এক.
আমি ভাই একা মানুষ। একা চলতে পছন্দ করি। দোকাতে আমার মেলে না।
শিশুকালে রোগা পটকা ছিলাম বলেই ঠাকুরদা বলতেন ভিড়ে-ভাড়ে যাবি না। আমি ঠাকুরদাকে মান্য করি। দোকা মানুষ দেখলেই একটু তফাতে দাঁড়াই। এ কারণেই ফুটবল খেলা দেখেছি গাছের ডালে চড়ে। দাবা খেলেছি সঙ্গীহীনভাবে। ব্যাড বিন্টনে সিঙ্গেলস। ক্রিকেটে থার্ড ম্যান। হলে সিট পেতে যতটুকু ততটুকুই পলিটিক্যাল—নো শ্লোগান। চাকরিতে শহরে নয়—গ্রামে। ক্ষেতে খামারে।
আমি একবার ক্লাশে ফার্স্ট হয়েছিলাম। সে বছর ক্লাশই করি নি। স্যাররা চিনতেনই না। বরাবার যে ছেলেটি ফার্স্ট হত—মাসুদ, মাসুদ আলী খান, সেই উপলক্ষে আমাকে এক সন্ধ্যায় অন্ধকারে চাবুক দিয়ে পেটাল। তারপর থেকে নিয়ত করেছি—সারা জীবনে আর ফার্স্ট হওয়া যাবে না। ফার্স্ট হলে লোকে চিনে ফেলে। চাবুক মারে। তাই পিছনের সারিতে থাকতে হবে। ইউনিতে যখন বুঝলাম আবার ফার্স্ট হওয়ার উপক্রম হচ্ছে, তখন আমার গবেষণা তত্তাবধায়ককে কাচুমাচু করে বলেছিলাম—স্যার আমায় বিদায় দেন।
তিনি অবাক হয়ে বললেন—কাল তোমার ভাইবা। এখন আবার কোথায় যাবে?
বললাম, বাঁচতে যাই। আপনের পরীক্ষায় আমার কাজ নাই।
তিনি সব শুনে বলেছিলেন, তুমি চিন্তা কইরো না বৎস। তোমাকে ভাইবাতে এমন নম্বর দেব যে তোমার আর ফার্স্ট হওন লাগবে না।
স্যার তাঁর কথা রেখেছেন। আমি বেঁচে বর্তে আছি।
চাকরিতে সবাই যখন ঢাকায় থাকতে চায়----আমি তখন আড়ালে আবডালে থাকি। ধরা দেই না। কপালগুণে এমন এক এলাকায় পোস্টিং হয়ে গেলো—যেখানে আমার বাপ--দাদা চৌদ্দগুষ্ঠীর কেউ কখনো যায়নি। যাওয়ার কোনো সুযোগও নেই। সেটা বরিশালের পেয়ারা বাগানে। যেয়ে দেখি, বস নামে যিনি আছেন বা থাকার কথা-- তিনি নেই। তিনি কোনোকালে থাকেনই না। যিনি হাফ বস তিনি মাঝে মাঝে স্যুটকেস নিয়ে আসেন। ভাউচারপাতি বানান। বিল তুলে শ্বশুরবাড়ি চলে যান। আমাকে দেখে তিনি রেগে গেলেন। ভাবলেন, তার একজন ভাগীদার এসে গেছে। বললেন, শোনো ব্রাদার, অফিসে তোমার আসার কাম নাই। বাড়িতে বেতন পাঠায়া দিমু। বিজিনেস--টিজিনেস করার চেষ্টা কর।
আমার বাপের মুদিদোকান। এই জিনিসটা আমি কোনোকালে ভালো বুঝি নি। বুঝতে চেষ্টা করি নি বলেই বাপ--দাদা আমাকে পরিবার থেকে মাইনাস করে দিয়েছিলেন। সেটা এখন অবধি টিকে আছে। না টেকার কোনো কারণ নেই। এই হেতু আমি বসকে লুকিয়ে লুকিয়ে একা একা পেয়ারা বাগানে ঘুড়ে বেড়াই। গাছের পাতা সবুজ হয়। আষাঢ়ে পেয়ারা পাকে। চাষিরা নৌকা ভরে হাটে তোলে। গোড়ায় সীমবীজ বোনে। অঙ্কুর হয়। গাছ বেয়ে ডালে ওঠে। আর খাল পারে মাচার উপর হাওয়ায় দোলে লাউগাছ। পথের পাশে পেঁপেগাছে ফল পেকে ওঠে। সে সময় সেহাঙ্গলের মাঠে চেগা-পাখি খ খ করে ডেকে ওঠে। মাথার উপরে রোদ চড়ে। মেঘ জমে ধীরে ধীরে। কে এক সোনাবরু বুড়ি আমাকে দেখে গামছা এগিয়ে দেয়। বলে, মুখ মোছো। নেল্লা হয়ে বসি তার পায়ের কাছে। হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে করতে বোনাবরু বুড়ি বলে, বাপজানেরা বুঝি অনেকগুলান ভাই-বইন?
একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি, কেনো দাদীজান?
তিনি এক ক্রোস রূপেশ্বর ধানের মুড়ি আর নলেন গুড় দিয়ে বলেন, তোমার চেহারা দেইখা মনে লয় শিশুকালে পেট ভইরা দুধ পাও নাই। মেলা ভাই-বইন থাকলে মায়ে পেট ভইরা দুধ দ্যায় ক্যামনে রে বাপ! এইবার সোনাবরু ধ্বলি গরুর দুধ নিয়ে আসেন। তার নাকে নোলক একটু একটু দোলে। দুধের বাটিটা মুখের সামনে তুলে বলে—খাও, খাও বাছা। হেলা কইরো না।
সন্ধ্যার পরে দূরের গাঁয়ে বাড়ীতে বিজয় সরকারের গান হয়। আমি সন্ধ্যা নদীর কিনারে দাঁড়িয়ে শুনি—কে একজন হেমন্তের পাতা ঝরার মত গান করে—পোষাপাখি উড়ে যাবে একদিন, আমি ভাবি নাই তো মনে, ও সজনী...।
এই গানটিকে তখন নদীর মত আমার নিজের ছায়া মনে হয়। ছায়াটি আমার সঙ্গে হাটে। তাকে ধরা যায় না। দূরে দূরে থাকে।
দুই.
যখন দেশ ছেড়ে এসেছি—তখন যাদের কথা ভেবে আমার জননী স্বস্তির শ্বাস ফেলেছিলেন, এখনো ফোনে কথা হলে মা বলেন, হ্যারে, তোর অমুক দাদার সঙ্গে দেখা হয়? অমুক ক্লাশমেটের সঙ্গে দেখা হয়? বলি—হয়ই তো। কাল দাদার সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলাম। তমুক ক্লাশমেটের বাসায় দাওয়াত খেয়েছি। ফোনসেটের কাছে বসা আমার বড় মেয়ে আমার কথা শুনে হাসে। ছোট মেয়েটি অবাক হয়। এই অমুক--তমুকের নাম তারা কখনো শোনে নি। তারা জানে আমার জানাশোনা লোক হল ইকুয়েডরের হোজে লোপেজ অথবা আফ্রিকার জুলিয়াস ওলুওকুনো। অথবা হাইতির হানস পিয়ের।
শীতে-বরফে ঘরের বাইরে ঘোরাঘুরির সময় কম বলেই একদিন ইন্টারনেটে বসে পড়ি। পত্রিকা পড়ি। গান শুনি। মুভি দেখি। এর মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচন ঘনিয়ে এলো। সেটা ২০০৮ সালের ঘটনা। ফিওনা জনসন নামে এক সহকর্মী দেখালো তার ফেসবুক। সেখানে সে কুটকুট করে লেখে, হাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধুরা উত্তর দেয়, গুডি গুডি। ইউ?
একদিন স্কুল জীবনের একটি ছবি ছাপিয়ে লিখল, এর মধ্যে তিন নম্বরে বসে নেল্লি। আজ কুড়ি বছর নেল্লির দেখা নেই। নেল্লি, তুমি কি আছো? দুএকদিনের মধ্যেই নেল্লি তার ফেসবুকে উঁকি দিয়ে বলল, আছি—আছি রে ফিওনা ডার্লিং। আছি ফ্লোরিডায়। লেখার নিচে নেল্লির হাসি হাসি মুখের একটা ছবি। পাশে তার বয়ফ্রেন্ড আলবার্তো ড্যান্স করছে।
এই ফিওনা আমাকে একটা ফেসবুকের একাউন্ট খুলে দিল। সে একটি একাউন্ট খুলে দিল। বলল—নেও, তোমার জন্য হাজার জানালা খুলে দিলাম।
সেই শুরু। উজ্জ্বল বসাক নামে ঢাকা ওয়ারীর এক ছেলে এক জানালায় উঁকি দিয়ে আমাকে নির্বাচনের খবরাখবর সারারাত ভরে দিল। আমি মুগ্ধ। উজ্জ্বলকে আর কখনো দেখতে পাইনি। সে পোষাপাখির মত নয়—বুনো পাখির মত উড়ে গেছে। আরেকজন পলাশ এসে কবিতা লিখে দিয়ে গেল। বলল, বুদ্ধদেব বসু তার প্রিয়। এই পলাশ পাঠিয়ে দিল বাংলা লেখার লিঙ্ক—অভ্র কী-বোর্ড। k-লিখলে ক হয়, R-লিখলে র হয়।
নির্বাচনের পরের দিনই দেখি ব্রাত্য রাইসু নামে কে একজন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জেতায় মনের দুঃখে পাগলপ্রায়। তিনি তারস্বরে রাজাকারদের পক্ষে সোয়াল করছেন। কি ভেবে তাকে একটি একটি প্রশ্ন লিখলাম। পড়ে তিনি ব্রাত্য রাইসু নামে এই লোক বললেন, আপনে কেডায়?
আমি ভয় পেয়ে আঁতকে উঠি। বলি-- আমি কেউ না। শুনে তিনি খুশি না। অজানা-অচেনা এক লোক আমাকে ছড়-বেছড় গালি দিয়ে গেল। বুঝলাম—দুনিয়া ভরা আমার ক্লাশ এইটের সহপাঠি মাসুদ আলী খানেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। বাঁধা পেলেই চাবুক হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বলেন তুই কেডারে?
আমি বলে উঠি--আমি, ভাই কেউ না’দের দলে। কেউ না। কেউ না।
ফলে নেট ঘেটে ‘এই আপনে কেডারে’দের খুঁজে বের করি। তাদের ডাল-পালা কাণ্ড-কারখানা শেকড়-বাকড় খুঁজে পাই। গভীরভাবে চিনতে পারি। বুঝতে পারি—এই আপনে কেডারা চিনে জোঁক। এই জোঁকেরা মানুষের সম্প্রীতিকে চুষে খেতে চায়--পুরনো হিংসা জারী করতে চায়। এদের জন্য একটু লবণের ব্যবস্থা থাকা দরকার। লবণ দিলেই এনারা সাফ সুতরা। খুব কঠিন কাজ না।
তিন.
এই ভাবে একদিন নেট থেকে পথে পথে ঘুরি। পথের মধ্যে ঘুরে ঘুরে সেই পেয়ারা বাগান ধরতে যাই। জলের গান শুনতে চাই। পাতায় পাতায় পদ্ম দেখতে চাই। এই ঘোর গতির মধ্যে বিপাকের ভেতরে বিড় বিড় করে বলি--জলকে জলের মত ভেবেছি, পদ্মপাতায় জলদেবী বসে। মনে করার চেষ্টা করি--বোন ঋষিকা মৌসুমী লিখত, আমাদের বাগানে একটি টুনটুনি পাখি বাসা বেঁধেছে। আমি তখন ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে। ঢেউ গুনছি। আর বুঝতে পারছি-- টুনটুনি পাখিটি আমার বুকের মধ্যেই উড়ে আসছে। পাখিটি প্রাণজ। ওর প্রাণ আমার প্রাণে বাঁধা। সেই মধ্য আশিতে। বোন ঋষিকা মৌসুমীর কাছে লিখতে লিখতে অনেক গল্পের বীজ উপ্ত হয়েছিল।
আর আজ আমি নিজেই একটি টুনটুনি নয়-- সমুদ্রপাখি। ডানা নেই। আছে হাহাকার।
চোখ খুলে দেখি আমার বড়ো মেয়েটি খট খট করে লিখছে। আর ছোট মেয়েটি আমার কাছে কাগজ আর কলম দিয়ে বলেছে-- লেখ বাবা। লেখ।
--কী লিখব মা?
--তোমার ইচ্ছে। ইচ্ছে লেখ।
মেয়েটি একটি আঁকাবাঁকা দাগ দিয়েছে কাগজের উপরে। বলে, কি লিখছি জান বাবা? লিখেছি----একটি পরীকথা। আর এই দাগটি হল আকাশযথা। অই দাগটি-- মাটিব্যাথা। ফুল ফুটেছে। চাঁদ উঠেছে। হাতি নাচছে। ঘোড়া নাচছে।
হা হা হা। কী রূপ লিখছে আমার মেয়ে। যেন পাতা। একটি গাছ। ভরভরন্ত ফল। মিষ্টি সুবাস। কী সহজ। কী সরল। প্রাণদায়ী। আমি এই গাছটির নিচে একটু বসি। আর আমার বড়ো মেয়েটি পিয়ানো বাজায়। ছোট মেয়েটি নিষ্পত্র ডানা মেলে উড়ে যায় তার আকাশ-যথায়।
আমি আমার বড়ো মেয়েটির সঙ্গে লিখি। ছোট মেয়েটির সঙ্গে লিখি। লিখতে লিখতে হাঁটতে শিখি। হেঁটে হেঁটে অনেকদিন পরে কাজে যাই। বসে থাকি। বিড় বিড় করে বলি, এসো ঘুম। এসো আনন্দ। এসো জীবন। হে কদম, পক্ষীভুত রোদ।
ততদিনে স্বজনের ভস্ম থেকে নতুন পাখিরা এসে গেছে। আমার কাঁধে এসে বসেছে। ওদের লেজটি দেখে আমার প্রাণ নতুন করে ভরে এসেছে। আমি লেজের ছায়াটিকে মনে করে লিখেছি। ছায়াটির নড়াচড়া দেখে হেসেছি। আর কিছু নয়। অন্য কিছু নয়।
সোহম। আমি সে-ই। সে-ই আমি।
কী দরকার অন্য কিছুর।
চার.
এই সোহম ব্যাপারটি পেয়েছি রবীন্দ্রনাথে। রবীন্দ্রনাথের মেজ মেয়েটি মৃত্যু শয্যায়। বাবার হাত ধরে আছে। তির তির করে বলছে—বাবা বল। বাবা বল। রবীন্দ্রনাথ বলছেন, পিতা নহসি। শুনতে শুনতে মেজ মেয়েটি চোখ বন্ধ করে ফেলল। কবি মেয়ের পাশ থেকে উঠে পড়লেন। এখন ভোর হচ্ছে। পাখি ডাকছে। বাতাস বইছে। নদী কুল কুল করছে। গাছে গাছে আলোর নাচন। একা একা এই আলোর ভিতরে হাঁটতে হাঁটতে রবীন্দ্রনাথ বলছেন—সোহম। সোহম। সেই আমি। আমি-ই সেই। তার পাশ থেকে কে একজন ফকির সাহেব বলছেন, আয়নাল হক। আয়নাল হক। আমিই সেই। সে-ই আমি। আমি ছাড়া আর কে! আমি-ই সেই একা মানুষটি। সেই মানুষটি সব বহুকে একার মধ্যে ধারণ করে আরো বড় একা হয়ে আছেন। তার দোকা লাগে না।
এই রবীন্দ্রনাথই পাঠিয়ে দিলেন জালাল ভাইকে। আমার জালাল ভাই। একদিন ফোন করে বললেন, আমার নাম মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জালাল। থাকেন মার্কিন দেশের ডালাসে।
তিনি আমাকে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে অনেক বইপত্রের কথা বললেন। পাঠিয়েও দিলেন মেইলে। আমি মাঝে মাঝে পড়ি। আর রবীন্দ্রনাথ এই পড়ার মধ্যে দিয়েই দেবেনবাবুর সঙ্গে নৌকায় করে পতিসরে বেড়াতে যান। বৌদির সঙ্গে ছাঁদে বসে গান করেন। ভবতারিণীকে বিয়ে করেন। বেলফুল নামে তার শিশু বড় মেয়েকে নিয়ে কোলকাতা থেকে পদ্মানদী পার হয়ে শিলাইদহে চলে আসেন। জমির মধ্যে দাঁড়িয়ে কলিগ্রামের কালু শেখের কাছে শুনছেন, এবারে ধান তো সব মহাজনে লইয়া গেলো গা হুজুর। আপনেরে কর দিমু কি কইরা?
কবি একটু আকাশ পানে তাকিয়ে বলছেন, সাহাবাবুদের হাত থেকে শেখদের বাঁচাতে হবে। শুনে কালু শেখ আবদুল মুন্সীরে ডেকে বলছে, দেহো, দেহো, মুন্সী চাচা, এ দেহি মানুষ না। এঁরে ফেরেশতা ফেরেশতা লাগে।
জালাল ভাই বলেন, এই রবীন্দ্রনাথকে তুমি লেখো। আমি লিখতে শুরু করি।
এর মধ্যে জালাল ভাই মক্কা শরীফ থেকে হজ্ব করে আসেন। বলেন, রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম হয় না। ধর্ম হল ব্যক্তিগত বিশ্বাস। ধর্ম যার যার---রাষ্ট্র সবার। আগে মানুষ—তারপর কেউ মুসলিম। কেউ হিন্দু। কেউ খ্রিস্টান। কেউ বৌদ্ধ। কেউ আস্তিক। কেউ নাস্তিক। সবাইকে নিয়েই রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের চোখে সবাই সমান। সমান সমান অধিকার। কেউ প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণীর নয়।
ফাঁকে ফাঁকে জালাল ভাই বলেন মুক্তিযুদ্ধের কথা। মুক্তিযুদ্ধের বিবরণী। তার ইতিহাস। আর এই জনপদের মানুষের হাসি হাসি মুখের জলেভাসা কথা। ৩০ লক্ষ শহীদের কথা। ২ লক্ষ ধর্ষিত নারীদের কথা। বলেন, কপিলমুনীর সেই গুরুদাসীর একাত্তরে স্বামী-পুত্র-কন্যা হারানোর শোকগাথা। পিরোজপুরের ভাগীরথী নামের এক গ্রাম্য নারীর আখ্যান--যাকে পাক- মিলিটারি মোটর-সাইকেলের পেছনে দড়ি দিয়ে বেঁধে সারা শহরে ঘুরিয়েছিল। শরীর থেকে রক্ত ঝরতে লাগল। এবড়ো থেবড়ো রাস্তায় মাংশ ছিড়ে ছিড়ে পড়ল। চোখের সামনে পথের উপরে ঘষটে ঘষটে ভাগীরথী মারা গেল। অথবা ময়মনসিংহের রশীদ নামের ভাস্কর লোকটির কাহিনী যাকে হিন্দুদের পুজার মূর্তি বানানোর অপরাধে গাঙিনার পাড়ে যীশুর মত মেরে ফেলা হল। জালাল ভাইয়ের এইসব কথা শুনে আমার মনে পড়ে এই একাত্তরেই পাঠ ক্ষেতে লুকোতে গিয়ে আমরা মিলিটারির গুলি খেতে খেতে বেঁচে গিয়েছিলাম। আমাদের একটি বোন নীরবে হারিয়ে গেলো। তাকে আমরা আর বড় হতে দেখিনি। মনেও রাখিনি।
কিন্তু জালাল ভাই মনে রেখেছেন। খুঁজে খুঁজে সব স্মৃতি ধরে রেখেছেন। কাউকে ভুলতে দেবেন না। গড়ে তুলেছেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের আর্কাইভ। সংগ্রহ করে রেখেছেন দেশ বিদেশের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর, প্রতিবেদন, ছবি, প্রেসনোট, বিদেশী দূতাবাসের প্রেরিত চিঠিপত্র। বই-পত্র, গান, কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ভিডিও, পোস্টার, প্রেসনোট, গোপন ডকুমেন্ট। প্রকাশিত বই--জার্নাল।
পাঁচ.
মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিলগুলো খুঁজে পাওয়া আজ কষ্টকর। '৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোতে ঘাপটি মেরে থাকা '৭১ সালের পরাজিত শক্তি কৌশলে ধ্বংস করেছে এ রকম অনেক মূল্যবান উপাদান। রাষ্ট্রীয় আর্কাইভগুলো থেকে সরিয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এই ডকুমেন্টগুলো থেকেই প্রমাণ করা সম্ভব একাত্তরে পাক-হানাদার বাহিনীর সহযোগী স্বাধীনতা বিরোধী চিহ্ণিত ব্যক্তিদের যুদ্ধাপরাধ। জালাল ভাই এই সব ডকুমেন্ট একাত্তরের পর থেকেই সংগ্রহ করে চলেছেন নীরবে-নিভৃতে। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে চান স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। নিজের অর্থে আর পরিশ্রমে গড়ে তুলেছেন মুক্তিযুদ্ধের তথ্য-সংগ্রহশালা। জালাল ভাইয়ের কাছে স্বাধীনতা সংগ্রাম সংক্রান্ত যাবতীয় খবর আছে। এই খবরের মধ্যে দিয়ে জানা যাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গতিপ্রকৃতি এবং কখন কোথায় কে স্বাধীনতার ঘোষণাটি দিয়েছেন। একাত্তরে মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশের মুক্তি-সংগ্রাম নিয়ে যে শুনানী হয় তার বিশদ বর্ণনাও আছে তাঁর কাছে। মার্কিন প্রশাসনের গোপন প্রামাণ্য দলিল কয়েক বছর আগে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। সে দলিলও তাঁর সংগ্রহে আছে। আছে বাংলা ইংরেজী এবং উর্দু ভাষায় রচিত মুক্তিযুদ্ধের উপর পাঁচ শতাধিক বই। স্বাধীনতা বিরোধীদের সব খবর, বক্তব্য এবং দালাল, আল বদল আল শামসদের অপরাধের বিবরণ এই উর্দু বইগুলোতে আছে।
তিনি বিরাশী সালের পরে দেশ ছাড়েন সামরিক শাসনে অতীষ্ঠ হয়ে। ডালাসে থিতু হন। স্বল্প আয়ের মধ্যেই তিনি চালিয়ে গেছেন তার ব্যয় বহুল সংগ্রহের কাজটি। যেখানেই নতুন কোনো তথ্যের সন্ধান পেয়েছেন গুরুত্বের সঙ্গে সেটা সংগ্রহ করেছেন। এ দলিলপত্রগুলো থেকে শুধু মুক্তিসংগ্রামের বীরত্বের ইতিহাসটিই নয়-- পাওয়া যাবে একাত্তরে কারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, একাত্তরে কারা শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল বদল আল শামস গড়েছিল—তারা মানবতার বিরুদ্ধে কী কী অপরাধ সংঘটিত করেছিল, এই সব তথ্য-প্রমাণ। জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী ও মুসলিম লীগের নেতারা একাত্তরে দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে কি ভয়ঙ্কর ভূমিকা পালন করেছিল—সব রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। এই তথ্যগুলো সরকারের কাছে না থাকলেও জালাল ভাইয়ের কাছে আছে। হারিয়ে গেলে বা কেউ গায়েব করে ফেললেও কোনো ভাবনা নেই—জালাল ভাইয়ের সযন্তে ধরে রেখেছেন। জালাল ভাই ধীরে ধীরে অন্তর্জালে সব তথ্য ছেড়ে দিচ্ছেন—দেবেন মুক্তিযুদ্ধের সংগৃহীত ইতিহাস-দলিল পত্রাদি। গড়ে করেছেন বাংলাদেশে গণহত্যার গবেষণা কেন্দ্র (সেন্টার অফ বাংলাদেশ জেনোসাইড রিসার্চ) তার একটি ওয়েবসাইট করেছেন। http://cbgr1971.org/ । সেখানে সংগৃহীত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-দলিল-তথ্য রাখা হচ্ছে।
শুধু সংগ্রহই কাজটি করেই তিনি ক্ষান্ত নন, খুঁজে খুঁজে দেখেন এই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কারা কারা লেখেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে লড়াই করার যোগ্যতা সাহস আর উদ্যোগ আছে—তাদেরকে পাঠিয়ে দেন তার সংগৃহীত মুক্তিযুদ্ধের অমূল্য দলিল পত্রাদি। তিনি জানেন আমাদের এখন আবার লড়তে হচ্ছে পাকি-পন্থার বিরুদ্ধে। এ লড়াইয়ের প্রধান সৈনিক তরুণ প্রজন্ম। এই তরুণ প্রজন্মের হাতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে দিলেই তারা একে চেতনা নামের মহাশক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক অস্ত্রে পরিণত করতে পারে। জালাল ভাইয়ের এই ঐতিহাসিক তথ্য নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় তরুণ প্রজন্ম লিখছেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। সেগুলো পড়ে নতুন প্রজন্ম আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জেগে উঠেছে। তারা আবার লড়াই করতে পারে একাত্তরের পরাজিত শত্রুর বিরুদ্ধে।
শুধু প্রবাসীরাই নন-বাংলাদেশের বহু বরেণ্য ব্যক্তি, গবেষক ও গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞগণ প্রায়ই মুক্তিযুদ্ধের তথ্যের জন্য জালাল ভাইয়ের সহযোগিতা নেন। নিজ তাগিদেই তিনি কাঙ্খিত দলিল ও তথ্য পিডিএফ করে ই-মেইল করে পাঠান তাদের কাছে। তিনি দূর্লভ বই দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে—জাতীয় যাদুঘরে, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য যখন বাংলাদেশ সরকার গঠন করলেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তখন নিজ উদ্যোগেই এমএমআর জালাল তদন্ত টিমের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারাধীন আসামীদের একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ সমূহের প্রামাণ্য দলিল-পত্রাদি। স্বাধীনতা বিরোধীরা মনে করেছিল তারা তথ্যের স্বল্পতায় ছাড়া পেয়ে যাবেন। কিন্তু এমএমআর জালালের মত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অঙ্গীকারাবদ্ধ মানুষের সরবরাহকৃত অসংখ্য প্রামাণ্য দলিল তাদের যুদ্ধাপরাধকে প্রমাণ করে দিচ্ছে। তাদের অপরাধের শাস্তি থেকে কোনো ছাড় পাওয়ার সুযোগ থাকছে না। বিজয় হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার।
শুধু তথ্য সংগ্রহই নয়, তিনি প্রবাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, সভা-সেমিনারে, উৎসবে, মেলায় তাঁর সংগৃহীত বই-পত্র-পত্রিকা-দলিল-পত্রাদি নিয়ে যোগ দেন। নানা প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য-কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে তুলে ধরছেন প্রবাসীদের কাছে। বাংলাদেশকে তিনি সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।
ইশতিয়াক রউফ নামে একজন তরুণ গবেষক লিখেছেন--জালাল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক জীবন্ত বিশ্বকোষ। এই নিভৃতচারী গবেষক (এমএমআর জালাল) নিজের কাজের কথা কাউকে বলেন না, কিন্তু এই স্বার্থপর সময়ে তিনি কত বড় ব্যতিক্রম তা সবার জানা প্রয়োজন। গতকাল আমরা আল-বদর নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় শুনেছি, রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছি, ইতিহাসের দায়মুক্তির কথা বলেছি। আমাদের দেশপ্রেম এটুকুতেই সীমিত, কিন্তু এখানেই বাকি সবার চেয়ে জালাল ভাই আলাদা।
এই রায়ে যেই রেফারেন্সগুলো ব্যবহৃত হয়েছে, তার মধ্যে আছে জালাল ভাইয়ের সংগ্রহ করে দেওয়া ৪টি বই। এগুলোয় খোদ পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর নথিপত্রে রাজাকারদের নাম ও ভূমিকার কথা লেখা আছে। বইগুলো তিনি নিজে খুঁজে বের করেছেন, তদন্তকারীদের এগুলোর কথা জানিয়েছেন, বইয়ের প্রয়োজনীয় অংশ চিহ্নিত করে পাঠিয়েছেন, আদালত থেকে অরিজিনাল বই চাওয়ায় নিজ খরচে সেগুলো কিনেছেন, এবং নিজের হাতে দেশে নিয়ে আদালতে দিয়ে এসেছেন।
তিনি শুধু দেখতে চান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের নির্মল মুখোচ্ছবি।
এ-ই আমার জালাল ভাই। আমার পেছনের মানুষটি। সামনের মানুষটি। আমার অগ্রজ। সেই সুদূর ডালাস থেকে তিনি আমার পাশে পাশে ছায়া হয়ে থাকেন। আমি তাঁর হয়ে লিখি। তাঁর কথা লিখি। আমার সঙ্গে তিনিও লেখেন। বিস্ময়ে দেখি--আমি একা হতে চাইলেও তিনি একা হতে দেননা। পুরো বাংলাদেশকে আমার সঙ্গী করে দেন।
মন্তব্য
__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে
জালাল ভাইয়ের নাম আগে থেকেই জানতাম।কিন্তু আপনার লেখার মধ্য দিয়ে তাঁর সাথে আত্মার আত্মীয়তা স্থাপিত হলো।আপনার লেখা জলরঙে আঁকা ছবির মতো----------খুব ভাল লাগল পড়ে।
জালাল ভাইকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনি না, কিন্তু তাঁর কর্মের সাথে পরিচিত।
পরিচিতি বিমুখ এই মানুষটার জন্য রইল অনেক অনেক শ্রদ্ধা।
লেখাটা খুব ভালো লাগলো।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
জালাল ভাইয়ের নাম ও তাঁর কর্মের পরিচয় আগে থেকেই জানা।আপনার এই লেখা তাঁর সাথে আত্মার আত্মীয়তা স্থাপন করলো।
খুব ভাল লাগলো লেখাটা----------- কেমন যেন জলরঙে আঁকা ছবির মত---------- চোখে, মনে এক সাথে ভাললাগার পরশ বুলিয়ে যায়----
মাঝে মাঝে আপনার কিছু লেখা পড়ে মুগ্ধ হই, স্তব্ধ হই, হতবাক হই। তখন একই সঙ্গে আপনাকে খুব অচেনা এবং চেনা লাগে।
জালাল ভাইয়ের জন্য শ্রদ্ধা। এমন মানুষ আছেন বলেই, আমরা পথ হারাই না।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
মনটা একই সাথে ভালো এবং খারাপ হয়ে গেলো।
..................................................................
#Banshibir.
জালাল ভাই অতুলনীয়, অশেষ শ্রদ্ধা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
চমৎকার
কোন জাতির মানুষ যখন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে ভয় পায়, নিজের অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিতে অস্বীকার করে তাকে বরং ভুলে যেতে চায় – তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে চায়, তখন সেই জাতি অনেক পিছিয়ে পড়ে – জাতি হিসেবে, মানুষ হিসেবেও। এই রকমটা হতে দেয়া যায় না। এই না হতে দেয়ার লড়াইটা আপনার একার নয়। তবুও এই রকম সময়গুলোতে লড়াকু মানুষদের লড়াইটা একাই এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। যতক্ষণ না আরেকটি আলো দেখা যায়। আপনার সঙ্গে যিনি আছেন, তাকে সবার সামনে এমন সাহসের সাথে তুলে আনার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। অনন্য একটি লেখা।
জালাল ভাইকে সশ্রদ্ধ সালাম...
এম এম আর জালাল নামটি যেদিন থেকে জানি - শ্রদ্ধা নিয়েই জানি, সাথে একটু কৌতুহল এম এম আর মানে কি? আজ জানলাম । এমন কি যেদিন তাঁর সাথে প্রথম কথা হয় সেদিন ও জানতে পারিনি (আসলে সেদিন স্বাভাবিকভাবেই ভুলে গিয়েছিলাম - হা হা হা) - লেখক কে অনেক ধন্যবাদ। জালাল ভাইকে শ্রদ্ধা সবসময়।
জালাল ভাই এর জন্য শ্রদ্ধা।
অসাধারণ। আর কিছু বলার নাই।
জালাল ভাইকে আমার পক্ষ থেকে স্যালুট পৌছে দেবেন প্লিজ।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
এই গভীর জীবন দর্শন যাঁর আছে, তাকে কে "একা" করতে পারে?
এই হচ্ছে প্রকৃত ধার্মিক, যে "সবার ওপর মানুষ" এই অমোঘ সত্য ধারন করে হৃদয়ের গভীরে।
জালাল ভাইকে শ্রদ্ধা। তাঁর মত মানুষের জন্যই এই পৃথিবী এখনো এত সুন্দর।
কুলদা, এই লেখাটার জন্য আপনাকে অভিবাদন জানাচ্ছি। তারা ফারা এই লেখার কাছে কিচ্ছু না।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
অদ্ভুত ভালো লাগল আপনার এই লেখাটি পড়ে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি লেখা দেবার জন্য
জালাল ভাইকে সাক্ষাত করা খুব অল্পের জন্য মিস্ করেছি। কিন্তু সে আফসোস্ মিটে গেছে যখন খোদ জালাল ভাই আমার ফোন নাম্বার যোগাড় করে আমাকে ফোন করেছেন।
জালাল ভাই, আপনি দীর্ঘায়ু হোন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এমনই সুস্থ্য-সবল-কর্মচঞ্চল থাকুন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনার গদ্যের কথা না বললেই নয়। প্রতিটি বাক্যে ছোট ছোট ডিটেইলের ব্যবহার বাক্যগুলোকে কত সুন্দর করে তুলতে পারে তা আপনার লেখাটি পড়ে বোঝা যায়। জানি তুলনাটা একটু অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তাও বলি: শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুড়ে সিরিজের বইগুলোতে এইরকম চমত্কার ডিটেইলের ব্যবহার দেখতাম আর মুগ্ধ হতাম। আপনার লেখাতে আবার সেই স্বাদ পেলাম।
সেইসাথে অনেক ধন্যবাদ জালাল ভাইয়ের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য।
আসাধারণ লেখা। অনেক ভালোলাগল।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি লেখা দেবার জন্য।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
যেকজন মানুষ পরম মমতায় নিজেদের ব্যাক্তি উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন, সেই গুটিকয় ব্যাক্তিদের মাঝে জালাল ভাইজান একজন।
জালাল ভাইজানকে বুঝানোর জন্য একটা কথা বলা হয়, জালাল ভাই আমাদের সিঁধু জ্যাঠা; মুক্তিযুদ্ধের এমন কোন অধ্যায় নেই, যার সম্পর্কে জালাল ভাই আমাদের তথ্য দিতে পারবেন না।
ভাইজান,
সব সময় ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, এই কামনা করি।
নতুন মন্তব্য করুন