(বাংলা ও ইংরেজি উইকিপিডিয়াতে ব্রজেন দাসের জীবনী লিখেছিলাম। এই সুবাদে তাঁর পরিবারের সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করে ছবিগুলো যোগাড় করি। আসুন, আমরা জেনে নেই, বাংলাদেশের গর্ব, ব্রজেন দাসের কথা)
(উল্লেখ্য, জীবনীটি এখনো অসম্পূর্ণ, উনার জীবনের অনেক কথা যোগ করা বাকি। সময় থাকলে পারিবারিক ওয়েবসাইট থেকে কিছু তথ্য যোগ করে দিতে পারেন)
----
ব্রজেন দাস (১৯২৭-১৯৯৮) একজন বাংলাদেশী সাঁতারু। তিনি প্রথম দক্ষিণ এশীয় ব্যক্তি যিনি সাঁতার কেটে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন। ১৯৫৮ খ্রীস্টাব্দের ১৮ আগস্ট তিনি এই কৃতীত্ব অর্জন করেন।
প্রাথমিক জীবন
ব্রজেন দাসের জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক বিক্রমপুর এলাকার কুচিয়ামোড়া গ্রামে। সেখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে ব্রজেন ঢাকার কে এল জুবিলি হাই স্কুল থেকে ১৯৪৬ খ্রীস্টাব্দে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও বিএ পাস করেন। ছেলেবেলা থেকেই সাঁতারে তাঁর দারুন উৎসাহ ছিল। সাঁতারে হাতে খড়ি হয় বুড়িগঙ্গা নদীতে সাঁতার কেটে।
ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম
(ছবি, ইংলিশ চ্যানেল ৫ম বার অতিক্রমের পরে ব্রজেন দাস)
১৯৫৮ সালে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমের সাঁতার প্রতিযোগিতায় মোট ২৩ টি দেশ অংশ নেয়। সেখানে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন ব্রজেন দাস। ১৯৫৮ সালের ১৮ই আগস্ট প্রায় মধ্যরাতে প্রতিযোগিতা শুরু হয় ফ্রন্সের তীরে। প্রচন্ড প্রতিকূল পরিবেশে সাঁতার কেটে পরদিন বিকেলবেলায় প্রথম সাঁতারু হিসেবে ইংল্যান্ড তীরে এসে পৌছান ব্রজেন দাস।
ব্রজেন দাস সর্বমোট ছ'বার ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন: ১৯৫৮, ১৯৫৯, ১৯৬০, ১৯৬১ সালে। ১৯৬১ সালে ১০ ঘন্টা ৩৫ মিনিটে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়ে তিনি বিশ্ব রেকর্ড গড়েন।
কৃতীত্ব
জাতীয় প্রতিযোগিতা
ব্রজেন দাস ১৯৫২ সালে পশ্চিমবঙ্গে ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় ১০০, ২০০, ৪০০, ও ১৫০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতারে তিনি ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল অবধি পর পর ৪ বছর চ্যাম্পিয়ন হন। এছাড়া তিনি ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান জাতীয় প্রতিযোগিতায় ১০০ ও ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতারের শিরোপা জেতেন। ১৯৫৬ সালে তিনি অলিম্পিক গেইমসে পাকিস্তান সাঁতার দলের প্রতিনিধিত্ব করেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা
ব্রজেন দাস ১৯৫৮ সালের জুলাই মাসে ইতালির কাপ্রি দ্বীপ হতে নাপোলি পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার দূর পাল্লার সাঁতারে ৩য় স্থান অর্জন করেন। একই বছর আগস্ট মাসে তিনি ইংল্যান্ডে বিলি বাটলিনের চ্যানেল ক্রসিং প্রতিযোগিতায় ২৩টি দেশের ৩৯ জন সাঁতারুকে হারিয়ে প্রথম স্থান লাভ করেন। পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৫৮ সালের আগস্ট মাসে ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ড পর্যন্ত ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন। সেপ্টেম্বরে তিনি ইংলিশ চ্যানেলকে ইংল্যান্ড হতে ফ্রান্সে সাঁতার কেটে পার হন। ১৯৬০ ও ১৯৬১ সালের আগস্টে তিনি ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ড সাঁতার কাটেন। ১৯৬১ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ডের মধ্যে ইংলিশ চ্যানেল সবচেয়ে কম সময়ে, মাত্র ১০ ঘন্টা ৩০ মিনিটে পার হয়ে তখনকার দিনের বিশ্বরেকর্ড স্থাপন করেন।
পুরস্কার
* ১৯৯৯: স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, বাংলাদেশ (মরণোত্তর)
* ১৯৭৬: জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার, বাংলাদেশ
* ১৯৫৮: প্রাইড অফ পারফরমেন্স, পাকিস্তান সরকার
বহিঃসংযোগ
[*] ব্রজেন দাসের উপর তাঁর পরিবারের ওয়েবসাইট
[*] ব্রজেন দাসের উপর নিবন্ধ, বাংলাপিডিয়া
মন্তব্য
বেশ হচ্ছে।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
চমৎকার।
একই সাথে মনে পড়ে গেল অরুণ নন্দীর কথা।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
আচ্ছা রাগিব ভাই, ছোট্ট একটা তুলনা দিলে হত না? মানে কত লম্বা এই ইংলিশ চ্যানেল। তাদের গতি কিরকম ছিল। এখনও এই ব্যাপারটা চালু আছে কিনা। পুরো সময়টাতে তাদের ওয়াচ করা হত কিনা, খাবার দেয়া হত কিনা, এইসব।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ধন্যবাদ রাগিব ভাই।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ধন্যবাদ
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
শাবাশ ব্রজেন! শাবাশ!
ধন্যবাদ রাগিব ভাই।
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
অনেক নতুন তথ্য জানলাম।
রাগিব ভাইকে ধন্যবাদ।
তুমুল! থ্রী চিয়ার্স ফর ব্রজেন দাস।
ব্লগস্পট | অর্কুট | ফেসবুক | ইমেইল
মিহির সেনকে প্রথম ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমকারী দক্ষিণ এশীয় সাঁতারু বলে জানতাম ছোটবেলা থেকে। দেখছি সেটা সত্যি নয়। অথচ বিভিন্ন জায়গায় এই ভুল তথ্যটা এখনো চোখে পড়ছে। যেমন,
http://www.iloveindia.com/sports/swimming/players/mihir-sen.html
কিন্তু, নিছক তারিখের হিসেবেই ব্রজেন দাস মিহির সেনের থেকে একমাস আগে চ্যানেল পেরিয়েছিলেন।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন