মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরে এখানকার মানুষের লাইব্রেরি প্রীতি দেখে বেশ মুগ্ধ হই। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা যমজ শহর শ্যাম্পেইন ও আরবানাতে লাইব্রেরি অনেকগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে এক কোটির উপরে বই আছে (বাংলা বইও আছে বেশ কিছু)। এসব বাদেও রয়েছে প্রতিটি শহরের নিজস্ব লাইব্রেরি, আর সেগুলোতে পাঠকের ভীড়ও যথেষ্ট।
এদেশে আসার শুরু থেকেই লাইব্রেরিতে আমিও ঘাঁটি গেড়ে বসেছি। বুয়েটে পড়ার সময় লাইব্রেরি থেকে কাজের বই নিতাম খুব কম - বেশি নিতাম ডানদিকের ধুলো পড়া দেয়াল ঘেঁষে থাকা অ-পাঠ্যপুস্তক এলাকার বই। বুয়েটে ইদানিং আর পাঠ্যবই বাদে অন্য কিচ্ছু কেনা হয় না, কিন্তু ষাটের দশকে মার্কিন দাতব্য সংস্থা বই পাঠিয়েছিলো প্রচুর , দান করা সেই বইয়ের মধ্যে সাহিত্য, গল্প, কবিতা, এরকম অনেক কিছুই ছিলো।
বুয়েটের ছাত্রদের আঁতেল বলে অপবাদ রয়েছে, "আউট বই" (সেকেলে ভাষায় ...) পড়ে সময় নষ্ট করার চাইতে বরং চোথাবাজি টাইপের বা সার্কিট সলিউশন ধরনের শম সিরিজের বইতেই আগ্রহ বেশি। তাই ধুলো জমতে থাকে ঐ শেলফে, বছর বছরে প্রচুর ধুলো। আমি ঐ দিকটায় যাতায়াত শুরু করি ৯৯ সাল থেকে, অবাক হয়ে লক্ষ্য করি, অনেক বই সেই ষাটের দশক থেকে আজ অবধি কেউ ধরে দেখেনি।
এর পর থেকে ঐ জায়গাটা আমার খুব প্রিয় হয়ে পড়ে। লাইব্রেরিতে যেতাম ঐখানে ঘুরাঘুরি করার জন্য, আর কোনো ইন্টারেস্টিং বই পাওয়ার জন্য। উচ্চমার্গীয় সাহিত্য অবশ্য আমার মিস্তিরি-মাথার উপর দিয়ে যায়, কিন্তু ওখানে আমার ইন্টারেস্ট সাইন্স ফিকশন, আর ইংরেজি ছোটগল্পের প্রচুর বই ছিলো। "ও হেনরি"র গল্প গুচ্ছ (মনে আছে, সেই "ডেলা অ্যান্ড জিম" এর কাহিনী?) ওখানে পেয়েছি, আরো পেয়েছি হালের জুরাসিক পার্কের লেখক মাইকেল ক্রিকটনের শুরুর দিকে লেখা বই "অ্যান্ড্রোমিডা স্ট্রেইন"। আর শার্লক হোমস? তার সমগ্র পেয়েছিলাম ... পুরাটা ঘেঁটে ফেলেছি।
শেষের দিকে ঐ তাকের সব বই পড়া হয়ে গিয়েছিলো, অধিকাংশই পুরো ৩০ বা ৪০ বছরে আমিই একমাত্র ইস্যু করেছি ... এমন। বইগুলো নেয়ার সময় লাইব্রেরিয়ান অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাতো আমার দিকে, আজব চিড়িয়া দেখছে, এরকম চাহনীতে। আসে পাশের বিশাল আঁতেল বাহিনী আর বয়েলস্টেডের ইলেক্ট্রনিক্স বইয়ের মাঝে নাক গুঁজে থাকা ছাত্রদের মধ্যে গল্পের বই ইস্যু করতে দেখলে হয়তো চিড়িয়া মনে করাটাই স্বাভাবিক। হাজার হলেও বাঙালি তো, বাধ্য না হলে বই পড়ানো আমাদের কঠিন ... (মুজতবা আলীর লেখাটা হাঁড়ে হাঁড়ে সত্যি)।
মন্তব্য
পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশ থেকে অশিক্ষিত কিছু সিলেটি এসেছে বলে আমরা প্রায়ই নাক সিঁটকাই। তারাই টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিলে নতুন ধরনের লাইব্রেরির জন্ম দিয়েছে, যা ইউকে-র কোথাও নেই। এর নাম রাখা হয়েছে আইডিয়া স্টোর।
টাওয়ার হ্যামলেটসে এ পর্যন্ত মোট ৬টি আইডিয়া স্টোর হয়েছে।
এগুলো শুধু যে বই ইস্যু করে তা নয়। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নানা রকম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। যখন স্কুল বন্ধ থাকে তখন বিভিন্ন ধরনের স্কিল শিখায়। অর্থাত এখানে এলে আপনি আইডিয়া পাবেন কীভাবে জীবনকে গড়ে তুলবেন। সুপারস্টোরে টাকা লাগে কিন্তু এ হচ্ছে বিনামূল্য সেবা।
আমার বাসার কাছেই একটা আইডিয়া স্টোর আছে। এ নিয়ে ব্লগে দু'বার লেখাও দিয়েছি। বাংলাদেশে মনে হয় চালু পাঠাগারের সংখ্যা হাতে গোণা। তাতে বইও বোধ হয় থাকে না। অনেক আগে আমরা বই-ভিক্ষুক পাঠাগার করেছিলাম। মানুষের কাছে চেয়ে চেয়ে বই নিয়ে পাঠাগারে রাখা।
বিদেশ এসে মনে হয়, এখান থেকে বই জোগার করে দেশে পাঠানো যায়। আপনি কি বলেন?
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আর আমাদের গ্রন্থাগারগুলো!
ঢাকার কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার, জাতীয় গন্থাগার, কি পিআইবি'র গ্রন্থাগারে গেলে দুয়েকজন বয়স্ক পাঠক ছাড়া তরুন প্রজন্মের প্রায় কাউকেই এখন খুঁজে পাওয়া যায় না। ...
মফস্বলের গ্রন্থাগারগুলোর তো আরো দৈন্য দশা! সেখানে নতুন বইয়ের জন্য তহবিল প্রায় নেই। কিছু বুড়ো আর চাকরী প্রত্যাশী বেকার যুবক দৈনিক পত্রিকা পড়তে ভীড় জমায়। সিরিয়াস বইয়ের পাঠক কোথায়?
--এসবই মোটামুটি একটি সাধারণ চিত্র।
শুধু ব্যতিক্রম বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের গ্রন্থাগারটি। অনেক বছর ধরে আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ স্যার 'আলোকিত মানুষের' সন্ধানে দেশজুড়ে স্কুল - কলেজের ছাত্র - ছাত্রীদের মধ্যে বই পড়ার প্রতিযোগিতা করছেন। চালাচ্ছেন একাধিক পাঠচক্র; এমন কি ভ্রাম্যমান লাইব্রেরিও।
এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংহতি সমিতি ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ বেসরকারি উদ্যোগে একাধিক গ্রন্থাগার গড়ে তুলেছে। রাজনৈতিক বই ছাড়াও সে সব গ্রন্থাগারে রয়েছে সব ধরনের জ্ঞান- বিজ্ঞানের বই। ...
কিন্তু পাহাড়ের ঘৃণ্য জলপাই রাজনীতির রোষানল থেকে বাদ পড়ে নি এইসব গ্রন্থাগারও। খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর এলাকার 'হোয়াং বোই ওবা' নামক গ্রন্থাগারটি এ পর্যন্ত তিন তিনবার পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে! নাজি বাহিনীর কায়দায় বহ্নি উৎসবে ধ্বংস করা হয়েছে কয়েক হাজার দুর্লভ বই ও পত্রিকা!
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
মজার খবর, কদিন আগে আইডিয়া স্টোর আমার বইমেলা অনলাইন সাইট থেকে বেশ কিছু বই নেবার কথা বলেছে। মাসদুয়েক পরে বো বা হোয়াইটচ্যাপেল আইডিয়া স্টোর ঘেঁটে দেখতে পারেন। বইমেলার প্রোডাক্ট মিলতেও পারেঃ)
Sorry for the comment in English. Don't yet know how to type in Bangla. As much as I agree with the observation that Americans do use their libraries alot I have to disagree in the strongest possible way with the comment"হাজার হলেও বাঙালি তো, বাধ্য না হলে বই পড়ানো আমাদের কঠিন". The last time I checked I was a Bengali andwas and still am a voracious, obsessive reader. The ratio of literary publications to litarate people is very high in Bengali. I don't know the figure in Bangladesh but in West Bengal they publish 10000 literay publications a year. That is a very impressive number.
We are a literary nation, the nation of the first non-European Nobel-Laurate in literature, the nation of Nazrul, Jibanando and Shamsur Rahman. The reluctance of students in BUET to broaden their horizons does not alter that. There are too many well read Bengalis to counter that. We as a nation have many flaws with every passing day we acquire many more, but please lets not belittle our strengths.
রাগিব ভাই তো তাও বুয়েটের লাইব্রেরিতে যেতেন, বই ইস্যু করতেন। আমার কাছে বুয়েট লাইব্রেরির পরিবেশটা এমন দমবন্ধকর ঠেকে যে, নিতান্ত না ঠেকলে আমি ঐ গ্যাঞ্জামের মধ্যে যাই না। তার উপর আমি আবার লো সিজি ব্রাত্য স্টুডেন্ট কিনা
যাই হোক, কথা হচ্ছিলে লাইব্রেরি নিয়ে। আমাদের দেশে যদি লাইব্রেরি থাকতো তা হলে কি আর অধমের কয়দিন পর পর আজিজে যেয়ে পয়সার শ্রাদ্ধ করা লাগত!
ব্যাপারটা আসলে লাইব্রেরিরও না, আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে বই পড়ার ব্যাপারটাই উঠে যাচ্ছে। তাও জাফর ইকবাল স্যার কল্যাণে কিছু কিশোর কিশোরী এখন বই পড়ছে। যদিও তারা পথের পাচালীর দেখা আদৌ কোন দিন পাবে কিনা যানি না। আর শিশুদের কথা কি বলব। পোকেমন, পাওয়ার রেঞ্জার, টম এন্ড জেরির জন্য তারা গল্পের বই কি জিনিস তাও জানে না।
আর বড়রা তো মোবাইল আর ইন্টারনেট নিয়েই ব্যাস্ত।
সময় কই বই পড়ার !!
------------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
এই আলোচনায় পরে ফিরবো।আপাতত:পড়ে গেলাম।
রিপোর্ট লেখা কিংবা আড্ডা দেয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া লাইব্রেরীতে যাওয়া হতো না। তবে এক বন্ধুর দেখাদেখি, ডান দিকের সারিতে আমিও দুয়েকবার উঁকি দিয়েছি।
নতুন মন্তব্য করুন