পাঠশালার প্রকৃতি, প্রকৃতির পাঠশালা (শেষার্ধ)

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি
লিখেছেন প্রকৃতিপ্রেমিক (তারিখ: শনি, ২০/০৬/২০০৯ - ৯:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জুন ১৪, ২০০৯। রবিবার। ভোর ৫টা।অজানা

গতকালই ঠিক করেছিলাম খুব সকালে উঠে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখবো। ভাগ্য ভালো হলে বাচ্চা সহ হরিণের দেখাও মিলতে পারে। ঘুম ভাঙলেও উঠতে ইচ্ছে করছিল না। বাইরে তখনো অন্ধকার কাটেনি। জানালা দিয়ে রয় আইভর হলের সামনে তাকাই-- কেমন একটা ছমছমে ভাব। তারপর আবার একটুখানি ঘুমিয়ে পড়ি। পৌনে ছয়টার দিকে উঠে ফজরের নামাজ পরে তাড়াতাড়ি ক্যামেরাটা হাতে নিয়েই বেরিয়ে পড়লাম। অসকার পিটারসন হলের পেছনের গেট দিয়ে বের হয়ে একটু জংলা মতো আঁকাবাঁকা রাস্তা পার হয়ে পিচঢালা রিংরোডে উঠতেই দেখি বড়সর একটা ড়্যাকুন ডান দিকের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে রাস্তা পার হয়ে বাম দিকের জঙ্গলে যাচ্ছে।
_MG_2728
ছবি ১: ড়্যাকুনের রাস্তা পার হওয়া।

ড়্যাকুন ততটা ভয়ঙ্কর প্রাণি না হলেও বিপদে পড়লে মানুষকেও আক্রমন করে বসে। দূর থেকে ছবি তুলে ওর পিছু নিলাম। ওটা জঙ্গলে ঢুকে গেলে, দ্রুত রাস্তাটা পেরিয়ে ওর পিছু পিছু আমিও ঢুকে পড়লাম। একটু ভয় ভয় লাগছিল, আবার আক্রমন না করে বসে। তখন প্রায় ৬টা বাজলেও ছবি তোলার মত যথেষ্ট আলো নেই। এত অল্প আলোতে ছবি তোলার মত ফাস্ট লেন্স আমার নেই তবুও কয়েকটা ছবি তুলাম। কম সাটার স্পীডে তোলার কারণে ছবি কেঁপে গিয়েছে।
_MG_2733
ছবি ২: ড়্যাকুন, আমাকে পেছনে আসতে দেখে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

জঙ্গলের বেশী গভীরে ঢোকার সাহস করলাম না। আবার রিং রোডে উঠে হাঁটতে থাকি। হেঁটে আরেকটু এগিয়ে যেতেই রাস্তার পাশে জঙ্গলে একটু খসখস শব্দ। তাকিয়ে দেখি গাছের গায়ের সাথে কোয়ালার মতো কি যেন একটা লেপ্টে আছে। সাবধানে কাছে যেতেই দেখি ড়্যাকুন। মনে হয় কম বয়সী, তাই আমাকে দেখেই আড়ালে যেতে চাইছে। এত লাজুক যে তাকায়ই না। প্রায় ১৫ মিনিট ক্যামেরা তাক করে ঘাপটি মেরে বসে থাকলাম, তবুও তাকালনা।
_MG_2739
ছবি ৩: ড়্যাকুনের বাচ্চা (অথবা অপূর্ণবয়স্ক)।

_MG_2753
ছবি ৪: Little-ringed Plover.

_MG_2747
ছবি ৫ Little-ringed Plover বেশ কয়েকটা একসাথে নাচানাচি করছে। সম্ভবত এদের প্রজনন কাল। পুরুষটা নানা অঙ্গভঙ্গি করে স্ত্রী পাখিটাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।

_MG_2756
ছবি ৬: একসময় উপরে তাকিয়ে দেখি বেলা বেশ হয়েছে।

আর তখনই রাস্তার ওপারে ডান পাশে কিসের যেন নড়াচড়া। আমি ভাবছি হয়তো গরু বা ছাগল গাছের পাতা খাচ্ছে। কিন্তু কিসের গরু, এটা তো সাদা-লেজ হরিণ!

_MG_2759
ছবি ৭: সাদা-লেজ হরিণ (White-tailed Deer)।

_MG_2766
ছবি ৮: শিং না থাকায় ভেবেছিলাম এটা স্ত্রী হরিণ, তবে কনফার্ম হলাম।

তারপর সন্তর্পনে অনুসরণ আর আড়াল থেকে ছবি তোলা। এভাবেই হরিণের পেছনে কেটে গেল ১ ঘন্টা।
_MG_2780
ছবি ৯: উল্লেখযোগ্য সাদা লেজ-- যেকারণে এদের নাম সাদা-লেজ হরিণ।

_MG_2783
ছবি ১০: মেইন রোড মাত্র ২৫০-৩০০ মিটার দূরে, হয়তো কোন শব্দ শুনেই এভাবে তাকিয়েছে।

_MG_2791
ছবি ১১: রাস্তার পার হয়ে যাচ্ছে। ছবি ১০ এর পজিশন থেকে এটি তোলা। (মাত্র ৫০মিটার দূরত্বে)।

ওপাশে বেশ জংলা। এর পর ওটাকে আর ফলো করতে পারিনি। যাহোক, তাড়াতাড়ি শেষ করি।
_MG_2796
ছবি ১২: ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো, মিসিসাগা ক্যাম্পাসের প্রবেশ পথ।

_MG_2797
ছবি ১৩: প্রবেশ পথের উল্টো পাশেই আরো বিরাট বন।

_MG_2802
ছবি ১৪: সেই বনের ভিতরে লম্বা লম্বা গাছপালা।

_MG_2800
ছবি ১৫: গাছের ডালে আমেরিকান রবিন।

_MG_2808
ছবি ১৬: আবারো ফুল।

_MG_2816
ছবি ১৭: ফিলাডেলফিয়া ফ্লিবেন (Philadelphia Fleabane)।

_MG_2814
ছবি ১৮: নাম না জানা ফুল। [আসলে বুনো সরিষা (পান্ডবদাকে ধন্যবাদ)]।

_MG_2817
ছবি ১৯: বেলা বেশ বেড়েছে। এবার ফেরার পালা।

(শেষ) (প্রথম পর্ব)


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১। Little-ringed Plover কি খঞ্জনার জাতভাই? টাংকিমারা পুরুষটার ভঙ্গী দেখে সন্দেহ আরো দৃঢ় হল।

২। সাদা-লেজ হরিণ আর মায়া হরিণে পার্থক্য কী?

৩। ছবি ১৮: নাম না জানা ফুল -এর চেহারা দেখে ব্রাসিকা গোত্রের মনে হচ্ছে। পাতা দেখলে নিঃসন্দেহ হওয়া যেত। এর কাছাকাছি জিনিষ বাংলাদেশে থাকলেও এটি মনে হয় বাংলাদেশে পাওয়া যায় না।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

১। আমি নিশ্চিত নই ওরা খঞ্জনার জাত ভাই কিনা। আসলে এই পাখিটার যত ছবি আমি দেখেছি সবার গলাতেই একটা কালো রিং আছে। কিন্তু আমার ছবির পাখিতে দুইটা রিং। সেজন্য কনফিউজড। তবে এটা প্লোভার, তাতে সন্দেহ নেই।

২। মায়া হরিণ হলো Barking Deer, আকারে বেশ ছোট, উচ্চতা অনেক কম।

৩। ব্রাসিকা মনে হচ্ছে, সম্ভবত বুনো সরিষা (Wild Mustard) এবং কানাডার কৃষি মন্ত্রনালয়ের আগাছা বিষয়ক সাইটের লিংক

সাইফ এর ছবি

পিপিদা, এবারের ছবিগুলোও দূর্দান্ত হয়েছে, একেবারে বেকুব বনে গেলাম, ৫০ ফিট দূর থেকে তোলা হরিণের ছবি দেখে, কোন ভয় ডর নেই

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমিও বেকুবের মত শুধু ছবি তুলেছি আর ভেবেছি এত কাছে হরিণগুলো অথচ কেউ ধরে জবাই করে ভোজ করছেনা!

এমি এর ছবি

সবগুলো ছবি খুব সুন্দর হয়েছে, ১৬ নং ছবিটা দেখে আমাদের দেশী দোপাটি ফুলের কথা মনে পড়ে গেল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এমি, আপনার একটু ভুল হচ্ছে মনে হয়। এই দেখুন দোপাটি ফুল, মনে হয়না এর সাথে ১৬ নং-এর বিশেষ মিল আছে।

auto



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মূলত পাঠক এর ছবি

১৬নং-এর নাম তো আগের পর্বে ছিলো: ডেমস্ রকেট ফুল (Dame's Rocket)।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হ্যাঁ।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

শামীম এর ছবি

ঘুরতে বেশ ভালো লাগলো .... ... ... দারুন।

ছবি-৬ টা অন্যরকম অসাধারণ লাগলো।

আমি হলে এ্যাতক্ষণে ক্ষিদা পেয়ে যেত ... ... হাসি
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

একই রকম আরেকটা ছবি আগের পোস্টেও আছে। ধন্যবাদ মিয়া ভাই।

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

ছবিগুলো বেশ ভাল লাগল। র‌্যাকুনগুলোকে দেখলে যেন মনে হয় তাদের মন খারাপ কোনও কারনে। সবচেয়ে পছন্দ হয়েছে দিনের আলোতে চাঁদের ছবিটা।
----------------------------------------------

--------------------------------------------------------

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ড়্যাকুনে চেহারাই ওরকম, সবসময় একটু মন খারাপ ভাব। ধন্যবাদ। চাঁদের ছবিটার ওরিয়েন্টেশন পরিবর্তন করা হয়নি। ২০০% ক্রপ করা হয়েছে।

মামুন হক এর ছবি

বস যেইসব ছবি দেখালেন তারপর আর আপনার ওখানে না গিয়ে থাকা সম্ভব না। আইতাছি খাড়ান হাসি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এই সপ্তাহান্তে সম্ভব?

হিমু এর ছবি

ছবি ১৬ কি নয়নতারা ফুল না?



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

নয়নতারার ইংরেজী কি? ১৬ নাম্বারটার ইংরেজী নাম Dame's Rocket. উইকি অনুযায়ি এর অন্য নামগুলো হচ্ছে Damask Violet, Dame’s Violet, Dames-wort, Dame’s Gilliflower, Night Scented Gilliflower, Queen’s Gilliflower, Rogue’s Gilliflower, Summer Lilac, Sweet Rocket, Mother-of-the-evening and, Winter Gilliflower.

মূলত পাঠক এর ছবি

না, নয়নতারা অন্য ফুল। উইকি থেকে:

"ফুলটির বাংলায় নাম নয়নতারা এবং বৈজ্ঞানিক নাম- Catharanthus roseus এটি Apocynaceae (dogbane, or oleander family) পরিবারের একটি উদ্ভিদ । অন্যান্য স্থানীয় নামের মধ্যে Cape periwinkle, Madagascar periwinkle, periwinkle, sadabahar, sadaphuli, sadasuhagi, sadsuhagan উল্লেখযোগ্য। আরেকটি প্রজাতি Vinca rosea"।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

নয়নতারা। এর পাপড়ি ৫টি। ডেমস রকেটের ৪টি।

বন্যরানা এর ছবি

ছবি আর বর্ননা দুটোই চমৎকার লেগেছে।

বন্যপ্রানী যেগুলো দেখেছেন সেগুলো কি ওখানেই জন্মেছে, নাকি ছাড়া হয়েছে?

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বাচ্চা সহ মা হরিণ দেখেছি-- তা থেকে ধারনা করি ওখানেই জন্মেছে। ক্যাম্পাসের পরিবেশ এককথায় বন্যপ্রাণির অভয়ারন্য।

ফাহা এর ছবি

৬নং এ চাঁদটা যেন গলে গলে মেঘের বাষ্প হয়ে যাচ্ছে!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হা হা .. তাই তো মনে হচ্ছে।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

হুম।
আমারো...

........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

এবার প্র/প্রে ভাইকে দিয়ে আমার কিছু ছবি তোলাবো ঃ)

তানবীরা এর ছবি

ছবির মতো সুন্দর কিছু নেই, জীবন তাই গেলো ছবিতেইইইইই
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

নিয়ম ভাঙলেন। ১৯টা ছবি দিলেন, আরেকটা কই? খাইছে

আপনার ছবির প্রশংসা শুনতে শুনতে নিশ্চয়ই ক্লান্ত হয়ে গেছেন? আমি আর সেটা না-ই বা বাড়ালাম।

আপনি দেশে আসলে, আপনার কাছে ছবি তোলার বেসিক কিছু তালিম নিব।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হা হা.. নিয়মের কথা মনে ছিলনা। এমনিতেই অনেক ছবি দিয়ে ফেলেছি, আর বাড়াতে চাইনি।

ঠিকাছে। সচলায়তনও একটা ভালো প্ল্যাটফরম, এখানেও প্রশ্ন করতে পারেন। এতে বহুমূখী উত্তর পাবার সম্ভাবনা থাকে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।