ছোট্ট একটা ছেলে - একটা ছড়া পড়ে তার মনের মধ্যে খুব কৌতূহল জাগলো। ছড়ায় একটা যন্ত্রের কথা লেখা, যে যন্ত্রটার কথা এর আগে কখনো পড়েনি বা শোনেনি ছেলেটি। বাসায় কয়েকটাই বিশ্বকোষ ছিল (তখন বাংলাদেশ ও বিশ্বের ডায়রী ইত্যাদি নামে বের হতো বিশ্বকোষগুলো)। সবকয়টি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও যন্ত্রটার কথা কোথাও পেলো না ছেলেটি। তখন সে গিয়ে তার বড় ভাইকে জিজ্ঞেস করলো যন্ত্রটার কথা। ভাই শুনে তো হেসেই লুটোপুটি! কোনমতে হাসি থামিয়ে বললো এটা একটা কল্পনা, বাস্তবে এমন কিছু নেই। কিন্তু ছেলেটির বিশ্বাস হলো না সে কথা। অপেক্ষা করে থাকলো বাবার জন্য। বাবা বাসায় এলে তাঁকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো একই কথা। বাবা হাসলেন না ঠিকই, কিন্তু উত্তর দিলেন বড় ভাইয়ের মতোই! ছেলেটির এবার মন বেজার!! অনেকক্ষণ চুপ করে নিজের মনে চিন্তা ভাবনা করে সে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছুলো যে বাবা- ভাইয়া দুজনেই বোকা। যন্ত্রটা অবশ্যই আছে, কিন্তু এরা তা জানে না!! বড় হয়ে আমি নিজে খুঁজে বের করবো এই যন্ত্রটা কোথায় পাওয়া যায়!!!
সেই ছেলেটি ছিলাম আমি (না বললেও হতো, সবাই এতক্ষণে বুঝে ফেলেছেন নিশ্চয়ই)। আর যন্ত্রটা? ফুটোস্কোপ!!!
গল্পটার অবতারণা করার উদ্দেশ্য হলো বালকমনে সুকুমারের প্রভাব জানানো। এখন মনে হচ্ছে না করলেও হতো। এরকম বা এর কাছাকাছি অভিজ্ঞতা কম বেশী সবারই আছে। আজগুবি চাল বেঠিক বেতালের মাতাল রঙ্গেতে আমাদের ছেলেবেলা (এবং বড়বেলা তো বটেই, বুড়ো বেলাও হয়তো) রাঙিয়ে দেয়ার জাদুকর তো তিনিই।
আমরা সবাই-ই তো কোন না কোন সময় বন্ধু-বান্ধব কি ভাই-বোনকে রাগ করে বলেছি "তুই একটা হুঁকোমুখো হ্যাংলা" কিংবা "চেঁচাস নাতো চিল্লানোসোরাস কোথাকার"। বই পড়তে পড়তে খিদে পেলে চেঁচিয়ে গেয়ে উঠেছি "নিঝুম নিশুতি রাতে একলা শুয়ে তেতালাতে খালি খালি খিদে পায় কেন রে" আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই মায়ের পাঠানো এক থাল খাবার পুরেছি গালে!! কেউ চাপাবাজী করলে এখনো তো বলে উঠি "ব্যাটা জগ্যিদাসের মামার গল্প বলছে নাকি রে!"
আসলে সুকুমারকে নিয়ে লিখতে বসলে লেখার আর শেষ হবে না! এই সচলেই কত লেখা আছে তাঁকে নিয়ে। তিথীডোরের এই লেখাটি ঠিক পাঁউরুটি আর ঝোলাগুড়ের মতই মিষ্টি। আমার সবচেয়ে প্রিয় পোস্টগুলোর একটা হলো হিমুভাইয়ের সুকুমার সমগ্রর আড়ালে সুকুমারকে ও শৈশব নিয়ে স্মৃতিচারণ। সুমনদার এই লেখাটির কথাই বা ভুলি কী করে! নর্স দেবতা ওডিন তো আবার পড়ো নামে সিরিজই শুরু করে দিয়েছিল। সুকুমার রায়কে নিয়ে দু এক ছত্র লেখেনি এমন কোন বাংলাভাষী লেখক/ব্লগার খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।
যে বাল্যকালে সুকুমার পড়েনি, তার তো জীবনের "ষোল আনাই মিছে"। এই মানুষটি এক হাতে আমাদের শৈশব-কৈশোরকে রাঙিয়েছেন আবার জীবজন্তু, বা বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়কে সহজ করে লিখে মনে কৌতূহল জাগিয়েছেন। থর, ওডিন (সচলরা নন, দেবতারা) সম্পর্কে প্রথম জানা তো সুকুমার পড়েই। সুকুমারই তো প্রথম জানিয়েছেন অর্ফিয়ুসের বেদনাবিধুর গল্প কিংবা হারকিউলিসের বীরত্বের কথা। সূক্ষ হিসাব বা সামান্য ঘটনার কথাও যাদুকরী ভাষায় শুনিয়েছেন তিনিই। শুধু হাসি ঠাট্টা নয়, সুকুমার রায় ভরিয়ে তুলেছেন বালক মনের সব দিক, জাগিয়ে তুলেছেন কৌতুহল এবং দেখিয়ে দিয়েছেন কোন পথে গেল নিবৃত্ত করা যাবে সে কৌতূহল!
আমার, না ভুল হলো, আমাদের, প্রতিটি বাঙালীর, শৈশব কৈশোরকে আশ্চর্য আনন্দে ভরপুর করে তোলা এই দুষ্টু প্রিয়জনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
শুভ জন্মদিন প্রিয় সুকুদা।
মন্তব্য
শুভ জন্মদিন প্রিয় সুকুমার। শুধু শৈশব না জীবনটাকেই অনেক আনন্দমুখর করে রেখেছেন তিনি।
শুধু শৈশব না জীবনটাকেই অনেক আনন্দমুখর করে রেখেছেন তিনি - সত্য।
____________________________
আমার পছন্দের ছিল 'পাগলা দাশু'
ওর সাথে আপনার আড়ি বুঝি, তাই বাদ্দ দিয়ে গেছেন, মনে করিয়ে দিতে এলাম
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
সুকুমারের সব লেখার উদাহরণ টানতে গেলে তো আরেকটা ডাবল ডিমাই সাইজের বই লেখা লাগবে!
সুকুমার সাগর থেকে কয়েক ফোঁটা জল নিয়েছি বলতে পারেন। দাশুর সাথে আড়ি নিলে জীবনে আর থাকে কি? পাগলা দাশু আমারও খুব প্রিয়।মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
____________________________
হক কথা
____________________________
শুভ জন্মদিন প্রিয় সুকুমার, তুমি না থাকলে জীবনটা এত মিষ্টি হত না
facebook
হ
____________________________
সুকুমার রায় এর জন্মদিনে শুভেচ্ছাসহ শ্রদ্ধাঞ্জলী ।
ধন্যবাদ , শুভকামনা রইর।
তুহিন সরকার।
____________________________
আমার মনে হয় বাঙালি পাঠকের শৈশব ভাগ করে নেয়া যায় দুটো ধরনে।
ক)যে ছেলেবেলায় সুকুমার জড়িয়ে ছিলেন না।
আর খ) যে ছেলেবেলা হ- য- ব- র-ল এর রঙে রাঙা।
এখনো যে কাশতে কাশতে, হাসতে পারি.. ভালবাসতে.. নিজের কাছে নিজের-ই বিস্ময়!
হয়তো এই লাল মলাটওলা বইটা নিয়ে সেই নিখাদ শৈশব কেটেছিল বলেই..
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
একমত
____________________________
এত অল্প আয়ুর জীবনে এত বিপুল কাজ! সুকুমার-এর কোন তুলনা পাওয়া কঠিন।
লেখা খুব ভাল লাগল প্রোফেসর!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধন্যবাদ।
____________________________
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আপনাকেও
____________________________
নতুন মন্তব্য করুন