সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের ছেলে তড়িৎকৌশলের ছাত্র সুবর্ণ যেদিন বুয়েটের রশীদ হলে আত্মহত্যা করলো, সেদিন হলের সবাই হয়ে গেলো মানসিকভাবে প্রচন্ড বিপর্যস্ত । বিশেষ করে তাঁর রুমমেট যিনি লাশটি আবিষ্কার করেন, তাঁর প্রায় পাগলের দশা। অন্য অনেকেই তখন হল ছেড়ে চলে গেলো, যার যার আত্মীয়দের বাসায়।
আর যাদের যাবার জায়গা নেই, তারা হলেই থাকলো, তবে অনেকেই আতংকে একেবারে অবসন্ন হয়ে রইলো। যেমন, ঐদিন রাতের বেলাতে, হঠাৎ শুনি আমাদের রুমের দরজার বাইরে থেকে আমার পাশের রুমের রুবেল ভাই তাঁর সহপাঠী আমার রুমমেটকে ডাকছেন। কী ব্যাপার? আসলে উনি বাথরুমে যাবেন, কিন্তু একা যেতে সাহস পাচ্ছেন না!! (একটুও বানিয়ে বলছি না কিন্তু!!)
ঐ রাত কাটার পরে অনেকের ভয় কমলো, কিন্তু তবুও পুরোপুরি কাটলোনা। আমাদের হলের গার্ড একদিন বিকট চিৎকার সহকারে দৌড় দিলো। ঘটনা হলো, সে নাকি গভীর রাতে দেখেছে, বারান্দার ছাদে উল্টা হয়ে কে যেন হাঁটছে।
সম্মিলিত এই ভূতের ভয়ে থাকাটা আসলে ঐ আত্মহত্যার ঘটনায় মানসিক বিপর্যয়ের ফল।
এহেন ঘটনাতে সবাই যখন ভয়ে ভয়ে ঘাপটি মেরে আছে, হাজার যুক্তিবাদী হলেও অন্ধকারে বেরুতে ভয় পাচ্ছে, তখন এর সুযোগ নিতে হাত/মন নিশপিশ করে উঠলো আমার। ঐ সেমিস্টার শেষ হয়ে গেলো, দুই সেমিস্টারের ফাঁকের ছুটিতে অনেকেই বাড়ি গেছে। আমি কিছু ছাত্রকে সি প্রোগ্রামিং শেখাতাম, তাই হলে রয়ে গেছি।
সেসময় বাংলাদেশে হরলিক্স বা বুস্ট কোম্পানি থেকে একটা উপহার দিতো ওদের মিল্ক চকোলেট ড্রিংকের পাউডার কিনলে, সবুজ রঙের একটা মুখোশ, যা থেকে অন্ধকারে আলো বের হয়। আসলে আর কিছুই না, ফসফোরেসেন্সের একটা উদাহরণ আরকি, মানে ঐ মুখোশে খানিক ক্ষণ আলো ফেললে ওটা চার্জ হয়ে থাকে, তার পরে বেশ অনেক্ষণ অন্ধকারেও ওটা জ্বলজ্বল করে জ্বলে।
যাহোক, রাত তখন দুইটা বাজে। আর করার কোনো কাজ নেই, রুমেও আমি একা, একটু বিরক্ত হয়ে আছি কাজ না থাকাতে। দুই তলা নীচে দ্বিতীয় তলায় আমার বন্ধু হিমু থাকে, আমি জানি সেও রুমে একা আছে। ফন্দি আঁটলাম ওকে ভয় দেখানোর। তাই মুখোশটা বেশ করে চার্জ করে ওর রুমের দিকে গুটি গুটি পায়ে নামলাম।
দূর থেকে দেখি, হিমু বারান্দার অন্য কোনায় গিয়ে দাঁত মাজছে, শোয়ার প্রস্তুতিতে। আমি ওর রুমে ঢুকে বাতিটা নিভিয়ে মুখোশটা পরে বসে থাকলাম। একটু পরে পায়ের শব্দ শুনলাম। হিমু রুমের কাছে এসে একটু থমকে দাঁড়ালো, কারণ বাতিটা জ্বেলে গিয়েছিলো, এখন বাতি নেভানো ঘরের ভেতর।
আমি বুঝতে পারলাম, হিমু আসলে একটু ভয় পেয়েছে, বাতি নিভে যাওয়াতে। মিনিট খানেক পরে সাহস সঞ্চয় করে তার পর আস্তে করে ও ঘরের দরজাটা খুললো। আমিও আমার যথাসম্ভব নাকি গলাতে বললাম, "হাঁই হিঁমু। কেঁমন আঁছিস তুঁই?"। অন্ধকারে আমাকে দেখা যাচ্ছেনা, শুধু মনে হচ্ছে একটা জ্বলজ্বলে মাথা থেকে এই কথাটা বেরুচ্ছে।
গগনবিদারী একটা চিৎকার দিয়ে হিমু ছিটকে বেরিয়ে গেলো। আমি ভয় পেয়ে গেলাম, বেচারার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায় নাকি!! তাই তাড়াতাড়ি মুখোশ খুলে ওকে শান্ত করলাম।
----
অবশ্য, হিমু প্রচন্ড ভালো একটা ছেলে। তাই এরকম বাঁদরামী করার পরেও আমাকে মাফ করে দিয়েছে।
মুখোশটা এর পর থেকে হলে বেশ হট আইটেম হয়ে যায়। প্রায়ই আঁতেল কিন্তু ভিতু, এরকম পাবলিকদের ভয় দেখানোর জন্য আমার কাছ থেকে এটা ধার করে নিয়ে যেতো অনেকে।
----
ব্যাখ্যা - এই হিমু ব্লগের হিমু না। এখন বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে কানাডাতে বসতি গেঁড়ে রীতিমত সংসারী হয়েছে।
মন্তব্য
বলা উচিত ছিলো:
এই হিমু ব্লগের হিমুর মতো না। সে এখন বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে কানাডাতে বসতি গেঁড়ে রীতিমত সংসারী হয়েছে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
A clean house is a sign of a misspent life
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
হাসতে হাসতে গড়াগড়ি
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
ঐ হিমু ব্লগের হিমুর মতো হলে রাগিব ভাইয়ের একটা হাড্ডি সে খুলে বয়ামে ভরে রাখতো ...। ঐ হিমু ভালো হিমু।
হাঁটুপানির জলদস্যু
চমকপ্রদ ও মজার ঘটনা; কিন্তু মনটা খারাপ হয়ে গেল আমার শৈশবের ওয়ান অফ আইডল সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের ছেলের আত্বহননের ঘটনা জেনে! যে মানুষটি আমার মতো আরো শত কিশোরকে দিনবদলের স্বপ্ন দেখিয়ে শক্তপোক্ত বানিয়েঁছেন তার ছেলেই কিনা আত্বহননের পথ বেছেঁ নিলো? ঘটনাটা জানতাম না......কি বিচিত্র জীবন আমাদের!!
হা হা হা। কি কাহিনী!
আহারে হলে কেউ আত্মহত্যা করলে কি যে করুণ অবস্থা হয়। ২০০৬ সালে আমাদের রোকেয়া হলের এক্সটেনশান বিল্ডিং-এ একজন আত্মহত্যা করলো। এত করুণ একটা ঘটনা, সেটা ছাপিয়ে উঠলো ভয়। ওই বিল্ডিং-এর ৮০% মেয়ে হলে ছেড়ে গিয়ে বিল্ডিংটাকে অটোমেটিক ভুতুড়ে বানিয়ে ফেলেছিলো। ওই বিল্ডিং-এর আমার এক বান্ধবী প্রায় ৩ মাস টানা অন্য বিল্ডিং-এ আমার রুমে থাকার পরে ভয় কাটিয়ে নিজের রুমে ফিরতে পারে।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
আমারে রিকোয়েস্ট করলে তোমার রিফিউজ হবার সম্ভাবনা বেশি, কারন আমি "মেইন বিল্ডিং"-এ থাকতাম, এক্সটেনশান না।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
রাগিব ভাই,
যদিও মজা পেলাম কিন্তুক,কাজটা ভালো করেন নি। আপনাকে জাঝা নয় ঝাঝা দেয়া হইল, কানাডাবাসি হিমু ভাইয়ের পক্ষ থেকে। ঝাঝা'র সংগা লীলেন ভাই জানেন।
রাগিব ভাই,
যদিও মজা পেলাম কিন্তুক,কাজটা ভালো করেন নি। আপনাকে জাঝা নয় ঝাঝা দেয়া হইল,কানাডাবাসি হিমু ভাইয়ের পক্ষ থেকে। ঝাঝা'র সংগা লীলেন ভাই জানেন।
(আগের বার নাম ধাম লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম)
কালবেলা
মজার লেখা জন্য জাঝা
নারিকেল গাছে উঠে জুনিয়ারদের রুমে টর্চ দিয়ে আলো ফেলে ভয় দেখানোর কথা মনে পড়লো...
---------------------------------
এভাবেই কেটে যাক কিছু সময়, যাক না!
মজাক পাইসি!!
তারিক স্বপন
আপনি তো মশাই ভালরকম পাজি ছিলেন !
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
রাগিব ভাই,
সোহরাওয়ার্দি হলের লন্ড্রীর পাশের রুমে থাকার সময় আমার একবার ভূতভয় ভর করেছিল।লন্ড্রীওয়ালা একবার বলেছিল ওটায় নাকি আগে ছাত্র থাকত কিন্তু এক ছাত্র একবার আত্বহত্যা করায় ভয়ে আর কেউ থাকতে চাইত না বলে ওটাকে লন্ড্রী বানানো হয়েছে।লন্ড্রীর পাশের রুমবাসি হিসেবে বুঝতেই পারছেন কয়েকদিন রাত্রে বাথরুমে যেতে অসুবিধা হয়েছে।
eru
-------------------------------------------------
সুগন্ধ বিলোতে আপত্তি নেই আমার
বস্তুত সুগন্ধ মাত্রই ছড়াতে ভালবাসে।
ভাইসাহেব, আপনার সুগন্ধি ট্যগলাইনের শান এ নুযুল আর অতীতের বাথরুমে যাওয়ার অসুবিধার কি কোন কানেকশান আছে?
দুর্দান্তকে এই অসাধারণ কানেকশান আবিষ্কারের জন্য নোবেল প্রাইজ দেওয়া হোক!
ফেরারী ফেরদৌস
নাহ! রাগিব ভাইকে পিটনি দিতে হবে! ছেলে বেজায় দুষ্টু!
ফেরারী ফেরদৌস
- ভালো আইডিয়া দিলেন রাগিব ভাই। ঐ হিমুকে আপনি লৌড় দেওয়াইছেন, আর এই হিমুকে লৌড়ের উপরে রাখার দায়িত্ব আমার।
কয়েকদিনের মধ্যেই এরকম একটা পোস্ট পাবেন। ফি আমানিল্লাহ্
___________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন