প্রচলিত অর্থে টাকাপয়সার প্রতি আমার আগ্রহ বা মায়া আসলেই কম। নিজস্ব কিছু নীতি আছে অবশ্য। সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করি। সবসময় পারি যে, তা-ও না। তবে সেটা নিয়ে আফসোস হয় না। ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ের তাড়না অনুভব না করায় এই বিষয়েও চূড়ান্ত অনীহা। কেউ কেউ বলে দূরদৃষ্টির অভাব। সেটা শুনেও আমি বোকার মতো হাসি। তবে সঞ্চয় যে একেবারেই নেই, তা কিন্তু না। চাকরিতে ঢোকার দেড় বছরের মধ্যে একটা সঞ্চয়পত্র কিনেছিলাম। "নির্দিষ্ট পরিমাণ" বিনিয়োগ থাকলে নাকি অতিরিক্ত আয়কর দিতে হয় না, সেজন্যই মূলত কেনা। কয়েক মাস আগে হঠাৎ করেই সঞ্চয়পত্রটার কথা মনে পড়ল। তার আগ পর্যন্ত সেটা নিয়ে কোনোরকম চিন্তাও আসে নি মাথায়। বাসায়ই কোথাও না কোথাও রেখেছি, এটা মোটামুটি নিশ্চিত, তবে ঠিক কোথায় যে রেখেছি, তা মনে পড়ছিল না। শুধু নিশ্চিত ছিলাম খুঁজলেই পাওয়া যাবে। ওদিকে গড়িমসি করে খুঁজতেও ইচ্ছে করে না। এভাবে এক মাস কাটলো। তারপর আরেক মাস। তারপর মনে হলো এবার একটু খোঁজাখুঁজি করা দরকার। কারণ কবে যে ওটার মেয়াদ শেষ হবে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলাম না।
দুঃখজনক কিংবা মজার ব্যাপার হলো, ঘরের বিভিন্ন জায়গায় নিজের তৈরি ছোট ছোট কাগজের পাহাড় ঘেঁটেও সঞ্চয়পত্রটা পেলাম না। প্রথম দফায় ব্যর্থ হয়ে কয়েকদিন বিরতি দিয়ে আবার শুরু করলাম খোঁজাখুঁজি। এবারও না পেয়ে ভাবলাম হয়ত অফিসে রেখেছি। খুঁজলাম। সেখানেও নেই। এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দিয়ে ধরেই নিলাম যে ওটা আর পাওয়া যাবে না। তারপর গেলাম ব্যাংকে।
হারানো সঞ্চয়পত্র পুনরায় ইস্যু করাতে অনেক নিয়মকানুন। সবার আগে ব্যাংকে একটা দরখাস্ত করতে হবে সঞ্চয়পত্রের নগদীকরণ বন্ধের জন্য। এতে করে অননুমোদিত কেউ হাতে পেলেও সেটার মূল্য থাকবে না কোনো। এরপর থানায় জিডি করতে হবে। প্রচার বেশি, এমন দুইটি সংবাদপত্রে "হারানো বিজ্ঞপ্তি" দিতে হবে। দেড়শ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষরসহ নিজের ছবিযুক্ত একটি এফিডেভিট জমা দিতে হবে। আর ব্যাংককে ইনডেমনিটি বন্ডের জন্য দিতে হবে দেড়শ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপার। এরপর বৈধ কোনো পরিচয়পত্রসহ সবকিছু ব্যাংকে জমা দিতে হবে। ব্যাংক তখন সর্বোচ্চ প্রায় চল্লিশ দিন সময় নিবে সঞ্চয়পত্রটির একটি প্রতিলিপি ইস্যু করতে।
আমি যে শুধু বোকা বা বৈষয়িক বুদ্ধি কম, তা না, আমি রীতিমতো ঈর্ষা করার মতো একজন অলস মানুষ। পৃথিবীর সমস্ত ঝামেলা দূরে রাখার আপ্রাণ, এবং বলাই বাহুল্য, বৃথা চেষ্টা করি সবসময়। ব্যাংকে দাঁড়িয়ে তখন মনে হচ্ছিল এটা নিশ্চয়ই খুব খারাপ কোনো একটা স্বপ্ন! নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা আর কি। একে তো সঞ্চয়পত্র হারানোর জন্য নিজের উপর অসম্ভব বিরক্ত, তারপর আবার নিয়মকানুনের যে বহর দেখলাম, তাতে মাথা প্রায় খারাপ হবার যোগাড়! প্রথম কাজটা অবশ্য খুব সহজেই হয়ে গেল। তাৎক্ষণিকভাবে দরখাস্ত একটা লিখে ব্যাংকে জমা দিয়ে দিলাম। এরপর জিডি করে ফেললাম সেদিনই। সেখানে হলো আরেক কাহিনি। থানার ভদ্রলোকটা একগাদা কথা শুনিয়ে দিলেন। জিডিতে কেন বাবা-মায়ের নাম দিলাম না, বাসা মিরপুর কিন্তু গুলশান থানায় কেন গিয়েছি, স্বাক্ষর কেন ইংরেজিতে, বাংলা ভাষার জন্য রক্ত দিয়ে কী লাভ হলো তাহলে, ফেব্রুয়ারি মাসে মঞ্চে উঠে বাংলায় গান গেয়ে আবার ইংরেজি নিয়ে মাতামাতি করি নিশ্চয়ই, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কী, কোথায় চাকরি করি, কোম্পানির কাজ কী, ইত্যাদি ইত্যাদি। সবকিছুর পর আমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যে মূল্যহীন, তা বেশ পরিষ্কার ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন তিনি। দুয়েকটা কথার জবাব দিতে গিয়ে তার পালটা কয়েক পশলা কথা শুনে আগ্রহ হারিয়ে বাকি সময়টা চুপচাপই থাকলাম।
মূল সমস্যার সম্মুখীন হলাম এরপর। প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট কোথায় পাবো, সেই চিন্তা। একজনের কাছে খোঁজ পেয়ে পরদিন গেলাম গুলশান-২ সিটি কর্পোরেশনের অফিসে। কিন্তু সেখানে কোনো ম্যাজিস্ট্রেট নাকি বসেন না। ওরা পাঠালো উত্তর নগর ভবনে। সেখানেও একই অবস্থা। ওরা জানালো উত্তরার দক্ষিণ নগর ভবনে ম্যাজিস্ট্রেট থাকলেও থাকতে পারেন। শেষ পর্যন্ত জানা গেল জজ কোর্টে গেলে ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়া যাবে অবশ্যই। কাউকে অনুরোধ করলে এবং সব কাগজপত্র দেখালে তিনি হয়ত এফিডেভিটে স্বাক্ষর করে দিবেন।
এখনও পর্যন্ত সেই স্বাক্ষর নেয়া হয় নি। এফিডেভিট তৈরি করে বসে আছি। এটা নিয়েও আরেক কাহিনি। এফিডেভিটে কী লিখতে হবে, জানি না। নোটারি করে যারা, বনানীতে এরকম একটা অফিসে গেলাম। সেখানকার এক ভদ্রলোক ব্যাংক থেকে একটা টেমপ্লেট নিয়ে আসতে বললেন। ব্যাংকে যোগাযোগ করলাম। ওদের কাছে নাকি টেমপ্লেট নাই কোনো। তবে যে ভদ্রলোকের কাছে সঞ্চয়পত্র নগদীকরণ বন্ধের দরখাস্ত দিয়ে এসেছিলাম, ঘটনাক্রমে তিনি পরিচিত চেহারা ছিলেন, কারণ তাকে আগে গুলশানের একটা শাখায় দেখেছিলাম। এটা বলতে তিনিও খুশি হয়ে একটা ব্যক্তিগত সুবিধা দিয়ে সাহায্য করলেন। গুলশান শাখার এক অফিস সহকারীর নাম বলে দিলেন। তার সাথে যোগাযোগ করলে নাকি পুরাতন কোনো ফাইল থেকে সব কাগজপত্রের কপি পাওয়া যাবে। গেলাম। তাকে খুঁজে বের করলাম। প্রায় আধা ঘণ্টা বা চল্লিশ মিনিট পর যখন বের হলাম ব্যাংক থেকে, আমার কাছে তখন পুরো এক সেট কাগজ। ফটোকপি করা। এফিডেভিটের টেমপ্লেটটা ওখান থেকেই পাওয়া গেল।
সংবাদপত্রে "হারানো বিজ্ঞপ্তি" দেয়াও তুলনামূলক বেশ সহজেই হয়ে গেল। প্রথমে গিয়েছিলাম গুলশানের একটা দোকানে। আমার অফিস যেহেতু ওখানেই। সেখানে ওরা হিসেব করে জানালো প্রতিটাতে খরচ পড়বে প্রায় বারোশো টাকা। তাও আবার শ্রেণীবদ্ধ অংশে। আর যদি ইঞ্চি হিসেবে দিতে চাই, তাহলে আড়াই হাজার টাকার মতো লাগবে। "প্রথম আলো"-তে মনে হয় তিন হাজারের উপর। শুনে রীতিমতো অবাক হলাম। এটা যে এত খরুচে ব্যাপার, ধারণা ছিল না। অন্য জায়গায় খোঁজ নিলাম। শেষ পর্যন্ত এক বন্ধুর সাহায্য নিয়ে মিরপুরের এক এজেন্ট পাওয়া গেল। তার কাছেই দিয়ে দিলাম। সব মিলিয়ে এক হাজার টাকা বেঁচে গেল।
এতকিছু যে হয়ে গেছে, বাসায় বিস্তারিত কিছুই বলি নি। শুধু শুধু চিন্তা করবে ভেবে। মজার ব্যাপার হলো, সকালে বাসা থেকে কল করলো। তখন আমি অফিসে। পত্রিকায় "হারানো বিজ্ঞপ্তি" চোখে পড়ায় কল করেছে। পত্রিকার এই অংশটাও যে কেউ পড়তে পারে বা এটা যে এভাবে বাসায় ধরা পড়ে যাবে, একদমই ধারণা করতে পারি নি! কোনোভাবে এটা-সেটা বুঝিয়ে এড়ানো গেল অবশ্য। তবে সবচেয়ে মজার ঘটনা ঘটলো রাতে। আমার সেই হারিয়ে যাওয়া সঞ্চয়পত্র খুঁজে পাওয়া গেল। বাসায়। এবং আমার নিজের ঘরেই। যা নিয়ে এত দৌড়াদৌড়ি এবং এত এত কাহিনি, সেটা পুরোটা সময় হাতের নাগালেই ঘাপটি মেরে ছিল এভাবে!
এতকিছুর পর বোকার মতো হাসি দেয়া ছাড়া আর কীই বা করার থাকে!
মন্তব্য
আপনার ক্রেডিট কার্ড ফার্ডের গল্প ভাল্লাগেনা কইয়া শুনায়ে দিলেন সঞ্চয়পত্রের গল্প। আপনারে ধইরা ঝাঁকি দিলাম
আমাদের বাইকে কইরা উইড়া যাওন হৈলোনা তাইলে?
আরে মিয়া, যে ঝামেলা পোহাইতে হইতেসে এইসব নিয়া, সেইগুলা কি আর ভাল্লাগতেসে নাকি?
ক্রেডিট কার্ড নিয়াও আরেক গল্প আছে। আরেকদিন বলবোনি।
আর বাইক-উড্ডয়ন হবে তো! কল সেন্টারে যোগাযোগ করসিলাম রাতে। দরখাস্ত দেয়ার ৩ থেকে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে নাকি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সঞ্চয়পত্রটা বাতিল করে দেয়। আমারটাও এতদিনে বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। ওরা বলতে পারলো না এই ক্ষেত্রে কী করতে হবে। ব্যাংকে যোগাযোগ করতে বললো। যেহেতু এত দৌড়াদৌড়ি করলামই, ভাবতেসি "হারায়ে গেসে" ধরে নিয়ে বাকিটাও করে ফেলি। বাকি বলতে এখন খালি ওই এক স্বাক্ষর নেয়াই।
আমাকেও মাঝে মাঝে এরকম বোকার মত হাসি দিতে হয়। আমার বাসার মানুষজনের ধারনা আমার মত আর একটা বোকা গুগল সার্চ দিয়েও পাওয়া যাবে না।
আমাকে আপনার বাসায় একদিন নিয়ে যান, তাহলে আপনার বাসার মানুষজনের ভুল ধারণা ভাঙবে।
ভাল বুদ্ধি। কে বলল আপ নি বোকা?
খাইছে ধরা!
তবে আমিও চোখের সামনে জিনিস হারিয়ে সারা দিন খুঁজি।
facebook
আমি যে বোকা না, এইটাই বা কে বললো?
বোকা মানুষের একাউন্ট সহজে হ্যাক হয়
অনেক অনেক দিন পরে আপনার লেখা পড়ে ভাল্লাগলো ম্যান। আপনি প্রায় আমার মতই অলস জানি। লিঙ্কিং অফিসার হিসেবে অবশ্য আপনি অসাধারণ
খালি অ্যাকাউন্ট?! বোকা মানুষদের সাথে যে আরও কত কী হয়!
ওই কাজটা করতে খারাপ লাগে না, সময়ও বেশি লাগে না। যেগুলাতে সময় লাগে, ওগুলা আলসেমি করে আর খোঁজা হয় না।
ভালোই, এই সুযোগে ফাঁকিবাজের তালিকা থেকে নাম কাটিয়ে ফেললে! আর তুমি দাবী করো তোমার বুদ্ধি কম!
ফাঁকিবাজের তালিকায় নাম ছিল নাকি? দেখিই নি!
আমিও বোকা মানুষ আপনার থেকেও হয়ত অনেক বেসি পরিমানে :(। ভালো লাগলো লেখাটা....নিজেকে বোকার জগতে একাকী মনে হচ্ছেনা
সেটাই।
পাঠ এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
এগুলি সবই হচ্ছে আরো তিনচার বছর পর পোস্ট দেয়ার উছিলা। এরপর বলবে আমার বউ হারিয়ে গিয়েছিলো... তারপর কপি পেস্ট।
বউ হারাইলে জিডি-বিজ্ঞপ্তি-এফিডেভিট-ব্লাব্লাব্লা... এত ঝামেলা কখনওই করবো না, গ্যারান্টি!
আমি ভাবলাম, এইটা মনে হয় মনের মুকুরে জাতীয় কোন ফিচার, মৃতপ্রায় সচলদের লেখা তুলে এনে প্রথ্ম পাতায় পোস্ট করে দিবে।
৩-৪ বছর আগেও তো পত্রিকায় দেখতাম শ্রেণীবদ্ধ বিজ্ঞাপন ২৫০টাকা এরকম বিজ্ঞাপন দিত! এখন খুঁজে দেখলাম আলুপেপারে প্রথম ১৫ শব্দের জন্য নেয় ১০০০টাকা পরবর্তী প্রতি শব্দ ৫০টাকা।
আনিসুল ভাইয়ার "মা"-এর বিজ্ঞাপনগুলির দাম তো তাহলে লক্ষ লক্ষ টাকা রে! উনি তো আলুপেপারকে ফাঁক করে দিচ্ছেন!
মায়ের পদতলে বেহেস্ত হলে এই লোকের বেহেস্ত নিশ্চিত। উনি সারাজীবনে যতবার মা মা করেছেন দুনিয়ার সমগ্র মানব শিশু মিলেও অতোবার মা মা অথবা দুনিয়ার সমগ্র ছাগসশিশু মিলেও অতবার ম্যা ম্যা করে নাইক্কা
ফরিদীকে নিয়ে লেখাতা পড়তে যেয়ে আমি তো পুরাই নদীর তীরে গরু ঘাস খাওয়ার ঘটনা
হ
facebook
এই নদীর রচনায় 'মা' গরুর ঘাষ খাওয়ার গল্পটা বেশ অনেক দিন ধরে শুনছি। লিঙ্কু দিতে পারেন, আছেন এমন কুনো ভাই বেরাদর? পইড়া জীবন সার্থক করি।
প্রথম আলো আর ডেইলি স্টারে বিজ্ঞাপনের রেট সবচেয়ে বেশি। কালের কণ্ঠে দেখলাম অনেক কম। আমার ৩৩ শব্দের হারানো বিজ্ঞপ্তি ছাপাতে লাগলো ৭০০ টাকা।
বোকার পাশাপাশি অলস ও ফাকিবাজ মানুষও ।
একবার বুয়েটের আইডি হারাইছিলাম, ভাবলাম রেজিস্টার ভবনে গেলেই নতুন একটা দিয়ে দিবে।
জিডি ফিডি করতে বলে আরো ১০১টা কাম করতে বললো। মনের দুখে বাসায় এসে জালালী খতম দেয়া শুরু করলাম, পরদিনই খুজে পেলাম আইডি। এজন্যে দেশের যে কোন কাজ আধ্যাত্বিক লাইনে চেস্টা করা ভালো, দ্রুত ফল পাওয়া যায়।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
মিয়া, বাঁইচা গেসেন। বুয়েটের আইডি এখন হারাইলে দুইরাত থানায় থাকতে হয়
এরপর কিছু হারাইলে চেষ্টা কইরা দেখবো তাইলে।
প্রথমবার এইচ-১ বি ভিসা নিতে গিয়েছিলাম মেক্সিকোতে। ওখানের ভিসা ইন্টারভিউ চেয়ার টেবিলে হয় (অন্তত তখন পর্যন্ত), ভিসা অফিসার কফি খেতে দিয়েছিলেন। ঘরোয়া পরিবেশে ইন্টারভিউ, ঢাকার মতো পুলসিরাত সিচুয়েশন না।
এইচ-১ বি এর অরিজিন্যাল এপ্রুভাল নোটিশটা দেখতে চাইলেন, ওটা দেওয়ার পরে বুঝলাম ভুল করে অরিজিন্যাল রেখে ফটোকপিটা নিয়ে এসেছি। "বোকা ছেলে এইসব ভুল করা ঠিক না, ভিসা না দেওয়ার এটা একটা কারণ হতে পারে" একটু মৃদু তিরস্কার করে ভিসা দিয়ে দিলেন। তখনও ৯/১১ ঘটেনি, মনে হয় তা-ই ভিসা পেয়েছিলাম। ভিসা আনতে গিয়ে তৃতীয় একটা দেশে আটকা পড়া ভয়ানক ঝামেলার ব্যাপার।
১৯৮৭ সালের নভেম্বর মাসের ৭/৮ তারিখে ঢাকা কলেজের আইডি হারিয়েছিলাম। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। ধানমন্ডি থানাতে জিডি করতে গিয়েছি। জিডি ছাড়া নতুন আইডি পাওয়া যাবে না। ওই থানার ওসি ছিল কুখ্যাত আখলাক। ঢাকা কলেজে পড়ি শুনে প্রচুর ধমক-ধামক দিল আমাদের, সরকার বিরোধী আন্দোলন থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিল। ১০ ই নভেম্বর নূর হোসেন শহীদ হওয়ার পরে এই আখলাকই হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে।
তাই কাগজপত্র, সচলের ভাষায়, খুউউউব খিয়াল কৈরা রাখতে হয়।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আপনার ভাগ্য তো দেখি খুব ভালো। বিপদে পড়তে পড়তে বেঁচে গেছেন। আর আমি সেধে সেধে বিপদে পড়ি!
(অত্যন্ত জ্ঞানী জ্ঞানী, চাইলে আঁতেল ধরে নেয়া যেতে পারে, মুখ করে) সব কিছুর একটা ভালো দিক থাকে, বুঝলা? যখনই কোন সুপার ডুপার বাজে ঘটনা ঘটে আমি সেইটার ভালো দিক বাদ দিয়ে অবশ্য হাস্যকর দিকগুলান ভাবতে থাকি, আর খানিক পরপর ফিচফিচ করে হাসতে থাকি, এইটা মনে করো সবসময়েই পারি তা না, তবে বন্ধুবান্ধবদের সাথে হলে মোটামুটি নির্দয়ভাবে পারি। এখন মনে করো এই যে অতন্দ্র প্রহরীর নিজেরই সঞ্চয়পত্র হারায়ে গেছে, এইটা এই ঘটনাটা গোচরে আনার পর থেকে যতবার ফিচফিচ করেছি তা প্রচুর। কিন্তু আমরা এইখানে সেগুলা নিয়ে আর না আগাই, এই ঘটনার সবথেকে ধনাত্মক দিক হলো এই হারানো সঞ্চয়পত্রের কল্যাণে শেষপন্তক আমরা অপ্রের একটি লেখা পেয়েছি!!
তবে এইটা তো সবাই এমনিতেই দেখতে পাচ্ছে, আমি অন্যান্য পজিটিভ দিকগুলানের প্রতি আলোকপাত করি বরং (শুক্কুরবারে মাইরধোর খাবার চান্স থাকলেও এখনো একটা দিন হাতে আছেই যখন!) -
১। অপ্র আর কখনো সঞ্চয়পত্র হারাবে না।
২। অপ্র আর কখনো সঞ্চয়পত্র হারালেও চুপকরে বসে থাকবে, সেটা উদ্ধারের চেষ্টা চালাবে না।
৩। অপ্র বাংলাদেশের কোন ওসি বাংলাদেশ ও ভাষাকে ঘুণাক্ষরেও হেয় করতে পারেন এমন ধারণা পোষণ করবে না। আর দেশের উচ্ছন্নে যাওয়া তরুণ সম্প্রদায়ের দায়িত্ব ও কর্তব্যজ্ঞান সম্পর্কিত বিশ্লেষণাত্মক লেকচার শুনতে চাইলে কোথায় যেতে হবে তাও জানবে।
৪। অপ্র আর কখনোই কোন সঞ্চয়পত্র করতে যাবে না।
৫। অপ্র ভুলেও আর বাড়িতে যেই পেপার নেয় ঐ পেপারে নিজের আকাম-কুকামের বিবরণ বিজ্ঞাপন আকারে ছাপাবে না। <পিওর ইভিল লাফটার>
৬। অপ্র আর কখনো বাড়িতে নিজের কোন আকাম-কুকাম লুকাতে চাইবে না, কারণ জীবনের বড় সত্যটা সে আজকে শিখে ফেলেছে, শেষপর্যন্ত মা-বাবার কাছে কিছুই লুকানো যায় না। <মুহুহুহুহু ইভিল লাফটার>
৭। এবং সবথেকে ইম্পর্ট্যান্ট - অপ্র যেহেতু সবকিছু ভুলে যাচ্ছে (আফটার অল বয়স হইসে!), এবার সে একজন তুখোড় স্মরণশক্তির, চরম গোছানো টাইপ, জিএফ না হোক, বউ ঘরে আনবে। অন্তত চাচা-চাচী এই হিন্ট নিতে পারবেন আমরা এই দোয়া করি। সবাই বলেন আমিন।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
পুরা লেখার উদ্দেশ্যইতো ঘরে বৌ নাই, জিনিস হারায় ফেলি কিছিমের। পাত্রী চাই বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগে পত্রিকাও একটু বাজায় দেখলেন আর কি।
আফসোস, এখনও কেউ টোকা দিয়া বললো না যে সে সব গুছায়ে রাখতে পারে, এবং আমার কাগজপত্র আজীবন গুছায়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলো না কেউ!
তুমি একজন অতিশয় ঈভল মানুষ! :-|
ব্যাপার যেটা হলো, ব্যাংকে গিয়ে নগদীকরণ দরখাস্ত বাতিলের জন্য পালটা একটা দরখাস্ত দিয়ে এসেছি। ওরা বলেছে এতেই কাজ হবে। তাই আর ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষরের দরকার পড়ল না। অনেক "দামী" শিক্ষা গ্রহণ করলাম পুরা ব্যাপারটা থেকে!
আমি যে একটা 'ইভিল' মানুষ এইটা এতদিনে বুঝলা!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আপনের কি তুলা রাশি? তাইলে একটা বুদ্ধি দিতারি। পরেরবার কোনো কিছু হারায়া গেলে আর কোনোদিকে চাইয়েন না। সোজা বাথরুমে যাবেন। গিয়ে, যা ভাবতেছেন সেইটা করতে বলতেছি না। বলতেছি যে, বাথরুমের দেয়াল থেকে আয়নাটা হ্যাচকা টান দিয়া খুলে ফেলবেন। পারবেন না?
তারপর, এই আয়নাটা নিয়া আয়নাপড়া দিবেন। সঞ্চয়পত্র তো সঞ্চয়পত্র, পুরা ব্যাংক শুদ্ধা আপনের আয়নার সামনে আইসা হাজির হয়া যাবে। না হইলে আমারে কইয়েন...
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমি তুলা রাশি।
অপ্রদা, নেক্সট টাইম কিছু হারিয়ে গেলে আয়না পড়া কিংবা বাটিচালার জন্য আমাকে খবর দিয়েন।
বিনিময়ে এইইই বেশি কিছু নয়, দরকার মতো দু-চারটে পিডিএফ আর গানের লিঙ্ক [যে ব্যাপারে আপনার দক্ষতা- খ্যাতি দুটোই চ্রম!] খুঁজে দিলেই চলবে।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নাহ্, 'খাজাবাবা ব্যবসায়'ও দেখি আজকাল বিশাল কম্পিটিশন!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হ!
রিফাত, বাটিতে করে খাবারদাবার চালান করতে পারবেন এদিকে? তাহলে রাজি আছি!
আপনি এত কিছু জানেন ক্যাম্নে! যাই হোক, এই পদ্ধতি কি শুধু তুলা রাশির জাতক-জাতিকাদের জন্যই? আমি তো তুলা না!
ইহা হয় আইরনি।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
iরনি
কত টাকা পেলি রে শয়তান?
আমার ভাগ দে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
টাকা পাই নি তো এখনও। আগামী বছর জুন মাসে এটার ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হবে।
তার আগেই গাট্টিবোচকা নিয়া বিডিআরের বাড়ির সামনে অবস্থান ধর্মঘটে বসে পড়তে হবে।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আপনি দেশে আসবেন?!? সত্যিই?!?! ভাবীরা আপনাকে দেশে আসতে দিতে রাজি তো?
ক্রেডিট কার্ডের গল্পটা তবে তাড়াতাড়ি বলেন ।
আর একখান কথা, আপনে যদি এতই বোকা হন, তাইলে বুঝলেন ক্যামনে যে আপনি বোকা ?
বলবো রে ভাই বলবো... শুনে তখন বুঝবেন আমি আসলেই কত বোকা।
এইটা বলা যাবে না।
ভাগ্য ভালো সচলের মন্তব্যে 'চলুক' অর্থাৎ দেয়ার অপশনটা আছে।
আমার মতো অলস মন্তব্যকারীদের জন্য এরচেয়ে সহজ সমাধান আর হয় না।
আপনার ব্লগেও তাই আমার মন্তব্য-
থ্যাঙ্কু
বহুদিন পর তোমার লেখা পেয়ে ভাল লাগল খুব।
এত গ্যাপ দাও কেন মিয়া?
তোমার মুভি রিভিউ কবে আসছে???
শুভেচ্ছা নিরন্তর
অনেক ধন্যবাদ, অনিকেত'দা। দেখি... নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করব এখন থেকে।
এখনও জানি না... লিখতে হবে দেখি কিছু নিয়ে। ভালো থাকবেন।
বাপ্রে! আপনে তো আমার চেয়ে কর্মঠ মানুষ!
ক্যামনে? বিডিআর কি বাপ হৈছে?
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
@দ্রোহী'দা
তাই? শুনে খুশি হইলাম।
@ধুসর'দা
আপনি যে বিয়া কইরা বউবাচ্চা লুকায় রাখসেন এত বছর ধইরা, এইটা কিন্তু এখনও কাউকে বলি নাই। ভয় পায়েন না। বলবো না।
ম্যালা টাকা পাইসো মনে হইতেসে!
খাওয়ানোর জন্য রেডি হও
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আমি খবর পাইলাম (স্বাভাবিকভাবেই গোপন সূত্রে), বিডিআর অদ্য বিকেল বাদ আছর, তার ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে পলায়ে গেছে।
এইটা সত্য হইলে কে যে কারে খাওয়াবে, এইটা স্বয়ং বিডিআরও জানে না! খ্যাখ্যাখ্যা
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
@ধুসর'দা
আবারও বলি, আপনি যে বিয়া কইরা বউবাচ্চা লুকায় রাখসেন, এইটা কাউকেই বলবো না!
@স্পর্শ
টাকা পাবো আগামী বছর জুনের শেষে। অপেক্ষা করো ততদিন।
যাক, আরেকজন পাওয়া গেলো। এখন থেকে বাসায় বলতে পারবো আমি একাই এইরকমনা আসেন ভাই আসেন,
আপনারও এরকম হারানোর বাতিক আছে নাকি? সেই গল্প শোনায়েন তাহলে একদিন।
তুমি বাঁইচা আছো দেখি! কী আশ্চর্য!
যাই হোক। টাকা পয়সা হাতের ময়লা। এত টাকা জমায় কী করবা? দেশে গেলে বরং একদিন গুলশান বনানীর কোনো একটা রিভলবিং রেস্টুরেন্টে খাওয়ায় দিও...
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
তুমি দেশে আসবা?! খাইসে! আসো আসো... অবশ্যই খাওয়াবো!
আপনি নিজেকে বোকা বলতে পারেন, কারণ বোকা মানুষ এখনো দেখেনই নাই।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আপনি দেখেছেন নাকি?
তবে সবকিছুই তো আপেক্ষিক। বোকা বা চালাকের তো আর সুনির্ধারিত মানদণ্ড নাই কোনো।
ইয়াল্লা! আপনারও এইরকম হয় নাকি ! আমি তো ভাবতাম এইসব ব্লান্ডার খালি আমি একাই করি।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
বলেন কী! এরকম বিশাল বোকামি আর কেউ যে করতে পারে, তা তো বিশ্বাসই হতে চায় না! তবে দলে একা না, এইটা জেনে স্বস্তি পাচ্ছি!
নতুন মন্তব্য করুন