কুলদা রায়
এমএমআর জালাল
নতুন দাদার বোনা বীজ-----------------------
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পঞ্চম ছেলে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন রবীন্দ্রনাথের নতুন দাদা। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকতেন। স্কুল অব আর্টে ভর্তিও হয়েছিলেন। জোড়াসাঁকো বাড়ির নাট্যাশালা প্রতিষ্ঠিত করে সেখানে অভিনয় করেন। মেজোদাদা সত্যেন্দ্রনাথের কর্মস্থলে গিয়ে ফরাসী ভাষা শিখেছেন। সেতার বাজনাতে তাঁর দক্ষতা এসেছে। চৈত্রমেলার জন্য গান লিখেছেন। ১৮৬৯ সালে ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
১৮৬৮ সালে বিয়ে করেছেন বাবার নির্বাচিত পাত্রী কাদম্বরী দেবীকে। তখন তার নিজের বয়স ১৯ বছর ২ মাস। আর কাদম্বরীর নয় বছর। রবীন্দ্রনাথের সাত বছর ২ মাস। কাদম্বরী লেখাপড়া জানতেন না। তাঁকে উপযুক্ত পড়াশুনা করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ঠাকুর পরিবারের দস্তুর মতো। সে সময়ে রবীন্দ্রনাথদের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগই ছিল না। জোড়াসাঁকোর ভেতরে চাকরদের কাছে বেড়ে উঠেছেন। ভেতরবাড়িটা দূরের। সেখানে যাওয়ার সুযোগ নেই। একারণে জোড়াসাঁকোর সীমানার মধ্যে থেকে বাইরের আর ভেতরের যা কিছুই তখন দেখতে পেতেন—তার সবই ছবির মত করে তাঁর কৌতুহলী চোখ পড়ে নিত। রাত নটার পরে তাদের পড়া শেষ হত। ভিতর বাড়ি যাওয়ার সময় পার হতেন খড়খড়ি দেওয়া লম্বা বারান্দা। দেখতে পেতেন জ্যোৎস্নার অস্পষ্ট আলোয় দাসীরা পাশাপাশি পা মেলে বসে আছে। উরুর উপর প্রদীপের সলতে পাকাতে পাকাতে মৃদুস্বরে নিজেদের দেশের গল্প করছে। তারপর বালকদের খাওয়া দাওয়া শেষ হত। তখন শঙ্করী কিংবা প্যারি কিংবা তিনকড়ি দাসী এসে রূপকথার গল্প বলত। শুয়ে শুয়ে কানে শুনতে পেতেন রূপকথা—আর দেয়ালের চুন খসা রেখার মধ্যে সেইসব রূপের গল্পগুলো দেখতে পেতেন। এইভাবে সাতবছরের রবিবালকের ঘুম নেমে আসত।
এর মধ্যে ২ বছরের বড়ো কাদম্বরী এসে গেছেন নতুন বৌঠান হয়ে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—তখন অন্তপুরের রহস্য আরও ঘনীভূত হইয়া উঠিল। যিনি বাহির হইতে আসিয়াছেন অথচ যিনি ঘরেরই, যাহাকে কিছুই জানিনা অথচ যিনি আপনার, তাহার সঙ্গে ভাব করিয়া লইতে ভারী ইচ্ছা করিত।
ভাব করার চেষ্টা করলেও দিদি স্বর্ণকুমারীর তাড়া খেয়ে ফিরে বাইরেই আসতে হত। সেখানে শুধু কাদম্বরীই নয়—তার আলমারীর কাঁচের ও চিনামাটির দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী দূর থেকে দেখে দেখে আঁশ মেটাতো হত। তবে ধীরে ধীরে এই সীমা ঘুচে গেছে। নতুন বৌঠানের সঙ্গে বালকদের ভাব হয়ে গেছে।
কাদম্বরী বড় হয়ে উঠছেন। আর জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ধীরে ধীরে স্ত্রী স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন। তিনি লিখেছেন তাঁর জীবন স্মৃতিতে—স্ত্রী স্বাধীনতার শেষে আমি এত বড় পক্ষপাতি হইয়া পড়িলাম যে গঙ্গার ধারের কোনো বাগানবাড়িতে সস্ত্রীক অবস্থানকালে আমি আমার নিজের স্ত্রীকে নিজেই অশ্বারোহন পর্যন্ত শিখাইয়াছিলাম। তাহার পর জোড়াসাঁকো বাড়িতে আসিয়া দুইটি আরব ঘোড়ায় দুইজন পাশাপাশি চড়িয়া বাড়ি হইতে গড়ের মাঠ পর্যন্ত বেড়াইতে যাইতাম। ময়দানে পৌঁছাইয়া দুইজনে সবেগে ঘোড়া ছুটাইতাম। প্রতিবাসীরা স্তম্ভিত হইয়া গালে হাত দিত।
এর ঠিক দশ বছর আগে তার মেজোদাদা সত্যেন্দ্রনাথকে বাড়ি থেকে স্ত্রীকে গাড়িতে করে জাহাজ ঘাটায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। দশ বছরের ব্যবধানে দেবেন্দ্রনাথের জীবনকালেই তাঁর আরেকপুত্র স্ত্রীকে নিয়ে ঘোড়া দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছেন।
ততদিনে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ বাড়ির প্রধান পুরুষ হয়ে উঠেছেন। নাটকের জন্য আর্কেস্ট্রা তলি করছেন, গান করছেন, গান বাঁধছেন, সেতার শিখছেন, ফরাসী ভাষা শিখছেন, জোঁড়াসাকোর বাড়িতে নাট্যশালা তৈরি করেছেন, সেখানে বাড়ির বউদেরও অভিনয়ে নামাচ্ছেন, ব্রাহ্মসমাজের সভায় বক্তৃতা করছেন, কোলকাতায় বিশিষ্ট ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন। সেই সঙ্গে পাটের ব্যবসা-- নীলের ব্যবসাও করছেন। হয়েছেন বহুকাজের কাজী। দ্বিজেন্দ্রনাথ দর্শন, গণিত আর ছড়া লেখা নিয়ে ব্যস্ত, সত্যদাদা সিভিল সার্ভিসে মগ্ন। হেমেন্দ্রদাদা ব্যায়াম আর ছেলেমেয়েদের বিচিত্রবিদ্যায় সময় কাটাচ্ছেন। এরা কেউই জমিদারীর কাজে আগ্রহী নন।
১৮৭৩ সালে দাদা সোমেন্দ্রনাথের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের উপনয়ন হয়। সাড়ে তেরো বছরের বৌঠান কাদম্বরী তখন খুদে দেওরদের জন্য হবিষ্যান্ন রেঁধে দিয়েছেন। তাতে পড়ত গাওয়া ঘি। ঐ তিনদিন তার স্বাদে, গন্ধে যুক্ত করে রেখেছিল লোভী ছেলেদের। তাদের মধ্যে এ সময় অন্তরঙ্গ সম্পর্কও গড়ে উঠেছে। ১৮৭৫ সালে রবীন্দ্রনাথ অনুবাদ করেছেন ম্যাকবেথ। সেটা পড়ে শোনাতে গেছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে। এই নাটকে একটি চরিত্রের নাম হেকেটি। সেই থেকে বৌঠানকে নাম দিয়েছেন হেকেটি।
এই ১৮৭৫ সালে দেবেন্দ্রনাথের স্ত্রী সারদাদেবীর মৃত্যু হলে ছোটো ছোটো দেবরদের দেখে রাখার কাজটি নিয়েছেন। তখন তাঁর বয়স ১৬।. আর রবীন্দ্রনাথের ১৪।
মা মারা গেলে এই বিরাট বাড়িটির দ্বায়িত্ব নিয়েছেন বড়ো দিদি সুকুমারী দিদি। সঙ্গে ছিলেন শরৎকুমারী, বর্ণকুমারী—এই দুই দিদি। আর ছিলেন বাড়ির অন্যান্য বউ—সর্বসুন্দরী, নীপময়ী, প্রফুল্লময়ী। কাদম্বরী নিঃসন্তান। স্বর্ণকুমারীর দুমাসের মেয়ে ঊর্মিলাকে নিজের কোলে তুলে নিয়েছেন এই বালকদের পাশাপাশি। তাকে খাওয়ান। স্নান করান। ঘুম পাড়ান। তিনি ঊর্মিলার মা হয়ে উঠেছেন। ঊর্মিলার বয়স যখন মাত্র পাঁচ। তখন কাদম্বরীদের তিনতলার ছাদের ঘর থেকে নমে আসা ঘোরানো সিঁড়ি থেকে একা একা নামতে গিয়ে এই ছোটো মেয়েটি পা ফসকে পড়ে গেল। মাথায় আঘাত পেয়ে মারা গেল। কেউ কেউ দোষ দিল কাদম্বরীর। প্রচণ্ড আঘাত পেলেন তিনি। বিষণ্নরোগে আক্রান্ত হলেন। এ সময় তাঁর স্বামী জ্যোতিরিন্দ্রও সংসারে সময় দিতে পারছেন না। নানাকাজে বাইর বাইরে থাকেন। তখন কাদম্বরীর বয়স ২১।. দুবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলেন। প্রথমবারে ফিরে এলেন। দ্বিতীয়বারে কাদম্বরী চলে গেলেন। সেদিন ১৮৮৪ সালের ১৯ এপ্রিল।
সারদা দেবী মারা গেলে দেবেন্দ্রনাথ জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তাঁর তেতলার ছাদের ঘরটি পেয়েছেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। স্বামীস্ত্রী দুজনে টবে ফুলের বাগান বসিয়েছেন। সেখানে আসর জমে ওঠেছে সাহিত্য ও সঙ্গীতের। এখানে কবিতা পড়তে আসতেন সেকালের বিখ্যাত কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী। সে কবিতা শুনে রবিরও ই্চ্ছে জাগে বিহারীলালের মত কবিতা লিখতে। বৌঠান তাকে উৎসাহও দেন। রবি লেখেন। বৌঠান শোনেন। আর উৎসাহ দেন দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—তিনি (জ্যোতিরিন্দ্র) আমাকে খুব একটা বড়ো রকমের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তাহার সংশ্রবে আমার ভিতরকার সংকোচ ঘুচিয়া গিয়াছিল। এইরূপ স্বাধীনতা আমাকে আর কেহ দিতে সাহস করিত না—সেজন্য হয়তো কেহ কেহ তাহাকে নিন্দাও করিয়াছে। কিন্তু প্রখর গ্রীষ্মের বর্ষার যেমন প্রয়োজন, আমার পক্ষে আশৈশব বাঁধানিষেধের পরে এই স্বাধীনতার তেমনি অত্যাবশ্যক ছিল। জ্যোতিদাদাই সম্পুর্ণ নিঃসংকোচে সমস্ত ভালোমন্দর মধ্য দিয়া আমাকে আত্মোপলদ্ধির ক্ষেত্রে ছাড়িয়া দিয়াছেন এবং তখন হইতেই আমার আপনি শক্তি নিজের কাঁটা ও নিজের ফুল বিকাশ করিবার জন্য প্রস্তুত হইতে পারিয়াছে।
সে সময়ে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ সরোজিনী নাটকটি লিখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ এই নাটকের জন্য ‘জ্বল জ্বল চিতা দ্বিগুণ দ্বিগুণ’ পরিণত গানটি লিখে দেন। জ্যোতিদাদা তাকে প্রমোশন দিয়ে এরপর থেকেই তার সমশ্রেণীতের তুলে নিয়েছিলেন। ১৮৭৭ সালে ভারতী পত্রিকা বের করেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। এই পত্রিকার কারণে রবির কাছে জীবন অর্থময় হয়ে উঠেছে। তখন তাঁর বয়স ১৬।
রবীন্দ্রনাথ দেখছেন এই সময় নতুনদাদা এই প্রথম গানের সুর তৈরি করছেন। সুর তৈরি করা যে খুব সহজ বিষয়—সেটা দাদাকে দেখে শিখেও নিচ্ছেন। নতুনদাদা তার পিয়ানোতে নতুন নতুন সুর করছেন। আর সুরে শান্ত ভঙ্গিতে অনায়াসে কথা বসিয়ে গান রচনা করে ফেলছেন বালক রবি।
দেবেন্দ্রনাথ এই কর্মোদ্যোগী জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে জমিদারি দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি জোড়াসাঁকোর বাড়িতে একতলায় অবস্থিত কাছারির অফিসে হিসাবপত্তর দেখছেন। সঙ্গে গুণেন্দ্রনাথ। দুপুরের খাবার খেয়ে গুণেন্দ্রনাথ দেবেন্দ্রনাথের বাড়ির একতলায় জমিদারির কাজ করতে করতে কাছারিকে দুই ভাই ক্লাবের মতোই করে নিয়েছেন। কাজের সঙ্গে হাস্যালাপের বড়োবেশি বিচ্ছেদ ছিল না। মাঝে মাঝে একটা কৌচে হেলান দিয়ে বসলে ছুটি-ছাটায় বালক রবীন্দ্রনাথ তাঁর কোলের কাছে এসে বসতেন। গুণেন্দ্রনাথ প্রায়ই তাঁকে ভারত বর্ষের ইতিহাসের গল্প বলতেন। এই বয়সকালেই তিনি চুরি করে দীনবন্ধু মিত্রের জামাই বারিক প্রহসন বইটি পড়ে ফেলছেন।
জমিদারীর হিসাব দেখার সঙ্গে সঙ্গে জ্যোতিরিন্দ্র জমিদারি মহালে চলে গেছেন। মাঝে মধ্যে গেছেন শিলাইদহে। সেখানে খুঁজে বের করেছেন লালন ফকিরকে। তার গান শুনতে শুনতে স্কেচ করে নিচ্ছেন। আর নিজে লিখছেন ঐতিহাসিক নাটক পুরুবিক্রম। সেটা ১৮৭২ সালের ঘটনা।
১৮৭৪ সালে সারদাচরণ মিত্র ও অক্ষয় সরকারের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে প্রাচীনকাব্য সংগ্রহ কয়েক খণ্ডে। নতুনদাদা সেগুলো কিনছেন। আর রবি পড়ে মনের মধ্যে গেঁথে নিচ্ছেন বৈষ্ণব কবিতার ভাব ও ভাষা। নতুনদাদা এই ছোটোভাইটিকে ধীরে ধীরে গড়ে তুলছেন। রবীন্দ্রনাথে রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠার বীজটিকে তিনি পরিকল্পিতভাবে বুনে দিচ্ছেন। জল দিচ্ছেন। আলো দিচ্ছেন। হাওয়া দিচ্ছেন। আর রবীন্দ্রনাথও এই বীজকে আপনার প্রাণের ভেতরে অঙ্কুরিত করে নিচ্ছেন। ভ্রুণমূলটি বেরুচ্ছে। বীজপত্রটি মেলছে মাটির ভেদ করে। কাণ্ড জেগে উঠেছে। শাখা প্রশাখা ছড়িয়েছে। পাতা ধরেছে। ফুল ও ফলে বিরাট মহীরূহে পরিণত হয়েছে। জমিদার বাড়ির ছেলেটি জমিদারীর বদলে আসমানদারীর খাতায় নাম লিখে ফেলেছেন। তিনি প্রকৃতি দেখেন। মানুষ দেখেন। মানুষের ভেতরে সহজ মানুষটিকে খুব সহজেই খুঁজে নিতে পারেন।
তার আগেই জ্যোতিরিন্দ্র নীলের ব্যবসা কিছু অর্থ করেছিলেন। সেটা দিয়ে তিনি জাহাজ কিনলেন। নাম দিয়েছিলেন নিজের নাটকের নামে—সরোজিনি। খুলনা বরিশাল রুটে এই জাহাজটি বৃটিশ জাহাজ কোম্পানীর সঙ্গে ব্যবসায়ে পাল্লা দিতে যাত্রীদের জন্য টিকিট ফ্রি করে দিলেন। ফ্রি টিকিটের সঙ্গে মাগনা খাওয়া দেওয়া হত যাত্রীদের। ফলে জাহাজ ব্যবসাটি মার খায়। বিপুল অঙ্কে ঋণী হয়ে পড়েন। কাদম্বরীর মৃত্যুর পরে আর তিনি বিয়ে করেননি। ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন সব কিছু থেকে।
১৮৯৮ সালে তিনি সত্যেন্দ্রনাথের বির্জিতলার বাড়িতে খুলেছেন পারিবারিক খাতা। এই খাতাটি একটি অনন্য বস্তু। খাতাটি রাখা থাকত সিঁড়ির কোণে। এখানে পরিবারের যো কোনো সমস্যই যে কোনো বিষয় নিয়ে মন্তব্য লিখতে পারতেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে লিখে খাতাটির উদ্বোধন করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথও পরবর্তি তিন বছর অনেক বিচ্ছিন্ন ভাবনাচিন্তা এখানে লিখে রেখেছেন। সবাই দেখেছেন পড়েছেন। মন্তব্য করেছেন। আর পরে তিনি এই ভাবনাগুলিকে আশ্রয় করে স্থায়ী পরিণত লেখা লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথকে শিলাইদহে নিয়ে গিয়েছিলেন ঘনিষ্ঠভাবে পরিচয করিয়ে দিয়েছিলেন বাংলা প্রকৃতির সঙ্গে।
জ্যোতিরিন্দ্র ৪৬ টি বই লিখেছেন। অসাধারণ স্কেচ করেছেন। বিখ্যাত চিত্রকর রোদেন স্টাইন জ্যোতিরিন্দ্রনাথের এই স্কেচ দেখে মন্তব্য করেছেন-
তিনি পেশাদার চিত্রকর নন।...তার অঙ্কিত মুখগুলিতে যে রেখা ও অবয়বের সংবেদনশীলতা দেখা তা ব্স্মিয়কর। আর আমার মনে হয়েছে, ছবিগুলি আঁকা হয়েছে নিরতিশয় স্বাভাবিকতার সঙ্গে। পাশ্চাত্য রীতিঅনুসরণ করবার অতিমাত্রিক প্রবণতা তাঁর মধ্যে নেই। আবার মুঘল ধারা অনুসরণ করবার সচেতন ঝোঁকও তার মধ্যে লক্ষ করা যায় না। এই প্রসঙ্গে তাঁর আঁকা ভারতীয় মহিলাদের ছবিগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার চিত্রশৈলী সরল ও বিনয়পূর্ণ। কিন্তু প্রত্যেকটি ড্রয়িং দেখে অনুভব করা যায় যে তাঁর মডেলের অন্তর্লীন অবয়বের সুকুমারত্ব এবং চরিত্রের বিশেষত্ব ফুটিয়ে তোলবার চেষ্টায় তিনি নিবিষ্ট হয়ে গেছেন।
আমরা অভ্যস্থ হয়ে গেছি জমকালো পোষাক পরা মহারাজাদের ছবিই কেবল দেখতে, বা ভ্রমণকাহিনীগুলির মধ্যে অদ্ভুত ধরনের মানুষের ছবি দেখতে। এইসব সংস্কৃতিবান, রুচিবান, ভদ্র ভারতীয় নারী আর পুরুষের সম্পর্কে কমই জানি আমরা। তাই এই সোজাসুজি আঁকা ছবিগুলি দেখা আমাদের কাছে এক অত্যন্ত আনন্দজনক অভিজ্ঞতা।
রবীন্দ্রনাথকেও পরবর্তিকালে ছবি আঁকতে দেখা যায়। তিনিও নতুন দাদার পথে এঁকেছেন সাধারণ মানুষ আর প্রকৃতির ছবি। এইখানে এসে বোঝা যায় দাদার হাত ধরে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ছোটো ছেলেটি তার ভেতরে বংশধারায় পাওয়া জমিদারী মুখোশটি ছুড়ে ফেলে মানুষের মুখটিকে স্থাপন করে নিয়েছেন। তিনি অন্যমানুষ। তিনি দ্বারকানাথের মত ব্যবসাদার নন। দেবেন্দ্রনাথের মত ধর্মমার্গী নন। তার পেশা আসমানদারী। তাঁর শেকড়টি মাটিতে, মানুষে, প্রাণে—বিশ্বের মহাপ্রাণে।
ছবি পরিচিতি.
১. নতুন দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ২. কাদম্বরী দেবী, ৩. জ্ঞানদানন্দিনী দেবী, সত্যন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাদম্বরী ঠাকুর। ৪. লালন শাহ।
দ্বাদশ পর্ব :[url=http://www.facebook.com/porimanob?sk=notes ] লিংক [/url]
একসঙ্গে ত্রয়োদশ পর্ব : লিংক
মন্তব্য
##অনেক সুন্দর, অনেক সুন্দর।
>উপনয়ন শব্দটির মানে কি?
>হেকেটি সম্পর্কে আবার নূতনভাবে জানতে পারলাম...
>বসে থাকা রবীন্দ্রনাথের পেছনে বাকী তিনজনের পরিচয় যদি দেন...
#ভাল লাগা অব্যাহত.....ভাল থাকুন সবসময়, এ প্রত্যাশায়
দারুন হয়েছে...
বিষণ্ন হইলাম।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
অসাধারণ......অতি সুন্দর বর্ণনা। সিরিজটা ফলো করছি দাদা।
নতুন মন্তব্য করুন