কিভাবে নৈতিক সিদ্ধান্তগুলো নিতে হয় এই বিষয়ে দার্শনিক মহলে তিনটা মতবাদ মোটামুটি জনপ্রিয় – কর্তব্যবাদ (Deontology), পরিণতিবাদ (Consequentialism) আর মহত্ববাদ (Virtue Ethics)। (আমজনতা অবশ্য বেশি বিশ্বাস করে কর্তব্যবাদে আর কাজ করে পরিণতিবাদ অনুযায়ী, হে হে।) প্রথমটার মূলনীতি হল, কিছু কিছু কাজ সব সময়েই খারাপ; পরিস্থিতি যাই হোক না কেন। (বাকি দুটো নিয়ে পরে একসময় লিখব, আশা করি।)
বহুদিন ধরেই ধর্ম এই ভাল খারাপ নির্ধারণ করে দেবার দায়িত্ব পালন করে আসছে। আমরা এখন ধর্মের নৈতিক আইনগুলোতে এতটাই অভ্যস্ত যে ভাবতেও অবাক লাগে মাত্র দু হাজার বছর আগেও ধর্ম আর নৈতিকতা অনেকটাই ভিন্ন পরিমন্ডলের জিনিস ছিল। বস্তুতঃ সেন্ট পলের ধর্ম ছড়িয়ে পড়ার আগে পর্যন্ত ধর্মের ভূমিকা ছিল অনেকটা জাগতিক, দেবতারা মানুষের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তেন, মানবীর সাথে প্রেমে পড়তেন, মোদ্দাকথায় মানবিক ভুলগুলো করতেন! এই ধরনের দেবতার একটা গালভারি নাম আছে – Anthropomorphic। ঈশ্বরের নৈতিক অবস্থান পারসী আর ইহুদীদের তৈরি যা ছড়িয়ে পড়ে রোমানদের হাত ধরে সারা বিশ্বে।
এই বিশাল পরিবর্তনের মাত্র তিন চারশ বছর আগেই কিন্তু প্লেটো ধর্ম ভিত্তিক নৈতিকতার সবচেয়ে বড় সমস্যাটা দেখিয়ে গেছেন। ইউথাইফ্রোতে (Euthyphro) সক্রেটিসের জবানে প্লেটো একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরলেন – দেবতারা কোন কাজ পছন্দ করেন বলে কাজটি ভাল নাকি কাজটি ভাল বলে দেবতারা পছন্দ করেন? যদি প্রথমটি সত্য হয় তাহলে নৈতিকতা ঈশ্বরের কেবল আরেকটা সৃষ্টি মাত্র, এর আর বিশেষ কোন তাৎপর্য নেই।বস্তুতঃ, নৈতিকতা কারো খামখেয়ালী সৃষ্টি এটা আমাদের নৈতিক চেতনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমজনতার পক্ষে এটা ভেবে নেয়া কষ্টকর যে ঈশ্বর চাইলে শিশু নির্যাতন বা ধর্ষণও মহত্তম কাজ হতে পারে। আর দ্বিতীয়টি সত্য হলে মেনে নিতে হয় যে নৈতিকতা ঈশ্বরের সৃষ্টি নয় এবং তার ফলে ঈশ্বর সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা – এই বিশ্বাসটাও ভেঙ্গে পড়ে।
নিঃসন্দেহে এই অবস্থানে যে কোন ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষই প্রথম পথটা নেবেন বলে ভেবে নিচ্ছেন (সচলায়তনে বিশ্বাসী মানুষ বিরল, খুঁচাখুঁচি করে মজা নাই!)। কিন্তু ফ্রেইলটি সিনেমাটা দেখলে তারা একটা হোঁচট খাবেন। বলে রাখি, এইটা ম্যাথু ম্যাককনারির বিরল ভাল সিনেমাগুলোর একটা। সিনেমাটাতে একটা বাবার উপর ঐশী বাণী নাজেল হয় – দুনিয়া থেকে সব মনস্টার নিকেশ করার। বাবা তার দুই ছোট ছেলে নিয়ে মনস্টারের খোঁজে বেরোয়, খুঁজেও পায় উদ্ভট সব উপায়ে। কিন্তু অবাক ব্যাপার হল এই সব মনস্টার দেখতে আপনার আমার মতই সাধারণ মানুষ, শুধু আমাদের মনস্টার শিকারী পরিবারটাই দেখতে পায় তাদের প্রকৃত রূপ (!)।
বলা বাহুল্য, পুরো ব্যাপারটাই বাবার মানসিক বিকার, অন্ততঃ যাদের ওপর ঈশ্বরের বাণী নাজেল হয় নি তারা তাই ভাববেন। কিন্তু যারা আগে ভেবে নিয়েছিলেন ঈশ্বরের ইচ্ছাই নৈতিকতা নির্ধারণ করে তারা কিন্তু সেই সিরিয়াল কিলার পরিবারের অবস্থানে একই কাজ করবেন। কারণ ঈশ্বর বলেছেন!
মন্তব্য
Amistad দেখতে পারেন ... ম্যাথু ম্যাকনেরে ঐখানেই সবচে ভাল্লাগছে (আমি ফ্রেইল্টি দেখি নাই, ঐটা বাদ দিয়াই বল্লাম) ... আমার হিসাবে এইটা স্পিলবার্গের সবচে আন্ডাররেটেড ছবিগুলির একটা ... এন্থনি হপকিন্স, মর্গান ফ্রীম্যান, দিমন হনসু আর ম্যাথু ম্যাকনের মত স্টার আর দাস ট্রান্সপোর্টেশন নিয়া খুবই চমৎকার একটা স্ক্রীপ্ট থাকার পরেও এই ছবিটা কেন জানি অতটা আলোচিত না ...
Contact মুভিটাও দেখতে পারেন, তবে সেটা মেইনলি জোডি ফস্টারের, ম্যাথু ম্যাকনের ভূমিকা খুব কম ...
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...
ধন্যবাদ, দেখি স্ট্রিমিং পাইলে আজকে রাতেই দেখে ফেলব।
মনে আছে সিনেমাটা দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। শুধু ম্যাথিও ম্যাকওনাহেই না বাকিদের অভিনয়ও আমার কাছে অসাধারন মনে হয়েছে। শেষের অংশটাও কিন্তু বিতর্কের বিষয় হিসেবে কম যায় না - যারা ঈশ্বরের অনুসারী, ঈশ্বর তাদেরকে রক্ষা করে !? তবে ব্যক্তিগত ভাবে কোন সিনেমা বা বই এধরনের moral dilemma তুলে নিয়ে আসলে আমার অসুবিধ হয় না, ভাবি - আরে এতো মানুষেরই বানানো , ধূর 'সত্যি'সত্যি' এরকম কিছু হলে, হ্যা তখন নাহয় চিন্তা করবো
এতদিনেও দেখা হয়নি এই মুভি ! লজ্জা পেলাম। এই উইকেন্ডেই দেখে ফেলবো।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
নতুন মন্তব্য করুন