কার্বনের উদ্ভব
ভারি মৌলগুলো শুরুতেই তৈরি হয় নি। বিগ ব্যাং তত্ত্ব মোতাবেক, আদি মহাবিশ্বে শুধুমাত্র হাইড্রোজেন, ডয়টেরিয়াম (হাইড্রোজেন আইসোটোপ), হিলিয়াম আর লিথিয়াম তৈরি হয়েছিল। কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন আর লোহার মতো পর্যায় সারণীর অন্যান্য মৌলগুলো তৈরি হতে আরো বিলিয়ন বিলিয়ন বছর লেগে গিয়েছিল। নক্ষত্রগুলোর তৈরি হতে আর আয়ুষ্কালের শেষে নিউট্রন আর প্রোটন থেকে এই মৌলগুলো সংশ্লেষণে এই লম্বা সময় দরকার ছিল। অপেক্ষাকৃত বৃহদাকায় নক্ষত্রগুলোর হাইড্রোজেন জ্বালানী ফুরিয়ে গেলে একটা বিশাল বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে সুপারনোভায় পরিণত হল – এতদিন ধরে তৈরি হওয়া মৌলগুলো ছড়িয়ে পড়লো মহাশূন্যে। মহাশূন্যে পৌঁছে এইসব ছড়িয়ে পড়া নক্ষত্রাবশেষ মহাকর্ষের প্রভাবে জমাট বেধে গ্রহ তৈরি করল।
প্রাণের উদ্ভব হতে এর পরেও লেগেছিল আরো বিলিয়ন বিলিয়ন। এই সময়ে সূর্য, আমাদের ঘরের কাছের নক্ষত্র, স্থিতিশীলভাবে শক্তির যোগান দিয়ে গেছে। তারই ফলশ্রুতিতে আমরা পৃথিবীতে প্রাণ দেখতে পাই। দুটি প্রোটনের মাঝের আকর্ষণ (মহাকর্ষের কারণে) যদি তাদের মাঝের বিকর্ষণের তুলনায় খুবই দুর্বল না হোত (ক১ এর মান দেখুন) তবে নক্ষত্রগুলো আরো অনেক দ্রুত ধ্বসে পড়তো আর এতোগুলো মৌল সৃষ্টি হবার কোন সুযোগই থাকতো না। এই বৈচিত্রের উদ্ভবের জন্য নক্ষত্রগুলোর দীর্ঘায়ু হওয়া প্রয়োজন ছিল।
লম্বা আয়ুই সব নয়। নক্ষত্রে মৌল-সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া আদি মহাবিশ্বে উৎপন্ন হওয়া হিলিয়াম আর ডয়টেরিয়ামের ধর্ম আর প্রাচুর্যের উপর সংবেদনশীল ভাবে নির্ভর করে। নিউট্রন আর প্রোটনের ভর তাদের প্রকৃত মান থেকে ঊনিশবিশ হলেই ডয়টেরিয়ামের অস্তিত্ব থাকতো না। হাইড্রোজেন আর হিলিয়ামের পরিমাণের অনুপাতও এই মানের উপর নির্ভরশীল। একটা সূক্ষ্ম ভারসাম্য এখানেও জরুরী – এবারে মহাকর্ষ আর দুর্বল নিউক্লীয় বলের (এটা বেটা ক্ষয়ের জন্য দায়ি) মাঝে। দুর্বল বল যদি আর সামান্য শক্তিশালী হোত তবে সব নিউট্রনই বেটা ক্ষয়ের মধ্য দিয়ে প্রোটনের পরিণত হোত আর তার ফলে আমরা পেতাম ১০০ ভাগ হাইড্রোজেনের একটা মহাবিশ্ব। পরবর্তীতে মৌল সংশ্লেষণের জন্য কোন নিউট্রন পাওয়া যেতো না। অন্যদিকে এটা আরেকটু দুর্বল হলে খুবই সামান্য সংখ্যক নিউট্রন ক্ষয় পেত আর আমরা পেতাম প্রায় সমসংখ্যক প্রোটন আর নিউট্রন। এদের সবার স্থান হোত হিলিয়াম নিউক্লিয়াসে (২টা করে প্রোটন আর নিউট্রন)। ১০০ ভাগ হিলিয়ামে গঠিত সেই মহাবিশ্বে নক্ষত্রের জ্বালানী হবার মতো কোন হাইড্রোজেনই থাকতো না। কার্বন ভিত্তিক প্রাণের যে রূপের সাথে আমরা পরিচিত তা পুরোই অসম্ভব হয়ে পড়তো উপরের দৃশ্যপটগুলোতে।
(চলবে)
মন্তব্য
পার্টিকেল ফিজিক্সে হারায় গেলাম তো!
ভাল লিখেছেন। তবে টার্মগুলোর ছোটো ছোটো ব্যাখ্যা থাকলে আরো ভাল লাগত।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
নতুন মন্তব্য করুন