পেইন্টেড টার্টল (Painted turtle) নিয়ে যখন লেখার চিন্তা করি তখন খুজেঁ দেখি এর কোন বাংলা নাম নেই। তাই আগের পোস্টে নাম দিয়েছিলাম নকশী কাছিম। প্রিয় ব্লগার ধূসর গোধূলী প্রস্তাব করলেন এর নাম দেয়া হোক রঙ্গিলা কাউট্টা। সেদিন বনে বাদাড়ে ঘুরে রঙ্গিলা কাউট্টার কয়েকটা ক্লোজ আপ ছবি পেয়েছি। সেগুলা নিয়েই আজকের লেখা।
অন্য সব সরীসৃপের মতই কাছিম বা কচ্ছপ শীতল রক্ত বিশিষ্ট প্রাণী। যার মানে হলো এরা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। যার ফলে পরিবেশের তাপমাত্রা কমে গেলে এদেরকে নির্ভর করতে হয় সূর্যের আলোর দয়ার উপর। শীত এলে বা শীত না এলেও মাঝে মাঝেই এদের দেখা যায় পানির উপর উঠে গা শুকাতে। ব্যাপারটা শীতের বেলা বেশী হয় কারণ তখন পানির নিচে তাপমাত্রা যথেষ্ট পরিমান কমে যায়। আর তাই গা গরম করতে এরা উপরে উঠে আসে।
আমার ক্যামেরার লেন্স ছোটখাট। তাই দূর থেকে এদের ভাল ছবি তোলা অসম্ভব। বাধ্য হয়েই বেছে নিতে হল ধৈর্যের পরীক্ষা। অজিবওয়ে নেচার পার্কে ঢুকেই সরাসরি চলে যাই ট্রেইল ছেড়ে, কিছুটা জংলা পথ ধরে জলাধারের পাশে।
লম্বা ঘাসের সারি আর নাম না জানা সব জংলি গাছ-গাছালিতে ভরা জলাশয়ের পাড়। সহসাই কারো পা পড়েনি এখানে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। দুপুর শুরু হয়েছে মাত্র। গাছের পাতার ফাঁকে সারা বনে আলোছায়ার নাচন। আমি নি:শব্দে এগিয়ে যাই সেদিকে।
কাছিমেরা সাধারণত আধা-ডোবা গাছের খন্ড বা এমন কিছুর উপরে উঠে রোদ পোহায়। মানুষের আগমন বা নড়াচড়া টের পেলেই আবার পানিতে নেমে পড়ে। তাই খুব সাবধানে পা ফেলে এগোই। একটু দূরেই দেখি দুটোকে। আমার থেকে আনুমানিক ২০ গজের মত দূরত্বে। আমার যতটা বিদ্যা তাতে এটুকু জানি কাছিম রং ততটা চেনেনা যতটা বোঝে মুভমেন্ট। তাই দাঁড়িয়ে না থেকে ক্রল করে এগুতে থাকি আর একটা একটা শট নেই। বলা তো যায়না কখন আবার পানিতে ডুব মারে। এভাবে প্রায় ১০ গজের মধ্যে চলে আসি। আরো কয়েকটা ছবি নেই। প্রিভিউ দেখি কিন্তু মন ভরেনা। আরো কাছে যেতেই হবে।
ক্রল করে আরেকটু কাছে যেতেই ও দুটো ঝুপ করে নেমে যায় পানিতে। যাহ, সব গেলো। তার পরে শুরু হয় অপেক্ষার পালা। এই সুযোগে পানির ৪-৫ গজের মধ্যে চলে যাই। চুপচাপ ওভাবেই উপুর হয়ে শুয়ে থাকি আর ভাবতে থাকি মুক্তিযুদ্ধের কথা। মুক্তিবাহিনীর হাতে শুধু ছিল রাইফেল আর আমার হাতে ক্যামেরা। হা হা... একসময় ওটা ফিরে আসে। আধা-জাগা কাঠের গুঁড়িটার উপরে আস্তে আস্তে উঠে বসে। আমি ঠিক দেখতে পাচ্ছি ওটা ঘাড় ঘুরে আমাকে দেখছে। কিন্তু আমি একদম নড়ছিনা। বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নেই-- ভিন্ন ভিন্ন এক্সপোজারে।
নকশী কাছিম বা রঙ্গিলা কাউট্টা যাই বলিনা কেন, এদের শরীর নিপূন হাতে রং করা। পেটের নিচের দিক হলুদ তার উপর চারকোনাকার হলুদের মাঝে কালো নকশা করা। পিঠের শেল শক্ত, জলপাই রঙের। শেলের চারপাশে লাল রঙের নকশা। গলার উপর লম্বা-লম্বি হলুদ রঙের স্ট্রাইপ মুখের দিক থেকে নেমে এসে শরীরের ভেতর ঢুকেছে। মাঝারি লেজ, লালচে হলুদ স্ট্রাইপ সেখানে। পা কালো রঙের এবং নখ যুক্ত।
এখানে ছবি তোলা শেষ করে আরেকটু সামনে এগুতেই দেখি চারটে কাছিম সামনে পিছনে করে রোদ পোহাচ্ছে। আমার নড়াচড়া দেখেই দুইটা ডুব মারলো। আধাঘন্টা বসে থেকেও ওদের আর দেখা পাইনি। বাকি দুইটা নিচের ছবিতে।
লো-রেজুলেশনের ছবি তুলে দিলাম। বড় ছবি আপলোড হচ্ছিল না।
মন্তব্য
- প্রথম কাউট্টাটা আপত্তিকর ভঙিতে আছে। ঐ ছবি দেখে আমার দ্বীনদুনিয়া হেলে দুলে উঠেছে। সচলায়তন দর্শন তো মকরূহ হয়ে গেলো জনাব। শীঘ্রই একটা ইসলামী কাউট্টার ফটুক দিয়া আপনার ঈমানি তাকতের পরিচয় দিন।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
অনেক চাপের মধ্যেও হাসলাম।
রঙ্গিলা কাউট্টা
নামটা বড় পুঁদিচ্চেরি হয়েছে
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ধন্যি ছেলের অধ্যবসায়!
আপনি তো মহাপাপ করেছেন এতকাল! আপনার এই ফোটোব্লগিং থামালে কিন্তু খবর আছে বলে দিচ্ছি।
হাঁটুপানির জলদস্যু
এই জীবনে যখন কিছুই হইতে পার্লামনা.. তাই সিদ্ধান্ত নিছি আর কিছু হওনের চেষ্টা না কইরা আপনাদের কাজ দেইখা ঈর্ষা কইরাই বাকী জীবন কাটায়া দিমু ।
আপনার এই চমতকার ফটোব্লগিং থামাইয়েননা ভাই ।
যতদূর জানি, কচ্ছপ বা কাউট্টা বা কাউঠা হচ্ছে tortoise, আর কাছিম হচ্ছে turtle। আপনার তোলা ছবি গুলো turtle-এর tortoise-এর না। তাই রঙ্গিলা কাউট্টা নামটা সম্ভবতঃ ঠিক হচ্ছে না।
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সুন্দর...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
tortoise আর turtle এর মধ্যে পার্থক্য কি কেউ একটু বলেন প্লিজ ! এখনও মহামুর্খ রয়া গেলাম।
ছবিগুলো অসাধারন হইছে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
রীতিমত গেরিলা যুদ্ধ।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
অসাধারণ কাজ! আমারও ইচ্ছে হয় এভাবে ছবি তুলতে যাই! কিন্তু হায়...
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
আপনিতো দেখি আসলেই প্রকৃতিপ্রেমিক !!
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
ধুসর গোধুলী যে এসব নাম কোথায় পায়!!!
আর প্রকৃতি প্রেমিক যে এত সুন্দর কাজ কী করে করেন।
আমারো ধারনা ছিল কচ্ছপ আর কাছিম একই জিনিস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
জুয়োলজিতে আমার আগ্রহ আছে কিন্তু কোন ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। তাই কেউ এগিয়ে এলে আরো ভালো হয়। যাহোক, গুগলে খুঁজেছিলাম turtle আর tortoise এর পার্থক্য কী। তেমন কোন লিংক পাইনি তবে যা পেয়েছি তা থেকে যা বুঝলাম তা হলো এরকম:
এরা উভয়েই Testudines বর্গের অন্তর্ভূক্ত।
শরীরের গঠন: টার্টল মূলত জলে বাস করে। সমুদ্রে অথবা পুকুরে বা ডোবায়। সামুদ্রিক টার্টলের পা অনেকটা বৈঠার (ফ্লিপার) মত যাতে করে সমুদ্রের স্রোতে সহেজে সাঁতার কাটতে পারে। শেলের আকার অনেকটা চ্যাপ্টা যা সাঁতার কাটতে সহজ হয়।
টরটয়েজ মূলত স্থলে বাস করে তবে পানিতেও নামতে পারে। টরটয়েজের শেল গম্বুজাকার, পা থামের মত (বৈঠার মত নয়) যা স্থলে হাঁটার জন্য উপযোগী।
প্রাপ্তিস্থান: টার্টল পাওয়া যায় এশিয়া ও আফ্রিকায়। টরটয়েজ পাওয়া যায় উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকায়।
সূত্র: http://www.diffen.com/difference/Tortoise_vs_Turtle
কোন কোন স্থানে টার্টল ও টরটয়েজ সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কোন কোন টরটয়েজের পা টার্টলদের মত বৈঠাকৃতির হয়, যেমন সালকাটা টরটয়েজ। (আমার কাছে ছবি আছে, কেউ চাইলে দিতে পারি)
পেইন্টেড টার্টল সম্পর্কে কিছু তথ্য:
ধারণা করা হয় এরা ৩০০ বছর বাঁচতে পারে তবে এর সপক্ষে বৈজ্ঞানিক কোন প্রমাণ নেই। বিস্তারিত জানতে পড়ুন এখানে।
তাহলে ষষ্ঠ পান্ডবের মন্তব্য অনুসারে পেইন্টেড টার্টলের বাংলা হবে নকশী কচ্ছপ বা রঙ্গীলা কচ্ছপ।
নকশী আর রঙিলা, দুটোই ভালো শোনাচ্ছে। উইকিপিডিয়াতে জুড়ে দিয়ে নামটাকে ব্যাপ্টাইজ করা হোক।
হাঁটুপানির জলদস্যু
উঁহু! "নকশী কাছিম" বা "রঙীলা কাছিম" হবে। কচ্ছপের ডাক নাম যেমন কাউট্টা বা কাউঠা, তেমন কাছিমের ডাক নাম "জল-খাসী"। এতে হুজুররা রাগ করলেও আমার করার কিছু নেই। নামটা বহুযুগ ধরে প্রচলিত।
একটা কনফিউশনের কথা বলি। আপনার ছবিতে এর পিঠ দেখলে একে কাছিম বলেই মনে হয়। তবে পেটের দিক যা দেখা যাচ্ছে তাতে একে কচ্ছপের মত লাগছে। কারন কাছিমের পেটের দিকের প্রিন্ট হবে সাদা-কালো, ধুসর-কালো বা সাদা-সবুজ আর কচ্ছপের প্রিন্ট হবে হলুদ-কালো।
তাইলে কেম্নেকি?
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পান্ডব ভাই,
ঠিকআছে, নকশী কাছিম বা রঙ্গিলা কাছিম। আপনার কনফিউশনের ব্যাপারে বলি-- এটা নিশ্চিত যে পেইন্টেড টার্টল। আর ছবিতে হয়তো পিঠের ডোম টা উঁচু দেখাচ্ছে, কিন্তু আসলে ততটা উঁচু নয়। এরা কাছিমই হবে। তবে শুধু পেটের দিক নয়, শরীরের নরম অংশেও এরকম নকশা করা, শেষের ছবিটা ভালো করে দেখলে দেখতে পাবেন গলার ভেতরের দিকে বেশ নকশী।
- আমার আকীকা দেওয়া নামের একী অবস্থা করছে জনগণ! সেন্টু খাইলাম।
তবে এই কনফিউশন প্রজাতির লাইগা একটা কনফিউজড নাম ঠিক করোন লাগবো দেখি! কই, মওলানা কই, আকীকা দিতে হইবো তো! আ-জা-রে-- আজারে ও মেরে মওলানা আ-জা!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ছবিগুলো অসাধারণ, পাশবিক রকম সুন্দর! ঈর্ষা জাগলো! নিয়মিত চলুক
দেশী অ্যানিমেল প্লানেট চ্যানেল ... ...
বর্ণনা করার স্টাইলটা খুবই সেরকম .... .... একেবারে মনে হয় আমি-ই চলে গিয়েছি ওখানে। জাঝা
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
প্রকৃতিপ্রেমিক, নামে কামে পুরা মিল।
এমন চমত্কার সচিত্র ব্লগিং সচলায়তনের বিষয়বৈচিত্র্য আর মান দুটোই বাড়িয়ে তোলে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
Life is what happens to you
While you're busy making other plans...
- JOHN LENNON
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
আচ্ছা ভাই প্রপ্রে, পানির রং এমন নীল করলেন কী করে? ক্যামেরায়ই কি এরকম ধরা পড়েছে? ব্যাকগ্রাউন্ডে ওই রং অনেক মজা এনে দিয়েছে।
কাউট্টা নিয়ে একটা জেনগল্পমতো জিনিস আছে। সচলায়তনে পোস্ট করি নি। এতগুলো কচ্ছপের ভিড়ে এখানেই মেরে দেই, কী বলেন!
বাগানে একটি কচ্ছপ
দাইজুর মঠে এক ভিক্ষু একটি কচ্ছপ দেখতে পেয়ে দাইজুকে জিজ্ঞেস করল, 'সকল জীবই তাদের হাড় ঢেকে রাখে মাংস ও ত্বক দিয়ে। কিন্তু এই জীবটি কেন তার মাংস ও ত্বক হাড় দিয়ে ঢেকে রাখে? দাইজু তাঁর পা থেকে একটি স্যান্ডেল খুলল ও কচ্ছপটিকে তা দিয়ে ঢেকে দিল।
..................................................................................
দেশ সমস্যা অনুসারে
ভিন্ন বিধান হতে পারে
লালন বলে তাই জানিলে
পাপ পুণ্যের নাই বালাই।
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
নতুন মন্তব্য করুন