কোলকাতা : আরেকটু পুরনো হিসাব--------------------------------------
পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে লিখিত বিপ্রদাস পিপলাইয়ের মনসাবিজয় কাব্যে এই অঞ্চলের একটি প্রামাণ্য ভৌগোলিক বিবরণী পাওয়া যায়। ব্যান্ডেল ও ত্রিবেণীরমধ্যবর্তী স্থানে হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত সপ্তগ্রাম বা সাতগাঁ ছিল একটি বিরাট বন্দর। নদীর ভাটিতে একই পাড়ে বেতড় গ্রামটি ছিল একটি উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যকেন্দ্র। এখানে পথিকেরা কেনাকাটা করত ও দেবী চণ্ডীর পূজা দিত। চিৎপুর ও কলিকাতা গ্রাম ছিল বেতরের নিকটবর্তী গ্রাম। সেই যুগে সুতানুটি ও গোবিন্দপুরের অস্তিত্ব ছিল না। ১৫৩০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ বাংলায় পর্তুগিজদের যাতায়াত শুরু হয়।
এই যুগে পূর্ববঙ্গের চট্টগ্রাম ও পশ্চিমবঙ্গের সপ্তগ্রাম বন্দরদুটি ছিল বাংলার দুটি প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র। পর্তুগিজরা চট্টগ্রামকে বলত "Porto Grande" বা "মহা পোতাশ্রয়" ("Great Haven") ও সপ্তগ্রামকে বলত "Porto Piqueno" বা "ছোটো পোতাশ্রয়" ("Little Haven")। সেযুগে টালির নালা বা আদিগঙ্গা ছিল সমুদ্রে যাতায়াতের পথ। সমুদ্রগামী বড়ো বড়ো জাহাজগুলি এখন যেখানে গার্ডেনরিচ, সেই অঞ্চলে নোঙর ফেলত। কেবল মাত্র দেশি ছোটো নৌকাগুলিই হুগলি নদীর আরো উজানের দিকে চলাচল করত। সম্ভবত, সরস্বতী নদী ছিল এই সময়কার আরও একটি জলপথ। এই নদী ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে শুকিয়ে যেতে শুরু করে। ১৫৮০ সালে হুগলি-চুঁচুড়াতে পর্তুগিজরা একটি নতুন বন্দর স্থাপন করে। ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে সপ্তগ্রামের দেশীয় বণিকেরা নতুন একটি বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন। তাঁদের অধিকাংশই হুগলিতে বসতি স্থাপন করলেন। কিন্তু চারটি বসাক পরিবার ও একটি শেঠ পরিবার বেতরের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে নদীর পূর্বতীরে গোবিন্দপুর গ্রামের পত্তন করেন। ডিহি কলিকাতা গ্রামের উত্তরাংশে বস্ত্রাদি ক্রয়বিক্রয়ের একটি কেন্দ্র গড়ে ওঠে। ১৫৯৬ সালে আকবরের প্রধানমন্ত্রী আবুল ফজল তাঁর আইন-ই-আকবরিগ্রন্থে এই অঞ্চলটিকে সাতগাঁও পরগনার একটি জেলা হিসেবে উল্লেখ করেন। পর্তুগিজদের পর এই অঞ্চলে ওলন্দাজ ও ইংরেজ বণিকেরা পদার্পণ করে।
অবস্থানগত নিরাপত্তার কারণে জব চার্নক সুতানুটিকে বসতি স্থাপনের পক্ষে উপযুক্ত মনে করেছিলেন। সেই যুগে সুতানুটি পশ্চিমে হুগলি নদী এবং পূর্বে ও দক্ষিণে দুর্গম জলাভূমির দ্বারা বেষ্টিত ছিল। কেবলমাত্র উত্তর-পূর্ব অংশে প্রহরার প্রয়োজন হত।
সুতানুটি, ডিহি কলিকাতা ও গোবিন্দপুর ছিল মুঘল সম্রাটের খাসমহল অর্থাৎ সম্রাটের নিজস্ব জায়গির বা ভূসম্পত্তি। এই অঞ্চলের জমিদারির দায়িত্ব ছিল বড়িশারসাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের উপর। ১৬৯৮ সালের ১০ নভেম্বর জব চার্নকের উত্তরসূরি তথা জামাতা চার্লস আয়ার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের থেকে এই তিনটি গ্রামের জমিদারির অধিকার কিনে নেন। এরপরই কলকাতা মহানগর দ্রুত বিকাশ লাভ করে। ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিয়মিত এই অঞ্চলের রাজস্ব মুঘল সম্রাটকে দিয়ে এসেছিল
কোলকাতা শহরের প্রকৃত নগরায়ণ আরম্ভ হয় ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধের পর থেকে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর হাতে বাংলার শাসন ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ায় সমগ্র পূর্ব ভারতের প্রধান বানিজ্যকেন্দ্র হয়ে ওঠে কোলকাতা। বাংলার তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন এখানে আসতে আরম্ভ করে জীবিকার তাগিদে। গ্রামগুলি মিলেমিশে ক্রমে রূপান্তরিত হয় কোলকাতা শহরে। রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষ মহেশ্বর বা পঞ্চানন কুশারী এভাবেই এখানে রুটি রুটির রোজগারে চলে এলেন। তখনো তারা ঠাকুর হননি।
লেখাসূত্র----------------------------------------------------------------------------
১. রবি ঠাকুর, রাহাজানি এবং রবীন্দ্র পূজারীবৃন্দ : ফরিদ আহমদ ও অভিজিৎ রায়
২. রবীন্দ্রনাথের জমিদারগিরি—জমিদারের রবীন্দ্রগিরি : ষষ্ঠ পর্ব : কুলদা রায় ও এমএমআর জালাল
গ্রন্থসূত্র----------------------------------------------------------------------------
১. রবিজীবনী : প্রশান্তকুমার পাল, ২. রবীন্দ্রজীবনকথা : প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, ৩. হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি : গোলাম মুরশিদ, ৪.ঐতিহাসিক ,
৫. অনৈতিহাসিক : শ্রাপান্থ , ৬. রবীন্দ্রনাতের আত্মীয়স্বজন : সমীর সেনগুপ্ত,৭. জোব চার্নক ও কলকাতার জন্মদিন : গৌতম বসুমল্লিক
মন্তব্য
সচলায়তনে অক্ষর বোল্ড করা যাচ্ছে না। এটা করা কিভাবে সম্ভব?
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
প্রতিটি পর্বই দারুন লিখছেন, চলুক।
সুনীল গাঙ্গুলির কোন এক লেখায় (সম্ভবত 'সেই সময়') পড়েছিলাম কামদেব পীর আলী নামের জমিদার কে একদা রোজার সময় লেবুর গন্ধ শুঁকায় বলেছিলেনঃ উজির সাহেব, আপনার তো রোজা ভঙ্গ হয়ে গেল! আমাদের ধর্ম মতে ঘ্রানং-ই ভোজনং, তাই আপনার রোজা ভঙ্গ হয়ে গেছে। প্রতিশোধ হিসাবে পীর আলী জয়দেব আর কামদেব সহ হিন্দু ব্রাহ্মণদেরকে ঈদের পরে দাওয়াত করলেন। সব হিন্দুরা যখন খেতে বসেছে, তখন তীব্র সুঘ্রাণযুক্ত গো-মাংস তাদের কাছে হাজির করা হল। পীর আলী জয়দেব আর কামদেবকে চেপে ধরলেন। তোমাদের না ঘ্রাণং ভোজনং? তাহলে তো ইতোমধ্যে জাত চলে গিয়েছে। অন্য ব্রাহ্মণরা তো তোমাদের আর গ্রহন করবে না, তারচেয়ে আমাদের ধর্ম গ্রহন কর, হারেমের কন্যার সাথে বিবাহ দেব, জায়গীর দেব। উপায় না দেখে তারা ধর্ম বদল করলো, পরে তাদের নতুন নাম হল কামাল উদ্দিন ও জামাল উদ্দিন।
ধন্যবাদ।
সে সময় এধরনের ঘটনা ঘটত। রাষ্ট্রীয়ভাবে মুগলরা নওমুসলিমদের বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা দিতেন। এই সব সুযোগ সুবিধাগুলো উচ্চবিত্ত হিন্দুদের বেলায়ই ঘটত। আর গরীবগুর্বোরা হিন্দু জমিদার-ব্রাহ্মণতন্ত্রের নীপিড়নে স্বেচ্ছায় মুসলমান হয়ে যেত।
ধন্যবাদ আপনাকে।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
@ধ্রুবনীল--
আপনি যে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তা A Report on the District of Jessore : Its antiquitie বইয়ের ১৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।
9. The Tagores come of a family, of tained brahmans, called Pir Ali Brahmans; and they originally belonged to the Narendrapur, near Eajahat, in the jessore district. The story of the tainings is not any means a district one, but it runs somewhat in this fashion. A controversy had arisen as to whether smelling was half-eating or or not, and Pir Ali Khan, a Mohamedan, who was doing some work in the district, connected either with the government or with the raja of, Jessore's zamindari, invented to his house a number of brahmans. When they came, he caused them, agaist their will, to smell, to smell flesh, which was to them forbiden meat, and the pandits, deciding that their smelling it amounted to half eating it, declared those tainted who had smelt. Two persons name Ray Chaudry, who sat next the ameen, were declared to have really eaten the food, and were therefore ordered to become Mussulmans. They took the name Jamal and Kamal Khan, and their descendants are still alive in basantia (near jessore). They bear the mohamedan surname Khan Chaudhry, and a hindoo first name.
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
পড়লাম, ধন্যবাদ
এই সিরিজটা কি উদ্দেশ্যে লেখেন? রবিন্দ্রনাথকে দেবতা বানাতে?
ঠিক বুঝতে পারছি না। আমরা অনুসন্ধান করে দেখছি। দেবতা শুনেছি ধর্মপুস্তকে থাকেন। আমরা ধর্মপুস্তক নয়--মর্মপুস্তক নিয়ে বসেছি। মানুষকে খুঁজছি। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
কিছু বুঝতে না শিখলেও বাংলা বানান দেখে দেখে লিখতে পারেন ! রবীন্দ্রনাথ নামের বানান টা অন্তত ঠিক করে লিখুন... তারপর অসুরও বানাতে পারেন । আপনার দ্বারা অসম্ভব হবে না...
একসময় বেশ কিছু খ্যাতনামা সাহিত্যিক রবীন্দ্র ঘরানার সাহিত্য চর্চার থেকে বের হয়ে নিজস্ব ধারা বজায় রাখতে চেয়েছিলেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিলো সাহিত্য চর্চা| কিন্তু বাংলাদেশে খুব পরিকল্পিত ভাবে রবীন্দ্র-নজরুল বিরোধিতাকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যার পেছনের উদ্দেশ্য সাহিত্য চর্চা নয় বরং একটি জাতির স্বকীয়তাকে নষ্ট করা, একজন পাঠক কিংবা শ্রোতা হিসেবে রবীন্দ্র-নজরুল ভালো লাগতেই হবে আর তা না হলে সে সাহিত্য সমঝদার নয় এধরনের মানসিকতা পোষণ করিনা, কিন্তু তার মানে এই নয় যে একজন সাহিত্যিকের কর্মকে অসাধু উদ্দেশ্যে বিরোধিতা করতে হবে| এধরনের কিছু অতি বুদ্ধিমান মুখোশধারী ব্যাক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আপনার এই সিরিজটিকে আন্তরিক ভাবে স্বাগত জানাই ... লিখতে থাকুন..
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
নতুন মন্তব্য করুন