যদি নিজের আপন নিভৃত কোণ হতে বাইরে পদার্পণ করেন, তা সেটা মানুষের সাথে আড্ডায় হোক আর সোশ্যাল নেটওয়ার্কের পাবলিক ডিসকাশনই হোক, উত্তপ্ত বাক-বিতন্ডার ক্রসফায়ারে জর্জরিত হওয়া অনিবার্য। এসব আলাপ-আলোচনা অধিকাংশ সময়েই হেত্বাভাসের ঘন অরণ্যে হারিয়ে যায়; পরিণামে, কোন যৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে না। পাবলিক ফোরামের আলোচনায় অংশগ্রহণ করা আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে সময়ের বিকট অপচয় মনে হয়, মানুষকে তার প্রত্যেকটা ফ্যালাসি ধরিয়ে দেওয়ার সাধ বা সাধ্য কোনটাই নেই। তবে সেই ফ্যালাসিগুলোর একটা আরকাইভ হতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে পাবলিক ফোরাম থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করলেও জনমত গঠণে এর গুরুত্ব অপরিসীম। এসব হেত্বাভাস সম্পর্কে অবগত হয়ে মানুষের যুক্তিপ্রয়োগ কিছুটা উন্নত হোক, আরগুমেন্ট গঠণে মানুষ আরেকটু মনযোগী হোক, এটাই প্রত্যাশা।
হেত্বাভাসের এই তালিকাটা Thou shalt not commit logical fallacies ওয়েবসাইট থেকে গ্রহণ করেছি। ওয়েবসাইটে ছাপিয়ে টাঙিয়ে রাখার জন্য বিনামূল্যে একটা চমৎকার পোস্টার আপলোড করা আছে। কূটযুক্তির উপর অনলাইনে পাঠ্য একটা সচিত্র বইও আছে, ছোট-বড় সবারই ভাল লাগবে। An Illustrated Book of Bad Arguments - Ali Almossawi
প্রতিপক্ষের যুক্তিকে সম্পূর্ণ বিকৃত করে হাস্যস্পদ রুপ দিয়ে যদি আপনার দুর্বল প্রতিযুক্তি নিয়ে বীরদর্পে হামলে পড়েন, তাহলে আপনি Strawman argument এর অবতারণা করেছেন। সজ্ঞানে হোক বা অবচেতনেই হোক, এধরণের কুযুক্তির অবতারণা তখনই করা হয় যখন প্রতিপক্ষের অবস্থান এতই শক্ত যে তাকে সরাসরি আক্রমণ করা কষ্টসাধ্য।
উদাহরণ: রহিম বলল যে চিকিৎসকরা দায়িত্বে অবহেলা করলে তাদেরকে আদালতে টেনে নেওয়ার জন্য আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা উচিত। করিম ক্ষেপে গিয়ে বলল, “ডাক্তারদের প্রতি তোমার এত ঘৃণা কেন? অসুখ হইলে ঠিকই নাকের পানি-চোখের পানি এক করে ডাক্তারের কাছে দৌড়াও। এতই যখন ডাক্তারদের উপর রাগ, আমরা ডাক্তাররা যেহেতু কিছুই পারি নাই, তাই অসুস্থ হইলে হাসপাতালে না দৌড়াইয়া নিজেই নিজের চিকিৎসা কইরো।”
দুইটা বস্তু বা ঘটনার মাঝে কোন সম্পর্ক বিদ্যমান থাকলেই একটা হতে আরেকটা জাত হয় না। এরই একটা বিশেষ রুপ হলো – “correlation মাত্রই causation নয়”। দু’টো ঘটনা যুগপৎ সংঘটিত হলে সেটা নেহাত দৈবঘটনা হতে পারে, নয়ত তাদের কোন সাধারণ হেতু বা উৎস থাকতে পারে। দুইটা ঘটনার মাঝে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে অন্তত correlation যুক্তি যথেষ্ট নয়।
উদাহরণ: বৃষ্টি হইলেই আমার মাথা ব্যথা করে, তাহলে বৃষ্টির সাথে নিশ্চয়ই মাথা ব্যথার সম্পর্ক আছে!
যুক্তির বদলে প্রতিযুক্তি না দিয়ে আবেগের দ্বারস্থ হওয়া। এধরণের তর্কে বিতার্কিক আপনার পয়েন্টগুলো শণাক্ত করবে না, সেই পয়েন্টগুলোর সংলগ্নতা কিংবা স্ববিরোধীতা খুঁজে বের করার চেষ্টাটাও করবে না। শ্রোতার আবেগ যে দিকে বইবে, বিতার্কিক সে দিকেই পাল তুলবে, আবেগের জোরেই তার কুতর্কের বহিত্র শ্রোতার অন্তরে নোঙর ফেলবে। মানুষ যেহেতু আবেগী প্রাণী, তাই তার যুক্তিবৃত্তির মাঝে আবেগের তন্তু থাকতেই পারে। কিন্তু আবেগের ভারে ন্যুব্জ যে (কু)যুক্তি, প্রতিযুক্তির গায়ে আচড় কাটার শাণটাও তার বাকি থাকে না, ছিন্নভিন্ন করা তো দূরের কথা। বাঙ্গালী আবেগের ডিব্বা, তার তর্কবিতর্কও আবেগেই ঘুরপাক খায়, যুক্তিবৃত্তি আর হয়ে উঠে না।
উদাহরণ: ধর্মানুভূতি নিয়ে হালের আলাপ-আলোচনা এরকম একটা উদাহরণ। ধর্মের সমালোচনা করা যাবে না কেন প্রতিপাদন করতে গিয়ে বলা হয়, “আপনার বাবা-মাকে কেউ গালি দিলে নিশ্চয়ই আপনি চাপাতি নিয়া ঝাপায়া পড়বেন? তাহলে বুঝেন আমাদের নবীকে গালি দিলে কেন আমরা কল্লা কাটি।” বাঙ্গালী সংস্কৃতিতে বাবা-মা যেহেতু একটু বেশিই সংবেদনশীল স্থানে আসীন, তাই যেকোন ব্যক্তি বা মতাদর্শকে বাবা-মায়ের সমতুল্য ঘোষণা করলে তা যাবতীয় আকাম হতে ইনডেমনিটি পেয়ে যায়। বলাই বাহুল্য, বাপ-মাও সমালোচনার উর্ধ্বে না। বাপ-মা তাদের ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনাকে ঐশী অধিকারবলে রাষ্ট্রযন্ত্রে কিংবা সমাজে চাপায়া দিতে চাইলে আর দশটা রাজনৈতিক ব্যক্তি কিংবা পাবলিক ব্যক্তিত্বের মতোই তাদেরকে সমালোচনার শিকার হতে হবে। বাপ-মায়ের আকামের সমালোচককে কেউ আবেগতাড়িত হয়ে খুন করলে সে ফৌজদারী অপরাধী গণ্য হবে, বিভিন্ন দেশের দণ্ডবিধিতে সে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতও হবে। কোরানেও যুদ্ধের বাইরে মানুষ খুন করার অনুমতি দেওয়া আছে কিনা, সেই প্রশ্ন তো থেকেই যায়।
তাছাড়া একটা মতাদর্শ বা মতাদর্শ-প্রচারককে নিজের বাপ-মা-বউ-বাচ্চা বানিয়ে ফেলাটা এতটাই উদ্ভট যে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
হেত্বাভাসের আশ্রয়ে কোন দাবি উত্থাপন করলেই সেই দাবি ভুল হয় না।
যেকোন বিতর্কে আপনার কেইস বা অবস্থান গঠণের জন্য কিছু যৌক্তিক ক্রিয়া-প্রক্রিয়া বা logical operation সম্পাদন করা লাগে। যেমন, আপনার আর্গুমেন্টের বিভিন্ন পয়েন্টগুলোর মাঝে আরোহী-অবরোহী(inductive-deductive) যৌক্তিক সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে, কোথাও স্ববিরোধীতা থাকলে তা নির্মূল করতে হবে, স্ট্রম্যান নির্মাণ করা যাবে না, ব্যক্তি আক্রমণ করা যাবে না, ইত্যাদি। হতে পারে আপনার আরগুমেন্ট যৌক্তিক দৃষ্টিতে ঝাঁ চকচকে, কিন্তু আপনার আরগুমেন্টের প্রাথমিক অনুমিতিতেই যদি ভুল করে থাকেন, তাহলে এতসব যৌক্তিক ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ফলাফলও ভুলই হবে। নড়বড়ে ভিত্তির উপরে অট্টালিকা নির্মাণের পণ্ডশ্রম করলেন আরকি।
আবার একটা সঠিক দাবি উত্থাপনের লক্ষ্যে বেঠিক যুক্তির আশ্রয় নিলে কিন্তু দাবিটি মিথ্যা হয় না। “পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরে” দাবিটির পক্ষে লড়তে গিয়ে আপনি প্রতিপক্ষকে গালাগাল করতে পারেন, তার রমণীমোহন চরিত্র নিয়ে বিদ্রুপ করতে পারেন, শাপলা চত্বরে সন্ত্রাসে কয়টা হেফাজতি লাশ গুম করা হয়েছে সেটার হিসাবও দিতে পারেন। যতই ব্যক্তি-আক্রমণ করেন আর প্রসঙ্গচ্যুত হন, আপনার মূল দাবিটির সত্যতা বিন্দুমাত্র কমবে না।
একটা আরগুমেন্ট প্রতিষ্ঠা করার জন্য লজিক্যাল অপারেশনগুলো সুষ্ঠু ভাবে সম্পাদন করাটাই মুখ্য নয়, অনুমিতিগুলোর সত্যতাও নিশ্চিত করা চাই।
উদাহরণ: রহিম দাবি করল যে পত্রিকার স্বাস্থ্য পাতার চিকিৎসক কলামলেখক যেহেতু বলেছেন দৈনিক দু’টো ডিম খাওয়া বর্তমানে খুব প্রচলিত, তার মানে দৈনিক দু’টো ডিম খাওয়া নিশ্চয়ই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী! করিম বুঝতে পারছে যে রহিম এখানে একাধারে চিকিৎসকের প্রতি appeal to authority হেত্বাভাসের শিকার হয়েছে ও লেখকের ব্যক্তিনিষ্ঠ(subjective) বক্তব্য হতে অযৌক্তিকভাবে একটা বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। রহিমের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াটা ভুল ছিল, কিন্তু তাই বলে প্রতিদিন দু’টো ডিম খাওয়ার সম্ভাব্য উপকারিতা কিন্তু বাতিল হয়ে যায় না। করিম যদি এখন দাবি করে যে যেহেতু রহিম অপযুক্তি দিয়েছে তাই ডিম খাওয়া খারাপ, তাহলে সে আসলে উপরোক্ত Fallacy fallacy এর শিকার হয়েছে।
যদি আমরা “ক” নামক একটা ঘটনাটকে সংঘটিত হতে দেই, তাহলে অবধারিতভাবে “খ” নামক আরেকটা ঘটনা ঘটবে। যেহেতু আমরা কেউই চাই না “খ” ঘটুক, তাই কোনমতেই “ক” সংঘটন করানো যাবে না।
লক্ষ্য করুন, “ক” ঘটলেই কেন অবধারিতভাবে “খ” ঘটবে, বিতার্কিক কিন্তু সেটা ব্যাখ্যা করছে না। “ক” আর “খ” এর কার্য-কারণ সম্পর্ক এখানে স্বতঃসিদ্ধ ধরে নেওয়া হচ্ছে। একই সাথে এখানে appeal to emotion এরও দ্বারস্থ হচ্ছে, কারণ “খ” এর প্রতি সবার অদম্য ভীতি বা বিতৃষ্ণা আছে বলে এই সম্ভাবনা শোনামাত্র তারা আর “ক” এর স্বপক্ষের যুক্তি শুনতে রাজি হবে না। ফলাফল – “ক” এর পক্ষের যুক্তি যতই দৃঢ় হোক, ভীতার্ত শ্রোতা কানে তুলা আটকে বসে থাকবে।
উদাহরণ: সমকামীদের বিবাহের অনুমতি দিলে মানুষ বাল্যবিবাহের অনুমতি চাইবে, গরু-ছাগল-হাস-মুরগি-শাক-সবজি বিবাহেরও অনুমতি চাবে। লক্ষ্য করুন, দু’টো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পারস্পরিক সম্মতিতে একটা গার্হস্থ্য চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার সাথে বাল্যবিবাহ নামক বলপূর্বক যৌনসঙ্গমের কার্য-কারণ সম্পর্কটা কিন্তু ব্যাখ্যাত হয়নি। এর আসলে কোন ব্যাখ্যাও নাই। যখনই আপনি শুনবেন সমকামী বিবাহ বৈধ করলে আপনার শিশুর জন্য লোকজন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে, তখন আপনি আর তর্কাতর্কির মনোভাবে থাকবেন না।
মানুষ যতটা না ভাবে, তার চেয়ে বেশি অনুভব করে। আপনি যদি অনুভব করেন আমি লোকটা ভাল না, আমার যুক্তি নিয়ে আপনি আর ভাববেন না। Ad hominem মূলত এভাবেই কাজ করে। প্রতিপক্ষের ব্যক্তিজীবনে যদি কোন কালো দাগ থাকে বা এমন কোন বৈশিষ্ট্য থাকে যার ব্যাপারে দর্শক-শ্রোতাদের প্রেজুডিস আছে, তাহলে হিট-সিকিং মিজাইলের মত শ্রোতাদের মনযোগ সেই তথাকথিত কালিমার পেছনে লেলিয়ে দিন। বক্তার যুক্তি যতই নিচ্ছিদ্র হোক, জনতার আদালতে সে অনেক আগেই হেরে গেছে। সঙ্গতকারণেই, রাজনীতিবিদদের প্রিয় খেলা Ad Hominem।
উদাহরণ:
রহিম: এত বিশাল প্রতিরক্ষা বাজেট দিয়ে লাভ কী? এর চেয়ে বরং শিক্ষক-পুলিশ-অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর পেছনে অর্থ বরাদ্দ হোক।
করিম: তুমি প্রতিরক্ষার কী বুঝো? বাংলাদেশের সবচেয়ে মেধাবী মানুষগুলার উপর দেশরক্ষার দায়িত্ব অর্পিত রয়েছে। তারা যদি মনে করে প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়াইতে হবে, তাহলে অবশ্যই বাজেট বাড়াতে হবে। ট্যাংক-প্লেন-জাহাজ না থাকলে আমরা ভারতের ৩০তম প্রদেশ হইয়া যাব। বাই দ্যা ওয়ে, তুমি বিএমএতে চান্স পাইসিলা?
Ad hominem – appeal to authority – slippery slope গুলো কি দেখতে পাচ্ছেন?
শব্দটার আক্ষরিক অনুবাদ করলে হয় – You too! আলোচনার কোন কোন জায়গায় হয়ত আপনি ও আপনার প্রতিপক্ষ দু’জনই হেত্বাভাসের আশ্রয় নিয়েছেন। আপনি আপনার প্রতিপক্ষের কোন হেত্বাভাস চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে সে আত্মপক্ষ সমর্থনের ধারেকাছেও না গিয়ে আপনার পূর্বে কৃত কোন হেত্বাভাস টেনে আনবে।
“তুমিও তো কুযুক্তি দিছো, আমি দিলেই সমস্যা? কৃষ্ণ করলে লীলাখেলা আর আমি করলে দোষ?”
যেহেতু আপনি কোন একটা বিষয় জানেন না বা বোঝেন না, তাই আপনি মনে করেন ওই ব্যাপারটা হয় অসম্ভাব্য নয়ত অসম্ভব। এই প্রবৃত্তি সাধারণত টেকনিক্যাল বিতর্কে দেখা যায়।
উদাহরণ: রহিম বোর্ডে একটা মাছ আর একটা মানুষের ছবি এঁকে করিমের দিকে তাচ্ছিল্যপূর্ণ প্রশ্ন ছুড়ে দিল, “তুমি কি সত্যই বিশ্বাস করো একগাদা দৈব ঘটনাক্রমে মাছ বিবর্তিত হয়ে মানুষ হইছে?”
বলা বাহুল্য, জৈব বিবর্তন যে ধাপে ধাপে ঘটে না, এবং step-by-step প্রক্রিয়া আর gradual প্রক্রিয়ার মাঝে যে পার্থক্য আছে, এই মৌলিক জ্ঞানটাই রহিমের নাই। তাছাড়া প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে জৈব বিবর্তন হলো non-random selection of random variant। এই প্রক্রিয়ায় মাত্র কয়েক প্রজন্মে জীবাণুনাশক-বিরোধী নতুন নতুন রোগ-জীবাণু বিবর্তিত হচ্ছে। কয়েক কোটি বছর সময় পেলে এই প্রক্রিয়া কী উৎপাদনে সক্ষম, সেটা কারও “বিশ্বাস” করতে কষ্ট হলে সেটা শুধুই তার অক্ষমতা ও বিশ্বাস।
এগুলা হলো উদ্দেশ্যমূলক প্রশ্ন। গড়পড়তা প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নের উদ্দেশ্য আসলে কোন উত্তর গ্রহণ করা নয়, বরং প্রশ্নের মধ্যেই নিজের কিছু অনুমিতি ঢুকিয়ে দিয়ে উত্তরকারীকে গুতো দেওয়া। গুতো খেয়ে উত্তরদাতা তখন নিজের অবস্থান উত্থাপনের বদলে আত্মরক্ষার জন্য ব্যাকফুটে চলে যান। ভাবগম্ভীর বিতর্ক তখন রগরগে বাক্যবাণে পর্যবসিত হয়। Loaded question আসলে সাংবাদিক আর টকশো উপস্থাপকদের জন্য loaded shotgun। এই গোলার ধাক্কায় সাক্ষাৎকারদাতা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন, আলোচনা তখন আক্রমণে রুপান্তর নেয়।
তবে Loaded question চাইলে ভালো কাজেও ব্যবহার করা যায়। ছাগু এপলজিস্টদের আলোচনায় ডেকে এনে লোডেড কোশ্চেনে জর্জরিত করলে সেটা বরং ভালো; এপলজিস্টদের সাথে আলোচনা চলে না।
উদাহরণ: তানিয়া-সামিয়া দু’জনই রহিমের প্রতি দুর্বল। একদিন রহিমের কাছেই বসে চা খাওয়ার সময় তানিয়া রহিমকে শুনিয়ে শুনিয়ে সামিয়াকে শুধালো, “তোমার সম্পর্কে সবাই কীসব বলাবলি করছে শুনলাম, ঘটনাটা কি সত্য?”
আপনি যখন কোন দাবি করবেন, সেটা প্রমাণের দায়িত্ব আপনার উপরই বর্তায়, বিশ্ববাসীর উপর নয়। আপনি আপনার দাবি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে অবশ্য আপনার দাবি মিথ্যা হয় না। তবে আপনি যদি এমন কোন দাবি করেন যা কখনওই মিথ্যা প্রতিপাদন করা যাবে না, তাহলে সেই দাবি সত্য হলে যা, মিথ্যা হলেও তা। গল্পকার যে চরিত্র সৃষ্টি করেননি, আপনার দাবি কল্পনাতেও স্থান না পাওয়া সেই কল্পমানবের ন্যায় তাৎপর্যহীন।
উদাহরণ: বারট্রান্ড রাসেল প্রমাণের দায়ভার ব্যাখ্যা করার লক্ষ্যে এই চিন্ত্য-পরীক্ষাটি(thought experiment) উদ্ভাবন করেছিলেন। ধরুন, সূর্যকে কেন্দ্র করে এই মুহুর্তে একটি চায়ের কেতলি প্রদক্ষিণ করছে। কেতলিটি এতই ছোট যে এত সূক্ষ্ম দূরবীক্ষণ যন্ত্র উদ্ভাবন করার আগেই সূর্য নিভে যাবে ও সভ্যতা বিলুপ্ত হবে। আপনি যেহেতু বারট্রান্ড রাসেলকে ভুল প্রমাণ করতে পারবেন না(যদিও প্রমাণের দায়ভারটা রাসেলের উপরই বর্তায়), তাই বলে রাসেলের দাবি সঠিক হবে না। কিন্ত রাসেলের দাবিকে এখানে সংশয়ের সুবিধাও(benefit of doubt) প্রদান করা যায় না, কারণ তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই বিবৃতিটি এমনভাবে নির্মাণ করেছেন যাতে তার দাবি পরীক্ষা-নিরীক্ষার করাল থাবা গলে বেরিয়ে যায়। চাইলে এরকম অজস্র তথ্যবাচক বিবৃতি(factive statement) উৎপাদন করা যায় যা কখনওই প্রমাণ করা যাবে না। আমি দাবি করতে পারি দুনিয়ার সকল মানুষেরই নিরীক্ষণের অযোগ্য পাখা আছে, আমি দাবি করতে পারি সকল মানুষেরই deja vu হয়, আমি দাবি করতে পারি মৃত্যুর পর মানুষের আত্মা বেকার ঘুরে বেড়ায়। আপনি যদি এসকল দাবি(এবং যেসকল দাবি আমি আমার কল্পভাণ্ডার হতে এখনও উত্তোলন করে আনিনি) অবিশ্বাস না করে “সন্দেহ” করেন, তবে আপনি একজন কৌতূহলোদ্দীপক চরিত্র বটে।
রাজনীতিবিদরা এই কাজটা করতে সিদ্ধহস্ত। তারা ইচ্ছা করেই এমন বক্তব্য পয়দা করেন যার অনেকগুলো অর্থ হতে পারে, তারপর পরিস্থিতি-সাপেক্ষে অনুকূল অর্থগুলোই তারা সামনে ঠেলেন।
উদাহরণ: বিচারক যখন বিবাদীকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি কেন পার্কিং ফি শোধ করেননি, বিবাদী দাবি করলেন যে সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, “Fine for parking here”, তাই তিনি ধরে নিয়েছিলেন জায়গাটা গাড়ি পার্ক করার জন্য “ফাইন”
উপমা দিয়েই বলি। কয়েন ছুড়ে মারলে টানা ২০ বার হেড পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, কিন্তু ২০বার কয়েন ছুড়লে প্রত্যেকবার হেড পাওয়ার সম্ভাবনা ৫০-৫০। আপনি টানা ১৯ বার হেড পেতে পারেন, নাও পেতে পারেন। প্রত্যেকবার আপনি যখন কয়েন ছুড়েন, সেটা একটা স্বতন্ত্র্য ঘটনা। কাকতালীয়ভাবে টানা ১৯ বার হেড পেলে ২০তম বারও যে হেড পাবেন, এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। এখন আপনি যদি মনে করেন ২০ বার কয়েন ছোড়ার ২০টা স্বতন্ত্র্য স্ট্যাটিসটিক্যাল ঘটনা কোন অতিপ্রাকৃতিক বিধান অনুসরণ করছে এবং আপনি ২০তম বারও হেড পেতে বাধ্য, তাহলে আপনি Gambler’s fallacy এর ভুক্তভোগী।
উদাহরণ: roulette wheel এ ইতিমধ্যে টানা ৬ বার লাল রঙ উঠে এসেছে, গ্রেগ এখন নিশ্চিত পরেরবার অবশ্যই কালো রঙ উঠবে, উঠতে বাধ্য। কোন অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা নয়, হয়ত প্রাকৃতিক নির্বাচলের ক্ষমতাবলেই গ্রেগের ভবিষ্যদ্বানী টিকল না। তার সারা জীবনের উপার্জন চোখের জলে ভেসে গেল।
সবাই কিছু বললে বা সবাই কিছু করলেই সেটা ঠিক হয় না। একজনের বিশ্বাস যেমন ভিত্তিহীন, কোটিজনের বিশ্বাসও তেমনই ভিত্তিহীন; নইলে পৃথিবী কয়েকদিন পরপরই আকার বদলাতো।
কেউ বিশেষজ্ঞ হলেই তার মতামত স্বতঃসিদ্ধ হয়ে যায় না। এটা ঠিক যে একটা মেডিকেল বোর্ডের অভিমত একজন ফার্মাসিস্টের অভিমতের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এও ঠিক যে জ্ঞান একটি রাজনৈতিক ডিসকোর্স, ইতিহাসের বিভিন্ন সময় বিশেষজ্ঞসমাজ একযোগে জ্ঞানের নামে কুসংস্কারের চর্চা করেছে। ইউজেনিক্স এরকম একটা উদাহরণ।
বিশেষজ্ঞসমাজ যদি একত্রে ভুল করতে পারে, তবে আমরা নাদানরা কাকে বিশ্বাস করব? আসলে, appeal to authority এড়ানো মানে এই না যে বিশেষজ্ঞমত বাই ডিফল্ট ভুল গণ্য হবে। ইউজেনিক্সের কথাই ধরুন। ইউজেনিসিস্টরা বিশ্বাস করতেন কৃত্রিম নির্বাচনের মাধ্যমে যেমন অধিক উৎপাদনশীল গবাদি পশুর উদ্ভব ঘটানো যায় এবং হয়েছে, তেমনই মানুষের মধ্য হতে শুধু নির্বাচিত কিছু ব্যক্তিবর্গকে প্রজনন করতে দিয়ে বাকিদেরকে খোজা করতে হবে, যাতে মনুষ্য প্রজাতি ক্রমশঃ “উন্নত” হয়। কাদের কে খোজা করতে হবে? সমকামী, মানসিক রোগী, ইহুদি, কৃষ্ণাঙ্গ, ইউজেনিসিস্টদের অপছন্দের নৃগোষ্ঠী, নপুংসক প্রভৃতি “unfit” লোকজনদের খোজা করতে হবে। মনুষ্যগোষ্ঠী হতে সুস্থ-বলিষ্ঠ-মেধাবী-সচ্চরিত্র মানুষ নির্বাচন করে তাদের দিয়ে প্রজনন করিয়ে “উন্নত” জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করা যে animal husbandry এর মত সরল কর্ম নয়, সেটা ইউজেনিসিস্টরা জানতেন না, বংশগতিবিদ্যা তখন এতটা উন্নত ছিল না(নৈতিকতার প্রসঙ্গটা নাই আনলাম)। ইউজেনিসিস্টদের বৈজ্ঞানিক অনুমিতিতেই গলদ ছিল, এবং খোদ বৈজ্ঞানিক সমাজের ভেতর হতেই ইউজেনিক্সের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এসেছিল, যার ফলাফলে ইউজেনিক্স এখন শুধুই বিজ্ঞানের ইতিহাসের একটি কালো দাগ। বিশেষজ্ঞ মতামত তাই কয়েক চিমটি সংশয়ের সাথে গ্রহণ করতে হবে।
এই ফ্যালাসির আরেকটা মজার দিক হলো – একটা বিশেষজ্ঞের দাবির বিপরীতে সবসময়ই আরেকটা বিশেষজ্ঞের মতামত উপস্থাপন করা যায়। কেউ যদি কোন “বিজ্ঞানী” এর উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করে জৈববিবর্তন ভুল, শুধু ওই একজনের বিপরীতেই হাজারখানেক বিজ্ঞানীকে উদ্ধৃত করা যাবে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষাভাবে জৈববিবর্তনকে ভিত্তি করেই গবেষণা করে যাচ্ছেন। একারনে বিশেষজ্ঞদের ভারী ভারী সিভি আর ব্যক্তিগত মতামতের চেয়ে তাঁদের পিয়ার-রিভিউড গবেষণালদ্ধ-সিদ্ধান্তগুলোই বেশি প্রাসঙ্গিক।
খণ্ডের জন্য যা সত্য, সমগ্রের জন্য তা নাও হতে পারে; আবার সমগ্রের জন্য যা সত্য, তা খণ্ডের জন্য নাও হতে পারে। খণ্ড আর সমগ্রের মাঝে সম্পর্ক স্থাপন করার আগে আমাদের দেখতে হবে আদৌ কোন উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ আছে নাকি। আমরা সবকিছুতে সঙ্গতি দেখে অভ্যস্ত, তাই কোথাও সঙ্গতি না থাকলেও আমরা সেটা তৈরী করে নিই।
উদাহরণ: সুদীপ্ত খুব বুদ্ধিদীপ্ত ও যুক্তিবাদী একটা ছেলে। সে ভেবে দেখল – যেহেতু পরমাণু দেখা যায় না, আর সে পরমাণু দিয়ে তৈরী, তাহলে নিশ্চয়ই সে নিজেও পরমাণুর মতই অদৃশ্য! তার যুক্তি যতই প্রখর হোক(!), বন্ধুদের সাথে লুকোচুরি খেলায় সে প্রায়ই ধরা খায়।
আপনার গোলপোস্টে কেউ গোল দিলেই গোলপোস্টটি সরিয়ে দিয়ে বলবেন গোল হয় নাই। যেহেতু এভাবে জীবনেও গোল দেওয়া সম্ভব না, তাই আপনিই অবিসংবাদিত বিজয়ী। অভিনন্দন জনাব এডমিরাল জেনারেল!
এখানে যেটা ঘটে – আপনি প্রথমে একটা দাবি উপস্থাপন করবেন, যখন সেই দাবি ভুল প্রতিপাদন করা হবে, তখন আপনি আপনার প্রাথমিক বক্তব্যটি বদলে দিয়ে বলবেন, “ইহা কখনওই আমার দাবি ছিল না”। এই ফ্যালাসিটা খুব পরিচিত মনে হচ্ছে না? জ্বি হ্যাঁ, এটাই “ইহা সহিহ ইসলাম নহে” ফ্যালাসি। এই “সহিহ ইসলাম” এর সংজ্ঞা এত হাজার বছরেও সর্বসম্মতিক্রমে প্রণীত হয়নি। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নিয়মিত পালন করা, ধর্মের নিমন্ত্রণ দিয়ে বেড়ানো, আর দশটা ধার্মিকের মতই চিন্তা করা একজন ধার্মিক ব্যক্তিকে আকাম করে ধরা না খাওয়া পর্যন্ত্য “সহিহ ধার্মিক” মানা হয়, অথচ ওই একই ব্যক্তি নিজের বিশ্বাস দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়ে খুন-খারাবি করলে তখন তার “সহিহ” স্ট্যাটাসটা বাতিল হয়ে যায়। যখন তাকে “সহিহ ধার্মিক” মানা হয়েছিল, তখন কি তার সহিত্বকে কোন রুলবুকের সাপেক্ষে তুলনা করে নির্ণয় করা হয়েছিল? না, কারণ এরকম কোন রুলবুক নেই। ধর্মের গোলপোস্ট সবসময় ধার্মিকের ইচ্ছেমত ছুটোছুটি করে, ধর্মের ময়দানে খেলার এটাই নিয়ম।
দার্শনিক এন্থনি ফ্লু তাঁর Thinking About Thinking বইতে প্রথম এই হেত্বাভাস প্রতিপাদন করেছিলেন। তাঁর ভাষ্যটাই দেখি,
ধরেন, হেইমিশ ম্যাকডনাল্ড নামক এক স্কটসম্যান সকালে পত্রিকা খুলে দেখলেন জনৈক ইংরেজ যৌনাপরাধী আবার আরেকজন নারীকে ধর্ষণ করেছে। হেইমিশ আৎকে উঠে বললেন, ‘কোন স্কটসম্যানের পক্ষে এই কম্ম সম্ভব নয়।’ পরদিনই একই পত্রিকায় খবর আসল যে এবার একজন স্কটসম্যান ধর্ষণ করেছে, তার তুলনায় পূর্বের ইংরেজ ব্যক্তি রীতিমত ভদ্রলোক। দেখা যাচ্ছে স্কটসম্যানদের সম্পর্কে হেইমিশের বক্তব্য ভুল ছিল, কিন্তু হেইমিশ কি তা স্বীকার করবেন? কক্ষণো না। এখন তিনি বলবেন, ‘কোন *প্রকৃত* স্কটসম্যান জীবনেও এই কাজ করবে না।’
বক্তার বক্তব্যের সত্যতা তার জীবনচরিতের উপর নির্ভর করে না। একটা মানুষ কীধরণের কথা বলে তা অবশ্যই তার জৈবনিক অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রভাবিত, তার বক্তব্যের উদ্দেশ্য তার ব্যক্তিগত অবস্থানের উপর নির্ভরশীল, কিন্তু তার বক্তব্যের ফ্যাকচুয়াল কনটেন্ট একান্ত স্বতন্ত্র্যভাবে বিবেচ্য। এই ফ্যালাসিটা ad hominem এর আত্মীয়, কারণ ad hominem এর মতই এটা বক্তব্যের আধেয়কে আক্রমণের বদলে সমাজের বিদ্যমান প্রেজুডিসকে বক্তার চরিত্রের উপরে নিক্ষেপ করে।
উদাহরণ: সন্ধ্যা ৬টার খবরে যেই সিনেটরের দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের কথা ফাঁস হল, সেই সিনেটরই আবার বিবৃতি দিয়ে বললেন মিডিয়ার কথা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করার কারণ নাই, মিডিয়া প্রায়ই ভুল চিত্র তুলে ধরে।
মিডিয়া যে বিশ্বাসযোগ্য নয়, এটা একটা স্বতন্ত্র্য সত্য। সিনেটর মহাশয় যত বড় মিথ্যুক আর দুঃচরিত্রই হোক, তার বক্তব্যের ফ্যাকচুয়াল কনটেন্ট নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নাই। তবে হ্যাঁ, তার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে; তিনি পরিস্কারভাবেই মুখ রক্ষা করার জন্য এই কথা বলছেন।
এধরণের আরগুমেন্টের একটা যৌক্তিক ভেক থাকে। এই আরগুমেন্টের কূটকৌশলটা হল যে তার্কিক আপনার সামনে কেবল দু’টো যৌক্তিক সিদ্ধান্ত উত্থাপন করবে, যদিও সেই দু’টো সিদ্ধান্তের বাইরে অন্য বিকল্পও থাকতে পারে; মধ্যম অবস্থান হতে হবে এমন কোন কথা নেই। যেহেতু খুব সূক্ষ্ম, যুক্তিনিষ্ঠতার ভেক ধরে এই আরগুমেন্ট উত্থাপন করা হয়, তাই আপনার মনে হতে পারে যে আপনি কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। অন্য সকল বিকল্পের প্রতি একটা অন্ধকোণ(blind spot) সৃষ্টি করাতেই এই কূটযুক্তির সার্থকতা।
উদাহরণ: “অমুক দেশে এক স্বৈরাচার মানবাধিকার লঙ্ঘন করতেসে। হয় স্বাধীন বিশ্বের নেতা হিসেবে আমরা স্বৈরাচার উৎখাত করে ওই দেশে একটা সরকার গঠণ করে দিয়ে আসব, নয়ত হাত গুটিয়ে বসে থেকে স্বৈরাচারকে বৈধতা প্রদান করব।”
এখানে আরেকটা বিকল্পকে ইচ্ছে করেই চেপে যাওয়া হচ্ছে – স্বৈরাচার-বিরোধী জনগণকে পরোক্ষ সামরিক ও আর্থিক সাহায্যও করা যায়। এতে করে সামরিক আগ্রাসন করে তাদের সার্বভৌমতা লঙ্ঘন হয় না।
একটা ভাল আরগুমেন্ট এক বা একাধিক অনুমিতির উপর বিভিন্ন লজিক্যাল অপারেশনের মাধ্যমে এক বা একাধিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। কিন্তু এধরণের কূটযুক্তিতে আপনার সিদ্ধান্ত আপনার অনুমিতির মধ্যেই নিহিত থাকে। অনুমিতি থেকে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার বদলে আপনি সিদ্ধান্ত থেকে ওই একই সিদ্ধান্ত আবার টেনে আনছেন। মানে, আপনি ২ এর সাথে ২ যোগ করে ২ পাচ্ছেন, ৪ নয়।
এধরণের কূটযুক্তি তখনই ব্যবহৃত হয় যখন কোন সিদ্ধান্ত তার্কিকের মনের এত গভীরে প্রোথিত থাকে যে সে সিদ্ধান্ত আর অনুমিতিকে পৃথক করতে অসমর্থ হয়।
উদাহরণ: ভগবান এক ও অদ্বিতীয়। আমরা তা জানি কারণ এটা তার বইতে লেখা আছে। যেহেতু সে এক ও অদ্বিতীয়, তাই তার বই-ও এক ও অদ্বিতীয়। যেহেতু তার বই এক ও অদ্বিতীয়, তাই তার বইয়ের দাবি অনুযায়ী সেও এক ও অদ্বিতীয়।
কোন কিছু প্রাকৃতিক হলেই তা ভালো হয় না। প্রকৃতিতে প্রচুর হানাহানি ঘটে, খুন-খারাবিকে “প্রাকৃতিক” বলাই যায়, কিন্তু তাই বলে কি হত্যাযজ্ঞ ভালো?
একে Naturalistic fallacy ও বলা হয়।
উদাহরণ: যেহেতু প্রকৃতিতে কোন প্রাণী যন্ত্রপাতির সাহায্যে “সভ্যতা” নির্মাণ করে বেঁচে থাকে না, তাই সভ্যতাই মানুষের সকল দুর্গতির মূল।
মানুষ পরিসংখ্যান বুঝে না। পরিসংখ্যানের বড় বড় সংখ্যার চেয়ে যাপিত স্মৃতিগুলোই মানুষের বড় আপন। আপনার দাবির স্বপক্ষে আপনি যদি স্মৃতিচারণ করেন, মানুষ সেটা ভালো খাবে। নিতান্তই বিশ্লেষণ-মনা না হলে মানুষ আপনার পরিসংখ্যানকে পাত্তা দিবে না। স্টিফেন হকিং তাঁর A Brief History of Time এ কৌতুক করেছিলেন যে বইতে যত বেশি সংখ্যা উদ্ধৃত করা হবে, পাঠকের মনযোগ তত সূচকীয় হারে কমবে।
উদাহরণ: রহিমঃ “শুনেন, আমার বাপ দিনে ৩০টা বিড়ি টানত, তবুও সে ৮০ বছর সহিহ-সালামতে বেঁচে ছিল। আপনে যতই ধূমপান আর স্বল্পায়ুর মাঝে কার্য-কারণ সম্পর্ক দেখাইয়া পিয়ার-রিভিউড জার্নালে পাবলিশ করেন না কেন, আমার অভিজ্ঞতা তো আর ভুল ছিল না, তাই না?”
আমি আজ পর্যন্ত্য যতবার ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছি, একবারও কোপ খাই নাই। আপনাকে গ্যারান্টি দিয়ে বললাম, ছিনতাইকারীরা কখনও কোপাকুপি করে না!
এক শ্যুটার দেওয়ালের বিভিন্ন জায়গায় গুলি ছুড়ল। তারপর দেওয়ালে যে জায়গাগুলোতে সবচেয়ে বেশি গুলি লেগেছে, সেই জায়গাগুলোতে bull’s eye বৃত্ত এঁকে দিল, যাতে দেখে মনে হয় তার লক্ষ্য সুনিপুণ। এই কাল্পনিক “শার্পশ্যুটার” কে দিয়েই টেক্সাস শার্পশ্যুটার ফ্যালাসির নামকরণ। কোন একটা ডাটা ক্লাস্টার থেকে আপনি যদি বেছে বেছে শুধু সেসব উপাত্তুই নির্বাচন করেন যেগুলো আপনার অনুমিতিকে সমর্থন করে, তাহলে আপনি শার্পশ্যুটার ফ্যালাসির শিকার হয়েছেন।
উদাহরণ: একটা ফলের জ্যুস কোম্পানি একটা সমীক্ষা উদ্ধৃত করল যে যেই পাঁচটা দেশে এই কোম্পানি বাণিজ্য করে, তার মধ্যে তিনটা দেশই বিশ্বের শীর্ষ দশ সুস্বাস্থ্য সম্পন্ন জনগোষ্ঠীর দেশের তালিকায় রয়েছে। অর্থাৎ, এই জ্যুস কোম্পানির জ্যুস স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
লক্ষ্য করুন, কোম্পানিটি কিন্তু তাদের জ্যুসের স্বাস্থ্যকরী প্রভাব নিয়ে কোন নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা পরিচালনা করেনি। পরিসংখ্যান ঘেটে কাকতালীয়ভাবে যে তিনটা দেশে তাদের পণ্য বিক্রী হয়, ঠিক সেই তিনটা দেশের উদাহরণই তারা দিয়েছে। এখানে কোন কার্য-কারণ সম্পর্ক নেই, স্রেফ দৈব সংযোগ রয়েছে।
এই হেত্বাভাসটা আমাদের ছাগুবান্ধব সুশীল সমাজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োগ করে। দু’টো চরম বিপরীত অবস্থানের মধ্যবর্তী অবস্থানটাই বাই ডিফল্ট সত্য হবে, এমন দাবি করাটাই হলো এই হেত্বাভাস। হ্যাঁ, মাঝে মাঝে মধ্যম অবস্থান সমাধান হতে পারে। কিন্তু মাঝে মাঝে মধ্যম অবস্থান সঠিক হয় বলে সেখান থেকে এটা কোনমতেই deduce বা অবরোহণ করা যায় না যে মধ্যম অবস্থানই সবসময় সঠিক।
উদাহরণ: রহিম দাবি করল যে টিকা দিলে শিশুদের মাঝে অটিজম বৃদ্ধি পায়। বিজ্ঞানমনস্ক করিম প্রতিবাদ করে জানালো যে এই দাবি ভুল প্রমাণ করা হয়েছে। সলিম এই দু’জনকেই “মৌলবাদী” আখ্যা দিয়ে তার নিজস্ব মধ্যপন্থী অবস্থান নিয়ে হাজির হলো যে টিকাদান সব অটিজমের জন্য দায়ী নয়, কিছু কিছু অটিজমের জন্য দায়ী।
টিকাদানের সাথে অটিজমের আদৌ কোন কার্য-কারণ সম্পর্ক আছে কিনা, তা নিয়ে সলিমের কোন আগ্রহ নাই। তার একটা অন্ধ বিশ্বাস আছে যে দু’টো বিপ্রতীপ অবস্থানের মাঝে মধ্যম অবস্থানটাই নির্বিচারে সঠিক, তাই কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ধার না ধেরেই সে মধ্যমপন্থার বটিকা নিয়ে হাজির হয়।
মন্তব্য
চমৎকার পোস্ট। পুরাকালে সিসিবিতে জুবায়ের অর্ণব ভাইয়ের একটা পোস্ট আর সচলে মুর্শেদ ভাইয়ের একটা শেষ না করা সিরিজ ছাড়া বাংলা কোনও অনলাইন রিসোর্স পাওয়া যায় না এই ব্যাপারে। এটা অনেক বিস্তারিত হয়েছে।
বুল'স আই, তবে বুলগুলো সেটা বুঝলে হয়
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
কোন মুর্শেদ ভাই? মামু (মাহবুব মুর্শেদ), হামো (হাসান মোর্শেদ) নাকি নিমো (নিয়াজ মোর্শেদ) ভাই?
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
এস এম মাহবুব মুর্শেদ, এইখানে টিপি দ্যান
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
দারুণ।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
ভালো লেখা।
Middle Ground সম্পর্কে ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, মধ্যপন্থা বলে কিছু নাই। তত্ত্বগতভাবে থাকলেও বাস্তব উদাহরণ দেখা যায় না। গেলেও তার সংখ্যা পরিসংখ্যানে ধর্তব্য না। ষাটের শেষ সত্তরের শুরুতে যারা বলেছে তারা আমেরিকারও বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নেরও বিরুদ্ধে, বছর ত্রিশেক পরে তাঁদের কমপক্ষে তিন চতুর্থাংশ হাসিমুখে মার্কিন শিবিরে ভিড়েছে।
অজ্ঞাতবাস
এটা তাইলে কমন প্র্যাকটিস যে "অতি মধ্যবাদীরা" শেষমেশ ডানপন্থায় ঝোঁকে?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সবসময় মনে হয় না। আমাদের দেশের অনেক মধ্যবাদী কিন্তু একসময় ছিলেন অতি বামপন্থী; ডানে যাত্রার পথে মধ্যবাদিতা তাদের জন্য ট্রানজিট পয়েন্ট।
Emran
বাঁয়ে বেশি চাপতে গিয়াও তো (উল্টা ঘুইরা) ডানে পইড়া যায় অনেকে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বাম থেকে ডানে বিবর্তন আসলে খুব বেশী কঠিন না।
চমস্কি বহু আগে একটা লেকচার দিয়েছিলেন এই বিষয়ে --
https://www.youtube.com/watch?v=8SewlKDMFR4
সচলের অন্যতম সেরা পোস্ট, স্টিকি করে রাখার আবেদন জানাচ্ছি।
-চন্দ্রনিবাস
অসাধারণ একটি পোস্ট। স্টিকি করার অনুরোধ।
- নীল কাকাতুয়া
দারুণ পোস্ট।
_________________
[খোমাখাতা]
ভালো কাজ হইছে একটা। আমারও প্রথম লিঙ্কের জিনিসটার একটা জেপেগ ফাইল সেভ করা আছে। লজিক্যাল ফ্যালাসি নিয়ে আরও অ্যানালাইসিস হওয়া দরকার বিশেষ করে বাংলায়।
উদাহরণগুলা আরেকটু ইলাবোরেট হইলে মনে হয় ভালো হইত। যে এই লেখাটা পড়বে তার বাংলা ব্লগ বা অনলাইন জগতের টিপিক্যাল বিতর্কগুলার সাথে পরিচয় থাকলে ধরতে কোনো সমস্যা হবে না হয়ত, কিন্তু কেউ লজিক্যাল ফ্যালাসি নিয়ে আলাদাভাবে পড়তে চাইলে আরেকটু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বা একাধিক উদাহরণ থাকলে সম্ভবত ভালো হবে। বিশেষ করে চলমান (টিপিল্যাল) পলিটিক্যাল আর ধর্মীয় বিতর্কগুলাকে মোটামুটি কয়েকটা পয়েন্টে নিয়ে আসা যায়। তারপর সেই পয়েন্টগুলা ঠিক ঠিক কী কী কারণে কী ধরণের ফ্যালাসিতে আক্রান্ত সেইটা লিখে ফেলতে পারলে একটা দারুণ কাজ হবে। তাইলে একেবারে যে কোনো জায়গায় একটা রেফারেন্স হিসাবে ধরায়ে দেয়া যাবে।
ফ্যালাসিগুলার নিজেদের মধ্যে রিলেশান নিয়েও উদাহরণসহ আলোচনা করা যাইতে পারে। দেখি সময় পাইলে আরেকটু ডিটেইলস দুই পয়সা যোগ করার চেষ্টা করব। তার আগে দায়সারা কমেন্ট করে কেটে পরি
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
এই পোস্টে আপনি কিছু উদাহরণ যোগ করে দিতে পারেন, তাহলে রেকর্ড হয়ে থাকবে। আমিও ভাবছিলাম সমসাময়িক উদাহরণ কিংবা ব্লগ-ফেসবুকের দৈনন্দিন আলাপে যেসব হেত্বাভাস উঠে আসে সেগুলোকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা, কিন্তু পোস্ট লেখার সময় এক ধর্ম ছাড়া আর কোন টপিকের হেত্বাভাসগুলো মনে পড়ছিল না।
Big Brother is watching you.
Goodreads shelf
কুতর্কের অপরাধে বাংলা অনলাইনের বেশিরভাগে অপরাধী! আমিও যে কখনো নই তা নয়! এই লেখাটা সময়ে অসময়ে কাজে লাগবে!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
লম্বা লেখা, কিন্তু পড়তে সমস্যা হলো না।
নিজেরে মাঝে মাঝে মাঝখানে দাড়ায়া থাকা ভাবতে ইচ্ছা করে। কিন্তু কোন সময়ই সেখানে থাকা হয় না। কারো পক্ষে থাকা সম্ভব হইলে সে মানুষ না, অবতার
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
দারুণ কাজ। ফেসবুকে আর ব্লগে ভুল লজিকের ছড়াছড়ির সময়ে এই ধরনের শিক্ষা খুবই জরুরি। যদিও যুক্তিহীন লোকেরা আদৌ এইসব থেকে কিছু শিখবে নাকি সেটা অন্য প্রশ্ন।
এইটার অনুবাদ শুরু করসিলাম, আলসেমিতে শেষ করা হয় নাই
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
কঠিন কাজ হৈসে একটা!
"আপনি আমাত্তে বেশি বুজেন?"- এইটা কোন ফ্যালাসির অন্তর্ভূক্ত হবে?
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
এইটা মতিকন্ঠে এত বেশিবার পড়েছি যে এটা মনে হয় মতি ফ্যালাসির অন্তর্ভুক্ত হবে।
চমৎকার লেখা। কুযুক্তিগুলো নম্বর দিয়ে দিন, এরপর যেখেনে এর প্রয়োগ দেখব সেখানে নম্বরটা বলে কেটে পড়ব
অনেকদিন আগে পত্রিকায় কুযুক্তির আরেকটা উদাহরণ দেখেছিলাম:
শুভেচ্ছা
ভালো লেখা।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
চমৎকার! খুব ভালো লাগল পড়ে
দেবদ্যুতি
চমৎকার! চরম উদাস ভাইয়ের কিভাবে ইতর্ক করবেন-এ আমি প্রথম এই জিনিষপত্র সন্ধান পাই। এখানে সবচেয়ে বিস্তারিত।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
দারুণ লেখা। ত্রিমাত্রিক কবির পরামর্শটা ঠিক আছে। প্রতিনিয়ত যেসব ফ্যালাসি আলোচনায় উঠে আসে, সেগুলার উদাহরণ আরেকটি চওড়া করে লিখে দিলে অনেক কাজ বেঁচে যাবে।
অসম্ভব তথ্যবহুল একটা লেখা।
Begging the Question - এর উদাহরণ টা circular reasoning এর মত লাগছে। দুটো কি এক জিনিস?
- সো
সম্ভবত একই। সার্কুলার রিজনিং ও অনুমিতির বদলে সিদ্ধান্ত দিয়ে শুরু হয়, ফিরেও আসে ওই একই সিদ্ধান্তে।
Big Brother is watching you.
Goodreads shelf
দারু লেখা। কিছু কিছু যায়গায় মনে হয়েছে উদাহরণগুলো আরো মজবুত এবং (মনে রাখার সুবিধার্থে) চমকপ্রদ হতে পারতো।
যেমন-
Black and White এর উদারহণ সম্পর্কে বলবো-
কোনো দেশের স্বৈরাচার বিরোধি জনগণকে ‘বাইরে থেকে সামরিক বা আর্থিক সাহায্য দেওয়া’ও সেই দেশের সার্বভৌমত্বের লংঘন। যেমন কোনো বিদেশী রাষ্ট্র যদি বৃহত্তর জামায়াতে ইসলামির দর্শনে বিশ্বাসী হয় এবং তাদের কথা মত শেখহাসিনাকে ‘স্বৈরাচার' ধরে নিয়ে জামায়াতকে আর্থিক ও সামরিক সহযোগিতা দেয় তাহলেও সেটা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের লংঘন।
এধরনের লংঘন না করে বহির বিশ্ব যেটা করতে পারে তা হলো তারা যাকে স্বৈরাচার মনে করছে তাকে আর্থিক ও সামরিক সহযোগিতা না করা। এবং আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা। ট্রেড ব্যানও দেওয়া যায়। কিন্তু এ ধরনের ব্যান দিতে গিয়ে জীবন রক্ষাকারি ‘টিকা' রপ্তানি বন্ধ করে লাখো শিশুকে মৃত্যুমুখে ছুড়ে দেবার উদারহরণ ও আছে। সে অন্য প্রসংগ...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
দারুণ লেখা।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
অসাধারণ লেখা। এটা সংগ্রহে রাখা যায় কীভাবে?
আরো কিছু উদাহরণ থাকলে ভালো হতো।
স্বয়ম
অনেকদিন পর এরকম একটা ইন্টারেস্টিং লেখা পড়লাম।
স্লিপারি সোপ আর টেক্সাস শার্পশ্যুটার না থাকলে
অনলাইনের ছাগু বিপ্লবীরা না খেয়ে মারা যেতেন
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে Ad hominem আর Appeal to Emotion টাই বেশি ব্যাবহার হতে দেখি। আর Strawman argument এর উদাহরনটা স্বজাতির অজস্র বন্ধুর মুখে নিয়মিতই শুনি। ধন্যবাদ আপনাকে এই ফ্যালাসিগুলো গুছিয়ে লেখার জন্য। বাংলায় এ ধরনের লেখা খুব কম।
কিরো
ভালো লেখা
সাবরিনা
দারুন লেখা!॥
এই বিষয়েই কয়েকটা ইন্টারেস্টিং লিঙ্ক দিচ্ছি, লেখক বা অন্য কোন আগ্রহী পাঠক / লেখক যদি আমার মত আম পাঠকদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে আরও কিছু অনুবাদ করেন সেই আশায় --
১। The Fallacy Files: Taxonomy of Logical Fallacies
২। A Code of Conduct for Effective Rational Discussion
৩। Fallacy Watch: Familiar Contextomies
৪। Stephen Downes Guide to the Logical Fallacies
৫। ফ্যালাসির দীর্ঘ তালিকা
কিছু ইন্ডিভিজুয়াল ফ্যালাসিঃ
এসোসিয়েশন ফ্যালাসিঃ
১। Association fallacy
২। Guilt by Association
৩। Fallacy: Guilt By Association
কুযুক্তি সংশ্লিষ্ট আরও কিছু মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা, কৌশল ও অপকৌশলঃ
১। Psychological manipulation
২। প্রোপাগাণ্ডা
৩। ফল্স কানেকশান
৪। কনফার্মেশান বায়াস
৫। Repetition principle
৬। প্রেজুডিস
৭। Negativity effect
বইঃ
১। Being Logical: A Guide to Good Thinking
২। Attacking Faulty Reasoning: A Practical Guide to Fallacy-free Arguments
****************************************
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
খালি পপ কর্ন খেয়ে খেয়ে মোটা হলে হপে? একটু এক্সারসাইজ করে শরীরের চর্বি কমান। উপ্রের তালিকা থেকে দুয়েকটা অনুবাদ করেন!
****************************************
নিজেকে খুজলাম। ।।
ব্লগে এমন লেখা খুঁজি। কিন্তু যাদের জন্য মূলত এই লেখা জরুরি, তাদের সাথে এটি শেয়ার করলে বলবে, এসব নাস্তিকমার্কা ব্লগ ছাড়ো।পিতা মাতার বদনাম করিও না।
-সরল গরল
নতুন মন্তব্য করুন