১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের সংসদ আহমেদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম হিসাবে সরকারীভাবে ঘোষণা করে। রীতিমত আইনে লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয় এটা। এর প্রতিবাদে পদার্থবিজ্ঞানী ডঃ আবদুস সালাম চলে যান স্বেচ্ছা নির্বাসনে। মুশকিল হয় যখন ১৯৭৯ সালে আবদুস সালাম নোবেল পুরস্কার পেয়ে বসেন। ধর্মান্ধ জেনারেল জিয়া তখন ক্ষমতায়, সংবিধান পালটে আহমেদীয়াদের উপরে খড়গহস্তে চালাচ্ছেন নিপীড়ন, সেই জেনারেল জিয়াকেই টিভিতে কাষ্ঠ হাসি দিয়ে আবদুস সালামের পাশে দাঁড়াতে হয়। কাটমোল্লাদের খুশি করতে অবশ্য জিয়া কাঁচি নিয়ে নেমে পড়েন, যেখানেই আবদুস সালাম ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত কোনো শব্দ উচ্চারণ করেন তাঁর ভাষণে, কেটে দেয়া হয় সেটা।
(ছবি, CERN-এ সালামের নামে রাখা হয়েছে রাস্তার নাম)
প্রচন্ড প্রতিভাবান আবদুস সালাম ম্যাট্রিক পাস করেন মাত্র ১৪ বছর বয়সে। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সর্বোচ্চ নম্বর পান তিনি। ইতালির ত্রিয়েস্তে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার গবেষণাকেন্দ্র। শেলডন গ্লাসো আর স্টিভেন উইনবার্গের সাথে ১৯৭৯ সালে পদার্থে নোবেল পান সালাম, মৌলিক কণিকার দুর্বল নিউক্লীয় বল ও তড়িৎচুম্বকীয় বলকে একীকরণের তত্ত্ব ও দুর্বল তড়িৎ প্রবাহের উপরে তাঁদের কাজের জন্য। নোবেল পুরস্কারের ঘোষণায় বলা হয়,
"... for their contributions to the theory of the unified weak and electromagnetic interaction between elementary particles, including inter alla the prediction of the weak neutral current."
নোবেল পেয়েও কেবল ধর্মের কারণে আবদুস সালাম ছিলেন পাকিস্তানে উপেক্ষিত। সারা বিশ্বের কাছে সম্মাননা পেলেও লাহোরে তাঁর নিজের বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মান দেয়নি কোনো। দায়সারা গোছের একটা ডাকটিকিট পাকিস্তান সরকার প্রকাশ করেছে বটে, কিন্তু মৃত্যুর পরেও ছাড়েনি তাঁকে। ১৯৯৬ সালে অক্সফোর্ডে মারা যান সালাম। কবর হয় রাবওয়া শহরে। পাকিস্তান সরকারের আক্রোশের শিকার এই শহরের নাম সরকারী খাতায় পালটে চেনাব নগর করে দেয়া হয়েছে ততোদিনে, কারণ একটাই, এখানে আহমেদীয়া সম্প্রদায়ের বাস।
সালামের কবরের এপিটাফে লেখা ছিলো, "FIRST MUSLIM NOBEL LAUREATE"। সালামের মৃত্যুর দুই বছর পরে এই এপিটাফটিও রেহাই পায়নি। স্থানীয় এক ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে মুছে ফেলা হয় "MUSLIM" শব্দটি, এপিটাফের শূন্যস্থানে এখন কেবলই লেখা রয়েছে,
"FIRST NOBEL LAUREATE"
(ছবিতে ক্লিক করে মূল লেখাটি দেখে নিন)
ধর্মান্ধতার আক্রোশ এখনো রেহাই দেয়নি প্রফেসর সালামকে, মৃত্যুর এতো পরেও। ২০০৬ সালে সালামের মৃত্যুর ১০ম বার্ষিকীতে পাকিস্তানের ডেইলি টাইমসে তাই দুঃখ করে লেখা হয়,
Pakistan needs to feel guilty about what it has done to the greatest scientist it ever produced in comparison to the lionisation of Dr AQ Khan who has brought ignominy and the label of ‘rogue state’ to Pakistan by selling the country’s nuclear technology for personal gain. Can we redeem ourselves by doing something in Dr Salam’s memory on this 10th anniversary of his passing that would please his soul and cleanse ours?
এতো বঞ্চনার পরেও সালাম ছিলেন দেশপ্রেমিক, দেশ ছেড়ে চলে যেতে হলেও নোবেল পুরস্কারের অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে তাঁর এই সম্মানকে তাঁর দেশের সম্মান বলে তুলে ধরেছেন। তবে সালামের চোখে পদার্থবিজ্ঞান ছিলো সার্বজনীন, সারা বিশ্বের সব দেশের জ্ঞানপিপাসু বিজ্ঞানীদের পরিশ্রমের ফল, সালামের ভাষায়,
"The creation of Physics is the shared heritage of all mankind. East and West, North and South have equally participated in it. " Nobel prize Banquet speech
(ছবি - উইকিপিডিয়া)
মন্তব্য
- আব্দুস সালামের মতো বিজ্ঞানী জন্ম দিতে পারা শুধু পাকিস্তান কেন পৃথিবীর যেকোন দেশের জন্য কাঙ্খিত । তবে নিজদেশ পাকিস্তানে তার এই দশা দুঃখজনক। পাকিস্তানে আহমদিয়া ইস্যু নিয়ে একধরনের সাম্প্রদায়িক হিংসার চল আছে । ডেইলি টাইমসে দুঃখ করে এটা ওটা লিখলেও পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে এই হিংসার আবেদন অনেক বেশি । দু'টো উদাহরণ দেই -
১. পাকিস্তানে পাসপোর্ট করার সময় ধর্ম মুসলিম হলে একটা ডিক্ল্যারেশন দিতে হয় । ওটা পেস্ট করছি এখানে -
পাকিস্তানি স্টুডেন্টদের সাথে কথা বলে দেখেছি এটা নিয়ে ওরা দারুণ সন্তুষ্ট ও গর্বিত !
২. জার্মানিতে আমি যেই শহরে থাকি সেখানে দেখেছি পাকিস্তানিদের দু'টো গ্রুপ । এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের সাথে কথা বলা বা কোন ধরনের সামাজিক যোগাযোগ করে । ওদের একটা কাদিয়ানি আরেকটা বাকিরা । এমনকি গ্রাজুয়েশন করা স্টুডেন্টরাও এই বিভেদটা সিরিয়াসলি মেনে চলে ।
- তবে একটা কথা । যে যত বড় কান্ডারিই হোক হত্যার অস্ত্র বানানোর উৎসবে যোগ দেয়া কাউকেই আমি ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধার চোখে দেখি না । সেটা আব্দুস সালামের মতো শতাব্দির সেরা প্রতিভাবানদের একজন হলেও না ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এইটা নিয়ে বিস্তারে আলোচনা হলে ভাল হয়।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
যুগে যুগে এই ধর্মীয় গোঁড়ামি চলে এসেছে। হাইপেশিয়া থেকে শুরু করে ডঃ আবদুস সালাম এবং বাংলাদেশের ডঃ হুমায়ুন আজাদ - কেউই বাদ জাননি। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউ যদি এখন পুরষ্কার পান তাহলেও একই অবস্থা হবে।
একটা ধর্মীয় লেবাসে একটা দেশ কতখানি ক্ষতিকর হতে পারে সেটার প্রমান পাকিস্থান। আমার অবশ্য একটা বিষয়ে অবাক লাগে, ধর্মীয় অনুশাসন থেকে পরিচালিত হয়েও পশ্চিমা বিশ্ব অনেক এগিয়েছে। ধর্মীয় লেবাস গায়ে থাকলেও আমেরিকান কনজার্ভেটিভরা অনেকখানি উদার। কিন্তু উল্টো ব্যাপার ঘটেছে ইসলামী বিশ্বে। কনজার্ভেটিভরা যেন আরো বেশী কনজার্ভেটিভ হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন।
অবশ্য গানস, জার্মস এন্ড স্টিলস বইতে জ্যারেড ডায়মন্ডস এর কারন গুলো খানিকটা ইঙ্গিত করেছেন। উনি ধর্মকে জড়াননি। কিন্তু প্রকৃতির প্রতিবন্ধকতা কিভাবে টেকনলজিকে আগিয়ে নিয়ে যায় সেটা আলোচনা করেছেন। প্রকৃতির প্রতিবন্ধকতা না থাকলে আকামে সময় নষ্ট করার কোন বাঁধা থাকে না। তাই ধর্মীয় গোঁড়ামির মত পশ্চাদমুখী কাজ করে যাচ্ছে উপমহাদেশের লোকগুলি।
আমার মন্তব্যের আসলে কোন উপসংহার নেই। আছে কেবল দুঃখপ্রকাশ।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
বাহ! মতামত একেবারে মিল্যা গেল! গানস, জার্মস এন্ড স্টিল বইটা আমিও খুব ভালু পাই। এক অধ্যায় বোধহয় বাংলায় অনুবাদ করাও আছে ইন্টারনেটে। তবে আরেকটা কথা কই রিলিজিয়াস ডগমার সমাধান রিলিজিয়নের ভেতরে থেকে করা খুব কঠিন। ডকিন্সীয় ফর্মুলা ছাড়া গতি নেই মনে হচ্ছে!
পথিক রহমান
জন্মই ওনার আজন্ম পাপ।
_________________________
সর্বাঙ্গ কন্টকিত-বিধায় চলন বিচিত্র
_________________________
সর্বাঙ্গ কন্টকিত-বিধায় চলন বিচিত্র
স্মৃতি যদি খুব বেশী প্রতারণা না করে তাহলে মনে পড়ছে এই বিজ্ঞানী যেদিন বাংলাদেশে এসেছিলেন (কী একটা পুরস্কার নিতে) সেদিন তৎকালীন বিরোধী দল হরতাল ডেকেছিল।
আমাদের শেখ হাসিনা ফুপুর স্বামী ওয়াজেদ আলী মিয়া সম্ভবত আব্দুস সালামের ছাত্র হিসেবে পি এইচ ডি করেছেন। গত বছর উনি মারা যাওয়ার পর বিভিন্ন পত্রিকার জীবনীর মধ্যে তথ্যটা দেখেছিলাম। ১৯৬৩ সালের দিকে যে সময় আব্দুস সালাম তড়িৎচুম্বকীয় তত্ব নিয়ে কাজ করছিলেন সে সময় তার ছাত্র হিসেবে কাজ করছিলেন ওয়াজেদ আলী মিয়া। সুতরাং নোবেল জয়ী এই আবিষ্কারে একজন বঙ্গসন্তানেরও কিঞ্চিৎ ভূমিকা আছে বলা যায়। মনে হয় স্ত্রীর উপর অনেকটা অভিমান করেই যেন তিনি চিরকাল আড়ালে থেকে গেলেন। পত্রিকাগুলোও শোকগাথায় লিখল, " দেশ রত্ন শেখ হাসিনার স্বামী..." কে যে আসলে দেশ রত্ন কেউ ভালমত চিনল ও না।
তড়িৎ চুম্বকীয় তত্বের উপর ওয়াজেদ আলী মিয়ার রচিত একটি উচ্চমানের টেক্সটবুক আছে।
কোন বিজ্ঞানীই বোধ হয় মানুষ হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে আবিষ্কারের নেশায় মাতে না। সায়েন্স এর অ্যাপ্লিকেশনে অনেক সময়ই আর বিজ্ঞানীর হাত থাকে না। ধরুন কেউ আবিষ্কার করেছে , ইলেক্ট্রিক শক দিলে হার্ট আবার চালু করা যায়। এই তথ্য ব্যবহার করে কত জীবন বাচানো হয়। এখন এই বিজ্ঞানের তথ্য ব্যবহার করে যে ইলেক্ট্রিক চেয়ার বানিয়েছে, সমস্যা তো তার, বিজ্ঞানীর না।
"তবে একটা কথা । যে যত বড় কান্ডারিই হোক হত্যার অস্ত্র বানানোর উৎসবে যোগ দেয়া কাউকেই আমি ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধার চোখে দেখি না । সেটা আব্দুস সালামের মতো শতাব্দির সেরা প্রতিভাবানদের একজন হলেও না"
আবদুস সালামের কাজের সাথে "অস্ত্র বানানোর" কোনো সম্পর্ক নেই। "দুর্বল নিউক্লীয় বল ও তড়িৎচুম্বকীয় বল" মানেই এটম বোমা নয়। নেচার এর ফান্ডামেনটাল একটা বিষয় নতুন কিছু জানা, গবেষনা করা যেটা সালাম করেছে। এটম বোমা বাদ দিলে আর সব বোমাই কিন্তু কেমিক্যালস দিয়ে বানানো, সেজন্য কি মেনডেলিভ বা ল্যাভয়েসিয়ে কে অশ্রদ্ধা করব? কখনো এটা হয়ত এভাবে কারো মাথায়ই আসেনা কারন এটা আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু নিউক্লীয় বল বললেই শুধু বোমার কথা মনে আসে, এটা ভুল।
এই কথাটা এ কিউ খানকে নিয়ে বললে ১০০% ঠিক ছিল। সালামের বেলায় একদমই না।
"ওয়াজেদ আলী মিয়া সম্ভবত আব্দুস সালামের ছাত্র হিসেবে পি এইচ ডি করেছেন।" না - উনি সালামের আন্ডারে করেন নি। ইমপেরিয়াল কলেজ যেখানে সালাম ছিলেন সেখান থেকেও নয়। তবে নিউক্লীয়ার ফিজিক্সেই করেছেন, আর ইটালিতে আবদুস সালাম সেন্টারের ফেলো ছিলেন, সে হিসেবে হয়ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
সালাম বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছিলেন, ১৯৮০, ১৯৮৬/৮৭, ১৯৯২।
আচ্ছা Weinnberg কে কি বাংলায় "ভাইনবার্গ" লেখাটা সঠিক না?
নোবেল পেয়েও কেবল ধর্মের কারণে আবদুস সালাম ছিলেন পাকিস্তানে উপেক্ষিত।
আইয়ুব খানের আমলে পাকিস্তানে সালামের অবস্থান বেশ সম্মান ও প্রতিপত্তিরই ছিল। ১৯৬১ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ছিলেন। আইয়ুব খানের পৃষ্টপোশকতায় পাকিস্তানের প্রতি তার অবদানগুলোর পুরোটাই ঘটেছে পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্বপাকিস্তান ও পরে বাংলাদেশের প্রতি আলাদা করে তিনি কিছু করেছেন বলে আমি জানিনা।
সে যাই হোক। একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানীর আলাদা করে বাংলাদেশের প্রতি দরদ আশা করি না। সমগ্র মানুষের কল্যানে তার ইতিবাচক অবদানটাই মূখ্য হওয়া উচিত।
হয়তো পাকিস্তানের বৃহত্তর স্বার্থেই তিনি ততকালীক হুন্তার সাথে বিরোধে যান নি - অথবা হয়তো পূর্ব পাকিস্তান প্রশ্নে তিনি হুন্তার সাথে একমত ছিলেন। করন যাই হোক ৭১ এ তার 'খদ্দের' পাকিস্তান সরকার/রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশে যে অপরাধ ও অনাচার ঘটাচ্ছে, তা জানার পরেও জনসম্মুখে তিনি তার কোন প্রতিবাদ করেননি। ৭১ এ তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সরাসরি বিরোধীতা করেছেন, এরকম তথ্য আমার কাছে নেই, কিন্তু আমাদের প্রতিপক্ষকে তিনি তার মেধা ও পরিশ্রম দিয়েছেন এটা পরিস্কার।
আইয়ুব-টিক্কা-ভুট্টোর মদদদার এই পাকিস্তানীর গুনগানে ভরা এরকম পোস্ট সচলায়তনে প্রকাশ করায় আমি আপত্তি জানালাম।
"এতে অবাক হবার কিছুই নেই যে, বেশির ভাগ পাকিস্তানী জানেই না, তাদের দেশের একমাত্র নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ডক্টর আবদুস সালাম কোন অবদানের জন্য নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। কিন্তু তাদের অনেকেই বিগ ব্যাং থিওরির কথা কীভাবে তাদের পবিত্র গ্রন্থে আগে থেকেই লেখা ছিলো, সে বিষয়ে হারুন ইয়াহিয়া বা মরিস বুসাইল্লি মত ভণ্ডদের কথা ফটাফট কোট করতে পারবে।"
- নাদিম এফ. পারাছা
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ভাই, এইটা আমার পড়া সেরা কমেন্ট!
হা হা হা ,ইমো ক্যাম্নে দিমু?
পথিক রহমান
৯২ সালে যখন আবদুস সালাম বাংলাদেশে আসেন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ডক্টরেট নিতে তখনও এ রকম কিছু লেখা আমি পড়েছিলাম, যেখানে উনার পাকিস্তানি হওয়া নিয়ে অনেকের আপত্তি ছিল। কিন্তু পেপারে ঐ লেখাগুলো ছিল সাংবাদিকদের। যারা বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেন তারা এর আন্তর্জাতিক দিকটা বুঝতে পারেন, তাই সালামের ব্যাপারে কোনো বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর নেগেটিভ ধারনা আমি দেখিনি। যখন ভারতে/এ দেশে সিপাহী বিপ্লবে হাজার হাজার/লাখ লাখ ভারতীয় মারা যায় ১৮৫৭ তে, তখন ব্রিটেনে মাইকেল ফ্যারাডে সরকারি অনুদানে ইলেকট্রিসিটি নিয়ে কাজ করে গেছেন। আজকের প্রতিটা পাওয়ার প্লান্ট তার ইনডাকশন মেথডে কাজ করে। আমরা ফ্যারাডের এই অবদানকে প্রতিনিয়ত ব্যবহার করি, কখনো কি বলেছি উনি কেনো তখন প্রতিবাদ করেননি, বা এরকম কিছু। একজন বিজ্ঞানীর কি করার power আছে সেটা ভেবে দেখা উচিত, তাদের কি কাজ সেটা বুঝতে হবে।
তবে তারা কোনো কিছুকে সরাসরি সাপোর্ট করেছেন কিনা সেটা দেখার বিষয়। সালাম কি ৭১ এ টিক্কা খান গংদের কে সেটা করেছেন? আমার জানামতে উনি করেন নি। একজন বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর লেখায় পড়েছিলাম, ৭১ এ সালাম ইমপেরিয়াল কলেজে থাকাকালীন তার ও তার পরিবারের খোজখবর নিয়েছিলেন।
আমি যতদুর জানি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের অনেকেই সালামের বন্ধু/কলিগ ছিল, যেমন ঢাকা ইউনিভার্সিটির এ এম হারুন অর রশীদ, বাংলাদেশের সেরা পদার্থবিদ। এ রকম তিরিশ চল্লিশ জন বা তারো বেশি যারা ইটালিতে ICTP তে কাজ করেছেন। এরা কি কখনো সালামকে নেগেটিভ ভাবে দেখেছেন, তাদের লেখায় কখনোই সেটা দেখিনি, বরং এর উল্টোটাই। যদি সেটা না হয় তবে অন্যরা কেনো সেটা করবেন? থার্ড ওয়ার্ল্ড এ বিজ্ঞান প্রচারের জন্য সালামের অবদান যে কোনো বিজ্ঞানীর চেয়ে বেশি। ইটালিতে ICTP, এটা মুলত থার্ড ওয়ার্ল্ড বিজ্ঞানীদের জন্য বানানো সেন্টার, ইউনেসকো ফানডেড, সালামই এটার প্রতিষ্ঠাতা, হাজার হাজার থার্ড ওয়ার্ল্ড বিজ্ঞানীদের এটা সুযোগ দিয়েছে রিসার্চের। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের কয়েকশত বিজ্ঞানী/ছাত্র ওখানে গেছেন রিসার্চের কাজে।
থার্ড ওয়ার্ল্ড এ বিজ্ঞান প্রচারের জন্য সালাম পাগলের মত ঘুরে বেরিয়েছেন। বিজ্ঞান বাজেট বারানোর জন্য সব সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয় সালামের পরামর্শে/চেষ্টায় হয়েছিল ৯০ এর শুরুতে, এর আগে এটা education এর অধীনে ছিল, আলাদা কোনো মন্ত্রনালয় ছিল না। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীমহলে আবদুস সালাম একজন অতীব সন্মানের আসনে আছেন যদিও তিনি পাকিস্তানি ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে উনি হীনমন্যতার উর্ধে ছিলেন, তাই সবার ভালবাসা পেয়েছেন।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি পদার্থবিজ্ঞান সত্যেন বোসের জন্য বিখ্যাত ছিল। সালাম ক্যারিয়ারের শুরুতে এখানে কাজ পেতে আবেদন করেছিলেন। উনাকে নেয়া হয়নি, পান্জাব ইউনিভার্সিটিতে পরে কাজ পেয়েছিলেন। এটা ১৯৯২ সালে ঢাকা ইউনিভার্সিটির অনারারি ডক্টরেট নেয়ার সময় উনি আক্ষেপ করেছিলেন।
ভালো।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
সালাম কি ৭১ এ টিক্কা খান গংদের কে সেটা করেছেন? আমার জানামতে উনি করেন নি।
আপনার এই 'জানামতের' ভিত্তিটি প্রকাশ করবেন কি?
আমার 'জানামতের ভিত্তি' হল ওপেন লিটারেচার যেটা আপনি আমি সবাই যেকোনো বই, পত্রিকা, ওয়েব থেকে যতটা জানতে পারি - আবদুস সালাম পাকিস্তানী ছিলেন এটা আমাদের কাছে তার একটা নেগেটিভ দিক, কিন্তু এর বাইরে আমি কোথাও বাংগালীদের সাথে তার কোনো খারাপ ধারনা, বিদ্বেষ বা ৭১ এ ইন্ধন যোগানো, তার সম্পর্কে আমি কোনো বাংলা বা ইংরেজি লেখায় এ ধরনের আমি কিছু পড়িনি। তার সম্পর্কে অনেক লেখা এবং তার বইও আমি পড়েছি, Ideals and Realities, যেটা মুলত পদার্থবিজ্ঞানের কিছু লেকচার আর দরিদ্র বিশ্ব কিভাবে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে উন্নতি করবে সেটা নিয়ে লেখা। ইসরাইলের এক আর্মি কর্নেল ও নামী পদার্থবিজ্ঞানী (কোয়ার্ক মডেলের অন্যতম প্রবক্তা), পরে মন্ত্রী/কনসারভেটিভ পলিটিসিয়ান Yuval Neeman ও সালামের আন্ডারে পি এইচ ডি করেছেন, এবং সালামের বিভিন্ন উদারতার কথা বলেছেন। বিজ্ঞান জাতীয়তার উর্ধ্বে।
এখানে মনে রাখা উচিত, কোনো কিছু নেগেটিভ বললে সেটাকেই প্রমান দিতে হয়। তাই আপনারই উচিত নেগেটিভ প্রমান দেয়া।
সালাম বাংগালী ছিলেন না। সুতরাং তিনি আমাদের চেতনাকে বা বন্চনাকে পুরোপুরি বুঝতে পারবেন সেটা আমি আশা করি না। তবে উনি এটাকে কোনো রকম হেয় করেছেন বা বিরুদ্ধে ইন্ধন দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই।
বিভিন্ন মানুষের মতের ভিন্নতা থাকে তাদের অবস্থান বা ইনফরমেশন অনুসারে, তাই আমি বলব আপনার বা অনেকের মতের ভিন্নতা থাকাটা দোষের কিছু নয়। যেমন মুহম্মদ ইউনুস কেও দেখছি অনেকে দেখতে পারেন না - নিজ দেশে সমালোচিত, বিদেশে সমাদ্ত। তবে সবকিছুতে নমনিয়, যুক্তি, উদারমনা ভাবটাই কাম্য।
@রাসেল, আমি আপনাকে অনুরোধ করব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনিদের স্মৃতিচারণ নিয়ে লেখা একটি বই "আমারে তুমি অশেষ করেছ" পড়তে। ওখানে একজন পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রীর স্মৃতিচারণ দেয়া আছে যিনি কিনা ইম্পেরিয়াল কলেজে ১৯৭১ সালে ডঃ সালামের অধীনে পিএইচডি করছিলেন। একাত্তরে পাকিস্তানীদের হামলার পরপর-ই উক্ত বাংলাদেশী ছাত্রীকে ডঃ সালাম ডেকে সমবেদনা প্রকাশ করেন ও পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর এহেন জঘন্য কৃতকর্মের জন্য তিনি তাদের কঠোর সমালোচনা করেন।
সরলীকরণ খুবই খারাপ জিনিস। অন্তত মহান জ্ঞান তাপসদের এই ঢালাও ভাবে সরলীকরণ থেকে দূরে রাখুন।
পোষ্টটি ভাল লেগেছে।
আর তাঁকে বিজ্ঞানী হিসাবেই দেখি।
অবাক করা ব্যাপার হল, যে পুরস্কারের জন্য বিশ্ব একজনকে স্বীকৃতি দেয় সে অর্থ এসেছিল ডিনামাইড থেকে! তাতে ক্ষতির চেয়ে বরং সভ্যতার লাভ হয়েছে বেশী বা তা এগিয়েছে।
দূরের তেপান্তর
রাগিব ভাই, আপনার 'এলোচিন্তাই' এমন গোছানো!!
নিষ্ফল মন্তব্য-প্রতিমন্তব্যে সময় নষ্ট না করে পরের পর্বটা লিখে ফেলুন। অধীর আগ্রহে আগ্রহী পাঠক প্রস্তুত।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
নাগরিকত্ব বা এমন বাহ্যিক বিচারে কাউকে ঘৃণা বা গালাগালের বিপরীতেই যে আমার অবস্থান, সচলায়তনে আমার লেখা ও মন্তব্য পড়ে দেখলে সেটার প্রমান পাওয়া যেতে পারে।
জানিনা আমি পেরেছি কি না, কিন্তু মন্তব্যকারিরা ঠিক ঠিক পরিস্কার করে দিয়েছেন যেঃ
'পাকিস্তানী মানেই যুদ্ধপরাধী নয়। পাকিস্তানী হলেই তাকে ঢালাওভাবে গালাগাল করা যায় না।'
রাগিব ভাই ক্ষমা করবেন। আপনি ও আপনার মত যারা আমার নির্বুদ্ধিতায় ভরা গোঁয়ার-তথ্যশূণ্য মন্তব্যগুলোতে ধৈর্য্য নিয়ে যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছে, তাদের ধন্যবাদ। যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে আমাদের কথোপকথনটি থাকুক, কে জানে কখন আবার আরেকটি ঢালাও গালাগালের ঘটনা ঘটে যায়?
এইটা রিভার্স গেইম আগেই সন্দেহ করেছিলাম।
একজন দুইজন ব্যতিক্রমকে উদাহরণ বানিয়ে ঢালাওভাবে পাকিগুণমুগ্ধ পোস্টের* বন্যায় মানবতার পলি জমে জমে সুজলা-সুফলা হোক সচলায়তন।
* এই পোস্ট পাকিগুণমুগ্ধ না, পাকিচরিত্র প্রকাশক।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
একজন দুইজন ব্যতিক্রমকে উদাহরণ বানিয়ে ঢালাওভাবে পাকিগুণমুগ্ধ পোস্টের* বন্যায় মানবতার পলি জমে জমে সুজলা-সুফলা হোক সচলায়তন।
বলাইদা, আমাদের ভাবনাটি খুব বেশী দুরের নয়। সালাম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কিছু করেছে কি না, এর যেমন আমি কোন প্রমান দিতে পারিনি, ঠিক তেমনি পাকিস্তানের বেশীরভাগ নারী ও শিশুরা ৭১ এ, এর আগে ও তারপরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কিছু করেছে কি না সে প্রমান দেবার আগে তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা বা ঢালাও ভাবে তাদের গালাগাল দেয়া যায় না। সালামের সাথে এসব যুদ্ধপরাধের প্রমানহীন নারী ও শিশুর তফাত একটাই, সালাম নবেল পুরস্কার পেয়েছে, সে একজন বড় মানুষ।
পাকিগুনমুগ্ধ হবার কোন কারন ঘটেনি। দু/একজন পাকিস্তান বংশোদ্ভুত বাংলাদেশী বা বাঙালী বংশোদ্ভুত পাকিস্তানী - যাদের আমি ছোটবেলা থেকে জানি, তাদের কেউ কেউ ৭১ এ পাকিস্তানের কর্মকান্ডে লজ্জ্বিত। লাহোর বা করাচিতে আমি যাইনি। কিন্তু ইউরোপের কিছু কিছু আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে যে গুটিকয় পাকিস্তানী তরুন ফটোগ্রাফার, লেখক, শিল্পী, নাট্যকারদের সাথে কথা হয়েছে, তারা অকপটে অনেকেই ৭১ নিয়ে তাদের আগের প্রজন্মকে প্রশ্ন করছে। এদের সংখ্যাটি নিশ্চয়ই 'একজন দুইজন' এর চাইতে বেশী; তবে এরা যে ব্যাতিক্রম - আর আর যারা যুদ্ধপরাধ করেছে, যারা এই যুদ্ধপরাধের সমর্থন করে, এরাই যে পাকিস্তানের মূল ধারা - এই ধারনার প্রমান কি?
আমি ভাবতে চাই, পাকিস্তানে কিছু লোক বাংলাদেশে যুদ্ধপরাধ করেছে - এবং বর্তমানে কিছু লোক সে যুদ্ধপরাধকে সমর্থন করে। সচলায়ত থেকে সুনির্দিষ্ট ভাবে এদের বিরুদ্ধে কথা বলা হোক, ধিক্কার জানানো হোক। যারা আমাদের মতই পাকিস্তানী সামরিক ও জমিদারী প্রথার শিকার, ঢালাওভাবে পাকিস্তানীদের 'মা** *দি' বললে যে এই নিরীহ মানুষদেরও গালাগাল দেয়া হয়, এবং এরকম ঢালাও গালাগালটি যে সচলায়তনের নীতিবিরুদ্ধ হয়েছে, সেটা মেনে নেয়া হোক।
দুর্দান্ত ভাই, পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাকিস্তানের 'কিছু লোক' না, তারা সমগ্র পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করে। সুতরাং বাংলাদেশে যখন সেই সেনাবাহিনী গণহত্যা চালায়, তখন সেটা পাকিস্তানের তরফ থেকে বাংলাদেশে গণহত্যা হয়, পাকিস্তানের মুষ্টিমেয় কিছু লোকের দ্বারা সংঘটিত অপরাধ হয় না।
-- এই কথা যদি আপনি মানেন, তাইলে আপনার ওপরের মন্তব্যের অসারতা আর আমাকে নোতুন করে বলতে হবে না। আর এটা যদি না মানেন, তাইলে আপনার সাথে এই বিষয়ে আলাপ চালাইয়া কোনো কিনারা হবে না, আমি অফ।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এই পোস্টের ৫.২.১.১.১ মন্তব্যটি এই আলোচনায় প্রাসঙ্গিক হতে পারে কি?
শতভাগ প্রাসঙ্গিক। আইয়ুব-ইয়াহিয়া-টিক্কা-ভুট্টোর সমর্থক/সহযোগীরা সবাই চুলোয় যেতে পারে। ৭১ এ যারা যুদ্ধপরাধ ঘটিয়েছে, তাদের যে সন্তানেরা সত্য জানতে চায়না, সত্য জেনেও প্রকাশ্যে অনুশোচনা করেনি, তারাও তাদের বাবাদের সাথে একই চুলোয় যেতে পারে।
আবার রাগিব ভাইয়ের করা ওপরের ৮.১.১.১.৪.২ মন্তব্যটিও প্রাসঙ্গিক হতে পারে।
" পাকিস্তানে ১৯৫৪ হতে ১৯৭২ পর্যন্ত সামরিক সরকার ছিলো। আপনি সে সময়ের যতো বাঙালি বিজ্ঞানীর কথা বলতে পারবেন, সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করলে সব ব্যাটাই "যুদ্ধপরাধি সামরিক সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিল।"
আপনি বলেছেন,
তাহলে কি পূর্বসূরীর পাপের নীরব বা সরব সমর্থক, কিংবা সে সম্পর্কে মন্তব্যে বিরত জনগোষ্ঠীকে পূর্বসূরীর পাপের জন্যে পাপী বলে ভাবা যেতে পারে?
আর ইয়োরোপে ঘরোয়া আসরে দুয়েকজন সুশিক্ষিত পাকিস্তানীর মিনমিন করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অতীত কীর্তির সমালোচনা কি গোটা পাকিস্তানী জাতিকে দায়মুক্তি দিতে পারে?
তাহলে কি পূর্বসূরীর পাপের নীরব বা সরব সমর্থক
সরব সমর্থকের বেলায় একমত। ওপরের আলোচনায় নিশ্চই দেখা যাচ্ছে নীরবতা মানেই সমর্থন নয়। যেমন ড সালাম নিরব ছিলেন, কিন্তু তাকে যুদ্ধপরাধের দায়ে দায়ী করতে আমরা প্রস্তুত নই। সালামের মত, বা পরনির্ভর শিশু/কোন কোন নারী/আসুস্থ মানুষের নিরবতাকেও সমর্থন বলতে পারছি না।
ইয়োরোপে ঘরোয়া আসরে দুয়েকজন সুশিক্ষিত পাকিস্তানীর মিনমিন করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অতীত কীর্তির সমালোচনা কি গোটা পাকিস্তানী জাতিকে দায়মুক্তি দিতে পারে?
দু একজনের মিনমিন করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অতীত কীর্তির সমালোচনা করে পাকিস্তানী যুদ্ধপরাধীদের দায়মুক্তি হতে পারে না। আর
এই 'গোটা পাকিস্তানী জাতির' মধ্যে যে শিশুটি আজকে জন্মালো তার দায়বদ্ধতা কি?
এইটা কেমন কথা হল!
আব্দুস সালাম প্রকাশ্যে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছেন এমনটা জানা যায়না।তথ্য প্রমান দিতে পারবো না, শুধু স্মৃতিই ভরসা, সেইখান থেকে হাতড়ে ছোট্ট একটা তথ্য জানাতে পারি।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা যিনি ৭১'সালে ইম্পেরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং ২৫শে মার্চের সেই কালোরাতের পরে ঐ কলেজের শিক্ষক আবদুস সালাম তাঁকে ডেকে বলেছিলেন" পাকিস্তানী আর্মি তোমাদের উপরে যা করেছে তার জন্য আমি একজন পাকিস্থানি হিসেবে লজ্জিত"। এইটা একান্তই ব্যাক্তিগত প্রতিক্রিয়া সেই অর্থে তাঁর মতামত হিসেবে ধরা যাবেনা।
এই লেখাটি ডেইলীস্টারে পড়েছিলাম এবং ডেইলীস্টারের আর্কাইভ খুঁজলে পাওয়া যেতে পারে।
একবাল আহমেদ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লেখক এবং একটিভিষ্ট হিসেবে ভিয়েতনাম এবং আলজেরিয়ার মুক্তিসংগ্রামে চরম সোচ্চার হলে একাত্তর তাঁর ভুমিকা অনুল্লেখ্য।তবে তিনি জেনোসাইডের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন।
২৫ শে মার্চের আগে চট্টগ্রামে এক জাতিগত দাংগায় শতাধিক বিহারী মারা যায় এবং সেই দাংগায় অনেক বিহারি নারী, শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়( এসম্পর্কে অতিথী'সচল সাইফ শহীদের লেখা পাবেন ক্যাটেড কলেজ ব্লগে; সেখানে বলা আছে তিনি নিজে এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী)।সেই হত বিহারিদের মধ্যে একবাল আহমেদের আত্মীয়স্বজন ছিলো, এটা তিনি তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেছেন। হাসান মোর্শেদ
সে চিঠিটার উদ্ধৃতি দিয়েছেন সেটাতে ঔ ঘটনার প্রত্যক্ষ প্রভাব আছে হয়তোবা।তবু এমন অনুসরণীয় একটিভিষ্টের শুধু একটি ঘটনা দ্বারা তাড়িত হওয়াটা (সামগ্রিক বিষয়টা বিবেচনায় না এনে) হতাশাব্যন্জক।
একবাল আহমেদ বিহারী হলেও তিনি নিজের পাকিস্তানী পরিচয়কেই তুলে ধরতেন।শেষেরদিকে ইসলামাবাদে থাকতেন এবং সেইখানেই তাকে সমাধিস্ত করা হয়।
বিজ্ঞানীদের মানবিক-রাজনৈতিক এথিক্স থাকাটা আমার মতে আবশ্যকীয়।কিন্তু পরিতাপের বিষয় অনেক বিজ্ঞানীর কাজকর্মে সেটা খুঁজে পাওয়া যায়না।
তবে দুর্দান্ত'র মত করে খুঁজলে ঠগ বাছতে গা উজাড় হয়ে যাবে। স্বয়ং আইনস্টাইন নব প্রতিষ্ঠিত ইজরায়েল রাষ্ট্রের জন্য অর্থ সংগ্রহে ইউরোপ আমেরিকায় ইউনি'তে লেকচার দিয়ে বেড়িয়েছেন; নব প্রতিষ্ঠিত সেই রাষ্ট্রের অনেক আগ্রাসী কর্মকান্ড নিয়ে সমালোচনা তো দূরের কথা।ইতালিয়ান ইহুদী এনরিকো ফার্মি তাঁর দেশ থেকে আম্রিকায় পালিয়ে গিয়ে সেখানে পারমানবিক বোমা বানিয়েছেন।অথচ সলিড স্টেইটে ম্যাটেরিয়ালসে "ফার্মি লেভেল" হিসেবে এক শক্তিস্তরের নামকরন করে বিজ্ঞানে তাঁর অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
দুর্দান্ত, হাসিব ভাই যেমন বলেছেন ব্যাক্তিগতভাবে কোন বিজ্ঞানীকে আমি বা আপনি শ্রদ্ধা না জানাতেই পারি, কিন্তু অন্যকেউ তাকে নিয়ে লিখলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে, কিংবা তাকে আপনার মত করেই দেখতে হবে, এইটা স্রেফ গোয়ার্তুমি।
নতুন মন্তব্য করুন