কুলদা রায়
এমএমআর জালাল
লিও কুপার জেনোসাইড নামে একটি বই লিখেছেন। বাংলা অর্থ গণহত্যা। বইটির প্রচ্ছদ করা হয়েছে কিছু সংখ্যা দিয়ে। লেখা হয়েছে—১৯১৫ : ৮০০,০০০ আর্মেনিয়ান। ১৯৩৩-৪৫ : ৬০ লক্ষ ইহুদী। ১৯৭১ : ৩০ লক্ষ বাংলাদেশী। ১৯৭২-৭৫ : ১০০,০০০ হুটু। নিচে লাল কালিতে বড় করে লেখা জেনোসাইড। এই অংকের মানুষ গণহত্যার শিকার। এই আট লক্ষ, ৬০ লক্ষ, ৩০ লক্ষ, এক লক্ষ সংখ্যাগুলো এক একটি প্রতীক। গণহত্যার প্রতীক। ক্যালক্যালেটর টিপে টিপে হুবহু মিলিয়ে দেয়া পূর্ণ সংখ্যার হিসেব এখানে পাওয়া যাবে না। পাওয়া যাবে পরিকল্পিত গণহত্যার মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাসের প্রতীক।
কুপার বিশ্ববিখ্যাত গণহত্যা বিশেষজ্ঞ। তার জেনোসাইড বইটিও সাড়া জাগানো দলিল। এখানে পাওয়া যাচ্ছে ১৯৭১ সালে মাত্র নয় মাসে ৩০ লক্ষ মানুষকে গণহত্যা করা হয়েছিল। এটি কাল্পনিক কাহিনী নয়। সত্যি ঘটনা। এখনো বিভিন্ন বিদেশী সংবাদপত্রে-ম্যাগাজিনে তার প্রকাশিত প্রমাণ রয়েছে।
১৯৭১ সালে জুন মাসে লাইফ ম্যাগাজিনের সাংবাদিক জন সার কোলকাতায় এসেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন ফটোগ্রাফার মার্ক গডফেরি। তাঁরা দুজনে একটি গাড়িতে করে ঘুরে ঘুরে দেখেছেন শরণার্থীদের চিত্র। কখনো তাঁরা গিয়েছেন সীমান্ত এলাকায়। কখনো কোলকাতায়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়। সে সময়ে পাকিস্তান বাহিনীর বুলেটে-বেয়নেটে গণহত্যা, ধর্ষণ আর নির্যাতনের শিকার হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালীরা। যাঁরা বেঁচে গেছেন—তাঁরা প্রাণভয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের পশ্চিম বঙ্গে পালিয়ে এসেছেন। একজন শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন সাংবাদিক জন সার। শরনার্থীটি বলেছেন, পাক বাহিনীরা আমাদের গ্রামকে তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলেছিল। ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। যখন আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছি, পালাতে চেষ্টা করেছি—তারা তখন মেশিন গানের গুলি ছুড়েছে। আমাদের স্বজনদের মেরে ফেলেছে।
সেই সময় একজন ক্রন্দনরত মহিলার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জন সার। মহিলাটি শরণার্থীদের দলের সঙ্গে সীমান্ত পার হয়ে এসেছে। মহিলাটি বলেছে, তারা আমাদের পিছনে তাড়া করেছে। আমাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। আমার কাঁধের উপরে ছিল আমার শিশু সন্তান। লাঠির আঘাতে শিশুটির মাথা গুড়িয়ে গেছে। তার রক্ত আছে আমার গায়ে। সে নেই। তখুনি মারা গেছে।
লাইফ ম্যাগাজিনটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮ জুন ১৯৭১ সাল। লাইফ ম্যাগাজিনের এই প্রতিবেদনটিতে পাকবাহিনীর সরাসরি গুলিতে গণহত্যার কাহিনীটি সাংবাদিক জন সার বলছেন না। বলছেন ভীন্ন একটা কাহিনি। সেটাও হত্যাকাণ্ডের। সেই হত্যাকাণ্ড আরও ভয়ঙ্কর গণহত্যা।
ভিন্ন গণহত্যার সন্ধানে ----------------------
সময়টা জুন মাসের মাঝামাঝি। জন সার গিয়েছেন করিমপুরে। বৈষ্ণব ভক্তিবাদের প্রবক্তা চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের এই গ্রামটি পাকিস্তান সীমান্ত থেকে মাত্র তিন মাইল দূরে। এখানে রাস্তা দিয়ে সীমান্ত পার হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসছে পূর্ব পাকিস্তান থেকে। পাক হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যার শিকার হয়ে এরা হারিয়েছেন এদের স্বজন, গবাদিপশু, ঘরবাড়ি, সহায়সম্পদ। ধারাবাহিক মৃত্যুর তাড়া খেয়ে এইসব ভয়ার্ত মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে জন্য ভারতে ছুটে আসছে। সরাসরি গুলির হাত থেকে ঈশ্বরের দয়ায় এরা বেঁচে এসেছে। কিন্তু নতুন করে পড়েছে নতুন নতুন মৃত্যুর ফাঁদে। এদের পিছনে মৃত্যু। সামনে মৃত্যু। বায়ে মৃত্যু। ডানে মৃত্যু। সর্বত্রই মৃত্যুর ভয়ঙ্কর থাবা এদের তাড়া করে ফিরছে।
সাংবাদিক জন সার করিমপুরের রাস্তায় দেখতে পেলেন অসীম দৈর্ঘের লম্বা শরণার্থী মানুষের মিছিল। তাদের কারো কারো মুখে রুমাল গোজা। একটা লোকের কাছে তিনি গেলেন। কোনোভাবে রুমালটি মুখ থেকে সরিয়ে লোকটি শুধু বলতে পারলেন, কলেরা। কলেরা। আর কিছু বলার নেই। পিছনে পাক সেনাদের গুলি। আর সঙ্গে কলেরা। সামনে অন্ধকার। কোথায় চলেছে তারা—কেউ জানে না। মৃত্যুকে সঙ্গী করে তবু তারা এগিয়ে চলেছে।
করিমপুরের মধ্যে দিয়ে যে রাস্তাটি চলে গেছে কোলকাতা বরাবর, তার বামদিকে শরণার্থী শিবির। এখানে আশ্রয় নিয়েছে ১৫০০০ মানুষ। এই শরণার্থী শিবিরে কলেরা নির্মমভাবে হানা দিয়েছে। ৭০০ জন ইতিমধ্যে মারা গিয়েছে। বাকীরা শিবির ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পালাবে কোথায়? কলেরাও তাদের সঙ্গে চলেছে। খোলা জায়গায় পড়ে আছে মরা মানুষ।
জন সার দেখতে পাচ্ছেন-- ঝাঁকে ঝাঁকে শকুন নেমে এসেছে। তীক্ষ্ণ ঠোঁট দিয়ে ছিড়ে খুড়ে খাচ্ছে মরা মানুষের দেহ। তাদের চোখ চক চক করছে। কিন্তু মৃত মানুষের সংখ্যা এত বেশী যে শকুনের খেয়ে শেষ করতে পারছে না। শকুনদেরও খাওয়ায় অরুচি এসে গেছে। মরা মানুষের গা থেকে ছিঁড়ে খুঁড়ে ফেলেছে জামা কাপড়। তাদের অনেকের তখনো গা গরম। সবেমাত্র মরেছে। পথে ঘাটে নালা নর্দমায়—সর্বত্রই কলেরায় মরা মানুষ পড়ে আছে। জন সার দেখতে পেয়েছেন একটি শিশুর মৃতদেহ। শিশুটির গায়ে একটি শাড়ির অংশ পেঁচানো। তাঁর হতভাগী মা পেঁচিয়ে পুটুলি বানিয়েছে। ট্রাকের চলার সময় অসুস্থ শিশুটি মারা গেছে। চলন্ত ট্রাক থামেনি। মৃত ছেলের জন্য ট্রাক থামানো কোনো মানেই হয় না। আরও অনেক মৃতপ্রায় মানুষ এই ট্রাকেই ধুঁকছে। আগে পৌঁছাতে পারলে হয়তো কোনো হাসপাতাল পাওয়া যেতে পারে। তাদের সুযোগ মিলতে পারে চিকিৎসার। বেঁচেও যেতে পারে। এই আশায় সময় নষ্ট করতে কেউ চায় না। শিশুটির পুটুলী করা মৃতদেহটিকে ট্রাক থেকে রাস্তার পাশে ধান ক্ষেতে ছুড়ে ফেলা দেওয়া হয়েছে।
একটি ওয়ান ডেকার বাসের ছবি তুলেছে জন সারের সঙ্গী ফটোগ্রাফার মার্ক গডফেরি। বাসটির হাতল ধরে ঝুলছে কয়েকজন হতভাগ্য লোক। আর ছাঁদে বসে আছে--সব মিলিয়ে জনা সত্তর জন। কেউ কেউ বমি করছে। কারো কারো মুখে রুমাল চাপা। কেউ কেউ রুমালের অভাবে হাতচাপা দিয়েছে। ছাঁদের মানুষের বমি জানালা দিয়ে বাসের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। আর বাসের মধ্যের বমি জানালা দিয়ে বাইরে ছিটকে পড়ছে। পথে। ঘাটে। মাঠে। খালে। জলাশয়ে। হাটন্ত মানুষের গায়ে। বমির সঙ্গে জীবনবিনাশী কলেরার জীবাণু। এইসব হতভাগ্য মানুষের চোখ গর্তের মধ্যে ঢোকানো। আর তার মধ্যে জ্বল জ্বল আতঙ্ক। বাসভর্তি করে কলেরা চলেছে। বাইরে পড়ে আছে একটি মৃতদেহ।
‘এই সব মানুষ এত বেশী সংখ্যায় মরেছে যে আমরা গুণতে পারিনি। গোণা সম্ভব নয়।‘ একজন স্বেচ্ছাসেবক সাংবাদিক জন সারকে বলছেন, এরা জানে না তারা কোথায় যাচ্ছে। তারা চলছে তো চলছেই। তীব্র রোদে হাঁটতে হাঁটতে তারা ক্লান্ত—অবসন্ন। তৃষ্ণার্ত হয়ে পথের পাশ থেকে আঁজলা ভরে কলেরাদুষ্ট পানি পান করছে। তারা এত দুর্বল হয়ে পড়ছে যে, আক্রান্ত হওয়ার পর একদিনও টিকতে পারছে না। মৃত্যুর কোলো ঢলে পড়ছে।
১৯৭১ সালে জুন মাসের মাঝামাঝি তখন। সবে বর্ষা শুরু হয়েছে। একটানা চলবে সেপ্টেম্বরের মাঝামঝি পর্যন্ত। তারপর ঢিমেতালে বৃষ্টি হতে পারে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। জুন মাসের প্রথম বর্ষার মাঠগুলো সবুজ। সাংবাদিক জন সার শরণার্থীদের চলার পথে চলতে চলতে দেখতে পাচ্ছেন-- খালনালায় শাপলা ফুটে আছে। এই শান্ত সৌন্দর্যের আড়ালে ভয়াবহ মৃত্যুর খেলা চলছে--ঘটে চলেছে অসহনীয় মানবিক বিপর্যয়। তিনি চোখে দেখে প্রতিবেদনটি লিখছেন।
তিনি লিখেছেন, কাঁটাখালি গ্রামে রাস্তার পাশ থেকে হৈঁচৈ করে একটি ট্রাক থামাতে চেষ্টা করছে একদল শরণার্থী। তারা করুণ স্বরে আবেদন করছে ট্রাকচালককে তাদেরকে ট্রাকে তুলে নিতে। তাদের মধ্যে যারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে তারা রাস্তার পাশে মাটির উপরে শুয়ে আছে। তাদের পরিবার পরিবার অসহায় হয়ে চেয়ে। তাদের হেঁটে যাওয়ার শক্তি নেই। যাদের সঙ্গে কিছু টাকা পয়সা আছে তারা কোনোমতে ট্রাকে উঠে পড়েছে। ট্রাকে করে তারা কৃষ্ণ নগর হাসপাতালে যেতে পারবে। সেখানে চিকিৎসা পাওয়ার চেষ্টা করবে।
করিমপুরের আশেপাশে গ্রামগুলোতে কোনো ডাক্তার নেই। কলেরা ভ্যাক্সিন নেই। নেই কোনো প্রতিষেধক অষুদপত্র। কাছাকাছি কৃষ্ণনগরে একটি হাসপাতাল আছে। হাসপাতালের উদ্দেশ্যে অসুস্থ মানুষ চলেছে মানুষের কাঁধে চড়ে। ঝোড়ায় করে। কেউবা বা বাঁশের তৈরি টেম্পোরারী স্টেচারে করে। গরুর গাড়িতে। কেউবা রিকশায়।
কৃষ্ণ নগর হাসপাতালে তিল ধারণের জায়গা নেই। যারা হাসপাতালে এর মধ্যে এসে পড়েছে—তখনো বেঁচে আছে, তাদের রাখা হয়েছে বাইরে খোলা মাঠে। যাদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে তাদের রাখা হয়েছে অস্থায়ী ছাউনিতে। বাঁশের কাঠামোতে কাপড় বসিয়ে ছোটো ছোটো শিবির করে চাউনি তৈরি হয়েছে। সেখানে কিছু কিছু মানুষ বেঁচে থাকার জন্য মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। তাঁদের চোখ গর্তের মধ্যে ঢুকে গেছে। অর্ধচেতন বা অচেতন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়ে আছে। তাদের মুখে মাছি পড়ছে। মশা ঘুরছে। অনন্তবিদারী দুর্গন্ধ। স্বজনদের কেউ কেউ হাত দিয়ে, তালে পাখা দিয়ে বা কাপড়ের আঁচল দিয়ে মাছি তাড়ানোর চেষ্টা করছে। সাদা এপ্রোন পরা নার্সরা তাদের শিরায় ঢোকানোর চেষ্টা করছে সেলাইন। তাদের চেষ্টার কমতি নেই। কিন্তু নার্সের বা ডাক্তারের সংখ্যা হাতে গোণা। অপ্রতুল।
এই হতভাগ্যদের অর্ধেকই শিশু। সাংবাদিক জন সার একটি সাত বছরের ফুটফুটে মেয়ে শিশুকে তুলে এনেছে রাস্তা থেকে। তার চোখ বড় করে খোলা। তার হাত ঝুলে পড়েছে। নার্স এক পলক দেখেই বলছে, সব শেষ। কিছু করার নেই। মেয়েটি মরে গেছে। একজন ক্লান্ত ডাক্তার বলছেন, এর চেয়ে কুকুর-বেড়ালেরাও ভালো করে মরে। কিছুটা হলেও তারা চেষ্টা তদ্বির পায়। আর এই শরণার্থী মানুষদের কলে পড়া ইঁদুরের মত মরা ছাড়া কপালে আর কিছু লেখা নেই।
এইসব মানুষেরা কেউ কেউ এসেছে ৩০০ মাইল দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে—দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিয়ে এসেছে খালি পায়ে হেঁটে-- পাক বাহিনীর তাড়া খেয়ে। পুষ্টিকর সামান্য খাবারও অনেকের সঙ্গে নেই। বিশুদ্ধ পানীয় জল নেই। তাদের পায়ে গায়ে কাদা, ময়লা, আবর্জনা তাদের সারা গায়ে কিলবিল করছে। এই লক্ষ কোটি শরণার্থীর পদভারে পথঘাট কাদাময়। একদা ভক্তির রসে ঢুবে যাওয়া গৌরাঙ্গের কৃষ্ণনগর এক আতঙ্কের মৃতের শহর হয়ে উঠেছে।
পূর্ব পাকিস্তানে সঙ্গে ভারতের ১৩৫০ মাইল সীমান্ত এলাকা রয়েছে। এই সীমান্ত পার হয়ে যারা আসছে তারা কলেরা, টাইফয়েড, পোলিও, চর্মরোগ ও মানসিক রোগে আক্রান্ত। জুনের মাঝামাঝি পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রায় অর্ধকোটি শরণার্থী এসেছে। এদের মধ্যে কোলকাতার আশেপাশে রয়েছে ১৫ লক্ষ। আর ৩০ লক্ষ রয়েছে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে। জুনের পরে এই শরণার্থীর সংখ্যা পৌঁছে গেছে এক কোটিতে।
এই শরণার্থীদের জন্তুর মত তাড়া খাওয়া দুঃখের কাহিনীটা কি? জন সার লিখেছেন, সোজা কথায় পাক বাহিনী নিরীহ বাঙ্গালীর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তাদের স্বজনকে মেরে জীবিতদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। একটি গোটা জাতিকে নিশ্চহ্ণ করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। দুজন বুড়োবুড়ির সঙ্গে দেখা হয়েছে এই সাংবাদিকের। এদের স্বাভাবিক চলার ক্ষমতা নেই। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটার চেষ্টা করছে। বুড়ো মানুষটির সঙ্গিনী বুড়ি ব্যবহার করছে ১৫ ইঞ্চি লাঠি। একদম কুঁজো হয়ে চলছে। সোজা হয়ে দাঁড়াবার শক্তি নেই। তারা এক সঙ্গে চলছেন। কিন্তু তারা কেউ কারো নয়। দুজনই দুজনের কাছে অচেনা। তারা জানে না তাদের পরিবার পরিজন কোথায়। তারা বেঁচে আছে না মরে গেছে। সামনে গেছে না পিছনে আছে—কিছুই জানে না। তারা সকাল থেকে সন্ধ্যে অবধি হাঁটছেন। মাঝে মাঝে বসছেন। আবার হাঁটছেন। হাঁটতে হাঁটতে ভিক্ষেও করছেন। সঙ্গে কোনো খাবার নেই। খাবার বহন করার শক্তিও তাদের নেই। জন সার দুদিন পরে আবার দেখতে পেলেন বুড়োটিকে রাতের অন্ধকারে। সঙ্গে বুড়িটি নেই। টর্চের আলো ফেলে কাছে এসে বুঝতে পারলেন, না—ইনি সেই বুড়ো নন। আরেকজন। অন্য আরেকজন বুড়ো লোক। আগের বুড়োবুড়ি কোথায় গেল?
এইসব মানুষদের দেখে, তাদের মুখ থেকে শুনে লাইফ ম্যাগাজিনের সাংবাদিক জন সার ভয়ঙ্কর একটি চিত্র পেয়ে যাচ্ছেন। তিনি লিখেছেন—পাক বাহিনী শুরুতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতাদের মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। এরপরে তারা সংঘবদ্ধভাবে আক্রমণ করেছে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর। মেরে ফেলে দেওয়ার পরেও যারা বেঁচে ছিল—তাদেরকে এবং পরে প্রগতিশীল মুসলিম পরিবারগুলোকে আক্রমণ করেছে। তাদের ঘরবাড়ি ছাড়া করেছে। তাদের তাড়া করেছে এমনভাবে যাতে তারা সীমান্ত পার হয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। সীমান্ত পার হওয়ার সময় পাক বাহিনী তাদেরকে পেছন থেকে আক্রমণ করেছে। তাদেরকে পরিজনপরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে টাকা পয়সা, কাপড়চোপড়। সঙ্গে থাকা সোনা দানা লুটে নিয়েছে। ছুটন্ত মহিলাদের গা থেকে খুলে নিয়েছে পরণের কাপড়। মেয়েদের নির্বিচারে ধর্ষণ করছে। শরণার্থী শিবিরে ঘুরে ঘুরে জন সার দেখেছেন—সেখানে সংখ্যাআনুপাতে পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা বেশ কম। এইসব মেয়েরা কোথায় গেল? এর উত্তরে শরণার্থীরা অভিযোগ করেছে—তাদের মেয়েদের কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে পাকবাহিনী আর তাদের দোসররা। এদেরকে বন্দী করে রেখেছে। ধর্ষণ করছে।
বৃষ্টির সন্ত্রাস--------------------
বর্ষা শুরু হওয়ায় বৃষ্টির সন্ত্রাস শরণার্থী শিবিরের লোকজনকে আক্রমণ করেছে। কোলকাতা থেকে ৩০ মাইল দূরের এক খোলা মাঠে বিশ হাজার লোক অবস্থান করছিল। সে জায়গাটির নাম কল্যাণী। এটা একটি নতুন শরণার্থী শিবির। শুরুতে মাঠটি ছিল শুকনো। জন সার লিখেছেন, বর্ষা আসন্ন। মাথার উপরে মেঘ জমছে। ধুসর থেকে কালো হয়ে উঠেছে আকাশ। ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টি ঠেকাতে এইসব ছিন্নমূল মানুষের মাথায় শুধু পাতলা হোগলার চাটাই ছাড়া আর কিছু নেই। কিছু কিছু আচ্ছাদন থাকলেও তার সংখ্যা খুবই কম। যখন দক্ষিণপশ্চিম দিক থেকে বাতাস ধেয়ে এলো—বাতাসের সঙ্গে ঝাপিয়ে পড়লো গুলির মত বৃষ্টি মাঠের উপর দিয়ে, তখন বৃষ্টি বিদ্ধ করতে শুরু করে এইসব মানুষদেরই। তারা ভিজে একসারা। দিনে ভিজছে। রাতেও ভিজছে। সকালে ভিজছে। সন্ধ্যায়ও ভিজছে। মাথার উপরের হোগলার চাটাই গলে গেছে। উড়ে গেছে ছাতি। আর ফুটো হয়ে গেছে ছোটো ছোটো তাবুর মত চালগুলো।
এই বৃষ্টি কোনো বিলাস নয়, মৃত্যুরই অন্য নাম। বৃষ্টি কল্যাণীর মত শরণার্থী শিবিরের মাটি কর্দমাক্ত করে দিয়েছে। ছোটো ছোটো খুপরির মধ্যে জড়োসড়ো হয়ে বৃষ্টির হাত থেকে অসহায় মানুষগুলো বাঁচার চেষ্টা করেছে। মাঝে মাঝে বজ্রপাত হয়েছে। ঝড়ো হাওয়া এসেছে। চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে। শিশুদের অধিকাংশেরই ছিল খালি গা। বৃষ্টির সঙ্গে তাপমাত্রাও নিচে নেমে এসেছিল। বৃষ্টিতে ভিজে ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে তারা সর্দি কাশি নিউমেনিয়ায় ভুগেছে—সারা ঘ্যান ঘ্যান করছে। যখন বন্যার জল এলো-- তখন সঙ্গে এসেছে বিষধর সাপ। তারা বসত গেড়েছে শরনার্থীদের মধ্যে।
কল্যাণি পাঁচ নম্বরে কিছু শরনার্থী বাঁশের খুটিঁর উপরে কাপড় টানিয়ে ছাতার মতো তৈরি করে থেকেছে। এটা ছিল একটা স্থায়ী শিবির। তাদের কোনো খাবার ছিল না। বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে ভিজতে তিনচারদিন এদের না খেয়ে থাকতে হয়েছে।
এই মধ্য জুন মাস পর্যন্ত ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ছিল ঢিলেঢালা। তারা বাঙ্গালী শরণার্থীদের মনে করেছে আপদ। শরণার্থীরা পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছিল। ফলে পর্যাপ্ত সাহায্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের উদ্যোগ ছিল অপ্রতুল। আবার অনেক শরনার্থীর কাগজপত্রাদিও ছিল না। তাদের জন্য রেশন কার্ড ছিল না। ফলে তারা চাল সংগ্রহ করতে পারেনি। অষুদপত্রাদি পায়নি। না খেয়ে, রোগে ভুগে অনাহারে মরেছে। অনেকে পাগল হয়ে গেছে। অনেকে আত্মহত্যা করেছে। বাসের নিচে—রেললাইনে মাথা পেতেছে। অনেকে চিরতরে জন্মপরিচয় হারিয়ে ফেলেছে। এরা ভুলে গেছে এরা কি ছিল। কোথা থেকে এসেছে। কোথায় যাবে। তাদের জন্য নির্ধারিত ছিল মৃত্যু। মৃত্যু ছাড়া এদের আর কিছু চাওয়ার নেই এই পৃথিবীর কাছে—সভ্যতার কাছে—মানবতার কাছে—জীবনের কাছে। এই মৃত্যু কি? এইসব মৃত্যু কি হত্যাকাণ্ড নয়? পাকবাহিনীর বিনা গুলিতে পরিকল্পিত গণহত্যা নয়?
এই প্রশ্নের উত্তর কি?
১৯৪৮ সনের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত রেজ্যুলেশন ২৬০ (৩) এ-র অধীনে সংজ্ঞাঅনুসারে অনুযায়ী গণহত্যা কেবল হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। গণহত্যাকে এমন একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় যা বিশ্বময় প্রতিরোধে সকল রাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ। এই গণহত্যা বলতে বুঝায় এমন কর্মকাণ্ড যার মাধ্যমে একটি জাতি, ধর্মীয় সম্প্রদায় বা নৃতাত্ত্বিকগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াস নেয়া হয়েছে বা হচ্ছে।
সংজ্ঞা অনুযায়ী গণহত্যা কেবল হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ২৬০ (৩) এ-র অনুচ্ছেদ-২ এর অধীনে যে কর্মকাণ্ডকে আইনগতভাবে গণহত্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয় তা হল-
(ক) পরিকল্পিতভাবে একটি জাতি বা গোষ্ঠীকে নির্মূল করার জন্য তাদের সদস্যদেরকে হত্যা বা নিশ্চিহ্নকরণ।
(খ) তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করবার জন্য শারীরিক বা মানসিকভাবে ক্ষতিসাধন।
(গ) পরিকল্পিতভাবে একটি জাতিকে ধ্বংসসাধনকল্পে এমন জীবননাশী অবস্থা সৃষ্টি করা যাতে তারা সম্পূর্ণ অথবা আংশিক নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
(ঘ) এমন কিছু ব্যবস্থা নেয়া যাতে একটি জাতি বা গোষ্ঠীর জীবন ধারণে শুধু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি নয়, সেই সাথে তাদের জন্ম প্রতিরোধ করে জীবনের চাকাকে থামিয়ে দেয়া হয়।
(ঙ) একটি জাতি বা গোষ্ঠীর শিশু সদস্যদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে তাদের জন্মপরিচয় ও জাতিগত পরিচয়কে মুছে ফেলাকেও গণহত্যা বলা হয়।
তাহলে? যারা বলছেন, বলার চেষ্টা করছেন—পাকবাহিনী গণহত্যা করেনি, পাকবাহিনী তিরিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেনি—পাকবাহিনীর হত্যা করার সংখ্যা খুবই কম, তারা—তারা কি বলবেন এই গুলিবিহীন লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর সংখ্যাকে? গণহত্যার হিসাবের মধ্যে এই সংখ্যা কি যোগ হবে না? কত—পঞ্চাশ হাজার, এক লক্ষ, দুই লক্ষ, দশ লক্ষ... বিশ লক্ষ... তিরিশ লক্ষ....
ছবির সূত্র :
১. লাইফ, ১৮ জুন, ১৯৭১।
২. ডন ম্যাককুলিন, ইনডিয়া।
৩. ব্লিডিং বাংলাদেশ : সাগর পাবলিশার্স, কোলকাতা।
৪. জেনোসাইড : লিও কুপার।
মন্তব্য
........................................
কোন শব্দ নাই
কোন আলোড়ন নাই
জড় পাথরের মত অপলক
নিস্তব্ধ হাত, পা অসাড়
চেতনা ৭১এ বদ্ধ!!!
কীভাবে পড়ে শেষ করতে পারলাম বুঝছি না............গলা-দমবন্ধ হয়ে আসছিল.............থরথর কেঁপে কেঁপে উঠি.............
_____________________
Give Her Freedom!
এটা এমন একটা লেখা, যা কেবল অনুভব করবার, কোনো প্রশংসাবাক্য বা ইমোটিকন এখানে তুমুলভাবে অসহায়।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
কিছু বলার ভাষা বা শক্তি কোনটাই নেই। আমাদের জেনারেশন এতো অন্ধ কেন? এগুলা কি কেউ দেখে না? কেউ কি পড়ে না? এতো অন্ধ কেন সবাই?
কষ্ট করে এত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে, চোখের সামনে আবার উপস্থাপন করেছেন বলে অশেষ ধন্যবাদ।
লেখাটা পড়ে সেই স্লোগান টা আবার দিতে ইচ্ছা করছে
অশেষ ধন্যবাদ।।
কিছু কিছু গাড়ল সংখ্যা দিয়া গণহত্যা পরিমাপ করে। জাতি নিমূর্লের আকাঙ্ক্ষা নিয়া, একটা নিরস্ত্র মানুষ হত্যাও গণহত্যা।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
বাকরুদ্ধ..............................................................................
...............................
love the life you live. live the life you love.
শয়তানের থাবাটাই যেন গণহত্তা
আক্রোশ ক্রোধে পরাজিত পরমাত্তা
আমরা কেন সব ভুলে যাই
এই ক্লিষ্ট ক্লান্তি কেন স্বরণে নাই
ভোগ লালসায় বিস্তর এপার ওপাড়
স্বাধীনতা গণতন্ত্র বইছে অসার অকার
গুলিতে মেরেছে ত্রিশ লাখ, শরনার্থী শিবিরে মারা গেছে কত কত শিশু, দেশের ভেতর পালিয়ে বেড়িয়েছে চার কোটির মত মানুষ। তবু পাকি জারজেরা পাকিস্তানকে ঘৃণা করার কোন কারণ খুঁজে পায় না, এমন নপুংসকতার পরিণতি কেন এই জাতির কপালে জুটলো!
অসাধারণ লেখা, স্যালুট!
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
শ্রদ্ধা জানিয়ে গেলাম। আমরা আসলেই বোধহয় খুব বড় মাপের অকৃতজ্ঞ একটা জাতি।
লেখককে ভুট হয়ে প্রণাম।কোন ধরণের বিশেষণ বাতুলতা মাত্র।
আমার ভিতরে যে অনলবিদারি ঘৃণা জমা আছে ঐসব নষ্ট ঔরসে জন্ম নেয়া হত্যাকারীদের জন্য,সে ঘৃণা যেন আমার প্রজন্মান্তরে ক্রমেই ছড়িয়ে যায়,চক্রবৃদ্ধি হারে।
সে ঘৃণা যার মধ্যে নেই,তার ছায়া দেখাও মহাপাপ।
ভালো লিখেছেন।
চমৎকার লিখেছেন। শেয়ার দিলাম
দারুন।
এরকম লেখাগুলো একেকটা অমূল্য দলিল।
সহমত
........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা
...........................
কিছু বলার নেই।
০২ নং মন্তব্যের সাথে সহমত। শুধু অনুভব করবার আর হত্যাকারীদের ঘৃণা করবার।
কুলদা রায়কে ব্যক্তিগতভাবে তেমন পছন্দ না করলেও লেখাটির প্রতি শ্রদ্ধা রইলো। এ ধরণের লেখা জাতীয় দৈনিক বা অনলাইন দৈনিকগুলোতেও প্রকাশ করুন...সচেতনতা বাড়ুক
ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ কি এই মন্তব্যে উল্লেখ করা খুব জরুরী ছিল?
.....................
কোথাও কোথাও ভাষা বড় অপ্রতুল মন্তব্য করার জন্য...
----------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ...
লেখাটা পড়ে মনে হইতে ছিলো আমি ও বুঝি শরণাথী।মরার চয়ে খারাপ যন্ত্রনা ভোগ করতেছি।পরে লখা পড়া শেষে মনে হইলো আমি অনেক ভগ্যবান আমাকে এই যন্ত্রনা সহ্য করা লাগবেনা। আমার জন্য আমার দেশ প্রেমিক শহিদেরা নিজের রক্ত বিসর্জন দিয়ে একটা সুন্দর পৃথিবী রেখে গিয়েছেন।আর আমরাই তাদের কে অস্মান করতেছি ৪০ বছরে রাজাকার হারামি গুলার বিচার না করে।আমরা বড়ই অকৃতজ্ঞ জাতি। আমদের সামনে হারামির বাচ্ছা গুলা দপাইয়া বেড়ায়.........। আমরা চিল্লাইয়া কই আমাগো পূর্ব পুরুষেরা আমাগো লাইগা কিছু করে নাই...।
কিছু দিন আগে বাংলাদেশের এ প্রজন্মের এক তরুণের সাথে আলাপ হচ্ছিল। সে ভারতকে সমানে গালি-গালাজ করে যাচ্ছিল বাংলাদেশের সব কিছু হরণ করে নেয়ার জন্য। তার ভাষায় বাংলাদেশের ভূমি, খনিজ সম্পদ, পোশাক শিল্প- এ সবই আস্তে আস্তে হস্তগত করবে ভারত। তীব্র ভারত-বিদ্বেষী এই তরুণকে আমি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলাম। সে উন্নাসিক ভঙ্গিতে বলল, "ভারত নিজের স্বার্থেই বাংলাদেশকে সাপোর্ট করেছে পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য।'' আমি তাকে বলি, ''ভারত কি কারণে সাপোর্ট করেছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। পাক হানাদারেরা যখন লাখ লাখ লোককে মেরে ফেলছিল, তখন আমরা এই ভারতের কাছেই আশ্রয় পেয়েছি।'' তরুণ ভাইটির জবাব, ''ভারতের ঐ সাহায্যে আমাদের কি লাভ হইছে? পাকিস্তান তখন যে পরিমাণ লোক মারছিল, তার চেয়েও বেশী লোক মারা গেছে ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কারণে। আর পাকিস্তানকে হানাদার বলছেন; কিন্তু ভারত যে এখন বাংলাদেশের সব কিছু লুটে-পুটে নিচ্ছে, সে ব্যাপারে কি বলবেন?''
আশা করছি, এই লেখা পড়ে ঐসব তরুণেরা কিছুটা হলেও নিজের সত্যিকার ইতিহাস জানবে, আর উপরের মত করে নিজের গৌরবকে ধুলায় মিশিয়ে দেবে না। বিজয়ের ৪০ বছরের সূচনা লগ্নে এমন একটা হৃদয়-স্পর্শী লেখা উপহার দেয়ার জন্য লেখকদ্বয়কে অসংখ্য ধন্যবাদ!
লেখাটা আগেই পড়েছিলাম।
চোখে পানি এসে গিয়েছিল
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
পুরোটা পড়তে পারলামনা। এ লেখা সুস্থ মস্তিষ্ক নিয়ে পড়া যায়না; পড়লে সুস্থ থাকা যায়না। পেশাগত কারণে মৃত্যু আর মহামারী আমার পঠন পাঠনের বিষয়। আমার জন্যও এটা হজম করা কঠিন।
বাকরুদ্ধ হয়ে রইলাম।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
নতুন মন্তব্য করুন