হাসপাতালের নিচে নামতেই রুনুর সাথে দেখা। এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল। আমার দিকে চোখ পড়তেই এগিয়ে এলো। "কী বলো তো রোকন ভাই, চাচার এরকম অবস্থা, আর আমাকে একবারও জানালে না!" রুনুর কণ্ঠের অভিমানটুকু নির্ভেজাল মনে হলো আমার। "মাত্রই এলি?" কথা ঘোরানোর চেষ্টা করি আমি। "হ্যাঁ, হারুন নামিয়ে দিয়ে গেল, কাজ সেরে আমাকে নিতে আসার সময় দেখা করবে।" রুনু বাবার বন্ধুর মেয়ে। মা খুব করে চেয়েছিল আমি যেন ওকে বিয়ে করি। আমি রাজি ছিলাম না। পরে বুঝতে পেরেছি রুনু নিজেও আমাকে পছন্দ করত। প্রায়ই বাসায় আসতো আর নানান অজুহাতে আমার সাথে কথা বলত। খুব একটা বুঝতাম না তখন। তাই বোকার মতো মনে করতাম রুনুর সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক সেসব কথাবার্তা যেন খুব স্বাভাবিক কোনো ব্যাপার। শেষ পর্যন্ত পুরান ঢাকার কোন এক ব্যবসায়ী হারুনকে বিয়ে করে ফেলল ও। দাওয়াত দিতে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে ওর যে কী ভীষণ কান্নাকাটি! "ডাক্তার কী বললো বলো তো?" রুনু জানতে চায়। মাথার ভেতরে কিছুক্ষণ আগে ডাক্তারের কথাগুলো বেজে ওঠে আমার। দমবন্ধ লাগে। সেইসাথে সিগারেটের তৃষ্ণাটাও জানান দিতে থাকে। আমি উত্তর না দিয়ে রুনুকে দেখি। স্ফীত পেট দেখিয়ে জিজ্ঞেস করি, "ছেলে না মেয়ে রে?" হঠাত করেই রুনুর মুখ উজ্জ্বল হাসিতে ভরে যায়। "জানি না এখনও," কেমন যেন একটু লাজুক মনে হয় ওকে। এই অবস্থায় মেয়েদের চেহারায় আলাদা একটা লাবণ্য চলে আসে। রুনুকে আর সেই আগের রুনু মনে হয় না, কেমন অন্যরকম লাগে, মনে হয় যেন রাতারাতি বদলে গেছে। "ভাবী কোথায়, রোকন ভাই?" আমি কিছু বলার আগেই রুনু আবার জিজ্ঞেস করে, "চাচী উপরে? আমাকে নিয়ে চলো তো।" আমার ভেতরটা তখন সিগারেটের জন্য কেমন খাঁ খাঁ করছে। কেবিন নম্বর জানিয়ে দেই ওকে, "তুই গিয়ে বোস রুনু, মা আছে। আমি আসছি একটু পরে।" রুনু লিফটের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অপেক্ষমান আরও কিছু মানুষের ভিড় সেখানে। আমি এক ঝলক ওকে দেখে হাসপাতালের বাইরে গিয়ে সিগারেট ধরাই। লম্বা টানে একবুক ধোয়া টেনে মাথার ভেতরের ধোয়া কাটানোর চেষ্টা করি।
মা দীর্ঘদিন অভিমান করে ছিলেন আমি রুনুকে বিয়ে না করায়। তিনি সরাসরি কিছু বলেননি কখনও, তবে তার শীতল নীরবতা আমি বুঝতে পারতাম। কিন্তু কিছুই করার ছিল না তখন আমার। ঝুমাও খুব করে চাপ দেয়া শুরু করলো বাসায় ওর কথা যেন জানাই। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে বের হওয়া এক বেকার যুবক। কোথাও চাকরি পাই না। চাকরি খুঁজব নাকি ঝুমাকে সঙ্গে করে বাসার বরফ গলাবো, পুরো হিমশিম অবস্থা ছিল আমার। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখা হয় নিয়মিত ওর সাথে, আমরা একসাথে হাঁটি, কখনও গাছের নিচে বসি, চা খাই। ঝুমা বলতো, "রোকন, আমার বাসায় প্রস্তাব আসা শুরু হয়ে গেছে। তুমি তাড়াতাড়ি কিছু একটা করো। আমি বেশিদিন আর মা-বাবাকে আটকাতে পারব না।" আমি সবই বুঝি। কিন্তু অসহায় লাগে খুব। চার বছরের প্রেম আমাদের। মাঝেমাঝে মনে হয় ঝুমার কল্যাণেই হয়ত সম্পর্কটা টিকে গেছে, নয়ত আমার হারানোর খাতায় ওর নামটাও উঠে যেত হয়ত অনেক আগেই। বাসায় খুব ঝক্কি পোহাতে হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়েতে বাবা-মা অমত করেননি। এর মাঝেই আমি মাঝারি বেতনের ছোটখাটো একটা চাকরি পেয়ে যাই। ঝুমা চলে আসে মিরপুরে আমাদের নিরানন্দ বাড়িটাতে।
সিগারেটটা শেষ করে ফিরে আসি আবার। রুনু ততক্ষণে বেশ হালকা করে ফেলেছে পরিবেশটা। বাবা-মা ওর সাথে কথা বলছিলেন, আমি দরজার কাছ থেকে উঁকি দিয়ে দেখে বেরিয়ে আসি। করিডোরে একটা চেয়ারে গিয়ে বসি। রুনুকে বাবা-মা এখনও অনেক পছন্দ করেন। বরং ঝুমাই পারেনি কখনও তাদের কাছাকাছি যেতে। চেষ্টা করেছে শুরুতে। এক পর্যায়ে মনে হয় নিজেই হাল ছেড়ে দিয়েছে। সমস্যার শুরু এর পর থেকেই। প্রায়ই আমাকে দোষারোপ করত ঝুমা। অনেকবার আলাদা বাসা নিয়ে থাকার কথাও বলেছে। আমার পক্ষেই সম্ভব হয়নি সেটা। বাবা-মাকে ছেড়ে থাকার কথা কখনও ভাবতে পারিনি। ঝুমাকে তখন খুব স্বার্থপর মনে হতো। কিন্তু মুখ ফুটে ওকে কখনও কিছু বলতেও পারিনি। ওর মুখের দিকে তাকালে আমি আগের সেই ঝুমাকে দেখতে পেতাম, যার সাথে বসে বাদাম খাওয়ার সময় মনে হতো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মেয়েটার পাশে বসে আছি।
ধীরে ধীরে বাবার শরীর খারাপ হলো। শুরুতে কেউ বুঝতে পারিনি আমরা। নানান ডাক্তার, হাসপাতাল, ছোটাছুটি, চিকিৎসা; সবই হয়েছে, কিন্তু তার অবস্থার সাময়িক পরিবর্তন ছাড়া বরং খারাপের দিকেই গেছে সবসময়। এ নিয়ে পুরো পরিবারেই কেমন টালমাটাল দশা। দীর্ঘস্থায়ী এই অসুখ বাবার শরীর থেকে যেন আমাদের গোটা পরিবারেই বিস্তৃত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত যখন ধরা পড়ল, ততদিনে কর্কট রোগ তার প্রকোপ সদর্পে স্থায়ী করে ফেলেছে বাবার শরীরের ভেতরে। যেটুকু পেরেছি, করেছি, চেষ্টা করেছি। কিন্তু অবশ্যম্ভাবী পরিণতিটা আটকানো গেল না কিছুতেই। অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ার খবর পেয়ে অফিস থেকে ছুটে সকালেই বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। মা এসেছেন সাথে। ঝুমা ক্লাস নিতে স্কুলে চলে গিয়েছিল আগেই। ওকে কিছু বলিনি কেন যেন। হাসপাতালে আনার পর বাবা বারবার জানতে চাচ্ছিলেন ডাক্তার কী বলেছে। "বল না রে বাবা," বাবার নিস্তেজ গলার অনুরোধ আমি জোর করে হেসে উড়িয়ে দেই। "টেস্ট রিপোর্ট আসুক তো আগে। আপনার কিচ্ছু হবে না দেখবেন। এত চিন্তা করেন কেন সব নিয়ে?" ওদিকে বিড়বিড় করে বাবা আরও হাবিজাবি বলতে থাকেন। আমি শুনি না আর সেসব।
দরকারি কিছু জিনিস আনতে দুপুরে বাসায় গিয়ে দেখি ঝুমা স্কুল থেকে ফিরে এসেছে। ওর মুখ কেমন থমথমে। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে থেমে যাই, চোখ যায় মেঝেতে পড়ে থাকা ব্যাগ দুটোয়। আরও কিছু জিনিস এলোমেলো ছড়িয়ে আছে বিছানার উপর। আমার দিকে একবার তাকিয়ে ঝুমা মনোযোগ দেয় সেগুলো গোছানোয়। আমার মাথা কাজ করে না। "এগুলো কী ঝুমু?" প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ঝুমা মুখ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকায়। হঠাত করেই মনে হয় গত কয়েক মাসে ঝুমার বয়স বুঝি অনেক বেড়ে গেছে, অথবা বুড়িয়ে গেছে আমার চোখ। "আমি আর পারছি না রোকন, প্লিজ রাগ করো না, আমি আর পারছি না," ফিসফিস করে বলে ও। কয়েক মুহূর্তের কেমন অপ্রস্তুত নীরবতা। মাথার উপর শুধু পাখা ঘোরার অলস শব্দ। আমি কথা হাতড়িয়ে কিছু না পেয়ে জিজ্ঞেস করি, "কেন?" ঝুমার চোখের কোনায় পানি টলটল করে। কাজল দিয়েছে ও। মনে হলো বেচারির দিকে নজরই দেয়া হয়নি কতদিন! অত হাঙ্গামা করে বিয়ে করার পরেই কি ভেতর থেকে সব আগ্রহ উবে গেল? ঠিক কবে, কখন, আমি নিজেও সেভাবে মনে করতে পারব না। অথবা ঝুমাকে হয়ত ধরেই নিয়েছিলাম আটপৌরে জীবনের অপরিহার্য এক অংশ হিসেবে। আটকাতে পারলাম না ওকে। ঝুমা, আমার ঝুমা, সাড়ে পাঁচ বছর সংসার করে আজ জানিয়ে দিলো আমার সাথে থাকা ওর পক্ষে আর সম্ভব না। আমার রাগ হয় না, জেদ হয় না, অভিমান হয় না, স্রেফ কষ্ট লাগে, কষ্ট লাগে ঝুমার জন্য।
রুনু বেরিয়ে আসে কেবিন থেকে। আমাকে দেখে পাশে এসে দাঁড়ায়। "রোকন ভাই, আসি। কিছু লাগলে কিন্তু অবশ্যই বলবা। তুমি তো আবার কিছুই বলতে চাও না। আমরা বুঝি কেউ না!" রুনু বলে যায়, "হারুন কল করেছিল। ওর দেরি হবে। গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি চাচীকে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম, বাসায় নামিয়ে দিতাম। উনি যেতেই চাচ্ছেন না। এখানেই থাকবেন। তুমি তো মনে হয় কিছু খাওনি। খেয়ে নিও। চাচীর জন্যও নিয়ে এসো কিছু। পরে আসব আবার। যাই এখন।" রুনু হেসে করিডোর ধরে এগিয়ে যেতে থাকে। আমার কেন যেন খুব ইচ্ছা করে পেছন থেকে ওকে ডাকি, ওর হাতটা ধরে হাসপাতালের এই করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকি, চুপচাপ, কোনো কথা না বলে। কিন্তু ডাকা হয় না আর ওকে। রুনুর অপসৃয়মান ছায়া দীর্ঘতর হয় কেবল।
ঠিক তখন, কোনো কারণ ছাড়াই বৈশাখের এই ভ্যাপসা গরমে হাসপাতালে বসে প্রচণ্ড কাঁপুনি দিয়ে আমার কেন যেন শীত করতে লাগল।
মন্তব্য
অনেকদিন পর লিখলেন।
পড়ার সময় মনোযোগ টানছিল খুব, গাঁথুনি চমৎকার, কয়েকটা অংশ বিশেষত..
শুধু শেষ লাইনটা একেবারেই পছন্দ হয়নি। অন্যরকম, অন্তত আরেকটু জমাটি কোন সমাপ্তি আশা করেছিলাম বোধহয়।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আসলেই অনেকদিন পর! এক অর্থে এই লেখাটা আপনাকে (এবং স্পর্শকে) উৎসর্গ করাই যায়। এত করে লিখতে বলার জন্য।
গল্পটা অনেকদিন ফেলে রেখেছিলাম। অবশেষে পোস্ট করলাম। পাঠকের মনোযোগ যে ছিল, সেটা একটা বড় পাওয়া। চেষ্টা করেছি এদিকটায় নজর রাখতে।
যাই হোক, শেষটা হয়ত অন্যভাবেও হতে পারত। তবে আমার কাছে এই শেষটাই মনে হয়েছে একজন অসহায় এবং পরাজিত মানুষের প্রতিচ্ছবি। জীবন থেকে এত দামী কিছু পেয়েও যে সেটা ধরে রাখতে পারেনি, তার জন্য এরচেয়ে মহিমান্বিত আর কোন সমাপ্তিই বা থাকতে পারে! যাই হোক, তবুও... মতামত জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
অনেকদিন পরে লিখলে। অন্যকে আর দোষ দেই কিভাবে, নিজেই লিখতে পারছি না
তোমার গল্পটা ভালো লেগেছে।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
তাসনীম ভাই, আপনার লেখা মাঝেমাঝে আসলেই অনেক মিস করি। সময় করে লিখবেন। গল্প ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগল। আন্তরিক ধন্যবাদ।
এত জলদি পুস্ট দিয়ে দিলেন! এক বছর পূর্তি করেই দিতেন না হয় পোস্টটা
গল্প খুব সাবলীল ভাবে এগিয়েছে। ভালো লেগেছে ভাই।
আগামি পোস্টখান আসছে শতাব্দীতে লিখবেন নাকি
হাহাহা। আপনার কথা মাথা পেতে নিলাম। নিজের কাছেই খারাপ লাগে এতটা অনিয়মিত হয়ে যাওয়ার জন্য। (বরাবরের মতোই) আশা করি এখন থেকে নিয়মিত হবো। আগামী পোস্ট যেন এই শতাব্দীতেই পান, সে ব্যাপারে জোর-সচেষ্ট থাকব।
ধন্যবাদ আপনাকে।
একটা কথা কইতে ভুলে গিয়েছিলুম, ছোট্ট দু'টো টাইপো আছে, হঠাত> হঠাৎ ধোয়া>ধোঁয়া
আন্তরিক ধন্যবাদ ভুল শুধরে দেয়ার জন্য। পোস্টটা পরে এডিট করে দেবো।
গল্পের বর্ণনার মাঝে মুগ্ধ হয়ে আটকে গিয়েছিলাম। ভালো লাগছিল কাহিনীর এগিয়ে যাওয়া।
তবে, হাসপাতালে থাকার দিনই ঝুমার চলে যাবার জন্য ব্যাগ গোছানো একটু কেমন কেমন লেগেছে।
সচলে ঢুঁ মারার পর পর আপনার মন্তব্য দেখতাম, আর আপনার
অ্যানঅ্যাম্বিগ্রামটাও মনে গেঁথে গিয়েছিল, তারপর মনে হয় কিছুদিন কিছুটা দূরে ছিলেন।শুভেচ্ছা, ভালো থাকুন
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, মেঘলা মানুষ, আপনার মতামতের জন্য। সচলায়তনে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মিত আছি। অনেক ইচ্ছা করে নিয়মিত লেখার। কিন্তু হয়ে ওঠে না। চেষ্টা চলবে...
এই অ্যাম্বিগ্রামটা আমাদেরই আরেক সচলায়তন-সদস্য জি.এম. তানিমের করা।
আর গল্পের ব্যাপারে... ঝুমা তখন স্কুলে ছিল, সে জানত না হাসপাতালে এতকিছু হয়ে যাচ্ছে, কারণ তাকে কেউ খবর দেয়নি (গল্পের "আমি" এক জায়গায় বলে যে ঝুমাকে খবর দেয়া হয়নি তার কেন যেন...)। তো একাধারে সে এই পরিবারের সাথে মিশতে যেয়েও পরিবারের একজন হয়ে উঠতে পারেনি, স্বামীর অবচেতন অবহেলায়, শ্বশুর-শাশুড়ির উদাসীনতায়। এটা তার উপর একটা মানসিক চাপ। তাই সে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সবকিছু জানলে ঘটনাপ্রবাহ অন্যদিকে যেতে পারত, তবে ওই পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিনের উদাসীনতার ফল হিসাবেই সে থাকতে না পেরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। গল্পে হয়ত বিষয়টার উপর তেমন একটা জোর দেয়া হয়নি, তাই পাঠকের এই অস্বস্তির অবকাশ রয়ে গেছে।
আপনার শব্দ-বাক্যগুলোকে তো বিষাদের ঢেউ এর মাথায় চড়ে নাচতে দেখলাম। আমার বেশ ভালো লেগেছে। আমাদের চেনা-জানা পরিবেশের পরিচিত ফরম্যাটের গল্প। কিন্তু আপনার হাতের তেলোতে সেটা অন্য রকম ফুল হয়ে ফুটল।
গোঁসাইবাবু
আন্তরিক ধন্যবাদ আপনাকে, গোঁসাবাবু, আপনার সদয় মন্তব্যের জন্য। আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও খুব ভালো লাগল। ভালো থাকবেন।
দারুণ লাগছিল পড়তে...... কিন্তু হঠাৎ করেই যেন শেষ হয়ে গেল ...
ভালো লেগেছে গল্পটা।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
অনেক অনেক ধন্যবাদ। এটাকে আরেকটু বড় পরিসরে কিছু করা যায় নাকি, চেষ্টা করতে হবে পরে কখনও।
অনেকদিন পর আপনার লেখা পেলাম। ভাবছিলাম লেখালেখি ছেড়ে দিলেন কিনা
মেঘলা মানুষের মতো আমারো খটকা লেগেছে ওরকম সময়ে ঝুমার ঘর ছাড়ার সিদ্ধান্তে। ঝুমার উপর লেখক একটু নির্দয় হলেন যেন? বাস্তবে কি ঝুমাদের উপস্থিতি আছে? গল্পটা পড়ে এরকম কিছু প্রশ্ন জাগে। কিন্তু আমি বাস্তবের ঝুমাও দেখেছি বলে প্রশ্নটার উত্তর নিজে নিজেই পেয়ে গেছি। সেটা ভেবেই বলছি, ঝুমার চরিত্রের স্বার্থপরতার দিকে আরেকটু আলো ফেললে মনে হয় প্রশ্নটা জাগতো না। আলাদা বাসা নেবার ব্যাপারটা স্বার্থপরতাই, কিন্তু এটা অনেক মেয়েরাই বলে, বললে বাস্তবে প্রয়োগ করার মতো কঠোরতা দেখায় খুব কম মেয়ে। ঝুমা সেক্ষেত্রে দৃষ্টিকটুরকমের বাজে সিদ্ধান্ত নিল অসময়ে। ঠিক না?
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আসলেই অনেকদিন পর। লেখালেখি ছাড়িনি, তবে হয় না ইদানীং। মাথায় অনেক লেখা থাকে, লিখতে বসলে সব হাওয়া।
মেঘলা মানুষকে দেয়া উত্তরে কিছুটা বলেছি, তার সাথে আরেকটু যোগ করি। ঝুমাকে এখানে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবেই দেখেছি (সেটা হয়ত স্থানাভাবে ঠিকমতো চরিত্রটার উপর জোর দেয়া যায়নি, আমার ব্যর্থতা)। আমাদের একটা কমন চিন্তা থাকে যে পরিবারে মেয়েরা ত্যাগ স্বীকার করবে বেশি। তাদেরকে সবসময় সব সামলে চলতে হবে। ঝুমা এই পরিবারে মানিয়ে নেয়ার অনেক চেষ্টা করেছে, পারেনি বা হয়নি। এতটা অবহেলা (পুরাপুরি নেতিবাচক অর্থেও না। তবে অনেক সময়ই দেখা যায় অভ্যস্ততা চলে এলে পরিবারের কাউকে সেভাবে আর আলাদা করে গুরুত্ব দেয়া হয় না!) পাওয়ার পরেও সে ছিল অনেকদিন। আর চিকিৎসা এটা বেশ দীর্ঘস্থায়ী ছিল, লিখেছি এক বাক্যে। তখনও ঝুমা ছিল। কিন্তু আর কত! সে একজন মানুষ, তারও ধৈর্য আছে, নিজস্ব আনন্দ-বেদনা আছে। সব মিলিয়ে মনে হয়েছে প্রথাগত দায়িত্ববোধের খাতিরে যে তাকে থেকে যেতে হবে, তা না। বরং এত অবহেলার প্রতিবাদস্বরূপ সে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। লেখার সময় এগুলো আসলে মাথায় চিন্তা হিসাবে ছিল। লেখায় এতটা ফুটিয়ে তোলা যায়নি। যাই হোক, আপনি যে কঠোরতার কথা বললেন, সেটা বাস্তবে অধিকাংশ মেয়েই হয়ত নেয় না, তারা মুখ বুঁজে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে... তো এদিক দিয়েই যে ঝুমা ব্যতিক্রম, ওর চরিত্রটা আমার মাথায় সেভাবেই ছিল আরকি।
যাই হোক, অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
দারুণ লেগেছে গল্পটা। শুধু মনে হল খুব দ্রুত শেষ হয়ে গেল
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগল।
বহুদিন পর আপনাকে আবার পেলাম। লেখা নিয়ে আর কী বলব! আগের মতই ঝলসানো, মুগ্ধতা ছড়ানো। আমিও বহুদিন পর ফিরে এলাম আবার। আপনার লেখা আরো পড়তে চাই। চলুক.....
অনেকদিন পরেই আসলে লিখলাম। নিয়মিত হতে চাই, ইচ্ছা করে, কিন্তু হয়ে ওঠে না কেন যেন। আপনার মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগল খুবই। লেখা ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ভালো আছেন আশা করি।
খুউব ভাল লাগল অপ্র!
তোমার গল্প বলার ভঙ্গিটা ভাল, খুব তরতরিয়ে পড়ে ফেলা যায়।
কেন জানি মনে হল, গল্পটা লেখার সময় তোমার মনের মাঝে একটা মেঘ ঢুকে বসেছিল---
সারাটা গল্পের মাঝে সেই মেঘটার ছায়া দেখতে পেলাম
আরো ঘন ঘন লিখলে কী হয়??
শুভেচ্ছা নিরন্তর!
নিয়মিত লিখতে চাই, কেন যে হয় না!
তবে লেখার অন্যতম বড় পাওয়া আপনাদের মতো এত এত প্রিয় মানুষের মন্তব্য পাওয়া। ভালো লেগেছে জেনে আমারও খুব ভালো লাগল। আর আপনার ধারণা ঠিক। গল্পটা যখন লেখা, তখন কিছুটা পারিবারিক বিপর্যয় যাছিল, এই চিকিৎসা সংক্রান্তই।
ভালো থাকবেন।
আমার গল্পটা খুব স্বাভাবিক লেগেছে। ঝুমার বাড়ি ছাড়াটা খাপছাড়া লাগে নি, গল্পকারের দিক থেকে তাড়াহুড়ো লেগেছে। কিন্তু গল্পর মূল স্রোতটা পুরোপুরি ঠিক লেগেছে। পরের গল্পের অপেক্ষায় থাকলাম। আশা করি, অপেক্ষাটা লম্বা হবে না
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। মূল যে চিন্তা মাথায় রেখে লিখতে বসেছিলাম, সেটা হয়ত আপনি ধরতে পেরেছেন। সে চিন্তা পুরোপুরি যে ফুটিয়ে তুলতে পারিনি লেখায়, এটুকু আমারই ব্যর্থতা। সে অর্থে তাড়াহুড়ো ছিল বলা যায়। আরেকটু বিস্তৃত হলে, ঝুমার চরিত্রটায় আরেকটু সময় দিলে হয়ত ভালো হতো আরও। যাই হোক, আপনার মন্তব্য মাথায় থাকল। চেষ্টা থাকবে পরের লেখায় এত দীর্ঘ বিরতি যেন না থাকে।
ভালো থাকবেন অপ্র।
----------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
অনেক ধন্যবাদ, পলাশ ভাই। আপনিও ভালো থাকবেন।
চমৎকার ঝরঝরে লেখা। গল্পের বাঁধুনি খুব নিপুণ, আর শব্দচয়ন দারুন। হ্যাঁ, দুয়েকটা আলগা সুতোর মাথা ঝুলছে এখানে ওখানে, কিন্তু গল্পের মূলরস ক্ষুন্ন হয়নি কোথাও। তবে শেষে এসে মনে হলো আরেকটা পর্ব আছে নাকি?
____________________________
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, মতামতের জন্য। ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগল। গল্প এখানেই আসলে শেষ। তবে বেশ কয়েকজনের মতামতের পর মনে হচ্ছে এই প্লটটাকে আরেকটু বড় পরিসরে নেয়া যায় নাকি, চিন্তা বা চেষ্টা করে দেখব।
যাই হোক, ঈষৎ বিলম্বিত জন্মদিনের শুভেচ্ছা। দীর্ঘ ও সুন্দর জীবন কামনা করি আপনার।
ধন্যবাদ।
____________________________
প্রোফেসর-এর জন্মদিন ছিল? কাটল কেমন - পুরাই হিজবিজবিজ, না কি পেলান-টেলান মত? যাই হোক, যেমন-ই কেটে থাকুক, জন্মদিন-এর অঢেল শুভেচ্ছা, যত দেরীতেই পৌঁছাক!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
থ্যাঙ্কু দাদা।
____________________________
গল্পটা কোথায় যেন খাঁমচি মেরে ধরে বুকের ভেতর।
এইতো বছর কয়েক আগেও এধরনের গুল্পগুলো মনে হতো বড়দের গল্প।
এখন পড়তে পড়তে মনে হলো বড় হয়ে যাচ্ছি…
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
এদ্দিন পর লিখলেন, সেজন্য অভিনন্দন। আরেকটা গল্প দেন দ্রুত 'শুক্লপক্ষ', তাহলে দুইটা মিলিয়ে কমেন্টবাজী করব।
বাই দ্য ওয়ে, হ্যাপি বাড্ডে।
বুনোট চমৎকার, তবে গল্পটায় যেমনটি আশা করেছিলাম তেমন চমক খুঁজে পেলাম না।
অট। আপনার নিকটি আমার মনে ব্যপক প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি করে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
এত ভারী একটা লেখা।
বর্ণনা যেভাবে জমিয়ে তুলেছিলেন আসলেই আরো বাড়ানো যেতো! ভালো লেগেছে।
চমৎকার লেগেছে গল্প। একটু তাড়াহুড়ার ছাপ ছিল সম্ভবত, সেটা অনেকেই বলেছেন, আমি আর নতুন করে না বলি। আপনার নিয়মিত হবার আশায় থাকলাম। ভাল থাকুন।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
বুঝলেন ভাবী ...
তোর লেখা দেখেই তাড়াতাড়ি লগিন করে ফেললাম
গল্পটা ভালো লাগেনি। ভাষা সুন্দর। কিন্তু কাহিনীতে নতুনত্ব নেই, অনেকবার পড়া গল্পের মতো মন হয়।
রুনুর সংলাপগুলো আরোপিত মনে হয়েছে।
যা। তাও তো লেখলি
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
গল্পটা খুব ভাল লাগল। তবে ঝুমার ব্যাপারে উপসংহার টানা কী খুব জরুরী ছিলো? কেন যেন মনে হলো, ঝুমার ঐ মুহূর্তে বাড়ি ছেড়ে যাওয়াটা বাকী গল্পের সাথে যায়না।
ঝুমা আর শামা- দুজনে দুজনার। নায়কের নাম 'আমি' না হয়ে শামা হলে মিলতো ভালো।
সাড়ে পাঁচ বছরের সম্পর্ক/পরিচয়? হুমম...
আপনে মিয়া জীবনেও বিড়িতে টান দেন্নাই। নাইলে বিড়িতে কোনো কালে একটা টান হইলেও দিছে, এমন কেউ, অমন সময়ে বিড়ি ধরানো নিয়ে কয়েক পাতা না হোক কয়েক প্যারা তো লিখে ফেলতোই!
সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে একটা ভালো উদাহরণ হলো, বিফোর মিডনাইট। আগের দুই প্রিক্যুয়েলে যতোটা মিষ্টি আর স্বপ্নীল ভালোবাসার আখ্যান। শেষ সিক্যুয়েলে এসে বহমান সেই স্বপ্নীল সম্পর্কে ঠিক ততোটাই বাস্তবতার তিক্ততা বয়ান।
ভালোবাসা এমনই একটা জিনিস, এটার প্রবাহ অনিঃশেষ কিংবা সর্বদাই সুষম না। কখনো কখনো তিস্তার পানির মতো চুইয়ে চুইয়ে আসে। আর তখনই 'মাগুর গিয়া'র মতো খালকাটা কর্মসূচী হাতে নিতে হয়। অর্থাৎ, ভালোবাসাকে কালচার করতে হয়, নার্চার করতে হয়। তখন তিস্তায় পানি না এলেও ভালোবাসা কুলকুল করে বইতে শুরু করে আবার। একটা সম্পর্ক বেঁচে যায়। বিফোর মিডনাইটে, একেবারে শেষ দৃষ্যে জেসি যেটা করেছে সেটা এই জিনিসই। না হলে, জেসি আর সেলিন এর মধ্যকার এতো সুন্দর আর চমতকার একটা প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যেতো!
তো, ঝুমা, রুনা, মুনা, শামা, আমা, মামা- যে-ই হোক, ভালোবাসাটাকে একটু সার-পটাশ দিলে, একটু গোবর-টোবর দিলে, একটু পানি-টানি দিলে, একটু আলো-বাতাস দিলে সম্পর্কের টানাপোড়েনের এতো যে জটিলতা, তা হয়তো এড়ানো যেতো।
উপরে শিমুল তো বললোই শুক্লপক্ষ লিখতে, লিখেন। সেখানে শামারে ঝুমার সাথে কোথাও বসায়ে দিয়েন। যেখানে বসে দুইজন উদ্দেশ্যহীন, বস্তাপঁচা কিছু গল্প করতে করতে ভালোবাসায় প্রত্যাবর্তনের পথ খুঁজে নিবে...
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এতো ভারী গল্পটার ভার নামিয়ে দিলেন এক মন্তব্যেই! ধন্যবাদ! [বাঁচা গেলো]
আর অপ্র, ভাইরে ভাই, তুমি পারোও! দুঃখের ডক্টরেট করে ফেলসো মনে হয়! মনবুড়ো কি তোমারে এমনি এমনি বলা হয়?
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
নতুন মন্তব্য করুন