“কিন্তু” অব্যয়টা আজকাল কিছু বিশেষ গোষ্ঠীর সাথে অন্বয়যুক্ত হয়ে পড়েছে, কোন বাক্যে “কিন্তু” ব্যবহার করতে গেলে এখন নিজের মধ্যে একটা জাতির বিবেক ভাব চলে আসে। “আমিও বিচার চাই, কিন্তু…..” এর কাহিনী সবার জানা। ফেসবুকচারণার অভিজ্ঞতায় দেখলাম কোন স্ট্যাটাস বা মন্তব্য “আমি রাজনীতি বুঝি না, কিন্তু…” দিয়ে শুরু হলে অবধারিতভাবে কোন না কোন জামায়াতি প্রপাগান্ডায় বা সুড়সুড়িতে শেষ হবে। এখন এসেছে নতুন আরেকটি “কিন্তু” - “আমিও বাকস্বাধীনতা চাই, কিন্তু….”
বক্তব্যটা কিন্তু আপাতঃ দৃষ্টিতে বেশ যৌক্তিক মনে হয় – বাকস্বাধীনতা মানেই কি পচা পচা কথা বলা? মানী লোকের মান ধরে টান মারা? গালাগালি করা? অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া? না তো! বাকস্বাধীনতা মানে “যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা” - কিন্তু কবিতা যাতে অবশ্যই সবার পছন্দ হয়, যাতে বাপ-মা-বউ-বাচ্চা মিলে বৈঠকখানায় সেই কবিতা পাঠ করতে পারি। ব্লগারদেরকে গ্রেপ্তার করে ঠিক কাজই করা হয়েছে। রাজনীতিবিদরা আপনার অনুভূতিতে আঘাত দিলে আপনি তাদের বকাবকি করে স্ট্যাটাস দিতে পারেন, রাজনীতিবিদদের ভক্তদের অনুভূতির পরোয়া না করেই; কিন্তু ধর্মীয় নেতা কিংবা ব্যক্তিত্বরা আপনার অনুভূতিতে আঘাত দিলে আপনি সেটা প্রকাশ করে অন্যদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে পারেন না। ধর্মীয় নেতা ও তাঁদের ফ্যানক্লাব দ্বারা শারীরিক ও মানসিকভাবে আক্রান্ত হলে অন্যের অনুভূতির কথা চিন্তা করে সেটা চেপে রাখুন, লেট দিস বি ইউর ডার্টি সিক্রেট দ্যাট ইউ উইল টেক টু ইউর গ্রেইভ। জর্জ অরওয়েলের “এনিম্যাল ফার্ম” এর একটা বিখ্যাত বাক্যের আদলে বলতে হয়, “সব অনুভূতিই সমান, কিন্তু কিছু কিছু অনুভূতি অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই সমান”।
বাকস্বাধীনতা একটা দু’মুখো তলোয়ার। অন্যদেরকে আক্রমণ করবেন, আপনি নিজেও আক্রান্ত হবেন। যেকোন কারণেই হোক, “বাকস্বাধীনতা” বলতে মানুষ মিষ্টি মিষ্টি কথা বলার পরিবেশ বুঝে নিয়েছে, কিন্তু বাকস্বাধীনতা আসলে অনুভূতির রক্তাক্ত প্রান্তর। যখনই ভাবনার জগতে কোন চিন্তা প্রকাশিত হয়, অগুনতি অনুভূতি একাধারে আক্রান্ত হয়। সেটা কারও রাজনৈতিক চিন্তা হতে পারে, কারও সাংস্কৃতিক অভিরুচি হতে পারে, অথবা বন্ধুত্ব-ভ্রাতৃত্ব-প্রেম প্রভৃতি কোন বিশেষ সামাজিক সম্পর্কের গতি-প্রকৃতি নিয়ে ভাবনাও হতে পারে। আমরা এসব অনুভূতির স্বাস্থ্য নিয়ে মাথা ঘামাই না। অনুভূতিমহলে আমাদের এসকল অনুভূতি প্রাকৃতজন, ধর্মানুভূতির মত সেলিব্রেটিদের দাপটে বিলীয়মান। যখন এসব প্রাকৃত অনুভূতির ধারক-বাহকরা ধর্মানুভূতির প্রিভিলেজকে চ্যালেঞ্জ করে, তখন সেসব মানুষের শ্বদন্ত বের হয়ে পড়ে ধর্মানুভূতি ছাড়া যারা নিঃশ্ব। এরা আমাদেরই কাছের মানুষ, কিন্তু ধর্মানুভূতি সংকটাপন্ন না হলে আমরা এদের হিংস্র চেহারা দেখতে পাই না। এই দীন-দরিদ্র মানুষগুলো যখন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়, তখন পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি হয় সৌদি আরব-পাকিস্তানের মত কিছু অসম্ভব সত্ত্বা, যাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি-উৎকর্ষ বুদ্ধিবৃত্তি সব কিছুই ভূগর্ভের কোন প্রাচীন স্তরে জীবাশ্মভূত হয়ে আছে।
প্রশ্নটা সহজ – অনুভূতিতে আঘাত দিলে কী হয়? কিছু হয় বলে তো মনে হয় না। যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়েছে, টিভি ক্যামেরার সামনে তারা খ্যাক খ্যাক করে বলেছে দেশে কোন মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, মুক্তিযুদ্ধে নিহত ও ধর্ষিতার সংখ্যা নিয়ে নির্বিচারে মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে, একটা গণহত্যার বিচারের অগ্রগণ্যতাকে তারা তেল-গ্যাস-চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ের তলে চাপা দিতে চাচ্ছে। জামায়াতিরাও মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ গঠণ করে মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ দিবসগুলোতে শোভাযাত্রা করে, ২৫ মার্চের রাতে ফেসবুকে “সহানুভূতি” জানিয়ে স্ট্যাটাস মারে। এসব দেখে আমাদের বাংলাদেশানুভূতি আহত হয়, কিন্তু এরপরও আমরা ভাবলেশহীনভাবে বেঁচে আছি। বস্তুত, “ধর্মানুভূতি” শব্দটার অস্তিত্ব থাকলেও “বাংলাদেশানুভূতি” শব্দের কোন অস্তিত্ব নাই, যদিও এই দেশের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেই আমরা জীবনযাপন করছি এবং এই দেশের সাংস্কৃতিক আবহই আমাদের চেতনাকে আজীবন আচ্ছন্ন করে রাখবে। আমরা যদি পারিবারিক জীবনে, কর্মজীবনে, নাগরিক জীবনে, সামাজিক জীবনে অনুভূতিতে আঘাত সহ্য করতে পারি, তবে ধর্মের অঙ্গনে কী এমন বদলে যায়? এমন তো না যে ধর্মানুভূতিতে আঘাত পেয়ে আপনি পঙ্গু হয়ে গেছেন, আপনার ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আজকে কোন “ইসলামবিদ্বেষী” ব্লগ পড়ে আহত বোধ করলেও কালকেই আপনি অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। বস্তুতঃ, আমি এও দেখেছি যে এক ছেলে এক বন্ধুর স্ট্যাটাসে “আমিও চাই ইসলামবিদ্বেষীদের মাইরা ফেলা হোক” পোস্ট করেই সাথে সাথে হালের ক্রেইজ কোন confession পেজ এ গিয়ে প্রেম প্রেম খেলছে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে – আপনার কয়েক মিনিটের মনোবেদনার জন্য কেন আপনি একজন সমালোচককে চিরকালের জন্য হাপিস করে দিতে চান? সেই সমালোচকেরও তো ব্যক্তিজীবন, সামাজিক জীবন আছে, আপনার একটা মাত্র অনুভূতি রক্ষা করা কি তার জীবনের এতগুলো মানুষের অনুভূতির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ?
ধর্মানুভূতির সাথে অন্য অনুভূতিগুলোর পার্থক্য হল এই অনুভূতিটাকে রক্ষা করার জন্য আমাদেরকে ছোটবেলা থেকেই ইনডকট্রিনেশন করা হয়। আমাদের শেখানো হয় যে ধর্মই নৈতিকতার রক্ষক, ধর্মই আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে, ধর্মের উপরও সমালোচনার শেল ফেললে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। আমরা যদি ধর্মীয় রীতি-নীতিকে অলঙ্ঘনীয় আইন হিসেবে না দেখে স্রেফ একটি বিকল্প লাইফস্টাইল গণ্য করি, তবে ধর্মানুভূতির প্রিভিলেজটা আর রইবে না। ধর্ম নৈতিকতা প্রসব করেনি, বরং আদিম নৈতিকতা ধর্ম প্রসব করেছে। ইশ্বরই যদি নৈতিকতার প্রতিমূর্তি হন, তবে আমি ইশ্বরকে “খুনী” আখ্যা দিলে একজন আস্তিক হিসেবে আপনার আপত্তি করার অবকাশ থাকে না, কারণ ইশ্বর নৈতিকতার পরম মাপকাঠি হলে খুন করাই তখন নৈতিক হবে। এছাড়াও, ধর্মীয় মৌলবাদীরা সবসময়ই নিজেদেরকে কনভিন্স করে নেয় তারা যা করছে, ইশ্বরকে খুশি করার জন্যই করছে। শাস্ত্রে আসলে কী লেখা আছে সেটা এখানে মুখ্য না, মুখ্য হল কোন ধারণা বা ধারণাসমূহ এসব মৌলবাদীদের কীর্তিকলাপের জন্য উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করে(বলা বাহুল্য, শাস্ত্রও এরাই লিখে এবং ব্যাখ্যা করে;প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ আমলাতন্ত্র ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম হয় না)। ইশ্বরভীতি যদি সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী কীটদের গণহত্যা থেকে নিবৃত্ত করতে না পারে, তবে নৈতিকতার অঙ্গনে ধর্মের একচ্ছত্র আধিপত্য স্বীকার করার কোন মানে হয় না। ধর্মানুভূতিকে বিশেষ প্রিভিলেজ দেওয়ার যুক্তিটাও এভাবে ভেঙ্গে পড়ে।
ছবি - দীর্ঘদিন ধরে নৈতিকতা ডিকটেট করে আসা ঈশ্বরভীতি কিন্তু এগুলাকে মানুষ করতে পারেনি।
ধর্মানুভূতি ছাড়াও বাকস্বাধীনতার উপর পুলিশগিরি করা লোকজনের আরেকটা দাবি হল “গালাগালি” বাকস্বাধীনতার গন্ডিতে পড়ে না। “গালাগালি” একটি অত্যন্ত ব্যক্তিনিষ্ঠ বা সাবজেকটিভ মোড়ক, এরকম সাবজেকটিভ ক্রাইটেরিয়া দিয়ে বাকস্বাধীনতার গন্ডি নির্মাণ করতে গেলে কর্তৃত্ববাদ কায়েম হওয়া শুধু ক্ষণিকের ব্যাপার। কোন স্পর্শকাতর বিষয়ে কাউকে সাধু ভাষায় খোটা দিয়েও আপনি এমন ক্ষতি করতে পারেন যা দুনিয়ার নিকৃষ্টতম গালিটাও করার ক্ষমতা রাখে না। কোন বক্তব্য আপত্তিকর মনে হলে সেটা না পড়লেই হয়। “আপত্তিকর” বক্তব্য প্রকাশ করা বাকস্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত; কিন্তু আপত্তিকর বক্তব্য কাউকে দেখতে বাধ্য করাটা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার, এবং অতি অবশ্যই গন্ডির বাইরে।
“অশ্লীলতা” হল এরকম আরেকটা সাবজেকটিভ ক্রাইটেরিয়া। হুমায়ুন আজাদের “পাক সার জমিন সাদ বাদ”কে অনেকেই চটি বইয়ের সাথে তুলনা করেন কারণ এটা বাপ-মা-বউ-বাচ্চা মিলে বৈঠকখানায় পড়া যায় না। অশ্লীলতার এরকম অর্বাচীন ক্রাইটেরিয়া মেনে চললে আমাদেরকে প্রচুর একাডেমিক বই ও নিচু মানের সাহিত্যকর্মকেও(যেগুলো পড়ে আনন্দ পাওয়া যায় না) বাকস্বাধীনতা পরিপন্থী আখ্যা দিতে হবে। যৌন উদ্দীপনা দিয়ে অশ্লীলতা সংজ্ঞায়ন করতে গেলেও একই রকম বিপত্তি ঘটে, কারণ বেপর্দা মেয়েদেরকে অনেক আলেম-ওলামা ও তাদের ফ্যান ক্লাবের কাছে যৌন উদ্দীপক ও ধর্ষণোপযোগী মনে হয়। যৌনতাকেন্দ্রিক ম্যাটেরিয়ালের ক্ষেত্রে আমি মনে করি একদমই উন্মুক্ততার সুযোগ না দিয়ে বিশেষ বিশেষ দর্শক বা পাঠক শ্রেণীর প্রতি সীমাবদ্ধ রাখা যায়, যেখানে এই শ্রেণীগুলো সবার মাঝে আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারিত হবে। যেসব ম্যাটেরিয়াল যৌন সহিংসতাকে মহিমান্বিত করে, সেগুলোকে যৌনতার ক্যাটেগরিতেই না ফেলে বরং সরাসরি সহিংসতার ক্যাটেগরিতে ফেলতে হবে।
বাকস্বাধীনতার একমাত্র ব্যতিক্রম হওয়া উচিত সহিংসতার ডাক ও হেইট স্পিচ। সহিংসতার ডাকগুলোতে সাধারণত কোন কুহেলিকা থাকে না, এগুলো সবসময়ই টু দ্যা পয়েন্ট হয়,
কিন্তু হেইট স্পিচ নিয়ে জল ঘোলা করা হয়। আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী হেইট স্পিচ সেসব উক্তি বা কর্মকে বোঝায় যা আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত কোন গোত্রের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা প্রেজুডিস উস্কে দিতে পারে। অনেকেই দাবি করছেন ব্লগে ব্লগে ধর্মের সমালোচনা এই “হেইট স্পিচ” এর আওতায় পড়ে। আমি অন্তত ব্লগে যেসব ধর্মীয় সমালোচনা পড়েছি, তাতে মূলত কোরানের আয়াত-হাদিস আর মোহাম্মদের জীবনি নিয়ে সমালোচনা + ব্যঙ্গাত্মক উপাদান পেয়েছি। একটি অথরিটি ফিগারের সমালোচনা আর স্যাটায়ার কিভাবে হেইট স্পিচের আওতায় পড়ে এটা কিছুতেই আমার বোধগম্য হয় না(ধর্মানুভূতিকে কেন আলাদা প্রিভিলেজ দেওয়া যাবে না, আগেই বলেছি)। আমেরিকার নির্বাচনের সময় ধর্ষণ সংক্রান্ত রিপাবলিকান রাজনীতিবিদদের বিভিন্ন মন্তব্য নিয়ে সামাজিক মিডিয়ায় সমালোচনা আর স্যাটায়ারের ঝড় উঠেছিল, সেগুলো কি রিপাবলিকান ভোটারদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দিয়েছিল? সেলিব্রেটি কালচারের সমালোচনা করলে কিংবা কোন বিশেষ সেলিব্রেটির সমালোচনা করলে কি তাদের বা তার অগণিত ফেসবুক ও টুইটার ফলোয়ারদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দেওয়া হচ্ছে(আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি যে ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের আমি রাজনৈতিক কিংবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের উপরে প্রিভিলেজ দিতে রাজি না)? সমালোচনা মানেই কি সহিংসতা উস্কে দেওয়া? আপনি যদি আসলেই সমালোচনা আর ঘৃণা প্রচারের মাঝে পার্থক্য আছে বলে মনে করেন, তবে আপনিই উদাহরণ দিয়ে দেখিয়ে দিন কোনটি ধর্মের যৌক্তিক সমালোচনা আর কোনটি স্রেফ ঘৃণা প্রচার। সমালোচনা আর ঘৃণার মাঝে পার্থক্য করতে না পারার ব্যর্থতা ছাড়াও আমি এখানে আরেকটি হেত্বাভাস দেখি – ব্যক্তি আর আদর্শের মাঝে পার্থক্য করতে না পারা। আদর্শকে বেঠিক আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করা যায়, কিন্তু একটা মানুষের অস্তিত্ব এভাবে বাতিল করা যায় না। আপনার আদর্শের বিরুদ্ধে কলম ধরা মানে আপনার গলায় ছুরি ধরা না। কারও কলমের আঘাতে আপনার আদর্শ বিলীন হলেও আপনি বিলীন হচ্ছেন না, আপনি সেক্ষেত্রে ভিন্ন কোন আদর্শে দীক্ষিত হচ্ছেন। কলমের আচড়কে চাপাতির কোপ মনে করা আর সমালোচনাকে “হেইট স্পিচ” ঠাওর করা ম্যানিয়ার লক্ষণ; ম্যানিয়াকদের ভয় করাকে আর যাই হোক, “ফোবিয়া” বলে না।
বাকস্বাধীনতা ছাড়া আসলে বুদ্ধিচর্চা সম্ভব না। দুনিয়াতে ভাব না থাকলে অণু-পরমাণুর ঘর্ষণই কেবল বাকি থাকে, জাস্ট ওয়ান ড্যাম থিং আফটার এনাদার। আমি তাই কেবলই বাকস্বাধীনতা চাই, সাথে কোন “কিন্তু” চাই না। বাকস্বাধীনতার পর “কিন্তু”তে ভীষণ ব্যকরণগত সমস্যা আছে।
মন্তব্য
যখন জামায়াতকে নিষিদ্ধের প্রশ্ন আসে, তখন বিবৃতি দেখি, "জনগণের পছন্দ না হলে তারা এমনিতেই জামাতকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে"। যখন বাকস্বাধীনতার প্রশ্ন আসে, তখন এই সিলেক্টিভিটি থিওরী হাপিস হয়ে যায়, তখন শুধু নিষিদ্ধ নয়, মৃত্যুদন্ড চাওয়া হয়। মাঝে মাঝে মনে হয়, ভন্ডামির বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইন পাশ করা উচিৎ।
profanity, vulgarism তো অনেক কঠিন শব্দ। পোস্টার মনে হয় মাদ্রাসার বাইরে থেকে আউটসোর্স করায়া আনছে।
Big Brother is watching you.
Goodreads shelf
কগনিটিভডিসোনেন্সওয়ালাদের কাম মালুম হতিছে
এখন ফেসবুকে কিছু স্ট্যাটাস দেখি, যেখানে বলা হয় আমরা (= শহুরে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত লোকেরা) কোনদিন মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে গ্রহণ করতে পারিনি; তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করিনি, তারা কি খায়, কি পরে, কোথায় থাকে - কোনদিন এইসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করিনি; তারা আনস্মার্ট বলে তাদের সঙ্গে প্রেম করিনি বা মেয়ের বিয়ে দেইনি। এইসব করে আমরা তাদেরকে দূরে ঠেলে দিয়েছি, যার কারণে আমাদের বা আমাদের দাবির প্রতি তাদের কোন সহানুভূতি নেই। এইজন্যই নাকি তারা আমাদের কল্লা চায়! এইসব স্ট্যাটাস পড়ার পর হাসবো না কাঁদবো, সেইটাই বুঝি না।
খাইসে, আমিও তো অনেক কিছুর মানে বুঝি না!
আবার ব্যানারের এক কোণায় রক্তের মতো একটি লাল রং লাগায় দিছে। কি হাস্যকর!!!
পানের চিপটির দাগ মালুম হতিছে
এইগুলা সাধারণ ব্যানার না, একেকটা ব্যানারের পেছনে কত টাকা খরচ হয়েছে? কোথা থেকে আসে এই টাকা? কে দেয়? প্রফিনিটি মানে কি জানতে চাইলে কতজন করতে পারবে? তিনটা ব্যানারের চিপার মধ্যে লুকিয়ে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে একজন, ঘাপটি??
আহা! এরা কারা ভাই? মীরাক্কেলে এলে পারেন তো
- সম্রাট দাশুগুপ্ত
"আমিও বাকস্বাধীনতা চাই কিন্তু আমার গুরুদের বাইরে কিছু বলতে পারব না !"
স্বাধীনতা তুমি রবি ঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান
আজ স্বাধীনতা তুমি ধর্মের নামে দেশটার অপমান !
নাহিয়েন
কথা বলার জন্যে সরাসরি কোনো ভৌত ক্ষতি সাধন ঘটেছে, কিছু রেয়ার কেইস ছাড়া সেটা দেখানো প্রায় অসম্ভব। এমন কি সহিংসতার ডাকের ক্ষেত্রেও স্রেফ অমন বলাটাই দোষের হয় না, দোষ হয় সহিংসতার প্রয়াসটার। অর্থাৎ সহিংসতা ঘটানোর প্রয়াসটা দোষণীয়, স্রেফ কথাটা নয়। অন্যান্য আলামতের উপরও নির্ভর করবে তার প্রয়াসটা সত্যিই ছিলো কিনা বের করাটা। এটা বলছি এ কারণে যে স্রেফ মুখের কথার কারণেই সাথে সাথে অপরাধ ঘটে যায় এমন নয়। মাত্রাভেদ আছে। তথাপি এর উপর বিধিনিষেধ যুক্তিসঙ্গত।
কিন্তু হেইট স্পিচের ব্যাপারটা বুঝলাম না। দুনিয়ার প্রায় সকল কথাই তো কারও না কারও জন্যে হেইট স্পিচ। কোনো ঘৃণাত্মক কথা যদি সহিংসতার সূচনা করতে পারে, সেটা সহিংসতার ডাকের আওতাতেই ফেলা যায়, আলাদা হেইট স্পিচ বলার কারণ পাওয়া যাচ্ছে না। আর সহিংসতা সূচক যদি না হয়, সেই হেইট স্পিচকে অবরুদ্ধ করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে বলে মনে হয় না। এটা ইন্যাক্টেড হলে কোরান বাইবেল তেলওয়াতই আগে বন্ধ হয়ে যাবে।
সহিংসতার ডাকের ক্ষেত্রে বাঁশেরকেল্লার যে ছবিটা দিলাম, ওইটা কিন্তু সহিংসতার নির্দেশনা ব্যতিত কিছু না। এখন সহিংসতার নির্দেশনা দিলেই হয়ত সেই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হবে না, কিন্তু এই একটা ক্ষেত্রে আমি প্রিএম্পটিভ স্ট্রাইকের কোন সম্ভাব্য অসুবিধা দেখি না। তার নির্দেশনা পেয়ে যদি কেউ সহিংস হয়, তবে ওই লোক নিঃসন্দেহে দোষী। কিন্তু তার নির্দেশনা যদি কারও কানে না যায়, তবুও তাকে গ্রেপ্তারে ক্ষতি দেখি না। অপরাধ করতে গিয়ে ব্যর্থ হলেও সে আমার দৃষ্টিতে অপরাধী, কারণ আমি মনে করি শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিরোধেও আইনের দায়িত্ব আছে।
এখানেই "হেইট স্পিচ" এর সমস্যা। কথা পছন্দ না হইলেই সেটাকে "ঘৃণা" আখ্যা দেওয়া যায়। আজকে যে লোক ইসলামের সমালোচনাকে ইসলামবিদ্বেষী "হেইট স্পিচ" বলছে, কালকে সে ইজরায়েলের সমালোচনা করলে তার যুক্তিকেও ইহুদিবিদ্বেষী "হেইট স্পিচ" আখ্যা দিয়ে ফেলা যায়। বস্তুত, "হেইট" এর এই ব্যক্তিনিষ্ঠতা পুঁজি করেই কিন্তু যার তার গায়ে "এন্টি-সেমেটিক" স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হয়।
আইন কেবল তখনই হস্তক্ষেপ করতে পারে যখন "ঘৃণা" প্রচারকারী বক্তব্য সহিংসতা প্রচারকারী বক্তব্যে রুপান্তরিত হয়। সহিংসতা প্রচারকারী বক্তব্যগুলো সাধারণত প্রাকৃ্তিক কিংবা প্রত্যক্ষিত সামাজিক বাস্তবতা সম্পর্কিত বক্তব্য হয় না(যেমন, "ইসলাম সন্ত্রাস উস্কে দেয়" ইসলামের প্রকৃ্তি সম্পর্কে একটি বিবৃতি, যা ইসলামের শাস্ত্র ও প্রায়োগের সাপেক্ষে যাচাই করা যেতে পারে), নির্দেশনামূলক বক্তব্য হয়(যেমন, "মুসলমানদের অভিবাসন ঠেকাতে হবে")। নির্দেশনামূলক বক্তব্যেও কিছুটা ambiguity থাকতে পারে কিন্তু নির্দেশনামূলক বক্তব্য যত বেশি ডিটেইলে সহিংস কার্যক্রম সম্পাদনের নির্দেশনা দিবে(যেমন, মুসলমানদের অভিবাসন ঠেকানোর জন্য কেউ যদি তাদের স্থাপনার উপর হামলা করে ভীতি সঞ্চারের নির্দেশনা দেয়), এর ambiguity তত কমতে থাকবে। এর সাথে সমানুপাতিকভাবে আইন রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপের বৈধতাও বাড়তে থাকবে।
সমস্যা হইল, আমরা কার পেটে কী আছে তা নিশ্চিতভাবে জানতে পারি না। মানুষের ভাষা ও বক্তব্যের চরম ambiguity স্বীকার করে নিয়েই আমাদের শান্তি-শৃঙ্খ্লা রক্ষা করে চলতে হবে। যারা যেখানে সেখানে "হেইট স্পিচ" ব্রাশফায়ার করে, তারা ভাষা ও বক্তব্যের এই ambiguity স্বীকার করতে চায় না। বলাই বাহুল্য, এই কুহেলিকা টিকিয়ে রাখাতেই তাদের রাজনীতির অন্ন জুটে।
Big Brother is watching you.
Goodreads shelf
ফলে - "কোনো ঘৃণাত্মক কথা যদি সহিংসতার সূচনা করতে পারে, সেটা সহিংসতার ডাকের আওতাতেই ফেলা যায়, আলাদা হেইট স্পিচ বলার কারণ পাওয়া যাচ্ছে না। আর সহিংসতা সূচক যদি না হয়, সেই হেইট স্পিচকে অবরুদ্ধ করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে বলে মনে হয় না।"
নতুন মন্তব্য করুন