১৯৯৮ এর ১৭ ফ্রেব্রুয়ারি। স্বভাবকবি, বন্ধুবর মঈনের সাথে সন্ধ্যা থেকে ডিউটি করছি ডিপার্টমেন্টের বারান্দায়। পরের দিন পিকনিক। ডিউটি মানে পিকনিকের আগের রাতের যোগাড়যন্ত্র করা আরকি। সেসময় মাঝেমধ্যেই কবিকবি ভাব আসতো। সব কিছু গোছগাছ হলে শেষ রাতের দিকে মাথায় ভাব জেগে উঠলো। মঈনকে বললাম চল দোস্ত রাতের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দেখে আসি। নিশিপরীরা এতক্ষণে নিশ্চই তাদের পাট চুকিয়েছে-- ফলে আমরা নিরাপদে ও নির্ঝন্ঝাটেই ঘুরতে ফিরতে পারবো। হলোও তাই, সাড়ে তিনটা থেকে ঘন্টাখানেক এলোমেলো ঘোরাঘুরি করে অবশেষ নিচের কবিতাটির ড্রাফট মাথায় লেখা হলো। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ৪:১৬ মিনিটে কবিতাটির ড্রাফট করা হয় ডাইরীতে। সাহিত্য মান নিয়ে প্রশ্ন না তোলাই ভালো, যা মনে এসেছিল তাই লিখেছিলাম--
সকল পুজো সাঙ্গ হলে নিভলো প্রভাকর
এখন আমার একটু সময় চাই, চাই একটু অবসর
শূন্য বনের নীরব পানে একলা চলে পথ
ক্লান্ত আমি থমকে চলি শূন্য মনোরথ।
মেহগনির সার গুনে, অন্ধকারের গান শুনে--
নারকেলের ঐ ঝুল শাখে উঠলো মৃদু ঝড়
এখন আমার একটু সময় চাই, চাই একটু অবসর।
আমার মতো একলা সবই, শূন্য তরুলতা,
কড়ই শাখে কোকিল ডেকে ভাঙছে নীরবতা
আকাশ বিলায় রূপোর ছায়া আমার চোখের পাড়
অলস চোখের ঘুম টুটেছে আঁধার পারাবার।
আমার বুঝি সঙ্গী হতে হাজার তারা হিম ছড়ালো
রিক্ত চরণ সিক্ত হলেও নেইকো ফেরার ঘর,
এখন আমার একটু সময় চাই, চাই একটু অবসর।
স্থান: ফজলুল হক হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রথম প্রকাশ: সচলায়তন, জুলাই ৮, ২০০৯
(পুরনো ডাইরী থেকে কপি মারছি, ফলে সন তারিখ ও সময় একেবারে ঠিকঠিক আছে। বানানের ব্যাপারে সতর্ক থেকেছি, তবুও যদি কেউ ভুল ধরে দেন, ধন্যবাদের সাথে তা ঠিক করে নেব।)
মন্তব্য
ভাল্লাগছে ঃ)
একটা প্রশ্নঃ
১১ বছর এই জিনিস কী কারণে আগলে রেখেছিলেন!
____________
অল্পকথা গল্পকথা
সচলায়তন ছিলনা যে!
পিপিদা আপনার কবিতা পড়ে খুব ভাল লাগলো।
বানান সব ঠিক!
যাক, আপনার সার্টিফিকেট যখন পাওয়া গিয়েছে তখন নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যেতে পারি আসলে আপনার ভয়েই ঐ নোটটা লিখেছিলাম
সেটাই। রাজর্ষিদা সচলায়তনের বানান টাইরান্ট!
পিপিদার সুপ্ত এরকম আর কি কি প্রতিভা উনি লুকিয়ে রেখেছেন জাতি জানতে চায়
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
দেশে এখন কাকের চেয়ে কবির সংখ্যা বেশী
তবে আমাদের পিপি ঐ কাউয়া গোত্রের কবি না, সে এক সুপ্ত প্রতিভা, তার কবিসত্তা দিনে দিনে আরও বিকশিত হোক, কবিতা পড়ে আমরা বুঁদ হয়ে থাকি এই কামনাই করছি
হা হা.. দোস্ত তুমি এবার ঠিক ঠিক বাড়িয়ে বলেছো। কবিতা পড়ে বুঁদ হয়ে থাকলে "হুছালা" লেখা কে লিখবে? রহিমার মা'রই বা কী হবে?
ভোররাতে কবিতার পংক্তি তৈরি করার অনুভূতি রীতিমতো স্বর্গীয়। কোনো কবিপ্রতিভা না... আপনার সেই মুহূর্তের অনুভূতির অলৌকিক আবেশটা অনুভব করছি চোখ বুঁজে...
--------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
আপনি আসল উদ্দেশ্যটা ধরতে পেরেছেন। ব্যাকগ্রাউন্ডটা বলেছি কবিতাটাতে কী লেখা হয়েছে তা বোঝাতে। আসলেই সে মুহূর্তের অনুভূতিগুলো কিছুকিছু কবিতাতে এসেছে।
পিপিদা, কবিতা ভালো লাগলো। ম্যালা আগে হলে থাকতে একবার ম্যালা রাইতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কায়কারবার দেখতে গেছিলাম। মন খারাপ হয়ে গেছিল।
তা হয় বৈকি। কোন এক ভিসির আমলে নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হতো a state within a state. সেই দিনও নাই, সেরকম মানুষও নাই। পা চেটে চেটে চেয়ার বাগালে আর যাই হোক, সেখানে ভালো কিছু করার সুযোগ কমে যায়।
কিন্তু প্রথম লাইনেই প্রভারে নিয়ে টানাটানি করলেন? এখন তো হিমু আইসা মারামারি শুরু করে দেবে...
এইবার বলেন গোপনে গাপনে এখনো মাঝে মাঝে যেগুলা লেখেন সেগুলা মাঝে মাঝে ছাড়েন না কেন?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হে হে.. এ জন্যইতো প্রভাকর লিখেছি
ভয় নাই, হিমু এখন ৬হাজার বছর আগে চলে গেছে, কবিতা ট্যাগ দেখে সহসা এখানে ঢুকবেনা।
ভালো লাগলো, আরো ভালো লাগলো পূর্বকথন।
একুশ/বাইশে কবিতার সাথে সহবাস না হলে বড় হবার আধখানা বাকী থেকে যায় বলে মনে হয়। জীবনের চাপে, পাপে তেমন শুদ্ধ মন কখন কোথায় যে হারিয়ে গেলো।
দুহাজারের আগের আরো কিছু লেখা খুঁড়ে বের করুন, সবাই মিলে সেই আবেগ ও বয়সটাকে খুঁজি।
ফকির লালন,
আপনা মন্তব্য আমার খুব মনে ধরলো। আসলেই ঐ বয়সে বাঙালি ছেলে যদি কবিতাই না লিখলো তো কিসের কী? বাকীটাও একেবারে যথার্থ বলেছেন-- "জীবনের চাপে, পাপে তেমন শুদ্ধ মন"-- আহা সে মধুর দিনগুলি!
প্রায় একযুগ!
কতো যত্নে আগলে রাখা সম্পদ।
ভালো লাগলো, পিপিদা।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
এত বছর কেমনে গোপন রাখলেন পিপিদা
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
কবিতা নিয়ে মন্তব্য করতে ভয় পাই। তারপরও বলি, ভালো লেগেছে এক যুগ বন্দী থাকা কবিতার মুক্তি।
_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি।
_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)
ভালো লাগলো খুব। এরকম লেখা আরো থাকলে তাড়াতাড়ি ছাড়ুন।
---------------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
এত মন্তব্য পড়ে লজ্জাই লাগছে। সাইফ, শাহেনশাহ, সুলতানা পারভীন শিমুল, নিবিড়, শামীম রুনা, এবং ভুতুম-কে আলাদা করে তাই জবাব দিলাম না। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। সেই সাথে যারা পড়েছেন কিন্তু মন্তব্য করেননি তাদেরকেও ধন্যবাদ।
কবিতা ভালো লাগলো বস...
তারচেয়েও ভালো লাগলো কবিতা জন্মের ক্ষণটাকে আপনি যেভাবে তুলে ধরলেন ...
ওটা আরো সুন্দর কবিতা।
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
অনেক ভালো লাগলো। সবচেয়ে বড় কথা হলো এমন ভাবে, এই স্টাইলে এখন কেউ কবিতা লেখে বলে মনে হয় না॥
কবি, আমি সবসময়ই চেয়েছি একজন কবি তার কবিতার শানে-নুযুল লিখে রাখুক তার পাঠকের জন্য। সেকারণেই হয়তো এভাবে লিখে ফেললাম।
কবিতা খুব ভাল লাগল। তারচাইতেও ভাল লাগল শুরুর কথাগুলো।
আমার বিশ্বাস, শুধু পুরনো কবিতাই নয়, প্রকৃতিপ্রেমিক ভাই এখনো দারুণ কবিতা লিখতে পারবেন চাইলেই। কবিতা সংকলনের অপেক্ষায় আছি।
নতুন মন্তব্য করুন