ক। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রয় নিলেন কেন?
উইকিলিক্সের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সুইডেনে যৌন হয়রানি, যৌন অসদাচরণ এবং ধর্ষণজনিত অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থানকারী অ্যাসাঞ্জকে সুইডিশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে চাইলে অ্যাসাঞ্জ এই প্রত্যার্পনের আদেশের বিরুদ্ধে বৃটিশ সুপ্রিম কোর্টে আপীল করে হেরে যান। অতঃপর গ্রেফতার এড়াতে তিনি ইকুয়েডরের যুক্তরাজ্যস্থ দূতাবাসে গত জুন থেকে অবস্থান করছেন। গত ১৯ জুন তিনি ইকুয়েডর সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন এই বলে যে, তাঁকে সুইডেনে ফেরত পাঠানোর পেছনে আসল উদ্দেশ্য হল পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়া। উইকিলিক্স ওয়েবসাইটে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁস করে দেয়ার অপরাধে যুক্তরাষ্ট্র অন্যায়ভাবে তাঁকে শাস্তি দেবার পাঁয়তারা করছে। কাজেই তাঁর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রয়োজন।
খ। ইকুয়েডর সরকার গত ১৬ আগস্ট অ্যাসাঞ্জের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা অনুমোদন করেছেন। এখন কি ইকুয়েডর তাঁকে নিজ দেশে নিয়ে যেতে সমর্থ হবে?
অ্যাসাঞ্জ বর্তমানে লন্ডনের নাইটসব্রিজস্থ ইকুয়েডর দূতাবাসের ভেতর অন্তরীণ আছেন। ইকুয়েডর যেতে চাইলে তাঁকে প্রথমে দূতাবাস থেকে বেরুতে হবে। দূতাবাসের বাইরে অন্তত তিন ডজন ব্রিটিশ পুলিশ অবস্থান করছেন। অ্যাসাঞ্জ বাইরে এলেই তাঁকে আটক করা হবে- বৃটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে এমনটিই বলা হচ্ছে।
গ। দূতাবাসের বাইরে গেলে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করতে পারবে। কিন্তু দূতাবাসের ভেতরে গ্রেফতার করতে পারছেনা কেন?
১৯৬১ সালের জাতিসংঘ কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভিয়েনা কনভেনশন (The Vienna Convention on Diplomatic Relations (1961)) মোতাবেক কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দূতাবাসসমূহ তাদের স্বদেশী নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার মত। দূতাবাসের ভেতর স্বাগতিক দেশের আইন অচলপ্রায়। একইভাবে কূটনীতিকগণ প্রায় সকল বিষয়ে ভিন দেশেও তাঁদের নিজ দেশীয় আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন। এটি যেন এক দেশের ভিতর অন্য দেশের ভূখণ্ড। সেইসূত্রে ইকুয়েডরের দূতাবাসের ভিতর যুক্তরাজ্যের পুলিশের কর্তৃত্ব নেই। ভিয়েনা কনভেনশনটি দু’শর বেশি দেশ কর্তৃক স্বাক্ষরিত। এই দূতাবাসের বাইরে ব্রিটিশ ভূখণ্ডে অ্যাসাঞ্জ একজন জামিনের শর্ত ভেঙ্গে পালিয়ে যাওয়া আসামি।
ঘ। অ্যাসাঞ্জ দূতাবাসের ভেতরে থাকায় যুক্তরাজ্যের হাত কি বাধা?
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে তারা নিরুপায় নন। ইকুয়েডরের রাজধানী কিটোয় গত ১৫ আগস্ট বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে (নিউজ কনফারেন্স) দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিকার্দো পাতিনো বলেছেন, যুক্তরাজ্য সরকারের কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছেন তাঁরা। চিঠির ভাষা অনেকটা হুমকির মতো। যেখানে আভাস দেওয়া হয়েছে, ইকুয়েডর কর্তৃপক্ষ যদি যুক্তরাজ্যের কাছে অ্যাসাঞ্জকে হস্তান্তর না করে, তবে তারা দূতাবাসে ঢুকে তাঁকে বের করে নিয়ে যাবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে এ ধরনের হুমকি ইকুয়েডর জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। যুক্তরাজ্যের মতো একটি গণতান্ত্রিক, সভ্য ও আইনের নির্দেশ মেনে চলা দেশের কাছ থেকে এ ধরনের চিঠি অপ্রত্যাশিত।
যুক্তরাজ্য অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতার করতে অপ্রচলিত ‘কূটনৈতিক ও কনস্যুলার প্রাঙ্গণ আইন ১৯৮৭’ (Diplomatic and Consular Premises Act 1987) প্রয়োগ করার হুমকি দিয়েছিল বলে জানা যায়।
ঙ। এই আইনটি কি বলে?
এই আইন বলে যুক্তরাজ্য তাঁর দেশের অভ্যন্তরের ভিনদেশী দূতাবাস ভবনের কূটনৈতিক মর্যাদা বাতিল করে দূতাবাসের ভেতর প্রবেশ করার ক্ষমতা রাখে। তবে আইন বলে, যুক্তরাজ্য এই কাজটি কেবল তখনই করতে পারবে, যখন বিদেশি কোন দূতাবাস আন্তর্জাতিক আইন মোতাবেক কোন জন বিধ্বংসী সন্ত্রাসী বা ধ্বংসাত্মক নাশকতামূলক কাজের প্রশ্রয় দেয়। ১৯৮৪ সালে লিবীয় দূতাবাস এলাকা হতে ছোড়া গুলিতে একজন বৃটিশ পুলিশ নিহত হন। হত্যাকারী গ্রেফতার এড়াতে লিবীয় দূতাবাসে আশ্রয় নেয় এবং পরে কূটনীতিক দায়মুক্ততার সুবিধা নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এরপর অপরাধী কর্তৃক এধরণের সুযোগ গ্রহণে বাধা দিতে যুক্তরাজ্য এই আইনটি পাশ করে।
চ। সুতরাং যুক্তরাজ্য কি এই আইনটি এখন প্রয়োগ করতে পারে?
পর্যবেক্ষকরা বলছেন অ্যাসাঞ্জকে আশ্রয় দেয়ায় এই আইন প্রয়োগ করার মত তেমন কোন কারণের উদ্ভব ঘটেনি। এর ফলে যুক্তরাজ্য ভিয়েনা কনভেনশন ভঙ্গকারী বলে গণ্য হতে পারে। এই আইন প্রয়োগ করা হলে এর একটি বিপরীত দিকও আছে। সেক্ষেত্রে অন্য দেশে যুক্তরাজ্যের দূতাবাসগুলোও কোন অপ্রীতিকর কারণে তার কূটনৈতিক মর্যাদা হারানোর আশংকায় পড়বে বলে যুক্তরাজ্যেরই প্রাক্তন কূটনীতিকদের কেউ কেউ মনে করেন।
ছ। কাজেই অ্যাসাঞ্জ কি দূতাবাসের ভেতর নিরাপদ বলা যায়?
বলা যায়, সাময়িকভাবে। দূতাবাসের ভেতর থেকে বাইরে যেতে না পারলে তিনি ইকুয়েডর যেতে পারছেন না। ইকুয়েডর কিভাবে অ্যাসাঞ্জকে বের করে নিয়ে যাবে এটি একটি সমস্যা। যুক্তরাজ্য তাঁকে নিরাপদে বাইরে নিয়ে যেতে দিবে না। অন্যদিকে দূতাবাসের বাইরে ইকুয়েডর বৃটিশ পুলিশকে অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতারে বাধা দিতে পারবে না।
জ। অ্যাসাঞ্জকে বাইরে নিয়ে যাবার অন্য কোন উপায় কি আছে?
দূতাবাসের মতোই দূতাবাসের ব্যবহৃত যানবাহনও কূটনীতিকভাবে দায়মুক্ত। অর্থাৎ অ্যাসাঞ্জ দূতাবাসের কোন কূটনৈতিক বাহনে করে বাইরে এলে বৃটিশ পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করতে পারবেন না। কেননা আইন অনুযায়ী কোন কূটনৈতিক বাহন তল্লাশি করা যায় না। কিন্তু বাহনে করে তিনি যাবেন কোথায়? যুক্তরাজ্য থেকে বের হতে গেলে তাঁকে হয়ত আকাশ পথ ব্যবহার করতে হবে। সেক্ষেত্রে কূটনৈতিক বাহন থেকে নেমে বিমানে উঠার সময় যুক্তরাজ্যের মাটিতে পা ফেলা মাত্রই আইন অনুযায়ী তিনি ব্রিটিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধৃত হতে পারবেন। আরও একটি উপায় আছে। দূতাবাসের গাড়িতে করে তিনি সড়কপথে যেকোন উপায়ে বৃটিশ ভূখণ্ডের বাইরে অন্য কোন রাষ্ট্রের সীমানায় যেতে পারেন, যেই রাষ্ট্র তাঁকে নিরাপদে ইকুয়েডরগামী বিমানে আরোহনের সুযোগ দেবে। অথবা ইকুয়েডর দূতাবাস একটি কূটনীতিক ব্যাগে (বড় বাক্সও হতে পারে) ভরেও তাঁকে বাইরে পাঠাতে চেষ্টা করতে পারে। সেক্ষেত্রে সমস্যা হল ব্যাগ খুলে তল্লাসি চালানোর অনুমতি না থাকলেও বৃটিশ পুলিশ ব্যাগ স্ক্যান করে দেখতে পারে। সেক্ষেত্রে অ্যাসাঞ্জের উপস্থিতি টের পাওয়া গেলে তাঁরা যেকোনো উপায়ে তাঁকে গ্রেফতারের চেষ্টা করবে।
ইকুয়েডর চাইলে তাঁকে কূটনীতিক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারে। সেক্ষেত্রে অ্যাসাঞ্জ একটি ইকুয়েডরের কূটনীতিক পাসপোর্ট পাবেন। তাহলে ভিয়েনা কনভেনশনের ২৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে তাঁর বিচার-প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি পাওয়ার কথা। কোনো কূটনীতিককে গ্রেপ্তার বা আটক করা যায় না। তবে সমস্যা হচ্ছে যুক্তরাজ্যে তাঁর পরিচয় একজন পলাতক আসামি। তাঁর কূটনীতিক হিসেবে নিয়োগের আদেশ যুক্তরাজ্য গ্রহণ না করলে ইকুয়েডর তেমন কিছু করতে পারবে না হয়তো।
ঝ। যুক্তরাজ্য অ্যাসাঞ্জকে কেন সুইডেনের হাতে তুলে দিতে চায়?
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সুইডেনের স্টকহোম জেলা কোর্ট হতে তাঁর অনুপস্থিতিতে একটা গ্রেফতারি পরোয়ানা (domestic detention order) জারী করা হয়েছিল। অ্যাসাঞ্জ সুইডেনের বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত একটি দেশ যুক্তরাজ্যে অবস্থান করায় তাঁকে গ্রেফতারপূর্বক সুইডেনে ফেরত পাঠানোর জন্য সুইডেনের একজন অভিশংসক (prosecutor) তাঁর বিরুদ্ধে গত ২ ডিসেম্বর ২০১০ একটি ‘ইউরোপীয় গ্রেফতারি পরোয়ানা (European Arrest Warrant (’EAW’) জারী করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ পূর্বে নিজেদের ভেতর আইনগত আদেশসমূহ জারী করার উপায় হিসেবে একটি কাঠামোগত সিদ্ধান্ত (the Framework Decision’ (2002/584/JHA)) গ্রহণ করেছিল। বহিঃসমর্পন আইন ২০০৩- (Extradition Act 2003) এর প্রথম ভাগ মোতাবেক যুক্তরাজ্য এই সিদ্ধান্তটি কার্যকর করেছে। সেই মোতাবেক সুইডেনে জারীকৃত ইউরোপীয় গ্রেফতারি পরোয়ানাটি তামিল করতে যুক্তরাজ্য বদ্ধপরিকর।
ঞ। সুইডেনে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি কি?
২০১০ সালের ১১ আগস্ট অ্যাসাঞ্জ আফগানিস্তান যুদ্ধের উপর একটি আলোচনা সভায় যোগ দিতে সুইডেন যান। সেইসময় একজন সুইডিশ ভদ্রমহিলা ২০ আগস্ট সুইডিশ পুলিশ দপ্তরে গিয়ে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের যৌনবাহিত সংক্রামক রোগ পরীক্ষা (STD test) করাতে বাধ্য করতে আবেদন করেন। ঐ মহিলা বলেন, অ্যাসাঞ্জের সাথে তাকে অনিরাপদ যৌন সংসর্গে বাধ্য করা হয়েছে। ফলে তিনি এধরণের রোগের ভয়ে ভীত হয়ে আছেন। ঐ মহিলার সাথে তাঁর বান্ধবী উপস্থিত ছিলেন। তবে ঐ বান্ধবী পুলিশের কাছে তখন কোন অভিযোগ করেননি। ভদ্রমহিলাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করার পর কর্তব্যরত অভিশংসক(duty prosecutor) মারিয়া হেলজেবো কেজেলস্ট্রান্ড (Maria Haljebo Kjellstrand) ঘটনাটির ধরণ নির্ধারণপূর্বক ধর্ষণসহ আরও তিনটি অভিযোগে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী করেন। কিন্তু এরপর দিন প্রধান অভিশংসক (Chief Prosecutor) ইভা ফিনি (Eva Finné) ধর্ষণের অভিযোগটি ছাটাই করে দেন এবং অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ফেরত নেয়া হয়। এরপর পুনরায় উর্ধ্বতন অভিশংসক (senior prosecutor) মেরিয়ান নি (Marianne Ny) ধর্ষণের অভিযোগটি পুনরুজ্জীবিত করেন। এইসময় অ্যাসাঞ্জ নিয়মিত অভিযোগের শুনানিতে হাজিরা দেন। তিনি ২৮ সেপ্টেম্বর বার্লিন যান। বারলিনে অবস্থানকালে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী হলে তিনি আর সুইডেন ফেরত যাননি। লন্ডন অবস্থানকালে উর্ধ্বতন অভিশংসক মেরিয়ান নি ২ ডিসেম্বর ২০১০ একটি ইউরোপীয় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী করেন। এই গ্রেফতারি পরোয়ানা এড়াতে অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাজ্যের আদালতে আপীল করেছিলেন।
উল্লেখ্য যে, সুইডিশ আইনে যৌন সংক্রান্ত অভিযোগগুলো খুব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। অভিযোগকারিণীদের আইনজীবী অবশ্য বলেছেন যে এই অভিযোগটি গুরুতর এবং এর সাথে উইকিলিক্সের কোন সম্পর্ক নেই।
ট। যুক্তরাজ্যের আদালতে অ্যাসাঞ্জের আবেদনের ভিত্তি কি ছিল?
যুক্তরাজ্যের আদালতে অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীগণ বলেন যে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সুইডেন হতে একটি ইউরোপীয় গ্রেফতারি পরোয়ানা (European Arrest Warrant) জারী করা হয়েছে। পরোয়ানাটি জারী করেছেন একজন অভিশংসক(prosecutor)। অভিশংসক কোন বিচারিক কর্তৃপক্ষ ("judicial authority") নন। কেননা যুক্তরাজ্যের আইন মোতাবেক আদালত, বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট হলেন বিচারিক কর্তৃপক্ষ। অভিশংসক মূলত নির্বাহি (executive) বিভাগের হয়ে বিচারকার্যের সাথে যুক্ত হন এবং আসামির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। রাষ্ট্রের অংগ সমূহের ভেতর ক্ষমতা বিভাজন তত্ত্ব মতে বিচার বিভাগ নির্বাহি বিভাগ হতে স্বাধীন। নির্বাহি বিভাগের প্রতিনিধি বিচার বিভাগীয় কোন কাজ করতে পারেন না। কাজেই একজন নির্বাহি বিভাগের প্রতিনিধি কর্তৃক জারীকৃত গ্রেফতারী পরোয়ানা বৈধ নয়। আরও বলা হয় যে গ্রেফতারি পরোয়ানাটি কেবল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য, শাস্তির মুখোমুখি করার জন্য নয়।
তবে সুইডেনে প্রচলিত আইনমতে একজন অভিশংসক বৈধভাবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী করতে পারেন। ফলে সুইডেনের আইনমতে পরোয়ানাটি অবৈধ নয় এবং সেই সূত্রে তা বহিঃপ্রত্যার্পন আইন ২০০৩ মোতাবেক গ্রহণযোগ্য বিধায় যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট অ্যাসাঞ্জের আবেদনটি নাকচ করে দেন। এরপর গ্রেফতার এড়াতে ও সুইডেনে ফেরত পাঠানো ঠেকাতে অ্যাসাঞ্জ ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রয় নেন।
ঠ। যুক্তরাষ্ট্র কেন অ্যাসাঞ্জের উপর ক্ষুদ্ধ?
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ কর্তৃক পরিচালিত উইকিলিক্স ২০১০ সালে ইরাক যুদ্ধ সংক্রান্ত প্রায় ৩৯১,৮৩২ টি ইউএস গোপন নথি প্রকাশ করে। এছাড়াও প্রায় ৭৭ হাজার আফগান বিরোধ সংক্রান্ত শ্রেণীকৃত পেন্টাগন নথিও প্রকাশিত হয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দূতাবাসের প্রায় আড়াইলাখ গোপনীয় তারবার্তা প্রকাশিত হয়। এইসব অপরাধে গুপ্তচরবৃত্তি-সংক্রান্ত আইনের অধীনে মামলা করা হলে দোষ প্রমাণ সাপেক্ষে তাঁর মৃত্যদন্ড পর্যন্ত হতে পারে।
দোহাইঃ
১) telegraph.co.uk
২) nytimes.com
৩) wikipedia.org
৪) BBC
মন্তব্য
অনেক তথ্যসমৃদ্ধ একটি পোস্ট
তবে আমি জানতে চাচ্ছিলাম আরও দেশ থাকতে ইকুয়েডরকে বেছে নেয়ার কি কোন বিশেষ কারণ আছে?
হিল্লোল
ইকুয়েডরকে বেছে নেয়ার কারণটি এখনো স্পষ্ট নয় মনে হয়। তাই এ বিষয়ে কিছু বলিনি।
দক্ষিন আমেরিকান দেশগুলো ছাড়া অন্যান্যদেশ এ্যাম্বেসীর ভেতর ভিনদেশী নাগরিকদের আশ্রয় দেয় না।
জোসেফ স্তালিনের কন্যা সসভেৎলেনা অ্যালিলুয়েভা দিল্লিস্থ আমেরিকান দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
চমৎকার কম্পাইলেশন!!!
এ্যাসেঞ্জের ইকুয়েডরে পৌছানোটা বড় দরকার!!
হ্--
চমৎকার
চমৎকার সে হতেই হবে যে-
উদাস ভাইর মতে অমত কার?
বুঝছি
..................................................................
#Banshibir.
পীর ভাই
বুঝলেও সব সত্য কইতে নাই---
ইকুয়েডরেরই দূতাবাস ক্যান, এইটা নিয়া পোস্টে আরেকটু যোগ করলে ভালৈত।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
এই বিষয়ে কোথাও কোন তথ্য পাইলাম না অনিন্দ্য ভাই। তবে ধারণা করি- অ্যাসাঞ্জের পছন্দ আর সেই দেশের আশ্রয় দেয়ার ইচ্ছা- এই দুইয়ের সবথেকে উত্তম ম্যাচিং পয়েন্ট এইটা।
উহুঁ
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
একটু একটু বুঝলাম। ক্লিয়ার হৈল না--
অনেক কিছু জানলাম।
ইকুয়েডর যদি একটা আলাদা বিমান পাঠায়? এয়ারপোর্ট নামার পর দূতাবাস সেটাকে তাদের বাহন হিসেবে ঘোষণা করলো! - আসলে কোনো উপায় আছে কিনা বুঝতে চাইছি।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
বিষয়টা একটু জটিল গৌতম দা। এইখানে স্থান কয়েকটা।
এক- দূতাবাস। দূতাবাসের ভেতর থেকে একটা গাড়িতে উঠা যাবে। এইখানে পুলিশ হয়ত বাধা দিতে পারবে না।
দুই- এরপরের গন্তব্য বিমানবন্দর। বিমানবন্দরের ভেতরে একটা নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত গাড়ি যেতে পারবে। বিমান পর্যন্ত গাড়ি যেতে পারবে না।
তিন- এরপর ইমিগ্রেশন। এইখানে তাঁকে চেক ইনের জন্য নামতে হবে। এরপর টারম্যাকে বিমান। গাড়ি থেকে মাটিতে নামলেই দূতাবাসের ইমিউনিটি শেষ। বিমান পর্যন্ত এইটুকু পথ সে পার হতে পারবে না। কট হয়ে যাবে।
১৯৮৪ সালে এইভাবে একজনকে ডিপ্লোম্যাটিক ব্যাগে করে হিথরো বিমানবন্দর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বিমানবন্দরের ভেতর কাস্টমস চেক ইনের সময় ব্যাগ স্ক্যান করে তাঁকে বের করে আটক করা হয়।
সোজা কথায়- যুক্তরাজ্য সেইফ প্যাসেজ না দিলে তাঁর বাইরে যাওয়া কঠিন।
বিমান সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে এয়ারপোর্ট চেকিং পার করা! ইমিগ্রেশনে আটকে দেবে। বিমানে উঠতে দেবে না! সোজা গাড়ি নিয়ে বিমানের দরোজায় নামার উপায় নাই! এয়ারপোর্টে নেমে ইমিগ্রেশনের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ঠিক বলেছেন অনার্য সঙ্গীত দা।
সেক্ষেত্রে একমাত্র মাসুদ রানা ভরসা!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
সর্বোচ্চ সম্ভবত ১৫ বছর দুতাবাসে আশ্রয় নিয়ে থাকার নজির আছে!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
সম্ভবত না, আপনার দেয়া তথ্যটা নিশ্চিত।
ধন্যবাদ, সময়োচিত একটি পোস্টের জন্য।
পড়ার জন্য
এক টানে পড়লাম, পুরা সারসংক্ষেপ পেয়ে গেলাম, ধন্যবাদ।
পড়ার জন্য
ভালো লিখেছেন।
ইকুয়েডরের কাছেই কেন আশ্রয় চাইলেন- পোস্টে সে প্রসঙ্গ থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা এরই মধ্যে বলেছেন অনিন্দ্যদা। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, ইকুয়েডর কেন দিলো? কোন গ্রাউন্ডে? কেন সিদ্ধান্ত নিতে প্রায় দুইমাস সময় লাগালো?
এ প্রসঙ্গে মশিউল আলমের এই লেখাটাও দেখা যেতে পারে।
মশিউল আলমের লেখাটি পড়েছি আগেই। ওটা আমার রেফারেন্সে দেয়া টেলিগ্রাফ পত্রিকার থেকেই একটু অন্যভাবে লেখা।
সিদ্ধান্ত নিতে ইকুয়েডর কেন ২ মাস নিয়েছে- এটা বোঝা যায়। প্রথমত - এসাঞ্জ তাঁর নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়াতে রাজনৈতিক ভাবে হুমকির মুখে নেই। এসাইলাম চাইলে এটি সম্ভবত প্রথম বিবেচনা করা হয়।
দ্বিতীয়ত- দূতাবাসের ভেতরেই এসাঞ্জকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তারা সুইডিশ কর্তৃপক্ষকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। সুইডিশ কর্তৃপক্ষ তা মানে নি। তেমনটি ঘটলে এবং বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে গেলে হয়ত আর রাজনৈতিক আশ্রয় দেবার দরকার পড়ত না। তৃতীয়ত- ১৫ তারিখ বৃটিশ কর্তৃপক্ষ দূতাবাসে অনুপ্রবেশের হুমকি দিয়েছিল। চতুর্থত- এসাঞ্জ তাঁর আবেদনে জানিয়েছেন যে তাঁকে সুইডেনে পাঠানো একটা বাহানা। আসলে সুইডেন থেকে তাঁকে আমেরিকার হাতে তুলে দেয়া হবে এবং সেখানে তাঁকে শাস্তি দেয়া হবে। শেষ পয়েন্টটিই সবথেকে গুরুত্বপুর্ণ। সব বিবেচনায় ইকুয়েডর আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মনে হয়।
তবে এসাঞ্জ কেন ইকুয়েডরকে বেছে নিয়েছেন - এটি এখনো আমার জানা নেই। ধন্যবাদ।
এই নাটকের একজন অজানা হিরো ব্র্যাডলি ম্যানিংয়ের প্রসঙ্গ বাদ পড়ে গেছে লেখায়। ব্র্যাডলি ম্যানিংয়ে মতো দুরাবস্থা হতে পারে অ্যাসাঞ্জের।
মাহবুব ভাই
ঠিক বলেছেন। ব্র্যাডলি ম্যানিংয়ের প্রসঙ্গটি নিয়ে আসার দরকার ছিল খুব। অন্তত শেষের প্যারায় বলে রাখলে ভালো হত।
অ্যাসাঞ্জের সাম্প্রতিক তম ভাষণ, একোডোরিয়ার ব্যালকনি থেকে।
একটানে পড়ে ফেললাম। দারুণ লাগলো।
টুইটার
ধন্যবাদ
কিলিয়ার।
***
Haljebo Kjellstrand = হালিয়েবো কিয়েলস্ট্রান্ড।
Finné = ফিনে
উচ্চারণ সংশোধনীদুটোর জন্য কৃতজ্ঞতা রইল দুর্দান্ত দা।
নতুন মন্তব্য করুন