বঙ্গবন্ধু ফিরে এলেন বাংলাদেশে : পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে

কুলদা রায় এর ছবি
লিখেছেন কুলদা রায় [অতিথি] (তারিখ: সোম, ০৯/০১/২০১২ - ৯:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


কুলদা রায়
এমএমআর জালাল

চল্লিশ বছর আগের ঘটনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তান কারাগারে ছিলেন। ৮ জানুয়ারী, ১৯৭২ সোমবার পাকিস্তান থেকে তিনি মুক্ত হন। ১০ জানুয়ারী স্বাধীন শত্রুমুক্ত বাংলাদেশে ফিরে আসেন। বঙ্গবন্ধুর এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের খবরাখবর দেশ বিদেশের পত্রপত্রিকায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়।

ডেট লাইন ২৫ মার্চ, ১৯৭১--------
সেদিন কালো রাত। ঢাকায় ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলে পড়েছে পাক বাহিনী। আক্রমণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-- রাজারবাগ পুলিশ ফাঁড়ি। নির্বিচারে তারা বাঙ্গালি হত্যায় মেতে উঠেছে। পাকবাহিনীর এই হত্যাউৎসবের নাম অপারেশন সার্চ লাইট।

বঙ্গবন্ধু তখন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন। তার সহকর্মিদের ঢাকা ছাড়তে নির্দেশ দিলেন। গুলির শব্দ, মানুষের আর্তনাদ ভেসে আসছে। মৃত্যু কানের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাটি তার বার্তা আকাশে পাঠিয়ে দিয়েছেন শেষ মুহুর্তে।

তখন ২৫ মার্চ কালো রাতটি হেলে পড়েছে। এসে গেছে ২৬ মার্চ মধ্য রাত। বর্বর পাক সেনাবাহিনীর গাড়ি ৩২ নম্বর বাড়ির সামনে ধীরে ধীরে এগিয়ে এসেছে। সময় ১টা ১০ মিনিট। পাকা বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল। ঢাকা তখন নরকের আগুনে পুড়ছে—হয়ে উঠেছে মৃত্যুপুরী।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যাওয়া হল পাকিস্তানের লায়ালপুরে। সেখানে সামরিক কারাগারে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাখা হল। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে দেশোদ্রোহিতার অভিযোগ এনে বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে পাকিস্তানী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। ১ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুকে লায়ালপুর কারাগার থেকে নিয়ে আসা হয় মিয়ানওয়ালী কারাগারে। সেখানে রাখা হয় নারীদের জন্য সংরক্ষিত কারাগারে। ৪ ডিসেম্বরে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সে সময় ইয়াহিয়া খান ট্রাইব্যুনালের সদস্যদের ডেকে মুজিবকে ফাঁসিতে ঝোলানোর রায় লেখার জন্য আদেশ দিয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধপরিস্থিতির জন্য সে আদেশ ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত থাকে। এ সময় শেখ মুজিবের সেলের পাশে তার জন্য কবর খোঁড়াও হয়েছিল।

১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে পাকবাহিনী পরাজয় মেনে নিয়ে আত্মসমর্পন করেছে। পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে। সারা পৃথিবী বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবীতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে।

বঙ্গবন্ধুর মুক্তি : ডেটলাইন ৮ জানুয়ারী-----------
তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো অবশেষে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে দিতে বাধ্য হয়েছে। একটি পাক সামরিক বিমানে খুব গোপনে বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ঐ বিমানে আরও ছিলেন ডঃ কামাল হোসেন ও তার পরিবার। লন্ডনে সময় তখন ভোর ৮.৩০, ৯ জানুয়ারী, ১৯৭২ সাল। পৃথিবীর কেউ জানে না এ খবরটি।

ডেটলাইন ৯ জানুয়ারী--------
টাইম ম্যাগাজিন ২৪ জানুয়ারী, ১৯৭২ তারিখে লিখেছে—লন্ডনে বঙ্গবন্ধু উঠেছেন ক্লারিজ হোটেলে। প্রেসিডেন্ট মর্যাদায় একটি সুইটে রাইখা হয়েছে তাঁকে। সারাদিনটাই তিনি বিশ্রাম নিলেন। দেখা করলেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী হিথের সঙ্গে। বিকেলে একটি প্রেস কনফারেন্স করলেন।
ডেট লাইন ১০ জানুয়ারী

বঙ্গবন্ধুকে নেওয়ার জন্য একটি ভারতীয় ৭০৭ বোয়িং বিমান প্রস্তুত ছিল হিথ্রো বিমানবন্দরে। তিনি ভারতীয় বিমানে উঠলেন না। টাইম ম্যাগাজিন লিখেছে, দুটো কারণে তিনি ভারতীয় বিমান এড়িয়ে গেলেন। প্রথমত, ভারতীয় বিমানে উন্মাদ পাকিস্তানীদের নাশকতার আশঙ্কা ছিল। দুই. শেখ মুজিব সবাইকে বোঝাতে চাইলেন—বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। ভারতের উপর তারা নির্ভরশীল হতে চায় না। স্বদেশে ফেরার জন্য বঙ্গবন্ধু উঠে পড়লেন বৃটিশ রাজকীয় বিমান বহরের কমেট জেটে।

বাংলাদেশে ফেরার পথে বিমানটি দুই ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত যাত্রা বিরতি করেছিল দিল্লীতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা করেছিলেন।

টাইম ম্যাগাজিন লিখেছে, ৯ জানুয়ারী দিনটি ছিল রবিবার। বাংরাদেশের সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যে সারা দেশ আনন্দ উল্লাসে উত্তাল। অধির আগ্রহে সবাই অপেক্ষা করছে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের। বিধ্বস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যেও লোকজন ছুটতে শুরু করেছে ঢাকার দিকে। ১০ জানুয়ারী বদলে গেছে বাংলাদেশ।

পত্রপত্রিকার শিরোণাম : ১০ জানুয়ারী-------------
বাংলাদেশের পত্রপত্রিকার শিরোণামে এসেছিল কবিতা ও কবিতা। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের কবিতার পঙক্তি দিয়ে সংবাদের শিরোণামে লেখা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সংবাদ।

আগের দিন দৈনিক পূর্বদেশ শিরোণাম দিয়েছিল নজরুলের গানের লাইন-তোরা সব জয়ধ্বনি কর। মূল প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল, বাংলার মানুষ, তোরা সব জয়ধ্বনি কর। নেতা আসছেন বিজয়ীর বেশে, সোনার বাংলার আকাশে বাতাসে অই শোন তাঁর আগমনী বার্তা। আর ১০ জানুয়ারী পত্রিকাটি শিরোণাম করেছিল রবীন্দ্রনাথ থেকে—ভেঙেছ দুয়ার , এসেছ জ্যোতির্ময়।

১০ জানুয়ারির প্রধান শিরোণামটি নিয়েছিল রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত গান থেকে, ঐ মহামানব আসে, দিকে দিকে রোমাঞ্চ জাগে। মূল প্রতিবেদনে লিখেছে, আজ বহু প্রতিক্ষিত সেই শুভদিন। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির অন্তরের অন্তহীন আস্থা ও ভালোবাসা, ত্যাগ-তিতিক্ষার স্বর্ণসিঁড়িতে হাঁটিয়া স্বাধীন বাংলা ও বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুদীর্ঘ নয় মাস পরে আবার জননী বাংলার কোলে ফিরিয়া আসিতেছেন। পাক সামরিক জল্লাদের কারাগার তাঁকে ধরিয়া রাখিতে পারে নাই।

দৈনিক সংবাদের শিরোণামটি ছিল—বঙ্গবন্ধুর অপেক্ষায় ঢাকা নগরী। দৈনিক আজাদের শিরোণামটি ছিল একটু বড়ো। তারা লিখেছিল—জাতির উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে আজ পূর্বাহ্ণ সাড়ে এগারোটায় মুজিবের ঢাকা আগমণ।

প্রধান শিরোণামের পাশাপাশি অসংখ্য উপশিরোণামও ছিল পত্রপত্রিকায়। দৈনিক ইত্তেফাক লিখেছে—১. এসো বাংলার স্বাপ্নিক, স্বাগতম। ২. অভিনন্দন আসছে, পথের দুধারে অভ্যর্থনা। ৩. প্রতীক্ষাকুল শহরবাসী। ৪. আমি সর্বাগ্রে গৃহিণী। ৫. আজ ছুটি। ৬. ওকে চোখে দেখার আগে কিছুই বলিব না। ৭. আজ অপরাহ্ণ আড়াইটায়।
দৈনিক সংবাদের উপশিরোণাম ছিল, আকাশবানী ধারাবিবরণী প্রকাশ করিবে।
দৈনিক পূর্বদেশ প্রথম পৃষ্ঠায় বড় করে বঙ্গবন্ধুর একটি ছবি ছেপেছিল। নিচে লিখেছিল সম্পাদকীয়—মাগো, তোর মুজিব এলো ফিরে। আরও কয়েকটি উপশিরোণাম করেছিল পত্রিকাটি—১. জাতির পিতা আজ তাঁর নিজ লোকের কাছে ফিরছেন। ২. সাজো রেসকোর্স। ৩. এবার নতুন কথা শোনো।
দৈনিক আজাদের আরও সংবাদের শিরোণামে ছিল—১. রাজধানীতে আনন্দ-উল্লাশ। ২. ঢাকায় বিপুল সংবর্ধনার আয়োজন। ৩. হিথ-মুজিব ঘরোয়া বৈঠক।

বিদেশী পত্রিকার শিরোণাম-----------
নিউ ইয়র্ক টাইমসের ১১ জানুয়ারির প্রতিবেদনের শিরোণাম ছিল—শেখ মুজিব হোম, ৫০০০০০ গিম হিম রাউজিং ওয়েলকাম। ১০ জানুয়ারী এই প্রতিবেদন ঢাকা থেকে লিখেছিলেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের ফক্স কাটারফিল্ড। এটা ছিল পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদন। উপশিরোনামে প্রতিবেদক লিখেছিলেন—লক্ষ্য পূর্ণ করার আহ্বান। পাকিস্তানিরা বলেছিল তাদের সঙ্গে যে কোনো প্রকারে সম্পর্ক রাখতে। তিনি বলেছেন, ঐক্য শেষ হয়ে গেছে।

দি ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা ১১ জানুয়ারী লিখেছিল—জুবিল্যান্ট বেঙ্গালিস ওয়েলকাম মুজিবুর। ছোটো করে উপশিরোণাম দিয়েছিল—শেখ রিজেক্টেড হেট বাট সেজ ওল্ড টাইস আর কাট ডাউন। প্রতিবেদনটি সরাসরি ঢাকা থেকে পাঠিয়েছিলেন তাদের স্টাফ রাইটার লুইস সেমেনসভ।

লন্ডনের ডেইলী টেলিগ্রাফে প্রকাশিত প্রতিবেদনের নাম ছিল--মুজিব কাটস টাইস উইথ পাকিস্তান। লেখক ক্লেরে হলিংওয়ার্থ।
নয়া দিল্লীর দি স্টেটসম্যান পত্রিকার ১১ জানুয়ারীর শিরোণামে ছিল—ঢাকা গোস ডেলিরিয়াস—মিলিয়ন আউট টু গ্রেট রমনা। সাপ্তাহিক টাইম ম্যাগাজিন ২৪ জানুয়ারী দীর্ঘ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। শিরোণাম—বাংলাদেশ—এ হিরো রিটার্ন হোম

ঢাকার আকাশে বঙ্গবন্ধু-----------
সাপ্তাহিক টাইম ম্যাগাজিন লিখেছে—ঠিক দুপুর দেড়টায় প্রখর রোদের মধ্যে ঢাকার আকাশে বৃটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীর একটি কমেট জেট দেখা গেল। ঠিক তখনি জেটটি নামল না। আকাশ থেকে শেখ মুজিব তার সোনার বাংলাকে দেখার ইচ্ছে করেছেন। সে কারণে প্রায় ৪৫ মিনিট আকাশ চক্কর মেরে মেরে পাইলট তাকে সোনার বাংলাকে দেখাল। সোনার বাংলা তখন শ্মশান। শেখ মুজিব অবশেষে স্বদেশে ফিরতে পারলেন।

তেজগাঁ বিমান বন্দরে ----------
৯ মাস ব্যাপী যুদ্ধে তেজগাঁ বিমান বন্দরটি বোমায় ক্ষতবিক্ষত। মাইলখানেক রানওয়ে কোনোক্রমে ঠিকঠাক করার চেষ্টা হয়েছে। দীর্ঘদিন পরে কমেট জেটের মত বড় ধরনের বিমান এখানে নামেনি। নামার মত পরিস্থিতি ছিল না। বৃটিশ কমেট জেটটি প্রথম তেজগাঁ বিমানবন্দরের ক্ষতিগ্রস্থ রানওয়েতে নেমে এলো। পাইলট খুব সাবধানে টারমাকে জেটটি থামাল। ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, হাওয়ায় প্রচুর ধুলো উড়ল।
সেদিন তেজগাঁ বিমানবন্দরে মাত্র দুই হাজার মানুষকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আর দেওয়ালের উপরে দাঁড়িয়ে ছিল হাজার হাজার মানুষ। জেট বিমানটি মাটি স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লাগের এক নেতা বলে উঠলেন—জয় বাংলা, বঙ্গবন্ধু জিন্দাবাদ। তখন উপস্থিত সবাই গগন বিদারী আওয়াজে আকাশে বাতাসে প্রতিধ্বনি তুলল—জয় বাংলা, বঙ্গবন্ধু জিন্দাবাদ। স্টেটসম্যান পত্রিকায় লেখা হয়, জনতা শ্লোগান দিচ্ছে-- জাতির জনক দীর্ঘজীবী হোক। মুজিব ভাই দীর্ঘজীবী হোক। তখন এছাড়া আর কোনো কথা নেই।

কমেট জেট বিমানটি টারমাকে থামার পরে কিছুক্ষণের মধ্যেই জেটের দরোজা খুলে গেল। শেখ মুজিব খোলা দরোজার দিকে এগিয়ে গেলেন। দরোজায় তার মুখটি দেখা গেল। দীর্ঘ কারাবাসের কারণে তাঁর মুখটি একটু রোগাটে দেখাচ্ছিল। সিঁড়িতে তিনি পা রাখলেন। ঠিক তখনি আওয়ামী লীগের তরুন নৃতৃবৃন্দ এবং মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা সিঁড়িতে দৌঁড়ে উঠে গেল। সবার আগে শেখ মুজিবের কাছে পৌঁছে গেল মুক্তি বাহিনীর এক সদস্য। ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, ঐ লোকটি ছিল দীর্ঘদেহী। তার পরণে খাকি পোষাক। প্যান্টের পিছন পকেটে দুটো অটোমেটিক পিস্তল। লোকটি তার সবল বাহু দিয়ে শেখ মুজিবকে বুকে মধ্যে টেনে নিল। এভাবে একের পরে আলিঙ্গনে তের মিনিট কেটে গেল। উপস্থিত জনতা শ্লোগান দিয়ে চলেছে—জয় বাংলা। বঙ্গবন্ধু জিন্দাবাদ।

লাল ও হলুদ ফুলের মালায় শেখ মুজিবের গলা ভরে উঠেছে। ফুলের মালার পিছনে তার মুখটি ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। তার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। তাই অনেক মালার সুতো কেটে দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু নতুন নতুন মালায় তার গলা ভরে উঠছিল।
ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা শেখ মুজিবকে ঘিরে ছিল। তখন লাল কার্পেটের দুপাশে সারিবদ্ধভাবে বাংলাদেশ সরকার ও কুটনৈতিক কোরোর সদস্যবর্গ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিলেন।

সেখানে বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানালেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদসহ মন্ত্রীপরিষদ। ভারত ও ভুটান তখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। তাদের হাইকমিশনারদ্বয় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে হাত মেলালেন। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন বৃটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার সেরে ব্রিটেন, রাশিয়ার কনসাল জেনারেল এবং অন্যান্য দেশের কুটনীতিকরা। চিন ও ইরানের কুটনীতিকরা ছিলেন অনুপস্থিত। মার্কিন যুক্তরাষ্টের কনসাল জেনালে হার্বার্ড ডি স্পিভাকও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, স্পিভাক সামান্য ঝুঁকে এই বাঙালি নেতাকে স্বাগত জানালেন। হাত মেলালেন। বঙ্গবন্ধুকে বলেছেন, ঢাকায় ফিরে আসার জন্য স্বাগতম। বঙ্গবন্ধু শুনে হাসলেন। উত্তরে বললেন, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

স্পিভাক নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিনিধিকে জানাচ্ছেন, তিনি এই অনুষ্ঠানে সরকারীভাবে আসেননি। ব্যক্তিভাবে দাওয়াত পেয়ে এসেছেন। বাঙালি-আমেরিকার সম্পর্কটা দুর্বল। ভালো নয়। এই উপস্থিতির কোনো রাজনৈতিক গুরুত্ব নেই। দি ওয়াশিংটন পোস্ট আরও জানাচ্ছে, স্পিভাক এসেছেন বাংলাদেশ সরকারের দাওয়াত পেয়ে। এই দেশটিতে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির প্রতাবর্তন আনুষ্ঠানের সাক্ষী হওয়ার জন্য সরকারের তরফ থেকে তাঁকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। মার্কিন কনসাল জেনারেল স্পিভাক স্পষ্ট করেই বলেছেন, সেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটি হলেন দেশটির পিতা।

শেখ মুজিব হেঁটে গেলেন একটি ছোটো ডায়াসে। প্রাক্তন ইস্ট বেঙ্গল রেজমেন্টস, মুক্তিবাহিনীর কর্মকর্তা তাকে সালাম দিল। তিনি সালাম গ্রহণ করলেন। এরপর সুশৃঙ্খল বাহিনীর মধ্যে দিয়ে হেঁটে গেলেন। এইভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ ও বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করল।

শেখ মুজিব যখন একটি রোস্ট্রামে দাঁড়িয়েছিলেন, সবাই তাঁকে দেখতে পাচ্ছিল, তখন তাকে বেশ রোগাটেই লাগছিল। ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। এর মধ্যেই তাঁকে অদ্ভুত প্রাণবন্তও মনে হচ্ছিল। এই বিমানবন্দর দিয়েই তাঁকে পাকিস্তানীরা বন্দী করে নিয়েছিল। তখন ছিল কালো রাত্রি। ৯ মাস পরে পাকিস্তানী কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে আজ এই ১০ জানুয়ারী সেই তেজগাঁ বিমানবন্দর দিয়ে স্বদেশে ফিরে এসেছেন। এখন চারিদিকে উজ্জ্বল দিনের আলো। এই দিনের আলো তিরিশ লক্ষ মানুষের আত্মদানে এসেছে। শেখ মুজিব এই নিহত মানুষের জীবিত আত্মীয় বাঙালিদের মধ্যে ফিরে এসেছেন।

দি ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, তেজগাঁ বিমানবন্দরের শৃঙ্খলা সকালে ভালোই ছিল। কিন্তু মুজিব যখন জেট থেকে নেমে এলেন তখন অধীর বাঙালিদের আর আটকানো গেল না। বাঁধাভাঙা জোয়ারের মত সকল শৃঙ্খলা ভেসে গেল। মুক্তিবাহিনীর টগবগে সদস্যরা সংবাদপত্রের প্রতিনিধি সাংবাদিক, পটোগ্রাফার ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের ঠেলেঠুলে শেখ মুজিবের কাছে চলে গেল। তাকে ঘিরে ধরেছিল।

সে সময়ে শেখ মুজিবের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। কিন্তু তাদের উপস্থিতি ম্লান হয়ে গেল। একজন ভারতীয় মেজর ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছিল, এক বিগ্রেড ভারতীয় সৈন্য—প্রায় ৪০০০ জন সৈন্য তেজগাঁ বিমানবন্দরের চারিদিকে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে ছিল। তারা এমনভাবে ছিল যে চোখে পড়েনি। সে সময় বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় নিরাপত্তাটা দেখাতে চায়নি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, বিশ্ববাসী দেখুন, তারা নিজেরাই তাদের নেতাকে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম।

বিমানবন্দরে একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখার কর্মসূচি ছিল শেখ মুজিবের। কিন্তু ছাত্রনেতা ও মুক্তিবাহিনীর প্রবল ভিড়ে এই কমর্সূচিটি বাতিল হল। অদূরেই একটি লাল ও নিল রঙের খোলা ট্রাক দাঁড়িয়েছিল। তার উপরে ইতিমধ্যেই তরুণ নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকরা অবস্থান নিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে তাঁর সহকর্মিরা কখন যে ট্রাকে তুলে দিল টেরই পাওয়া গেল না। ধীরে ধীরে ট্রাকটির সামনে তিনি চলে এলেন। একটি রুমাল বের করে তিনি চোখ মুছতে লাগলেন। হাসলেন। খুব হালকা করে জনতার দিকে হাত নাড়তে লাগলেন। ট্রাকটি অতি ধীর ও শান্তভঙ্গিতে গেটের দিকে এগিয়ে গেল। এ সময় তাঁর স্ত্রী ও দুছেলে ভিড়ের মধ্যে মিশে গেল। তাদেরকে আলাদা করে চেনা গেল না। এখানে উপস্থিত সবাই স্বাধীন দেশের বাঙালি। আর শেখ মুজিব তাঁদের নেতা।

রাজপথে-------------
টাইম ম্যাগাজিন লিখেছে, সোমবার দুপুরের মধ্যে শত শত হাজার হাজার উৎফুল্ল বাঙালি রাস্তার দুধারে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের হাতে উড়ছে বাংলাদেশের পতাকা। আর গলা ফাটিয়ে শ্লোগান দিচ্ছে—শেখ মুজিব, শেখ মুজিব।

তেজগাঁ থেকে ঢাকার কেন্দ্রস্থল রমনায় রেসকোর্স ময়দানের দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। এই সারা রাজপথ জুড়েই জনতার ঢল। কেউ বাদ্যি বাজনা বাজাচ্ছে। কেউ কেউ নাচছে। কেউ কেউ গান গাইছে। আর ট্রাকের সামনে ফুলের পাপড়ি ছুড়ে দিচ্ছে। শেখ মুজিব ফুলের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। চারিদিকে গগণ বিদারী শ্লোগান উঠেছে—জয় বাংলা। বঙ্গবন্ধু জিন্দাবাদ। খোলা ট্রাকের উপরে বঙ্গবন্ধুর বাঁদিকে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, ডানপাশে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তার হাতের পাশ থেকে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে খোন্দকার মোশতাক আহমদ। তারপর আছেন শাহজাহান সিরাজ, আসম আব্দুর রব, এদের উপরে চশমা চোখে শেখ কামাল, তার সামনে শেখ মণি। তাজউদ্দিনের পাশে নূরে আলম সিদ্দিকী, আব্দুর কুদ্দুস মাখন, তোফায়েল আহমদ। সবার উপরে দীর্ঘদেহী খসরু। সৈয়দ নজরুলের মাথার উপরে ফণিভূষণ মজুমদার এবং গুম্ফধারী কেএম ওবায়দুর রহমান প্রমুখ। আর ফুল। চারিদিকে আর মানুষ। গাছপালা। বঙ্গবন্ধু চোখ মুছছেন রুমাল দিয়ে। কাঁদতে কাঁদতে হাসছেন। ট্রাকটি পিঁপড়ের গতিতে এগিয়ে চলেছে রেসকোর্সের দিকে। রোসকোর্সে পৌঁছাতে আড়াই ঘণ্টা লেগে গেল। সারা পথ জুড়ে পাঁচলক্ষ মানুষ ফুলের পাপড়ি দিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা দিচ্ছে।

রমনা রেসকোর্স ময়দান-------------
রাজপথের মত রোসকোর্স ময়দানও জনসমুদ্র। তিল ধারনের ফাঁক নেই। বঙ্গবন্ধুর ট্রাকটি ময়দানের প্রবেশ করতেই জনতা জয় বাংলা শেখ মুজিব জিন্দাবাদ ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুলল। নৌকাসদৃশ্য একটি সভামঞ্চে বঙ্গবন্ধু দাঁড়ালেন। তিনি দেখলেন—বাংলার মানুষ তাঁকে দেখে আনন্দে আত্মহারা। বাঁধভাঙা বিজয়ের উৎসব চারিদিকে। সবার চোখে প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার আনন্দ-অশ্রু। শেখ মুজিবও আনন্দে কাঁদছেন। এই আনন্দ আর কান্নার মধ্যেই তিনি ফিরে এসেছেন এই স্বাধীন বাংলাদেশে।

তখন ২৫ দিনে শিশু রাষ্ট্র বাংলাদেশ। যুদ্ধ বিধ্বস্ত। প্রতিতিটি পরিবারে প্রতিষ্ঠানে প্রতিটি ক্ষেত্রে পাক বাহিনীর ৯ মাসের ধ্বংসলীলার চিহ্ন দগদগে ক্ষতের মত ফুটে আছে। তিন কোটি মানুষের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত। এক কোটি শরণার্থী ভারত থেকে এসে খোলা আকাশের নীচে অবস্থান করছে। তাদের ঘর নেই। পেটে ভাত নেই। পর্যাপ্ত বস্ত্র নেই পরণে। নগর বন্দর হাট বাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংসস্তুপ। গুদামগুলি শস্যহীন। খাদ্য ঘাটতি তিন লাখ মেট্রিক টন। হাজার হাজার মাইল রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট, বাস-ট্রাক নৌযান—যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিধ্বস্ত। আর অসংখ্য মানুষের হাতে অস্ত্র। গর্তে লুকিয়ে আছে পরাজিত পাকবাহিনীর এদেশীয় দালাল ধূর্ত রাজাকার, আল বদর, আল শামস। তারা আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছে। মাওবাদি চরমপন্থীদের সশস্ত্র গলাকাটা রাজনীতির উৎপাত শুরু হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলার বলতে কিছু নেই। সব মিলিয়ে একটি ভয়ঙ্কর চিত্র শেখ মুজিবের সামনে। এটা একটা নতুন যুদ্ধক্ষেত্র। তিনি এই অবস্থাকে মাথায় নিয়ে রেসকোর্সে বাংলার মানুষের মধ্যে তিনি দাঁড়িয়েছেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, উপস্থিত জনতার উদ্দশ্যে শেখ মুজিব বললেন, আমার আশা পূর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। বলতে বলতে তাঁর গলা ভেঙে এলো।

তিনি বলছেন, পাক বাহিনী ৯ মাসে ৩০ লক্ষ বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তবে আজ প্রতিশোধ গ্রহণের দিন নয়। তিনি রুমালে চোখ ঢেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। স্তব্ধ রেসকোর্স। সবার চোখে জল।

পাকিস্তানের উদ্দেশ্য তিনি বললেন, তোমরা আমার দেশের লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছ। মা ও বোনদের সম্ভ্রম হানি করেছ। ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছ। এক কোটি মানুষকে তাড়িয়ে ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছ।

তোমাদের সঙ্গে আর কোনো ধরনের ঐক্য সম্ভব নয়। আমরা স্বাধীন দেশের মানুষ। তোমাদের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ। আমাদেরকে আমাদের মত করে থাকতে দাও।

তিনি দেশবাসীকে অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্ট সহ্য করে বিশাল আত্মত্যাগের বিনিময়ে দেশকে স্বাধীন করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি এই জনসভায় দাবী করেন, পাকবাহিনী ৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করেছে। এই গণহত্যার জন্য দায়ী অপরাধীদের তিনি বিচার দাবী করলেন। তিনি বললেন, আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনেই এই বিচার হবে। টাইম ম্যাগাজিন লিখেছে, এই গণহত্যা তদন্তে জাতিসংঘকে একটি কমিশন তৈরি করতে অনুরোধ করলেন তিনি। তিনি সতর্ক করে বললেন, যদি জাতি সংঘ সেটা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমরা নিজেরাই সেটা করব।
তিনি বলেন, আজ সোনার বাংলার কোটি কোটি মানুষ গৃহহারা, আশ্রয়হারা। তারা নিঃসম্বল। আমি মানবতার খাতিরে বিশ্ববাসীর প্রতি আমার এই দুঃখী মানুষদের সাহায্য দানের জন্য এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি।

৩২ নম্বর বাড়িতে -------------
ডেইলী টেলিগ্রাফ লিখেছে, জনসভা শেষে তিনি একটি গাড়িতে করে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে এলেন। সেখানে এক আবেগঘণ পূনর্মিলন হল তাদের পরিবারের সঙ্গে। তার বন্ধুরা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানাল। শেখ মুজিব তাঁর দুই মেয়েকে বুকে টেনে নিলেন। তাঁর ৯০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ বাবার পায়ের কাছে হাঁটু ভেঙে সালাম করলেন। ঘরে ঢুকে তাঁর আশি বছর বয়স্কা মাকে জড়িয়ে ধরে ভেঙে পড়লেন। মুজিব ফিরে এসেছে সোনার বাংলায়।

একটি গান----------------
ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে একটি গান গেয়েছিলেন। এইচএমভি গানটির একটি রেকর্ড বের করেছিল। গানটি—কথা গুলো—

বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায় তুমি আজ
ঘরে ঘরে এত খুশী তাই।
কী ভালো তোমাকে বাসি আমরা, বলো কী করে বোঝাই।।
এদেশকে বলো তুমি বলো কেন এত ভালবাসলে ,
সাত কোটি মানুষের হৃদয়ের এত কাছে কেন আসলে,
এমন আপন আজ বাংলায়-- তুমি ছাড়া কেউ আর নাই
বলো, কি করে বোঝাই।।

সারাটি জীবন তুমি নিজে শুধু জেলে জেলে থাকলে
আর তবু স্বপ্নের সুখী এক বাংলার ছবি শুধু আঁকলে
তোমার নিজের সুখ-সম্ভার কিছু আর দেখলে না তাই
বলো কি করে বোঝাই।।

সূত্র :
টাইম, ২৪ জানুয়ারী, ১৯৭২
নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১১ জানুয়ারী, ১৯৭২
দি ওয়াশিংটন পোস্ট, ১১ জানুয়ারী, ১৯৭২
দি টেলিগ্রাফ, ১১ জানুয়ারী, ১৯৭২
দি স্টেটসম্যান, নিউ দিল্লী, ১১ জানুয়ারী, ১৯৭২
একটি ভিডিও প্রতিবেদন : এনবিসি নিউজ
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পত্রিকার শিরোণামগুলো ছিল কাব্যময় : নওশাদ জামিল
সেদিন ছিল ১০ই জানুয়ারী ১৯৭২ : মুস্তাফিজ
প্রিয় দেশ প্রিয় মানুষ : সেলিনা হোসেন
মহানায়কের প্রত্যাবর্তন : মুহাম্মদ সবুর


মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

দারুণ পোস্ট!

মুজিব হত্যা করেই বাংলাদেশকে হত্যার শুরু হয়! বাংলাদেশকে ওই একজনই দাঁড় করাতে পারতেন! কী অন্ধের মতো তিনি বাংলার মানুষকে বিশ্বাস করেছিলেন!

যে জাতি নিজের পিতাকে হত্যা করে, তার পতন হবে তাতে তো আর সন্দেহ করা যায় না!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

স্যাম এর ছবি

চলুক

জিজ্ঞাসু এর ছবি

বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে হয়ত আমাদের দেশটা অন্যরকম হতে পারত। তিনি বেঁচে থাকলে হয়ত যুদ্ধাপরাধের বিচার অনেক আগেই হত। যদিও বঙ্গবন্ধু কুটনৈতিক কারণে পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং কোলাবোরেটরদেরও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে হয়ত নতুন করে আর এই ইস্যু উঠত না; অথবা মানুষের উত্তরোত্তর অভিযোগের কারণে বঙ্গবন্ধু হয়ত যুদ্ধাপরাধের বিচার আবার নতুন করে করতেন। তবে অনেক আগেই এসবের একটা সুরাহা হত। এখনতো হচ্ছে যুদ্ধাপরাধ নিয়ে রাজনীতি।

সবকিছুর জন্য আমি জাতির পিতাকেই দোষারোপ করব। তিনি অভিভাবক হয়ে আমাদেরকে রক্ষা করতে পারেননি। তিনি নিজে এবং তার কাছের লোকেরাই তার বিফলতার জন্য দায়ী। আর তিনি যদি শাসক না হতে চাইতেন তাহলে মনে হয় আরো বেশি ভাল হত। তিনি অভিভাবক হয়েই যদি থাকতেন!!!

মানসপটে যদি সেই আবেগঘন তেজগাঁ, রেসকোর্সের দুপুরের কথা দৃশ্যায়িত করি তাহলে মনে হয় বাঙলার মানুষ কি অপরিসীম ভরসা করেছিল সেই দিন তার উপর। কি অপরিসীম ভালবাসা ছিল "জয় বাংলা, বঙ্গবন্ধু জিন্দাবাদ" ধ্বনির মধ্যে।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

কাজের পোস্ট।

তাপস শর্মা এর ছবি

কুলদা রায় আপনাকে ধন্যবাদ নয়। একটা গ্র্যান্ড স্যালুট। কিছু বলতে ইচ্ছে করছেনা আর। শুধু বলিঃ

তিনি বলছেন, পাক বাহিনী ৯ মাসে ৩০ লক্ষ বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তবে আজ প্রতিশোধ গ্রহণের দিন নয়। তিনি রুমালে চোখ ঢেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। স্তব্ধ রেসকোর্স। সবার চোখে জল।

পাকিস্তানের উদ্দেশ্য তিনি বললেন, তোমরা আমার দেশের লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছ। মা ও বোনদের সম্ভ্রম হানি করেছ। ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছ। এক কোটি মানুষকে তাড়িয়ে ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছ।

- চোখের জল আটকাতে পারছিনা।

আর রতন দা যা বলল

মুজিব হত্যা করেই বাংলাদেশকে হত্যার শুরু হয়! বাংলাদেশকে ওই একজনই দাঁড় করাতে পারতেন! কী অন্ধের মতো তিনি বাংলার মানুষকে বিশ্বাস করেছিলেন!

যে জাতি নিজের পিতাকে হত্যা করে, তার পতন হবে তাতে তো আর সন্দেহ করা যায় না!

- আজও পাকিস্তানকে এই জাতি প্রশ্রয় দেয় স্ব-ধর্মের নাম দিয়ে... ঘাতক, ঘাতক, ঘাতক।

কিভাবে যেন মনে হয় একটা কাঁটাতার আজ ভাঙলে আজ ভালো হতো।

নরাধম এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ বিস্তারিত লিখার জন্য।

সাম্য এর ছবি

চলুক

সাজ্জাদ সাজিদ এর ছবি

আবেগতাড়িত হচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিলো তেজগাঁ বিমান বন্দরে চলে যাই, দৌড়ে গিয়ে আমিই সবার আগে জড়িয়ে ধরি তাঁকে। তিনি যে আমার সবচেয়ে আপনা জন। এই ২০১২তে বসেই ঐ অমূল্য চোখের পানি ভাগ করে নেই কি অজান্তে...

সাফি এর ছবি

চমৎকার লাগলো

অতিথি লেখক  এর ছবি

আবেগ তাড়িত হলাম লেখাটা পড়ে.......................ভালো লাগলো .................

রোকসানা রশীদ এর ছবি

পড়তে পড়তে কখন যে নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরতে শুরু করলো বুঝতেই পারি নাই!!

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

স্যালুট ... চমৎকার একটা লেখার জন্যে

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ডাক্তারের দিনকাল এর ছবি

পোস্টটা পড়ে খুব খুব ভালো লাগলো। অসাধারণ একটা পোস্ট।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

অসাধারণ লাগলো!!! আবেগে কেঁপে উঠলাম!!! উত্তম জাঝা!


_____________________
Give Her Freedom!

চরম উদাস এর ছবি

দেরীতে হলেও পড়লাম, দারুণ।

লাবণ্যপ্রভা এর ছবি

গুরু গুরু

স্যাম এর ছবি

কিছু লেখা প্রাসঙ্গিক সবসময় - জয় বাংলা! জয় বঙ্গবন্ধু!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।