গল্পটা শুরু হোক ভারতীয় আলোকচিত্রী রঘুবীর সিং কে দিয়ে। বলা হয়ে থাকে রঘুবীর সিং পশ্চিমা কোনো দেশে জন্ম নিলে রঙিন আলোকচিত্রের ইতিহাস অন্যরকম হতে পারতো।
তো সেই রঘুবীর সিং হাইস্কুলে পড়ার সময়ে কোনো এক অলস দুপুরে পারিবারিক লাইব্রেরীতে আবিষ্কার করেন অঁরি কার্তিয়ে ব্রেসোর “বিউটিফুল জয়পুর” নামের বইটি। এই বইটিই পরবর্তিতে রঘুবীর সিং-এর ভবিষ্যত যাত্রাপথ নির্ধারন করে দেয়। তারও একযুগ পরে একদিন বিকেলে রঘুবীর তাঁর সদ্য প্রকাশিত দুটি আলোকচিত্রের বই বগলদাবা করে হাজির হলেন তার প্রিয় আলোকচিত্রী কার্তিয়ে ব্রেসোর ভিলায়। ততোদিনে রঘুবীর নিজেও প্যারিসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছেন।
ব্রাসোর সাথে সাক্ষাতকারের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর ছিল না তাঁর। কার্তিয়ে ব্রেসো বইদুটো প্রায় খুলেই দেখলেন না, সন্দেহপূর্ণ দৃষ্টিতে কয়েক পলক তাকিয়ে বইদুটি তার স্ত্রীর হাতে চালান করে দিলেন। রঙিন আলোকচিত্রের প্রতি তার কোনো ভালোবাসা ছিল না তখনো। জনশ্রুতি ছিল রঙিন আলোকচিত্রকে খারিজ করার জন্যে, কার্তিয়ে ব্রেসো আড়ালে ফরাসি সেনাবাহিনীর খিস্তি ব্যবহার করতেন। এমনকি তাঁর সঙ্গী-সাথীরাও রঙ্গীন আলোকচিত্রকে ভাবতেন কুরুচিপূর্ণ।
এর কিছুকাল পরে অবশ্য কার্তিয়ে ব্রেসো তার অবস্থান থেকে সরে আসেন। আমরা তখন ম্যাগনামের অন্যান্য জুরিদের সাথে মার্টিন পার-এর নিয়োগ নিয়ে লড়াই করতে তাঁকে আবিষ্কার করি। উল্লেখ্য, মার্টিন পার মূলত: রঙিন ছবি তোলেন। শুরু থেকেই তিনি নানাভাবে আলোচিত-সমালোচিত। সে গল্প অন্য আরেকদিনের জন্যে তোলা থাকল।
ব্রাসোর এই আচরণ রঘুবীরের মনোকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মূলত ব্রাসোর এই আচরণ রঘুবীরকে কাজগুলো পুনরায় করাতে এবং নিজের কাজের প্রতি আরো বেশী মনোযোগী হতে বাধ্য করে।
গল্পের অবতারণা ভিন্ন কারনে। বছর দুয়েক আগে বাইরের একটা ম্যাগাজিনে ছবি দেওয়ার আগে আমার তোলা কিছু ছবি পাঠাই আমার প্রাক্তন শিক্ষক এক আলোকচিত্রীর কাছে। দেশে ফটো-এডিটর হিসেবে তাঁর বেশ নাম-ডাক। উদ্দেশ্য তিনি হয়তো ছবিগুলো বাছাই করে একটা ভালো পোর্টফলিও তৈরী করে দিতে পারবেন আমাকে। কিন্তু দু:খের বিষয় আমার ছবিগুলো বাছাই করা দূরে থাক এমনকি কোনো মন্তব্য করতেও রাজি হননি তিনি। পরে শুনেছি ছবিগুলোকে তিনি “আবর্জনা” বলেছিলেন নিকটস্থ বন্ধুদের কাছে। উল্লেখ্য, আমার সেই শিক্ষক মূলত সাদা-কালোতেই ছবি তোলেন।
এই ছবিগুলোই পরবর্তিতে আমি পাঠাই ফ্রান্সের ম্যাগাজিন “Le Journal de la Photographie” তে। সেই ম্যাগাজিনের “উইকেন্ড পোর্টফলিও”তে ছবি রিভিউ করতে আসেন বিশ্বের বাঘা-বাঘা সব ফটো এডিটররা। আমি যে সপ্তাহে ছবি পাঠালাম সে সপ্তাহের ফটো এডিটর ছিলেন “Tim Jefferies” ইংল্যান্ডের “Hamiltons” গ্যালারির অধিকর্তা। Irving Penn, Richard Avedon, Helmut Newton, Robert Mapplethorpe সহ বিশ্বের সব রথি-মহারথিদের ছবি প্রদর্শিত হয় সেখানে। গত ৩৫ বছর ধরে আধুনিক আলোকচিত্রের সবচেয়ে বড় সংগ্রহশালা এবং আলোকচিত্রীদের সবচেয়ে স্বস্তির জায়গা বলে গণনা করা হয়।
ছবি পাঠানোর পরের সপ্তাহেই ই-মেইল পেলাম Tim Jefferies-র কাছ থেকে। আমার পাঠানো ছবিগুলো মনোনীত হয়েছে উইক্যান্ড পোর্টফলিও-র জন্যে। সাথে ব্যক্তিগত বার্তা, এই ফটো সিরিজটি যেনো আমি কন্টিনিউ করি। আগামী ৫/৭ বছরে একটি একটি ভালো কাজ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তিনি।
সেই পোর্টফলিওর কিছু ছবি এখানে সংযুক্ত করে দিলাম। মূলত চড়ক পূজাকে ভিন্ন একটা পার্সপেক্টিভ থেকে দেখার চেষ্টা। এর রঙ-এর ব্যবহার আমাকে বার-বার টেনেছে। মূল পূজার ভয়াবহতা থেকে দূরে সরে আসলে আবিষ্কার করা যায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অভূতপূর্ব এক শিল্পসৃষ্টি।
মন্তব্য
প্রথম ছবিটি আমি দেখেছিলাম ফেসবুকের কারোর ওয়ালে। বেশ কিছুদিন হয়ে গেলেও ছবিটি মনে কোণায় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছিল। ভাবছিলাম কবে উজান গাঁ তাঁর ছবিগুলি নিয়ে একটি পোস্ট দেবেন আর আমি তাঁর ছবি দেখে আমার মুগ্ধতার কথা জানাবো। উজান গাঁ অথবা প্রনবেশ দাস, আপনার ছবি এতই শক্তিশালী, আপনার ক্যানভাসে রঙ এত নিপুণ ভাবে মূর্ত হয়ে রয়েছে, যে আপনি যদি শুধু ছবিই দিতেন তাও একটা বিরাট ব্যাপার হত। আপনার ছবি দেখা আসলে এক অভিজ্ঞতা। অসংখ্য ধন্যবাদ ছবিগুলি বিনিময় করে আমাদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য। আপনার জয় হোক।
আমার রঙ ভালো লাগে। আমার মনে হয়, রঙ নিয়ে কাজ করতে এক ধরনের বাড়তি মুন্সিয়ানা দরকার, এক ধরনের বাড়তি সাহস দরকার। তাই বলে সাদাকালো, বা অল্প রঙের সমাহারের বিরূদ্ধেও আমার কোনো সংস্কার নেই। বেশি রঙে যদি ছবিটাই ঢাকা পড়ে তাহলে সাদাকালো কেন নয়? কিন্তু বড় বড় শিল্পীদের মধ্যে এসব নিয়ে মেরূকরণ চলে আসছে দেখে অবাক হলাম।
আপনাকে অভিনন্দন!
মুস্তাফিজ ভাইয়েরও এই সিরিজের কিছু আলোকচিত্র আছে না?
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
রঙ নিয়ে কাজ করতে গেলে আসলেই বাড়তি মুন্সিয়ানার দরকার পড়ে। ম্যানেজ করাটা অনেক টাফ। তারচে ছবি সাদা-কালো করে ফেলাটা তুলনামূলক সহজ।
এ কারনেই মনে হয় বাংলাদেশে হাতেগোনা দু'একজন ছাড়া প্রায় সবাই সাদা-কালোতে ছবি তুলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।
হ্যাঁ, মুস্তাফিজ ভাইয়েরও কাজ আছে চড়ক নিয়ে। একসাথে ছবিও তোলা হয়েছে চড়ক পূজার।
দারুণ
facebook
শাওন, যেমন হওয়ার কথা, প্রতিটি ফোটোই অসাধারণ, তার সাথে মুখবন্ধটা পড়ে মনটা উদাস হয়ে উঠল! শিল্পের ব্যাপারটা এত ব্যক্তিগত পছন্দ নির্ভর! কত যে শিল্পী নামমাত্র বা বিনা স্বীকৃতিতে শেষ হয়ে যান! অত্যন্ত আনন্দের যে আপনার এই ছবিগুলি সমাদৃত হয়েছে।
- একলহমা
প্রশ্নটা হইল আপ্নে আমার নাম জানলেন ক্যামনে!
ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারটা আসলেই হতাশার।
অন্য এক বৃত্তেও আপনি নামকরা লোক। একসময় সেখানে নিয়মিত চক্কর কাটতাম, এখন অবরে-সবরে!
(Flickr / neetaphoto / eklohoma ) এই আর কি!
দারুণ, আপনাকে অভিনন্দন!
শাওনদা আপনে মহান। বেশি বস।
আপ্নেও মহান।
শাওনদা মজা নিয়েন না, হাসান ভাইরে কইয়া দিমু আপনে আমারে মহান কইছেন।
দারুণ দারুণ
আপনার তোলা ছবি’র গুণমুগ্ধ।
তোমাকে অভিনন্দন। ছবিগুলি বীভৎস সুন্দর!
--------------------------------------------------------------------------------
ধন্যবাদ ভাবী।
(কিছুই বলার নাই,তাই ইমো দিলাম শুধু)
-------------------------
সুবোধ অবোধ
----------------------------
শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি কেন এত বোকা হয়?!!
অসাধারণ!!
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
আহা!
খুব খুশি হলাম আপনাকে লিখতে দেখে
দারুন ছবিগুলোর কিছু আগে দেখেই ভাল লেগেছিল তখন ই চোখে লেগেছিল উপর থেকে ৬ নাম্বার, এবার অনেক ভাল লাগার এক নম্বরে রইল উপর থেকে ৪ নাম্বার - আর শেষ থেকে দ্বিতীয়র অভিব্যাক্তি অসাধারণ।
আপনার যেই ছবি তোলা আর লেখার ক্ষমতা মাসে এক বার আমাদের জন্য লেখা কোন ব্যাপার হউয়ার কথা না।
(উজানগাঁয়ে তোলা ছবিগুলো কেন যেন আমাকে বেশি টানে, পক্ষপাতদুস্ট হতেও খারাপ লাগেনা)
এত রঙিন সুন্দর!
--------------------------------
বানান ভুল থাকলে ধরিয়ে দিন!
ধন্যবাদ
এই লোকটা নমাসে-ছমাসে পোস্ট দেয়!
আপনারা আছেন কি জন্যে। মাঝে-মধ্যে চালাইয়া নিবেন না?
এইসব ছবি যদি আমরা তুলতে পারতাম তাহলে নাহয় আমরা চালিয়েও নিতে পারতাম, কিন্তু...
দারুণ!
দারুণ !!!!!
দূর্দান্ত ছবি। আপনি চড়ক পূজো'কে ভিন্ন ভাবে দেখার চেষ্টা করেছেন সেটা এই স্টোরি'টার একটা বড় উপজীব্য। ভালো লাগলো ছবি দেখে। পারলে রঘু'র তাজমহল নিয়ে একটা পোস্ট দেবেন।
দারুন
অসাধারণ।
__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!
নতুন মন্তব্য করুন