পেশায় আমি একজন প্রযুক্তিবিদ, তাই মাঝে মাঝে বাংলাদেশে কী কী প্রযুক্তির ব্যবহার দরার তা নিয়ে চিন্তা আসে। আজ তাই এই ভাবনা গুলোকে লিখে রাখতে চাইছি।
কোন প্রযুক্তি আমাদের জন্য দরকারী? যে প্রযুক্তি জীবনের কাছাকাছি, সেটা। বিশ্বে অনেক প্রযুক্তি আছে, কিন্তু আমাদের বেশি দরকার সেটাই, যেটা জীবনমুখী।
পূর্বশর্ত
প্রযুক্তি নিয়ে লাফালাফি করার আগে ঐসব প্রযুক্তির পূর্বশর্ত অর্থাৎ কী কী বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার সেটা দেখা যাকঃ
[*] সস্তা: অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকতে হবে। ১০০ ডলারের ল্যাপটপ শুনতে খুব ভালো লাগে, কিন্তু সেটা দেশের বহু মানুষের কয়েক মাসের আয়ের সমান।
[*] স্থানীয়ভাবে নির্মাণযোগ্য: দেশেই ঐ প্রযুক্তির নির্মাণ ও মেরামতির ব্যবস্থা থাকতে হবে। নইলে ঐ প্রযুক্তি খাতে আবারো বিদেশে টাকা চলে যাবে।
[*] স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে মানানসই: এমন প্রযুক্তি আনা যাবে না, যা দেশের মানুষের জীবনধারার সাথে মানানসই না।
[*] জটিলতা বিহীন: "তিন-আঙ্গুলের প্রথম ভাঁজের এক চিমটি লবন" - এই সহজ প্রযুক্তিটি সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে, যা অনেক কোটি ডলার ব্যয়ে উদ্ভাবিত ওষুধ পারেনি। এরকম কম জটিলতার প্রযুক্তি লাগবে। আরো খেয়াল রাখতে হবে, যাতে "বিশেষজ্ঞ" দের পিছনে বিশাল ব্যয় না হয়। অর্থাৎ প্রযুক্তিটি সহজেই সবাই শিখতে পারে।
[*] লাভজনক: দান খয়রাতের প্রযুক্তি অতদিনই চলে যতদিন দাতার ভিক্ষা দেয়ার ইচ্ছা থাকে। প্রযুক্তির অর্থনৈতিক দিকটি চিন্তায় রাখতে হবে, যাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এটি গ্রহন ও অর্থায়ন করতে পিছপা না হয়।
(আরো কিছু পূর্বশর্ত থাকতে পারে, তবে এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না)
কাংক্ষিত প্রযুক্তির তালিকা
[*] আর্সেনিক মুক্তকরণ প্রযুক্তি: বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠী এই সমস্যার সম্মুখীন। খুব অল্প খরচে (কয়েক শো টাকা) আর্সেনিকযুক্ত পানি বিশোধনের ব্যবস্থা বের করা লাগবে।
[*] কৃষি প্রযুক্তি: উন্নত প্রজাতির উচ্চ ফলনশীল ধান, যা হয়তো বাংলাদেশের বনে বাদাড়ে অযত্নেই ফলছে - তা খুঁজে বের করতে হবে। এক্ষেত্রে হরিধানের উদাহরণ নেয়া যায়। এইসব প্রজাতির ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে বহুজাতিক কোম্পানিরা তা কুক্ষিগত করতে না পারে।
[*] সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ: বাংলাদেশে রোদের অভাব নেই। উপকূলীয় অঞ্চলে বাতাসের অভাব নেই। উইন্ডমিল তৈরীর উপকরণ খুব বেশি দামি না। বুয়েটের ইএমই ভবনের সামনের উইন্ডমিলটাকে সারা বছরে অনেক সময় ধরেই ঘুরতে দেখেছি ভালোভাবে।
[*] সস্তায় টেকসই বাড়িঘর নির্মাণ: এমন বাড়ি বানানোর উপকরণ, যা পরিবেশ নষ্ট করবে না, যা আমদানি করতে হবে না, যা ঝড়ে সহজেই পড়ে যাবে না, এবং বাংলাদেশের স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়াতে নষ্ট হয়ে যাবে না।
[*] তথ্য : তথ্য ও জ্ঞান বিজ্ঞান সহজে অর্জনের অধিকার মানুষের একটি মৌলিক ও সার্বজনীন অধিকার। গ্রামে গঞ্জে বাচ্চারা অনেক কষ্টে পড়াশোনা করে। বই পত্র ছাপতে প্রতি বছর সরকার কয়েকশো কোটি টাকা ব্যয় করে। খুব সস্তায় বই পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। ডিজিটাল মাধ্যমের সাহায্য নেয়া যেতে পারে, কিন্তু কম্পিউটার তো আবার অনেক দামি জিনিষ। তাছাড়া গ্রামে গঞ্জে বিদ্যুৎ না থাকার সমূহ সম্ভাবনা। ১০০ ডলার বা ৭০০০ টাকার কমে কম্পিউটার বানানো অবশ্যই সম্ভব। মনিটর এর বদলে টিভির সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। আরো অনেক কম খরচে সাদা কালো স্ক্রিনের লার্নিং ডিভাইস বানানো সম্ভব। হার্ড ডিস্ক লাগবে না, এর বদলে কম্প্যাক্ট ফ্লাশ বা এরকম ফ্ল্যাশ মেমরি ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ধরনের একটি যন্ত্রের দরকার যাতে বই ভরে দেয়া যাবে, যা চাবি ঘুরিয়ে চার্জ করা যাবে, যা আছাড় মারলেও সহজে নষ্ট হবে না, এবং কোন মুভিং পার্টস থাকবে না। (এই অংশে বেশি কথা বললাম, কারণ আমি এই জিনিষেরই মিস্তিরি)
(লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় বিজ্ঞানী ডট কমে)
মন্তব্য
আর্সেনিক নিয়ে ডঃ হুস্সামের সনো ফিল্টার ঐ শর্তগুলো সবই পূরণ করে বলেই মনে হয়।
আর আমি যেটা করেছি ঐটাও শর্তগুলো মেনেই করা হয়েছে। তবে ঐটা মূলত বড় স্কেলে প্লান্ট বানানোর জন্য। কিছু প্রাথমিক লেখা আছে আমার পরিবেশ প্রকৌশলীর প্যাচাল ব্লগে। বাকীটুকুও বাংলাতে সহজবোধ্য এবং বিস্তারিত ভাবে আনবো ২/৩ মাসের মধ্যে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
আমার মাথায় কিছু আইডিয়া আছে। বড় কোন প্রোপোজাল হিসেবে নামাবো ভেবেছিলাম। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি। একটা ব্লগই লিখে ফেলব। দারুন দারুন চিন্তা ভাবনা গুলো শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
বাংলাদেশে বায়ুবিদ্যুত প্রকল্প চালু করার ব্যাপারে কিছু কনসালটেন্সি লেভেলে কাজ হয়েছে । ওটা নিয়ে নানারকম গল্প শুনি । কেউ কেউ বলে যথেষ্ট বাতাস নেই .. হেন তেন । আসল ঘটনাটা কি ? প্রকৌশলীরা একটু আওয়াজ দেন ।
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এত কথার মাঝে বাংলাদেশের সবচেয়ে আশা জাগানিয়া প্রজেক্টের কথাটাই কইলেন না।
"মিশুক" প্রজেক্ট।
এই নিয়া সামহোয়ারে একটা লেখা দিছিলাম। দেখি সংশোধন করি।
আমাদের আশা ছিল এই মিশুক দিয়া শুরু। বাংলাদেশ আরো কত কি বানাইবো।
যাক বিজ্ঞানী ডট কমে উঁকি দেয়ার একটা আগ্রহ তৈরি করে ফেল্লেন।
শুভেচছা।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আগ্রহ আমারও তৈরী হইতেছিলো । কিন্তু জিকো আবার তাতে পানি ঢাইলা দিছে ।
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
বায়ুবিদ্যুৎ কিছুটা খরুচে ব্যাপার। এটি মূলত নির্ভর করে বাতাসের বেগের ওপর (তত্ত্বগতভাবে প্রাপ্ত শক্তি বাতাসের বেগের ত্রিঘাতের সমানুপাতিক)। বাতাসের বেগ মাটি থেকে যত উঁচুতে ওঠা যায়, তত বাড়ে। এ কারণে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প লাভজনক হতে হলে প্রকান্ড টাওয়ার নির্মাণ করতে হবে। এই স্টীলের খরচ কম নয়। তাছাড়া বায়ুবিদ্যুতের আরো একটি খরুচে জিনিস হচ্ছে এর তিনটি চালিকা (ব্লেড), যেগুলি খুব সূক্ষ্ম গড়নের, ঠিক বিমানের ডানার মতো, একটু এদিক সেদিক হলে পারফরম্যান্স কমে যাবে।
আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে বাতাসের বছরভর গড় বেগ খুব একটা বেশি নয়। মাপজোক হয়েছিলো কিছু, আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়া যায়নি। বর্তমানে মুহুরি প্রকল্পে চারটি বায়ুটারবাইনের সমন্বয়ে ০.৯ মেগাওয়াটের একটি প্ল্যান্ট চলছে।
কিছু সংখ্যার কথা বলি, ইয়োরোপে, ৫০-৫৫ উত্তর অক্ষাংশে বায়ুর বেগ অনেক বেশি, সেখানে ২ মেগাওয়াটের একটি টারবাইনের জন্য ১১৮ মিটার উচ্চতার টাওয়ার ব্যবহার করা হয়। ১ মেগাওয়াটের টারবাইনের জন্যে এই উচ্চতা ৭০ মিটার।
উপকূলীয় অঞ্চলে বায়ুবিদ্যুতের ব্যাপারে আরো দু'টি ভয়, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, যা ইয়োরোপের উপকূলে হয়না। বাংলাদেশে গড়ে প্রতি ৫ বছরে একবার বড়সড় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। প্রকল্পের আয়ু এত কম হলে খরচ উঠে আসবে না, স্বল্প খরচে বিদ্যুতও মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যাবে না।
তবে গ্রামে বায়ুশক্তির ছোটস্কেলের ব্যবহার সম্ভব, একেবারেই সহজসরল বায়ুকল ব্যবহার করে। একজন কলু যদি তাঁর ঘানি থেকে গরুটিকে মুক্তি দিতে পারেন, তা-ই বা কম কী? বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত না করে যান্ত্রিক শক্তিই কাজে লাগানো যেতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য প্রতিশ্রুতিময় শক্তির উৎস হতে পারে দু'টি। সৌরশক্তি, আর ভূটান-নেপালের জলশক্তি।
হাঁটুপানির জলদস্যু
ছোট মাত্রার বায়ুবিদ্যুতের বেশ সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে উপকুলীয় এবং পার্বত্য অঞ্চলে।
আগামী বছর গুলোতে বিদ্যুত উৎপাদন একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। স্বাস্থ্যসেবা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়ও সহজ প্রযুক্তির প্রচলন করা দরকার।
একটা বিষয় খুব জানতে ইছ্ছে করে,
বাংলাদেশে পুরান ঢাকা আর জিনজিরায় যেসব যন্ত্র পাতি এবং জিনিস পত্র তৈরী হয় বা যারা করে, তার উপর কোন গবেষনা হয়েছে কখন ও।
কেউ জানে, একটু জানালে উপকৃত হব।
এ দেশে তৈরি আর্সেনিক দূরীকরণ প্রযুক্তির সফল ব্যবহার করেছিল হামিদুর রহমান
আর্সেনিক দূর করার প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সাফল্য এক দেখিয়েছেন হামিদুর রহমান ",অধ্যাপক আবুল হুসসাম "না,
নতুন মন্তব্য করুন