নায়াগ্রা আমাকে টানে। খুবই টানে। কানাডার অন্টারিওতে থাকে অথচ নায়াগ্রা দেখেনি এমন মানুষ পাওয়া বিরল। ছোটবেলা থেকে যার কথা শুনে এসেছি কানাডায় আসার পনর দিনের মাথায় তার সাথে প্রথম দেখা। সেই থেকেই নায়াগ্রার প্রেমে পড়েছি। কতবার গিয়েছি তার হিসাব নেই। এখন নায়াগ্রা থেকে অনেক দূরে থাকি, তাই ইচ্ছে থাকলেও যাওয়া হয়ে ওঠেনা।
সেমিস্টারের শেষ ফাইনাল হয়ে গেল ডিসেম্বরের ১৯ তারিখ। বেশীদিন লংড্রাইভ না করলে আমার গা ম্যাজম্যাজ করে। পরিবারকে বললাম চল দূরে কোথাও যাই। রাজী হয়না। বরফকে সবাই ভয় পায়। বাইরে মাইনাস ১৫-১৬ ডিগ্রি, তার উপর আছে বরফের অত্যাচার। শেষ মেষ রাগ করে বললাম ঠিকাছে তোমরা না যাও আমিই যাব; হাইওয়েতে যদি মরা কপালে লেখা থাকে তো তাই হোক।
দিনের নায়াগ্রা অনেকবার দেখা হলেও রাতের নায়াগ্রা কখনোই দেখা হয়নি। বাসা থেকে নায়াগ্রা প্রায় ৫ ঘন্টার ড্রাইভ। এখন সূর্য ডোবে পাঁচটায়। দুপুরে রওনা হলে নায়াগ্রাতে এক ঘন্টা থাকলেও ফিরতে ফিরতে রাত এগারোটা বেজে যাবে। তাই ঠিক হলো ওয়াটারলুতে রাত কাটানো হবে।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে নায়াগ্রা পৌঁছি। কয়দিন পরেই নিউইয়ার। ওপাড়ে আমেরিকার নিউইয়র্ক স্টেটের বাফলো শহর। দলে দলে মানুষ এপার ওপার করছে। আলো ঝলমলে নায়াগ্রা শহর যেন আমেরিকার লাস ভেগাস (শোনা কথা)।
২৫শে ডিসেম্বর ছিল বলে কাছের পার্কিং লট ফ্রি। নাহয় ২০ ডলার গুনতে হতো। গাড়ি রেখে ক্যামেরা ঘাড়ে নিয়ে মেয়ের স্ট্রলার ঠেলতে ঠেলতে হাজির হলাম টেবল রকে। এটা হলো ফলসের সবচেয়ে কাছের একটা স্থান। ইতিহাস জানিনা, ততটা আগ্রহ নেই, তাই এর বেশি বলতে পারছিনা।
নায়াগ্রা রিভার রোডের একপাশে ক্যাসিনো, শেরাটন আর ম্যারিয়ট হোটেল। তার অনেক নিচে আমরা দাঁড়িয়ে। অন্যপাশে ফলস্। ঠান্ডায় হাতের আঙ্গুল জমে যাচ্ছিল। কোনমতে কয়েকটা ছবি তুললাম।
বেশ খানিকটা উপর থেকে আলো ফেলা হয়েছে ফলস্-এর উপর। লাল, নীল, সবুজ, সাদা আর হলুদ আলোয় একেক সময় একেক রকম লাগছে অপরূপা নায়াগ্রাকে।
ফলস্-এর অদূরে চলছে আলোক-উৎসব। দ্বীপের মত একটা জায়গা, চারপাশে ইউ-আকৃতির রাস্তা। রাস্তা দিয়ে খুবই ধীরে গাড়ি চালিয়ে দেখতে হয় আলোকসজ্জা। গাড়ি থামানো যায়না। তাই হাতে নিয়েই কয়েকটা ছবি তুলেছি। রাতের ছবি হাতে নিয়ে তোলার মত পন্ডিত এখনো হইনি। তারউপর নিয়নের আরো, একবার জ্বলে আবার তা পরিবর্তিত হয়ে অন্য কিছু চলে আসে। ফলে কোয়ালিটি সুবিধার না।
আলোক-উৎসবে ঢুকতেই হাতের ডানে পড়ে ডাউনোসর আর পুরাকালের সেই গরুড় পাখি। নিয়নের আলো জ্বলছে আর নিভছে--এভাবেই দেখা গেলো ডাইনোসরের পাতা খাওয়ার দৃশ্য।
তারপরে একে একে হরিণে পাল, গাছের সারি আর নোঙর করা নৌকার দৃশ্য। অদ্ভুদ সুন্দর সেই অনুভূতি। দ্বীপের মাঝখানে সাজানো হয়েছে এসব। চারপাশে পানি যা ঠান্ডার কারণে জমে গেছে।
নৌকা যেন থেমে আছে কোন এক ব্যস্ত বন্দরে। নৌকার উপরে সান্তাক্লজ একে একে উড়িয়ে দিচ্ছে পাখি। নৌকা থেকে নেমে আসছে মূজ, মেরু ভল্লুক, বিভার, খরগোশ আরো নাম না জানা কোন এক প্রাণি। সবকিছু মিলিয়ে কানাডার প্রতিনিধিত্বকারি এই সব আলোকসজ্জা তুলে ধরেছে সময়কে।
বের হওয়ার পথে ডোনেশন বাক্স নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুইটি মেয়ে। এইসব আলোকসজ্জার সবকিছুই ফ্রি। আপনি ইচ্ছে করলে ১-২ডলার দিলেও দিতে পারেন। সবাই দেখলাম কাগজের নোট বার করে দিচ্ছে। টাকা পকেটে রাখা বন্ধ করেছি বহু আগেই। গাড়িতে ২ডলারের একটা কয়েন পেলাম, সেটাই দিলাম।
ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল। রাতে ওয়াটারলুতে ফিরে ঠিক হল পরের দিন টরন্টোতে যাওয়া হবে। পাতাল-রেলে জীবনেও চড়া হয়নি, সাথে রয়্যাল অন্টারিও মিউজিয়ামও দেখা হবে।
তবে তার আগে আরো কয়টা ছবি:
মন্তব্য
আমি একবারই গেছিলাম। আমেরিকান সাইডে এপ্রিল, ২০০৭ এ। আসলেই রাতের নায়াগ্রা দিনের নায়াগ্রার চাইতে বেশি আকর্ষণীয়।
ছবিগুলো সিরাম!!!!!!!!!!!!!!!!!!
গরীবের আবার সিগনেচার!!!
দারুণ সব ছবি!
বয়স বেড়ে যাবার পর নায়াগ্রা-প্রেম অটুট রাখতে ভায়াগ্রা অবদান রাখতে পারে
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
মডুদের প্রতি-
লাইটবক্সের ডিসপ্লে ফায়ারফক্স ছাড়া কোন ব্রাউজারেই আসেনা
২০০৯ সালে আমিও নায়াগ্রা ফলস ভ্রমণ কাহিনি লিখতে চাই। ফটো সহ
মানুষ এতো সুন্দর ছবি কী করে তোলে?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
- কন্কী! নৌকার আলোকসজ্জা কর্ছে নি? বাংলাদেশে যে আওমী লীগ জিতছে এই খবরে তাইলে কানাডাও বাংলাদেশরে তৈলমর্দন শুরু করলো? এইবার তো তাইলে তেলের বাজারে আগুন!
বড় হইয়া আমিও নায়াগ্রার ভায়াগ্রায় (সন্ন্যাসী হৈতে ইমপোর্টেড) গা ভাসাইতে চাই। মাঝখানের অতলান্তিক খালের উপর ততোদিনে একটা বেইলী ব্রীজের দাবি করছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এই না হলে ধুসর গোধূলি। এই বিষয়টাতো মাথায়ই আসেনি (চিন্তিত)। আসলে সবই ষড়যন্ত্রের অংশ, কারণ নৌকার ছবি বানাইছে ইলেকশনের আগেই, আ.লীগের ক্যাম্পেইনের মত
- কানাডা ক্যাম্পেইন কর্ছে দেখেই তো আওমী লীগ জিতলো এইবার! নাইলে তো দাঁড়িপাল্লার সৎ ভাইছাবেরাই গেছিলোগা আরেট্টুর লাইগ্যা।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
রাতের নায়াগ্রা ফলস দেখতে মঞ্চায়
*****
তিন নাম্বার ছবিটা ওয়ালপেপার দিলাম...আপনার প্যাটেন্ট নাইতো?
ছবি তোলার টিপ্স দিয়া কিছু পোস্ট দেন না প্রকৃতিদা
ও...শুভ নববর্ষ!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
কানাডা যাইতে চাই
__________________________
I think , therefore i am - Descartes
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
সবচেয়ে সুন্দর হয়েছে রাতের নায়াগ্রার রঙিন জলের ছবিটা। খুব সুন্দর হয়েছে।
খুবই সুন্দর।
ভালো লাগলো।
জীবন জীবন্ত হোক, তুচ্ছ অমরতা
পিপিদা'র হাতে জাদু আছে!
- যাদু পিপিদার হাতে নেই, যাদু আছে রেডকাউ মার্কা ক্যামেরাতে। (পিপিদা)
হ্যাঁ হ্যাঁ, রেডকাউ মার্কা ক্যামেরা, আমিই তো কিনে দিয়েছি। (মিসেস পিপিদা)
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মনে করায়া দিলেন সেই বিজ্ঞাপনের কথা
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
নায়াগ্রাতে যে কতো বার গেছি তার আর হিসেব নাই। এই ক'দিন আগেও গেলাম। ছবিগুলো অসাধারণ হয়েছে। আপনি টরন্টো আসার আগে একটা কল দিতে পারেন। শিমুলও এখানেই থাকে। একসাথে বসে তিনভাই সুশি খাবো নে।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
পরেরবার হবে। এবারো ভেবেছিলাম কিন্তু স্কেজিউল টাইট ছিল, তাই আগাম যোগাযোগ করিনি।
- বড় হৈয়া আমিও যামু।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নায়াগ্রা দেখার খুব ইচ্ছা অনেক আগে থেকেই, কিন্তু এখন এই ছবি গুলো দেখে মনে হল যে পৃথিবীর সুন্দর্য্য আসলেই কতটা হতে পারে....আল্লাহ কিভাবেই বা সেটা বানিয়েছেন। প্রকৃতিপ্রেমিক কে সত্যি অনেক ধন্যবাদ।।
এ: নায়াগ্রা আমার ভীষণ ভীষণ ভাল লেগেছিল ৷ বার দুই গেছি ৷ তার মধ্যে একবার কানাডার দিক দিয়ে ৷ এত পছন্দ হয়েছিল যে ফিরে এসে একটা লম্বা আ আ ভ্রমণকাহিনী লিখে ফেলেছিলাম ৷
ছবিগুলো এক্কেবারে হু-হা রকমের ভাল ৷ আপনি দারুণ ছবি তোলেন ৷
-------------------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
একেকজন একটা জিনিসকে একেকভাবে দেখে। ভ্রমণ কাহিনীটা আমাদের সাথে শেয়ার করেন, পড়ি, আপনি কিভাবে নায়াগ্রা দেখেছিলেন।
জায়গামত/সময়মত গিয়েছিলাম বলেই হয়তো ছবিগুলো এরকম। যে কেউ তুললেই এমনটা হতো।
কানাডার এবং আমেরিকার দুই দিক থেকে দিন রাত দুই সময়ের নায়াগ্রাই দেখা হয়েছে। অসাধারণ দৃশ্য। তবে সবই গরম কালে। শীতের নায়াগ্রা দেখা এখনো বাকি আছে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নতুন মন্তব্য করুন