সেদিন রিডিং উইকের বন্ধে দুই বন্ধু সহ গিয়েছি স্টুডেন্ট সেন্টারে। উদ্দেশ্য টিম হরটন থেকে কফি-টফি কিছু খাওয়া। দুপুরের খাওয়ার আধাঘন্টা-একঘন্টা পরেই কেমন যেন ঝিমুনি ধরে। ঝিমুনি দূর করতেই কফি। কফি নিয়ে ফুড কোর্টে বসে গল্প করছি এমন সময় একটা ছেলে আমাকে দেখে অনেকটা পিছনে ফিরে এসে জিজ্ঞেস করল আমরা বাংলাদেশের কী-না। হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিতেই সাথে সাথে তার মুখটা ঝলমলিয়ে উঠল। বলার আগেই আমাদের সাথের আরেকটা চেয়ারে সেও বসে পড়ল।
দেখেই বোঝা যাচ্ছে ছেলেটার উপর দিয়ে কোন একটা ঝড় বয়ে গেছে। নাম ধামের ধার না ধরে প্রথমেই জানতে চাইলাম কোন প্রোগ্রামে এসেছে, বাড়ী কোথায়। এসেছে ফল সেমিস্টারে, ইঞ্জিনিয়ারিং, আন্ডারগ্রাড করতে। নিজেই তার বয়স বলল ১৮ বছর, আর আমাদের অনুরোধ করল যেন তুমি করে সম্বোধন করি।
ছেলেটা কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে কান্না জুড়ে দিল। সত্যিকারের কান্না। এই অল্প বয়সে দেশ থেকে এসেছে, এখানে বাংলাদেশী বন্ধু নেই, সবাই নাকি হাই-হ্যালোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমরা তাকে শান্ত্বনা দেই। কিন্তু কান্নার কারণ একাকীত্ব নয়, অন্যকিছু যা তার সাথে পরবর্তী কথোপকোথনের মধ্যে আমরা জানতে পারলাম।
ইউনিভার্সিটির ডর্মে থাকে। সে নিয়েও বেচারার অনেক অনুযোগ। তাকে না জানিয়েই নাকি তাকে ডর্ম দেয়া হয়েছে। ডর্মের ফি বাবদ ৫০০ ডলার/মাস হিসেবে প্রায় ৪হাজার ডলার তাকে দিতে হয়েছে। সম্ভবত সেকারণেই সে ইউনিভার্সিটির উপর খানিকটা বিরক্ত। আমরা তার বিরক্তির কোন কারণ খুঁজে পেলামনা, কারণ এটাই স্বাভাবিক। আসল সমস্যা বুঝতে পারলাম বেশ কিছুক্ষণ পরে।
আন্ডারগ্রাডের নিয়ম অনুযায়ী ছয়টি কোর্সে রেজিস্ট্রেশন করেছিল। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে ক্যাশিয়ার অফিসে (বেতনাদি আদায়ের অফিস) গিয়ে তাদের সাথে মনে হয় সে বিবাদ বাধিয়েছে। ছেলেটির ভাষায় এর পরে তারা তাকে "হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়"-- এই বলেই আবার ব্যাপক কান্না। আমাদের বুঝতে একটু সময় লাগে কেন তাকে হঠাৎ হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়া হয়েছিল। হাসপাতালে তাকে তিন সপ্তাহ থাকতে হয়। ফলে ইউনিভার্সটি তার চারটি কোর্স ড্রপ করে দেয় এবং পার্টটাইম স্টুডেন্ট হিসেবে সে রেজিস্টার্ড থাকে। দেরীতে কোর্স ড্রপ করার ফলে তাকে আরো প্রায় ২হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হয়।
তার সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে বুঝতে পারি ছেলেটি মানসিকভাবে সম্ভবত অসুস্থ। সেটা বুঝতে পেরেই কর্তৃপক্ষ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিল। যে বিষয় নিয়ে ছেলেটিকে অত্যধিক চিন্তিত মনে হচ্ছিল তা হল সে কোন কাজ পাবে কী-না তা নিয়ে। ঘটনা বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করে জানলাম তার বাবা দুবাইতে ব্যবসা করে আর তাকে এখানে পাঠিয়েছে একবছরের টাকা দিয়ে। বাকী টাকা তাকে কাজ করে উপার্জন করে পড়াশুনা চালাতে হবে। আর সেকারণেই সে বারবার জিজ্ঞেস করছিল এখানে কাজ পাওয়া যাবে কী-না।
আমরা তাকে আশাহত না করে এই সেমিস্টার পড়াশুনা ঠিক মত করার পরামর্শ দেই। সে আমাদের কথা পুনরাবৃত্তি করে বলে "তাহলে এখন পড়াশুনা চালাই, সামারে কাজ করব। তারপর আবার পড়াশুনা" এই বলে সে নিজেই কাগজে এই কথাগুলো লেখা শুরু করল। আমাদের বুঝতে বাকী রইলনা যে ছেলেটা মানসিভাবে অসুস্থ।
××××××××××××××××××××
এখন প্রশ্ন হল ছেলেটি কি আগে থেকেই মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল নাকি এখানে এসে টাকা-পয়সার চিন্তায় এমন হয়েছে? আগে থেকে অসুস্থ থাকলে তাকে কিভাবে বা কেন এখানে পাঠানো হলো? আর আগে থেকে এমন না হলে তার বাবা-ই বা কোন হিসেবেএতটুকুন একটা ছেলেকে কানাডায় পাঠিয়েছে রোজগার করে পড়াশুনা করতে? যেখানে লোকাল ছেলেমেয়েদেরই পড়াশুনার খরচ যোগাতে ঘাম ছুটে যায়, সেখানে একটা বিদেশী ছাত্র যে কিছুতেই এটা করতে পারবেনা সেই কথা তাকে আমরা আর বলতে পারিনি। তাকে মিথ্যা শান্ত্বনা দিয়েছি যাতে অন্তত এই সেমিস্টার সে ভালভাবে পড়াশুনা করে। টরন্টোতে তার আত্নীয় আছে বোধহয়, সামারে সে সেখানেই চলে যাবে বলল। ছেলেটার অবস্থা দেখে মায়াই লাগল। চলে আসার সময় আমাদের ফোন-ইমেল লিখে দিলাম। এমন ঘটনা আমি আগে দেখিনি, শুনিওনি। কিন্তু ছেলেটার বাবার কান্ডজ্ঞানহীনতা দেখে আমি সত্যিই অবাক হলাম। এমনও কি সম্ভব!
মন্তব্য
আশ্চর্য !!!
আচ্ছা আপনি কি টরেন্টোতে থাকেন?
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
না ভাই, আমি উইন্ডজরে আছি।
- উইন্ডজর? এক বান্ধব ওখানে থাকে শুনেছি। শালার সঙ্গে দেখা নাই মেলা দিন, কথাও হয় না- সেটাও কোটির ঘরে চলে যাবে বছরের হিসাবে।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ঠিক
---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।
ভায়া, আপনিতো "ঠিক"-যন্ত্রনা শুরু করেছেন। সবাখানেই খালি ঠিক ঠিক..
কী করব?
ঠিক দিতে ঠিক ঠিক মজা লাগছে।
অবশ্য আপনি যদি ঠিক-ই রাগ করেন
তাইলে আর ঠিক দিব না...
---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।
একটুখানি মজার তরে দিলাম একটা ঠিক-
ক্যাম্নে কি? রাগ করিলেন- প্রকৃতিপ্রেমিক
---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।
ধুর ভাই। রাগ নামক বিষয়টা সচলায়তনে নাই। তাই রাগের কুনো বিষয় না। মজা করেছিলাম।
ঠিক (১০০%)
---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।
হুমম। এরকম ঘটনা কখনো শুনিনি।
ছেলেটার কোন ধরনের নার্ভাস ব্রেক ডাউন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
আমি বুইঝা পাইনা, আমার দেশের লোকজনের পোলাপান কেমনে বিদেশে আন্ডারগ্রেড এ পড়াইতে পাঠায়।এইদেশের লোক জন ই হিমসিম খায়।সারা জীবন ধইরা পোলা পানের উচ্চশিক্সার জন্য জমাইতে থাকে।খুব খুব ভাল হলে, এখানকার সিটিজেন রা ভাল বৃত্তি পায়,লোন তো নিতে ই পারে, তার পর ও পেরে উঠে না।
আমার আসে পাশে কয়েকজন কে দেখছি, যদিও টিউশন স্কলারশিপ পাচ্ছে, তাতে ই জীবন বের করে দিচ্ছে।এই বাচ্চা গুলোকে প্রথম যখন দেখি, কি ফ্রেস, তরতাজা, সফট, আর এখন, মাথায় খালি টাকার চিন্তা, ক্রেডিট কার্ডের বিল, মেজাজ খিট খিটে।এই প্রেসার নেয়া খুব ই কঠিন।১৮-১৯ বছর বয়সী ছেলে মেয়েদের জন্য খুব বেশী, তার উপর ১৫ চরেডিট আওয়ার পার সেমেসটার।পাগল না হয়ে উপায় নাই।
ওদের কে আর মানুষ রাখে না।
আমার এবার ছিলো বিয়াল্লিশ ক্রেডিট আওয়ার ... ভ্যা ভ্যা ভ্যা ...।
হাঁটুপানির জলদস্যু
ব্যাপারটা অস্বাভাবিক। আপনি স্বল্প সময়ে যা বুঝে উঠতে পারেননি, পাঠক হয়ে আমাদের তা বোঝা আরও দুরুহ। তবে আমার ধারণা ছেলেটি আগে থেকেই মানসিক ভাবে হয়ত আক্রান্ত। শুধুমাত্র টাকার চিন্তায় এত খারাপ অবস্হা হবে কেন? সে তো চাইলেই দেশে এসে পড়া চালিয়ে নিতে পারে কোন না কোন প্রাইভেট ইউনিতে। আর ছেলেটার বাবা-মা ও বা কেমন? ছেলে এত পাকা পোক্ত যদি নাই হবে, তবে কেন খামোখা সেমেস্টারের টিউশন ফি-র বোঝা ছেলের ঘাড়ে চাপাবে?
কি বলতাম? নিজেই গত দেড় বছর ধরে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত আছি। ভাগ্য ভাল যে এখনো মাথা খারাপ হয় নাই।
কি মাঝি? ডরাইলা?
কিছুটা অস্বাভাবিক ঘটনা।
ইন্টারন্যাশনাল ছাত্রদের জন্য এইটা একটা দোজখ
কি আর বলব! এরকম কান্ডজ্ঞানহীন বাবার সংখ্যা অনেক...
সত্য মিথ্যা যাচাই অনেকেই করে না। শুধু গল্প শুনে, অমুকের ছেলে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজে চালাচ্ছে কাজ করে, আবার মাসে মাসে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে...
বিদেশে তো বাতাসে টাকাই উড়ে!
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
রাগিব ভাই ঠিকই বলেছেন। অন্তত তার হাতে একটা আন্ডারগ্রেড ডিগ্রি থাকা উচিত।
নতুন মন্তব্য করুন