সেবা খাতে দুর্নীতি বিষয়ক খানা জরিপ: টিআইবির রিপোর্টের গভীরে গিয়ে দেখা

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি
লিখেছেন প্রকৃতিপ্রেমিক (তারিখ: মঙ্গল, ২৮/১২/২০১০ - ৩:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের
পরিচালিত জাতীয় খানা জরিপ ২০১০ এর ফলাফল প্রকাশের পর থেকে কিছু বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে গেল। রিপোর্ট প্রকাশের পরে প্রথম প্রতিক্রিয়া জানান ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের দুই মন্ত্রী-- শিল্পমন্ত্রী জনাব দিলীপ বড়ুয়া এবং আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। পরবর্তীতে ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ টিআইবি’র প্রতিবেদনের সমালোচনা করেন (প্রথম আলো ২০১০-১২-২৫)। এদের সাথে সুর মেলান আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদও (প্রথম আলো, ২০১০-১২-২৫)। এর দুই দিন পরে কুমিল্লার ১ নম্বর আমলি আদালতে টিআইবির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন বিএনপি-সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কুমিল্লা জেলা শাখার সদস্য তৌহিদুর রহমান (প্রথম আলো, ২০১০-১২-২৭)। জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম গাজী সাইদুর রহমান মামলাটি আমলে নেন এবং টিআইবি'র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম হাফিজউদ্দিন খান, নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ও জ্যেষ্ঠ ফেলো মো. ওয়াহিদ আলমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। একই দিন চট্রগ্রামেও একটি আদালতে টিআইবির সেই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাকারী দুইজনই সেখানকার আইনজীবী।

নাটকীয়ভাবে কুমিল্লার মামলাটি সন্ধ্যায় খারিজ হয়ে যায়। খবরে বলা হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ক্ষেত্রে তলবানা ফরমে বিবাদীর পূর্ণ ঠিকানাসহ যোগাযোগের আনুষঙ্গিক বিষয়াদি না থাকায় একই আদালত সন্ধ্যায় মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন (প্রথম আলো, ২০১০-১২-২৭)। শেষ খবর মোতাবেক চট্টগ্রামের মামলাটি এখনও জারী আছে।

টিআইবির প্রতিবেদনে আমি যতটা অনাআগ্রহী ছিলাম তারচেয়ে বেশি আতঙ্কিত এবং বিরক্ত হয়েছি পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে। সব শেষে সিক্রোনাইজড মামলা শুরু হলে বিষয়টা নিয়ে একটু গভীরভাবে জানার আগ্রহ জাগে। মূলত প্রথম আলো, ইত্তেফাক, কালের কন্ঠ, এবং জনকন্ঠের রিপোর্টগুলোতে নজর বুলাই। তারপর নজর বুলাই মন্ত্রী মহোদয় এবং পুলিশ কমিশনারের মন্তব্যে। এগুলা পড়া হলে টিআইবির ওয়েব সাইট থেকে রিপোর্টের পিডিএফ নামাই এবং সেটা স্কিম থ্রু করি। পুরো বিষয়টি একটি একাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করি এবং তার ফলশ্রুতিতে সচলায়তনের জন্য এই লেখাটি তৈরী করি।

প্রথমেই দেখা যাক কে কী বলেছেন:

কিছু প্রতিক্রিয়া

প্রথম আলো ২৫ডিসেম্বর অনলাইন ভার্সনে জানাচ্ছে

গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করার জন্য যারা ষড়যন্ত্র করছে, টিআইবি পরোক্ষভাবে তাদের পক্ষেই আছে। বঙ্গবন্ধু একাডেমি আয়োজিত ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর করা এবং সনদপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগে নিম্ন বেতনভুক কিছু কর্মচারী থাকতে পারে, যারা হয়তো ফাইল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য পাঁচ, দশ বা কুড়ি টাকা উৎকোচ নিতে পারে। কিন্তু তারা ঢালাওভাবে বিচার বিভাগকে যেভাবে দোষারোপ করেছে, বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য যেভাবে চেষ্টা চালিয়েছে, আমি মনে করি, আমাদের বিচার বিভাগকে এই মুহূর্তে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এটা একটা ষড়যন্ত্র।’

মনে পড়ে গেল টিআইবির রিপোর্টে চারদলীয় জোটের শাসনামালে বাংলাদেশে যখন দুর্নীতিতে শীর্ষস্থান দখল করেছিল তখন আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া কী ছিল। পাঠকের নিশ্চই স্মরণ আছে। আমাদের কিছু কিছু রাজনীতিবিদদের চরিত্রই এমন যে কোনকিছু তাদের পক্ষে গেলেই সেটার সমর্থনের যা করার করেন, আবার বিপক্ষে গেলেই সমালোচনাটুকে মেনে নিতে পারেন না।

একই অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা পরিষ্কার করে যখন সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, তখন কিন্তু বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলছে। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাইছি, টিআইবির ওই রিপোর্ট সেই ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ।’

পুলিশের প্রতিক্রিয়ায় আমরা দেখি-- টিআইবির প্রতিবেদনকে ‘অনুমাননির্ভর’ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ। গতকাল মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরে ব্রিফিংয়ের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এ-জাতীয় প্রতিবেদন অনুমানভিত্তিক না করে গবেষণাভিত্তিক হওয়া উচিত। জরিপকারীদের প্রক্রিয়াগত ত্রুটি রয়েছে।

কিছুদিন আগে অনুরূপ এক জরিপে (তথ্য সূত্র প্রয়োজন) পুলিশ শীর্ষস্থান অধিকার করছিল। কিন্তু উদ্ধৃত অংশ পড়ে হাসবো না কাঁদবো তা বুঝতে পারছি না। জনাব বেনজীর আহমেদ কোন্ তথ্যের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদনকে ‘অনুমাননির্ভর’ বললেন তা জানতে মন চাইছে। দু:খের বিষয় এই প্রশ্নটি ওনাকে কোন সাংবাদিক করেছেন বলে জানা যায়নি। উনি পরামর্শ দিয়েছেন অনুমানভিত্তিক প্রতিবেদন না করে গবেষণাভিত্তিক প্রতিবেদন হওয়া উচিত। টআইবি'র গবেষণায় প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কথাও উনি উল্লেখ করেছেন।

স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করি পুলিশের বক্তব্য হবে তথ্যনির্ভর। উপরন্ত উনি যেসব অভিযোগ তুলেছেন তা পড়ে মনে হল জরিপ ডিজাইন এবং পরিচালনায় ওনার একাডেমিক ও বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে। মূলত বেনজীর আহমেদ-এর বক্তব্যের প্রেক্ষিতেই আমি টিআইবির প্রকাশিত এক্সিকিউটিভ সামারি-তে (টিআইবি এ.সা, ২০১০) একটু নজর দেই। সেখান থেকে যা পাই:

রিপোর্টের ৬ নম্বর পৃষ্ঠার ১.২ নম্বর সেকশনে জরিপের উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা বলা হয়েছ তা আমার অনুবাদে এরকম:

(১) এটা নিরূপণ করা যে সেবা নিতে গিয়ে খানার সদস্যদের কোন রকম দুর্নীতির সম্মুখীন হতে হয় কিনা
(২) বিভিন্ন খাতে সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হলে সে দুর্নীতির তার ধরণ ও মাত্রা নিরূপণ
(৩) সেবা খাতে দুর্নীতি রোধে পলিসি রেকমেন্ড করা।

রিপোর্টের একই পাতায় ১.৩ নম্বর সেকশনে জরিপের পদ্ধতি এবং নমুনা সংগ্রহ বিষয়ক বর্ণনা বিস্তারিত আছে। আমি সংক্ষেপে সেটি টিআইবির বাংলা প্রেস রিলিজ, এক্সিকিউটিভ সামারি, এবং কিছু অংশ নিজে যোগ করে তুলে ধরছি।

গবেষণা পদ্ধতি ও নমুনা সংগ্রহ

টিআইবি ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটি জাতীয় খানা জরিপ পরিচালনা করেছে। ২০১০ সালের খানা নির্বাচনের ক্ষেত্রে Three Stage Stratified Cluster Sampling পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রণীত Integrated Multi-Purpose Sampling Frame (IMPS) অনুসরণে জরিপ পদ্ধতিটি পরিচালিত হয়েছে। এই খানা গুলো IMPS অনুসরণে সারা দেশের ৬৪টি জেলার ৩০০টি Primary Sampling Unit (PSU) থেকে বাছাই করা হয়েছে।

প্রথম ধাপে ১৭৪টি (৫৮%) শহুরে এবং ১২৬টি (৪২%) পল্লী এলাকার পিএসইউ দৈব চয়ন পদ্ধতিতে নির্বাচন করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে প্রতিটি পিএসইউ এর মধ্যে অবস্থিত খানাগুলোকে ২০০টির ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। সেখান থেকে একটি ব্লক দৈব চয়ন পদ্ধতিতে নির্বাচন করা হয়েছে। এভাবে ৩০০টি পিএসইউ থেকে ৩০০টি ব্লক (প্রতি ব্লকে ২০০ খানা) নির্বাচন করা হয়েছে। তৃতীয় বা শেষ ধাপে প্রতিটি ব্লক থেকে ২০টি করে খানা সিস্টেমেটিক স্যামপ্লিং (উইকি) এর মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। অর্থাৎ প্রতি পিএসইউ থেকে ২০টি করে খানা নিয়ে মোট ৩০০টি পিএসইউ থেকে ৬০০০টি খানা নির্বাচন করা হয় এবং এর উপর জরিপ পরিচালিত হয়। টিআইবি'র রিপোর্ট জানাচ্ছে ৩,৪৮০টি খানা (৫৮%) পল্লী এলাকায় এবং ২,৫২০টি খানা (৪২%) নগর এলাকায় অবস্থিত। জরিপকালীন সময়ে (২০১০ সালের ৯ জুন থেকে ২০ জুলাই) সার্বিকভাবে দুর্নীতির শিকার হওয়া খানার প্রাক্কলিত হারের রিলেটিভ স্ট্রান্ডার্ড এরর ১.২% এবং সার্বিকভাবে ঘুষ দেওয়া খানার প্রাক্কলিত হারের রিলেটিভ স্টান্ডার্ড এরর হচ্ছে ১.৮%।

রিলেটিভ স্ট্যান্ডার্ড এরর-এর ব্যাখ্যা দেয়া একটু কঠিন। শুধু স্ট্যান্ডার্ড এরর দিয়ে বোঝায় প্রাক্কলিত সংখ্যার মধ্যে ভ্যারিয়েশন বা ভেদ-এর পরিমান। রিলেটিভ স্ট্যান্ডার্ড এরর বের করা হয় প্রাক্কলিত স্ট্যান্ডার্ড এরর কে গড় দিয়ে ভাগ দিয়ে শতকরায় প্রকাশ করে। রিলেটিভ স্ট্যান্ডার্ড এরর আসলে দুই জরিপের ফলাফল তুলনার জন্য উপযোগী, এর সাংখ্যিক মানের ব্যাখ্যা দেয়া কঠিন।

২০১০ সালের ৯ জুন থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত দেশের ৬৪টি জেলায় ১৭টি তথ্য সংগ্রহকারী দলের মাধ্যমে এই খানা জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে টিআইবির গবেষক ও তত্ত্বাবধায়করা পূরণকৃত প্রশ্নপত্র যথাযথভাবে সরেজমিনে ব্যাক চেক ও স্পট চেক করেন। এছাড়া জরিপের বৈজ্ঞানিক মান, জরিপ পদ্ধতি, প্রশ্নমালা তৈরি ও বিশ্লেষণে সর্বোচ্চ উৎকর্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে পরিসংখ্যান ও জরিপ সংক্রান্ত গবেষণায় বিখ্যাত পাঁচজন বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি টিআইবিকে সার্বিকভাবে সহায়তা ও পরামর্শ দিয়েছেন। (বাংলায় টিআইবি প্রেস রিলিজ, ২০১০)

নমুনা সংগ্রহকারীরা ছাপানো প্রশ্নমালার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেন। নমুনা সংগ্রহকারিদের সবাই কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রীধারী এবং প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের নির্বাচিত করা হয়। তাদের সবাইকে তিন দিনের ট্রেনিং দেয়া হয় এবং ট্রেনিংয়ের শেষে প্রশ্নমালা ফিল্ড-টেস্ট করা হয়। ফিল্ডটেস্টের ফীডব্যাকের ভিত্তিতে প্রশ্নমালা সংস্করণ করা হয়।

কথা হচ্ছে "বিচার বিভাগ" নিয়ে

কেউ যখন বলে 'সরকার দুর্নীতিবাজ', তখন শ্রোতা বা পাঠক হিসেবে আপনার কী মনে হয়? প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবাজ? মন্ত্রীরা দুর্নীতিবাজ? আমলা? পুলিশ? অনুমান করে বলা যায় 'সরকার দুর্নীতিবাজ' বলতে সরকারের যন্ত্রগুলো দুর্নীতি করে এমনটাই মনে হয়। এটা এক ধরনের পারসেপশন, অবজেক্টিভ কোন ফলাফল নয়। কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনা সরকারের কোন ক্ষেত্রটিতে বেশী দুর্নীতি হয়। এটি একটি উন্মুক্ত প্রশ্নের মতো।

টিআইবি'র গবেষণায় সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় (তাদের গবেষণার উদ্দেশ্য দ্রষ্টব্য)।

প্রথমেই আমাদের দেখতে হবে দুর্নীতি বলতে টিআইবি কী বুঝিয়েছে। আসুন দেখা যাক টিআইবি'র রিপোর্ট এ নিয়ে কী বলে। তাদের গবেষণায় দুর্নীতির সংজ্ঞা পাওয়া যায় এক্সিকিউটিভ সামারি রিপোর্টের ৫ম পৃষ্ঠায়। সেখানে বলা হয়েছে:

The definition of corruption used in this survey is abuse of power for personal gains. Apart from accepting bribe or compelled to pay bribe, negligence of duty, nepotism, embezzlement of money or assets, deception and different types of harassment have been included under the definition of corruption.

অর্থাৎ সেবা পেতে ঘুষ সহ সকল প্রকার অগ্রহণযোগ্য বাধাগুলোকেই তারা দুর্নীতি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে। রিপোর্টের বিশ্লেষণ করতে গেলে কিংবা রিপোর্টের ফলাফল কোথাও প্রকাশ করতে গেলে এ সংজ্ঞাটি আমাদের স্মরণ রাখতে হবে।

রিপোর্টের বেশ কিছু ফলাফল দেয়া হয়েছে, তবে আমি আমার আলোচনায় মূলত দুটি বিষয় এনেছি-- (১) সার্বিক দুর্নীতির চিত্র, (২) শুধু ঘুষ বিষয়ক দুর্নীতির চিত্র।

সার্বিক ভাবে ১২ টি বিভাগে সেবা নিতে গিয়ে হওয়া দুর্নীতির উপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে:
১) শিক্ষা
২) স্বাস্থ্য
৩) স্থানীয় সরকার
৪) আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
৫) বিচার সংক্রান্ত বিভাগ
৬) কৃষি ক্ষেত্র
৭) ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগ
৮) বিদ্যুত
৯) কর বিভাগ
১০) মুসক ও আবগারি
১১) ব্যাংক
১২) ইন্সুরেন্স ও এনজিও

সার্বিক দুর্নীতির ক্ষেত্রে রিপোর্টে বলা হয়েছে জরিপে অংশ নেয়া ৮৪.২% খানা কোন না কোন ভাবে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। সারণি-২ দ্রষ্টব্য।

Photobucket

শুধুমাত্র ঘুষ বিষয়ক দুর্নীতির চিত্র আমরা দেখতে পাই নিচের সারণিতে সারণি-৩ দ্রষ্টব্য।

Photobucket

টিআইবির গবেষণার রিপোর্টে প্রকাশিত আরেকটি ফল হচ্ছে বিচার বিভাগে সেবা নিতে গিয়ে মানুষ সবচেয়ে বেশী দুর্নীতির শিকার হয়েছে। সেই সাথে বিচার বিভাগের কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষ দুর্নীতির শিকার হয়েছে তার একটি চিত্র নিচের চিত্র-৩ এ উঠে এসেছে (টিআইবি এ.সা. ২০১০, পৃষ্ঠা ১০)।

Photobucket

দেখা যাচ্ছে বিচার বিভাগে সেবা নিতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে ঘুষ বিষয়ক। অর্থাৎ যারা সেবা নিতে গিয়েছেন তাদের বেশীরভাগই কাউকে না কাউকে ঘুষ দিয়েছেন। সেটা হতে পারে নিম্নস্তরে, হতে পারে উচ্চস্তরে। গবেষণা না করে সে বিষয়ে অনুমান নির্ভর কিছু বলা সমীচীন নয়।

এবার একটু গভীরে গিয়ে দেখা যাক

পরিসংখ্যানে যখন কোন কিছুর প্রাক্কলন করা হয় তখন প্রাক্কলন শুধু মাত্র একটি সংখ্যায় প্রকাশ না করে সাধারণত একটি আস্থা ব্যবধানের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। ৯৫% আস্থা ব্যবধান (confidence interval) বেশী জনপ্রিয়। তবে গবেষক ক্ষেত্রবিশেষে এটি বাড়াতে বা কমাতে পারেন। যেমন ৯০% কিংবা ৯৯% আস্থা ব্যবধান অনেক ক্ষেত্রে যথাযোগ্য হতে পারে। আলোচ্য জরিপের যে কিছু কিছু ফলাফলের যে প্রাক্কলন করা হয়েছে সেখানে আমার মতে ৯৫% প্রাক্কলন গ্রহণযোগ্য। টিআইবি'র রিপোর্টের পরিশিষ্টে কিছু সারণি দেয়া আছে যেখানে প্রাক্কলনের সাথে স্টান্ডার্ড এরর এর পরিমান দেয়া আছে। যদিও মাল্টিস্টেইজ-ক্লাস্টার দৈবচয়নে (multistage cluster sampling) মার্জিন অব এরর বের করার কিছু পদ্ধতি রয়েছে, রিপোর্টে সে সম্পর্কে কিছু বলা না থাকায় আমি নরমাল এপ্রক্সিমেশন করে ৫% এরর বিবেচনা করে ৯৫% আস্থা ব্যবধান বের করেছি। স্ট্যান্ডার্ড এররকে ১.৯৬ দিয়ে গুন করে মার্জিন অব এরর পাওয়া যায় (নরমাল এপ্রক্সিমেশন ধরে)।

৯৫% আস্থা ব্যবধানের সরল অর্থ হচ্ছে একই প্রশ্নমালা নিয়ে যদি নতুন করে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয় এবং জরিপটি যদি অসংখ্য বার পুনরাবৃত্তি করা হয়, তাহলে এসব জরিপ থেকে যে প্রাক্কলন করা হবে তার শতকরা ৯৫ ভাগ প্রাক্কলনই এই আস্থা ব্যবধানের মধ্যে হবে।

উপরের সারণি ২ এবং ৩ থেকে আমরা দুর্নীতির শিকার খানার শতকরা হিসেবে দেখতে পাই বিচার (৮৮%), পুলিশ (৭৯.৭%), এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগ (৭১.২%) রয়েছে সর্বশীর্ষে। আরো দেখতে পাই সার্বিক বিচারে বিচারিক সেবা নিয়ে গিয়ে সবচেয়ে বেশী খানা দুর্নীতির শিকার হলেও ঘুষ প্রদানের বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে পুলিশ বিভাগ (৬৮.১%) এগিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে ভূমি ব্যবস্থাপনা ৬৭% নিয়ে পুলিশের কাছাকাছি অবস্থান করছে। বিচার বিভাগ ৫৯.৬% নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে শুধু শতকরা হিসাব দেখলে প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায় না। কারণ, যেকোন জরিপে জরিপ করার কারণে কিছু ভুল হয়, যাকে বলে স্যামপ্লিং এরর। সেজন্য এসব শতকরা হিসাবের সাথে স্ট্যান্ডার্ড এররকেও বিবেচনায় আনতে হবে। সাধারণত মাল্টিস্টেইজ ক্লাস্টার স্যামপ্লিং সাধারণ দৈবচয়নের চেয়ে কম এফিশিয়েন্ট, অর্থাৎ এর ভেদ বেশী হয়। তবে নমুনার সংখ্যা যথেষ্ট পরিমানে হলে নরমাল এপ্রক্সিমেশন করা যায়। আলোচ্য জরিপে নমুনার সংখ্যা আমার মতে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। তাই আমি টিআইবি'র রিপোর্টের পরিশিষ্টে দেয়া সারণির তথ্যের ভিত্তিতে মার্জিন অব এরর বের করে করে ৯৫% আস্থা ব্যবধান গণনা করেছি। সারনি এ-২, সারণি এ-৩ দ্রষ্টব্য

Photobucket

উদাহরণ হিসেবে বিচার বিভাগে সেবা নিতে গিয়ে সার্বিকভাবে দুর্নীতির শিকার হয়েছে ৮৮% খানা। এই হার পুলিশ বিভাগে ৭৯.৭%। এই বিচারে মনে হতে পারে বিচার বিভাগে দুর্নীতির পরিমাণ বেশী। কিন্তু আমরা যদি স্ট্যান্ডার্ড এরর বিবেচনায় নেই, তাহলে প্রাক্কলনের ভেদ-কে ১.৯৬ দিয়ে গুন করলে মার্জিন অব এরর পাই, যা বিচার বিভাগে ৫.২৯% এবং পুলিশ বিভাগে ৪.১১%। ৯৫% আস্থা ব্যবধান যথাক্রমে বিচার বিভাগে (৮২.৭৮, ৯৩.২৯) এবং পুলিশ বিভাগে (৭৫.৫৮. ৮৩.৮৬)। লক্ষণীয় যে, বিচার বিভাগের আস্থা ব্যবধানের অন্তর্বর্তী ব্যবধান (১০.৫৮) যা পুলিশ বিভাগের আস্থা ব্যবধানের (৮.২৩) চেয়ে বেশী। অর্থাৎ সুক্ষ্ণতার বিচারে পুলিশ বিভাগের আস্থা ব্যবধান বেশী গ্রহণযোগ্য কারণ এর আস্থা ব্যবধানটি ছোট। উপরন্ত দুই বিভাগের আস্থা ব্যবধান তুলনা করে আমরা দেখতে পাই এদের মধ্যে ওভারল্যাপ আছে। অর্থাৎ প্রাক্কলিত মান যেহেতু এই আস্থা ব্যবধানের মধ্যে থাকার কথা, সেই হিসেবে পুলিশ এবং বিচার বিভাগের মধ্যে আদৌ কোন পার্থক্য রয়েছে কিনা তা শুধু মাত্র শতকরা হিসাব দেখে বলা সম্ভব নয়। পরিসংখ্যানের বিচারে কে কার চেয়ে দুর্নীতে এগিয়ে এটা অন্তত জোর দিয়ে বলা যায় না। একই চিত্র পাই শুধু ঘুষ বিষয়ক দুর্নীতির ক্ষেত্রেও। সারণী এ-২ এবং সারণী এ-৩ দ্রষ্টব্য। এই সারণি দুটি টিআইবি'র রিপোর্টের পরিশিষ্টে দেয়া ছিল। আমি শুধু মাত্র ৯৫% আস্থা ব্যবধান এবং ব্যবধান কলাম দুটি যোগ করেছি।

শেষ কথা

শেষ করার আগে আরো কয়েকজনের বক্তব্যে নজর দেয়া যাক। শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া:

শিক্ষা খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের পরিমাণ কমে আসার খবরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি শিক্ষা খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। এসব উদ্যোগের ফলে শিক্ষায় দুর্নীতি কমে আসার যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে, তা অযৌক্তিক নয়। তিনি বলেন, শিক্ষা খাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

একই রিপোর্ট এক মন্ত্রী গ্রহণ করেছেন, অন্যেরা করছেন না। কেন করছেন না তা ভেবে দেখার ভার আমি পাঠকের উপর ছেড়ে দিলাম।

আইন মন্ত্রী বলেছেন, ‘টিআইবির প্রতিবেদনে সারবস্তু নেই, এটা তথ্যভিত্তিক নয় বরং বিভ্রান্তিমূলক। জনগণ যেন এ প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এমন কোনো ধারণা না করেন যে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা ও বিচার বিভাগ দুর্নীতিগ্রস্ত।’ শফিক আহমেদ আরও বলেন, ‘এ প্রতিবেদনটি বিচার বিভাগের সুনাম নষ্ট করার একটা হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। এর উদ্দেশ্য মহৎ নয়।’
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, 'টিআইবির জরিপে দুর্নীতির আংশিক চিত্র উঠে এসেছে। দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা আরো বেশি। দুর্নীতির সার্বিক চিত্র দেখতে হলে উচ্চপর্যায়ে যে দুর্নীতি হয়, তাও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।' তিনি আরো বলেন, জাতীয় অর্থনীতির ৫০ শতাংশ ব্ল্যাক মানি। দুর্নীতি কমিয়ে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

আমার মতে সবচেয়ে যৌক্তিক প্রশ্ন তুলেছেন জুডিশিয়াল সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, 'এ গবেষণায় বিচার বিভাগ বলতে কী বোঝানো হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। বিচার বিভাগে যেমন বিচারকরা কাজ করেন তেমনি এখানে বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কাজ করেন।' তিনি আরো বলেন, বিচারকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোও প্রয়োজন। (কালের কন্ঠ, ২০১০-১২-২৪)

উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে বিচার বিভাগ এককভাবে দুর্নীতির শীর্ষে এমনটা বলা সঙ্গত হবে না। পুলিশ বিভাগ সমানভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত। শীর্ষ অবস্থান নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর প্রধানদের ভাবা প্রয়োজন কিভাবে এটাকে সহনীয় মাত্রা নিয়ে আসা যায়। ২০০৭ সালের সাথে তুলনামুলক চিত্রের দিকে নজর দিলে বলা যায় পরিস্থিতি আসলেই এলার্মিং।

দুর্নীতি নিয়ে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি কিংবা মামলা-হামলা না করে সবাইকে এক সাথে এর নিরাময়ে কাজ করতে হবে। সরকার যত তাড়াতাড়ি এটা উপলব্ধি করতে পারবে, দেশের জন্য ততই মঙ্গল।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার

হিমু; কাজি ইমাদ ইব্রাহিম, স্কুল অব পাবলিক হেলথ, ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টা, এডমন্টন, কানাডা। আমার বাংলা লেখার অবস্থা খুবই খারাপ পর্যায়ে চলে গিয়েছে। মূলত লেখালেখি না করার ফল এটি। কলেবর কম রাখার উদ্দেশ্যে অনেক কিছুই বিস্তারিত লিখিনি। লেখাটির উন্নয়নে (সংযোগ, সংশোধন, বিন্যাস ইত্যাদি) যেকোন পরামর্শের জন্য অগ্রীম ধন্যবাদ জানিয়ে রাখছি।

তথ্য সূত্র

প্রথম আলো, ২০১০-১২-২৫, সংশ্লিষ্টদের প্রতিক্রিয়া:পুলিশ ও বিচার বিভাগ সম্পর্কে টিআইবির প্রতিবেদন সঠিক নয়

প্রথম আলো, ২০১০-১২-২৫, এবার টিআইবির প্রতিবেদনের সমালোচনায় আইনমন্ত্রী

প্রথম আলো, ২০১০-১২-২৭, চট্টগ্রামের দুই মামলায় টিআইবির তিন কর্মকর্তাকে তলব: কুমিল্লায় সকালে মামলা, সন্ধ্যায় খারিজ

কালের কন্ঠ, ২০১০-১২-২৪, বিচার বিভাগে দুর্নীতি সবচেয়ে বেশিএটি আংশিক চিত্র : দুদক চেয়ারম্যান

টিআইবি এ.সা, ২০১০, এক্সিকিউটিভ সামারি, জাতীয় খানা জরিপ ২০১০

বাংলায় টিআইবি প্রেস রিলিজ, ২০১০

উইকি, সিস্টেম্যাটিক স্যামপ্লিং

© প্রকৃতিপ্রেমিক। সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। লেখাটি তৈরী করতে দুই দিনে কমপক্ষে ১২ ঘন্টা সময় ব্যয় করেছি। তাই এই লেখা বা এর অংশবিশেষ অন্য যেকোন মাধ্যমে প্রকাশ কেবলমাত্র লেখকের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে। তবে লিংক শেয়ার করার জন্য কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই। ধন্যবাদ।


মন্তব্য

ফাহিম হাসান এর ছবি

আগুন পোস্ট দাদা।

ঘুষের উপাত্ত বিষয়ক সারণী দেখে একটু অবাক হলাম। NGO ঘুষ খায়! তাও শতকরা ৭.২ ভাগ !! বাকিগুলা তো সবই expected. আশা করি হিসেবগুলো সবই weighted

দুঃখিত, আমি questionnaire টা খুঁজে পাচ্ছি না, কষ্ট করে লিঙ্ক দিতে পারেন কি?

এরকম একটা পোস্টের জন্য অ-নে-ক ধন্যবাদ।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

কোশ্চেনেয়ার আমিও পাইনি। আর হ্যাঁ, এস্টিমেটগুলো ওয়েটেড। ওদের রিপোর্টে বলা আছে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এই মন্তব্যটিতে আমি আপডেট রাখবো। দয়া করে কেউ উত্তর দিবেন না।

চিত্র-৩ এবং ইংরেজী সারণিগুলো টিআইবি'র এক্সিকিউটিভ সামারি থেকে স্ক্রিনগ্রাব করা হয়েছে।

রু [অতিথি] এর ছবি

খুব ভালো পোস্ট। ইনফর্মেশনগুলো ছাড়াছাড়া ভাবে দেখে ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। এই পোস্টে সব প্রয়োজনীয় তথ্য একসাথে করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে এবং যারা আপনাকে সাহায্য করেছে।

শামীম এর ছবি

পরিশ্রমী পোস্ট। কিছুটা কৌতুহল মিটল।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

থ্যাংস মিয়া ভাই। লেখাটিতে কোন চমক সৃষ্টি করতে পারিনি, কারণ টিআইবি এবং আমাদের সরকারী মন্তব্যকারীদের কারো কারো মন্তব্য একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায়নি।

সরকার নাখোশ হয়েছে বিচার বিভাগকে দুর্নীতির শীর্ষে বলার কারণে। প্রকৃতপক্ষে, বিচার এবং পুলিশ বিভাগ যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলছে রিপোর্ট তেমনটাই বলছে। শীর্ষে উঠে মন খারাপ করা না করার চেয়ে আত্মপোলব্ধিতে মন দেয়া দরকার।

...............................
নিসর্গ

দ্রোহী এর ছবি

দুর্ধর্ষ লেখা!

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু


কাকস্য পরিবেদনা

অতিথি লেখক এর ছবি

যে যাই বলুক বাংলাদেশের বিচারকেরা যে ঘুষ গ্রহন করে এতে কোন সন্দেহ নেই। হয়তো কম আর বেশী। হাই কোর্ট আর সুপ্রিম কোর্টে এই হার আরো বেশী। টাকা থাকলে সুবিধা মত রায় পেতে কোন বেগ পেতে হয় না। আমি নিজে ভুক্তভোগী। আর যে দেশের বিচারকেরা ঘুষ খায় সে দেশে ন্যয় বিচার অরন্যে রোদন মাত্র। বিচার বিভাগ স্বাধীন হতে না হতেই যে নমুনা দেখিয়েছে তাতে ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
(কীরণ)

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে নিশ্চিত প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে এই পোস্ট তৈরী করতে। খুবই ব্যাপক এবং ইনফরমেটিভ। বন্ধুদের লিংক পাঠালাম পড়তে।

খন্দকার আলমগীর হোসেন

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অসাধারণ! স্টিকি করে রাখার মত পোস্ট!
সাংবাদিকদের অনুসন্ধাণী রিপোর্টিং শেখা উচিৎ আপনার কাছ থেকে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

কী যে বলেন। আমি আসলে জাহিদ এবং শুভাশীষ ভাইয়ের লেখা পড়ে একটু উৎসাহী হয়েছিলাম আরকি হাসি

নৈষাদ এর ছবি

চমৎকার বিশ্লেষণ।

মন্ত্রীমহোদয়গণ যে বাণীই দিক না কেন, আমি নিশ্চিত এধরণের রিপোর্টের পর কিছু ইম্প্যাক্ট হয়, কিছু জবাবদিহিতার ব্যাপার ঘটে।

খুবই ব্যক্তিগত মতামত - গবেষণা পদ্ধতি ও নমুনা সংগ্রহ নিয়ে কোনই দ্বিধা নেই, তেমন দ্বিধা নেই এর পিছনের মানুষগুলির ‘অভজেক্টিভ’ কিংবা রিপোর্ট তৈরী করার দক্ষতা নিয়েও। তারপরও প্রশ্নমালা না দেখায় এই ‘পারসেপশনের’ ব্যাপারে কিছুটা অস্বস্তি থেকে যায়। তবে একথা স্বীকার করি এই জরিপটা পারসেপশনেরই। আমি নিশ্চিত নই প্রশ্নমালাতে এই পারসেপশন কি বাস্তব ঘটনার ভিত্তিতে জানতে চাওয়া হয় কিনা?

দুর্নীতির ব্যাপকতা নিশ্চিতভাবেই ভয়াবহ – কিন্তু পারসেপশান বোধহয় আরও এগিয়ে আছে। আমার পেশাজীবনে আমি বেশ কয়টা ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি যেখানে সরকারের কোন ইন্টারফেসের ব্যাপারে ‘পোড়খাওয়া’ কর্মীরা আগেই ‘টাকা-পয়সার’ কথা বলেছে। কিন্তু বাস্তবে জিনিসগুলি স্বাভাবিক ভাবে সমাধান করা হয়েছে।

সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং উদাহরণ পেলাম ভিকারুন্নেসা স্কুলের প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির ব্যাপারে। এবারে ভর্তি পরীক্ষার পরিবর্তে লটারি হয়েছে। লটারির জন্য মনোনিত করতে প্রাথমিক বাছাই বলে একটা ব্যাপার ছিল। লোকজন নিশ্চিত ভাবে বলেছে - প্রাথমিক বাছাই মানে টাকার খেলা। টাকা লেনদেনের দালালও দাঁড়িয়ে গেল। যারা টাকা দিবে তারাই প্রাথমিক বাছাই তালিকায় থাকবে।

তারপর দেখলাম আমার পরিচিত ‘টাকা-দেয়-নাই/লবিং-করে-নাই’ এমন অনেকের মেয়েরাই প্রাথমিক বাছাই তালিকায় আছে। কিন্তু এর মধ্যে গৌতমের ফেসবুকের লিংক ধরে দেখলাম এক সাংবাদিক, যার মেয়ে প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পরেছে, তিনি দুর্নীতির ‘ইন্ডিক্যাশন’ দিয়ে একটা লেখা দিলেন। আমরা ধরেই নিলাম ‘ব্যাপক দুর্নীতি’ হয়েছে। পারসেপশন।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ব্যাপারটা হচ্ছে দুর্নীতি করার সুযোগ রাখার জন্যই আমাদের পদ্ধতিগুলো ঘোরালো প্যাচালো করা হয়।
''লটারিতে অংশ নেয়ার প্রাক যোগ্যতা'' এই ব্যাপারটা আমি বুঝি নি। প্রাথমিক ভাবে আমার কাছে মনে হয়েছে, যেহেতু প্রাকযোগ্যতার মাপকাঠি পরিস্কার নয়, সুতরাং এখানে দালাল দাঁড়াবেই এবং দুর্নীতি অবধারিত।

বয়েস ৩ বছর+ হলে একটা শিশুর নাম লটারির জন্য তালিকাভুক্ত করা হবে, এখানে প্রাক-যোগ্যতা মাপার সুযোগ কি আদৌ আছে?

গৌতম এর ছবি

১. আমি যতদূর জানি এই জরিপে মানুষের পারসেপশন জানতে চাওয়া হয় নি। বরং কোথায় কী ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে, বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সেটার বিশদ বর্ণনা তুলে আনা হয়েছে। সে হিসেবে এটা পারসেপশন জরিপ না।

২. পরের তিনটি প্যারায় যা লিখেছেন, সেখানেও পারসেপশনের সাথে বাস্তবের পার্থক্য রয়েছে। এই যেমন আপনার ক্ষেত্রে বাস্তবের পারসেপশন বেশি বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু আমার এবং আমার পরিচিত আরো কিছু মানুষের ক্ষেত্রে পারসেপশনের চেয়ে বাস্তব বেশি ভয়াবহ ছিল। ব্যষ্টিকভাবে কোথাও কোথাও পারসেপশনের চেয়ে বাস্তব কম ভয়াবহ হতে পারে, কিন্তু সামষ্টিকভাবে এর উল্টোটাই সত্যি। যে সাংবাদিকের লেখার কথা বলছেন, সেটার নাড়িনক্ষত্র আমি জানি। সাংবাদিক বলেই সে আরো অনেক কিছু লিখতে পারে নি। ভেতরের ঘটনা কিন্তু আরো ভয়াবহ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সচল জাহিদ এর ছবি

অসাধারন পোষ্ট পিপিদা। এই লেখাটি সারসংক্ষেপ আকারে হলেও সংবাদপত্রে প্রকাশের আশাবাদ ব্যাক্ত করছি। লেখাটি ফেইসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া উচিৎ।

আমাদের মন্ত্রী মহোদয়দের যেকোন গবেষণার ফলাফলকে তুড়ি মেরে কথার ফুলঝুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দেবার একটি বদঅভ্যেস বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রকে আরো দূর্নীতির দিকে ঠেলে নিয়ে যায়। এদের কখনই দেখিনা সমালোচনা গ্রহণ করে নিজেদেরকে সংশোধন করতে।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
সচল জাহিদ ব্লগস্পট


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ধন্যবাদ, জাহিদ ভাই। যাদের দেখে উৎসাহিত হয়েছি আপনিও তাদের একজন।

স্বাধীন এর ছবি

শ্রমসাধ্য এই লেখার জন্য পিপিদাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। কিছুদিন আগে শুভাশীষ, তারপর পিপিদার এই লেখা, নানান সচলের এই সম্মিলিত প্রয়াসগুলোকেও সাধুবাদ জানাই। এভাবে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সচলায়তন একটি অগ্রগামী ভুমিকা রাখবে এই কামনা করি। মূল ধারার পত্রিকাগুলো যেক্ষেত্রে দোনোমনো করবে সেই সব ক্ষেত্রে ব্লগ বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখবে সেই প্রত্যাশা করি। এই লেখাটি সেরকম একটি প্রতিবেদন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই আবারো।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমি অনেকটা সেই স্পিরিটেই লিখেছি। ভালো লাগছে আপনার ভাবনার সাথে মিল হওয়ায়।
...............................
নিসর্গ: বাংলার প্রকৃতি

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

মাহবুব ভাই-এর ফেইসবুক থেকে লিঙ্কটা পেয়েই ঝাপিয়ে পড়লাম। এত চমৎকার এবং গোছানো লেখা ব্লগে কমই পড়েছি। এক কথায় অসাধারণ একটা পোস্ট। আমাদের মন্ত্রীদের এই পোস্টটা পড়া উচিত।

--
হোম - টুইটার - ফেইসবুক - উইকিপিডিয়া - এ্যাকাডেমিয়া

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

তথ্যবহুল লেখা। এটা পড়লে মনে হয় না দেখি আরেকজনে কি লিখছে। যেমনটা পত্রিকার ক্ষেত্রে হয়।

মুরাদ খান [অতিথি] এর ছবি

চমৎকার লেখা। শ্রম দেয়া হয়েছে প্রচুর বোঝা যায়।পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম আলাউদ্দিন বা সালাউিদ্দিনের কোনো এক চেরাগ দিয়ে যদি ‘বিচার বিভাগ’ টাকে বাস্তব যগতে নিয়ে আসা যেতো, তার ছোঁয়ায় অন্য বিভাগগুলো-ও হয়তো ভালো হয়ে যেতো। এমন কি পুলিশ বিভাগও। মাথাটাই সবচেয়ে পঁচা, ত্বকের পঁচা ভালো হবে কিভাবে বা হলেইবা কি? লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো।

মুরাদ খান

meetu এর ছবি

‘খানা জরিপ’ কী? দরকারী লেখা, ভাল লেগেছে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বাংলায় খানা, আর ইংরেজীতে বলে household. পরিসংখ্যান ব্যুরোর সংজ্ঞা অনুসারে খানা হল সেই household যেখানে কিছু মানুষের জন্য (পরিবারের সদস্য) একত্রে রান্না হয়।

খানা মানেই পরিবার নয়। অনেক জায়গায় বাবা-সন্তান এক সাথে থাকে, এক পরিবার, কিন্তু দেখা যায় রান্না হয় আলাদা ভাবে। সেক্ষেত্রে পরিবার একটি হলেও খানা হবে দুটি। বোঝাতে পারলাম কি?

...............................
নিসর্গ: বাংলার প্রকৃতি

মনমাঝি [অতিথি] এর ছবি

দুর্দান্ত !

তবে দু'টো বোকার মত প্রশ্ন করি। এই প্রসঙ্গে অনেকগুলি টক-শো দেখে ২টা প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুর-ঘুর করছে। কিন্তু জরিপ, পরিসংখ্যান বা রিসার্চ ডিজাইন সম্পর্কে যেহেতু আমি ক-অক্ষর গোমাংস, তাই বোকার মত শোনাবে এই ভয়ে কাউকে জিজ্ঞেস করতে সাহস হয়নি। এখানে সাহস করে সেটা করছি।

প্রশ্ন-১: উপরে নৈষাদ 'পারসেপশন' বিষয়ে কিছু ইঙ্গিত করেছেন। আমারও প্রশ্ন ঐটা। 'পারসেপশন' আর 'ফ্যাক্টস'-এর মধ্যে ব্যবধানটা কিভাবে নিরূপন করা যাবে ? এই পারসেপশন ঠিক কতটুকু অতিরঞ্জন বা অবরঞ্জন -বিহীণভাবে প্রকৃত বাস্তব তথা 'ফ্যাক্টস'-কে রিপ্রেজেন্ট করছে ? সেটা অবজেক্টিভলি/এম্পিরিকালি নিরূপন করার কোন ব্যবস্থা কি এই জরিপ ও গবেষনায় ছিল ? যদি না থাকে, তাহলে কেউ যদি বলে যে এই জরিপের ফলাফলের, ধরুন - ৫০%ই (কিম্বা ৮০%) জেনুইন হার্ড ফ্যাক্টসের ভিত্তি-বর্জিত আন্দাজ-ভিত্তিক মতামতের উপর দাঁড় করানো অনুমান মাত্র, তাহলে কি খুব ভুল হবে বা সেটা যুক্তিসঙ্গত ভাবে কন্টেস্ট করা যাবে? তাই যদি হয়, তাহলে এমন প্রশ্ন করা কি খুব ভুল হবে যে - এত ঢাক-ঢোল পিটিয়ে এইসব গবেষনা ইত্যাদির কি দরকার বা একে গুরুত্ব দেয়ারই বা কি দরকার - কারন এইরকম ভাসাভাসা গড়পড়তা অনুমান বাংলাদেশের যে কোন মানুষই তো করতে পারে - এবং এমনকি তখন হয়তো সরকারও সেটা অস্বীকার করবে না ?

প্রশ্ন-২: এমনকি মানুষ যখন নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেও বলে, তখনও কি তার উত্তরকে সবসময় সঠিক বা সত্য বলে ধরা যাবে ? আমার একটা অভিজ্ঞতা হলো - আমাদের একটা জাতীয় চরিত্র হচ্ছে "সালিশ মানি, কিন্তু তালগাছটি আমার!" -- এই মনোভঙ্গি একটা বিশাল সংখ্যক মানুষের। এর সাথে আরো যোগ করা যায় - "....তালগাছটি আমার ভাগে না পড়লে কিন্তু সালিশের মাতবর বা হোতারা খুব খারাপ!" যখন কোন বিচারে কারো কাঙ্খিত স্বার্থ রক্ষিত না হয় বা কাঙ্খিত মাত্রায় না হয়, তখন ঐ বিচারের প্রকৃত যাথার্থ্য-নিরপেক্ষভাবেই অনেক সময় ঐ বিচারের সাথে জড়িত ব্যবস্থা ও ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে নিন্দামন্দ শোনা যায়। অনেকসময় স্বার্থান্বেষী ৩য়-পক্ষ বা অতি-উৎসাহী বা অতি-বুদ্ধিমান/বাস্তববাদী ব্যক্তির পূর্বানুমান-ভিত্তিক অত্যুৎসাহের কারনেও অপ্রয়োজনীয় দুর্নীতি ঘটার সম্ভাবনা থাকে বা ঘটতে পারে যার জন্য ঐ প্রতিষ্ঠান আলাদা করে সুনির্দিষ্ট ভাবে হয়তো দায়ী নয় -- অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে সরকার বা রাষ্ট্রব্যবস্থা সঙ্ক্রান্ত 'পার্সেপশন' হয়তো হতে পারে, কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে কোন বিশেষ একটি প্রতিষ্ঠানের উপর তার দায় হয়তো সুনির্দিষ্ট ভাবে পিন-ডাউন করা যায় না। এর একটা উদাহরণ নৈষাদ উপরে দিয়েছেন। এধরণের ফ্যাক্টর মনে হয় না খুব নগণ্য হবে। কিন্তু এরকম বিষয় কি ঐ জরিপে গনণায় ধরে তা ফলাফল থেকে বাদ দেয়া হয়েছে ? তা করা না হলে কি এর যথার্থতা বা নির্ভরযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে না ?

এবার, একটু অপ্রাসঙ্গিক হলেও আমার নিজের একটা মজার অবজার্ভেশন বলি।

আমার ব্যবসায়ি বন্ধুরা প্রায়ই বলেঃ
-- আওয়ামী সরকারের খালি বড় বড় কথা - কিন্তু ভীষণ দুর্নীতি করে !!
আমি প্রশ্ন করিঃ
-- কেন, তার আগে বিএনপিওয়ালারা করতো না ?
-- নাহ্‌...ওরা অনেক ভালো ছিল। ওদের টাকা দিলে কাজ হইতো। এদের টাকা দিলে টাকাও যায় আবার কাজও হয় না ঠিকমত ! খালি ভাব নেয় !!

এই ডায়লগটা আমার বহু লোকের সাথেই হয়েছে। অন্যদের মুখেও শুনেছি। আমার বিশ্বাস এখানেও অনেকে শুনে বা দেখে থাকবেন। হো হো হো

আমি আর কে কাকে কত টাকা কেন দিয়েছিল বা আদৌ দিয়েছিল কিনা সে প্রশ্নে যাবো না। শুধু লক্ষ্য করতে বলবো, কিভাবে অনেক মানুষের বা রেসপন্ডেন্টের ন্যায়-অন্যায় বোধ, বিচারবোধ, এমনকি কোনটা দুর্নীতি আর কোনটা দুর্নীতি না সেইটা চেনার ক্ষমতা পর্যন্ত একদম ঘুলিয়ে যায়। দুর্নীতিবাজও 'ভালো' হয়ে যায়। তো, এইরকম বিভ্রান্ত ও নৈতিকভাবে ভেদবুদ্ধিবিহীন মানুষের কাছ থেকে পাওয়া উত্তরের ওপর আপনি কতটা নির্ভর করতে পারবেন ? এসব কি ঐ গবেষনায় বা জরিপে হিসাবে ধরা হয়েছে ?

বোকা-বোকা বা আনিনফর্মড প্রশ্ন হলে আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
........................................

পাদটিকাঃ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কিন্তু টিআইবি রিপোর্ট সম্পর্কে বিস্তারিতি ভাবে যথেষ্ট পজিটিভ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন "রোড টু ডেমক্রেসি" অনুষ্ঠানে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

শালিশ আমি মানি, কিন্তু তালগাছটা আমার। কথাটা আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় খুবই সত্যি। আপনি চাঁদে গিয়েছেন তার ভিডিও ফুটেজন আনলেও কিন্তু অনেকেই সেটাকে প্রশ্নদিয়ে সন্দেহবিদ্ধ করতে পারে। একইভাবে, মানুষের মতামত নিতে গেলে স্ট্রাকচার্ড প্রশ্নমালা থাকলেও, যথেষ্ট অভিজ্ঞ নমুনাসংগ্রহকারি দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হলেও, কিছু ভুল হতে পারে, হবে। অনেক ডিজাইনে এধরনের এরর কমানোর জন্য ব্যবস্থা নেয়া থাকে। সাধারণত পরীক্ষাগারে করা কন্ট্রোল্ড এক্সপেরিমেন্টে সেটা সম্ভব। বাস্তব ক্ষেত্রে অপিনিয়ন পোলে সেটা করা সম্ভব হয়না। সেজন্যই আস্থা ব্যবধানের মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশ করা হয়ে থাকে।

একটা উদাহরণ দেই। কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয় "আপনার বয়স কত" তাহলে এর সঠিক উত্তর পাওয়া কঠিন। আমাদের দেশে বয়স্ক মানুষ তার বয়সকে আরো বাড়িয়ে বলে, আর তরুণরা বলে কমিয়ে। এই এররগুলো মিনিমাইজ করার কিছু উপায় আছে, যেমন কেউ যদি বলে তার বয়স ৪০, তখন তাকে জিজ্ঞেস করা যায় মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে আছে কিনা। যদি বলে মনে আছে, তাহলে ধরে নিতে হবে তার বয়স আসলে চল্লিশের বেশী। এর পরে থাকে ডিজিট-প্রেফারেন্স-- যেমন বলবে, আমার বয়স ৭০, (সাধারণত) বলবে না ৬৮। কিভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে তার উপর তথ্যের কোয়ালিটি অবশ্যই নির্ভর করে।

টিআইবি যেহেতু তাদের কোশ্চেনেয়ার প্রকাশ করেনি (সাধারণত প্রকাশ করতে হয়) তাই এ ব্যাপারে আমি মন্তব্য করতে অপারগ।

আর পারসেপশন/ফ্যাক্ট এর বিষয়ে বলতে গেল আমি বলবো, তাদের রিপোর্ট বলছে, তারা স্পেসিফিক প্রশ্ন করেছে। তারা এমনটি জিজ্ঞেস করেনি আপনার মতে কোথায় কোথায় দুর্নীতি হয়। বরং "আপনি দুর্নীতির শিকার হয়েছন কি (৮৮%)?" এমন প্রশ্নের পরে কোন খাতে কত টাকা ঘুস দিয়েছেন, কাকে দিয়েছেন এসব স্পেসিফিক প্রশ্ন করা হয়েছে।

তবে প্রশ্নমালা না দেখেও আমার ধারণা হয়েছে যে কিছু প্রশ্ন "ওপেন-এনডেড" ছিল আর কিছু প্রশ্ন ছিলো অবজেক্টিভ। যেমন কত টাকা ঘুষ দিয়েছেন-- একটি ওপেন এনডেড প্রশ্ন। নমুনাসংগ্রহকারি ঘরটি পূরণ করেছেন। এরকম প্রশ্ন ছিল বলেই খানা অনুযায়ি কোন কোন সেবা নিতে গিয়ে গড়ে কত টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে তার সারণিও টিআইবি প্রকাশ করেছে।

স্টাডি ডিজাইন যারা করেছেন তাদের চার জন সম্পর্কে আমি জানি। তাদের করা ডিজাইনে আমি কোন সন্দেহ প্রকাশ করি না। বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্ন রাজনৈতিক।

আমি যেটা দেখাতে চেয়েছি পুলিশ আর বিচার বিভাগের মধ্যে আসলে পরিসংখ্যানিক দিক থেকে কোন পার্থক্য নেই। পুলিশকে এক নম্বর দুর্নীতিবাজ বিভাগ বললে এত হাউকাউ অবশ্যই হতোনা।

আমার হিসাবে পুলিশই এক নম্বর, কারণ পুলিশ বিভাগের আস্থা ব্যবধান ছোট, বেশী গ্রহণযোগ্য।

আরেকটা বিষয় স্মরণ রাখতে হবে, প্রায় ৬০০০ খানার মধ্যে মাত্র ৬৫০টি খানা (১০%) বিচার বিভাগীয় সেবা নিয়েছে। তাদের মধ্যে, অর্থাৎ এই ৬৫০টি খানার ৮৮% শতাংশ বলেছে তারা দুর্নীতির শিকার। ব্যাপারটা কতটা ভয়াবহ তা অনুমান করতে পারছি।

...............................
নিসর্গ: বাংলার প্রকৃতি

মাহবুব রানা এর ছবি

চমৎকার বিশ্লেষন, পিপি ভাই।
ইউনিভার্সিটি থেকে বের হওয়ার পর এক বন্ধুর অনুরোধে ২ দিন অফিসিয়ালি টিআইবি'র জন্য কাজ করেছি, আর আনঅফিসিয়ালি সেই বন্ধুর সাথে ফিল্ডে গেছি অনেকবার। আমার মনে হয়েছে ওরা বেশ এফিশিয়েন্টলিই কাজ করে (অবশ্য এটা আমার সাধারন অবজার্ভেশন)।

টিআইবি'র গবেষনার ফলাফল নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই, (বরং দুদক চেয়ারম্যানের মতই আমারো ধারণা ' দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা আরো বেশি') তবে টিআইবি'র এই গবেষনার এফিশিয়েন্সি মনে হয় আরো বাড়ানো যেত। ওরা 3-stage sampling করে ৬০০০ স্যাম্পল নিয়েছে, আর সেই একই স্যাম্পল ব্যবহার করেছে ১২টি সেবা খাতের জন্য। তাতে করে আলাদা আলাদা করে প্রত্যেক সেবার স্যাম্পল গিয়েছে অনেক কমে। সাধারণজ্ঞানে এটা মনে হওয়া খুব স্বাভাবিক যে ১৫ কোটি মানুষের জন্য মাত্র ৫৬৯টি নমুনা কিভাবে রিপ্রেজেন্টেটিভ হয়? ওরা এভাবে স্যাম্পলিং না করে প্রত্যেক সেবা খাতের জন্য আলাদা স্যাম্পলিং করলে, অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট খাতের রেকর্ড ঘেঁটে যারা সেবা নিয়েছেন তাদেরকে ঐ খাতের 'পপুলেশন' ধরে রেন্ডম স্যাম্পলিং করে নমুনা নিলে গবেষনার এফিশিয়েন্সি বেশি হতো। মোটকথা স্যাম্পলিং পদ্ধতি বদল করে গবেষনার ফলাফলকে আরো বিশ্বাসযোগ্য করা যেত কি? পরিসংখ্যানবিদ হিসেবে আপনার মতামত জানতে চাচ্ছি।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

রানা ভাই, আপনি যে পদ্ধতির কথা বলেছেন তাতে এফিশিয়েন্সি অবশ্যই বাড়বে, কিন্তু এটা বাস্তবসম্মত নয়। খরচ বহুগুন বেড়ে যাবে, ননরেসপন্স বায়াস চলে আসবে, আরো সমস্যা আছে।

এর পর আসি ১২ সেবাখাতের জন্য স্যাম্পল সাইজ ছোট কিনা সে বিষয়ে। আপনি বোধহয় একটু ভুল বুঝেছেন। ৬০০০ খানায় জরিপে সম্ভবত সকল সেবা বিভাগের উপরই প্রশ্ন করা হয়েছে। এই নমুনাকে ১২ সেবা খাতে ভাগ করে তারপর জরিপ করা হয়নি।

তিনস্তর-ক্লাস্টার স্যাম্পিলিং থিওরেটিক্যালি এবং প্র্যাক্টিক্যালি গ্রহণযোগ্য মেথড। বাংলাদেশের আরেকটি বড় জরিপ "Bangladesh Demographic and Health Survey (BDHS), যেটা মিত্র এন্ড এসোসিয়েটস পরিচালনা করে, সেখানেও একই ভাবে স্যামপ্লিং করা হয়।

ডিজাইন বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

...............................
নিসর্গ: বাংলার প্রকৃতি

মাহবুব রানা এর ছবি

মোট স্যাম্পল ৬০০০ সেটা ঠিক আছে, এবং এই ৬০০০ জনকে মোট ১২ টি সেবার কোনোটি নিয়েছে কিনা সে প্রশ্ন করা হয় সম্ভবত। তাতে করে কোনো নির্দিষ্ট সেবা (যেমন বিচার) গ্রহনকারীর সংখ্যা কিন্তু আর ৬০০০ থাকে না। এখন, এই ৬০০০ স্যাম্পলের প্রায় ১০ ভাগ বিচার সেবা গ্রহনকারী। এটাকে ১৫ কোটি মানুষের জন্য এক্সট্রাপোলেট করলে দাঁড়ায় দেশের দেড়-কোটি মানুষ বিচার সেবা গ্রহনকারী। এইটুকু যদি আমি ঠিক বুঝে থাকি তাহলে আমার প্রশ্ন, এই দেড়-কোটি 'পপুলেশন' এর জন্য ৬০০ স্যাম্পল স্ট্যাটিসটিকালি ঠিক আছে কিনা, এবং এই স্যাম্পল সাইজ বাস্তব অবস্থার যথাযথ প্রতিফলন ঘটাতে সমর্থ কিনা?

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

সুন্দর প্রশ্ন। ব্যাখ্যা করার আগে একটু ব্যাকগ্রাউন্ড দিলে ভালো হবে। হয়তো অনেকেই জানেন, রুল অব থাম্ব হলো, নমুনা ৩০ এর বেশী হলেই সেখানে নরমাল এপ্রক্সিমেশন করা যায়। তবে সিমুলেশনে দেখা যায় কমপক্ষে ১০০ নমুনা হলে এপ্রক্সিমেশন ভালো হয়।

সেই বিচারে ৬০০ কিন্ত বিশাল সাইজ।

আর ৬০০ নমুনা দেড়কোটি পপুলেশনের জন্য যথেষ্ট কিনা তার জন্য আরেকটু ব্যাখ্যা করি। মূলত প্রাক্কলনের মার্জিন অব এরর বের করাটা উদ্দেশ্য। আর মার্জিন অব এরর শুধুমাত্র n এর ফাংশন, N এর নয়। অর্থাৎ পপুলেশন সাইজ কত সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। ৯৫% আস্থা ব্যবধান ধরে মার্জিন অব এরর এর সূত্রটি হল:

1.96 sqrt(pq/n) এখানে q=1-p

কেউ যদি প্রোপরশন p এর মার্জিন অব এরর ০.০৫ এর মধ্যে চায়, তাহলে

1.96 sqrt(pq/n) <= 0.05

সমীকরণটি থেকে n এর মান বের করতে হবে।

সাধারণত গবেষণার শুরুতে নমুনার সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। সেই হিসেবে p এর মান ০.৫ ধরা হয় (সর্বোচ্চ এরর হবে এমনটা ধরে নিয়ে)। সে হিসেবে সমাধান করলে পাই

n >= 384.16 অর্থাৎ ৩৮৫ বা তার বেশী

তাহলে দেখা যাচ্ছে ৩৮৫ টি নমুনা হলেই, নরমাল বিন্যাস এসিউম করে, আমরা যে প্রাক্কলিত মান পাবো তার মার্জিন অব এরর হবে ৫%।

আর ৬০০ নমুনা দিয়ে একটু অংক করলেই দেখবেন ৯৫% আস্থা ব্যবধান ধরলে প্রাক্কলিত মানের মার্জিন অব এরর হয় ৪%।

ব্যাখ্যাটা বোঝাতে পারলাম কিনা জানালে খুশি হব। হাসি

গৌতম এর ছবি

নন-রেসপন্স রেট জানা থাকলে প্রত্যেক খাতের জন্য আলাদাভাবে স্যাম্পলিং করা যেত এবং এর পরিমাণও যে খুব বেশি হতো, তা কিন্তু না। কিন্তু যেখানে নন-রেসপন্স রেট সম্পর্কে কারো কোনো আইডিয়াই নেই, সেখানে আলাদা স্যাম্পলিং করা অসম্ভবই বটে।
*
একটা অফটপিকের কথা বলি। এখানে তো ৬০০০ স্যাম্পল নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। কয়েক বছর আগে এডুকেশন ওয়াচের আওতায় একটি গবেষণায় প্রায় ৪৬০০০ স্যাম্পল ছিল। লঞ্চিং প্রোগ্রামে এক মন্ত্রী মহোদয় প্রশ্ন করেছিলেন, ১২ কোটি মানুষের দেশে মাত্র ৪৬০০০ মানুষের মতামত নিয়ে আপনারা কীভাবে সারাদেশের চিত্র তুলে ধরেন? খাইছে
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নীড় সন্ধানী এর ছবি

মনে পড়লো টিআইবির এই জরিপে একজন উত্তরদাতা হিসেবে অংশ নিয়েছিলাম। যেটুকু মনে আছে প্রশ্নগুলো দেখে টিআইবির খারাপ উদ্দেশ্য মনে হয়নি। আমি সেবা পেতে কতোটা বাধাগ্রস্থ হচ্ছি সেটাই বের করতে চেষ্টা করেছিল। তবে বিচার বিভাগ নিয়ে আমার অভিজ্ঞতাগুলো যে সংখ্যাগরিষ্ট তা জানলাম এই রিপোর্টেই। শান্ত্বনা পেলাম যে আমি একা নই। পুলিশের পাশাপাশি বিচার বিভাগও এগিয়ে এসেছে। এবার আমাদের ঠেকায় কে?

সাধারন মামলা নিয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রমে আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে দশ বছরের। মাসে দুমাসে অন্তত একবার কোর্টে হাজিরা দিতে হয়। দশ বছরের মধ্যে ২০০৯-২০১০ সালে সবচেয়ে বেশী হয়রান হয়েছি কিছু দুর্নীতিবাজ বিচারকের কল্যানে। সামান্য টাকার গুঁতায় দেওয়ানী হাকিম যে কিরকম অস্বাভাবিক আচরন করে তা সরাসরি দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছে আমার। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলাম। এটা আমার প্রথম অভিজ্ঞতা ছিল বলে অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে অভয় দিয়ে বলা হলো, এটা মোটামুটি 'ভালো' আছে এখনো। ফৌজদারী কোর্টের অবস্থা তো বর্ননাতীত। প্রকাশ করলে রীতিমত আদালত অবমাননার রিস্ক হয়ে যাবে।

বাংলাদেশের তিনটা সেবাখাতকে রীতিমতো প্রাণঘাতী মনে হয়। পুলিশ, আদালত, হাসপাতাল। এই তিনের উৎপাত থেকে রক্ষা পেলে আপনি বেঁচে গেলেন।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
এ ভ্রমণ, কেবলই একটা ভ্রমণ- এ ভ্রমণের কোন গন্তব্য নেই,
এ ভ্রমণ মানে কোথাও যাওয়া নয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মাহবুব রানা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, পরিসংখ্যানের স্বল্প জ্ঞানে আপনার ব্যাখ্যা বুঝতে পেরেছি।
ভালো থাকবেন, আপনার কলিজাগুলোকে নিয়ে হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।