হীরাবাড়ি আমার বাবার মামাবাড়ি। সে বাড়ি ভরা বাগান। বাগান থেকেই গাবগাছটি কেটে আনা হল। ফলমন্ত গাছ। তখনো পাকা গাব ধরে আছে। বাবার মেজো মামী একটু গাইগুই করে করেছিল। বাবামশাই হীরাবাড়ির সবেধন একমাত্র ভাগ্নে। চাইলে আমগাছটাও কেটে আনা যায়। মামীর দিকে চেয়ে বাবার মেজো মামা হুক্কা মুখ থেকে নামিয়ে শুধাল, কি করবি গাছ দিয়া?
বাবা গাছের গোড়া কাটতে কাটতে বলে দিল, পুকুরে ফেলব।
সুতরাং গাছটি কাটা হল। ডালপালা ছেটে বাবার মামারা কাঁধে করে গাবগাছটি আমাদের পুকুরেই ফেলে এল। পুকুরে পড়ে শব্দ হল—ঝপ্পাৎ। আমরা গাব খেতে খেতে বললাম অ বাবা, এইবার কী করবা?
বাবা বলল, ঝপ্পাৎ।
গাছটার কথা এইভাবে শেষ হয়ে গেল। আর কিছু নয়। জলের মধ্যে তলিয়ে গেলে সব কিছু গলে যায়। তারপর নাই।
এর মধ্যে আমাদের বাড়ি বদল হয়েছে। দোতলা থেকে আমরা প্রভু যীশুর গোয়াল ঘরে উঠে এসেছি। দাড়িয়াল রামকৃষ্ণর ছবির উপরে কার্ল মার্কসের ছবি বসেছে। রান্না ঘরটি ভেঙে আনা হয়েছে। হীরাবাড়ির বাঁশঝাড় থেকে বাবার মামারা খুশি মনে বাঁশ কেটে দিয়ে গেছে। সেই বাঁশ ছেঁচে ছুঁচে হয়েছে রান্না ঘরের খুঁটি। তার উপরে চাল। চালে পোড়া মাটির টালি। চারদিকে দরমার বেড়া।
এর মধ্যেই কদিন পরে পুকুর থেকে তোলা হল গাবগাছটি। ততদিন গা থেকে বাঁকলগুলো খসে গেছে। বেরিয়ে পড়েছে কাঠের কঙ্কাল। আর বাকলপচা গন্ধ। কদিন ছায়ার মধ্যে পড়ে থাকল।
গন্ধ যেদিন উবে গেল—সেদিনই হরিদাস পিসেমশাই এলেন। গাবগাছটাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলেন। একটি কুড়াল দিয়ে কেটে কুটে গড়ে ফেললেন ঢেঁকি। ঢেঁকির মাথার দিকে মোনাই। কামার বাড়ি থেকে আনা হল লোহার খাড়ু। আর নোটটি তৈরি হল মাটির কলসির ভাঙা চাড়া দিয়ে। লেপে পুছে সত্যি সত্যি আমাদের রান্না ঘরের পশ্চিম ধারে ঢেঁকি বসল। বাবা মাকে বলল, এই নেও তোমার ঢেঁকি। দেখে মায়ের চোখে জল। জীবনে আর কিছু নয়—একটি ঢেঁকির সাধ ছিল। নতুন বাড়িতে এসে পূর্ণ হল।
ঘুল্লীবাড়ির বালা ঠাকুরুণ সব টের পান। তিনি এলেন তেল সিন্দুর দিতে। তার নাকে নোলক দোলে। মাথায় লম্বা ঘোমটা। একটু বয়েস হয়েছে। চুল পাকে নি। তেল সিন্দুর মেখে গান ধরলেন--
তোমার ঢেঁকি হইলে যাইতেম বেঁইচে
রাঙা চরণতলে নাইচে নাইচে ।।
ঢিপ্ঢিপাইয়ে যাইতেম মারা, মাথা খুইড়ে হইতেম সারা—
কানের লগে কচ্কচাইয়ে মানটি তোমার নিতেম যাইচে ।।
গান শেষে বালা ঠাকুরুণ বললেন, এবার আলা চাইল আনোতো বউমা। নোটে দিয়া পাহার দেওন করতি পারি।
মা তখন এদিন ওদিক চায়। হাড়ি কুড়ি হাতায়। গলা সরু করে বলল, সেদ্ধ চাইলে হইবে না খুড়ি?
বালা ঠাকুরণ এক গাল হাইসা কয়েন, সে কি কইরা হয়। ত্যালের কাম কি জল দিয়ে হয় গো মা?
তিনি নিজের বোঁচকাটি খুললেন। বোঁচকার মধ্যে বোঁচকা। তার মধ্যে বোঁচকা। বোঁচকার মধ্য ছোটো ছোটো পুট্টুলী। একটার মধ্যে রূপেশ্বর ধান। আরকটার মধ্যে লক্ষ্মী দীঘার আলা চাল। লক্ষ্মীদীঘা চাল বের করে মায়ের হাতে দিলেন। বললেন, তুমি লক্ষ্মীমতি বউ। লক্ষ্মীর পা দিয়া পাহার দেও তো মা। তোমার পায়ের লক্ষ্মী ফুটুক।
ঢেঁকির নোটে আলা চাল ঢেলে দিয়েছে মা। সেখানে বসেছেন বালা ঠাকুরুণ। ঢেঁকির গোড়ায় মায়ের পা। পাহার দিতে গিয়ে থেমে গেছে। বালা ঠাকুরুণ বলেন, কী হইল মা। পাহার দেও।
মা বলল, মাইজা জেঠী আসে নাই।
মাইজা ঠাকুরমা এল। তিনি আমাদের মাইজ্জাদ্দি। এসেই রেগেমেগে বলল, করতিছ কি তুমি? ঢেকির পাহারের ২০ গ্রামের মাটি কাঁপে। তুমি কি আমার দালান বাড়ি ভাঙবার চাও?
ঢেঁকির পিছন থেকে সরে এল মা। নোটে মধ্যে আলা চাল। বালা ঠাকুরুণ বোঁচকা বাঁধতে শুরু করেছেন। পারুল কাকীমা থির হয়ে হয়ে চেয়ে আছে। বড়দ্দি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
ঢেঁকিতে পাহার পড়ল না। আমেনা বুবুর আম্মা বড় চাচী এসেছেন। তার মুখটি খুব খুশী খুশী। উঠোন থেকে মাকে ডেকে বললেন, তাইলে আমগো পাড়ায় ঢেঁকি আইসে। চাইল কুটতি আর নীচা পাড়ায় যাওন লাগবে না।
শুনে ঢেঁকির মুখে বাক্যি নাই। ঢেঁকিটা নড়ে না। চড়ে না। বড়চাচী ঘরের মধ্যে ঢুকলেন।
বালা ঠাকুরুণের বোঁচকা বাঁধা হয়ে গেছে। মুখে এক খিলি পান দিতে গিয়ে দিলেন না। নোটের দিকে এগিয়ে গেলেন। খুড়ে খুড়ে আলা চালগুলো নোট থেকে বের করে আনলেন। ঘাড় নীচু করে দেখে নিলেন আর একটি দানাও সেখানে পড়ে নাই।
সেই চালগুলো মা শিল নোড়ায় বাটলেন। একটি থালায় জলে গুলে পিঠুলি তৈরী করলেন। মাথা নিচু করে ঢেঁকিটার চারদিকে খাড়লেন লতা-পাতা। আর টগর ফুলের ছবি। একটি পক্ষীরাজের ছবি খাড়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু এখন ইচ্ছেটা নেই।
আমেনা বুবুর ছোটো বোনটি এক ফাঁকে পিঠুলির থালে পা রেখেছে। গুটি গুটি পা ফেলেছে লেপাপোছা ঘরের মেঝেতে। হেঁটে হেঁটে বারান্দা অব্দি চলে গেছে। সারা ঘরটি জুড়ে পায়ের ছাপ পড়েছে। লাক্ষ্মী ঠাকুরুণের পায়ের ফাঁকে ফাঁকে অতি সাবধানে পা ফেলে বালা ঠাকুরুণ বেরিয়ে গেছেন। তার তাড়া আছে। ও পাড়ার মেজ বউ বাড় বউ ঘুল্লিবাড়ি চাল কুটতে আসবে। যেতে যেতে বালা ঠাকুরুন বলে গেছেন, লক্ষ্মী ঠাকুরুণ আইসা পড়ছে। ঠেকাইয়া রাখবা কেমনে!
বালা ঠাকুরুণ উঠেনের মাঝখানে এলে তার গায়ের পরে দালানটার ঘন ছায়া এসেছে পড়েছে। আযুফা টুপ টুপ করে সঙ্গে হেঁটে এসেছে। তার পায়ে পিঠুলী গোলা। ছায়ার মধ্যে পা-টি কালো কালো দেখায়। রোদ্দুরের মধ্যে শাদাকে আরো শাদা করে। এই দেখে আযুফা একবার ছায়ার মধ্যে একবার রোদ্দুরের মধ্যে নেচে নেচে বেড়াচ্ছে। তালি দিয়ে বলছে, পিঠা লক্ষ্মী। পিঠা লক্ষ্মী।
লক্ষ্মীর পাড়া ধরে লক্ষ্মী পূজার সময় চুনু পিসি এলো দখিন দেশ থেকে। কচা নদী থেকে কালিগঙ্গা—কালিগঙ্গা থেকে মধুমতি নদীর বেয়ে পিসিদের নৌকাটি এসেছে। বাঁধা মাঝি সোনা মিয়া মাঝে মাঝে নামাজ পড়ে। আর মাঝে মাঝে সুর করে গীত গায়। শুনে চুনু পিসি বলে, সোনা ভাই, আপনে কী গান করতেছেন?
সোনা মিয়া কথা ভরে না। গানটি একটু জোরে ধরে—
ও ধান ভানোরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া
আমি নাচি ঢেঁকি নাচে হেলিয়া-দুলিয়া,
ও ধান ভানোরে।
বেলা পড়ে আসে। নদীতে ভাটা গোন লেগেছে। সোনা মিয়া বলে, ভাবীজান, আপনের বাপের বাড়ি ঢেঁকি আছে?
পিসি হাই ছেড়ে বলে, নাই। নিচা পাড়ায় আছে। ঘুল্লিবাড়ি।
সোনার মিয়া আরেকবার গীতটি ধরার আগে বলে, ফরিদপুইরা পিঠা বড়ো মিঠা।
দীর্ঘ পথ বেয়ে নৌকা এসেছে। ঢেঁকিটা দেখে চুনু পিসি খুশীতে বাক বাক। মাইজাদ্দির ঘর থেকে আলা চাল এনে নেটে রাখল। মাইজ্জাদ্দি বসেছে নোটের কাছে। চুনু পিসি গোড়ায়। আর চুনু পিসি ঢেকির গোড়ায়। শব্দ হল—কিক।
সেই প্রথম আমাদের ঢেঁকিতে চাল কোটা হল। চুনু পিসি পিঠা বানাল। মাইজাদ্দি প্রথম খোলার পিঠা অন্ধকারে ছুড়ে দিল। ভুত পিচাশে খাবে। সে পিঠার বড়ো সুঘ্রাণ। আযুফা সেই রাত্রিরেও টের পেয়ে গেছে। টুপ টুপ করে বড় চাচীর সঙ্গে হাজির। ঝোলা গুড় দিয়ে পিঠা খেতে বসেছে। বাইরে চাঁদ ফুটেছে। চুনু পিসি দালানের বারান্দা থেকে হেঁকে বলল, বৌদিগো, ঢেঁকিটা খুব সুন্দর। এ রকম লক্ষ্মী ঢেঁকি মোগো দখিনে নাই।
ঢেঁকিটা সত্যি সত্যি খুব লক্ষ্মী। মা সকালে দুপুর সন্ধ্যায় রান্না করে। তেল হলুদ ছিটে আসে। ঘরের মধ্যে মেথি, ধনিয়া আর তেজপাতার গন্ধ ম ম করে। ঘন বর্ষায় দরমার বেড়া ফুড়ে বৃষ্টির ছাট ঢোকে। তীব্র শীতের মধ্যে ঠাণ্ডা হাওয়া আসে—সব কিছু কুঁকড়ে যায়। গরমের মধ্যে হাসফাস করে ওঠে চারিদিক। এর মধ্যেই মা ডালের ঢোঁড়ন দেয়। কচুর লতির ছেচকি করে। রান্ধুনি দিয়ে লাউ রান্না হয়। ভাদুরে তালের বড়া উম উম করে। তিনবেলা লেপে পুছে মেঝে টেঝে সোর করে রাখে। এর মধ্যে আযুজা আসে আমেনা বুবুর সঙ্গে। বড় চাচীর সঙ্গে। ঢেঁকির উপর বসে বসে পাক্ষীরাজে চড়ে। ঠিক নিচে নোটের ভিতরে দুটো কোলা ব্যাঙ নিরবে ঘুমায়। মিনি বিড়ালটা গোড়ার দিকে বসে থাকে। মিউ মিউ করে। দুপুর হেলে গেলে ঢেঁকিটার গা ধুয়ে মুছে মা সিনানে যায়। সিনান থেকে ফিরে ঢেঁকির কপালে একটা চন্দন ফোটা পড়ে। চন্দন বলে, পেরণাম হে মা জননী। আযুফা তার কপালটা এগিয়ে দিয়ে বলে, আমালে একটা দেও।
ঢেঁকিটায় পাহার পড়ে না বলে কারো মন ভার নেই। এ বাড়িতে একটা ঢেঁকি আছে—এই জেনেই সবাই খুশি। বড় চাচী মাঝে মাঝে বলেন, আমগো আযুফা বড় হইলে এই ঢেঁকি পাহার দেবে। মাইজাদ্দি ঠুক ঠুক করে হেঁটে আসে দালানের বারান্দা থেকে। বলে, ঢেঁকি পাহার দিবা না। পাহারে দালান নইড়া যাবে।
এর মধ্যে চুনু পিসি চলে গেল। যাওয়ার দিন মায়ের গলা ধরে একটু কাঁদল। রান্না ঘরে ঢুকে বলল, এইভাবে অযত্নে ফেইলে রাইখো না গো বউদি ঢেঁকিটারে। হ্যারও জেবন আছে। হেলা করলি টের পায়। যত্ন কইরো।
মাইজাদ্দি বলল, দুগ্গা দুগ্গা। সোনা মিয়া বলল, লা ইলাহা সোবহানকা আন্না ইন্নি কুন্তু মিনাজজ্জলেমিন। দখিনে নৌকা চলে গেল।
কিন্তু দিন দশেক পরে নৌকাটি আবার ফিরে এলো। সোনা মিয়া ফেরত এসেছে। সঙ্গে এনেছে বরিশালের দুধ কলম ধানের আলা চাল। এক গাল হেসে বলল, ভাবীজানগো আপনেগো ফরিদপুইরা বড় মিঠা।
ঘুল্লীবাড়ি থেকে আলা চাল কোটা হল। সোনা মিয়া পিঠা খেয়ে বলল, এমুন পিঠা মোরা সাপল্যাজায় খাই নাই কুনোকালে। মোগে পিঠা পাডিসাপটা।
সোনা মিয়া তিনদিন পরে ভোর বেলা নৌকা ছাড়বে। তার আগে কালুদাদা, শুককাকা আর লিকির বাবা ঢেঁকিটাকে ধরে নৌকায় তুলে দিল। সেদিন ভোর বেলা সূর্য তখনো ওঠে নি। রাতে বৃষ্টি হয়েছে। মাঠের মধ্যে ঠাঠা পড়েছিল। তার বারুদগন্ধ এখনো বাতাসে ভাসছে। আযুফা ঘুমিয়ে আছে। বড় চাচী নামাজ পড়ছেন। সোনা মিয়া বলল, যাইগো ভাবী। দোয়া কইরেন। ফরিদপুইরাঁ ঢেকি—হয় না কোনো মেকি। চিন্তা কইরেন না।
আমাদের মা কখনো চিন্তা করে নাই। রান্না ঘরটাও করে নাই। নোটটাও না। বাড়িটাও না। ছোট্ট আযুফাও না। মিনি বিড়ালটাও না। কোলা ব্যাঙ দুটোও না। দরমার বেড়াও না।
ঠিক পরদিন বিহান বেলা আমাদের উঠোনে নারদ গোসাই এলেন। হিমালয় থেকে এসেছেন। হাঁপিয়ে গেছেন। মাথায় ধরাচূড়া। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। নারদ গোসাই বলল, এ বাড়িতে কেউ নাই?
মা ঘাটে ছিল। নারদ গোসাইয়ের গলা শুনে ছুটে এলো। মাকে দেখে বলল, চারটে ফেনা ফেনা ভাত ফুটাও তো বউদিদি। ঢেঁকি ছাটা চাইলের ফেনা ভাত। খাইয়া নেল্লা হই।
মা কিছু বলল না। মাইজাদ্দি দালান থেকে বের হর। বলল, এ বাড়িতে ঢেঁকি নাই। ঢেঁকি ছাটা চাইল পাইবা কই! হাউস দেইখা বাঁচি না।
নারদ গোসাই একটু থম মেরে গেল। তারপর বলল, তাইলে তোমাগো ত্যালের বাটিটা দেও। চানটা সাইরা আসি।
নারদ গোসাই খুব ডলে টলে গায়ে তেল মেখেছে। মাজায় বেঁধেছে লাল গামছা। মাকে বলল, তুমি রান্নার জোগাড় করতি লাগো। আমি আসতেছি।
সেই বিহানবেলা নারদ গোসাই সুড় সুড় করে পুকুরে নেমে গেল। শান্ত পুকুর। পাড়ে বইন্যা গাছ। আর পাড়ে তালগাছ। লম্বা করে শ্বাস নিয়ে টুপ করে ডুব দিয়েছে নারদ গোসাই।
এর মধ্যে ঘুল্লীবাড়ির বালা ঠাকুরুণ এসে পড়েছেন। বগলে বোঁচকা বুঁচকি। বোঁচকার ভিতরে বোঁচকা। তার ভিতরে বোঁচকা। তার মধ্যে পোটলা পুটলি। একটাতে রায়েন্দা ধান। আরেকটাতে ষাইটা আউশ। আলা না-- সেদ্ধ।
মা বলল, ধান দিয়া কি করবেন গো জেঠি?
বালা ঠাকুরুণ হাসলেন। বললেন। ঢেঁকি ছাটা চাল বানাইবা। নারদ গোসাই আইছে। হারে ফেনা ফেনা রাইনদা দেবা।
--ঢেঁকি কনে পাবো?
--হেইডা তোমার ভাবনা কি? নারদ গোসাই জানে। তুমার ঢেঁকি আসতেছে।
সত্যি সত্যি ঢেকি এল। পুকুর থেকে উড়ে। পক্ষীরাজের মত ডানা মেলে। সড় সড় শব্দে। সঙ্গে নারদ গোসাই। গা থেকে জল ঝরছে। হাসছে।
রান্না ঘরে ঢেঁকিটা এসে গেল। গামছা দিয়া গা মুছতে মুছতে নারদগোসাই বলল, ঢেঁকিটার চউক্ষে একটা চন্দন ফোটা দিয়া দাও।
বালা ঠাকুরুণ বসেছেন মোনাইয়ের সামনে। মা পিছনে। ঢেঁকির গোড়ায় পা রেখেছে। নোটে আলা চাল। বালা ঠাকুরুণ মুখে এক খিলি সাচি পান পুরে নিলেন। বললেন, দুগ্গা দুগ্গা। মা ঢেঁকিতে পাহার দিয়েছে। পাহার পড়েছে। কিক। কিক।
আযুফা আমেনা বুবুর সঙ্গে এসেছে। বড় চাচী আসেন নি। নামাজ পড়ছেন। আযুফা উঠোনময় ছোটো ছোটো পা ফেলে ঘুরছে। আজ তার দাওয়াত। নারমগোসাই তার সঙ্গে ফেনাভাত খাবে। আযুফা হাততালি দিয়ে বলছে, লক্ষ্মী লক্ষ্মী।
আমরা শুনছি, পক্ষী। পক্ষী।
মন্তব্য
এস এম সুলতানের তেলচিত্র যেন।
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাব নাকো আমি।
বাহ্ ! মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
বাহ্
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
কি চমৎকার একটা ছবি আঁকলেন ।
অসাধারন ।
নতুন মন্তব্য করুন