যতদূর দৃষ্টি যায় পিচঢালা পথটা সোজা চলে গিয়েছে। দুপাশে নুড়ি পাথর আর কাঁকড় ছড়ানো। সে পথে পথিক হাঁটলে ধূলা ওড়ে। পথের দুই ধারে সবুজ গমের ক্ষেত এখনো পূর্ণতা পায়নি। কেবল লম্বা ঘাসের মত বাতাসে দুলছে এপাশ-ওপাশ। এপথ দিয়ে ঘোড়া টানা গাড়ি চলে। বিজ্ঞানের উৎকর্ষের যুগেও উত্তর আমেরিকার একটি দেশের হাইওয়ের উপর ঘোড়া টানা গাড়ি চলে ভাবতেই কেমন যেন লাগে। ভাবতে অবাক লাগলেও দেখতে ভালই লাগে। কাঠের তৈরি গাড়ি, তাতে টায়ার লাগানো। কালো পোষাক পড়া কোচয়ান। নিজেই মালিক। যাত্রি পরিবহন নয়, নিজের আর পরিবারের জন্য এই বাহন। এরা আমিস, বা মেনোনাইট। খৃষ্টানদের একটা ভাগ। যন্ত্র সভ্যতার মধ্যে বাস করেও যন্ত্রের সুবিধা থেকে স্বেচ্ছা বঞ্চিত। যাকগে সেসব কথা।
ভর দুপরে আমি চলছি তো চলছিই। রাজ্যের ক্লান্তি চোখে। ঝাপটা দিয়ে বাতাস যেন জাগিয়ে দিয়ে যাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। আনমনা হই। পাখি নেই, ফুল নেই, বিশাল আকাশ আর আদিগন্ত ফসলের মাঠ। ক্ষণিকের জন্য বসি পথের ধারে। আধা সবুজ ঘাসের গালিচার গন্ধ খুব কাছ থেকে পাই। কোত্থেকে একটা পাখি হঠাৎ উড়ে এসে পড়ল ঘাসের উপর। ফিঙের সমান কিন্তু ফিঙে নয়, গলায় হরিৎ রং। এ পাখিটাই সচারচর সবখানে দেখা যায়। বাতাসে গমের ক্ষেত দুলে উঠল। মিহি একটা শব্দ শোনা যাচ্ছে। খানিকটা ঢেউ জাগিয়ে আবার পরক্ষণেই হারিয়ে গেল। এ বাদে সুনশান চারদিক।
উপরে আবছা নীল আকাশে সাদা মেঘের ইতস্তত: বিচরণ। এই জমাট বাঁধে তো পরক্ষণেই ধূনা তুলার মত ছড়ানো ছিটানো। অনতিদূরে একটি কৃষিবাড়ি। ফার্মহাউজ হবে হয়তো। উঁচু গম্বুজের মত চিমনীর চূড়া তার অবস্থান ঘোষণা করছে। ঝিরঝির করে বাতাস বইছে। পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ আবার একে একে জড়ো হয়ে সিঁড়ির মত নেমে এসেছে দূর দিগন্তে। যেন খানিক পরেই মেঘদেবতা সেপথে এসে ছুঁয়ে যাবে মর্তলোক।
নিসর্গের কাব্যময় এ রূপ সেলুলয়েডে ধরা যায়না, ফুটে ওঠেনা শিল্পীর ক্যানভাসের স্বল্প পরিসরে। কেবল একাকীত্তের শূন্যতায় আবগাহনেইএর আস্বাদন সম্ভব। আমি উঠে পড়ি। নিস্তব্ধ, নিসঙ্গ দুপুরে নিমগ্ন হই আপন আঁধারে।
মন্তব্য
প্রকৃতপ্রেমিক, অনেক ধন্যবাদ প্রৌঢ়া লেখাটি সংকলনের জন্য নির্বাচন করায়। প্রৌঢ়া-র আঁচল ধরে আপনার ব্লগে ঢুকতেই দেখা গেল আরো কয়েকটি লেখা। এর মধ্যে নিঃসঙ্গ দুপুরে নিমগ্ন চিত্ত লেখাটি বেশ পছন্দ আমার। এ ধরনের লেখাই মনে মনে খুঁজছি।
প্রৌঢ়া থাকুক জমা। পাশাপাশি এই লেখাটিকে কি একটু লম্বা করে ফেলা সম্ভব? দুপুরের ন্যারেটিভটা কিন্তু অসামান্য হয়ে উঠছে এখানে!
..................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
মন্তব্য শুনে ভয়ই লাগছে। কিছুটা সংকোচও। লেখাটা কোনদিকে নেব বলেন। আপনি কি দুপুরের বর্ণনাটা লম্বা করতে বলছেন। সেটা করা আমার জন্য সহজ হবে। মেনোনাইটদের নিয়ে আমার জানার দৌড় ওই পর্যন্তই।
প্রকৃতিপ্রেমিক, প্রথমত, আমি পাঠক হিসেবে আপনার কাছে আমার চাহিদা তুলে ধরছি। পাঠকের দাবি বলে একটা বিষয় আছে তো, সম্পাদকের দাবি এর পরে... হাহা হা হা। আপনি প্রকৃতি কিংবা মেনোনাইট যে কোনো দিকেই আগাতে পারেন, চাইকি উভয় দিক দিয়েই আগাতে পারেন, একান্ত আপনার ইচ্ছা। আমি খালি চাইছি লেখাটা আরেকটু বড় হোক এবং আপনার স্মৃতিকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আরো কিছু অমূল্য রতন হাজির করুক। বাকিটা আপনার ইচ্ছা। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
...................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
সুমন ভাই,
বুঝতে পারছি। নতুন কিছু মাথায়ও আসছে। আরো খানিকটা লম্বা করা যাবে। সাহস দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। দেখি কোন দিক দিয়ে কোথায় নেয়া যায়।
নতুন ভার্সানের অপেক্ষায় ... ..
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
আপডেট দেয়ার জন্য একটু পড়াশুনা করছি। প্রকৃতির বর্ণনা আরো এক প্যারা লিখেছি, আর মেনোনাইটদের নিয়ে আরেক প্যারা হবে। এ সপ্তাহটা লাগতে পারে। ধন্যবাদ, শামীম ভাই আমার লেখা আগ্রহ নিয়ে পড়ার জন্য।
.....
যত বড় হোক সে ইন্দ্রধনু দূর আকাশে আঁকা
আমি ভালবাসি মোর ধরনীর প্রজাপতির পাখা
নতুন মন্তব্য করুন