একটা জি পি আর, প্রাইমার্কের চেইন শপ এবং অন্যান্য

পথিক পরাণ এর ছবি
লিখেছেন পথিক পরাণ [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ০১/০৫/২০১৩ - ৪:৫৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক।

পনের কোটি মানুষের একটা দেশে একটা জি পি আর (গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং র‍্যাডার) নেই!

না থাকতেই পারে। জি পি আর দিয়ে কি হয়? মাটির নীচে ভারী ধাতব বস্তুর অবস্থান নির্ণয়ে এই যন্ত্রটি নাকি কাজে দেয়। আবার কেউ বলছেন, এই যন্ত্রটি নাকি ধ্বংসস্তূপের ভেতর প্রাণের সন্ধান দিতে পারে। জি পি আর আমাদের কি কাজেই আর লাগবে? ধংসস্তূপ খুঁড়ে প্রাণের সন্ধান করতে হতে পারে, এমনটি বোধকরি আমাদের কল্পনাতে ছিল না। তাই ২০০৫ সালে দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য এই যন্ত্রটি কেনার সুপারিশ করা হলেও আজও কেনা হয়নি।

জি পি আর তো অনেক দামী যন্ত্র। এর কথা বাদ থাক। কিছুদিন আগে দেশের কোন একটা ছোট্ট উপজেলা শহরে একটা ভবনে আগুন লাগলো। খবর পেয়ে দমকল বাহিনী ছুটে এলো। তখন সন্ধ্যাবেলা। ভবনটির নিচতলায় কলাপসিবল গেটে তালা লাগানো। দমকল বিভাগের কর্মী বললেন তাদের কাছে লোহার গেট ভাঙ্গা বা তালা কেটে ফেলার মতন বিশেষায়িত যন্ত্র নেই। পর্যাপ্ত পানি আছে কেবল তাদের কাছে । অবশেষে গেটের দারোয়ানকে খুঁজে পেতে চাবি যোগাড় করা হল। এরপর দমকলের হোশ পাইপ ভিতরে প্রবেশ করিয়ে আগুন নেভানো হল।

আরেকবার। মহাসড়ক ছেড়ে একটা চলন্ত বাস দিক হারিয়ে পাশের খাদের পানিতে পড়ে গেল। বাসের গোটা শরীর যাত্রীসমেত পানির গভীরে। দুর্ঘটনাটির সাথে আগুনের যোগসূত্র নেই। তবুও মফস্বলে এইসব দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসকেই স্মরণ করা হয় প্রথমে। যথারীতি ফায়ার সার্ভিসের একটা গাড়ি এলো। তাঁরা গাড়ি থেকে নেমে বললেন তাদের সাথে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডুবুরী নেই। উপস্থিত জনগণ বাসটা টেনে তুলবার যোগাড় করতে ফায়ার সার্ভিসকে বলার সাহস আর পেল না।

২০০৫ সালে সাভারের অদূরে স্পেকট্রাম নামে একটা পোশাক শিল্প ভবন ধ্বসে পড়েছিল। কিছু প্রাণহানি হল এই ঘটনায়। এইরকম অনভিপ্রেত দুর্ঘটনা ঘটে গেলে ধ্বংসস্তূপ দ্রুত অপসারণ আর জানমাল হেফাজতের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির একটা তালিকা করার জন্য সরকার তখন কমিটি করে দিল। শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে সেই কমিটি ঘেটেঘুটে কার্যকরী একটা তালিকা তৈরি করলেন। সেই তালিকায় জি পি আর ছিল। তালিকা তৈরির ৫ বছর পর, ২০১০ সালে ঐ তালিকার কিছু যন্ত্র প্রথম কিস্তিতে কেনা হলেও জি পি আর বাদ থেকে গেল। রিচ্যাট পুলার, প্রভার, জেনারেটর, হাইড্রলিক জ্যাক, রোটারি হ্যামার ড্রিল, ইলেকট্রিক ড্রিল, বোল্ড কাটার ইত্যাদি নামের যন্ত্রগুলো কেনার পর যথাযথভাবে দুর্যোগ মোকাবেলাকারী বাহিনীর হাতে পৌঁছেছে কিনা, কিংবা তাদের হাতে পৌঁছালেও দরকারে এই যন্ত্রগুলো ব্যবহার করার উপযোগী প্রশিক্ষণ তাদের দেয়া হয়েছে কিনা- আমাদের জানা নেই।

আমাদের নেই-এর তালিকাটি এভাবেই বড় দীর্ঘ হয়ে ওঠে।

ফায়ার সার্ভিস কেবল আগুন নেভাবে, আর কোন দুর্যোগ মোকাবেলায় অংশ নেবে না, এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। ২৮৬ টা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে। তাদের প্রত্যেকটি স্টেশনে অন্তত একজন করে ডুবুরী থাকতে পারত। আর থাকতে পারত রিচ্যাট পুলার, প্রভার, জেনারেটর, হাইড্রলিক জ্যাক, রোটারি হ্যামার ড্রিল, ইলেকট্রিক ড্রিল, বোল্ড কাটারসহ আরও প্রয়োজনীয় নাম না জানা আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। এমনকি অক্সিজেনও। এইসব যন্ত্র নিয়ে তাঁরা কেবল আগুনে পানি ঢালা নয়, বরং আরও নানবিধ দুর্যোগে দ্রুত কার্যকর ভূমিকা রেখে প্রাণহানি রোধ করতে পারত। আমরা ফায়ার সার্ভিসের দিকে হয়ত সেরকম গুরুত্ব নিয়ে তাকাবার ফুরসৎ পাইনি কখনো।

দুই।

একটা ডোবা। রাতারাতি ভরাট হয়ে ডোবাটির উপর বহুতল অট্টালিকা দাড়িয়ে গেল। দেখার কেউ নেই। ভবন বানাতে গেলে অনুমতি নিতে হয়। ঢাকার আশেপাশে ড্যাপ এর ভেতর হলে রাজউক থেকে। রাজউকের বাইরে আছে পৌরসভা। তার কর্তাব্যক্তিরা ভবন নির্মাণের অনুমতি দিয়ে দেন। ডোবাটি সাভার পৌরসভার খুব কাছে ছিল। পৌরসভার প্রকৌশলী আর অন্য কর্তাব্যক্তিরা এই ভবনটি বানাবার অনুমতি দিয়ে দিলেন। ভবনটি বানাতে নকশা তৈরি হল। সুরম্য নকশা। কোন একজন সুদক্ষ প্রকৌশলী নকশাটি করে দিলেন। ইট পাথর চুন সুরকি রাতারাতি আকাশ ছাপিয়ে উঠল। ডোবাটি বুজে গেল। ৬ তলার অনুমতি নিয়ে ভবনটির ওপরে আরও তিনটি তলা তৈরি হল।

এইভাবে একটা মজা পুকুরের উপর নয় তলা একটা ভবন দাড়িয়ে গেল। মাটি পরীক্ষা করে দেখার কথা কেউ ভাবল না। সিমেন্ট বালি ঠিকঠাক মেশানো হয়েছে কিনা- পরীক্ষা করা হল না। এসব দেখার কেউ নেই। ভবনটির মালিক সোহেল রানা জানতেন, এই ভবনে তাকে বাস করতে হবে না। অধিকাংশ ফ্লোর বিক্রি হয়ে যাবে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে আর ভবনের বীম ও মাটির সহনক্ষমতা না থাকার কারণে ভবনটি ধ্বসে গেলেও তার নিজের তেমন ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না। কাজেই প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি সর্বোচ্চ উপায়ে ফাঁকি দিলেন। ভবনটির উপরের পাঁচটি তলায় পোশাক কারখানা বসে গেল। ভারী ভারী মেশিন বসানো হল। মেশিনগুলো চালানোর জন্য যুগল হাত এলো। হাজার চারেক।

একটা পোশাক কারখানা চালু করতে কমবেশি একুশ ধরণের সনদ লাগে। বিজিএমইএ নামের একটি প্রতিষ্ঠান পোশাক কারখানাগুলোকে সদস্য হিসেবে একটা ছাড়পত্র দেয়। সেই সনদ দেবার সময় কারখানা ভবনের স্ট্রাকচারাল ডিজাইন এবং লোড ক্যালকুলেশন বিবেচনা করার কথা। তারা ভুলে গেল।

বাইরে থেকে ক্রেতা এলো। আন্তর্জাতিক চেইন শপের মালিক। প্রাইমার্ক, বোনমার্শ। তাদের পরিদর্শন দল তদন্ত করে গেল কারখানাগুলো। সব ঠিক আছে। তাদের একটু সস্তায় টি শার্ট, ট্রাউজার আর অন্যান্য পোশাক দরকার।

সরিষাবাড়ির রাইদারপাড়া গ্রামের আঃ সামাদের পুত্র আনিসুর, কুষ্টিয়ার শাহিনারা সব লেগে গেল কাজে। কেউ কাপড় কাটে। কেউ সেলাই ফোঁড়াই করে। কেউ বোতাম লাগায়। এইরকম পাঁচ হাত ঘুরে একেকটা কি সুন্দর পোশাকই না তৈরি হয়! ছোট্ট একটা কক্ষের ভেতর অজস্র রকম ভারী ভারী যন্ত্র। তাদের বিকট ভোঁতা আওয়াজ। অপর্যাপ্ত আলো। হাত খুলে গায়ের ঘাম মুছবার মতন জায়গা নেই। তাতে কি? কিছুই তাদের অপরিসীম মনোযোগকে খন্ডিত করেনা। যন্ত্রের থেকেও নিবেদিত আর একটানা চলতে থাকে তাদের শরীর।

সকাল ৮ টা বেজে গেলেই কারখানার গেটে তালা পড়ে। গায়ের রং যা কিছু হোক, পুঁজিবাদের ধারকদের চিন্তায় বোধকরি খুব ভিন্নতা নেই। পোশাক শিল্প আমেরিকায় যখন শ্রম বাজারের প্রধান ক্রেতা ছিল, সেই মুল্লুকের শিল্প মালিকরাও নাকি এভাবেই, কারখানার গেটে তালা লাগিয়ে রাখতেন। Triangle Shirtwaist Factory নামের নিউইয়র্ক শহরের একটা বড় কারখানার ৮, ৯ আর দশ তলায় আগুন লেগেছিল। ১৯১১ সালে। ১৪৬ জন কর্মী সেই আগুনে পুড়ে আর আগুন থেকে বাঁচতে জানালা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ হারিয়েছিল। আগুন থেকে ওরা বাঁচতে পারেনি। ম্যানেজার গেটে তালা লাগিয়ে রেখেছিল, যাতে কর্মীরা এটা ওটা চুরি করে পালিয়ে যেতে না পারে। এর একশ বছর পর সাভারেরই একটা পোশাক কারখানায়, তাজরিন গার্মেন্ট-এ আগুন লাগলো। পুঁজিবাদী শোষক শ্রেণী একই কায়দায় গেটে তালা লাগিয়ে রেখেছিল। চুরি হতে যাওয়া দুটো নিডল, এক মুঠো সুতো, দশটা বোতাম কিংবা দুইগজ কাট পিসের থেকে একটা তালার দাম কম। কাজেই তালা ঝুলে থাকল সভ্যতার আবরণের নান্দনিক হয়ে ওঠার সূতিকাগারের পাহারায়। আর ভেতরে সভ্যতার জ্বলন্ত উনুনে নিজেদের অস্থিমজ্জ্বা পুড়ে ছাই হতে হতে ক্রমাগত বাঁচবার আকুতি জানালো কতগুলো বোকা শাহানা মনিরুল।

এত মৃত্যু! এত প্রতিকূলতা! তবুও এই কর্মীবাহিনী ক্ষান্ত হয়না। কালশিটে হাতে কি নিবিড় মমতায় মসৃণ সেলাই তুলে এক চিলতে কাপড়কে সুদৃশ্য করে তোলেন তাঁরা!

কার্গো আর জাহাজ ভরে সেই পোশাক চলে যায় লিডস, শেফিল্ড আর লন্ডনের বড় বড় বিপণী বিতানগুলোতে। মাত্র ১.৫ পাউন্ডে টি-শার্ট, ১০ পাউন্ডে দুইটা ট্রাউজার ব্যাগে পুরে তৃপ্তি নিয়ে বাড়ি ফেরে লন্ডন শহরের অফিস ফেরত ক্রেতা। তাঁর ছোট বাচ্চাটি চকোলেট আইসক্রিম মেখে পোশাক নষ্ট করে ফেললে মায়ের মুখ কালো হয়না। তিনি এমনকি পোশাকটি ড্রাই ওয়াশে পাঠানোরও তাগিদ অনুভব করেননা। বরং প্রাইমার্কের পাশের বিপনীতে গিয়ে ১.৫ পাউন্ডে আরেক সেট পোশাক কিনে ফেলেন চটজলদি। এই করে করে প্রাইমার্কের মতন কোম্পানিগুলো ছয় মাসে তাদের মুনাফা দেড়গুণ করে ফেলল।

এদিকে ১.৫ পাউন্ডের টি শার্ট বানাতে গিয়ে কেবল নিউ ওয়েভের মতন পোশাক কারখানাগুলো আরেকটু সাশ্রয়ী আঙ্গুল আর লে আউট খোঁজে। তুমুল প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গিয়ে খরচ আরেকটু কাটছাঁট করতে হয় কেবল। অনিরাপদ আর অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠে কাজের পরিবেশ। তাতে কি? পোশাকের গায়ে তো আর নোংরা শ্রমিকের ঘামের গন্ধ মেখে থাকে না!

এর ভেতর একদিন। ভবনটিতে ফাটল ধরে। মালিকরা তা দেখতে পায় না। তারা ফাটল দেখে ক্রয় আদেশে- বিলম্ব হলে কি হবে! ভবনের মালিক আশ্বস্ত করেন- এমন ফাটলে কিছু হয়না। তিনি নিজেও ঢুকে পড়েন সেই ফাটলযুক্ত গুহার ভিতর। তারপর...

তিন।

রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। পত্রিকায় যতদূর জানা গেছে, একটা মামলায় দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারায় দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যুর অপরাধ আনা হয়েছে৷ এই ধারায় অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলে অপরাধীর সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে। এছাড়াও দণ্ডবিধির ৩৩৭, ৩৩৮ এবং ৩৪ ধারা রয়েছে মামলায়৷

অন্য একটি মামলা করেছে রাজউক। দ্য বিল্ডিং কন্সট্রাকশন এক্ট ১৯৫২- এর সংশ্লিষ্ট ১২ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তির পরিমাণ ৭ বছর কারাদন্ড। দেখা যাচ্ছে, যদি মামলা সংক্রান্ত তথ্যগত ভুল না থাকে, তবে আমাদের আবেগ যত গভীরই হোক না কেন, সোহেল রানার অপরাধ বর্তমান অবস্থায় প্রমাণসাপেক্ষে ৭ বছরের কারাদণ্ডের থেকে হয়ত বেশি নয়।

Triangle Shirtwaist Factory নামের নিউইয়র্ক শহরের কারখানাটির মালিক আগুনে পোড়ানোর দায়ে ফার্স্ট ডিগ্রি ও সেকন্ড ডিগ্রীর নরহত্যার অপরাধের মামলায় খালাস পেয়েছিলেন। কারণ তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ আদালতে প্রমাণ করা যায় নি।

..........................................

রানা প্লাজা সাভারে ধ্বসে নাই। ধ্বসে পড়েছে আমাদের ভোগবাদী চেতনার ওপর। মানুষ হিসেবে আমাদের স্মৃতিশক্তি নাকি জেলি ফিসের মতন। খুব দ্রুত সব কিছু ভুলে যেতে পারি। স্মৃতি ভুলে যাবার একটা অন্তত ভাল দিক আছে। অতীতের কোন কষ্টদায়ক স্মৃতি আমাদের কাতর করে তুলতে পারবে না। আসুন। আমরা ভুলে যাই। ভুলে যাই স্পেকট্রাম, তাজরিন কিংবা রানা প্লাজার মৃত্যুকূপের কথা। এবং এরপর অপেক্ষা করি আরও ভয়াবহ কোন মৃত্যুকূপের উন্মোচনের, যেখানে আমাদের অতীতের সব স্মৃতিকে ম্লান করে নির্বাসিত করতে পারব।


মন্তব্য

মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান এর ছবি

ভাই আমাদের লজ্জাশরম বিবেকের উপর বোধ হয় প্রিজারভেটিভ দেয়া আছে। তাই বিবেক আমাদের তাড়ায় না। আর রানার শাস্তি সর্বোচ্চ সাত বছর! অরেতো ৭ বার মৃত্যুদন্ড দিলেও ওর পাপের প্রাশ্চিত্ত হবেনা।

পথিক পরাণ এর ছবি

'বিবেক তাড়িত' হতে হলে বিবেক থাকতে হয়। আমাদের বিবেক তো মনে হয় যাত্রা দলের বিবেকের মতন সেই কবেই মরে গেছে! সে আর তাড়াবে কি করে!

তারানা_শব্দ এর ছবি

মন খারাপ সেই তো, ৭ বছর পর জেল থেকে বের হবে, জং ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে বের করে নিয়ে যাবে! এই জন্যই তো সে এতো সাহস পায়, ধরা খেয়েও বলে 'ছাড়া পেলে সবাইরে দেখে নিবো।'

এই লোককে ৯ তলার উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে ক্রেন দিয়ে পিষে ফেলা উচিত!!!

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

পথিক পরাণ এর ছবি

এইভাবে সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে যাচ্ছে---

সুমাদ্রী এর ছবি

টাকা, টাকা, আরও আরও টাকা চাই। কত টাকা হাতে, পকেটে, ব্যাংকে থাকলে মানুষ বলবে, ' থাক, পর্যাপ্ত টাকা হয়েছে, এবার একটু মানুষ হই।'?

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

চলুক

পথিক পরাণ এর ছবি

টাকার লোভে যারা পড়ে- তারা কখনো মানুষ হতে পারেনা। যারা মানুষ, তারা কখনো টাকার লোভে পড়ে না।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এক নম্বর পয়েন্টটা নিয়ে ভারেকটু ভাবুন। দেখুন একটা পূর্ণাঙ্গ ও স্বতন্ত্র 'রেসকিউ এন্ড সিভিল ডিফেন্স কোর'-এর রূপরেখা দাঁড় করানো যায় কিনা। এটা খুব জরুরী হয়ে পড়েছে। এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার পর এক মাসের একটা বাধ্যতামূলক ট্রেনিং থাকা দরকার। নিয়মিত আর অনিয়মিত সদস্য দিয়ে কোরটা গঠন করা যায়। তাতে যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলায় এক কলে সবাইকে হাজির করা যাবে। এর একটা ফান্ড থাকবে যেখানে দান করলে আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে। তাছাড়া কারো অবহেলাজনিত কারণে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তার সম্পদ রাষ্ট্রায়ত্ব করে ক্ষতিপূরণ পরিশোধের আইনও থাকা দরকার।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

পথিক পরাণ এর ছবি

পাণ্ডব দা- খুব হতাশ হয়ে পড়ি আজকাল প্রায়ই। অল্প কিছু লোভী মানুষের সীমাহীন স্বার্থপরতায় অজস্র ভাল মানুষের প্রচেষ্টা আর ইচ্ছা রানা প্লাজার মতন ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়ে যাচ্ছে। ব্যতিক্রমী যারা দু একজন প্রতিবাদ করে- তারা নিজেদের খুব একা আবিষ্কার করে।

১। ফায়ার সার্ভিসকে আমরা সাধারণত আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসে স্মরণ করি। এই দিন দু একটি এনজিও সহযোগে একটা র‍্যালি হয়। কোন একটা বিদ্যালয়ে মহড়া হয়। ঐ বিদ্যালয়ের বাইরের বাচ্চারা সাধারণত বিষয়টি জানতেই পারে না। একারণে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে সকল বিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে সারাবছর দুর্যোগ মোকাবেলা সংক্রান্ত কিছু প্রশিক্ষণ আর তথ্য দেয়া যেতে পারে। আমি দেখেছি- বাচ্চাদের এই মহড়াগুলো খুব কাজে লাগে। তবে আমাদের বেশি দরকার মনে হয় সচেতনতা। এই কাজটি আমাদের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ ফায়ার সার্ভিসের সাহায্য না নিয়েও করতে পারেন। বিশেষ করে আগুন লাগার ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় অধিকাংশ সময় অসাবধানতা থেকেই এর সূত্রপাত হয়।

২। আয়কর রেয়াতের ধারনাটি খুবই যুক্তিযুক্ত। সরকার ইচ্ছা করলেই যেকোনো সময় এরকম একটি ফান্ড তৈরির ঘোষণা দিতে পারে।

৩। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে সাধারণত ফৌজদারি মামলা হয়। ফৌজদারি মামলায় কারাদণ্ডের পাশাপাশি জরিমানা করার বিধান আছে। এই জরিমানা রাষ্ট্র আদায় করে। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৩৮৬ ধারায় কোন ব্যক্তির উপর আরোপিত জরিমানা আদায় করার উপায় বলা আছে। এই ধারা মোতাবেক আরোপিত জরিমানার অর্থ দোষী ব্যক্তি পরিশোধ না করলে তার স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি (যদি থাকে) ক্রোক করে ঐ অর্থ আদায় করা যাবে। সমস্যা হচ্ছে আইনে জরিমানা করার একটা সিলিং থাকে। অঙ্গহানি বা অন্য কোন শারীরিক ক্ষতির আর্থিক উপায়ে পুনর্ভরণ খুব দুষ্কর। এই জন্য জরিমানার পরিমাণ সংশোধন প্রয়োজন।

tokkhok এর ছবি

ভাই আমাদের স্বস্তা জীবনের জন্য কেনো এতো দামী যন্ত্র কিনতে বলছেন!! মাথা ঠিক আছে তো?

পথিক পরাণ এর ছবি

মাথাই নাই- তার ঠিকই কি আর বেঠিক কি?

পথিক পরাণ এর ছবি

লাফাং ঘ্যাচাং

মন মাঝি এর ছবি

জি পি আর তো অনেক দামী যন্ত্র। এর কথা বাদ থাক।

১। বাদ থাকবে কেন? দামের জন্য থিয়োরিটিকাল প্রয়োজনের অব্যবহৃত মিগ-ট্যাঙ্ক কি বাদ থাকে ? সেই তুলনায় কি অতি বাস্তব প্রয়োজনের প্রাণরক্ষাকারী জিপিআর-এর দাম বেশি? মিগ-ট্যাঙ্কের দাম কত শত কোটি টাকা? মেইন্টেন্যান্স খরচ কত কোটি? মিসাইল সিস্টেমের দাম কত? সেই তুলনায় জিপিআর-এর দাম কত? মিগ-ট্যাঙ্ক-মিসাইল বাদ দিলাম, জিপিআর-এর দাম আমাদের মন্ত্রী-মিনিস্টার-সাংসদ-ভিসি থেকে শুরু করে আরও বহু লোক যেসব গাড়িতে চড়ে বেড়ান তার থেকেও অনেক কম। এরকম গাড়ি কত হাজার আছে বাংলাদেশে? একটা জিপিআর-এর দাম ১২ লাখ থেকে ৪০ লাখের মধ্যে সাধারণত। না ডলারে না, টাকাতেই। হাজারে-বিজারে গাড়ি কেনা যায়, আর কয়টা জিপিআর কিনা যায় না?

২। ধ্বসে পড়া বাড়ি থেকে মানুষ উদ্ধারের জন্য জিপিআর থেকেও মনে হয় আরও লাগসই প্রযুক্তি আছে। এর মধ্যে রয়েছে -
- থার্মাল ইমাজিং ক্যামেরা
- ভিডিওস্কোপ/বোরস্কোপ/সার্চক্যাম
- উচ্চ-সংবেদনশীল লিসেনিং ডিভাইস
- CO2 ডিটেক্টর, ইত্যাদি।

এর কোনটারই দাম মনে হয় হাতিঘোড়া কিছু না, অথচ অসম্ভব জরুরী। থার্মাল ইমাজিং ক্যামেরা ২০০০ ডলারেই, অর্থাৎ দেড় লাখ টাকাতেই পাওয়া যাবে বিশ্বসেরা ব্র্যাণ্ডের। আরও অনেক কমেও আছে। অথচ চিন্তা করুন সাভারের ভবনটার ভিতরে গর্ত করে ভিতরে ঢুকা উদ্ধারকর্মীদের হাতে বা এমনকি বাইরে থাকা কারও হাতে থাকলেও (পোল বা কেবল দিয়ে ঢুকানো যেত, ভিউয়ার বাইরে থাকত) আরও কত বেশি জীবিত মানুষকে কত দ্রুত ডিটেক্ট ও লোকেট করা সম্ভব হত! থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা ব্যবহৃত হয় যেখানে খালি চোখে কিছু বা কাউকে দেখা সম্ভব হয় না, তখন ইনফ্রা-রেড (?) প্রযুক্তি ব্যবহার করে হিট সোর্স ডিটেক্ট করে তার একটা ইমেজ প্রদর্শন করা হয়। জীবিত মানুষ এমন একটা হিট সোর্স। চাপা পড়া যেসব জীবিত মানুষ চিৎকার করতে পারেনি সংজ্ঞাহীন থাকার কারনে বা যাদের চিৎকার শোনা যায়নি, তাদের সন্ধান এভাবে পাওয়া যেত। এই একটা মাত্র কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার ডলার দামের ক্যামেরাই (নেটে দেখলাম মোবাইলের চেয়েও কম দামে নাকি পাওয়া যায় বলে দাবি করা হচ্ছে) আরও কত শত প্রাণ বাঁচিয়ে দিতে পারত!!!

ভিডিওস্কোপ/বোরস্কোপ/সার্চক্যাম/পোল-ক্যামেরা-ও মূলত এই রকমই। ফুটাফাটা-চিপাচুপা-গর্তমর্ত দিয়ে মনে হয় ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়া যায় এবং বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রন করা যায়। মনিটর/জয়স্টিক ইত্যাদি বাইরে থাকে, আরটিকুলেট (নিয়ন্ত্রণ)-যোগ্য লম্বা কেবল বা পোলের মাথায় ক্যামেরা থাকে। যেখানে শরীর বা মাথা ঢুকানো বা যাওয়া সম্ভব না, অনেক দূর থেকেও সেখানে কি আছে দেখা সম্ভব। এর ফলে জীবিত মানুষের অস্তিত্ত্ব ও তাদের সঠিক অবস্থান রড/কঙ্ক্রীট কাটাকাটি শুরু করার আগেই অতি দ্রুত নির্ণয় করে অনেক সময় বাঁচিয়ে অনেক বেশি প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। এগুলির দাম কি রকম? দেড়-দুই-তিন লাখ টাকাতেই মনে হয় পাওয়া যাবে। এটা ঠিক নিশ্চিত না, তবে এইরকমই হবে মনে হয়।

উচ্চ-সংবেদনশীল সিসমিক/এ্যাকুস্টিক লিসেনিং ডিভাইস দিয়ে কি হবে? ধ্বংসস্তূপের বাইরে থেকে ধ্বংসস্তূপে আঘাত করে শব্দ সৃষ্টি করা হয় যাতে ভিতরে চাপা পড়া মানুষ এর প্রতিক্রিয়ায় আওয়াজ করেন (বা এমনিতেও যদি করেন) । ভিক্টিমরা শব্দ করলে, তা যত মৃদু বা দুর্বলই হোক, তখন এই ডিভাইস সুক্ষাতিসুক্ষ শব্দও পিক করে তার অবস্থান লোকেট করতে পারে। ভিতরে না ঢুকেই এই যন্ত্র দিয়ে এই কাজটা করা যায়, যার ফলে জীবিত মানুষ ঠিক কোথায় আছে ও কোথায় ঢুকতে হবে সেটা আগেই খুব দ্রুত বোঝা সম্ভব হয়। ফলে অনেক বেশি লোক বাঁচানো সম্ভব হয়। এর দাম কত? মিগ-ট্যাঙ্কের থেকে বেশি নাকি এমনকি একটা সেকেণ্ড-হ্যাণ্ড গাড়ির থেকেও বেশি?

CO2 ডিটেক্টর। এর দাম মাত্র ১০-১৫ ডলার থেকে শুরু! কয়েকশ ডলার পর্যন্ত হয় মনে হয়। এটা দিয়ে অচেতন জীবিত মানুষকে ডিটেক্ট করা হয়। এটা দিয়ে প্রধানত বদ্ধ স্থানে মানুষের শ্বাস্প্রশ্বাসের কারনে CO2-র আধিক্য ডিটেক্ট করার মাধ্যমে জীবিত মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়।

সবশেষে একটা কাটিং-এজ প্রযুক্তির কথা বলি। বিবিসির এই লেখাটা দেখুন।

তো উপ্রে যতগুলো ভবনধ্বসজনিত সার্চ এণ্ড রেসকিউতে ব্যবহৃত বিশেষায়িত ইকুইপমেন্টের কথা বললাম, একদম শেষেরটি বাদে (বিবিসি) তার সবগুলি মিলেও কি আমাদের ৩০০ সাংসদের একটিমাত্র ডিউটি-ফ্রী গাড়ির দামেরও সমান হবে?!! তার অর্ধেকও হবে? মনে হয় না। তাহলে প্রতি সাংসদের একটি গাড়ির বিপরীতে কি তাদের প্রত্যেকের কন্সটিটিউয়েন্সিতে এরকম অন্তত এক সেট ইকুইপমেন্ট কিনে দেয়ার দাবি করলে, সেটা কি খুব বেশি অন্যায্য-অবাস্তব দাবি হবে বা গরীবের ঘোড়ারোগ বলে বিবেচনাযোগ্য হবে? তাই যদি হয়, তাহলে ঐ গাড়িগুলি থাকারও কোন যৌক্তিকতা আছে বলে আমার মনে হয় না!

****************************************

পথিক পরাণ এর ছবি

অসাধারণ মন্তব্য মনমাঝি! আমার লেখার থেকেও অনেক তথ্যবহুল।

আমাদের দেশে অপ্রয়োজনে বিভিন্ন খাতে যে পরিমাণ অপচয় হয় তা চিন্তার বাইরে। অথচ দরকারের জিনিসটি আমাদের কেনার সামর্থ হয়না। আসলে আমরা এখনও আমাদের জাতীয় প্রয়োজন নির্ধারণ করতে পারিনাই। প্রায়রিটি লিস্ট ঠিকমত না করতে পারলে অর্থের অপচয়ই হবে কেবল।

আপনার উল্লেখ করা প্রতিটা যন্ত্রই খুব দ্রুত কিনে ফেলা দরকার। রানা প্লাজায় উদ্ধার কাজে এমন একটা যন্ত্র থাকলে কি সুবিধাই না হত!

আমাদের সমবেত সকলের প্রার্থনা অপেক্ষা একটা থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা একজন শাহানাকে উদ্ধারে অনেক বেশি সহায়ক হতে পারত।

তিথীডোর এর ছবি

চলুক চলুক

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

তানভীর হোসেন এর ছবি

প্রতিষ্ঠানটির পুরো নাম "ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স" শুধু ফায়ার সার্ভিস নয়। তাদের কাজও শুধু আগুন নেভানো না। যে কোন প্রাকৃতিক বা মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগে জনসেবা/ উদ্ধার অভিযান তাদের দায়িত্ব।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রতিষ্ঠানের নামে যে সিভিল ডিফেন্স আছে সেটা সবাই জানেন। কিন্তু দুর্যোগের পরিমাণ এতো বেড়েছে আর দেশের জনসংখ্যাও এখন যে পরিমাণ তাতে স্বতন্ত্র রেসকিউ এন্ড সিভিল ডিফেন্স বিভাগ গঠন জরুরী হয়ে পড়েছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।