সকালে এটা লেখার সময়ও বৃষ্টি ছিল। আকাশ চুঁইয়ে গড়িয়ে পড়া পানির ধারা দেখে মনে হচ্ছিল না সহসা থামার কোনো ইচ্ছে আছে তার। তবে বিকেল না পেরোতেই অবশেষে থেমে গেছে বৃষ্টি। কে জানে কখন সে ফিরবে আবার! ফেরা না-ফেরার সেই প্রতীক্ষার পেন্ডুলামে দুলতে থাকা বৃষ্টিদিনের কিছু কথা...
আজ শ্রাবণের ২৬তম দিন। কাগজেকলমে শরৎ আসতে আর মাত্র ৫ দিন বাকি। পুরো বর্ষায় সেভাবে বৃষ্টির দেখা না মিললেও এই শেষবেলায় নগরীর মাথার উপর আকাশ জুড়ে মেঘ আর বৃষ্টির খেলা এখন। নিজের সাম্রাজ্য ছাড়তে বর্ষার যে ঘোরতর আপত্তি, অথবা বিদায়লগ্নে যে বিষণ্ণতা জমা হয়েছে, সেটা প্রকাশ করতেই হয়ত গত দুদিন ধরে এই অঝোর বর্ষণ। আর তাতে পথঘাট ডুবেছে। মাখামাখি হয়েছে কাদায়। রোমান্টিসিজমে আক্রান্ত যুগলরাও বৃষ্টি উপভোগ করতে করতে হয়ত ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সে ব্যাপারে অবশ্য নিশ্চিত করে বলা যায় না কিছু। তবে এই বৃষ্টির রাজত্বে নগরীর কাকরা যে খানিকটা বিপর্যস্ত, তা বেশ টের পাওয়া যায়। পাশের বাসার কার্নিশের কোনায় মাঝেমাঝেই জবুথবু হয়ে এক জোড়া কাককে বসে থাকতে দেখা যায়। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সেখানে ওদের আশ্রয় নেয়া। কখনও কখনও দুয়েকজন সঙ্গী বাড়ে, বা কমে। ওদের মনে কোনো রোমান্স আছে বলে চোখে পড়ে না কিছু। তবে দেখে মনে হয় যেন সময় থমকে গেছে সেখানেই। অলস সময়ক্ষেপণের ফাঁকে মৃদু স্বরে ডেকে ওঠে ওরা মাঝেমাঝে। হয়ত অনুযোগ জানায়... মেঘ-আকাশ-বৃষ্টি অথবা প্রাণহীন এই কংক্রীটের জঙ্গলের কাছে।
তারপরও জনজীবন থেমে নেই। বৃষ্টির পাশাপাশি রাস্তায় মানুষ আর গাড়ির ঢল। চারপাশে কেমন মন্থর এক আবহ। প্লাস্টিকের আচ্ছাদনে কোনোরকমে মাথা ঢেকে রিকশাওয়ালাদের নানান গন্তব্যে যাত্রী নিয়ে ছুটে চলা। সারি বেধে অফিসগামীদের বাসের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষা। রাস্তার ধারে জমে থাকা পানিতে পথশিশুদের উচ্ছল দাপাদাপি। তাপমাত্রা হ্রাসের স্বস্তির বিনিময়ে আর্দ্রতা আর যাত্রাপথের ভোগান্তি। এসব নিয়েই সারাদিন চলতে থাকে বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা। কখনও মেঘের ফাঁকে এক চিলতে রোদের পরশ মেলে। পরক্ষণেই হয়ত আবার ঘোর সন্ধ্যার আঁধার। প্রবল বর্ষণে পানির তোড়ে উপচে পড়ে নালা। উন্মোচিত করে মোহনীয় বর্ষার ভিন্ন পরতের কদর্যতা।
তারপরও বর্ষা ভালো লাগে। ভালো লাগে বৃষ্টি। শ্রাবণের অলস প্রহরগুলো। ভালো লাগে বৃষ্টিবিধৌত এই ইটকাঠের নগরী।
শিরোনামটি হুমায়ূন আহমেদের একটি বইয়ের নাম থেকে নেয়া, যা পরবর্তীতে একই নামের চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়েছে।
মন্তব্য
আমাদের এদিকেও কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি। এমন অদ্ভুত নাছোড়বান্দা বৃষ্টি গত কয়েক বছরে দেখিনি।
আমার শ্রাবণ-বৃষ্টি দিন পছন্দ ...
প্রায় দুই সপ্তাহ শ্রাবণ মেঘের খপ্পরে পড়ে ৯৪-৯৬% আর্দ্রতায় ঘেমে-নেয়ে ভাপে সেদ্ধ হয়ে কাজ করে এই বৃষ্টির দেখা পেয়েছি আমরা... বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টি...
ঢাকা শহরে আধা ঘন্টার বৃষ্টিতে হাঁটুজল জমে, সেই জল আবার ড্রেইনের গু-পানি উপচানো পানি...
ইদানীং ব্যক্তিগত গাড়ি বা ট্রান্সপোর্ট না থাকলে ঢাকায় বর্ষায় চলা যে কী কষ্টের তা শুধু ভুক্তভোগীরা জানেন।
আমাদের এই ছোট শহরটায় তেমন না। এইরকম টানা বর্ষণ শেষ স্কুলে পড়তে দেখেছি মনে হচ্ছে যেন, আসলে তা না, কলেজ-ইউনিভার্সিটিতেও দেখেছি। কিন্তু এবার যে কত বছর পরে... আআআআহ্! কী শান্তি... অসম্ভব ভালো একটা সপ্তাহ গেছে মনে হচ্ছে, প্রকৃতি এত সদয় না হলে যেই সপ্তাহে টিকে থাকা হয়তো অনেক, অ-নে-ক কষ্টের হতো... বিরক্ত হতে পারিনি তাই এবার... আকাশ যখন তোমার হয়ে কান্নাকাটি করে দেয়, তখন বিরক্ত হওয়া যায় কি...?
আজকে বিকালে সূর্যের হাসিটাও ভালো লেগেছে অবশ্য, বহুদিন পরে সচলায়তনে অপ্রের লেখা পাওয়ার মতোই অনেকটা...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আপনাকে যেন চেনা চেনা লাগে!
ওয়েল্কাম্ব্যাক!!
ছবিটা কি বৃষ্টিভেজা জানালার কাচের এপাশ থেকে নেয়া?
শ্রাবণকে ধন্যবাদ। যাবার বেলায় অঝোরে ঝরছে বলে...
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ছবিটা অফিস যাবার পথে চলন্ত গাড়ির ভেতর থেকে তোলা।
বিজিবি ভাই আপনি যে সচল তা তো ভুলেই গেছিলাম!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
কত অনুরোধ-উপরোধ, শেষটায় শ্রাবণ মেঘের জলে অপ্রর মনটা ভিজল।
হাজার বছর পরে তোমার লেখা মিলল---
ওয়েল্কাম ব্যাক বস, আশা করি পরের লেখার জন্য আমাদের আরেকটা শ্রাবণের অপেক্ষা করতে হবে না।
সবটুকু ভালো লাগা অটুট থাক
আপনি লেখেন নাকি
আমিতো ভাবছিলাম আপনি খালি মাঝে মাঝে সচলে লগইন করেন
আর বৃষ্টিদিনে রোমান্টিসিজমের কথা পড়ে মনে পরল একদা একজন বলেছিল বৃষ্টির সময় নাকি তার মন ভাল হয়ে যায় কারণ বৃষ্টিতে ভিজবে বলে আর আমি বলছিলাম আমারো মন ভাল হয় তবে তা বৃষ্টিতে আরাম করে ঘুমান যাবে বলে
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
কী চমৎকার করেই না বিদায়ী বর্ষাকে এঁকেছেন নগরের 'পরে!!!!! আপনারা নিয়মিত কেন যে লেখেন না!!!!
_____________________
Give Her Freedom!
মলম টেস্ট। মলম লাগবেনি মলম।
বাহ্... ভালো লাগছে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বৃষ্টির জন্যই ১৫ মাস পরে তোমার দেখা মিলল। এটাও শ্রাবণ দিনের কৃতিত্ব।
বর্ষা এমনিতেই প্রিয়, ভালো লাগলো। এই বর্ষার কিছু অংশ এই দেশে পেলে ভালো হয়, গরমে পুড়ছি আমরা, বৃষ্টিহীন খরতাপে।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আমার বর্ষাপ্রেম ভয়াবহ, মেঘ ডাকতেই মাথা গুলিয়ে যায়....
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর: ছবিটা এরকম এক মেঘলা দিনে বাড়ির ছাদে তোলা।
শতায়ু হতে চান না, ঠিকাসে। তবে লেখায় নিয়মিত হোন।
পোস্টে
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আপনার তোলা ছবিটা দারুণ!
শ্রাবণ চাই শ্রাবণ। লেখা এত ছোট কেন হে?
একটা গান আছে না, "আমি বৃষ্টি চাই"! ঐযে, "বৃষ্টি বহুদূরে, বৃষ্টি শহরে" কথাগুলো। আপনার লেখাটা পড়ার পরে ঐ গানটার কথা মনে হলো, তাই এখন শুনছি।
মিয়া, অমাবস্যার চাঁদ আসমানে উঠলেও তো এর চেয়ে বেশি আলো দেয়। আপনে এদ্দিন পর আইসা বিষটিবাদলার কথা কয়ে গেলেনগা। বলি, লোকমুখে কীসব রটে, সেগুলার তো সুরাহা করলেন না!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
সুন্দর লেখা।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
ভালো লাগলো শ্রাবণ কথন এই নিন গানটা শোনেন.....
.
http://youtu.be/pdpn9y8f5o8
চমৎকার গানটার জন্য ধন্যবাদ।
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
তাহলে বর্ষাই হোক বারেবারে...
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
পাঠ এবং মন্তব্যের জন্য আপনাদের প্রত্যেককে আন্তরিক ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকুন।
বর্ষা চলে গ্যালেও এ পোস্টের দ্বারা তার রেশ পেলাম
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
নতুন মন্তব্য করুন