এইচ এস সি পাশ করার পরে একটা যুদ্ধের মধ্যে পড়ে গেছিলাম - ভর্তি যুদ্ধ। আমাদের কাছে সেটা সত্যিকার অর্থেই যুদ্ধ ছিল কারণ প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরম তোলা, ফরম জমা দেওয়া এবং ভর্তি পরীক্ষার তারিখ পড়েছিল মোটামুটি একই সময়ে। আমাদের তো মাথায় হাত দেয়ার মত অবস্থা! তারপর রণক্ষেত্রকে যেমন বিভিন্ন ফ্রন্টে ভাগ করে সেনাপতিদের দায়িত্ব দিয়ে দেয়া হতো, তেমনি ভাবে আমরা একেকজন বন্ধু একেকদিকে ছুটলাম - সবাই সবার জন্য ফরম তুলবে এবং জমা দেবে। এই করতে গিয়েও অনেক নিদারুন ব্যাথাতুর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল আমাদের। আমার এক বন্ধু তো খিদের চোটে একটা হার্ডওয়্যারের (লোহালক্কড়ের, কম্পিউটারের নয়) দোকানে গিয়ে বার্গার চেয়ে বসেছিল - ক্ষুধার রাজ্যে সব দোকানকে কনফেকশনারি মনে হয়!
ফরম জমা দেওয়ার পালা শেষ করার পর আমরা পড়েছিলাম আরেকটা যুদ্ধে! যেন ফুটন্ত কড়াই থেকে গিয়ে পড়লাম জ্বলন্ত চুলায়! ভর্তি পরীক্ষার তারিখও পড়েছে পাশাপাশি! ঢাকায় পরীক্ষা শেষ করেই দৌড়াও রাজশাহীর বাস ধরতে, আবার সেখানে পরীক্ষা দেয়া শেষ হতে না হতেই ট্রেন ধরে খুলনা! মাঝখানে সিলেটে কোনরকমে পৌঁছে পরীক্ষা দিয়ে আবার ফেরো ঢাকায় - ভিন্ন একটা ইউনিটের পরীক্ষা আছে! এ যেন এক অন্তহীন ছোটাছুটি! এর মধ্যে আবার আছে টিকেট ম্যানেজ করার যন্ত্রণা! এত ঝামেলার ভিতরে আবার পড়াশুনা করতে হবে তো - এত দৌড়াদৌড়ি করে আর এন্তার টাকা খরচ করে লাভ কী হবে যদি পরীক্ষা ভালো না দেয়া যায়? আমি নিজেকে অসম্ভব ভাগ্যবান মনে করেছিলাম এই যুদ্ধের শুরুতেই প্রকৌশল পড়ার সুযোগ পেয়ে যাওয়ায়! বাকী অনেক জায়গাতে আবেদনপত্র জমা দিয়েও পরীক্ষা দিতে যাইনি - বাবার কটা টাকার শ্রাদ্ধ হলো হোক, আমরা (আমি আর বাবা) তো বাঁচলাম তাঁতের মাকুর মত এপাশ ওপাশ ছুটাছুটি থেকে! কিন্তু আমার বন্ধুদের দেখেছি - ঐ কটা মাস তাদের ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে তা ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না!
অথচ যদি একটা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকতো তাহলে আমাদের, অন্য ছেলেমেয়েগুলোর, জীবনটা কি অন্যরকম হতে পারতো না?
সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কথা প্রথম পড়েছিলাম জাফর ইকবাল স্যারের লেখায়। খুব একটা আশাবাদী হতে পারিনি কারণ ততদিনে দেখে ফেলেছি অর্থলিপ্সু সামাজিক জীবদের লালচ। অসীম লালসা চরিতার্থ করার পথে কোন বাধা তারা সহ্য করবে না বলেই মনে হয়েছিল। আজ সকালে সেই আশংকা বাস্তবে রূপ নিলো একটা সংবাদের আদলে! খুব মন খারাপ করে তাকিয়ে ছিলাম এসএমএসটার দিকে, তখন আমার ছেলের প্রশ্ন কী হয়েছে।
আমার আট বছরের ছেলে জাফর ইকবালের লেখার খুব বড় ভক্ত। ওকে কীভাবে বলবো একদল নরপশুর সাথে যুদ্ধ করে শেষমেষ আত্মসম্মান বজায় রাখার জন্য জাফর স্যার পদত্যাগ করেছেন! ওকে কীভাবে বলবো ওর পাপারা যেভাবে ভর্তিযুদ্ধে সামিল হয়েছিল, ওদেরকে যেন সেটা করতে না হ্য় এই উদ্দেশ্যে জাফর স্যারের এই লড়াই, যে লড়াই এখন এক ভিন্ন মোড় নিয়েছে! আমার তো ইচ্ছে করছে ওকে সাথে করে নিয়ে চলে যাই সিলেটে - শাবিপ্রবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকি! সবাইকে বলি এই যে শিশু এর ভবিষ্যতের কথাটা একবার ভাবুন, তারপর আপনার চিন্তা করে দেখেন আপনারা যা করছেন তা ঠিক কিনা!
দেশব্যাপী একটা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু করা এখন আমাদের পরবর্তী লড়াই। আসুন সবাই মিলে এটার জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে থাকি, যে যে অবস্থানে আছি সেখান থেকেই, যার সাধ্যে যা আছে তা দিয়েই। এই লড়াইয়ে জেতাটাই হবে জাফর ইকবাল স্যারকে আমাদের শ্রদ্ধা জানানো।
মন্তব্য
অনেকে স্ট্যাটাস দিচ্ছিল: "জনপ্রিয়তা পাবার জন্য উনার এই নাটক"
আরে বাবা, ওঁর যে জনপ্রিয়তা আছে সেটা সবার মন থেকে এসেছে, তিনি তো আর অনন্ত জলিল না যে জনপ্রিয় হয়ে কাটতি বাড়াবেন। ওঁর বই সমানে পেলে যারা কেনার ঠিকই কিনবে। অনেকেই হয়ত জাফর স্যারকে পছন্দ করেন না, তবে এসব সস্তা পাবলিসিটি স্ট্যান্ট করার মত লোক যে তিনি না এটা তাদের বেশিরভাগ লোকও মানবে।
অনেকে আরও লিখছিল: "এটা নাটক, উনি আবার ঠিকই ফেরত আসবেন"
আরে, নাটক করে ফায়দা কি? তিনি যদি মনে করেন ফিরে আসতে পারেন, বা না ও পারেন।
সেটা পরিস্থিতি ঠিক করে দেবে। দেশের রাজনৈতিক নেতাদের নাটক দেখে সবকিছুকে নাটক মনে
হলে বলতে হবে, নিজের মাথাটা আগে খাটান।
শুভেচ্ছা, প্রফেসর
হবে
ধন্যবাদ। ভালো লাগছে যে আমরা দেরীতে হলেও বুঝেছি - শুভের জয় হয়েছে।
এখন দেশব্যাপী সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু হলে সবারই উপকার হবে মনে হয়।
____________________________
আশা করি সুস্থমত এই কাজটা করে উঠতে পারবেন উনি!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধন্যবাদ। আপনার আশা বাস্তবায়িত হোক।
____________________________
____________________________
আমাদের দেশে এমন লোক খুব কমই পাবেন, যারা মানুষের সাধারণ মানুষের হয়ে কথা বলেন। জাফর স্যার তাদেরই একজন। পুরো দেশের ভর্তি পরীক্ষা গুলো যদি একসাথে সমন্বয় করা যেত তাহলে অনেক ঝামেলা, পরিশ্রম বেঁচে যেত। এফেক্টিভনেস বাড়ত। ওয়েল রিটেন আর্টিকেল। উই নিড টু গিভ স্যার সাম গুড সাপোর্ট ্্্ রনীল
ধন্যবাদ
____________________________
আমার নিজের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা কম... এমন সময় পরীক্ষায় এসেছিলাম যে হাতে পরীক্ষাই বাকি ছিল ১/২ টা... কিন্তু দৌড়াদৌড়িটা টের পেয়েছি আমার পরের জনদের দেখে... আজ হোক কাল হোক এটা করতেই হবে... তাহলে এখনই নয় কেন?? চাইলে এই মুহূর্তে অন্তত প্রধান দুটি গুচ্ছ হিসেবে "প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়" গুলোকে আর নতুন "বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়" গুলোর পরীক্ষা "মেডিক্যাল" এর মত সমন্বিত করে ফেলা যায়... এদের কারিকুলাম কাছাকাছি বা অভিন্ন
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
একমত
____________________________
ঘ্যাচাং
____________________________
যারা স্যারের ব্যাপারে নেতিবাচক পোস্ট দেয় তারা কারা তা আমরা সবাই জানি। স্যারের লেখা কারও স্বার্থ চিন্তা থেকে লেখা না হলেও, প্রগতিশীলতা প্রসূত হওয়াতে ওগুলো কাদের বিরুদ্ধে যায় তা আমরা সবাই জানি। যেখানে ঐসব শক্তি বিনা অপরাধে নির্দোষ বাস যাত্রীদের পুড়িয়ে মারতে দ্বিধা করে না, সেখানে এসব পোস্ট দেয়া তো নস্যি। ঐসব হাগু-ছাগুদের গুরুত্ব দিয়ে লাভ নেই। স্যারের স্থান বাংলার প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী হয়ে আছে, থাকবে এবং দিন দিন আরও দৃঢ় হতেই থাকবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্যারে প্রতিবাদ চিরজীবি হোক, আমাদের নূতন প্রজন্ম স্যারে অনুপ্রেরণায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে আর প্রগতিশীল হতে শিখুক।
তারপরও আমরা যে যে অবস্থানে আছি, সেখান থেকেই চেষ্টা করে যেতে হবে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
____________________________
নতুন মন্তব্য করুন