ঢাকা এখন ফাঁকা

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি
লিখেছেন প্রোফেসর হিজিবিজবিজ [অতিথি] (তারিখ: শনি, ১৮/০৮/২০১২ - ১২:৪৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার ছোটছেলেটা (বয়স ৪ মাস) ক্লাবফুটেড (এর বাংলা জানিনা)। চিকিৎসা চলছে। প্রতি শুক্রবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রীনরোডে নিয়ে যাই। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের কথা জানি না, শুক্রবারের সকালে বোধহয় রাস্তাঘাট একটু ফাঁকা থাকে। সকাল ৯টা- সোয়া ৯টার দিকে রওনা দিলে মোটামুটি ৪৫ মিনিটে পৌঁছে যাই। গুলশান গোল চত্বর, সাতরাস্তা, সোনারগাঁও এর মোড় আর পান্থপথ-গ্রীনরোড মোড় ছাড়া জ্যাম পাই না সাধারনত:।

আজকে (১৭ আগস্ট, ২০১২) যথারীতি বাসা থেকে বের হয়েছি সাড়ে ন'টার দিকে। অন্যান্য দিন বাসার কাছেই সিএনজি অটো রিক্সা পেয়ে যাই - আজকে দেখি সব ভোঁ ভাঁ - একটা দুটা রিক্সা ছাড়া আর কিছু নেই। মাঝে মাঝে যে দুই তিনটা সিএনজি অটো রিক্সা দেখলাম, সবগুলোই যাত্রীপূর্ণ। সিএনজি চালকগুলোও কি অগ্রীম ঈদ করতে চলে গেছে নাকি ভাবতে ভাবতে একটা রিক্সা নিয়ে বাস রাস্তা (পড়ুন প্রগতী সরনী) পর্যন্ত এলাম।

এসেই একদফা অবাক হলাম। আরেব্বাস! এই রাস্তাটা যে এতো চওড়া আগে তো খেয়াল করিনি! আসলে রাস্তাটা ফাঁকা তো, তার উপরে দুই ধারে প্রাইভেট কার, বাস, রিক্সা দাঁড়িয়ে নেই তাই রাস্তাটার চওড়াত্ব (!) বেশী করে চোখে পড়ছিল। তবে বেশীক্ষণ রাস্তার দিকে না তাকিয়ে একটা সিএনজি অটোরিক্সা বা ট্যাক্সিক্যাব যোগাড় করতে লেগে গেলাম।

ভাইরে, কী বলবো! ঝাড়া ৪০ মিনিট মত লাগলো একটা সিএনজি অটো রিক্সা যোগাড়ে। না, ভাড়া নিয়ে বনিবনা না হওয়া বা গন্তব্যের দিক নিয়ে মতবিরোধ জাতীয় কিছু নয় - রাস্তায় সাধারণ পরিবহন এখন অসাধারন হয়ে পড়েছে। দেখা পাওয়াই দুর্লভ! অবশেষে এক ফাঁকা সিএনজি অটো রিক্সা পেলাম এবং বাড়তি ভাড়া কবুল করে রওনা দিলাম। যদিও সাধারণ দিনেও বাড়তি ভাড়াই কবুল করতে হয়, তবে আজকে আরো বেশি ভাড়া গোনা লাগলো।

যাই হোক, রওনা দিলাম - - - এবং পৌঁছে গেলাম!! -- ঠিক তাই। সিএনজি অটো রিক্সা পেতে লেগেছিল ৪০ মিনিট, আর গ্রীন রোড পৌঁছুতে লাগলো ২০ মিনিট!!

পুরো রাস্তা একেবারে ফাঁকা! হাতে গোণা কয়েকটি বাস চলছে, চলছে প্রাইভেট কার দেদারসে। আর রাস্তা দখলে পেয়ে রিক্সাগুলো শুরু করে দিয়েছে মহোৎসব।

ঈদের লম্বা ছুটি পেয়ে লোকজন ঢাকা ছাড়লে শহরটা ফাঁকা হয়ে যায় - এত দিন পত্রিকায় পড়ে জেনেছি (কারণ আমিও ঐ ঢাকা ছাড়া মানুষগুলোর মধ্যে প্রথম দিকেই থাকতাম)। আজ নিজের চোখে দেখলাম।

আর মনে হলো আহারে, যদি প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ সত্য সত্যই করা হতো, আর সরকার ঢাকা কেন্দ্রিক চিন্তা না করে গোটা দেশটা কেন্দ্রিক চিন্তা করতেন তাহলে ঢাকা সারা বছর এরকম ফাঁকা থাকতো, আর দেশের অন্যান্য এলাকাতেও ঢাকার নাগরিক সুবিধাগুলো পাওয়া যেত!

-অয়ন
(engrauyon@live.com)


মন্তব্য

তাসনীম এর ছবি

ঈদের সময় ঢাকাতে গেলে আসলেই দারুন লাগে। অনেক চেনা মনে হয় শহরটাকে।

আপনার ছেলের কি চিকিৎসা হচ্ছে? আমি একটু জানতে চাই কেননা আমিও এই সমস্যা নিয়ে জন্মেছি। আমার যাবতীয় অপরেশন আর থেরাপি ঢাকা শহরেই হয়েছে - সেই সত্তরের দশকের শুরুতে। পরবর্তীতে মার্কিন দেশের এক অর্থোপেডিক ডাক্তার বলেছিলেন যে পৃথিবীর সেরা মেডিকাল ট্রিটমেন্টটা দিলেও ঠিক এই রকমই সারানো যেত - অর্থাৎ ঢাকা শহরে বিশ্বমানের চিকিৎসাই হয়েছিল। এখন নিশ্চয় আরও ভালো চিকিৎসা হয়। পায়ের কারণে আমাকে তেমন ঝামেলা হয় নি কখনো। আশা রাখছি আপনার সন্তানও এই সমস্যার ভুগবে না।

মন্তব্যটা একটু অফটপিক হয়ে গেল - ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

কালো কাক এর ছবি

সম্পূর্ণ হাতুড়ে পদ্ধতিতে চিকিৎসা করে আমার এক আত্মীয়ের ক্লাবফুট ঠিক হয়ে গিয়েছিলো। সকালবিকাল সরিষার তেল মালিশ আর যেকোন গ্রহণে (সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণ) মাটিতে পা সোজা করে চেপে ধরায়। গ্রামের লোকজন অবশ্য ম্যাসাজের কথাটা গায়েব করে দিয়ে একে গ্রহণের বিশেষত্ব বলে প্রচার করে।
কোন অপারেশন ছাড়াই শুধুমাত্র থেরাপি দিয়ে পায়ের অবস্থান ঠিক হয়ে যাওয়ার ঘটনাটায় বেশ অবাক হয়েছিলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

এখন পায়ে ব্যান্ডেজ(প্লাস্টার) করা হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে প্লাস্টার কেটে পা টেনে আরেকটু সোজা করে (ডাক্তারী ভাষায় কারেকশন করে) আবার প্লাস্টার করে দেয়া হচ্ছে। এভাবে পাঁচটা প্লাস্টারের পর পায়ে ছোট্ট একটা অপারেশন করতে হবে। খুবই নাকি ছোট্ট অপারেশন, অপারেশনের দুই/তিন ঘন্টা পর ছেড়ে দেবে। এরপর আরো দুই দফা প্লাস্টার করার পর যদি প্রয়োজন লাগে তবে স্পেশাল একটা জুতো দেবে মাস ছয়েক পরার জন্য। তারপর আর কিছু লাগবে না।

আমার এই কয়েকদিনের অভিজ্ঞতায় বলে ক্লাবফুট বেশ কমন একটা সমস্যা - বিশ্বব্যাপী কিনা জানি না, তবে বাংলাদেশে তো বটেই। আমরা যে ডক্টরকে দেখাচ্ছি, উনি প্রতি শুক্রবারে এক/দুইটা এরকম অপারেশন করছেন। এছাড়া ওখানে চিকিৎসা নেয়া কয়েকজন বাচ্চার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলেছি - ক্লাবফুটের ধরন অনুযায়ী কারো শুধু ম্যাসেজ করে, কারো ম্যাসেজ ও ব্যান্ডেজ করে আবার করো ক্ষেত্রে শুধু স্পেশাল জুতো দিয়েই ক্লাবফুট সেরে গেছে। বাচ্চার পা রিজিড হলেই সেক্ষেত্রে নাকি অপারেশন প্রয়োজন হয়।
ধন্যবাদ আপনাদেরকে।

তাসনীম, আপনার অভিজ্ঞতার কথায় অনেক স্বান্ত্বনা পেলাম, ধন্যবাদ।
-অয়ন

ইয়াসির এর ছবি

ক্লাবফুটের ছবি দেখে ঘাবড়ে গেছিলাম। একটু পড়াশোনা করে শান্তি লাগলো। তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাক সমস্যাটি এই প্রার্থনা করছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।

কালো কাক এর ছবি

সাধারণত ঈদের একদিন আগে এই ফাঁকা ভাবটা পাওয়া যায় ঢাকায়। এবার ছুটি আগে শুরু হওয়ায় কয়েকদিন বেশি উপভোগ করা যাচ্ছে। একবার ঈদের একদিন আগে মতিঝিল থেকে ২০ মিনিটে মিরপুর গিয়েছিলাম। ঢাকা শহর আসলে এতো বড় না, মনে হয়েছিলো সেদিন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিক, ঠিক।
-অয়ন

রামগরুড় এর ছবি

দুইটা ঈদ করার অভিজ্ঞতা আছে ঢাকায় -- ঈদের দিন সত্যি মনে হয় না ঢাকায় আছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

একদম ঠিক।
-অয়ন

শাব্দিক এর ছবি

রিকশা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দারুণ লাগছে হাসি

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

অতিথি লেখক এর ছবি

হুমম, লাগবারই কথা - কোন জট নেই, ঝামেলা নেই।
-অয়ন

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হ্যাঁ, আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ভাইয়া, পড়ার জন্য।
-অয়ন

ধুসর গোধূলি এর ছবি

গ্রামের মানুষ, ঢাকায় ঈদ করার ভিসাই পাইনি। একবার সুযোগ নিয়ে দেখতে হবে কেমন লাগে ঢাকায় ঈদ করতে!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।